জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া - ১


ফতওয়া বিভাগ
গবেষণা কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া  শরীফ
 জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার  শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
          [সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক উনার অশেষ রহমতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া এবং ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করার পর ২১তম ফতওয়া হিসেবে জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।] জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ    সুন্নতের মূর্ত প্রতীক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক প্রকাশনা, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মুলৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক জামানার তাজদীদী মূখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ করা হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করনে বিশেষ সহায়ক।  তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য বা মকছূদও ঠিক তাই। কেননা কিছু লোক ক্বিল্লতে ইল্ম ও ক্বিল্লতে ফাহাম”- অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, “জানাযার পর দোয়া করা বিদয়াত ও নাজায়িয।তাদের উক্ত বক্তব্য একদিক থেকে যেরূপ ঈমান বা আক্বীদার ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ, অপর দিক থেকে আমলের ক্ষেত্রেও ক্ষতির কারণ।     ঈমানের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ এই জন্য যে, আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো কোন জায়িয আমলকে নাজায়িয বলা কুফরী। অর্থাৎ ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ।          অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত।     তাই মহান আল্লাহ্ পাক, পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
والعصر- ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا وعملوا الصالحات.
    অর্থ : আছরের সময়ের কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে। একমাত্র তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছেন এবং নেক আমল করেছেন।” (সূরা আছর)      উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক মানব জাতির ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম উপায় হিসাবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ্ পাক উনার নিকট নেই। কাজেই বান্দার জন্যে প্রধানতম ফরয এই যে, সে সর্ব প্রথম তার ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে, আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা  পোষণ করবে।      কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফিরকার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের কথাবার্তা, চাল-চলন, ছূরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত আক্বীদা পোষণ করে থাকে, যা সুস্পষ্ট কুফরী।   যেমন- ক্বদরিয়া সম্প্রদায়- তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে, অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরজ।  খারিজী সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা হলো- হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ কাফির(নাউযুবিল্লাহ্), অথচ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরয। রাফিজী বা শিয়া সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামদের মর্যাদা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের চেয়েও বেশী, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত খুলাফা-ই-রাশিদীনের সকলেই মুরতাদ। (নাউযুবিল্লাহ)  মুশাব্বিহা বা মুনাব্বিরা সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা হলো, মহান আল্লাহ্ পাক নূর বা আলোমহান আল্লাহ্ পাক উনার দেহ বা আকার-আকৃতি রয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত সকল বিষয় থেকেই সম্পূর্ণ বেনিয়াজ ও পবিত্র।         অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা- কাদিয়ানী সম্প্রদায়, তাদের আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন, তাঁর পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবে, তাই তারা গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী।      অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের কথা বলে, টুপি, কোর্তা, পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবেক কাফির বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।         আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
ستفترق امتى على ثلاث وسبعين فرقة كلهم فى النار الا ملة واحدة قيل من هى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه واصحابى.
  অর্থ : অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল? ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে (মত-পথের) উপর আমি আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ রয়েছি, তার উপর যাঁরা থাকবে, তারাই সেই নাযাত প্রাপ্ত দল।       (আহ্মদ, আবু দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)        উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের  যেকোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারিজী, রাফিজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল।       আর আমলের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ এই জন্য যে, তাদের উক্ত অশুদ্ধ বক্তব্যের কারণে যেরূপ মাইয়্যেতজীবিতদের দোয়া হতে বঞ্চিত হবে তদ্রুপ বঞ্চিত হবে হাদীস শরীফের উপর আমল করা থেকে। কারণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, আশেকে উম্মত, নূরে মুজাস্সাম, ফখরে দুআলম, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাইয়্যেতেরজন্য অধিক মাত্রায় এবং ইখলাছের সাথে দোয়া করতে বলেছেন বলে ছহীহ্ হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে। শুধু তাই নয় স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেরূপ জানাযার নামাযে মাইয়্যেতের জন্য দোয়া করেছেন অনুরূপ জানাযার বাইরেও মাইয়্যেতের জন্য দোয়া করেছেন।           সুতরাং মাইয়্যেতের জন্য জানাযার নামাযে দোয়া করা যেরূপ সুন্নত, তদ্রুপ জানাযার বাইরেও সুন্নত। তা জানাযার আগেই হোক বা পরে হোক। সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, তাদের বক্তব্যের কারণে সাধারণ লোক একটি সুন্নত পালনের ফযীলত থেকে মাহরূম হবে নিঃসন্দেহে।        অথচ হাদীস শরীফে একটি সুন্নত পালনের ফযীলত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে,

من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مأة شهيد.
  অর্থাৎ- যে ব্যক্তি ফিৎনার যুগে একটি সুন্নতকে আঁকড়িয়ে ধরবে সে ব্যক্তি এক শত শহীদের ছাওয়াব পাবে। মূলকথা হলো সকল মুসলমান যেন জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা রাখতে পারে এবং সুন্নত মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীবের সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারে এ মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বহুল প্রচারিত মাসিক আল বাইয়্যিনাতে জানাযার পর দোয়া ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।      মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
والله ورسوه احق ان يرضوه ان كانوا مؤمنين.

