সুওয়াল: ব্লাসফেমী আইন কি? এ আইনের প্রবর্তক কারা? কোন্ দেশে,
কত সালে এটা সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয় আইন হিসেবে গৃহীত হয়? আমাদের দেশের ইসলামী দলগুলো এ আইন পাশের জন্য যে আন্দোলন করছে, তা কি ইসলামী শরীয়ত সম্মত? যদি না হয়, তাহলে দলীল-আদিল্লাসহ জানালে বাধিত হব।
জাওয়াব : ব্লাসফেমী শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক বা *** হতে। ব্লাসফেমী
শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- অশালীন ভাষায় ইশ্বর নিন্দা, ধর্ম নিন্দা
বা কোন পবিত্র জিনিসের নিন্দা, কোন অশুভ কথা, নিন্দাবাচক শব্দ, অধর্মীয় বক্তব্য ইত্যাদি।
প্রচলিত অর্থে
ব্লাসফেমী বলতে বুঝায়- খ্রীষ্ট ধর্ম, বাইবেল ও ইশ্বর-এর প্রতি দোষারোপ করা।
ব্লাসফেমী
হিসেবে ইহুদীদেরও ধর্ম রক্ষার আইনের প্রচলন ছিল। এ আইনে ধর্মদ্রোহীতার বা ধর্মবিরোধীতার
অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রকার শাস্তিসহ, এমনকি মৃত্যুদন্ড
পর্যন্ত দেয়া হতো। তবে খ্রীষ্ট সমাজেই এর অধিক ব্যবহার, চর্চা ও প্রয়োগ
দেখা যায়। আবার ঐতিহাসিকদের মতে- অনেক খ্রীষ্টান শাসক তাদের ব্যক্তি তথা রাজনৈতিক স্বার্থ
চরিতার্থ করার জন্যও, এ আইনকে ব্যবহার করতো। সম্রাট ফেডারিক (২য়) সহ অনেকের ক্ষেত্রে
এর দৃষ্টান্ত রয়েছে।
উল্লেখ্য
যে, খ্রীষ্টান ও ইহুদী উভয় সম্প্রদায়ই ব্লাসফেমী প্রয়োগে একমত হলেও, এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে তাদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়।
ঐতিহাসিক
বিবরণ মতে এ আইনের প্রথম ব্যবহার দেখা যায়- ইহুদী সম্প্রদায়ের মাঝে। খ্রীষ্ট মতে হযরত
ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার আবির্ভাব ঘটে ৫০০০ বছর পূর্বে এবং উনার পরবর্তীতে এ আইনের
প্রচলন হয়। তবে রাষ্ট্রীয় আইন হিসেবে এ আইন সর্বপ্রথম রোমে স্বীকৃত হয় এবং তার শাস্তি
হিসেবে মৃত্যুদন্ডও কার্যকর করা হয়।
রোম সম্রাট জাষ্টিনিয়ান ক্ষমতায় বসার পর ৫২৮ সালের
১৩ই মার্চ ২০ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেন সন্নিবেশিত ও বিধিবদ্ধ আকারে আইনগ্রন্থ প্রণয়ন
করার কাজে। এছাড়াও তিনি এরূপ আরো অনেক কমিশন গঠন করেন, যাদের দ্বারা
কোড, সেকেন্ড কোড, ফিফটি ডিসিশনস, ইনষ্টিটিউট ইত্যাদি বিভিন্ন নামে আইনগ্রন্থ
প্রণীত হয়েছিল। এর মধ্যে জাষ্টিনিয়ানের ঘোষণাগুলো বিবেচিত হতে -- হিসেবে। এগুলো জাষ্টিনিয়ানের
মৃত্যুর পর সংকলিত হয়। এই --- গুলো প্রণীত হতো সরকারী ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে। এনসাইক্লোপেডিয়া
অব ব্রিটেনিকা মতে জাষ্টিনিয়ান প্রণীত ৭৭তম নভেল ছিল ব্লাসফেমীর জন্য নির্ধারিত শাস্তি
হিসেবে মৃত্যুদন্ড। তবে ঐতিহাসিকদের মতে জাষ্টিনিয়ানের এ আইন প্রণয়নের পিছনে যতটা না
ছিল ধর্মীয় কারণ, তার চেয়ে অনেক বেশী কাজ করেছিল, তার রাজনৈতিক
ফায়দা হাসিলের প্রবণতা। কেননা তার রাজনৈতিক
কৌশল ছিল,
রাষ্ট্র ও চার্চের ক্ষমতাকে একত্রীকরণ। আর এজন্য তার দরকার হয়ে
পড়েছিল,
একটি সুবিধেজনক আইন-বিধি। সে উদ্দেশ্যেই এই আইন তৈরী হয়েছিল
বলে ঐতিহাসিকদের অভিমত।
উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত
আলোচনার দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ব্লাসফেমীর উৎপত্তিসহ, পরিচিতি লাভ বা প্রতিষ্ঠা লাভ হয়েছে- বিধর্মী ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের ধর্ম বা তাদের
শাসকদের রাজত্ব রক্ষা করার জন্য।
সুতরাং ব্লাসফেমীর
জন্য আমাদের দেশের তথাকথিত ইসলামী দলগুলো যে আন্দোলন করছে, তা আদৌ শরীয়তসম্মত
নয় এবং এ আইন পাশের জন্য দাবী তোলাও বৈধ নয়। এর অনেক কারণের মাঝে সংক্ষিপ্তভাবে আরও
কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো-
(১) দ্বীন
ইসলামকে অপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া। ব্লাসফেমী যেহেতু ইসলামী ভাবধারায় পুষ্ট কোন শব্দ
নয়, সেহেতু এই শব্দ আহরনে এটাই প্রকাশ পায় যে, ইসলাম স্বয়ংসম্পূর্ণ
নয়। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান-
اليوم الكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى
ورضيت لكم الاسملام دينا.
