নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত জিহাদের
উদ্দেশ্যে রওয়ানা:
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ
উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ. تُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ.
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! আমি আপনাদের এমন একটি
ব্যবসার কথা বলে দিব না, যা আপনাদেরকে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে নাজাত দিবে? আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনবেন। অতপর আপনাদের মাল ও জান দ্বারা মাহান আল্লাহ পাক
উনার রাস্তায় জিহাদ করবেন। এটাই আপনাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি আপনারা বুঝতেন”। (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ: পবিত্র আয়াত
শরীফ- ১০,১১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّ اللَّـهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَـهُم بِأَنَّ لَـهُمُ الْـجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিন
উনাদের মাল ও জান খরিদ করে নিয়েছেন সম্মানিত জান্নাতের বিনিময়ে। উনারা জিহাদ
মুবারক করবেন মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায়। অতঃপর উনারা ক্বতল বা মারবেন এবং শহীদ
হবেন।” (পবিত্র সূরা তওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১১১)
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
إِنَّ فِي الْـجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللهُ لِلْمُجَاهِدِينَ
فِي
سَبِيلِ اللهِ مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللهَ فَاسْأَلُوهُ الْفِرْدَوْسَ.
অর্থ: “(নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন) নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক
উনার রাস্তায় জিহাদকারী উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র জান্নাতে একশ’টি
মর্যাদার স্তর মুবারক প্রস্তুত করে রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের
দূরত্বের মত। আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট চাইলে জান্নাতুল ফেরদাউস চাবেন।
কেননা এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা
রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম! (বুখারী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ২৭৯০, ছহীহ তারগীব ওয়া তারহীব, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র শাওওয়াল শরীফ ইয়ামুল জুমুয়াহ পবিত্র আছর
নামায উনার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি এক হাজার সৈন্যসহ পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে রওয়ানা হন। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ঘোড়া
মুবারকের উপর তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ও হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বর্ম পবিহিত
অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সামনে সামনে যাচ্ছিলেন। আর অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার সম্মানিত ডানে বামে ও পিছনে পিছনে আসছিলেন। পথিমধ্য থেকে কাট্টা মুনাফিক
সরদার উবাই বিন সুলূল সে ৩০০ জন সহচর নিয়ে পিছন দিকে পালিয়ে গেল। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মোট ৭০০ জন হযরত
মুজাহিদ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে সফর মুবারক করতে
লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
‘তাবাকাতে ইবনে সা’দ’ ও ‘যুরকানী’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে বেরিয়ে যখন উনারা ‘শাইখাইন’
নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি মুজাহিদ কাফিলাকে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই বাছাই মুবারক করলেন।
‘শাইখাইন’ দু’টি টিলার নাম। পবিত্র মদীনা শরীফ ও সম্মানিত উহুদ পাহারের মাঝামাঝি
এই স্থান অবস্থিত। এ এলাকায় এক অন্ধ বৃদ্ধ এবং এক অন্ধ বৃদ্ধা মহিলা বাস করত। তাই
এ টিলা দুটোর শাইখাইন (দুই বয়স্ক) নামকরণ করা হয় এবং তা ব্যাপকতা লাভ করে। (সীরতে
মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি অগ্রসর হয়ে পবিত্র উহুদের এক ঘাঁটিতে গিয়ে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ
করলেন। এই স্থানটি ছিলো উহুদ পাহাড়ের পাশে উপত্যকার সমতল ভূমিতে। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উহুদ পাহাড়কে পিছনে
রেখে অবস্থান মুবারক নিলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদেরকে তিনি উহুদ পাহাড়ের দিকে অবস্থান মুবারক করার জন্য বললেন এবং উটগুলোও রাখলেন। তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিলেন আপনাদের কেউ যেন জিহাদ
না করেন,
যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দেশ মুবারক না দেয়া হয়। অন্যদিকে কুরাইশ
কাফির মুশরিকরা তাদের উট ও ঘোড়াগুলো ঘাস খাওয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছিল পাহাড়ের খালের
তীরে শ্যামল শস্যক্ষেতে। আর এই ক্ষেতগুলোর মালিক ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। জনৈক আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
বললেন,
ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! বানূ কায়লাহ অর্থাৎ আউস ও খাযরাজ উনাদের ক্ষেতে কাফির মুশরিকরা তাদের পশু
চরাচ্ছে,
দয়া করে আপনি অনুমতি মুবারক দিন আমরা আমাদের তরবারি দিয়ে
তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেই। আমরা এখনও তাদের কঠিন জবাব দিতে পারি নাই এজন্য ক্ষমা
চাই। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি সম্মানিত জিহাদ মুবারক প্রস্তুতি নিতে আরম্ভ করলেন। তখন উনার খিদমত মুবারকে
উপস্থিত ছিলেন ৭০০ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।
সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وَتَعَبّى رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لِلْقِتَالِ وَهُوَ فِي سَبْعِ مِائَةِ رَجُلٍ وَ أَمّرَ عَلَى الرّمَاةِ حَضْرَتْ عَبْدَ اللّهِ بْنَ جُبَيْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَخَا بَنِي عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ وَهُوَ مُعَلّمٌ يَوْمئِذٍ بِثِيَابِ بِيضٍ وَالرّمَاةُ خَمْسُونَ رَجُلًا، فَقَالَ انْضَحْ الْخَيْلَ عَنّا بِالنّبْلِ، لَا يَأْتُونَا مِنْ خَلْفِنَا، إنْ كَانَتْ لَنَا أَوْ عَلَيْنَا، فَأَثْبُت مَكَانَك لَا نُؤْتَيَنّ مِنْ قِبَلِك. وَظَاهَرَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بَيْنَ دِرْعَيْنِ وَدَفَعَ اللّوَاءَ إلَى حَضْرَتْ مُصْعَب بْنِ عُمَيْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَخِي بَنِي عَبْدِ الدّارِ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিলেন
তখন উনার সাথে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সংখ্যা
ছিলেন ৭০০ শত জন। তিনি তীরন্দাজ বাহিনীর প্রধান রূপে বানূ আমর ইবনে আওফ গোত্রের
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিযুক্ত করেন। সেদিন
তিনি ছিলেন সাদা পোশাক পরিহিত। তীরন্দাজ বাহিনী সংখ্যায় ছিলেন ৫০ জন। নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করলেন, তীর নিক্ষেপ করে আপনারা শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী বাহিনীকে
প্রতিরোধ করবেন। তারা যেন আমাদের পিছন দিক
থেকে আসতে না পারে। জিহাদের ফলাফল আমাদের পক্ষে হোক কিংবা বিপক্ষে হোক আপনারা এই
গিরিপথে অবিচল থাকবেন। আপনাদের ঐ দিক থেকে আমাদের উপর যেন কোন আক্রমণ না আসে। নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’টি
লৌহবর্ম মুবারক পরিহিত ছিলেন। তিনি হযরত মাসয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার হাত মুবারকে পতাকা মুবারক অর্পণ করেন। তিনি ছিলেন বানূ আব্দুদদারের লোক।
(সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরাতু লি- ইবনে হাব্বান, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক, আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া)
হযরত
ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وَأَجَازَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَوْمئِذٍ حَضْرَتْ سَمُرَةَ بْنَ جُنْدُبٍ الْفَزَارِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ رَافِعَ بْنَ خَدِيجٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَخَا بَنِي حَارِثَةَ وَهُمَا ابْنَا خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً وَكَانَ قَدْ رَدّهُمَا، فَقِيلَ لَهُ يَا رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إنّ حَضْرَتْ رَافِعًا رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ رَامٍ، فَأَجَازَهُ فَلَمّا أَجَازَ حَضْرَتْ رَافِعًا رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، قِيلَ لَهُ يَا رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَإِنّ حَضْرَتْ سَمُرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ يَصْرَعُ حَضْرَتْ رَافِعًا رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ فَأَجَازَهُ.
অর্থ: “সম্মানিত উহুদ জিহাদে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সামুরা ইবনে জুন্দুব
ফাযারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বানূ হারিছা গোত্রের হযরত রাফি’ ইবনে খাদীজা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে সম্মানিত জিহাদে অংশ গ্রহণের অনুমতি মুবারক
দান করেন। তখন উনাদের উভয়ের বয়স মুবারক ছিলো পনের বছর। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পেশ করা হয়েছিলো ইয়া
রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত রাফি’
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তীর নিক্ষেপে অত্যন্ত পারদর্শী। তখন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে অনুমতি মুবারক
দান করেন। হযরত রাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুবারক অনুমতি পাওয়ার পর
হযরত সামুরা ইবনে জুন্দুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ব্যাপারে বলা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! হযরত সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিতো হযরত রাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকে কুস্তিতে পরাস্ত করতে পারেন। কাজেই দয়া করে, উনাকে অনুমতি মুবারক দিন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও সম্মানিত জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি
মুবারক দান করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নাবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, তারিখে ইবনে খালদুন, জাওয়ামিউল কালাম, রওদ্বূল উনূফ)
হযরত
ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন,
فَأَجَازَهُ وَرَدّ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حَضْرَتْ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ عَبْدَ اللّهِ بْنَ عُمَرَ بْنِ الْخَطّابِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَزَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَحَدَ بَنِي مَالِكِ بْنِ النّجّارِ وَالْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَحَدَ بَنِي حَارِثَةَ وَعَمْرَو بْنَ حَزْمٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَحَدَ بَنِي مَالِكِ بْنِ النّجّارِ وَأُسَيْدَ بْنَ ظُهَيْرٍ، أَحَدَ بَنِي حَارِثَةَ ثُمّ أَجَازَهُمْ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، وَهُمْ أَبْنَاءُ خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً.
অর্থ: “যে সমস্ত অল্প বয়স্ক ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, ১. হযরত উসামা ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, ৩. হযরত যায়িদ ইবনে ছাবিত
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ৪. হযরত বারা
ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যিনি বানূ হারিছার ছাহাবী ছিলেন। ৫. হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু,
যিনি মালিক ইবনে নাজ্জার গোত্রের ছাহাবী ছিলেন এবং ৬. হযরত
উসাইদ ইবনে যুহাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যিনি
ছিলেন বানূ হারিছাহ গোত্রের। তবে পরবর্তীতে সম্মানিত খন্দকে উনাদের সকলকে জিহাদে
অংশ গ্রহণের অনুমতি মুবারক দিয়েছিলেন। তখন উনাদের বয়স মুবারক ছিলো পনের বছর।
(সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, উয়ূনুল আছার ফি-ফুয়ূনিল মাগাযী, দুরূসু ওয়া ইবরু মিন গাযওয়াতি উহুদ)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وَتَعَبّأَتْ قُرَيْشٌ وَهُمْ ثَلَاثَةُ آلَافِ رَجُلٍ وَمَعَهُمْ مِائَتَا فَرَسٍ قَدْ جَنَبُوهَا ، فَجَعَلُوا عَلَى مَيْمَنَةِ الْخَيْلِ حَضْرَتْ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيدِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَعَلَى مَيْسَرَتِهَا عِكْرِمَةَ بْنَ أَبِي جَهْلٍ.
অর্থ: “এদিকে কুরাইশ কাফির মুশরিকরাও যুদ্ধের
প্রস্তুতি নিয়েছিলো। তাদের সৈন্যসংখ্যা ছিল ৩ হাজার। যার মধ্যে ২০০ অশ্বারোহী।
এদেরকে তারা রিজার্ভ হিসাবে একপাশে রেখে দিয়েছিল যাতে প্রয়োজনের সময় তাদেরকে
ব্যবহার করা যায়। অশ্বারোহীদের ডান দিকে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু
(তখনও তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি)
তিনি ছিলেন। আর উনার বাম দিকে হযরত ইকরামা ইবনে আবূ জাহিলকে (তিনিও তখন
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) উনাকে নিযুক্ত করা হয়।” (তারিখুল উমাম ওয়াল
মুলূক,
রওদ্বূল উনূফ)
আরো উল্লেখ রয়েছে, হযরত রাফি’ ইবনে খাদীজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন অল্প বয়সী ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে একজন। তিনি যেন বাছাই পর্বে বাদ না পড়েন
সেজন্য উনার পা উঁচু করে দাঁড়ান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে অংশগ্রহণের অনুমতি মুবারক প্রদান করেন।
সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
একদা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি হযরত নাফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সাথে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
সম্মানিত জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন? জবাবে হযরত নাফি’ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাকে স্বয়ং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, যখন সম্মানিত বদর জিহাদ সংঘটিত হয় তখন আমার বয়স ছিলো ১৩
বছর। সম্মানিত উহুদ জিহাদের সময় আমার বয়স মুবারক ছিলো ১৪ বছর। সম্মানিত বদর জিহাদে
আমি অংশ গ্রহণের ইচ্ছা না করে থাকলেও সম্মানিত উহুদ জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য আমার
খুবই ইচ্ছা ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার নিকট এই বিষয় আবেদন মুবারক করলে তিনি আমার আবেদন কবুল করলেন না।
এমনকি হযরত যায়িদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আউস ইবনে আরাবাহ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের অল্প বয়স হওয়ার কারণে সম্মানিত জিহাদে যাওয়ার
অনুমতি মুবারক লাভ করেননি। তবে হযরত রাফি’ ইবনে খাদীজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি স্বাস্থ্যবান হওয়ার কারনে উনাকে অনুমতি মুবারক দেয়া হয়েছিল। এরপর যখন
সম্মানিত খন্দক জিহাদ সংঘটিত হয় তখন আমার বয়স মুবারক ১৫ হওয়ার কারণে আমাকে অনুমতি
মুবারক দেয়া হয়। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত জিহাদ মুবারকে অংশগ্রহণ করি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা
রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম! (উয়ূনুল আছার, সীরাতে মুস্তফা
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হযরত আবূ দুজানা সিমাক ইবনে খারাশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বীরত্ব
মুবারক:
হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
নাম মুবারক সিমাক, কুনিয়াত: হযরত
আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার খাযরাজ গোত্রের
বানূ সায়িদাহ শাখার অন্তর্ভূক্ত। খাযরাজ নেতা বিখ্যাত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে উবাদা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চাচাত ভাই। তিনি সম্মানিত বদর জিহাদের পর সম্মানিত
উহুদ জিহাদেও অংশগ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! সম্মানিত
উহুদ জিহাদে হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কঠিন অবস্থার সময় অটল
ও অবিচল ছিলেন। সেই দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাহ বা সম্মানিত হাত মুবারকে হযরত আবূ দুজানা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা আনুষ্ঠানিক ভাবে জান কুরবানী করার জন্য বাইয়াত গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
وَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مَنْ يَأْخُذُ هَذَا السّيْفَ بِحَقّهِ؟ فَقَامَ إلَيْهِ رِجَالٌ فَأَمْسَكَهُ عَنْهُمْ حَتّى قَامَ إلَيْهِ حَضْرَتْ أَبُو دُجَانَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ سِمَاكُ بْنُ خَرَشَةَ، أَخُو بَنِي سَاعِدَةَ فَقَالَ وَمَا حَقّهُ يَا رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ؟ قَالَ أَنْ تَشْرَبَ بِهِ الْعَدُوّ حَتّى يَنْحَنِي قَالَ أَنَا آخُذُهُ يَا رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِحَقّهِ فَأَعْطَاهُ إيّاهُ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন উনার মহাসম্মানিত
তরবারি মুবারক উঁচিয়ে ঘোষণা মুবারক দিলেন, প্রকৃত হক্ব আদায় করার সংকল্প নিয়ে এ সম্মানিত তরবারি মুবারক কে গ্রহণ করবেন? তখন অনেক হযরত মুজাহিদ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা এই ঘোষণা মুবারক শ্রবণ করে তা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের কাউকে দিলেন না।
এবার এলেন বানূ সাইদাহ গোত্রের হযরত আবূ দুজানা সিমাক ইবনে খারাশা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ!
ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এর হক্ব কি? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
أَنْ تَشْرَبَ بِهِ الْعَدُوّ حَتّى يَنْحَنِي
এর হক্ব এই যে, তা দ্বারা শত্রুকে এমনভাবে মারবে, যাতে তা দ্বারা শত্রুর তরবারি বাঁকা হয়ে যায়।
তখন হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই তরবারি মুবারক আমি গ্রহণ করবো। সুতরাং নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে তরবারি
মুবারক দিয়ে দিলেন।” (আর রওদ্বূল উনূফ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরাতে ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ)
আরো উল্লেখ রয়েছে, হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন, অত্যন্ত সাহসী পুরুষ এবং জিহাদের বিভিন্ন কলাকৌশলে
পারদর্শী। জিহাদে অংশগ্রহণ করার সময় তিনি একটি খয়েরি রং বিশিষ্ট কাপড় মুবারক মাথায়
বেঁধে নিতেন। এর দ্বারা বুঝা যেত, তিনি সম্মানিত
জিহাদের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছেন। এরপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাহ তথা মহাসম্মানিত হাত মুবারক
থেকে তরবারি মুবারক লাভ করার পর একটি খয়েরি রং বিশিষ্ট কাপড় মুবারক মাথায় বেঁধে
নিলেন এবং বীরত্বের সাথে সম্মানিত জিহাদের উভয় কাতারের মাঝে হাঁটতে লাগলেন।”
সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (মুসনাদে বায্যার, মু’জামুল কুবরা লিতত্ববারানী, আল মুসতাদরিক, তাহযীবুল আছার, দালায়িলুন নবুওওয়াহ, সুনানে বাইহাক্বী, মা’রিফাতুছ
ছাহাবা,
সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম
রহমতুল্লাহি আলাইহি, তারিখুল উমাম
ওয়াল মুলূক)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পরাধীন
থেকে স্বাধীনকৃত হযরত জাফর ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি বানূ সালামার জনৈক আনসার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার থেকে আমার
কাছে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ দুজানা
রদ্বিয়াল্লাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বীরত্বের সাথে চলতে দেখে ইরশাদ
মুবারক করলেন,
إنـّهَا لَمِشْيَةٌ يَبْغُضُهَا اللّهُ إلّا فـِي مِثْلِ هَذَا الْمَوْطِنِ.
নিশ্চয়ই এভাবে চলা মহান আল্লাহ পাক উনার পছন্দ
নয়,
তবে এ অবস্থায় কোন দোষ নেই।” (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম
রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল ক্বওলুল
মুবীন,
তরিখুল ইসলাম লি-ইমাম যাহাবী)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো
বলেন, হযরত আসিম ইবনে
উমার ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে বলেছেন।
أَنّ أَبَا عَامِرٍ عَبْدَ عَمْرِو بْنِ صَيْفِيّ بْنِ مَالِكِ بْنِ النّعْمَانِ أَحَدُ بَنِي ضُبَيْعَةَ وَقَدْ كَانَ خَرَجَ حِينَ خَرَجَ إلَى مَكّةَ مُبَاعِدًا لِرَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مَعَهُ خَمْسُونَ غُلَامًا مِنْ الْأَوْسِ، وَبَعْضُ النّاسِ كَانَ يَقُولُ كَانُوا خَمْسَةَ عَشَرَ رَجُلًا، وَكَانَ يَعِدُ قُرَيْشًا أَنْ لَوْ قَدْ لَقِيَ قَوْمَهُ لَمْ يَخْتَلِفْ عَلَيْهِ مَعَهُمْ رَجُلَانِ فَلَمّا الْتَقَى النّاسُ كَانَ أَوّلَ مِنْ لَقِيَهُمْ أَبُو عَامِرٍ فِي الْأَحَابِيشِ وَعُبْدَانُ أَهْلِ مَكّةَ، فَنَادَى: يَا مَعْشَرَ الْأَوْسِ، أَنَا أَبُو عَامِرَةَ قَالُو: فَلَا أَنْعَمَ اللّهُ بِك عَيْنًا يَا فَاسِقُ! وَكَانَ أَبُو عَامِرٍ يُسَمّى فِي الْجَاهِلِيّةِ الرّاهِبَ فَسَمّاهُ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْفَاسِقَ فَلَمّا سَمِعَ رَدّهُمْ عَلَيْهِ قَالَ لَقَدْ أَصَابَ قَوْمِي بَعْدِي شَرّ، ثُمّ قَاتَلَهُمْ قِتَالًا شَدِيدًا، ثُمّ رَاضَخَهُمْ بِالْحِجَارَةِ.
অর্থ: “আবূ আমির ছিলো আমর ইবনে ছায়ফী ইবনে মালিক
ইবনে নু’মানের ক্রীতদাস। আমির ইবনে সায়ফী বানূ যাবীয়াহ গোত্রের লোক। আবূ আমির সে
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মানিত ছোহবত মুবারক থেকে আওস গোত্রের ৫০ জন ক্রীতদাসসহ পবিত্র মক্কা শরীফে
পালিয়ে যায়। কারো কারো মতে, পবিত্র মক্কা
শরীফে পালায়নকারী ক্রীতদাসের সংখ্যা ছিলো ১৫ জন। সে কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সাথে
অঙ্গীকার করেছিল যে, যুদ্ধের সময় সে
তার আপন সম্প্রদায়ের মুখামুখি হলে কেউই তার বিরুদ্ধে যাবে না। সকলেই তার দলের
অন্তর্ভূক্ত হবে। নাউযূবিল্লাহ! কেউই তার বিরোধিতা করবে না। সেমতে সম্মানিত জিহাদে
মুকাবিলার সময় পবিত্র মক্কা শরীফে পালাতক গোলাম আবূ আমির সে কতক ক্রীতদাসদের নিয়ে
সর্বপ্রথম অগ্রসর হলো। সে আওস সম্প্রদায় উনাদেরকে ডেকে বলছিল, হে আওস সম্প্রদায়! আমি আবূ আমির। সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, হে ফাসিক! মহান আল্লাহ পাক তিনি তোর অমঙ্গল করুন । জাহিলী যুগে সে রাহিব বা
যাজক নামে প্রসিদ্ধ ছিলো। পরিশেষে,
فَسَمّاهُ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْفَاسِقَ
‘নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও তার নাম রাখেন
ফাসিক।’
সে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদের জবাব শুনে বলল, হায়! আমার
পালায়নের পর আমার সম্প্রদায়ের লোকজন এতটা মন্দ অকল্যাণে নিমজ্জিত হয়েছে।
নাউযূবিল্লাহ! এরপর সে যুদ্ধ শুরু করল। সে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি পাথর ছুড়তে লাগলো। নাউযূবিল্লাহ! ”(সীরাতুন নবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, উয়ূনুল আছার ফি-ফুয়ূনিল মাগাযী, আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া)
হযরত
ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, এর সাথে সাথে সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা একদিক
থেকে এবং কাফির মুশরিকরা অন্যদিক থেকে জিহাদ শুরু করে দেয়। সে সময় হযরত আবূ দুজানা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার তরবারি মুবারক চলাতে লাগলেন। শক্রপক্ষের
দুর্ভেদ্য সারি ভেদ করে তিনি তাদের একেবারে ভেতরে ঢুকে পড়লেন। সুবহানাল্লাহ!
সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “একাধিক আলিম আমাকে জানিয়েছেন যে, হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
বলেছেন,
আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট তরবারি মুবারক চেয়েছিলাম। কিন্তু নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে উনার সম্মানিত তরবারি মুবারক না দিয়ে হযরত আবূ
দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দিয়েছিলেন। হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি এই সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার পিছনে ছিলাম। সেই দিন হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একটি
খয়েরি রং বিশিষ্ট কাপড় মুবারক বের করে সেটি মাথা মুবারকে বাঁধলেন। তা দেখে হযরত
আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলে উঠলেন, এই যে, হযরত আবূ দুজানা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মাউতের পরওয়ানা পাগড়ী বের করেছেন। হযরত আবূ দুজানা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পাগড়ী মুবারক মাথা মুবারকে বেঁধে এই কবিতা
আবৃত্তি করতে করতে বেরিয়ে পড়লেন,
أَنَا الّذِي عَاهَدَنِي خَلِيلِي ... وَنَحْنُ بِالسّفْحِ لَدَى النّخِيلِ
আমি সেই ব্যক্তি, যার থেকে আমার মালিক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি পাহাড়ের পদদেশে খেজুর বাগানের সন্নিকটে ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি
নিয়েছেন।
أَلّا أَقَوْمَ الدّهْرَ فِي الْكَيّولِ ... أَضْرِبْ بِسَيْفِ اللّهِ وَالرّسُولِ
তিনি আমার নিকট ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন যে, আমি যেন কখনো পিছনের সারিতে অবস্থান না করি। আর মহান আল্লাহ
পাক তিনি ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত
তরবারি মুবারক দ্বারা শত্রুপক্ষকে নিধনের নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।
আর আমি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মানিত তরবারি মুবারক দ্বারা শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করতে থাকি।” সুবহানাল্লাহ!
সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- হযরত ইবনে
হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, উয়ূনুল আছার
ফি-ফুয়ূনিল মাগাযী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
হযরত
ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “এরপর সম্মানিত জিহাদে হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাফির মুশরিকদের
যাকেই সামনে পাচ্ছিলেন তাকেই হত্যা করছিলেন। মুশকিদের দলে একজন লোক ছিল, যে আহত ব্যক্তি পেলেই সে তার সেবা করছিল, ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করছিল। ইতোমধ্যে হযরত আবূ দুজানা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং ওই ব্যক্তি কাছাকাছি হয়ে গেলেন। হযরত যুবাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি মনে মনে ভাবলাম হয়ত; উভয়ে জিহাদ শুরু
হবে। দেখতে দেখতে উনারা দুজন মুখোমুখি হয়ে গেলেন এবং উভয়ে তরবারি পরিচালনা করলেন।
মুশরিক লোকটি হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর তরবারির আঘাত
হানলো। ঢাল দিয়ে হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তা প্রতিহত
করলেন। মুশরিক লোকটির তরবারি ভোঁতা হয়ে গেল। এবার হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি তার উপর আক্রমণ চালিয়ে তাকে হত্যা করে ফেললেন। সুবহানাল্লাহ!
সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এরপর আমি দেখলাম হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি উনার তরবারি মুবারক উঠালেন এবং হযরত হিন্দ বিনতে উতবা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (তিনি তখন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) উনার
মাথা বরাবর উঠালেন। কিন্তু অবিলম্বে সম্মানিত তরবারি মুবারক সরিয়ে নিলেন। আমি
বললাম,
اللّهُ وَرَسُولُهُ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَعْلَمُ
এর হিকমত কি? তা মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই ভালো জানেন।” (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
قَالَ حَضْرَتْ أَبُو دُجَانَةَ سِمَاكُ بْنُ خَرَشَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ: رَأَيْت إنْسَانًا يَخْمُشُ النّاسَ خَمْشًا شَدِيدًا، فَصَمَدْت لَهُ فَلَمّا حَمَلْت عَلَيْهِ السّيْفَ وَلْوَلَ فَإِذَا امْرَأَةٌ فَأَكْرَمْت سَيْفَ رَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ أَضْرِبَ بِهِ امْرَأَةً.
অর্থ: “হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি বলেছেন যে, আমি একটি লোক
দেখলাম’ যে মুশরিক সৈন্যদেরকে খুব সাহস দিচ্ছে এবং উত্তেজিত করছে। আমি তার
উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলাম। আমি যখন তার মাথার উপর সম্মানিত তারবারি মুবারক উঠালাম তখন
সে অনুনয় বিনয় শুরু করল। তখন আমি দেখতে পেলাম যে সে হচ্ছে একজন মহিলা। নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত
তরবারি মুবারক উনার সম্মানার্থে ওই মহিলাটির উপর তরবারির আঘাত করিনি।”
সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, উয়ূনুল আছার ফি ফয়ূনিল মাগাযী, মা’রিফাতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি
মুবারক উনার লক্ষ্যে উনার হাত মুবারককে গুটিয়ে নিলেন এবং সম্মানিত তরবারি মুবারক
কোন নারীর উপর চালনা থেকে বিরত থাকলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
হযরত
কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
وَإِذَا رَجُلٌ مِنْ الْمُشْرِكِينَ جَامِعُ اللّأْمَةِ يَصِيحُ اسْتَوْسِقُوا كَمَا يُسْتَوْسَقُ جُرْبُ الْغَنَمِ. وَإِذَا رَجُلٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ عَلَيْهِ لَأْمَتُهُ فَمَشَيْت حَتّى كُنْت مِنْ وَرَائِهِ ثُمّ قُمْت أُقَدّرُ الْمُسْلِمَ وَالْكَافِرَ بِبَصَرِي، فَإِذَا الْكَافِرُ أَكْثَرُهُمَا عُدّةً وَأُهْبَةً فَلَمْ أَزَلْ أَنْظُرُهُمَا حَتّى الْتَقَيَا، فَضَرَبَ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ عَلَى حَبْلِ عَاتِقِهِ بِالسّيْفِ فَمَضَى السّيْفُ حَتّى بَلَغَ وَرِكَيْهِ وَتَفَرّقَ الْمُشْرِكُ فِرْقَتَيْنِ. وَكَشَفَ الْمُسْلِمُ عَنْ وَجْهِهِ فَقَالَ كَيْفَ تَرَى يَا حَضْرَتْ كَعْبُ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ؟ أَنَا حَضْرَتْ أَبُو دُجَانَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ.
অর্থ: “আমি সম্মানিত উহুদ জিহাদে অংশ গ্রহণকারী
মুসলমানদের মধ্যে ছিলাম। আমি যখন দেখলাম যে, মুশরিকদের সংখ্যা মুসলমানদের দ্বিগুণ তথা অনেকগুন তখন আমি এক পাশে সরে
দাঁড়ালাম। আমি দেখলাম জনৈক মুশরিক সৈন্য পূর্ণভাবে অস্ত্র সজ্জিত। সে দ্রুতবেগে
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অতিক্রম করে এগিয়ে
যাচ্ছে। সে বলছিল, হে আমার সাথীরা
পলাও। পালাও। যেমন যবেহ করার ভয়ে বকরী দল পালায়। সেভাবে কাফির মুশরিকরা পালাতে
লাগল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আরও দেখতে
পেলাম একজন মুসলিম মুজাহিদ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ওই
মুশরিকের অপেক্ষায় আছেন। তিনি পূর্ণভাবে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত। আমি গিয়ে সেই
মুসলিম মুজাহিদ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিছনে দাঁড়ালাম। আমি
উভয় সৈনিকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলাম। আমি বুঝে নিলাম যে, শারীরিক ও অস্ত্র-শস্ত্রের দিক থেকে মুশরিকটি অধিকতর
শক্তিশালী। আমি অপলক নেত্রে মুসলিম মুজাহিদ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু উনাকে ও
মুশরিকটাকেও দেখছিলাম। এক সময় উক্ত মুসলিম মুজাহিদ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি মুশরিক লোকটার মুখোমুখি হলেন। মুসলিম মুজাহিদ হযরত ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তরবারি মুবারকের আঘাত হানলেন মুশরিকটির ঘাড় বরাবর।
প্রচন্ড আঘাতে উনার সম্মানিত তরবারি মুবারক মুশরিকের ঘাড় ভেদ করে সোজা নিতম্ব
অতিক্রম করে গেল। লোকটি দুভাগে বিভক্ত হয়ে মাটিতে নেতিয়ে পড়ল। এবার মুসলিম সৈনিক তিনি
তার মুখের পর্দা সরালেন এবং বললেন, হে হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনি কি দেখছেন? আমি হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া)
0 Comments:
Post a Comment