 অর্থাৎ- তারা যদি মুমিন হয়ে থাকে তবে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সন্তুষ্ট করা, কেননা তাঁরাই সন্তুষ্টি পাওয়ার সমধিক হক্বদার।  এছাড়াও জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত পাঠকের পক্ষ হতে প্রেরিত অসংখ্য চিঠিও জানাযার পর হাত তুলে মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়াদেয়ার একটি কারণ।         কেননা, মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ করেন,

فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
 অর্থ : যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলিমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩, সূরা আম্বিয়া/৭)   
অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।      অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে।          যেমন, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.

 অর্থ : যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়,  জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।          (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মিশকাত, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারিফুস্ সুনান, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি) অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।       কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে এবং বিদ্য়াতীদের শরীয়ত বিরোধী বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ যেন জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়সম্পর্কিত বিষয়ে বিভ্রান্তিতে না পরে সে জন্যেই মসিক আল বাইয়্যিনাতে”“জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিতফতওয়া প্রকাশ করা হলো।           এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ মুহব্বত নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার মুহব্বত নেই। কারণ মুহব্বত বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক উনার জন্যেই হতে হবে।          এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.

 অর্থ : যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক উনার (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।         (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারিফুস্ সুনান, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, লুময়াত, মিরয়াতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)      বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।   কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছূদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই জানাযার পর হাত তুলে মুনাজাত করা সুন্নতসে সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মুতাবিক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।   মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
المؤمن مرأة المؤمن.
 অর্থ : এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)         এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মুহাজির রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত উমর ইব্নুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারিফুল মায়ারিফ)    অতএব, “জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিতবিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীস শরীফের মিছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিতফতওয়া প্রকাশ করার মূল কারণ।
 জানাযা নামাযের গুরুত্ব,  তাৎপর্য ও ফযীলত
          মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
كل نفس ذائعة الموت.
  অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে।” (সূরা আলে ইমরান/১৮৫. সূরা আম্বিয়া/৩৫, সূরা আনকাবূত/৫৭)     কাজেই কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করার পর জীবিতদের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে যথা শীঘ্র মৃত ব্যক্তির দাফনের ব্যবস্থা করা এবং দাফন কার্য্যে বিলম্ব না করা। কেননা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اذا مات احد كم فلا تحبسوه واسرعوابه الى قبره.
অর্থ : তোমাদের মধ্যে যখন কেউ মৃত্যূ বরণ করে তখন তাকে আবদ্ধ করে রেখে দিওনা বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে দাফন করতে কবরে নিয়ে যাও।” (তাবারানী)      অবশ্য দাফনের পূর্বে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী কাজ রয়েছে, যেমন প্রথমতঃ মাইয়্যেতকে গোসল করানো, দ্বিতীয়তঃ কাফনের কাপড় পরিধান করানো, তৃতীয়তঃ মাইয়্যেতের উপর জানাযা পড়া।          মূলতঃ মাইয়্যেতের উপর জানাযা পড়া শুধু ফযীলত লাভেরই কারণ নয় বরং মাইয়্যেতের উপর জানাযা পড়া স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন-এর নির্দেশ। যেমন তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন বলেন,

صل عليهم ان صلاتك سكن لهم.
অর্থ : “(হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি তাদের (মুমিনগণের) উদ্দেশ্যে নামাযে জানাযা পড়ুন। নিশ্চয়ই আপনার নামায তাদের জন্য শান্তির কারণ সরূপ।” (সূরা তাওবা/১০৩) অত্র আয়াতে কারীমায় স্বয়ং আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন জানাযা নামাযের গুরুত্ব, ফাযায়েল-ফযীলত বর্ণনা করেছেন। আর তা মুমিন-মুসলমানগণের জন্য রহমত, বরকত ও শান্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নিম্নে ধারাবাহিকভাবে জানাযা নামাযের ফাযায়েল-ফযীলত ও গুরুত্ব-তাৎপর্য সম্পর্কিত দলীলসমূহ উল্লেখ করা হল-
 রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযা নামায পড়ার কারণেই ইহা মুমিনগণের জন্য শান্তি স্বরূপ।
 [১-১২]


عن عوف بن مالك رضى الله عنه يقول صلى  رسول الله صلى الله عليه وسلم على جنازة فحفظت من دعائه وهو يقول اللهم اغفرله وارحمه وعافه واعف عنه واكرم نزله ووسع مد خله واغسله بالماء والثلج والبرد ونقه من الخطايا كما نقيت الثوب الابيض من الدنس وابدله دارا خيرا من داره واهلا خيرا من اهله وزوجا خيرا من زوجه وادخله الجنة واعذه من عذاب القبر ومن عذاب النار قال حتى تمنيت ان اكون انا ذلك الميت. (مسلم شريف ج 1 ص 311- مسلم بشرح النووى ج 4 ص 30- مسلم بشرح الابى والسنوسى ج 3 ص 372- مشكوة شريف ص 145- مرقاة- شرح الطيبى- التعليق الصبيح- اللمعات- اشعة المعات- مظاهر حق- مراة المناجيح- مصنف ابن ابى شيبة ج 3 ص 291)
অর্থ : হযরত আউফ ইবনে মালিক আশ্জায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জানাযা নামায পড়লেন। আমি তাঁর দুয়ার কিছু অংশ মুখস্ত রেখেছি। তিনি দুয়াতে বলেছেনঃ আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি তাকে মাফ করুন, তার প্রতি রহম (দয়া) করুন, তাকে শান্তিতে রাখুন, তার অবস্থানকে মর্যাদাময় করুন, তার কবর-অবস্থান স্থলকে প্রশস্ত করুন, তাকে পাক-পবিত্র করে দিন, পানি, বরফ ও বৃষ্টির পানি দ্বারা। তাকে গুণাহ থেকে এভাবে পবিত্র করে দিন, যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। তাকে তার বাড়ী থেকে উত্তম বাড়ী দান করুন, তার পরিবার থেকে উত্তম পরিবার, তার স্ত্রী থেকে উত্তম স্ত্রী দান করুন। তাকে কবরের ও দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন।হযরত আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আকাংখা করতে লাগলাম যে, হায়! আমি যদি এই মৃত ব্যক্তিই হতাম!       (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩১১ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন নববী ৪র্থ জিঃ ৩০ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী ৩য় জিঃ ৩৭২ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১৪৫ পৃষ্ঠা, মিরক্বাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ্ ৩য় জিঃ ২৯১পৃষ্ঠা)
 [১৩-১৭]
عن ابى هريرة رضى اله عنه ان اسود رجلا
او امرأة كان يكون فى المسجد يقم المسجد فمات ولم يعم النبى صلى الله عليه وسلم بموته فذكره ذات يوم فقال مافعل ذلك الانسان قالوا مات يارسول الله صلى الله عليه وسلم قال افلا اذنتمونى فقالوا انه كان كذا وكذا قصته قال فحقر واشانه قال فدلونى على قبره قال فاتى قبره فصلى عليه. (بخارى شريف ج1 ص 178- فتح البارى ج3 ص 205- عمدة القارى ج 8 ص 142- البخارى بشرح الكرمانى ج 8 ص 116- تيسير البارى ج 2 ص 295)
অর্থ : হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। আসওয়াদ নামক একজন পুরুষ অথবা মহিলা মসজিদে থাকত এবং মসজিদ ঝাড়ু দিত। সে মারা গেল কিন্তু নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মৃত্যুর সংবাদ পেলেন না। অন্যদিন তার কথা স্বরণ হলে তিনি বললেন, ঐ লোকটি কোথায়? সকলেই বলে উঠলো ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেতো মারা গেছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে জানালে না কেন? তাঁরা লোকটির কাহিনী বলে বলল, সে  তো এরূপ এরূপ লোক ছিল। নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, আমাকে দেখিয়ে দাও তার কবর কোথায়। (দেখানো হলো) অতপর তিনি তার কবরের পার্শ্বে উপস্থিত হলেন এবং জানাযা নামায আদায় করলেন।  (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ ১৭৮ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ৩য় জিঃ ২০৫ পৃষ্ঠা, উমদাতুল্ ক্বারী ৮ম জিঃ ১৪২ পৃষ্ঠা,  আল বুখারী বিশরহিল কিরমানী ৭ম জিঃ ১১৬ পৃষ্ঠা, তাইসীরুল্ বারী ২য় জিঃ ২৯০পৃষ্ঠা)
[১৮-২৮]
عن ابى هريرة رضى الله عنه ان امرأة سوداء كانت تقم المسجد او شابا ففقدها رسول الله صلى اله عليه وسلم فسأل عنها او عنه فقالوا مات قال افلاكنتم اذنتمونى قال فكانهم صغروا امرها او امره فقال دلونى على قبره فدلوه فصلى عليها ثم قال ان هذه القبور مملوئة ظلمة على اهلها وان الله ينورها لهم بصلاتى عليهم. (مسلم شريف ج1ص 310 311- مسلم بشرح النووى ج 4 ص 25-26، شرح الابى واسوسى ج 3 ص 367- مشكوة شريف ص 145- مرقاة. شرح الطيبى- التعليق الصبيح- اللمعات- اشعة اللمعات- مظاهر حق- مراة امناجيح)
অর্থ : হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন কালো মহিলা অথবা একজন যুবক মসজিদ ঝাড়ু দিত। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কয়েকদিন না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা তাঁকে জানালেন যে, সে মারা গেছে। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? রাবী বলেন, তারা যেন তার ব্যাপারটি গুরুত্ব দেননি। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। তারা কবরটি দেখিয়ে দিলেন। তিনি ঐ কবর সামনে রেখে জানাযার নামায আদায় করলেন। অতপর বললেন, এ কবরগুলো তাদের জন্য অত্যন্ত অন্ধকার। আল্লাহ্ পাক আমার নামাযের কারণে তাদের কবরকে আলোকিত করে দিবেন।       (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩১০, ৩১১ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন্ নববী ৪র্থ জিঃ ২৫, ২৬ পৃষ্ঠা, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী ৩য় জিঃ ৩৬৭ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১৪৫ পৃষ্ঠা, মিরক্বাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ)
 মাসয়ালা
          উল্লেখ্য, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক কাউকে যদি বিনা জানাযায় দাফন করা হয় তবে দাফন করা থেকে তিন দিনের মধ্যে তার কবরে জানাযা পড়া জায়িয রয়েছে। তিন দিনের পরে কবরে জানাযা পড়া জায়িয নেই।
          মৃত ব্যক্তির জন্য জানাযা আদায় কারীদের সুপারিশ কবুল করা হয়
[২৯-৪০]
عن كريب موى ابن عباس عن عبد الله بن عباس رضى الله عنها انه مات ابن له بقديد او بعسفان فقال ياكريب انظر مااجتمع له من الناس قال فخرجت فاذا ناس قد اجتمعوا له فاخبرته فقال تقول هم اربعون قال نعم قال اخرجوه فانى سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ما من رجل مسلم يموت فيقوم على جنازته اربعون رجلا لا يشر كون بالله شيأ الا شفعهم الله فيه. (مسلم شريف ج1ص308- مسلم بشرح النووى ج4 ص 18- مسلم بشرح الابى والسنوسى ج 3 ص 35- مشكوة شريف ص 145- مرقاة- شرح الطيبى- التعليق الصبيح- اللمعات- اشعة اللمعات- مظاهر حق- مراة المناجيح- ابن ماجة ص 108)
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমার গোলাম কুরাইব হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন যে, কুদাইদ অথবা উসফান নামক স্থানে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা-এর এক পুত্র মারা গেল। তখন তিনি বললেন, কুরাইব যেয়ে দেখে আস তার জানাযায় জন্য কত সংখ্যক লোক জমা হয়েছে। কুরাইব বলেন, আমি বের হলাম এবং দেখলাম যে অনেক লোক জমা হয়েছে। তাঁকে এই সংবাদ দিলাম। তিনি বললেন, চল্লিশজন হবে বলে তুমি মনে কর? আমি হাঁ বললাম। তখন তিনি বললেন, তাঁকে (মৃতু ব্যক্তিকে) বের করে আন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে কোন মুসলমান ব্যক্তি মারা যায় আর তার জানাযায় এমন চল্লিশজন লোক দাঁড়ায় যারা আল্লাহ্র সহিত কাউকে শরীক করেনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তার সম্পর্কে তাদের সুপারিশ কবুল করেন বা দুয়া কবুল করেন।           (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন্ নববী ৪র্থ জিঃ ১৮ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিল উবাই ওয়াস্ সিনূসী ৩য় জিঃ ৫৭ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১৪৫ পৃষ্ঠা, মিরক্বাত, শরহুত্ ত্ববী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ, ইবনু মাজাহ্ শরীফ ১০৮ পৃষ্ঠা)
 [৪১-৪৪]
عن كريب عن ابن عباس رضى الله عنهما قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول مامن مسلم يموت فيقوم على جنازته ارتعون رجلا لايشركون بالله شيئا الا شفعوا فيه. (ابو داؤد شريف ج 2 ص 96- بذل المجهوده ص 198 عون امعبود ج 3 ص 176- شرح ابى داؤد لبد لبدر الدين العينى ج 6 ص 99)

অর্থ : হযরত কুরাইব হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যখন কোন মুসলমান লাশের উদ্দেশ্যে এমন চল্লিশজন লোক জানাযা নামায পড়ে, যারা আল্লাহ্ পাক উনার সাথে কাউকে শরীক করেনা, তাদের সুপারিশ ঐ মৃত ব্যক্তির জন্য কবুল করা হয়।  (আবূ দাউদ শরীফ ২য় জিঃ ৯৬ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৫ম জিঃ ১৯৮ পৃষ্ঠা, আউনুল মাবূদ ৩য় জিঃ ১৭৬ পৃষ্ঠা, শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী ৬ষ্ঠ জিঃ ৯৯ পৃষ্ঠা)  [৪৫-৫৫]
عن عائشة رضى الله عنها عن النبى صلى الله عليه وسم قال مامن ميت تصلى عليه امة من المسلمين يبلغون مائة كلهم يشفعون له الاشفعوا فيه قال فحدثت به شعيب بن الحبحاب فقال حدثنى به انس بن مالك رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم. (مسلم شريف ج1 ص 308- مسلم بشرح النووى ج 4 ص 17- مسلم بشرح الابى والسنوسى ج 3 ص 356- مشكوة شريف ص 145- مرقاة- شرح الطيبى- التعليق الصبيح- اللمعات- اشعة اللمعات- مظاهرحق- مراة المناجيح)

অর্থ : হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কোন মৃত ব্যক্তির জানাযা নামায পড়ে একদল মুসলমান যাদের সংখ্যা একশত পর্যন্ত পৌঁছে এবং প্রত্যেকে সুপারিশ করে তার জন্য, নিশ্চয়ই তার (মৃত্যু ব্যক্তির) সম্পর্কে তাদের সুপারিশ কবুল করা হয়। হযরত আব্দুল্লাহ্ বলেন, আমি এ হাদীস শুয়াইব ইবনে হাবহাব কে জানালাম। তিনি বললেন, হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও আমার নিকট হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এই হাদীস শুনেছেন বলে বর্ণনা করেছেন।  (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩০৮পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশ্রহিন্ নববী ৪র্থ জিঃ ১৭পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী ৩৫৬ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১৪৫ পৃষ্ঠা, মিরক্বাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ)
 [৫৬]
عن ابى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من صلى عليه مائة من المسلمين غفرله. (ابن ماجة شريف ص 108)
অর্থ : হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন, যে কোন মৃত ব্যক্তির উপর একশতজন মুসলমান নামাযে জানাযা পড়লো, সেই মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয়।” (ইবনু মাজাহ্ শরীফ ১০৮ পৃষ্ঠা)
 তিন কাতারে মাইয়্যিতের জানাযা পড়লে  তার জন্য জান্নাত ওয়াযিব হয়ে যায় [৫৭-৬৮]
عن مالك ابن هبيرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مامن ميت يموت فيصلى عليه ثلاثة صفوف من المسلمين الا اوجب قال فكان مالك اذا استقل اهل الجنازة جزأهم ثلثة صفوف للحديث. (ابو داؤدشريف ج 2 ص 95- بذل المجهوجج 5 ص 19- عون المعبود ج 5 ص 197- عون المعبود ج 3 ص 174- شرح ابى داود لبدر الدين العينى ج 6 ص 96- مشكوة شريف ص 147- مرقاة شريف، شرح الطيبى- التعليق الصبيح- اللمعات- اشعة اللمعات- مظاهر حق- مراة المناجيح)
অর্থ : হযরত মালিক ইবনে হুবাইরাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে কোন মুসলামান ব্যক্তির জন্য জীবিত মুসলমানগণ তিন কাতার করে (তার জানাযা) পড়লে আলাহ্ পাক তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেন। রাবী বলেন, এজন্য হযরত মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন কোন জানাযায় লোক কম দেখতেন, তখন তাদেরকে তিন কাঁতারে বিভক্ত করে দিতেন।  (আবূ দাউদ শরীফ ২য় জিঃ ৯৫ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৫ম জিঃ ১৯৭ পৃষ্ঠা, আউনুল মাবূদ ৩য় জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠা, শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী ৬ষ্ঠ জিঃ ৯৬ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১৪৭ পৃষ্ঠা, মিরক্বাত শরীফ, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ্)
 [৬৯-৮০]

عن مرثد بن عبد الله اليزنى رحمة الله عليه قال كان مالك بن هبيرة اذا صلى على جتازة فتقال الناس عليها جزا اهم ثلثة اجزاء ثم قال قال رسول الله صلى الله عليه وسم من صلى عليه ثلثة صفوف فقد اوجب. (ترمذى شريف ج ص ১২২- تحفة الاحوذى ج 4 ص 113-113- عارضة الاحوذى د4 ص 246- شرح الطيبى- التعليق الصبيح—مظاهرحق- مراة المناجيح- ابن ماجة شريف ص 108)
অর্থ : হযরত মারছাদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইয়াযানী রহমতল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত মালিক ইবনে হুবাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন জানাযা নামায পড়াতেন তখন লোকজনদের উপস্থিতি কম হলে তিনি তাদেরকে তিন সারিতে ভাগ করতেন। অতপর তিনি বলতেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন কাঁতার লোক যার জানাযা নামায পড়ছে তার জন্য বেহেশ্ত ওয়াজিব হয়েছে।         (তিরমিযী শরীফ ১ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ জিঃ ১১২, ১১৩ পৃষ্ঠা, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী ৪র্থ জিঃ ২৪৬ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১৪৭ পৃষ্ঠা, মিরক্বাত, আশয়াতুল্ লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ্, ইবনু মাজাহ্ শরীফ ১০৮ পৃষ্ঠা)
 শুধু জানাযা নামায পড়লে একক্বীরাত্বসওয়াব হাছিল হয়
  যে ব্যক্তি শুধু জানাযা নামায পড়ল কিন্তু দাফন করা পর্যন্ত থাকল না সে এক ক্বীরাত্ব সাওয়াব পাবে। আর যে নামায পড়ার পর দাফনও সমাধা করল সে দুই ক্বীরাত সওয়াব পাবে। আর ক্বীরাত্ব হচ্ছে উহুদ পাহাড় পরিমাণ সওয়াব। যেমন, এ সম্পর্কে হাদীস শরীফের কিতাব সমূহে বর্ণিত রয়েছে,
[৮১-৮৯]
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من شهد الجنازة حتى يصلى عليه فله قيراط ومن شهد حتى يدفن كان له قيرا طان قيل وما القيراطان قال مثل الجبلين العظيمين. (بخارى شريف ج 1 ص 177- فتح البارى ج 2 ص 196- عمدة القارى ج 8 ص 169، ارشاد السارى شرح الكرمانى ح 7 ص 110- تيسير البارى ج 2 ص 288- مسلم شريف ج1 ص 307- مسلم بشرح النووى- مسلم بشرح الابى والسنوسى)
অর্থ : হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জানাযায় উপস্থিত হয়ে নামায পড়বে সে এক ক্বীরাত ছওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি দাফন পর্যন্ত থাকবে সে দুক্বীরাত ছওয়াব পাবে। জিজ্ঞাসা করা হল ক্বীরাত কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দুটি বড় পর্বত সমতুল্য ছওয়াব।        (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ ১৭৭ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ৩য় জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ৮ম জিঃ ১৬৯ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী ৭ম জিঃ ১১০ পৃষ্ঠা, তাইসীরুল্ বারী ২য় জিঃ ২৮৮ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩০৭ পৃষ্ঠা, মুসলিম বি শরহিন্ নববী, মুসলিম বিশরহিল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী)
[৯০-৯৮]
حدث ابن عمر ان اباهريرة يقول من تبع جنازة فله قيراط فقال اكثر ابو هريرة علينا فصدقت يعنى عائشة ابا هريرة وقالت  سمعت رسول الله صلى اله عليه وسلم يقول فقال ابن عمر لقد فرطنا فى قواريط كثيرة فرطت ضيعت من امر الله. (بخارى شريف ج 1 ص 177- فتح البارى ج 3 ص 192- عمدة القارى ج ص، ১২৬، ارشاد السارى- شرح الكرمانىج 7 ص 109- 110- تيسير البارى ج 2 ص 287- سلم شريف 1ج ص 307- نسلن بشرح النووى ج 4 ص 15- مسلم بشرح الابى والسنوسى ج 3 ص 354)

অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলা হয়েছে যে, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি জানাযায় শরীক হবে সে এক ক্বীরাত পরিমাণ সাওয়াব পাবে। এ কথা শুনে তিনি বলেন, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অধিক মাত্রায় হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। তখন হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু -এর সমর্থন করে বলেন, আমিও রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এরূপ বলতে শুণেছি। তখন হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, তাহলে তো আমরা অনেক ক্বীরাতই হারিয়েছি।  (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ ১৭৭ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ৩য় জিঃ১৯২ পৃষ্ঠা, উমদতুল ক্বারী ৮ম জিঃ ১২৬ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী ৭ম জিঃ ১০৯ ও ১১০ পৃষ্ঠা, তাইসীরুল বারী ২য় জিঃ ২৮৭ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩০৭ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন্ নববী ৪র্থ জিঃ ১৫ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী ৩য় জিঃ ৩৫৪ পৃষ্ঠা)

[৯৯-১০১]

عن سعيد بن المسيب رضى الله عنه عن ابى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عيه وسلم الى قوله الجبلين العظيمين ولم يذكر امابعده وفى حديث عبد الاعلى حتى يفرغ منها وفى حديث عبد الرزاق حتى توضع فى اللحد. (مسلم ج 1 ص 307 مسلم بشرح النووى- مسلم بشرح الابى والسنوسى.