অর্থঃ- “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম এবং পরিপূর্ণ করলাম তোমাদের
প্রতি আমার নেয়ামতকে, আর ইসলামকেই তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সুরা মায়েদা- ৩নং আয়াত)
وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا.
অর্থঃ- নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা নিয়ে এসেছেন, তা তোমরা ধরো এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত
থাকো। (২) ইহুদী-নাছারার আইন ব্লাসফেমীকে, ইসলাম বিরোধীদের বা মুরতাদদের থেকে ইসলাম রক্ষার আইন বা উপায় হিসেবে মেনে নেয়া, যা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن
يبتغى غيرا لا سلام دينا فلن يقبد منه وهو فى الاخرة ن الخاسرين.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য
কোন দ্বীন,
নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম তালাশ করে, তার থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
(পবিত্র সুরা আল ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র বলেছেন,
يا ايها الذين امنوا لا تتخذوا الذين اتخذوا
دبنكم هزوا ولعبا من الذين او توالكتبب من قبكم والكفار اولياء.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! আহলে কিতাবদের থেকে যারা তোমাদের দ্বীন উনাকে উপহাস-হাস্যরস, ঠাট্টা-বিদ্রুপ, খেল-তামাশার বিষয় মনে করে, তাদেরকে এবং
অন্যান্য কাফিরকে তোমরা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা।” (পবিত্র সুরা মায়েদা শরীফ, পবিত্র আয়াত
শরীফ ৫৭)
মহান আল্লাহ
পাক তিনি আরো বলেন,
يا ايها الذين امنوا لا تتخذو واعدوى وعدوكم
اولباء.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না।” (পবিত্র সুরা মুমতাহিনা শরীফ)
(৩) অহেতুক
সময় নষ্ট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকরণ : উপরোক্ত আলোচনার
দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ‘ব্লাসফেমী’ ইসলাম স্বীকৃত পন্থা নয়। তদুপরি এই আইন বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানের আওতায় কথিত
আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অনুমোদন সম্ভব নয়। কাজেই বর্তমানে ব্লাসফেমী আইন পাশের জন্য
যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে, তা কেবল অহেতুক সময় নষ্ট, জনজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ولا تفسدوا فى الارض.
অর্থঃ- “তোমরা যমীনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করোনা।” পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক রয়েছে-
من حسن الاسلام المرء تركه مالا
يعنيه.
অর্থঃ- “কোন ব্যক্তির ইসলামী সৌন্দর্য্যরে এটাই প্রকাশ যে, যেটা তার
অপ্রয়োজনীয়,
সেটা সে পরিত্যাগ করে।”
(৪) গণতান্ত্রিক
রীতির অনুশীলন :
বর্তমানে
তথাকথিত ইসলামী দলগুলো যে পদ্ধতিতে সংসদে ভোটের দ্বারা ব্লাসফেমী অনুমোদনের জন্য দাবী
জানাচ্ছে,
তা সংসদীয় গণতান্ত্রিক রীতির অনুশীলন। কিন্তু গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক
রেওয়াজ ইসলামে স্বীকৃত নয়।
(৫) প্রকারান্তরে গণতন্ত্রকে ইসলাম পালনের নিরাপত্তাদাতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া:
কোন প্রার্থী তখনই একজনের কাছে প্রার্থনা করে, যখন সে মনে করে যে, সে তা দান করতে সক্ষম। কাজেই আজকে
যারা ব্লাসফেমী আইন পাশ করাতে চাইছেন, তারা পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন
যে, গণতন্ত্র ব্যবস্থাও ইসলাম পালনের বা ইসলাম বিরোধীদের দমনের ব্যবস্থা দিতে পারে, কিন্তু তা আদৌ ঠিক নয়। কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠিত ইসলামী অনুশাসন বা খিলাফতই সার্বিকভাবে
ইসলাম পালনের ব্যবস্থা করতে পারে।
(৬) ইসলামী শরীয়ত উনার নির্দেশিত পথে খিলাফত কায়েমের কোশেশ থেকে দূরে সরে থাকা
:
বর্তমানে যারা ব্লাসফেমীর জন্য আন্দোলন করছেন, তাদের অবস্থা অনেকটা ফরজ বাদ দিয়ে নফলে ব্যস্ত থাকার মত। (তাও যদি ব্লাসফেমী জায়েয
হতো) কারণ,
তাদের জন্য ফরজে কিফায়া হলো- নুবুওওয়াতের অনুসরণে খিলাফত কায়েমের
জন্য কোশেশ করা। কেননা তা কায়েম হলেই ব্লাসফেমীর দরকার হয়না। পক্ষান্তরে বাকী সবগুলোই
তাতে এসে যাবে এবং একটি বিশেষ ফরজও তাতে পালিত হবে। কিন্তু সেই কোশেশ বাদ দিয়ে গণতন্ত্র
চর্চা করা,
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইহুদী-নাসারার ব্লাসফেমীর জন্য রত থাকা
সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয হারাম।
ইসলাম একটি
পরিপূর্ণ ধর্ম। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআনুল করীম উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
ان الدين عند الله الاسلام
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনিত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।” (পবিত্র আল ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত
শরীফ ১৯) মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن يبتغ غير الاسلام دينا قلن يقبل منه وهو
فى الاخرة من الخاسرين.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি সম্মানিত ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা
এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে।”
মহান আল্লাহ
পাক তিনি আরো বলেন,
ولن ترضى عنك اليهود ولاالنصرى حتى تتبغ
ملتهم قل ان هدى الله هو الهدى ولئن اتبعب اهواء بعد الذى جائك من العلم مالك من
الله من ولى ولا نصير.
অর্থঃ- “ইহুদী ও নাছারারা কখনোই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, আপনি তাদের
ধর্মের (নিয়ম-নীতির) যতক্ষণ পর্যন্ত অনুসরণ না করবেন। বলে দিন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক উনার হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়াত। আপনার কাছে সত্য ইলম
(অর্থাৎ সম্মানিত ইসলাম ধর্ম) আসার পরও যদি আপনি তাদের নফসের বা মনগড়া নিয়ম-নীতির অনুসরণ
করেন,
তবে আপনার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কোন অভিভাবক বা
সাহায্যকারী নেই বা পাবেন না।”
উপরোক্ত পবিত্র
আয়াত শরীফ অনুযায়ী আমাদের কোন আমল করতে হলে, বিধর্মী ও
বিজাতীয় কোন পন্থা অনুসরণ করা যাবে না। বা তাদের থেকে কোন নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা যাবেনা।
শুধুমাত্র পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর এ প্রসঙ্গে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
ومن حابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين
تاه عمر فقال: انا نسمع احاديث من يهود تعجبنا افنرى ان نكتب بعضها فقال: امتهو
كون انتم كما تهوكت اليهود والنضرى لقد جنتكم بها بيضاء نقية، ولو كان موسى حياما
وسعه الا اتتاعى.
অর্থঃ- “হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত
ওমর ইবনে খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, (ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম!) আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, ওটার কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বললেন,
তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছো? যে রকম ইহুদী-নাসারারা
দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিস্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালামও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে উনাকেো আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনদে আহমদ, বায়হাক্বী)
সুতরাং
উক্ত হাদীছ শরীফ হতে বুঝা গেল যে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস
শরীফ ছাড়া অন্য কোন বিজাতীয় পন্থার অনুসরণ করা হারাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يا يها الذىن امنوا لا تتخذوا اليهود
والنصارى اولياء بعصهم اولياء بعض- ومن يتولهم منكم فانه منهم.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা। তারা পরস্পর
পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই দলভূক্ত হবে।” (পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১)
ইহুদী, হিন্দু,
খৃষ্টান, বা অন্যান্য বিধর্মীদেরকে বন্ধু হিসেবে
গ্রহণ করোনা,
এর অর্থ হলো- তাদের রীতি নীতির অনুসরণ না করা, তাদের প্রবর্তিত আইন যেমন ব্লাসফেমী গ্রহণ না করা। তারা যেভাবে দাবি আদায় করে, সেভাবে দাবী আদায় না করা, তারা হরতাল করে মানুষকে কষ্ট দেয়, জান-মালের ক্ষতি করে, তারা লংমার্চ করে, ছবি তোলে,
এ সমস্ত হারাম কাজ না করা, কারণ এগুলো
মহান আল্লাহ পাক তিনি ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার নির্দেশিত পথ নয়। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
عن عبدا
لله بن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو
منهم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
উমর আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত আছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল
রাখে,
সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
এই
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত ঘটনা উল্লেখ করা যায়- হিন্দুস্থানে মহান
আল্লাহ পাক উনার একজন জবরদস্ত ওলী ছিলেন। উনার ইন্তেকালের পর অন্য একজন বুযূর্গ ব্যক্তি
তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, আপনি কেমন আছেন?” তখন সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী জাওয়াবে বললেন, “আপাতত আমি ভালই আছি কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে। যা বলার
অপেক্ষা রাখে না। আমার ইন্তেকালের পর আমাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সরাসরি
আল্লাহ পাক উনার সম্মুখে পেশ করেন। মহান আল্লাহ্ পাক ফিরিশতাদের বলেন, “হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! তোমরা তাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছ?” হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, হে আল্লাহ
পাক আমরা তাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য নিয়ে এসেছি। এ কথা শ্রবণ
করে মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেননা সে পূঁজা করেছে। এ কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে
গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগল। তখন আমি মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট আরজু
পেশ করলাম,
“আয় আল্লাহ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময় আপনার এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং পুঁজা করাতো দূরের
কথা মন্দিরের নিকটবর্তীও কখনো যাইনি।” তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “তুমি সেইদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূঁজা হচ্ছিল।
তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরুলতা,
পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রঙ দেয়া হয়েছিল।
এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ যাচ্ছিল যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে- হে গর্দভ!
তোমাকে তো কেউ রঙ দেয়নি, এই হোলি পূঁজার দিনে আমি তোমাকে রঙ
দিয়ে দিলাম। এটা কি তোমার পূঁজা করা হয়নি?” তুমি কি জাননা-
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি
যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভূক্ত এবং তার হাশর-নশর
তাদের সাথে হবে।”
সুতরাং তোমার
হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এই কথা বললেন, তখন আমি লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে বললাম, “আয় আল্লাহ পাক! আমি এটা বুঝতে পারিনি।” কিছুক্ষণ
পর মহান আল্লাহ পাক বললেন, “হ্যাঁ তোমাকে অন্যান্য আমলের কারণে
ক্ষমা করা হয়েছে।”
বনী ইসরাঈল
আমলের অনুরূপ আরও একটি ওয়াকেয়া তফসীরে উল্লেখ করা হয়। মহান আল্লাহ পাক হযরত ইউশা বিন
নুন আলাইহিস সালাম উনার উপর ওহী নাযিল করলেন, হে আমার নবী!
আপনার উম্মতের মধ্যে এক লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধ্যে
৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত (গোমরাহ)। তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস সালাম বললেন, “আয় আল্লাহ পাক! ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে
কিন্তু বাকী ৪০ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন মহান
আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “যেহেতু তারা ঐ গুণাহে লিপ্ত লোকদের
সাথে মিলা-মিশা ও ওঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে আর গুণাহের কাজে বাধা দেয় না, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে।” উপরোক্ত
পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং তার ব্যাখ্যার দ্বারা
এটাই সাবেত হলো যে, বিজাতীয় বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক ও সীরত-সূরত কোনটাই অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। যদি কেউ করে তবে তার
থেকে সেটা মহান আল্লাহ পাক গ্রহণ করবেন না বা কোন সওয়াবও দেবেন না এবং মহান আল্লাহ
পাক উনার তরফ থেকে কোন মদদ পাবেনা। যার ফলে সে ইহকালে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং পরকালেও
তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে যাদেরকে সে অনুসরণ করত। কাজেই বিধর্মীদের ব্লাসফেমী আইন জারী করার জন্য কোশেশ করা এবং জারী করা
আর সে আইন স্বীকার করে নেয়া ও তা মেনে আমল করা কোনটাই জায়েয নয়।
আবা-১৯
0 Comments:
Post a Comment