হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি আযাদী শান মুবারক গ্রহণ করে বি’রে মাঊনাহ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফের দিকে
ফিরছিলেন। তিনি যখন ‘কানাত’ উপত্যকার উপকন্ঠে ‘কারকারা’ নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন বানূ আমির গোত্রের দু’টি লোকের সাথে উনার সাক্ষাৎ হয়।
আর উক্ত লোক দু’টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তাপ্রাপ্ত ছিলো। কিন্তু হযরত আমর
ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তা জানা ছিল না। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা
করলেন,
তোমরা কোন গোত্রের লোক? তারা বলল, আমরা বানূ আমির গোত্রের। এরপর
তিনি ক্ষনিকের জন্য অমনোযোগিতার ভান করলেন, পরে তারা ঘুমিয়ে গেল। যখন তারা ঘুমে অচেতন হয়ে গেল, তখন তিনি তরবারি নিয়ে তাদের দু’জনকে হত্যা করলেন। তিনি মনে
করেছিলেন,
বানূ আমির গোত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদেরকে যে শহীদ করেছে, এর দ্বারা তিনি
কিছুটা হলেও তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছেন।
হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে সমস্ত ঘটনা পেশ করলেন। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
لَقَدْ قَتَلْت قَتِيلَيْنِ لَأَدِيَنّهُمَا
অর্থ: “আপনি যে, দু’ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন আমাকে তাদের রক্তপণ (দিয়াত) পরিশোধ করতে হবে।”
সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরতে ইবনে
হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, উয়ূনুল আছার ফি
ফুয়ূনিল মাগাযী, জাওয়ামিউস সীরাত, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিলু ফিত্-তারিখ)
উল্লেখ্য
যে,
বানূ নাযীর গোত্রও বানূ আমির গোত্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। এই রক্তপণ আদায়ের ক্ষেত্রে
তারাও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের অনুসারী। এজন্য তাদেরও রক্তপণ আদায়া করা চুক্তির শর্ত
মোতাবেক জরুরী ছিল। তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি রক্তপণের নির্ধারিত অংশ আদায়ের উদ্দেশ্যে বানূ নাযীর গোত্রের
এলাকায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। সে সময় উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে ছিলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবার আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদুনা হযরত যূন-নূরাইন আলাইহিস সালাম, হযরত জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ উবাইদাহ ইবনে র্জারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ আরো কতক
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। (সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম,)
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইহুদীদের রক্তপণ (বা দিয়্যাত) আদায়ের উদ্দেশে যখন তাদের এলাকায় তাশরীফ মুবারক
গ্রহণ করলেন তখন তারা বললো, আপনি যা ফায়সালা
করবেন সে ব্যপারে আমরা আপনার ফায়সালা মুবারক মেনে নিব।
এরপর দেখা গেল ইহুদীরা পরস্পর মিলিত হলো। তারা
বলাবলি করল, দেখ এরূপ সুযোগ আর হাতে আসবে না।
এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
তাদের একটি ঘরের দেয়ালের পাশে অবস্থান মুবারক করছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, বানূ নাযীর গোত্রের লোকেরা বাহ্যিকভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হাসিমুখে অভ্যার্থনা জানাল, তিনি যে রক্তপণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে তারা
সম্মতি প্রকাশ করল এবং তা যথাশীঘ্রই আদায়ের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। কিন্তু তাদের
বিপরীত রূপ ছিলো ভিন্ন ধরনের। তারা ভিতরে ভিতরে ষড়যন্ত্র করল যে, তাদের এক ব্যক্তি সকলের চোখের আড়ালে দেয়ালে উঠে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর বড় ভারী
পাথর ছেড়ে দিবে, এই পাথর চাপায় পড়ে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীদারে ইলাহীতে তাশরীফ
মুবারক গ্রহণ করবেন। নাউযূবিল্লাহ! তাদের একজন সাল্লাম ইবনে মিশকাম বলল,
لَا تَفْعَلُوْا، وَاللهِ لِيَخْبِرَنَّ بِمَا هممتم وَإنَّهُ لِيِنْقُضُ الْعَهْدَ بَيْننَا وَبَيْنَهُ،
অর্থ: “তোমরা এমনটা করো না, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! অবশ্যই অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক
তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে তোমরা যা করতে চাচ্ছ সে বিষয়টি জানিয়ে দিবেন, আর এটা উনার সাথে আমাদের সম্পাদিত চুক্তির সুস্পষ্ট লংঘন (দেখা গেলো ইহুদীরা
তার কথা শুনলো না।)। (উমদাতুল ক্বরী, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তারা যখন বলাবলি করছিল, কে আছে যে এই ঘরের ছাদে উঠে উনার উপর একটি পাথর গড়িয়ে দিবে
এবং এভাবে উনার কবল থেকে আমাদেরকে নিস্কৃতি দিবে। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ!
নাউযূবিল্লাহ! আমর ইবনে জিহাশ ইবনে কা’ব নামক তাদের একদুরাচার লোক এতে সাড়া দিল।
সে বলল,
আমি প্রস্তুত। নাউযূবিল্লাহ! প্রস্তাব মত সে পাথর গড়িয়ে দেওয়ার
জন্য ছাদে উঠল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তখনও তিনি ঘরের নীচে অবস্থান মুবারক করছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে তখন উপস্থিত ছিলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা
হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনিসহ আরো কতিপয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। সুবহানাল্লাহ!
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, বানূ নাযীর ইহুদী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আরো একটি বিশ্বাসভঙ্গের
আচরণও প্রকাশ পেয়েছিল। তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ মর্মে প্রস্তাব দিলো যে, আপনাদের পক্ষ থেকে তিনজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমসহ
আপনি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করবেন, আমাদের পক্ষ
থেকে তিনজন ধর্মবিশারদ উপস্তিত থাকবে। তারা আপনাদের সাথে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে
আলোচনা করবে। যদি তারা আপনাদের সম্মানিত দ্বীন ইসলামের প্রতি ঈমান আনেন তাহলে আমরা
সকলেই ঈমান আনবো। এ ছিল প্রকাশ্য কথাবার্তা, কিন্তু তাদের ভিতরগত বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের সেই তিন ধর্মবিদকে
তারা বলল,
তোমরা কাপড়ের আড়ালে তীক্ষè ধারালো ছুরি নিয়ে যাবে। যখনই
সুযোগ পাবে ছুরি চালিয়ে উনাদেরকে দফারফা করবে। নাউযূবিল্লাহ! এভাবে বিভিন্ন ঘটনা ও
আচরণের প্রেক্ষিতে তাদের প্রতি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসন্তুষ্ট মুবারক প্রকাশ করলেন।
স্বয়ং খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত অহী মুবারক
নাযিল করেন। তাদের দূরভিসন্ধি সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
আনুষ্ঠানিক ভাবে অবহিত করলেন। সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখান থেকে উঠে সোজা পবিত্র মদীনা শরীফ
মুবারকে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারা অনেকক্ষণ অপেক্ষা মুবারক করার পর যখন দেখলেন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফিরে আসছেন না, তখন উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্ধানে বের হলেন।
পথে
পবিত্র মদীনা শরীফ হতে আগমনরত এক ব্যক্তির সাথে উনাদের সাক্ষাৎ হল। হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তার কাছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে বলল, এইমাত্র উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করতে
দেখলাম। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দ্রুত গিয়ে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত
খিদমত মুবারকে উপস্থিত হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে প্রকৃত ঘটনা জানালেন এবং বললেন, ইহুদীরা কি কি ষড়যন্ত্র করেছিল। তিনি উনাদেরকে বানূ নাযীর
গোত্রের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ মুবারক দিলেন।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وَاسْتَعْمَلَ عَلَى الْمَدِينَةِ حَضْرَتْ ابْنَ أُمّ مَكْتُومٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه
অর্থ: ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার প্রতিনিধি নিযুক্ত করলেন।’
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
ثُمّ سَارَ النّاسُ حَتّى نَزَلَ بِهِمْ
অর্থ:
‘এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সবাইকে নিয়ে বানূ নাযীরের এলাকায় পৌঁছলেন এবং সেখানে ছাউনি স্থাপন করলেন।’
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وَذَلِكَ فِي شَهْرِ رَبِيعٍ الْأَوّلِ فَحَاصَرَهُمْ سِتّ لَيَالٍ
অর্থ: ‘এ
সম্মানিত ঘটনা হিজরী চতুর্থ সনের পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াম তথা পবিত্র
শাহরুল আ’যম শরীফে সংঘটিত হয়।’ সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
স্বয়ং আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত
নির্দেশ মুবারকে বানূ নাযীর তথা ইহুদীদেরকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বহিস্কার
করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
هُوَ الَّذِي أَخْرَجَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِن دِيَارِهِمْ لِأَوَّلِ الْحَشْرِ ۚ مَا ظَنَنتُمْ أَن يَخْرُجُوا ۖ وَظَنُّوا أَنَّهُم مَّانِعَتُهُمْ حُصُونُهُم مِّنَ اللَّـهِ فَأَتَاهُمُ اللَّـهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوا ۖ وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ الرُّعْبَ ۚ يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُم بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ. وَلَوْلَا أَن كَتَبَ اللَّـهُ عَلَيْهِمُ الْجَلَاءَ لَعَذَّبَهُمْ فِي الدُّنْيَا ۖ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابُ النَّارِ .ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللَّـهَ وَرَسُولَهُ ۖ وَمَن يُشَاقِّ اللَّـهَ فَإِنَّ اللَّـهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ. مَا قَطَعْتُم مِّن لِّينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَىٰ أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللَّـهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ.