অর্থ : হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে (ক্বিরাত হলো) দুটি বড় পাহাড়, পর্যন্ত বর্ণনা করেন। নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরবর্তী অংশ বর্র্ণনা করেননি। আর আব্দুল আলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণনায় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং আব্দুর রায্যাক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণনায় কবরে না রাখা পর্যন্ত বর্ণিত রয়েছে।     (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩০৭পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশ্রহিন নববী, মুসলিম বিশরহিল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী)

[১০২-১০৪]

عن ابى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم بمثل حديث معمر وقال ومن اتبعها حتى تد فن. (مسلم شريف ج 1 ص 307- مسلم بشرح النووى- مسلم بشرح الابى والسوسى)
অর্থ : হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মামার এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এভাবে বলেছেন, যে জানাযার অনুসরণ করে দাফন করা পর্যন্ত।       (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩০৭পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশ্রহিন্ নববী, মুসলিম বিশরহিল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী)

[১০৫-১০৭]
عن ابى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من صلى على جنازة ولم يتبعها فله قيراط فان تبعها فله قير اطان قيل وما القير اطان قال اضغر هما مثل احد. (مسلم شريف ج 1 ص 307- مسلم بشرح النووى- شرح الابى والسنوسى)
অর্থ : হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জানাযা নামায পড়লো, কিন্তু দাফন পর্যন্ত সাথে থাকলো না তার জন্য এক ক্বীরাত পরিমাণ সওয়াব। আর যে ব্যক্তি মৃতের সাথে দাফন করা পর্যন্ত থাকলো তার জন্য দুক্বীরাত পরিমাণ সওয়াব রয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হলো, দুক্বীরাত কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ছোট ক্বীরাত উহুদ পাহাড়ের সমপরিমাণ।     (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩০৭ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী)
[১০৮-১১৫]
ان داؤد بن عامربن سعدبن ابى وقاص حدثه عن ابيه انه كان قاعدا عند عبد الله بن عمر اذا طلع خباب صاحب المقصورة فقال يا عبد الله بن عمر الا تسمع ما يقول ابو هريرة انه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من خرج مع جنازة من  بيتها وصلى عليها ثم تبعها حتى تدفن كان له قير اطان من اجر كل قيراط مثل احد ومن صلى عليها ثم رجع كان ه من الاجر مثل احد فارسل ابن عمر خبابا الى عائشة يسألها عن قول ابى هريرة ثم يرجع اليه فيخبره ماقالت واخذ ابن عمر قبضة من حصى المسجد يقلبها فى يده حتى رجع اليه الرسو فقال قالت عائشة صدق ابو هريرة فضرب ابن عمر بالحصى الذى كان فى يده الارض ثم ثال لقد فرطنا فى قراريط كثيرة. (مسلم شريف ج 1 ص 307- مسلم بشرح النووئ، شرح الابى والسنوسى- ترمذى شريف ج 1 ص 124- تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى- معارف السنن- درس ترمذى-
অর্থ : হযরত দাউদ ইবনে আমির ইবনে সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা আমির ইবনে সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই তিনি একদা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট বসা ছিলেন। হঠাৎ গৃহ কর্তা হযরত খব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আগমন করলেন এবং বললেন, হে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনি কি শুনেছেন হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহু কি বলেছেন? তিনি রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি তার ঘর থেকে জানাযার সাথে বের হলো, জানাযার ছলাত আদায় করলো, অতঃপর দাফন করা পর্যন্ত সাথে থাকলো তবে সে দুক্বীরাত সওয়াব পাবে। প্রত্যেক ক্বীরাত উহুদ পাহাড়ের সমান হবেআর যে ব্যক্তি জানাযার নামায শেষ করে চলে আসলো সে উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ (এক ক্বীরাত) সওয়াব পাবে। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হযরত খব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর নিকট পাঠালেন। হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তার উত্তরে তিনি কি বলেন, পুনরায় ফিরে এসে তাকে তিনি কি বললেন তা অবহিত করতে। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ থেকে এক মুষ্টি কংকর হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলেন। ইতি মধ্যে তাঁর কাছে দূত ফিরে এসে বললেন, হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেছেন, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সত্য বলেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার হাতের কংকর গুলো নিক্ষেপ করে বললেন, আমরা অনেক ক্বীরাত নষ্ট করে দিয়েছি।            (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩০৭ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, তিরমিযী শরীফ ১ম জিঃ ১২৪ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, মায়ারিফুস্ সুনান, দরসে তিরমিযী)
[১১৬-১১৮]
عن ثوبان رضى الله عنه مولى رسول الله صلى الله عليه وسم ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من صلى على جنازة فله قيراط فان شهد دفنها فله قيراطان القيراط مثل احد. (مسلم شريف ج 1 ص 307- مسلم بشرح النووى، شرح الابى والسنوسى)
অর্থ : হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জানাযা নামায আদায় করল তার জন্য এক ক্বীরাত সওয়াব হবে। আর যদি দাফন কার্যে উপস্থিত থাকে, তবে দুক্বীরাত সওয়াব পাবে। প্রত্যেক ক্বীরাত উহুদ পাহাড়ের সমপরিমাণ।          (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩০৭ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী)
[১১৯-১২৮]

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اتبع جنازة مسلم ايمانا واحتسابا وكان معه حتى يصلى عليها ويفرغ من ذفنها فانه يرجع من الاجر بقيراطين كل قيراط مثل احد ومن صلى عليها ثم رجع قبل ان تدفن فانه يرجع بقيراط متفق عليه. (مشكوة شريف ص 144- مرقاة- اشعة اللمعات- اللمعات- شرح الطيبى- التعليق الصبيح- مظاهرحق- مرأة المناجيح- بخارى شريف- مسلم شريف)
অর্থ : হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত সওয়াবের নিয়তে কোন মুসলমানের লাশের অনুগমন করেছে এবং তার সহিত রয়েছে, যতক্ষণ না তার জানাযা পড়েছে এবং দাফন করেছে, সে দুই ক্বীরাত সওয়াব নিয়ে প্রত্যার্বতন করেছে। প্রত্যেক ক্বীরাত হচ্ছে উহুদ পাহাড় বরাবর। আর যে ব্যক্তি জানাযা নামায পড়েছে কিন্তু দাফন করার পূর্বে প্রত্যাবর্তন করেছে, সে এক ক্বীরাত সওয়াব নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেছে।      (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ১৪৪ পৃষ্ঠা, মিরক্বাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ)
[১২৯-১৩১]
حدثنا ابان كلهم عن قتادة رحمة الله عليه بهذا الاسناد مثله وفى حديث سعيد وهشام سئل النبى صلى الله عليه وسلم عن القيراط فقال مثل احد. (مسلم شريف ج 1 ص 308- مسلم بشرح النووى، مسلم بشرح الابى والسنوسى)
অর্থ : সকলেই হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে এই সনদে অনুরূপ ঐভাবে বর্ণনা করেছেন। আর হযরত সাঈদ ও হিশাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমা দ্বয়ের বর্ণনায় রয়েছে, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ক্বীরাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তাহলো উহুদ পাহাড়ের মত।      (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন্ নববী, মুসলিম বিশরহিল উবাই ওয়াস্ সিনূসী) জানাযার কারণে মৃত ব্যক্তির  প্রতি পূর্ণ কর্তব্য পালিত হয়

[১৩২-১৩৬]
حدثنا عبادبن منصور (ح) قال سمعت ابا المهزم يقول صحبت اباهريرة عشر سنين فسمعته يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من تبع جنازة وحملها ثلث مرات فقد قضى ما عليه من حقها. (ترمذى شريف ج 1 ص 124- تحفة الاحوذى- عارضة الاحوذى- محارف السنن- درس ترمذى)
অর্থ : হযরত আব্বাদ ইবনে মানছূর রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আবুল মুহাযযাম রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বলতে শুনেছিঃ আমি দশ বৎসর যাবৎ হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাহচর্যে ছিলাম। আমি তাকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জানাযা নামায পড়ে এবং জানাযা তিন বার বহন করে, সে মৃত ব্যক্তির প্রতি তার কর্তব্য পূর্ণরূপে পালন করল।     (তিরমিযী শরীফ ১ম জিঃ ১২৪ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল্ আওহয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, মায়ারিফুস্ সুনান, দরসে তিরমিযী)     কুরআন ও সুন্নাহ্র উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মৃত ব্যক্তির উপর জানাযা পড়ার ফাযায়েল-ফযীলত ও গুরুত্ব তাৎপর্য অনেক। (অসমাপ্ত) 

0 Comments: