সম্মানিত উহুদ দিবসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মুকবুল দোয়া মুবারক:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنِ حَضْرَت ابْنِ رَفَاعَةَ الزُّرَقِيِّ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ أُحُدٍ وَانْكَفَأَ الْمُشْرِكُونَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "اسْتَوُوا حَتَّى أُثْنِيَ عَلَى رَبِّي، عَزَّ وَجَلَّ" فَصَارُوا خَلْفَهُ صُفُوفًا، فَقَالَ: "اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كُلُّهُ. اللَّهُمَّ لَا قَابِضَ لِمَا بَسَطْتَ، وَلَا بَاسِطَ لِمَا قَبَضْتَ، وَلَا هَادِيَ لِمَنْ أَضْلَلْتَ، وَلَا مُضل لِمَنْ هَدَيْتَ. وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ. وَلَا مُقَرِّبَ لِمَا بَاعَدْتَ، وَلَا مُبَاعِدَ لِمَا قَرَّبْتَ. اللَّهُمَّ ابْسُطْ عَلَيْنَا مِنْ بَرَكَاتِكَ وَرَحْمَتِكَ وَفَضْلِكَ وَرِزْقِكَ.
অর্থ: “হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে রাফায়াহ যুরাক্বী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি
বলেছেন,
সম্মানিত উহুদ দিবসে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের আক্রমণের মুখে কাফির মুশরিকরা যখন ছত্রভঙ্গ হয়ে ময়দান থেকে
পালিয়ে গেল তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উদ্দেশ্যে
ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা সকলে
প্রস্তুত হন। আমি আমার রব মহান আল্লাহ পাক উনার ছানা-ছিফত মুবারক তথা হামদ ও শুকুর
আদায় করবো। ফলে সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনার নিকটে
সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতপর তিনি সম্মানিত দোয়া মুবারক করলেন, ‘ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! সকল হামদ তথা সমস্ত
প্রসংশা মুবারক আপনার জন্যে। ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি যা প্রসারিত
করেন তা কেউ সংকুচিত করতে পারে না। আপনি যা সংকুচিত করেন, কেউ তা প্রসারিত করতে পারে না। আপনার অসন্তুষ্টির কারণে যে
গুমরাহ বা পথভ্রষ্ট হয়, কেউ তাকে সৎপথ দেখাতে পারে না। আপনি যাকে সঠিক পথ দেখান, কেউ তাকে গুমরাহ করতে পারে না। আপনি যা দান করেন, কেউ তা রুখতে পারে না। আপনি যা আটক করে রাখেন কেউ তা প্রদান
করতে পারেনা। আপনি যা নিকটবর্তী করে দেন কেউ তা দূরে সরাতে পারে না। আর আপনি যা
দূরে সরিয়ে দেন, কেউ তা কাছে আনতে পারেনা। ইয়া
বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনার বরকত, রহমত,
অনুগ্রহ ও রিযিক আমাদের জন্যে প্রশস্ত করে দিন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ النَّعِيمُ الْمُقِيمُ الَّذِي لَا يَحُولُ وَلَا يَزُولُ. اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ النَّعِيمَ يَوْمَ العَيْلَة، وَالْأَمْنَ يَوْمَ الْخَوْفِ. اللَّهُمَّ إِنَّى عَائِذٌ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا أَعْطَيْتَنَا، وَمِنْ شَرٍّ مَا مَنَعْتَنَا. اللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْإِيمَانَ وَزَيِّنْهُ فِي قُلُوبِنَا، وَكَرِّهْ إِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ، وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِينَ. اللَّهُمَّ، تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ، وَأَحْيِنَا مُسْلِمِينَ، وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ،
غَيْرَ خَزَايَا وَلَا مَفْتُونِينَ. اللَّهُمَّ، قَاتِلِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ يُكَذِّبُونَ رُسُلَكَ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ، وَاجْعَلْ عَلَيْهِمْ رِجْزَكَ وَعَذَابَكَ. اللَّهُمَّ قَاتِلِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ، إِلَهَ الْحَقِّ".
হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনার নিকট
চিরস্থায়ী নিয়ামত মুবারক কামনা করছি যা পরিবর্তন ও বিনাশ হয়না। ইয়া বারী ইলাহী
মহান আল্লাহ পাক! আমি ওই কঠিন দিবসের সময় আপনার নিয়ামত মুবারক কামনা করছি। ভয়ের
দিবসের জন্যে কামনা করছি নিরাপত্তা মুবারক। ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি
আমাদেরকে যা হাদিয়া করেছেন তার অকল্যাণ থেকে এবং যা দান করেননি তার অকল্যাণ থেকে
আপনার নিকট আশ্রয় মুবারক চাচ্ছি। ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! সম্মানিত ঈমানকে
আমাদের নিকট খুবই প্রিয়, পছন্দনীয় করে
দিন এবং আমাদের অন্তরে তা আকর্ষণীয় করে দিন। কুফরী পাপাচার ও অবাধ্যতাকে আমাদের
নিকট অপছন্দনীয় বা ঘৃণ্য করে দিন, আমাদেরকে
হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তুর্ভূক্ত করে দিন। হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমাদেরকে
ইন্তেকাল দিবেন মুসলমান অবস্থায়, জীবিত রাখবেন
মুসলমান অবস্থায় এবং আমাদেরকে নেককারদের
অন্তুর্ভূক্ত করে নিন। দয়া করে আমাদেরকে লাঞ্ছিত ও বিপদগ্রস্ত থেকে হিফাযত করুন।
ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! ঐ সমস্ত কাফির মুশরিকদেরকে ধ্বংস করে দিন, যারা আপনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অস্বীকার করে এবং আপনার পথ থেকে লোকদেরকে
বাধা দেয় আপনার কঠিন আযাব ও শাস্তি তাদের জন্যে অবধারিত করে দিন। ইয়া বারী ইলাহী
মহান আল্লাহ পাক! আসমানী কিতাব প্রাপ্ত লোকদের মধ্যে যারা কুফরী করে আপনি তাদেরকে
ধ্বংস করে দিন। আপনি সত্যিই আমাদের মা’বূদ তথা খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক!”
আমীন! (মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুসতাদরিকে হাকীম, আল আদাবুল মুফরাদ, ফিকহুস সীরাতি, সীরতে হালাবিয়্যাহ, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, সহীহুস সীরাতে
নববীয়্যাহ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
সম্মানিত উহুদ জিহাদে হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক উনার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত উনার
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর থেকে পরবর্তী হায়াত মুবারক ছিলো নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যে পূর্ণ ফানা ও
বাঁকা। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! যা প্রত্যেক মুসলমান জীবনে
শিক্ষণীয় ও ফিকিরের বিষয়।
উল্লেখ্য যে, হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
মুবারক হচ্ছে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক
‘মুছয়াব’। উনার কুনিয়াত মুবারক ‘আবূ মুহম্মদ’। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর
উনার নাম মুবারক রাখা হয় মুছয়াব আল-খায়ির। উনার পিতার নাম উমাইর এবং মাতা খুনাস
বিনতে মালিক। পিতা-মাতার পরম আদরে মধ্যে তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে লালিত পালিত হন।
তিনি অন্যতম সুদর্শন যুবক ছিলেন। উনার মা ছিলেন আরব দেশের বড় সম্পদশালীদের একজন।
যার কারণে তিনি অত্যন্ত বিলাসের সাথে প্রতিপালিত হন। তখনকার যুগে পবিত্র মক্কা
শরীফে যত রকমের আতর সুঘ্রাণ পাওয়া যেত এবং উৎকৃষ্ট কাপড় পাওয়া যেত তিনি সবগুলোই ব্যবহার করতেন। তিনি ছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফ
উনার মাঝে সর্বোৎকৃষ্ট সুঘ্রাণময় আতর ব্যবহারকারী। তিনি
উনার সুপুরুষ, বুদ্ধিমত্তা এবং বিচক্ষণতার জন্যও
তৎকালীন কুরাইশদের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত ব্যক্তি। তিনি ছিলেন
কুরাইশদের সকল বৈঠক ও মাজলিসের শোভা ও মধ্যমণি। তীক্ষè মেধা, প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক ছিলো উনার
চরিত্র মুবারক উনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি যে খুশবু মুবারক ব্যবহার করতেন তার এমন
সুঘ্রান ছিলো যে, তিনি যে রাস্তা
দিয়ে যেতেন সেই রাস্তার পাশে মহিলারা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো উনার সাক্ষাত লাভের
জন্য। তিনি যে পোশাক মুবারক পরিধান করতেন তা অনেক দামি এবং বিশেষভাবে উহা আলাদা
করে সেলাই করা হতো।
বর্ণিত রয়েছে, যে কাপড় তিনি একবার পরিধান করতেন সে কাপড় আর দ্বিতীয়বার পরিধান করতেন না। তিনি
যে কতখানি প্রাচুর্যতায় ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। (মাগাযিউল ওয়াক্বিদী)
হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, তিনি উনার এই বিলাসবহুল অবস্থা থেকেই একবার শুনতে পেলেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি নতুন একটি সম্মানিত দ্বীন নিয়ে আগমন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! কিন্তু উনার মা ছিলো খুব কড়া মেজাজের। তিনি ভাবলেন
একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
ছোহবত মুবারকে যাবেন। তাই তিনি সুযোগ খুঁজছিলেন। একদা রাতের বেলা চুপিচুপি পা টিপে
টিপে ঘরের দরজা খুলে ‘দারূল আরকাম শরীফ’ তথা যেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তা’লীম-তালক্বীন মুবারক দিতেন সেখানে উপস্থিত হয়ে দরজা
মুবারকে টোকা দিলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দরজা
মুবারক খুলে দেখতে পেলেন হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তায়ালা আনহু
তিনি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, যিনি শাহিদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি মুত্বালা’ আলাল গয়িব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সেই মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
তখন ‘দারূল আরকাম শরীফে’ তা’লীম তালক্বীন মুবারক দিচ্ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বসার নির্দেশ মুবারক করলেন। তিনি মহাসম্মানিত
মাজলিস মুবারকে বসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সম্মানিত তা’লীম-তালক্বীন মুবারক শুনতে লাগলেন। মহাসম্মানিত তা’লীম
মুবারক শুনামাত্রই তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ!
ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সম্মানিত ঈমান মুবারক দান
করুন। তিনি “দারূল আরাকাম শরীফেই’ ঈমান আনয়ন করলেন। তিনি সাক্ষী দিলেন,
أَشْهَدُ أنْ لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ وَأشْهَدُ أنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ:
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই মহান
আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
অতঃপর
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে
বলে দিলেন, আপনি এ বিষয়টি গোপন রাখবেন, কারো কাছে প্রকাশ করবেন না। কিছুদিন এভাবে চলতে লাগলো। তিনি
প্রতিদিন পা টিপে টিপে ঘর মুবারক থেকে বের হয়ে ‘দারূল আরকাম শরীফে’ তাশরীফ মুবারক
রাখেন এবং নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার সম্মানিত নছীহত মুবারক শ্রবণ করতে থাকেন।
একদিন দেখা গেল, এক ব্যক্তি উনার এ বিষয়টি দেখে ফেললো। সে মনে মনে ভাবলো, তিনি কোথায় যাচ্ছেন? নিশ্চয়ই তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারকে যাচ্ছেন। সেই ব্যক্তি এই বিষয়টি উনার মাকে বলে দিলো।
উনার মা উনার প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ এবং ক্ষিপ্ত হলো। উনাকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে
রাখলো,
পাশাপাশি উনাকে বেঁধেও রাখলো। নাউযূবিল্লাহ! অনেক কষ্ট
দেয়ার পরও তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। এ অবস্থায় অনেক দিন
চলে গেল। তিনি কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। তিনি প্রাচুর্যের মধ্যে বড় হয়েছেন।
উনাকে আজ শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। তিনি চিন্তা করলেন কি করে এখান থেকে বের হয়ে
যাওয়া যায়। (মা’রেফাতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)
অপরদিকে হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি শুনতে পেলেন যে, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবিসিনিয়ায় হিজরত
মুবারক করার অনুমতি দান করেছেন। তিনি আর বিলম্ব না করে আবিসিনিয়াতে হিজরত মুবারক
করার জন্য পথ খুঁজতে লাগলেন। একরাতে পাহারাদার যে ছিল সে ঘুমিয়ে গেলে তিনি সেখান
থেকে গোপনে বের হয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা
রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম! তিনি যখন আবিসিনিয়ায় অবস্থান মুবারক করছিলেন কিছুদিন পর সংবাদ আসলো
যে,
পবিত্র মক্কা শরীফের সকলেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
করেছেন এবং এখন অনুকূল অবস্থা রয়েছে। যখন তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আসলেন তখন
উনার মা উনাকে আবার পাকড়াও করল এবং বন্দি করল। (মুসনাদে আহমাদ, আল মুখতাছিরুল কাবীর ফি সীরাতুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম, ইমতাউল আসমা’, মা’রেফাতুছ ছাহাবা)
হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাকে যখন তারা পুনরায় বন্দি করল তখন তারা বললো, আপনাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ছাড়তেই হবে। তিনি বললেন, কস্মিনকালেও তা সম্ভব নয়। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এতো বেশি মুহব্বত মুবারক করতেন যে
তিনি ঘোষণা দিলেন, দরকার হলে আমি
সমস্ত প্রাচুর্য, সমস্ত ঐশ্বর্য
ত্যাগ করবো তারপরও যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, যিনি শাহিদুন
নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি মুত্বালা’ আলাল গায়িব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সেই সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
আমি ত্যাগ করতে পারবো না। উনার মা বলল, তাই যদি হয় তাহলে আপনি আমার ঘর থেকে বের হয়ে যান। উনাকে সে বের করে দিল।
নাউযূবিল্লাহ! উনাকে এমন অবস্থায় বের করে দিল। অনেক বর্ণনায় রয়েছে, উনাকে পড়নের কাপড়টা পর্যন্ত দেয়া হয়নি। নাউযূবিল্লাহ! সে
অবস্থায় তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে হাযির হলেন। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারকে এসে বিষয়টি জানালেন। এবার
তিনি স্বধীন ভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে লাগলেন। ২৪ ঘন্টা তিনি ছোহবত
মুবারক ইখতিয়ার করতেন। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ নাযিলের সাথে সাথে তিনি খুব মনোযোগ
দিয়ে শ্রবণ মুবারক করতেন এবং তা আয়ত্ব করতেন। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস
সালাম! বর্ণিত রয়েছে, উনার কন্ঠস্বর
মুবারক অত্যান্ত সুমিষ্ট ছিল এবং তিনি কালামুল্লাহ শরীফ অত্যান্ত মধুর সূরে পাঠ
করতে পারতেন। আরা বর্ণিত রয়েছে যে, উনার হুলিয়া মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার উনার সাথে মিল ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস
সালাম!
স্মরণীয়
যে,
আনুষ্ঠানিক সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ উনার দ্বাদশতম
বর্ষে বারোজন ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে পবিত্র মক্কা শরীফে এসে সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। যাকে আকাবা উনার দ্বিতীয় বাইয়াত মুবারক বলা হয়। উনারা যখন
বাইয়াত মুবারক গ্রহণ করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যাবর্তন করতে উদ্যত
হলেন তখন এই সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত
মুবারকে পেশ করলেন আমরা পবিত্র মদীনা শরীফে থাকবো তাহলে তা’লীম তালক্বীন কোথা থেকে
পাবো?
উনাদের আর্জি শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম যাকে পবিত্র মদীনা শরীফে উনার
প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেন তিনি হচ্ছেন, হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। সুবহানাল্লাহ!
সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! উনার বয়স মুবারক তখন প্রায় ২০ বছরের কম ছিল। এই
অল্প বয়স মুবারকে উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খলীফা হিসেবে প্রেরণ করলেন। সেখানে তিনি
খাযরাজ গোত্রের হযরত সা’দ ইবনে যুরারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে
অবস্থান মুবারক করতেন এবং লোকদেরকে তা’লীম-তালক্বীন মুবারক দিতেন। সুবহানাল্লাহ!
সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি একদা তা’লীম মুবারক দিচ্ছিলেন এমতাবস্থায় সেখানে আওস গোত্রের হযরত সা’দ ইবনে
মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত উসায়ীদ ইবনে হুদ্বাইর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকে পাঠিয়ে বললেন যে, আপনি সেখানে যান কোথা থেকে উনারা এসেছেন উনাদের বিষয়টা কি তা ফয়সালা করে আসুন।
আর উনারা আউস গোত্রের নেতৃত্বস্থানীয় ছিলেন (বানূ আসআদ শাখার)।
হযরত
উসায়ীদ ইবনে হুদ্বাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একটা বর্শা নিয়ে হযরত মুছয়াব
ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সামনে এসে বললেন, আপনারা কি শুরু করেছেন, আপনারা কি নিয়ে এসেছেন? এসব বন্ধ করতে
হবে। আপনি যদি এখান থেকে চলে না যান তাহলে আমি এ বর্শা দিয়ে আপনাকে আঘাত করবো।
এভাবে যখন হযরত উসায়ীদ ইবনে হুদ্বাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তখন হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু তিনি
বললেন,
আমার বিষয়গুলো আপনি আগে শুনুন! শান্ত হয়ে শুনুন! আপনি
বিষয়গুলো শুনে যদি মনে হয় গ্রহণ করার তাহলে গ্রহণ করবেন। আর যদি মনে হয় গ্রহণ না
করার তাহলে আমরা পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে চলে যাব। তিনি বললেন, আপনি উত্তম প্রস্তাব দিয়েছেন। হযরত উসায়ীদ ইবনে হুদ্বাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্শা রেখে তা’লীম মুবারকে বসে পড়লেন। নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ নিছবত
মুবারক প্রাপ্ত হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র
কালামুল্লাহ শরীফ উনার থেকে তিলাওয়াত মুবারক করলেন এবং নছিহত মুবারক করলেন। উনার
সম্মানিত নছিহত মুবারক শুনে হযরত উসায়ীদ ইবনে হুদ্বাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি অত্যন্ত অবাক হলেন এবং সম্মানিত ঈমান মুবারক গ্রহণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
তিনি
বললেন,
হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যদি
ঈমান গ্রহণ করেন তাহলে আউস গোত্রের শত শত লোক ঈমান গ্রহণ করবেন। সুবহানা মামদূহ
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
তিনি তখন
হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে গিয়ে বললেন, আমিতো বিষয়টা ফয়সালা করতে পারিনি, আপনি গিয়ে ফয়সালা করুন। হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি একইভাবে আসলেন বর্শা নিয়ে উনাকে শহীদ করার জন্যে। যখন তিনি আসলেন
তখন হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আগে আপনি আমার কথা শুনুন, যদি পছন্দ হয় গ্রহণ করবেন, আর যদি পছন্দ না
হয় তাহলে আমরা চলে যাবো। তিনি উনার বর্শা রেখে বসে পড়লেন। হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন নছিহত মুবারক করলেন, তা শুনে তিনিও সাথে সাথে সম্মানিত ঈমান মুবারক গ্রহণ করলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন
হিজরত মুবারক করেন তখন হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থান মুবারক করছিলেন।
বর্ণিত রয়েছে হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উছীলা মুবারকে পবিত্র মদীনাবাসী উনাদের মধ্যে হাজার
হাজার লোক সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছেন, একটা ঘরও বাদ ছিল না সম্মানিত ঈমান গ্রহণ থেকে অর্থাৎ সমস্ত মদীনাবাসী উনারা
ঈমান গ্রহণ করেছেন। হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এমন
তা’লীম-তালক্বীন মুবারক দিয়েছিলেন যে, এক বছরের মধ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার একটা ঘরও বাদ ছিল না যারা মুসলমান
হননি। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! একমাত্র মুনাফিকরা ছাড়া, বাকি সবাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সুবহানা মামদূহ
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
উল্লেখ্য যে, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সম্মানিত হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিলেন তখন প্রায় আট
হাজার তথা হাজার হাজার পবিত্র মদীনাবাসি তথা কোটি কোটি জ্বীন-ইনসান উনারা তিলওয়াত
মুবারক করছিলেন।
طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا ... مِنْ ثَنِيَّاتِ الْوَدَاعِ
وَجَبَ الشُّكْرُ عَلَيْنَا ... مَا دَعَا لِلَّهِ دَاعٍ.
অর্থ: “উদীত হয়েছেন আমাদের মাঝে পূর্ণ চাঁদ, বিদা পাহাড়ের চূঁড়ায়। শুকরিয়া আদায় করা আমাদের জন্য ফরয, যতদিন আহ্বানকারী আহ্বান করবেন (মহান আল্লাহ পাক উনার
দিকে)।” (দালায়িলুন নবুওওয়াহ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বরী, সীরাতুল
হালাবিয়্যাহ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)
পবিত্র মদীনাবাসি উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এভাবে আহলান সাহলান মুবারক
জানিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত
মুবারক করে মহাসম্মানিত প্রথম খুতবা মুবারক দিচ্ছিলেন তখন সেখানে হযরত মুছয়াব ইবনে
উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাশরীফ মুবারক রাখলেন। উনাকে দেখে হযরত
মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের চোখের পানি
মুবারক ধরে রাখতে পারলেন না। উনার এই জরাজীর্ণ অবস্থা মুবারক। এই সেই হযরত মুছয়াব
ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনার শরীর মুবারকের লেবাস মুবারকের অবস্থা জরাজীর্ণ। অথচ কুরাইশ
গোত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণীর ধনাঢ্য ব্যক্তি। সবচেয়ে সৌন্দর্যের মধ্যে
তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি ছিলেন কুরাইশ সম্প্রদায়ের সকলের চেয়ে কাঙ্খিত ব্যক্তি।
সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা কেন কান্নাকাটি করছেন? নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক
করলেন,
ثُمَّ تَرَكَ ذَلِكَ كُلَّهُ حُباً للهِ وَرُسُوْلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “আর (হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সমস্ত কিছু তরক করেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার
মুহব্বত মুবারকে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারকে।” সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
অর্থাৎ হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি সমস্ত কিছু ত্যাগ একমাত্র খ¦লিক মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে
মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি ও রিজামন্দী
হাছিলের লক্ষ্যে। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এজন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَلَدِهِ، وَوَالِدِهِ، وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে সবচেয়ে বেশি
মুহব্বত না করবে।“ (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, “নিজের ধন-সম্পদ, নিজের জীবনের চেয়েও বেশি মুহব্বত মুবারক না করবে।” সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা
রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত শরীফ)
উল্লেখ্য যে, পরবর্তীতে যখন সম্মানিত বদরের জিহাদ সংঘটিত হলো। তখন এই সম্মানিত জিহাদ মুবারক
উনার পতাকা মুবারকে পবিত্র কালিমা শরীফ লিখা ছিলো। সেই পতাকা মুবারক তিনি ধারন
করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! এই সম্মানিত বদর জিহাদে তিনি
উনার আপন ভাইকে হত্যা করেছিলেন। উনার আরেক ভাই, সে বন্দি হয়েছিল। হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেই
হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলেছিলেন, হে ভাই! আপনি একে শক্ত করে ধরুন, এর মা অত্যান্ত ধনাঢ্যশালী, তার কাছ থেকে উচ্চমূল্যের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে। তখন উনার আপন ভাই সে বলছিলো
আপনি কাকে বলছেন? আমাকে বলছেন, নাকি উনাকে বলছেন? হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তুমিতো আমার ভাই নও। এই হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি আমার ভাই। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
স্মরণীয় যে, এরপর সম্মানিত উহুদের জিহাদের সময়ও সাদা পতাকা মুবারক যা পবিত্র কালিমা শরীফ
লিপিবদ্ধ ছিলো। তিনি সেই পতাকা মুবারক বহন করছিলেন। উনাকে ‘আল খাইর’ বলা হতো।
উনাকে ‘মুকরিম’ বলা হতো। সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার একপর্যায় যখন কাফির মুশরিকরা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে
ধাবিত হচ্ছিল তখন দূরদর্শী হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
কাফির মুশরিকদের দূরভিসন্ধির ব্যাপারটি ধরে ফেললেন। তিনি সম্মানিত পতাকা মুবারক
উঁচু করে ধরলেন এবং উচ্চস্বরে তাকবীর মুবারক দিতে লাগলেন। তিনি মনে মনে চিন্তা
করলেন,
আমার জান আমার কাছে বেশি প্রিয় না নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার জান মুবারক বেশি প্রিয়। তিনি ফিকির করলেন, আমার কাছে আমার জান কিছুই না, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জান
আমার জান থেকে অনেক অনেক বেশি প্রিয়। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস
সালাম! তিনি যখন তাকবীর ধ্বনি দিলেন। ‘আল্লাহু আকবার!’ বললেন, তখন সমস্ত শত্রুদের দৃষ্টি উনার দিকে নিবদ্ধ হলো। শত্রুরা
উনার দিকে ছুটে এসে উনাকে আক্রমণ করলো। তিনি প্রতিটি আক্রমণ প্রতিহত করতে লাগলেন।
দেখা গেল
একটা বর্শা এসে উনাকে আঘাত করলো। উনার একটা হাত মুবারক কেটে গেল। যে হাত মুবারকে
তিনি পতাকা মুবারক ধারণ করেছিলেন সেই হাত মুবারক উনার কেটে গেল। তিনি পতাকা মুবারক
অপর হাত মুবারক দিয়ে ধারণ করলেন। আরাকটি আঘাত এসে উনার সেই হাত মুবারক কর্তন করে
নিয়ে গেল। তিনি অবশিষ্ঠ যে অংশ মুবারক ছিলো সেই অংশ মুবারক দিয়ে পতাকা মুবারক ধারণ
করে রেখেছিলেন। তারপরও তিনি সেই পতাকা মুবারক ভূলুন্ঠিত হতে দেননি। সেই সম্মানিত
পতাকা মুবারক তিনি উত্তলণ করে রাখলেন। ইতিমধ্যে এই কথা ছড়িয়ে পড়ল যে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পর্দা মুবারক করেছেন।
এ কথা শুনে হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু তিনি তিলওয়াত মুবারক
করলেন।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللَّـهَ شَيْئًا ۗ وَسَيَجْزِي اللَّـهُ الشَّاكِرِينَ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও
মহাপবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ তিনি হায়াতুন্নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার পূর্বে অনেক হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা অতিবাহিত
হয়েছেন। তাহলে তিনি যদি দুনিয়াবী দৃষ্টিতে পর্দা মুবারক করেন বা দুনিয়াবী দৃষ্টিতে
বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন তাহলে কি তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে অর্থাৎ ফিরে যাবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে বা ফিরে যায় তাহলে তাতে
মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হায়াতুন্নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওযা সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের কোনই ক্ষতি হবে না। আর যারা শুকুরগুজার
বান্দা হবেন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে কামিয়াবী দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত
শরীফ-১৪৪)
এরপর একেরপর এক উনার উপর হামলা হতে লাগলো।
একপর্যায় তিনি শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। পরবর্তীতে যখন হিসাব করা হয়েছিল
তখন দেখা গেল উনার শরীর মুবারক ৭০টি তরবারি ও বর্শার আঘাতে তিনি জর্জরিত হয়েছেন।
সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! তিনি যখন মাটিতে অবতরণ করলেন তখনও
তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পতাকা মুবারক ভূলুন্ঠিত হতে দেননি। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র উহুদ জিহাদ
মুবারকে যারা পবিত্র শাহাদতী শা’ন মুবারক গ্রহণ করেছিলেন উনাদের মহাসম্মানিত জিসিম
মুবারক দেখছিলেন, তখন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মুছয়াব
ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখে তিলওয়াত মুবারক কররেন।
مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّـهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلً.
অর্থ: মু’মিন উনাদের মধ্যে এমন অনেক পুরুষ
রয়েছেন যারা হাক্বীক্বতান মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে (এবং উনার হাবীব নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে) ওয়াদা
মুবারক অটুট রেখেছেন। উনাদের মধ্যে কেউ কেউ সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক গ্রহণ
করেছেন এবং উনাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিক্ষা করছেন। উনারা উনাদের ইচ্ছা মুবারক
পরিবর্তন করেননি।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-২৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ خَبَّابٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ هَاجَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَبْتَغِي وَجْهَ اللهِ فَوَجَبَ أَجْرُنَا عَلَى اللهِ فَمِنَّا مَنْ مَضَى، أَوْ ذَهَبَ لَمْ يَأْكُلْ مِنْ أَجْرِهِ شَيْئًا كَانَ مِنْهُمْ حَضْرَتْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ فَلَمْ يَتْرُكْ إِلاَّ نَمِرَةً كُنَّا إِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رَأْسَهُ خَرَجَتْ رِجْلاَهُ، وَإِذَا غُطِّيَ بِهَا رِجْلاَهُ خَرَجَ رَأْسُهُ فَقَالَ لَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَطُّوا بِهَا رَأْسَهُ وَاجْعَلُوا عَلَى رِجْلَيْهِ الإِذْخِرَ، أَوْ قَالَ أَلْقُوا عَلَى رِجْلَيْهِ مِنَ الإِذْخِرِ وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهْوَ يَهْدِبُهَا.
অর্থ: “হযরত ইবনে খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার সাথে সম্মানিত হিজরত মুবারক করেছি। আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার (এবং উনার
হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার)
সন্তুষ্টি, রেজামন্দী মুবারক কামনা করেছি।
ফলে আমাদের জন্য মহান আল্লাহ তিনি উনার প্রতিদান বা সন্তুষ্টি মুবারক অবধারিত করে
দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি আছেন যারা বিদায় গ্রহণ করেছেন, উনাদের প্রতিদান থেকে উনারা কিছুই গ্রহণ করেননি। উনাদের
মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, হযরত মুছয়াব
ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। তিনি সম্মানিত উহুদের জিহাদে শাহাদতী
শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি একটি মাত্র চাদর মুবারক ছাড়া আর কিছুই রেখে যাননি।
যখন আমরা সেই চাদর মুবারক দ্বারা উনার মাথা মুবারক ঢাকছিলাম তখন উনার পা মুবারক
বের হয়ে যাচ্ছিল। আর যখন উনার পা মুবারক ঢাকা হচ্ছিল তখন উনার মাথা মুবারক বের হয়ে
যাচ্ছিল। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি আমাদের উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা চাদর মুবারক দ্বারা উনার মাথা মুবারক ঢেকে দিন। আর
উনার পায়ের উনার উপর ইযখির ঘাস দিয়ে ঢেকে দিন। অথবা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা উনার পাদ্বয় ইযখির ঘাস দ্বারা ঢেকে দিন। আর আমাদের মাঝে এমন ব্যক্তি রয়েছেন যার ফল
পরিপক্ক হয়েছেন। তারপর তিনি তা আহরণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস
সালাম! (বুখারী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ ন- ৪০৮২, মুসলিম শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ২২২০, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)
উল্লেখ্য যে, হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিতা আহলিয়া উনার
নাম মুবারক হযরত হামনা বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। সম্মনিত উহুদ
জিহাদের পর এক ব্যক্তি হযরত হামনা বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে
সংবাদ পৌঁছালেন যে, আপনার ভাই হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিহাদের ময়দানে শাহাদতী শান
মুবারক প্রকাশ করেছেন, এ সংবাদ শুনে
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলেন এবং ছবর মুবারক করলেন। এরপর কেউ
উনাকে সংবাদ দিলেন আপনার মামা সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি
শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, তিনি আবারও শুকরিয়া আদায় করেন এবং ছবর মুবারক করেন। অবশেষে উনাকে জানানো হলো, আপনার প্রিয়তম আহাল হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত উহুদের জিহাদে শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। এবার
তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি অশ্রু ঝরা স্বশব্দে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ
রয়েছে,
قَاتَلَ حَضْرَتْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ دُونَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى قُتِلَ، وَكَانَ الَّذِي قَتَلَهُ ابْنُ قَمِئَةَ اللَّيْثِيُّ، وَهُوَ يَظُنُّ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَرَجَعَ إلَى قُرَيْشٍ فَقَالَ: قَتَلْتُ حَضْرَتْ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَلَمَّا قُتِلَ حَضْرَتْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ أَعْطَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللِّوَاءَ حَضْرَتْ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلاَمِ، وَقَاتَلَ حَضْرَتْ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلاَمِ وَرِجَالٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ.
অর্থ: “(হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন,) হযরত মুছয়াব ইবনে উমায়ের
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত তথা সন্তুষ্টি মুবারক লাভের লক্ষ্যে জিহাদ মুবারক
করতে লাগলেন। একপর্যায় তিনি শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। উনাকে যে শহীদ
করেছিল,
সে হলো কাট্টা কাফির ইবনে কামীয়া আল লায়ছী। সে ধারনা করেছিল
তিনি (তথা হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি) নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাই সে কুরাইশ কাফির
মুশরিকদের কাছে ফিরে গিয়ে বলল, আমি নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করেছি।
নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুসলমান উনাদের পতাকা মুবারক
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ইবনে আবূ ত্বলিব আলাইহিস সালাম উনার হাত
মুবারকে অর্পণ করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি
ও অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সম্মানিত জিহাদ
মুবারক করতে লাগলেন।” সুবহানাল্লাহ! সুুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ: বাব- গাযওয়ায়ে উহুদ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উয়ূনুল আছার ফি-ফুয়ূনুল মাগাযী, তারিখুল খমীস, উয়ূনুল আছার)
প্রসিদ্ধ
তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে আরো উল্লেখ রয়েছে,
حَدَّثَنِي حَضْرَتْ مَسْلَمَةُ بْنُ عَلْقَمَةَ الْمَازِنِيَّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، قَالَ لَمَّا اشْتَدَّ الْقِتَالُ يَوْمَ أُحُدٍ، جَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَحْتَ رَايَةِ الْأَنْصَارِ، وَأَرْسَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إلَى حَضْرَتْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلاَمِ أَنْ قَدَّمَ الرَّايَةَ. فَتَقَدَّمَ حَضْرَتْ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلاَمِ، فَقَالَ أَنَا أَبُو الْفُصَمِ عَلَيْهِ السَّلاَمِ، وَيُقَالُ أَبُو الْقُصَمِ عَلَيْهِ السَّلاَمِ، فِيمَا.
অর্থ: “(হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন,) আমার কাছে হযরত মাসলামা ইবনে
আলকামা মাযিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন। সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন জিহাদ মুবারক যখন তীব্র আকার ধারণ
করল,
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদের পতাকা মুবারকের নীচে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন এবং তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার কাছে লোক পাঠিয়ে এ মর্মে নির্র্দেশ
মুবারক দিলেন, আপনি সম্মানিত পতাকা মুবারক নিয়ে
সামনে অগ্রসর হন। সুতরাং তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন, আমিই আবুল ফুছাম আলাইহিস সালাম! মতান্তরে আবুল কুসাম
আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (রওদ্বুল উনূফ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম
রহমতুল্লাহি আলাইহি, তারিখুল খমীস, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, শরহুয যুরক্বানী)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে আরো
উল্লেখ রয়েছে,
إنَّ أَبَا سَعْدِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ خَرَجَ بَيْنَ الصَّفَّيْنِ، فَنَادَى أَنَا قَاصِمٌ مَنْ يُبَارِزُ بِرَازًا، فَلَمْ يَخْرَجْ إلَيْهِ أَحَدٌ. فَقَالَ يَا أَصْحَابَ حَضْرَتْ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، زَعَمْتُمْ أَنَّ قَتْلَاكُمْ فِي الْجَنَّةِ، وَأَنَّ قَتْلَانَا فِي النَّار، كَذبْتُمْ وَاللات! لَوْ تَعْلَمُونَ ذَلِكَ حَقًّا لَخَرَجَ إلَيَّ بَعْضُكُمْ، فَخَرَجَ إلَيْهِ حَضْرَتْ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلاَمِ، فَاخْتَلَفَا ضَرْبَتَيْنِ، فَضَرَبَهُ حَضْرَتْ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلاَمِ فَقَتَلَهُ.
অর্থ: “(অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে) নিশ্চয়ই কাট্টা
কাফির আবূ সা’দ ইবনে আবূ ত্বলহা (মুসলামান ও কাফির) উভয় কাতারের মাঝে এসে গর্জন
করে বলল,
আমি কাছিম! কে আছেন আমার সাথে মুকাবিলা করবেন? তার কথামতো কেউ তার মুকাবিলা করতে এলেন না, তখন সে বলতে লাগল হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম! আপনারা আক্বীদাহ বা বিশ্বাস করেন যে, আপনাদের মধ্যে যারা সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন উনারা জান্নাতী, আর আমাদের নিহতরা জাহান্নামী। সে আরো বলল, লাত মূর্তির ক্বসম! আপনাদের আক্বীদাহ বা বিশ্বাস মিথ্যা।
নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! যদি সত্যি আপনাদের এ আক্বীদাহ হতো, তাহলে অবশ্যই আপনাদের কেউ না কেউ আমার সাথে মুকাবিলার জন্য
বেরিয়ে আসতেন। একথা শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম
তিনি সম্মানিত কাতার মুবারক থেকে বের হয়ে তার উপর আক্রমণ করলেন। উভয়ের মাঝে তরবারি
চলতে লাগলো। অবশেষে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি তাকে
(অর্থাৎ কাট্টা কাফির সা’দ ইবনে আবূ ত্বলহাকে) তরবারি মুবারক উনার আঘাতে হত্যা করে
ফেললেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, রওদ্বুল উনূফ, উয়ূনুল আছার ফি ফুয়ূনুল মাগাযী)
0 Comments:
Post a Comment