অর্থ: “তিনিই সেই খ¦লিক মালিক রব
মহান আল্লাহ পাক যিনি কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে প্রথমবার সমবেতভাবে
তাদেরকে আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। আপনারা কল্পনাও করেননি যে, তারা নির্বাসিত হবে এবং তারা মনে করেছিল তাদের দুর্গগুলি
তাদেরকে রক্ষা করবে, মহান আল্লাহ পাক
উনার থেকে; কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার আযাব
এমন এক দিক থেকে আসল যা ছিল তাদের ধারণাতীত এবং যা তাদের অন্তরে ত্রাসের সঞ্চার
করল। তারা ধ্বংস করে ফেলল বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হাতেও; অতএব হে চক্ষুস্মান ব্যক্তিগণ! আপনারা নছীহত গ্রহণ করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি
তাদেরকে নির্বাসন না করে তাদেরকে পৃথিবীর যমীনে অন্য শাস্তি দিতেন; পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। ইহা এইজন্য যে, তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করেছিল। এবং কেহ মহান আল্লাহ পাক
উনার বিরুদ্ধাচরণ করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে কঠিন শাস্তিদিবেন। নাউযূবিল্লাহ!
ইহা এই জন্য যে, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার
হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
বিরুদ্ধাচরণ করেছিল এবং কেউ মহান আরøাহ পাক উনার বিরুদ্ধাচরণ করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি
শাস্তিদানে কঠোর। আপনারা যে খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলেছেন এবং যেগুলো কান্ডের উপর
স্থির রেখে দিয়েছেন তাতো মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত অনুমতিক্রমে। তা এই জন্য
যে,
মহান আল্লাহ পাক তিনি পাপাচারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন। (পবিত্র
সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ: ২-৫)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি কিতাবীদের মধ্যে
যারা কাফির তাদেরকে প্রথমবার সমবেতভাবে তাদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করেছেন। এখানে
কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফির তারা হচ্ছে, পবিত্র মদীনা শরীফের বানী নাযীর সম্প্রদায়। তারা ছিলো সাইয়্যিদুনা হযরত হারূন
আলাইহিস সালাম উনার বংশধর।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
كَانَ إِجْلَاءُ بَنِي النَّضِيرِ بَعْدَ مَرْجِعِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أُحُدٍ وَفَتْحَ قُرَيْظَةَ عِنْدَ مَرْجِعِهِ مِنَ الْأَحْزَابِ وَبَيْنَهُمَا سَنَتَانِ
অর্থ: ‘বানী নাযীরকে দেশ থেকে বহিস্কার করা
হয়েছিল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সম্মানিত উহুদ জিহাদ থেকে ফিরার পর। আর বানী কুরাইজার নিধনপর্ব সংঘটিত হয়েছিল, সম্মানিত আহযাব জিহাদ উনার শেষে। সুবহানাল্লাহ! আর উভয়
সম্মানিত জিহাদের মাঝে ব্যবধান ছিলো দু’ বছর।’ (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে বাগবী)
উল্লেখ্য যে, বানী নাযীরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল সন্ধিচুক্তি লংঘনের কারণে। নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হিজরত
মুবারক করে যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন তখন
ইহুদীরা সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হয়। সন্ধিচুক্তির মধ্যে শর্ত ছিলো, প্রত্যেকেই স্বীয় ধর্ম পালন করবেন, কেউ কারো বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত হবেন না। কেউ কারো বিপক্ষে
শত্রুকে সাহায্য করতে পারবেন না। দেখা গেলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন
সম্মানিত বদর জিহাদে তিন শত জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করলেন এবং মক্কার কাফির মুশরিকদেরকে কঠিন
ভাবে পরাজিত ও লাঞ্ছিত করলেন তখন এই ইহুদীরা বলাবলি শুরু করলো,
وَاللَّهِ إِنَّهُ حَضْرَتْ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي وَجَدْنَا نَعْتَهُ فِي التَّوْرَاةِ لَا تُرَدُّ لَهُ رَايَةٌ،
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নিশ্চয়ই
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই সেই
আখিরী নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর উনার কথাই আমরা পাঠ করে থাকি
পবিত্র তাওরাত শরীফে। উনার সম্মানিত সুমহান পতাকা মুবারক কখনো অবনমিত হবে না।’
সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে মাযহাবী, তাফসীরুল মুনীর, তারিখুল খ¦মিস)
অতঃপর সম্মানিত উহুদ জিহাদে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বেমেছাল ভাবে বিজয় লাভ করলেন আর কাফির মুশরিকরা
চরম ভাবে লাঞ্ছিত হয়ে জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে গেল। বিপরীতে মুনাফিক সরদার উবাই
বিন সলূল ও তার অনুসারীদের এলোমেলো কথাবার্তায় ইহুদীদের অবস্থা পাল্টিয়ে গেল।
ইহুদীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে কষ্ট দেয়ার লক্ষ্যে মুনাফিকদের সাথে মিলিত হলো এবং তারা প্রকাশ্যে শত্রুতা
শুরু করলো। নাউযূবিল্লাহ! মূলত; এই ইহুদীরাই
সর্বপ্রথম ভঙ্গ করেছিল সন্ধিচুক্তি। কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ চল্লিশ জন
ইহুদীকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল পবিত্র মক্কা শরীফে। সেখানে তারা মিলিত হয়েছিল
কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সাথে। নাউযূবিল্লাহ! এরপর কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফ সে
সেখানে ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শ করে ইহুদীদেরকে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে আসে। সে
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
বিরুদ্ধে অবমাননামূলক কথা-বার্তা, গালি-গালাজ
ইত্যাদিতে ছিল অগ্রগামী। নাউযূবিল্লাহ! পরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নির্দেশক্রমে বিশিষ্ট ছাহাবী
হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কাট্টা কাফির কা’ব
ইবনে আশরাফকে হত্যা করেন। (ইতিপূর্বে আমরা কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের হত্যা
সম্পর্কে আলোচনা করেছি)।
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ইহুদীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে প্রস্তাব পাঠালো যে, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার
৩০ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে আপনাদের ও
আমাদের এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে আসুন। আমরাও উপস্থিত হবো আমাদের ত্রিশ জন লোক
নিয়ে। আমাদের ধর্মবিদরা আপনার কথা শুনবে। যদি তারা আপনাকে সত্য নবী ও রসূল
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে মেনে নেয়, তবে আমরাও আপনার উপর ঈমান আনবো।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন। নির্ধারিত দিনে
ত্রিশজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যথাস্থানে তাশরীফ
মুবারক গ্রহণ করলেন। তারা এলো তাদের ত্রিশজনকে নিয়ে। কাছাকাছি হওয়ার আগে তারা
নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
কাছে তোমরা পৌঁছবে কিভাবে? কারণ উনার সঙ্গে
রয়েছেন ত্রিশজন জান-মাল কুরবানকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল
আনহুম। সুবহানাল্লাহ! এরপর তারা কাছে এসে বলল, এখানেতো আমরা ষাটজন উপস্থিত। এতো লোকের সামনে কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
সম্ভব?
আপনি বরং তিনজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদেরকে নিয়ে আসুন। আমারাও আসবো আমাদের তিনজন ধর্মবিদকে নিয়ে। যদি তারা
আপনাদের সম্মানিত দ্বীন ইসলামের প্রতি ঈমান আনেন তাহলে আমরা সকলেই আপনার প্রতি
ঈমান আনবো। এ ছিল প্রকাশ্য কথাবার্তা, কিন্তু তাদের ভিতরগত বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের সেই তিন ধর্মবিদকে
ইহুদীরা বলেছিল, তোমরা কাপড়ের আড়ালে তীক্ষè ধারালো ছুরি
নিয়ে যাবে। যখনই সুযোগ পাবে ছুরি চালিয়ে উনাদেরকে দফারফা করবে। নাউযূবিল্লাহ!
তাদের এই অতকিৃত আক্রমণ করা এবং বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক
তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে সম্মানিত অহী মুবারক উনার মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! তাই
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ সংবাদ
পেয়ে সামনে অগ্রসর না হয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে এলেন। অপর দিকে বানী নাযীর
গোত্রের একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইতোপূর্বে সম্মানিত দ্বীন
ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। উনার বোন উনাকে ইহুদীদের গোপন ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়েছিলেন।
সুবহানাল্লাহ! এভাবে বিভিন্ন ঘটনা ও আচরণের প্রেক্ষিতে ইহুদীদের প্রতি নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসন্তুষ্ট
মুবারক প্রকাশ করলেন এবং পরবর্তীতে বানী নাযীরকে দেশ থেকে বহিস্কারও করে দিলেন।
সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ
উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ إِذْ هَمَّ قَوْمٌ أَن يَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ ۖ وَاتَّقُوا اللَّـهَ ۚ وَعَلَى اللَّـهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! আপনাদের প্রতি মহান আল্লাহ
পাক উনার বেমেছাল নিয়ামত তথা অনুগ্রহ মুবারকের কথা স্মরণ করুন যখন এক সম্প্রদায়
আপনাদের বিরুদ্ধে হস্ত উত্তোলন করতে চেয়েছিল, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের হাত সংযত করেছিলেন; সুতরাং তোমরা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনাকেই ভয় করো। আর
মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তায়াক্কুল তথা নির্ভর করা ঈমানদারগণের দায়িত্ব ও
কর্তব্য।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ১১)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ খানা অবতীর্ণ হওয়ার কারণ
সম্পর্কে বলা হয়, হযরত ইবনে
ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আমর
রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের বর্ণনামতে, সালাম ইবনে মুশকাম সে ইহুদীদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে নিষেধ
করেছিল এবং বলেছিলো তোমরা এ রকম করলে এ কথা অবশ্যই প্রমাণ হয়ে যাবে যে, আমরা সন্ধিভঙ্গকারী। আর আমরাতো উনাদের সাথে সন্ধিবদ্ধ বা
চুক্তিবদ্ধ। সুতরাং তোমরা এমন করো না। (তাফসীরে ইবনে মাযহারী)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে হযরত ইকরামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু উনার সূত্রে হযরত আবদ ইবনে হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বর্ণনা করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইহুদীদের দুরভিসন্ধির কথা জানিয়ে দিলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে এলেন। তখন কেনানা ইবনে সুরিয়া
নামের এক ইহুদী অন্যান্য ইহুদীদের বলল, তোমরা কি জানো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি হঠাৎ চলে গেলেন কেন? তারা বলল, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এর কারণ আমরা যেমন জানি না, তেমনি তুমিও জানো না।
কেনানা
বলল,
بَلَى وَالتَّوْرَاةِ إِنِّي لَأَدْرِي قَدْ أُخْبِرَ حَضْرَتْ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَا هَمَمْتُمْ بِهِ مِنَ الْغَدْرِ فَلَا تَخْدَعُوا أَنْفُسَكُمْ, وَاللَّهِ إِنَّهُ لِرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا قَامَ إِلَّا أَنَّهُ أُخْبِرَ بِمَا هَمَمْتُمْ بِهِ وَإِنَّهُ لَآخِرُ الْأَنْبِيَاءِ
অর্থ: ‘হ্যাঁ, তাওরাতের ক্বসম! আমি এর কারণ জানি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের দুরভিসন্ধির কথা জানতে পেরেই চলে
গেছেন। সুতরাং তোমরা উনার বিরুদ্ধে আর ষড়যন্ত্র করো না। মহান আল্লাহ পাক উনার
ক্বসম! তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল তথা হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তিনি
আখিরী নবী তথা সর্বশেষ নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ সুবহানাল্লাহ!
(দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, তাফসীরে মাযহারী, সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদা)
কেনানা আরো বলেন, তোমরা চেয়েছিলে আখিরী নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেনো নবী
সাইয়্যিদুনা হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনার বংশধর থেকে হন। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
আখিরী নবী ও রসূল হিসেবে সৃষ্টির সূচনা লগ্ন মনোনীত করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর
তাওরাত শরীফতো আমাদের সামনেই রয়েছে। উনার মধ্যেতো একথা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে,
أَنَّ مَوْلِدَهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ وَأَنَّ هِجْرَتَهُ يَثْرِبُ وَصِفَتُهُ بِعَيْنِهَا مَا تُخَالِفُ مَا فِي كِتَابِنَا وَلَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْكُمْ ظَاعِنِينَ تَتَنَاغَى صِبْيَانُكُمْ قَدْ تَرَكْتُمْ دُورَكُمْ خُلُوفًا وَأَمْوَالَكُمْ إِنَّمَا هِيَ شَرَفُكُمْ
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই যিনি আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হবেন
উনার মহাসম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক উনার স্থান হবেন পবিত্র মক্কা শরীফ।
সুবহানাল্লাহ! এবং নিশ্চয়ই উনার মহাসম্মানিত হিজরত মুবারক উনার স্থান হবেন পবিত্র
মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক ও খুছূছিয়াত মুবারক ইত্যাদি
হুবাহু সেরকম যেরকম লেখা রয়েছে আমাদের তাওরাত শরীফে। (বরং তার চেয়ে কোটি কোটি গুন
বেশি। যা সমস্ত জ্বীন-ইনসানের আক্বল সমঝের উর্ধ্বে)। সুবহানাল্লাহ! আমি দেখতে
পাচ্ছি,
তোমরা এ স্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছ। ধ্বংস হবে তোমাদের
সন্তান-সন্ততি, বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্পদ। তোমাদের পরিণতি খুবই মন্দ তথা খারাপ।’
নাউযূবিল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, তাফসীরে মাযহারী, সুবলুল হুদা
ওয়ার রাশাদা)
সুতরাং তোমরা আমার কথা শোন। মেনে নাও দু’টো
বিষয়ের যে কোন একটিকে। তৃতীয় বিষয় তোমাদের জন্য কল্যাণকর নয়। ইহুদীরা জিজ্ঞেস করলো, প্রথম দু’টো বিষয় কি? কেনানা বলল, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে
দাখিল হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও
উনার পুতঃপবিত্র মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত
গোলামে পরিনত হওয়া। তাহলে তোমাদের সন্তান-সন্ততি, সহায়-সম্পদ সবকিছুই রক্ষা পাবে। তোমরাও মর্যাদাবান হবে উনার হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মতো। সুবহানাল্লাহ! ইহুদীরা বলল, কিন্তু আমরাতো তাওরাত শরীফ ও নবী সাইয়্যিদুনা হযরত
কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপদেশ ত্যাগ করতে পারিনা। কেনানা বলল, তাহলে গ্রহণ করো দ্বিতীয়টি। অবিলম্বে এই স্থান ছেড়ে অন্যত্র
গমনের নির্দেশ দিল। এ নির্দেশও তোমাদের জন্য ফায়দা দিতে পারে। যদি তা তোমরা
নির্বিবাদে পালন করো। তাহলে তিনি তোমাদের জীবন ও সম্পদ উনাদের জন্য হালাল সাব্যস্ত
করবেন না। তোমরা সুযোগ মতো তোমাদের মাল-মাত্তা বিক্রয় করে দিতে পারবে। অথবা সঙ্গে
করে নিয়ে যেতে পারবে। তারা বলল, হ্যাঁ, এ কথা অবশ্যই ঠিক। সালাম ইবনে মুশকাম বলল, হে কেনানা! তোমার আচরণ প্রথম থেকেই আমাদের পছন্দনীয় না। এখন
আবার বলছো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে এই শহর ছেড়ে যেতে বলবেন। এদিকে
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র
মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেই হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকে ডেকে বললেন, আপনি এখনই বানী
নাযীরের বসতিতে যান। গিয়ে তাদেরকে বলবেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ঘোষণা দিতে বলেছেন যে, তোমরা আমার শহর ছেড়ে চলে যাও। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তৎক্ষনাৎ রওয়ানা হলেন।
তাদের বসতিতে উপস্থিত হয়ে বললেন, মহান আল্লাহ পাক
উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি উনার মহাসম্মানিত ঘোষণা মুবারক দেয়ার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন। তবে তার আগে আমি
তোমাদেরকে একটি বিষয়ে অবহিত করতে চাই, তোমরা হয়ত তা জানো। তারা বলল, আপনি বলুন। কি
বলতে চান।
হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি বললেন, তোমাদেরকে আমি
ওই তাওরাত শরীফের ক্বসম দিয়ে বলছি, যা অবতীর্ণ হয়েছিল নবী হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপরে, তোমাদের কি মনে আছে আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে আনুষ্ঠানিক
ভাবে মহাসম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের পূর্বে একদিন তোমরা আমাকে এক সমাবেশে
বলেছিলে,
হে হযরত ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি যদি
ইহুদী হতে চান তবে আমরা আপনাকে ইহুদী বানিয়ে নিবো আর যদি তা না চান তবে আপনাকে
শাস্তি পেতে হবে। আমি বলেছিলাম ইহুদী হবার অভিলাষ আমার নেই। তোমরা আমাকে শাস্তি
দিতে চাইলে দিতে পারো। তোমরা আমাকে শাস্তিই দিয়েছিলে। নাউযূবিল্লাহ!
তিনি তখন
বললেন,
أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَرْسَلَنِي إِلَيْكُمْ يَقُولُ لَكُمْ قَدْ نَقَضْتُمُ الَّذِي جَعَلْتُ لَكُمْ بِمَا هَمَمْتُمْ مِنَ الْغَدْرِ بِي. وَأَخْبَرَهُمْ بِمَا كَانُوا ارْتَأَوْا مِنَ الرَّأْيِ وَظُهُورِ عَمْرِو بْنِ جَحَّاشٍ لِطَرْحِ الصَّخْرَةِ فَسَكَتُوا فَلَمْ يَقُولُوا حَرْفًا. وَيَقُولُ اخْرُجُوا مِنْ بَلَدِي فَقَدْ أَجَّلْتُكُمْ عَشْرًا فَمَنْ بَقِيَ بَعْدَ ذَلِكَ ضَرَبْتُ عُنُقَهُ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তোমাদের কাছে এবং তোমাদেরকে
বলতে যে,
তোমরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছো। সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করেছো। আমর
ইবনে হাজ্জাজের বাড়ীর ছাদ থেকে তোমরা পাথর নিক্ষেপ করতে চেয়েছিলে। সুতরাং
তোমাদেরকে এ শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে। দশদিন সময় দেয়া হলো তোমাদেরকে। এরপর থেকে
তোমাদের যাকে এখানে পাওয়া যাবে, তার গর্দান
উড়িয়ে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! এই ঘোষণা শুনে ইহুদীরা অন্যত্র যাত্রার জন্য
তোড়জোড় শুরু করলো। খুঁজতে শুরু করলো যানবাহন। (দালায়িলূন নুবুওওয়াহ, তাফসীরে মাযহারী, হায়াতু হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী)
এমতাবস্থায় কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূলসহ
কতিপয় নাফরমান তথা কাট্টা মুনাফিক ওয়াদীয়া মালিক ইবনে কাওকাল, সুওয়াইদ, দাইস প্রমুখরা
বানূ নাযীর গোত্রকে এই মর্মে বার্তা পাঠাল যে, হে ইহুদীরা! তোমরা অবিচল থাক এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফিরে দাঁড়াও। আমরা
কিছুতেই তোমাদের পরিহার করব না। তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হলে আমরা তোমাদের
সক্রিয় সহযোগিতা করব। তোমাদের বহিস্কার করা হলে আমরা তোমাদের সাথে বের হয়ে যাব। সে
মতে বানূ নাযীর তাদের সাহয্যের অপেক্ষায় থাকল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুনাফিকরা কোন
প্রকার সাহায্য করতে পারলো না।
নাউযূবিল্লাহ!
কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল সে আরো মিথ্যা
কথা বলল,
হে ইহুদীরা! আমার সাথে আমার গোত্রের ও অন্যান্য আরব গোত্রের
দু’হাজার লোক রয়েছে। আমরা সকলেই তোমাদেরকে সাহায্য করতে তোমাদের দুর্র্গে উপস্থিত
হবো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আসার আগেই আমরা
যথাসময়ই চলে আসবো। আমরা সকলে তোমাদের আগে মৃত্যুবরণ করতে রাজী। বানী কুরাইজার
লোকেরাও তোমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবো। সুতরাং তোমরা নিজেদেরকে সহায়হীন ভেবো না।
তাছাড়া বানী গাতফানওতো তোমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। তারাও তোমাদেরকে সাহায্য করবে।
এরপর মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূল সে কা’ব ইবনে আসাদ কারাজীর নিকটও লোক প্রেরণ
করলো। কাট্টা মুনাফিক সে তাকে বলল, তুমি ও তোমার সঙ্গী-সাথীদেরকেও আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। কা’ব বলল, আমরাতো সন্ধিভঙ্গ করতে পারবো না। এরকম উত্তর পেয়ে সে নিরাশ
হয়ে গেলো। সে চাইতো, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বানী নাযীরের
উত্তেজনাকে অব্যহত রাখতে। নাউযূবিল্লাহ! এরপর সে সাহায্য কামনা করলো হুয়াই ইবনে
আখতাব কারাজীর নিকটে। হুয়াই প্রথমে তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলো। কিন্তু উবাই বিন
সুলূল পূনঃপূনঃ অনুরোধে নরম হয়ে বলল, ঠিক আছে আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে জানিয়ে দিবো আমরা কেউ স্থান ত্যাগ করবো না। আপনি যা করবার তাই করুন।
নাউযূবিল্লাহ!
এদিকে
ইহুদী সালাম ইবনে মুশকাম বলল, তোমাদের মতামতের
প্রতি যদি আমার কোন প্রকার সন্দেহ থাকতো, তবে আমি ইহুদীদেরকে নিয়ে আলাদা হয়ে যেতাম। হুয়াই হুঁশিয়ার হও! তুমি কি জানো, আমি যা জানি। শুনে রাখো, আমাদের সকলেই জানে, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র গুনাবলীর
বিবরণতো আমাদের পবিত্র তাওরাত শরীফেই রয়েছে। তাসত্ত্বেও উনাকে আমরা মেনে নিতে
পারছি না। নাউযূবিল্লাহ! ঠিক আছে উনাকে আমরা নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম হিসেবে মেনে নিতে নাই পারি তবে উনার কথামতো অন্তত এ শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে
যাই। আমি জানি, সন্ধিভঙ্গের ব্যাপারে তুমি আমার
অভিমতের বিরোধী। যখন খেজুর মাওসুম আসবে তখন আমরা না হয় ফিরে আসবো। হুয়াই তার
প্রস্তাব গ্রহণ করলো না। বরং তার ভাই জুদী ইবনে আখতাবকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে পাঠিয়ে জানিয়ে দিলো, আমরা আমাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না। আপনার যা ইচ্ছা তাই
করতে পারেন। নাউযূবিল্লাহ! হুয়াই তার ভাই জুদী দ্বারা উবাই বিন সুলূলকেও জানিয়ে
দিলো যে, আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার কাছে সন্ধিভঙ্গের সংবাদ জানিয়ে দিয়েছি। এখন তোমরা বনী নাযীরের
সঙ্গে যে অঙ্গীকার করেছো, সে মোতাবেক কাজ
করো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যখন জুদীর মুখে হুয়াইয়ের বক্তব্য শুনলেন, তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
فَأَظْهَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التّكْبِيرَ وَكَبّرَ الْمُسْلِمُونَ لِتَكْبِيرِهِ
অর্থ: “অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উচ্চকন্ঠ মুবারকে তাকবীর ধ্বনি দিলেন।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও উনার অনুসরণ মুবারক করে
সমস্বরে তাকবীর মুবারক দিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, যাদুল মাসীর)
নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক
করলেন,
এখন আমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে সম্মানিত জিহাদে যাবো। এদিকে
জুদী সে কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূলের কাছে গেলো তখন সে ছিলো তার ঘরের মধ্যে।
তার কাছে বসেছিলো আরো কিছুসংখ্যক লোক।
প্রসিদ্ধ
সীরাত ও তারিখ গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
وَقَدْ نَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَسِيرِ إلَى بَنِي النّضِيرِ فَيَدْخُلُ حَضْرَتْ عَبْدُ اللّهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه عَلَى أُبَيّ بْنُ سُلُوْلِ أَبِيهِ وَعَلَى النّفَرِ مَعَهُ وَعِنْدَهُ جُدَيّ بْنُ أَخْطَبَ فَلَبِسَ دِرْعَهُ وَأَخَذَ سَيْفَهُ فَخَرَجَ يَعْدُو،
অর্থ: “অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি আহবান করলেন, হে হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন, আপনারা এখন বনী নাযীরের লোকালয়ের দিকে ছফর করুন। মুনাফিক
সরদার উবাই বিন সুলূলের ছেলে ছিলেন বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু। তিনি উনার পিতার কাছে গেলেন এবং দেখতে পেলেন তার কাছে রয়েছে বেশ কিছু
লোক। জুদী ইবনে আখতাবও রয়েছে তার সাথে। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি জিহাদের বর্ম পরিধান করলেন এবং উনার তরবারী মুবারক নিলেন। অতঃপর
তিনি শত্রুদের সঙ্গে সম্মানিত জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হলেন।” (তাফসীরে মাযহারী, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী)
অতঃপর মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূলের কাছ থেকে
উঠে জুদী ইবনে আখতাব চলে গেলো তার ভাই হুয়াইয়ের কাছে। হুয়াই জিজ্ঞেস করলো, সংবাদ কী? জুদী বলল, খুবাই খারাপ। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে যখন তোমাদের কথা পেশ করলাম, তখন তিনি ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল
আনহুম উনারা তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করলেন। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এখন আমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে সম্মানিত জিহাদে যাবো। এরপর আমি
মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূলের কাছে গেলাম। দেখলাম, তারা তেমন কোনো খবরই রাখে না। আমাকে সে কেবল বলল, আমি আমাদের মিত্র গাতফান গোত্রের কাছে সংবাদ পাঠাবো। তারা
তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবে।
বানী নাযীর জনপদের গিয়ে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র আছর উনার নামায
আদায় করলেন। এরপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত
জিহাদ মুবারক করার ব্যাপারে বললেন। এদিকে বনী নাযীরের লোকজন তাদের দূর্গের উপর উঠে
তীর ও পাথর নিক্ষেপ করতে লাগলো । আর বনী কুরাইজা রইল পৃথক অবস্থানে। তারা বনী
নাযীরকে কোন প্রকার সাহায্য করলো না।
প্রসিদ্ধ সীরত ও তারিখ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
فَلَمّا صَلّى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ رَجَعَ اِلَى بَيْتِهِ فِىْ عَشَرَةٍ مِنْ اَصْحَابِهِ عَلَيْهِ الدّرْعُ وَهُوَ عَلَى فَرَسٍ. وَقَدْ اسْتَعْمَلَ حَضْرَتْ عَلِيّا عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى الْعَسْكَرِ وَيُقَالُ حَضْرَتْ اَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ. وَبَاتَ الْمُسْلِمُونَ يُـحَاصِرُوْنَـهُمْ.
يُكَبّرُوْنَ حَتّٰى اَصْبَحُوْا، ثُـمَّ اَذّنَ حَضْرَتْ بِلَالٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْه بِالْمَدِيْنَةِ. فَغَدَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ اَصْحَابِهِ الّذِيْنَ كَانُوْا مَعَهُ. فَصَلّى بِالنّاسِ بِفَضَاءِ بَنِىْ خَطْمَةَ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে পবিত্র ইশা উনার নামায মুবারক আদায়
করে দশ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে উনার
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফে ফিরে আসলেন। সে সময় নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন ঘোড়ার মধ্যে
আরোহিত এবং উক্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা প্রত্যেকেই
ছিলেন বর্ম পরিহিত। সুবহানাল্লাহ! আর সেখানে সেনাপতি হিসেবে রেখে এলেন সাইয়্যিদুনা
হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে। সুবাহানাল্লাহ! আর কেউ কেউ বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে
সেনাপতি হিসেবে রেখে এসেছিলেন। অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারা সারারাত তাদেরকে (তথা শত্রুদেরকে) ঘেরাও করে রাখলেন। সকাল হওয়া
পর্যন্ত তাকবীর ধ্বনী মুবারক দিচ্ছিলেন। অতঃপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা
শরীফে ফজর উনার আযান দিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু তিনি।
খুব ভোরেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি উনার খিদমত মুবারকে যে সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
ছিলেন,
উনাদেরকে নিয়ে তিনি বানী খত্বমাহর প্রান্তরে তাশরীফ মুবারক
গ্রহণ করে পবিত্র ফজর উনার নামায আদায় করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, শরহে যুরকানী)
এমতাবস্থায়
হুয়াই ইবনে আখতাব সে প্রস্তাব পেশ করলো এই বলে, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি যা করতে
চান,
আমরা তাতেই রাজী। আমরা
এখন আপনার সম্মানিত শহর থেকে চলে যাবো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
لَا أَقْبَلُهُ الْيَوْمَ وَلَكِنْ اُخْرُجُوا مِنْهَا وَلَكُمْ مَا حَمَلَتْ الْإِبِلُ إلّا الْحَلْقَةُ
অর্থ: “আজ আর এরকম প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না।
বরং তোমরা এই মহাসম্মানিত মদীনা শরীফ থেকে বের হয়ে যাও। উট যা বহন করতে পারে তা
নিয়ে যেতে পারবে, যা চুক্তি হয়েছে
তা ব্যতীত।”
সালাম ইবনে মুশকাম বলল, হতভাগ্যের দল। এ প্রস্তাব গ্রহণ করো। তা নাহলে তোমাদেরকে
ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। হুয়াই বলল, এর চেয়ে ভয়াবহ আর কী হবে? সালাম বলল, তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে বানানো হবে দাস-দাসী।
সহায়-সম্পত্তিতো যাবেই, তার সাথে চলে
যাবে জীবন। জীবন চলে যাওয়ার চেয়ে শুধুমাত্র সহায়-সম্পত্তি চলে যাওয়া কি উত্তম নয়? হুয়াই এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানাতে থাকলো।
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ
রয়েছে,
فَلَمّا رَأَى ذَلِكَ حَضْرَتْ يَامِينُ بْنُ عُمَيْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه وَ حَضْرَتْ أَبُو سَعْدِ بْنُ وَهْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه قَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ وَإِنّك لَتَعْلَمُ أَنّهُ لَرَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا تَنْتَظِرُ أَنْ نُسْلِمَ فَنَأْمَنَ عَلَى دِمَائِنَا وَأَمْوَالِنَا؟ فَنَزَلَا مِنْ اللّيْلِ فَأَسْلَمَا فَأحْرَزَا دِمَائِهِمَا وَأمْوَالِهِمَا.
অর্থ:
“অতঃপর হযরত ইয়ামীন ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবূ সা’দ ইবনে
ওয়াহহাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা খুব কঠিন অবস্থা দেখে নিজেদের মধ্যে
বলাবলি করলো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম!
তোমরা যখন জানোই যে, তিনি মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে শামিল হতে আর বাধা কিসের? আমরা সকলে মুসলমান হয়ে যাবো। এতে করে আমাদের জীবন ও সম্পদ
দু’টোই হিফাযত হবে। উনারা দু’জন রাতে এসে ঈমানদার হয়ে গেলেন। উনারা হিফাযত করলেন
জীবন ও স্বীয় সম্পদের নিরাপত্তা।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (তাফসীরে
মাযহারী,
বাহরুল উলূম, দালয়িলুন নুবুওওয়াহ, সুবুলূল হুদা
ওয়ার রাশাদ, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী)
এমতাবস্থায় কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূলসহ
কতিপয় নাফরমান তথা কাট্টা মুনাফিক ওয়াদীয়া মালিক ইবনে কাওকাল, সুওয়াইদ, দাইস প্রমুখরা
বানূ নাযীর গোত্রকে এই মর্মে বার্তা পাঠাল যে, হে ইহুদীরা! তোমরা অবিচল থাক এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফিরে দাঁড়াও। আমরা
কিছুতেই তোমাদের পরিহার করব না। তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হলে আমরা তোমাদেরকে
সক্রিয় সহযোগিতা করব। তোমাদের বহিস্কার করা হলে আমরা তোমাদের সাথে বের হয়ে যাব। সে
মতে বানূ নাযীর তাদের সাহয্যের অপেক্ষায় থাকল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কোন
সাহায্য করতে পারলো না। কেননা, মহান আল্লাহ পাক
তিনি তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চয় করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তারা নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আর্জি পেশ করলো
যেন বিনা রক্তপাতে তাদেরকে বহিস্কৃত করা হয়। এই শর্তে তারা তাদের অস্ত্র-শস্ত্র
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনাদের হাত মুবারকে সমর্পণ করে
কেবল সেই পরিমাণ অস্থাবর সম্পত্তি সাথে নিয়ে যাবে, যা তাদের উট বহন করতে পারে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের আর্জি কবুল করলেন। তারা উটের পিঠে বহনযোগ্য মালামাল
নিয়ে চলে গেল। তাদের এক একজন কড়িকাঠ থেকে শুরু করে পুরো ঘরটাই ভেঙ্গে উটের পিঠে
তুলে নিলো। এরপর তাদের কতক ইহুদী খায়বরে এবং কতক ইহুদী শাম দেশে চলে গেল।
যারা খায়বরে চলে যায়, তাদের মধ্যে ছিলো সাল্লাম ইবনে হুকাইক, কিনান ইবনে রাবী ইবনে হুকাইকা ও হুয়াই ইবনে আখতাব। তারা
সেখানে গেলে স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের নেতৃত্ব মেনে নিলো। নাউযূবিল্লাহ!
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ছিদ্দীক্বে আকবার রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বানূ নাযীর গোত্র তাদের নারী, শিশু ও অস্থাবর
সম্পত্তি সাথে নিয়ে গিয়েছিল। ঢোল-তবলাগুলোও সাথে তুলে নিয়েছিল। তাদের নর্তকীরা
পেছন থেকে বাজনা বাজিয়ে যাচ্ছিল। নাউযূবিল্লাহ! তাদের মধ্যে উরওয়া ইবনে ওয়ারদ
আবাসীলের স্ত্রী উম্মু আমরও ছিল। তারা তার স্বামীর কাছ থেকে তাকে কিনে নিয়েছিল। সে
ছিল বানূ গিফার গোত্রের নারী। (তাফসীরে মাযহারী, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বানূ নাযীর এত সমারোহ ও গর্বসহকারে পালায়ন করছিল
যে,
সেকালে কোন সম্প্রদায়কে কোন কাজে এমনটি করতে দেখা যায়নি।
এই ইহুদীরা পবিত্র মদীনা শরীফে তাদের যা কিছু
সম্পদ রেখে পলায়ন করে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি সেসব সম্পদ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলেন।
সুবহানাল্লাহ!
প্রসিদ্ধ ‘সীরত ও তারিখ’ গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ
রয়েছে,
وَلَمْ يُسْلِمْ مِنْ بَنِي النّضِيرِ إلّا رَجُلَانِ حَضْرَتْ يَامِينُ بْنُ عُمَرَ أَبُو كَعْبِ بْنِ عَمْرِو بْنِ جِحَاشٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه; وَ حَضْرَتْ أَبُو سَعْدِ بْنِ وَهْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه، أَسْلَمَا عَلَى أَمْوَالِهِمَا فَأَحْرَزَاهَا.
অর্থ: ‘বানূ নাযীর থেকে মাত্র দু’জন ব্যক্তি
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। উনাদের একজন হযরত ইয়ামীন ইবনে উমর (আবূ
কা’ব) ইবনে আমর ইবনে জিহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, অন্যজন হযরত আবূ সা’দ ইবনে ওয়াহহাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু। উনারা সম্মানিত ঈমান মুবারক গ্রহণ করার পর উনাদের যাবতীয় সম্পত্তিতে উনাদের
অধিকার প্রতিষ্ঠিত থাকে।’ সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইয়ামীন পরিবারের জনৈক ব্যক্তি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আপনার চাচাত
ভাইয়ের পক্ষ থেকে কি কষ্ট গ্রহণ করতে হয়েছে এবং সে আমার বিরুদ্ধে কি জঘন্য
ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল? একথা শুনে হযরত
ইয়ামীন ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চাচাত ভাই আমর ইবনে জিহাশকে হত্যা
করার জন্য নির্ধারিত পরিশ্রমের বিনিময়ে এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করল। বলা হয়ে থাকে, লোকটি তাকে হত্যা করেছিল। (শরহে ছহীহ বুখারী, উমদাতুল ক্বরী, সীরাতুন নাবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরতে লি-ইবনে
হাব্বান,
ইমতিয়াউল আসমা’, উসদুল গবা, তারিখে উমাম ওয়াল মুলক্ব)
হযরত
ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
فَتَحَصّنُوا مِنْهُ فِي الْحُصُونِ فَأَمَرَ رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِقَطْعِ النّخِيلِ وَالتّحْرِيقِ فِيهَا، فَنَادَوْهُ أَنْ يَا حَضْرَتْ مُحَمّدُ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَدْ كُنْت تَنْهَى عَنْ الْفَسَادِ، وَتَعِيبُهُ عَلَى مَنْ صَنَعَهُ فَمَا بَالُ قَطْعِ النّخْلِ وَتَحْرِيقِهَا؟
অর্থ: “বানূ নাযীর গোত্র তাদের দূর্গসমূহে
লুকায়ে গেল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনাদেরকে খেজুর বাগান কেটে
ফেলতে ও তা জ্বালিয়ে দিতে আদেশ মুবারক দিলেন। তা দেখেই ইহুদীরা চিৎকার করে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ!
ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিতো নাশকতামূলক কাজ করতে
নিষেধ করতেন এবং কেউ করলে তার নিন্দা করতেন। এখন যে নিজেই খেজুর বাগান কাটছেন এবং
তাতে অগ্নি সংযোগ করছেন।” নাউযূবিল্লাহ! (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, জাওয়ামিউস সীরাহ, উয়ূনুল আছার
ফি-ফুয়ূনিল মাগাযী, গাওয়াতুন নাবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া আলিহী, তারিখে ইবনে খালদুন, আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া)
অর্থাৎ বানী নাযীর ইহুদীদের গাছ কাটা ও আগুন
লাগিয়ে দেয়ার মধ্যে লক্ষ কোটি হিকমত মুবারক রয়েছে যা জ্বিন-ইনসানের আক্বল সমঝের
উর্ধ্বে। আর বিশেষ করে এই নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন স্বয়ং খ¦লিক মালিক রব
মহান আল্লাহ পাক তিনি। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার
মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক
ছাড়া নিজ থেকে কোন কিছু বলেন না। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র
আয়াত শরীফ- ৩,৪)
হযরত
ইবনে হাব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারক
দিয়েছেন যেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের অভিযান
চালিয়ে যান।
ইবনে
ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবূ আমির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতানুসারে
ইহুদীদের উপর অবরোধ অভিযান চলেছিলো ছয় দিন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত
আছ্-ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই অবরোধ ছিলো পঁচিশ দিন পর্যন্ত। সুবহানাল্লাহ! এর আগে
তারা নিজেরাই তাদের জনপদের কাছাকাছি ঘর-বাড়িগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। আর তাদের যে
সকল বাড়ি-ঘর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জনপদের কাছাকাছি
ছিলো,
সেগুলো উনারা জ্বালিয়ে দিয়েছেন।
স্মরণীয়
যে,
ইহুদীদের সর্বদাই মিথ্যা, মনগড়া ও বানোয়াটিমূলক কথা বলাই হচ্ছে তাদের মজ্জাগত অভ্যাস। নাউযূবিল্লাহ!
অবশেষে তারা নত হলো। ইহুদীরা দুর্গের বাইরে এসে আত্মসমর্পণ করলো। উটের পিঠে বোঝাই
করলো তাদের মালপত্র। হঠাৎ কে একজন হত্যা করে ফেললো ইহুদী আমর ইবনে হাজ্জাজকে। এ
সংবাদ পেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি খুশি মুবারক প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ! ইহুদীদের কেউ কেউ বলল, কারো কারো কাছে আমাদের কিছু পাওনা আছে, তাই আমাদেরকে কিছু সময় দেয়া হোক। আমরা যেনো পাওনাগুলো উঠাতে
পারি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করলেন, তাড়াতাড়ি করো।
এবার ইহুদীরা তাদের আহলিয়া ও শিশুদেরকে উটের পিঠে আরোহণ করালো। তার সঙ্গে যতটুকু
মালপত্র নেওয়া সম্ভব হলো, তা উটের পিঠে
উঠিয়ে নিলো। কেউ কেউ উঠিয়ে নিলো দরজার চৌকাঠ। এভাবে ইহুদী বানী নাযীর পবিত্র মদীনা
শরীফ থেকে পলায়ন করে চলে গেলো। সুবহনাল্লাহ! পরিশেষে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা গনিমত হিসেবে লাভ করলেন পঞ্চাশটি বর্ম, পঞ্চাশটি শিরোস্ত্রাণ এবং তিনশ’ চল্লিশটি তরবারি।
সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার থেকে বর্নিত। ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি (বনী নাযীরের প্রতি) সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন, প্রতি তিন পরিবার একটি উটের পিঠে করে তাদের মালপত্র নিতে
পারবে,
তাই নিতে দেয়া হবে। অবশিষ্ট মালপত্র গণিমত হিসেবে পাবেন
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা।’
হযরত জুহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা
করেন। তখন প্রত্যেক তিন পরিবারের জন্য একটি করে উট দেয়া হয়েছিল। একদিকে বানী নাযীর
দেশান্তরিত হয়ে চলে যায় সিরিয়ার ইজারায়াত ও আরীহার দিকে। হুয়াই ইবনে আখতাবের গোত্র
এবং হাকীক গোত্র চলে যায় খায়বরের দিকে। তাদের মধ্যে একটি শাখা গোত্র আবার চলে যায়
হীরার দিকে। (তাফসীরে মাযহারী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত জুহুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বর্ণনা করেছেন, বানী নাযীরেরা
ভেবেছিলো তাদেরকে কখনোই দেশান্তরিত হতে হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের
অদৃষ্টে দেশান্তরিত হওয়া লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। তারা দেশান্তরিত না হলে তাদের
উপর পৃথিবীতেই আযাব-গযব নেমে আসতো।
নাউযূবিল্লাহ! হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হাশরের ময়দান হবে শাম ও সিরিয়ায়।
قَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اخْرُجُوا قَالُوا إِلَى أَيْنَ قَالَ: إِلَى أَرْضِ الْمَحْشَرِ، ثَمَّ يُحْشَرُ الْخَلْقُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى الشَّامِ.
অর্থ: ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বানী নাযীরদেরকে বলেছিলেন, তোমরা বেরিয়ে যাও। তারা বলেছিল, কোথায় যাবো? তিনি ইরশাদ মুবারক করেছিলেন, হাশরের যমীনে।
কাল ক্বিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টিকে সিরিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।’
কালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এটি ছিলো ইহুদীদের
বিতাড়নের প্রথম ঘটনা। তাই একে বলা হয়েছে প্রথম হাশর। পরবর্তীতে সাইয়্যিদুনা হযরত
ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত কালে পবিত্র আরব দেশ থেকে সমস্ত
ইহুদী তথা সমস্ত কাফির মুশরিকদেরকে বের করে দেয়া হয়েছিল। তাই হযরত মুররা হামদানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, প্রথম হাশর
হয়েছে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে। আর দ্বিতীয় হাশর সংঘটিত হয়েছে সাইয়্যিদুনা হযরত
ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারক কলে খায়বর ও সমগ্র আরব উপদ্বীপ থেকে
সিরিয়ার ইজরাআত ও আরীহা অঞ্চলের দিকে। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, ইহুদীরা কল্পনাও করেনি যে, তারা নির্বাসিত
হবে। তারা আরো মনে করেছিল তাদের দুর্গগুলো তাদের রক্ষা করবে মহান আল্লাহ পাক উনার
শাস্তি থেকে। নাউযূবিল্লাহ! কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার শাস্তি এমন এক দিক থেকে
এলো যা ছিলো তাদের ধারণাতীত এবং তাদের অন্তরে তা ত্রাস বা কঠিন ভীতির সঞ্চার করলো।
তারা ধ্বংস করে ফেললো নিজেদের বাড়ি-ঘর নিজেদের হাতে এবং মু’মীন (তথা হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের) হাত মুবারকে। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ বনী নাযীরদের অন্তরে হিংসা ও
বিশ্বাসঘাতকতার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাদের
সাথে সম্মানিত জিহাদ ও তাদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এটা হচ্ছে তাদের
স্বসৃষ্ট আমল। মূলত যখন বানী নাযীর তারা নিজেদের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে ফেললো এবং দরজা
জানালার কাঠ খুলে নিয়ে উটে বোঝাই করলো তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা অর্ধভঙ্গ অপ্রয়োজনীয় লাকড়ী জাতীয় বাড়ি-ঘরগুলো জ্বালিয়ে
দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত
ইবনে যায়িদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন,
كَانُوا يَقْلَعُونَ الْعُمُدَ وَيَنْقُضُونَ السُّقُوفَ وَيَنْقُبُونَ الْجُدْرَانَ وَيَقْلَعُونَ الْخَشَبَ حَتَّى الْأَوْتَادَ يُخَرِّبُونَهَا لِئَلَّا يَسْكُنَهَا الْمُؤْمِنُونَ حَسَدًا مِنْهُمْ وَبُغْضًا.
অর্থ: ‘এই (বানী নাযীর) কাফিরেরা তাদের ছাদ
ভেঙ্গে দেয়ালগুলো ছিদ্র করে দিয়েছিল। খুলে নিয়ে গিয়েছিল ঘরের কাঠ ও পেরেক ইত্যাদি।
তাদের উদ্দেশ্য ছিলো, হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনারা যেনো তাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘর আর ব্যবহার না
করতে পারেন।’ নাউযূবিল্লাহ!
হযরত কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
كَانَ الْمُسْلِمُونَ يُخَرِّبُونَ مَا يَلِيهِمْ مِنْ ظَاهِرِهَا وَيُخَرِّبُهَا الْيَهُودُ مِنْ دَاخِلِهَا.
অর্থ: ‘ইহুদীরা তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছিল
ভিতরের দিক থেকে। আর সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম
উনারা বাইরের দিক থেকে।’
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি বলেন,
كُلَّمَا ظَهَرَ الْمُسْلِمُونَ عَلَى دَارٍ مِنْ دُورِهِمْ هَدَمُوهَا لِتَتَّسِعَ لَهُمُ الْمَقَاتِلُ، وَجَعَلَ أَعْدَاءُ اللَّهِ يَنْقُبُونَ دَوْرَهُمْ فِي أَدْبَارِهَا فَيَخْرُجُونَ إِلَى الَّتِي بَعْدَهَا فَيَتَحَصَّنُونَ
فِيهَا وَيَكْسِرُونَ مَا يَلِيهِمْ، وَيَرْمُونَ بِالَّتِي خَرَجُوا مِنْهَا أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: ‘যখনই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা তাদের বাড়িতে ঢুকতেন তখনই তা ধূলায় মিশে দিতেন, যাতে সম্মানিত জিহাদ উনার ক্ষেত্র প্রশস্ত হয়ে যায়। ইহুদীরা
তখন বাড়ি ও ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে চলে যেতে থাকতো অপর বাড়িতে। আর বাড়িগুলোর পিছন দিকে
একত্র হয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দিকে পাথর
নিক্ষেপ করতো।’ নাউযূবিল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে খাযিন)
হযরত ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত ইবরাহীম ইবনে জা’ফর
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বানী নাযীর পালিয়ে যাওয়ার পর ইহুদী আমর ইবনে সা’দ সে পবিত্র মদীনা শরীফে চলে
আসে। সে ঘুরে ঘুরে দেখলো তাদের ধ্বংস প্রাপ্ত জনপদ। তারপর সে বিষন্ন বদনে উপস্থিত
হলো বানী কুরাইজার জনপদে। তাদেরকে ডেকে বলল, আজ আমি উপদেশমূলক দৃশ্য দেখে এলাম। দেখলাম আমাদের ভ্রাতৃকুলের জনপদ জনশূন্য।
এইতো কয় দিন আগেই সেখানে আমার ভ্রাতা অবস্থান করতো প্রচুর সম্মান ও
বীরত্বব্যঞ্জকতা নিয়ে। বিচার মীমাংসা করতো প্রজ্ঞার সাথে। আক্ষেপ, আজ সে অপমানের সাথে বিতাড়িত, সহায়-সম্পদ চ্যুত। তাদের সম্পদ এখন অধিকার করেছেন অন্যেরা (অর্থাৎ মুসলমান
উনারা)। এর পূর্বে কা’ব ইবনে আশরাফের ঘটনা ঘটলো। রাতের অন্ধকারে হত্যা করা হলো
তাকে। ইবনে সানিয়ার ঘটনাতো আরো আগের। সে ছিলো ইহুদীদের অধিনায়ক। এরপর দেশান্তর করা
হলো,
বানূ কাইনুকাকে। তারা ছিলো ইহুদীদের মধ্যে মান্য ও শক্তিমান
পুরুষ। তাদেরকে ঘেরাও করা হলো। একজন লোকও বেষ্টনী থেকে মাথা বের করতে পারলো না।
অবশেষে দেশান্তরিত হওয়ার শর্তে ছেড়ে দেয়া হলো তাদেরকে।
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরাত সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
يَا قَوْمِ قَدْ رَأَيْتُمْ مَا رَأَيْتُمْ فأطيعوني وتعالوا نتبع حَضْرَتْ مُحَمَّدًا صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، وَالله إِنَّكُمْ لَتَعْلَمُونَ أَنَّهُ نَبِيٌّ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَدْ بَشَّرَنَا بِهِ وَبِأَمْرِهِ ابْنُ الْهَيْبَانِ أَبُو عُمَيْرٍ وَابْنُ حِرَاشٍ، وهما أعلم يه؟ د جَاءَانَا يَتَوَكَّفَانِ قُدُومَهُ وَأَمَرَانَا بِاتِّبَاعِهِ، جَاءَانَا مِنْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ وَأَمَرَانَا أَنْ نُقْرِئَهُ مِنْهُمَا السَّلَامَ، ثُمَّ مَاتَا عَلَى دِينِهِمَا وَدَفَنَّاهُمَا بِحَرَّتِنَا هَذِهِ.
অর্থ: ‘হে আমার স্বজাতি! তোমরাতো এসব কথা জানোই।
এবার আমার কথা শুনো। এসো, আমরা সকলেই নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসারী হয়ে
যাই। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তোমরাতো জানো যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমাদের
মধ্যে যারা আলিম উনারা দীর্ঘদিন ধরে উনারই সুসংবাদ দিয়ে আসছেন। মনে কি পড়ে তোমাদের, একদিন আমাদের বিখ্যাত দু’ আলিম ইবনুল হাইবান আবূ উমাইর এবং
ইবনে হিরাশ পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ থেকে এসেছিলেন। উনারা দু’জনই আমাদেরকে
আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসারী হওয়ার
নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা বলেছিলেন, তোমরা উনার দিদার বা সাক্ষাত মুবারক পেলে উনাকে আমাদের তরফ
থেকে আদবের সাথে সালাম পৌঁছায়ে দিয়ো। উনাদের ইন্তেকালতো হক্ব বা সত্যের উপর
হয়েছিল এবং উনাদের দাফন দেয়া হয়েছিল সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী।’
সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সীরতে হালাবিয়্যাহ, খতিমুন নাবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া,
তারিখুল ইসলাম)
আমর ইবনে সা’দের কথা শুনে সকলে চুপ করে রইলো।
কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভাঙ্গল কাট্টা কাফির আমর। সে তার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করলো।
বানী কুরাইজা জনতাকে ভয় দেখালো যুদ্ধের, বন্দীত্বের ও দেশান্তরের। তার বক্তব্য শেষে মুখ খুললো যুবাইর ইবনে বাত্বা। সে
বলল,
তাওরাত শরীফের ক্বসম! আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিবরণ আমার তাওরাত শরীফের অনুলিপিতে
পেয়েছি,
যা অবতীর্ণ হয়েছিল নবী সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ
আলাইহিস সালাম উনার উপর। অন্যান্য অনুলিপিতো প্রকৃত অনুলিপি নয়। কা’ব ইবনে সা’দ
বলল,
হে আবূ আব্দুর রহমান! তাহলে তোমাকে আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসারী হতে বাধা দিচ্ছে কে? যুবাইর বলল, তুমি। কা’ব বলল, কীভাবে? আমিতো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আর তোমার মধ্যে প্রতিবন্ধক হইনি। যুবাইর বলল, তুমিই আমাদের জাতীয় নেতা। তুমি যার অনুসরণ করবে, আমরাও তার অনুসরণ করবো। আর তুমি যাকে অস্বীকার করবে, আমরাও তাকে অস্বীকার করবো। নাউযূবিল্লাহ! আমর ইবনে সা’দ সে
কা’বের দিকে লক্ষ্য করে বলল, শোন! তাওরাত
শরীফের ক্বসম! যা সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপরে সিনাই
পর্বতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, নিঃসন্দেহে
পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে উনার মর্যাদা ও বিজয়। নিঃসন্দেহে সাইয়্যিদুনা হযরত
কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি নবী ছিলেন। আগামীতে তিনি ও উনার উম্মত সাইয়্যিদুনা
হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কা’ব বলল, আমরা প্রতিষ্ঠিত থাকবো আমাদের অঙ্গীকারের উপর।
নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওয়াদা বা
অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে না। তবে আমরা দেখতে চাই, হুয়াই কী করে। তাকেতো তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে চরম লাঞ্চনার সাথে। আমার ধারণা, সে অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যুদ্ধ করবে। নাউযূবিল্লাহ! ওই যুদ্ধে সে যদি বিজয় হয়
আমরা অবশ্যই তাই চাই, তবেই আমরা
আমাদের ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবো। আর যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিজয় হন, তাহলে আমাদের জীবন হবে কল্যাণ বিবর্জিত। আমরা তখন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গ ছেড়ে
দিবো। নাউযূবিল্লাহ! চলে যাবো অন্য কোন দেশে। আমর ইবনে সা’দ বলল, তাহলে এ ব্যাপারে আর বিলম্ব করছো কেনো? দেশত্যাগ করার এই প্রকৃষ্ট সময়। কা’ব বলল না, এখনো সময় আছে। আমি যখনই পবিত্র মদীনা শরীফ ছেড়ে চলে যেতে
চাইবো,
তখনই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমোদন করবেন। আমর বলল, না,
তা নয়। তখন সময় ও সুযোগ আমাদের পরিত্যাগ করবে। তাওরাত
শরীফের ক্বসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি যখন আমাদের দিকে অগ্রসর হবেন, তখন অবশ্যই আমাদের দূর্গের মধ্যে আবদ্ধ হতে হবে। আবার এক সময় উনার নির্দেশ
মুবারক এ বের হয়েও আসতে হবে। তখন তিনি আমাদের ধ্বংস ও নিপাত করবেন। কা’ব বলল, আমি যা বুঝি, তাই বললাম। আমার প্রবৃত্তি উনাকে স্বীকার করতে পারছে না। তিনিতো আমাদের নবী
বংশের মর্যাদা দিবেন না। নাউযূবিল্লাহ! খাতির করবেন না আমাদের কর্মকান্ডের।
নাউযূবিল্লাহ! সাধারণ ভাবে আমাদেরকে অভিহিত করবেন কেবল ইসাইয়ীলী বলে।
নাউযূবিল্লাহ! আমর বলল, কেনো তা বলবেন
না। আমার জীবনের ক্বসম করে বলছি, তিনিতো আমাদের
মর্যাদা সম্পর্কে সম্যক অবগত। (তাফসীরে মাযহারী)
0 Comments:
Post a Comment