হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৪০৪-১৬৭৬) (ঘ)


সম্মানিত উহুদ জিহাদে কুরাইশ কাফির  মুশরিকদের সর্বশেষ প্রস্তুতি এবং একে একে তাদের নিহত হওয়া:
 পবিত্র মক্কা শরীফের কুরাইশ কাফির মুশরিকরা পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে উহুদ পাহাড়ের  কোন ঘেষে তাঁবু ফেলেছিল। তাদের সৈন্যসংখ্যা ছিল মোট তিন হাজার। তন্মধ্যে সাতশত ছিল বর্ম পরিহিত। তাদের ঘোড়া ছিল দু’ শত এবং উট ছিল তিনশত। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কুরাইশ বংশীয় পনেরজন মহিলা ও তাদের সহযাত্রীরা উদ্দীপনাময় কবিতা পড়ে পড়ে যোদ্ধাদের উৎসাহ প্রদান করতো। নাউযূবিল্লাহ! যেমন তাদের কবিতার পংক্তি ছিলো,
إِنَّكُمْ إِنْ تُقَاتِلُوا نُعَانِقْ ... وَنَفْرِشِ النَّمَارِقْ
وَأَلَّا تُقَاتِلُوا نُفَارِقْ ... فِرَاقَ غَيْرَ وَامِقْ
 অর্থ: “যদি তোমরা অগ্রসর হও, তবে আমরা তোমাদের আলিঙ্গন করবো ও তোমাদের জন্য শয্যা রচনা করবো। আর যদি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো, তবে আমরা পৃথক হয়ে যাবো তোমাদের থেকে চিরদিনের মত।” (সুনানে সায়ীদ ইবনে মানছূর, মুসনাদে আল বাযযার, মুসতাদরিকে হাকীম, ফতহুল বারী, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 যে সমস্ত মহিলারা কাফির মুশরিকদের পক্ষ অবলম্বন করে যুদ্ধে আগমন করেছিল। এই কবিতা শুনে কাফির মুশরিকদের সবাই একযোগে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সে সমস্ত মহিলাদের কয়েকজনের নাম নি¤œ উল্লেখ করা হলো:
 ১. হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (তিনি পরবর্তীতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন)। তিনি ছিলেন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিতা আহলিয়া এবং হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিতা মাতা।
 ২. হযরত উম্মে হাকীম বিনতে হারিছ ইবনে হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (তিনিও পরবর্তীতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন)। তিনি ছিলেন হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া।
 ৩. হযরত ফাতিমা বিনতে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (পরবর্তীতে তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন)। তিনি ছিলেন হারিছ ইবনে হিশামের আহলিয়া।
৪. হযরত বারযা বিনতে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (তিনি পরবর্তীতে ঈমান গ্রহণ করেন)। তিনি ছিলেন সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার আহলিয়া।
 ৫. হযরত রীতা বিনতে শায়বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি ছিলেন হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিতা আহলিয়া।
 ৬. হযরত সালাফা বিনতে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি ছিলেন ত্বলহা ইবনে আবূ ত্বলহা জুমাই এর আহলিয়া।
 ৭. খানাস বিনতে খালিদ। সে ছিল, হযরত মাসয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা।
 ৮. আমরা বিনতে আলকামা।
 হযরত আল্লামা যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, শেষোক্ত দু’জন ব্যতীত অপর মহিলাগণ পরবর্তী সময়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 কুরাইশ কাফির মুশরিকরা তাদের যুদ্ধের সুবিধার্থে ডান পক্ষের জন্য হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে রাখে এবং বামপক্ষের জন্য হযরত ইকরামা ইবনে আবূ জাহিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দায়িত্বশীল নিয়োগ করে। তাছাড়া পদাতিক বাহিনীর দায়িত্ব ন্যস্ত করেছিল হযরত সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। মতান্তরে হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এবং তীরন্দাজ বাহিনীর দায়িত্ব হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ রাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে অর্পণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে এই পাঁচ বাহিনীর প্রধানই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কবুল করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (যুরকানী, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 কুরাইশ কাফির মুশরিকদের পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম যুদ্ধের ময়দানে আসে আবূ আমির। জাহেলীয়া যুগে সে ছিলো আউস গোত্রের সর্দার। তার এ জগতের প্রতি অনাসক্তি ও পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদির জন্য সকলে তাকে রাহেব বা সন্ন্যাসী বলে ডাকত। যখন পবিত্র মদীনা শরীফে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উজ্জ্বল নূর মুবারক উনার পরিপূর্ণ আভা ছড়িয়ে পড়েন, তখন এ কুলাঙ্গার আবূ আমির তা সহ্য করতে না পেরে পবিত্র মক্কা শরীফে চলে যায়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার নাম ফাসিক তথা কাফির বলেছেন।
 এই কাট্টা কাফির পবিত্র মক্কা শরীফে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মক্কার সাধারণ লোকজন ও কাফির মুশরিকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করতে থাকে এবং তাদের সাথে সেও সম্মানিত উহুদ জিহাদে চলে আসে। আসার সময় সে সকলকে বলে আওস গোত্রের লোকেরা যখন আমাকে দেখবে তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে না থেকে আমার সাথে চলে আসবে। নাউযূবিল্লাহ!
 স্মরণীয় যে, জিহাদের নিয়ম অনুযায়ি শুরুতেই দু’ দলের একজন করে মুকাবিলা করে, এদেরকে মুবারিয বলা হত। মুবারিযের শাব্দিক অর্থ, প্রতিদ্বন্দ্বী বা দ্বন্দ্ব যোদ্ধা। এই মুবারিয হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের পক্ষ থেকে ছিলেন। পাশাপাশি কুরাইশ কাফির মুশরিকদের পক্ষ থেকেও তারা পর্যাক্রমে মুবারিয নির্ধারন করে। শুরুতেই কুরাইশ কাফির মুশরিকদের থেকে যারা যুদ্ধের ময়দানে এসেছিল এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে যারা মুকাবিলা করেছিলেন উনাদের নাম উল্লেখ করা হলো।
  প্রথম মুবারিয: সম্মানিত জিহাদের শুরুতে পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকদের পক্ষের প্রথম মুবাযির হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে আসে আবূ আমির ফাসিক। সে এসেই জোর আওয়াজে চিৎকার দিয়ে বলে,
يَا مَعْشَرَ الْأَوْسِ، أَنَا أَبُو عَامِرٍ؛
 হে আওস গোত্র, আমি আবূ আমির। মহান আল্লাহ পাক তিনি আওস গোত্রের চক্ষু শীতল করুন। আওস গোত্রের হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তৎক্ষনাৎ বলে উঠলেন,
لَا أَنْعَمَ اللهُ بِك عَيْنًا يَا فَاسِقُ
 হে ফাসিক! মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমার চক্ষু কখনও শীতল করবেন না। আবূ আমির আওস গোত্রের হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের শক্ত জবাব শুনে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে কাফির মুশরিকদের মাঝে ফিরে গিয়ে বলল, আমার আসার পর আমার গোত্র বদলে গেছেন। (জাওয়ামিউস সীরাত, রওদ্বূল উনূফ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, যুরকানী, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাফসীরে ত্ববারী, উয়ূনুল আছার)
 দ্বিতীয় মুবারিয: এরপর পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকদের পতাকাবাহী তালহা ইবনে আবূ তালহা সে ময়দানে এসে চিৎকার দিয়ে বলল, হে আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনাদের ধারনা হলো আপনাদের তরবারির আঘাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তাড়াতাড়িই জাহান্নামে পাঠিয়ে দিবেনআর আমাদের তরবারির আক্রমণে আপনাদের যথাশীঘ্রই জান্নাতে পাঠিয়ে দিবেন। তাহলে আপনাদের মধ্যে কেউ কি আছেন যাকে আমার তরবারি জান্নাতে পাঠিয়ে দিবেন অথবা উনার তরবারি আমাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিবেন? তার এ ঘোষণা শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি এই কাফিরের মুকাবিলায় এগিয়ে গেলেন। তিনি এই কাফিরের উপর এমন ভাবে তরবারি মুবারক চালালেন যে, তার পা কেটে গেলো। সে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল এবং তার কাপড় সরে গেল। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি পিছনে সরে এলেন।
 হযরত ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় এগিয়ে গিয়ে তার মাথায় তরবারি মুবারক চালিয়ে মাথা দ্বিখন্ডিত করে দিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই কাফিরের নিহতে খুবই খুশি মুবারক প্রকাশ করলেন এবং ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবির মুবারক দিলেন। সাথে সাথে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবির ধ্বনিতে আকাশ বাতাশ মুখরিত করে তুললেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
  উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি এই কাট্টা কাফির ত্বলহা ইবনে ত্বলহাকে হত্যা করলে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুবই খুশি মুবারক প্রকাশ করলেন। (যুরকানী, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তৃতীয় মুবারিয: এরপর কাফির মুশরিকদের পতাকা দুই হাতে সামলিয়ে সামনে আগ্রসর হয়ে আসলো উসমান ইবনে আবূ ত্বলহা। সে মুখে আবৃত্তি করছিল,
 إنّ عَلَى أَهْلِ اللّوَاءِ حَقّا ... أَنْ تُخْضَبَ الصّعْدَةُ أَوْ تَنْدَقّا.
 অর্থ: “পতাকা বহনকারীর নৈতিক দায়িত্ব, শত্রুর খুনে তার হাতের অস্ত্র হবে রঞ্জিত। অথবা তা মারতে মারতে ভেঙ্গে পড়বে।” সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি এগিয়ে আসেন এই কাফিরের মুকাবিলায়। সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি এই কাফির উসমানের দুই হাত ও কাঁধ কেটে দিলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই এই কাফির নিহত হলো। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
চতূর্থ মুবারিয: এরপর পতাকা হাতে নিয়ে নিলো কাট্টা কাফির আবূ সা’দ ইবনে আবূ ত্বলহা। হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তৎক্ষনাৎ তাকে নিশানা করে তীর নিক্ষেপ করলেন, তীর গিয়ে তার গলায় লাগল। ফলে তার মুখ থেকে জিহ্বা বাইরে বের হয়ে আসলো। হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাট্টা কাফির আবূ সা’দকে তাড়াতাড়ি কতল করলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 পঞ্চম মুবারিয: এরপর এলো কাট্টা কাফির মুসাফিহ ইবনে ত্বলহা ইবনে আবূ ত্বলহা সে পতাকা হাতে নিলো। হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এক আঘাতেই এই কাট্টা কাফিরকে নির্মূল করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 ষষ্ঠ মুবারিয: এরপর কাট্টা কাফির হারিছ ইবনে ত্বলহা ইবনে আবূ ত্বলহা পতাকা তুলে ধরল। হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকেও এক আঘাতেই জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! কারো কারো মতে, হযরত যুবায়ির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকে কাট্টা কাফির হারিছ ইবনে ত্বলহা সে মারা যায়।
সপ্তম মুবারিয: এরপর কাট্টা কাফির কিলাব ইবনে ত্বলহা ইবনে আবূ ত্বলহা সে পতাকা উঠিয়ে সামনে আসলো। হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কাট্টা কাফিরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 অষ্টম মুবারিয: এরপর পতাকা তুলতে এগিয়ে আসে কাট্টা কাফির জুল্লাস ইবনে ত্বলহা ইবনে আবূ ত্বলহা। হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার তরবারি মুবারক নিয়ে এগিয়ে গেলেন এবং এই কাট্টা কাফিরকে হত্যা করলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 নবম মুবারিয: এরপর কাফির মুশরিকদের পক্ষে পতাকা তুলতে আসলো কাট্টা কাফির আরতাত শুরাহবিল। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি এগিয়ে এই কাফিরকেও এক কোপে দুই ভাগ করে দিয়ে তাকেও জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 দশম মুবারিয: এরপর কাট্টা কাফির শুরাইহ ইবনে কারিয পতাকা নিয়ে এগিয়ে এলে তাকেও হত্যা করা হয়। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! তার হত্যাকারী কে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
 একাদশ মুবারিয: অতপর কাট্টা কাফির শুরাইব- এর ক্রীতদাস কাট্টা কাফির সুওয়াব পতাকা নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। তাকে হত্যা করেন, হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি।
 মতান্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি অথবা সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি সুওয়াবকে হত্যা করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (যুরকানী, তাবাকাতে ইবনে সা’দ, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 এভাবে বাইশজন কুরাইশ কাফির মুশরিক সর্দার একজনের পর একজন করে ধ্বংসের ঘাটে নেমে আসে। হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদের নাম উল্লেখ করেছেন, সেই সাথে কে কোন হযরত ছাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে নিহত হয়েছে তা তিনি বর্ণনা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যুরকানী, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 হযরত ইউনূস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মুশরিকদের পতাকা বহনকারী কাট্টা কাফির ত্বলহা ইবনে আবূ ত্বলহা আবদারী সেদিন যুদ্ধ করার জন্য ময়দানে হাযির হয়ে দ্বন্দ্ব যুদ্ধের আহবান জানাচ্ছিল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তার নিকট থেকে একটু দূরে সরে অবস্থান করছিলেন। সর্বপ্রথম হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার মুকাবিলায় এগিয়ে গেলেন এবং তাকে আক্রমণ করলেন। এক সময় হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার উটের উপর চড়ে বসলেন আর তাকে ধরাশায়ী করে ফেললেন এবং নিজ তরবারি দিয়ে তাকে কতল করে ফেললেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এ বীরত্বের প্রশংসা মুবারক করে ইরশাদ মুবারক করলেন,
 إِنَّ لِكُلِّ نَبِيٍّ حِوَارِيًّا، وَحِوَارِيِّ حَضْرَتْ الزُّبَيْرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ.
 অর্থ: “প্রত্যেক নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাওয়ারী ও খিদমত মুবারক উনার আঞ্জামদানকারী থাকেন আর আমার হাওয়ারী হলেন হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (বুখারী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনাদে আবূ দাউদ শরীফ, মুসনাদুল হুমাইদী, মুসনাদে আহমাদ)
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
 لَوْ لَمْ يَبْرُزْ إِلَيْهِ، لَبَرَزْتُ أَنَا إِلَيْهِ; لِمَا رَأَيْتُ مِنْ إِحْجَامِ النَّاسِ عَنْهُ.
  অর্থ: “আমি যখন দেখলাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ত্বলহা ইবনে আবূ ত্বলহা থেকে সরে থাকছেন তখন হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যদি বেরিয়ে না আসতেন তবে আমি নিজেই তার বিরুদ্ধে জিহাদ মুবারকে অবতীর্ণ হতাম।” সুবহানাল্লাহ। সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!  (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ  ফিসীরাতে খাইরিল ইবাদ, সীরতে হালাবিয়্যাহ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)

0 Comments: