হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৪০৪-১৬৭৬) (গ)


সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ:

 সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক, হযরত হামযা আলাইহিস সালাম। উনার কুনিয়াত হচ্ছে, আবূ ইয়ালা ও আবূ আম্মারা আলাইহিস সালাম। উনার লক্বব মুবারক সাইয়্যিদুশ শুহাদা, আসাদুল্লাহ, আসাদু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং পবিত্র মদীনা শরীফে সম্মানিত উহুদের জিহাদে শাহাদতী শান মুবারক গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আপন সম্মানিত চাচা আলাইহিস সালাম। উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার সম্মানিতা মাতা হচ্ছেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালা বিনতে উহাইব আলাইহাস সালাম। যিনি ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো বোন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ উনার সম্মানিত উহুদ জিহাদ মুবারকে অংশগ্রহণ করেন। এমন কি তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদে এক এক করে শক্র নিধন করতে থাকেন। আরতাত ইবনে আব্দে শুরাহবিল নামে পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকদের পতাকাবাহীদের মধ্যে একজন ছিলো। সে নিহত হওয়ার পর সিবা’ ইবনে আব্দুল উযযা গুবশানী সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনার নিকট আসলো। তার কুনিয়াত ছিল আবূ নিয়ার। সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, এসো, হে খতনাকারিণীর ছেলে। তার মার নাম ছিলো, উম্মু আনমার। সে শুরাইক ইবনে আমর ইবনে ওয়াহাব সাকাফীর বাঁদী ছিলো।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
 شَرِيقُ بْنُ الْأَخْنَسِ بْنِ شَرِيقٍ. وَكَانَتْ خَتّانَةً بِمَكّةَ فَلَمّا الْتَقَيَا ضَرَبَهُ حَضْرَتْ حَمْزَةُ  عَلَيْهِ السَّلَامِ فَقَتَلَهُ. قَالَ حَضْرَتْ وَحْشِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، غُلَامُ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ: وَاَللّهِ إنّي لَأَنْظُرُ إلَى حَضْرَتْ حَمْزَةَ عَلَيْهِ السَّلَامِ يَهُدّ النّاسَ بِسَيْفِهِ مَا يَلِيقُ بِهِ شَيْئًا، مِثْلَ الْجَمَلِ الْأَوْرَقِ إذْ تَقَدّمَنِي إلَيْهِ سِبَاعُ بْنُ عَبْدِ الْعُزّى، فَقَالَ لَهُ حَضْرَتْ حَمْزَةُ عَلَيْهِ السَّلَامِ هَلُمّ إلَيّ يَا ابْنَ مُقَطّعَةِ الْبُظُورِ فَضَرَبَهُ ضَرْبَةً فَكَأَنّ مَا أَخْطَأَ رَأْسَهُ وَهَزَزْت حَرْبَتِي حَتّى إذَا رَضِيت مِنْهَا دَفَعْتهَا عَلَيْهِ فَوَقَعَتْ فِي ثُنّتِهِ حَتّى خَرَجَتْ مِنْ بَيْنِ رِجْلَيْهِ فَأَقْبَلَ نَحْوِي، فَغَلَبَ فَوَقَعَ وَأَمْهَلْته حَتّى إذَا مَاتَ جِئْت فَأَخَذْت حَرْبَتِي، ثُمّ تَنَحّيْت إلَى الْعَسْكَرِ وَلَمْ تَكُنْ لِي بِشَيْءِ حَاجَةٌ غَيْرَهُ
 অর্থ: “শারীক্ব ইবনে আখনাস ইবনে শারীক্ব। উম্মু আনমার পবিত্র মক্কা শরীফের মহিলাদের খতনা করতো। মোট কথা, যখন সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি শারীক্ব ইবনে আখনাস ইবনে শারীক্বের  মুখোমুখি হলেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি শারীক্ব ইবনে আখনাসকে হত্যা করলেন। যুবাইর ইবনে মুত্বয়িম এর পরাধীন থেকে স্বাধীন হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি দেখতে লাগলাম, সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি তরবারি মুবারক দ্বারা কাফির মুশরিকদেরকে নিধন করে চলছেন। উনার তরবারি মুবারক থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছে না। সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে তখন লালিমা মিশ্রিত কালো রঙের উটের মত দেখাচ্ছিলেন। হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) তিনি বলেন, দেখলাম সিবা’ ইবনে আব্দুল উযযা আমার সামনে দিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাকে দেখে সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে খতনাকারিণীর ছেলে, এদিকে আস। এই বলে তিনি তার উপর শক্ত আঘাত হানলেন, কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। ঐ মুহূর্তে আমি আমার বর্শা ঘুরিয়ে সোজা উনার উপর ছুড়লাম, যা একেবারে উনার নাভীর উপরের অংশে বিদ্ধ হলো এবং উনার উভয় পায়ের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে পড়লো। সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে চাইলেন, কিন্তু তিনি কাবু হয়ে গেলেন এবং মাটিতে পড়ে গেলেন। আমি উনাকে ছেড়ে দিলাম এবং এভাবেই তিনি শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। এরপর আমি এসে আমার বর্শা নিয়ে নিলাম এবং নিজ বাহিনীর এক দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম। এরপর আমার আর কোন প্রয়োজন অবশিষ্ট রইলো না।” (সীরতে ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হায়াতু মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উসদুল গবা, আল কামিলু ফিত্ তারিখ)
 অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ফদ্বল ইবনে আব্বাস ইবনে রবীয়া ইবনে হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত সুলাইমান ইবনে ইয়াসার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে হযরত জা’ফর ইবনে আমর ইবনে উমাইয়া দ্বামরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফত কালে আমি এবং বানূ নাওফাল ইবনে আব্দে মানাফ গোত্রেরা হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আমরা সফরে বের হলাম এবং লোকদের সাথে পাহাড়ী পথ অতিক্রম করলাম। আমরা ফেরার পথে হিমস এলাকার উপর দিয়ে যখন অতিক্রম করছিলাম, তখন হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেই এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে পৌঁছে হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি আনহু তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি বলেন? আমরা হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে গিয়ে উনাকে সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনার শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশের ঘটনাটি জিজ্ঞাসা করি যে, তিনি উনাকে কিভাবে শহীদ করেছিলেন? আমি বললাম, আপনার ইচ্ছা হলে চলুন। আমরা বেরিয়ে হিমস শহরে হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খোঁজ করতে লাগলাম। আমরা যখন উনাকে খোঁজ করছিলাম, তখন এক ব্যক্তি আমাদেরকে বললেন, আপনারা উনাকে ঐ বাড়ীর মধ্যে ঘরের সামনের উঠানে পাবেন।
 হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা বেরিয়ে উনার কাছে গেলাম। দেখতে পেলাম, তিনি উনার ঘরের সামনের উঠানে একটি চাটাইয়ের উপর বসে আছেন। তিনি বোগাস (সুন্দর কালো চীল) এর মত একেবারেই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। আমরা উনার কাছে পৌঁছে উনাকে সালাম দিলাম। তখন তিনি মাথা মুবারক উঠিয়ে সালামের জবাব দিলেন এবং হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আদী ইবনে খিয়ারের ছেলে? হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি আপনাকে ঐ সময়ের পর থেকে দেখিনি, যখন আমি আপনাকে আপনার মা সা’দিয়ার কাছে দিয়েছিলাম, যিনি আপনাকে যীতুয়া নামক স্থানে দুধ পান করিয়েছিলেন। আমি যখন আপনাকে উনার হাতে উঠিয়ে দিলাম, তখন তিনি উটের উপর বসে ছিলেন। তিনি আপনাকে যখন নীচ থেকে উঠিয়ে নেন তখন আপনার পা দু’টি কাপড়ের বাইরে ঝলমল করছিল। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনি এখানে এসে দাঁড়াতেই আপনার পাগুলো চিনে ফেলেছি।
 হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
 قَالَ فَجَلَسْنَا إلَيْهِ فَقُلْنَا لَهُ جِئْنَاك لِتُحَدّثَنَا عَنْ قَتْلِك حَضْرَتْ حَمْزَةُ  عَلَيْهِ السَّلَامِ كَيْفَ قَتَلْته؟ فَقَالَ أَمَا إنّي سَأُحَدّثُكُمَا كَمَا حَدّثْت رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حِينَ سَأَلَنِي عَنْ ذَلِكَ كُنْت غُلَامًا لِجُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ وَكَانَ عَمّهُ طُعَيْمَة بْنُ عَدِيّ قَدْ أُصِيبَ يَوْمَ بَدْرٍ فَلَمّا سَارَتْ قُرَيْشٌ إلَى أُحُدٍ، قَالَ لِي جُبَيْرٌ إنْ قَتَلْت حَضْرَتْ حَمْزَةُ  عَلَيْهِ السَّلَامِ عَمّ حَضْرَتْ مُحَمّدٍ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِعَمّي فَأَنْتَ عَتِيقٌ. قَالَ فَخَرَجْت مَعَ النّاسِ وَكُنْت رَجُلًا حَبَشِيّا أَقْذِفُ بِالْحَرْبَةِ قَذْفَ الْحَبَشَةِ، قَلّمَا أُخْطِئُ بِهَا شَيْئًا؟ فَلَمّا الْتَقَى النّاسُ خَرَجْت أَنْظُرُ حَضْرَتْ حَمْزَةُ  عَلَيْهِ السَّلَامِ وَأَتَبَصّرُهُ حَتّى رَأَيْته فِي عُرْضِ النّاسِ مِثْلَ الْجَمَلِ الْأَوْرَقِ يَهُدّ النّاسَ بِسَيْفِهِ هَذَا، مَا يَقُومُ لَهُ شَيْءٌ فَوَاَللّهِ إنّي لَأَتَهَيّأُ لَهُ أُرِيدُهُ وَأَسْتَتِرُ مِنْهُ سِبَاعُ بْنُ عَبْدِ الْعُزّى، فَلَمّا رَآهُ حَضْرَتْ حَمْزَةُ  عَلَيْهِ السَّلَامِ قَالَ لَهُ هَلُمّ إلَيّ يَا ابْنَ مُقَطّعَةَ الْبُظُورِ. قَالَ فَضَرَبَهُ ضَرْبَةً كَانَ مَا أُخْطِئُ رَأْسَهُ. قَالَ وَهَزَزْت حَرْبَتِي، حَتّى إذَا رَضِيت مِنْهَا، دَفَعْتهَا عَلَيْهِ فَوَقَعَتْ فِي ثُنّتِهِ حَتّى خَرَجَتْ مِنْ بَيْنِ رِجْلَيْهِ وَذَهَبَ لِيَنُوءَ نَحْوِي، فَغَلَبَ وَتَرَكْته وَإِيّاهَا حَتّى مَاتَ ثُمّ أَتَيْته فَأَخَذْت حَرْبَتِي، ثُمّ رَجَعْت إلَى الْعَسْكَرِ فَقَعَدْت فِيهِ وَلَمْ يَكُنْ لِي بِغَيْرِهِ حَاجَةٌ وَإِنّمَا قَتَلْته لِأُعْتَقَ. فَلَمّا قَدِمْت مَكّةَ أُعْتِقْت،
 অর্থ: “আমরা উভয়েই হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পাশে বসে উনাকে বললাম, আমরা আপনার কাছে এসেছি সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনার ঘটনা জানার জন্য। আপনি উনাকে কিভাবে শহীদ মুবারক  করেছেন? হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আপনাদেরকে সে ঘটনা ঠিক সেভাবেই শুনাবো, যেভাবে আমি তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শুনিয়েছিলাম। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! যখন তিনি আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমি যুবাইর ইবনে মুত্বয়িমের কাছে পরাধীন ছিলাম। তার চাচা তুয়াইমা ইবনে আদী সম্মানিত বদর জিহাদে নিহত হয়েছিল। কুরাইশরা যখন সম্মানিত উহুদের জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন যুবাইর আমাকে বললো, যদি আপনি আমার চাচার প্রতিশোধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করতে পারেন তবে আমি আপনাকে আযাদ বা করে দিব। সুতরাং কুরাইশ কাফির মুশরিকদের সাথে সম্মানিত উহুদ জিহাদে অংশ গ্রহণ করার জন্য আমি বেরিয়ে পড়লাম। আমি হাবশী ছিলাম। হাবশীদের মত বর্শা নিক্ষেপে আমি এমন দক্ষ ছিলাম যে, আমার বর্শা লক্ষ্যভ্রষ্ট কমই হতো। যখন উভয় সৈন্যদলের মাঝে তুমুল জিহাদ শুরু হলো, তখন আমি বেরিয়ে সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে খুজতে লাগলাম। আমি দেখলাম, তিনি ধূলায় ধূসরিত হয়ে লাল মিশ্রিত কালো উটের মত হয়ে গেছেন এবং তিনি উনার তরবারি মুবারক দ্বারা বরাবর কাফির মুশরিকদের নিধন করে যাচ্ছেন। উনার তরবারি মুবারকের সামনে কেউই রেহাই পাচ্ছেনা। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি প্রস্তুত হয়ে দ্রুত  উনার কাছে পৌঁছার জন্য গাছ কিংবা পাথরের আড়াল হতে লাগলাম। যাতে তিনি আমার নাগালের মধ্যে এসে যান। সেই মুহূর্তেই সীবা ইবনে আব্দুল উযযা আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করে সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, এসো হে খতনাকারিণীর ছেলে! এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি সীবার বুকের উপর তরবারির একটি আঘাত করলেন কিন্তু তা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হলো। এ সময় আমি বর্শা ঘুরিয়ে ঠিকমত সোজা করে ছুঁড়ে মারলাম। বর্শাটি সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনার নাভী মুবারক উনার উপরের অংশে, পেটে বিদ্ধ হয়ে উভয় পায়ের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে গেল। সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি এ অবস্থাতেই আমার দিকে অগ্রসর হতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু তিনি কাবু হয়ে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই পড়ে গেলেন। আমি উনাকে উনার জান বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত এভাবেই ছেড়ে দিলাম। তারপর আমি উনার কাছে গিয়ে বর্শা নিয়ে সেনা ছাউনিতে ফিরে এলাম এবং সেখানেই বসে রইলাম। এরপর আমার আর কোন প্রয়োজন ছিলো না। আমি নিছক স্বাধীন হওয়ার জন্যই উনাকে শহীদ করেছিলাম। সুতরাং যখন পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে এলাম, তখন আমাকে স্বাধীন করে দেয়া হলো। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হায়াতু মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রওদ্বুল উনূফ ফি-শরহি গরীবুস সীর)
 আমি পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থানরত ছিলাম, কিন্তু যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় মুবারক করলেন, তখন আমি চুপিচুপি তায়েফ চলে গেলাম এবং সেখানেই অবস্থান করতে লাগলাম। যখন তায়েফের প্রতিনিধিদল সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার মুবারকে গেলেন, তখন হতবুদ্ধি ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। একবার ভাবলাম সিরিয়া, ইয়ামান কিংবা অন্য কোন দেশে চলে যাব। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি এই পেরেশানীর মধ্যে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে আমাকে বললেন, হে হতভাগা! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন কাউকে হত্যা করেন না, যে উনার সম্মানিত দ্বীন গ্রহণ করে এবং পবিত্র কালিমায়ে শাহাদত শরীফ পাঠ করে নেন।
 হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন উনার এ কথার পর আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারকে পবিত্র মদীনা শরীফে আগমন করলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে উনার নূরুল হুদা বা মহাসম্মানিত মাথা মুবারক উনার কাছে ঘেঁষে দাঁড়ানো দেখে বিস্মিত হলেন। এ সময় আমি পবিত্র কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ পাঠ করছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু? আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিও ওয়া সাল্লাম!  হ্যাঁ! আমি হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বললেন, আপনি বসুন এবং আমাকে বলুনতো আপনি কিভাবে সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছেন?
  قَالَ فَحَدّثْته كَمَا حَدّثْتُكُمَا، فَلَمّا فَرَغْت مِنْ حَدِيثِي قَالَ وَيْحَك غَيّبْ عَنّي وَجْهَك، فَلَا أَرَيَنّكَ. قَالَ فَكُنْت أَتَنَكّبُ رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حَيْثُ كَانَ لِئَلّا يَرَانِي، حَتّى قَبَضَهُ اللّهُ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ.
 অর্থ: “হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি পুরো ঘটনা যেভাবে আপনাদের কাছে বর্ণনা করলাম, সেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে বর্ণনা করে শুনিয়েছিলাম। আমার কথা শেষ হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন।
 হতভাগা! আপনার চেহারা আমার কাছ থেকে সরিয়ে নেন। আর যেন কোনদিন আমি আপনাকে না দেখি।
 হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তারপর থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেখানে থাকতেন। আমি আমার মুখ অন্য দিকে লুকিয়ে ফেলতাম, যাতে তিনি আমাকে না দেখতে পান। উনার বিছালী শান মুবারক পর্যন্ত আমি এরূপেই মুখ অন্য দিকে লুকিয়ে ফেলতাম, যাতে তিনি আমাকে না দেখতে পান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীন থেকে পর্দা মুবারক করা পর্যন্ত আমি এরূপেই করতাম।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আর রওদ্বুল উনূফ ফি গরীবিস সীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حَضْرَتْ جَعْفَرِ بْنِ عَمْرِو بْنِ أُمَيَّةَ الضَّمْرِيِّ رَحْمَةُ اللهِ عًلَيْهِ قَالَ خَرَجْتُ مَعَ حَضْرَتْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ الْخِيَارِ رَحْمَةُ اللهِ عًلَيْهِ فَلَمَّا قَدِمْنَا حِمْصَ قَالَ لِي حَضْرَتْ عُبَيْدُ اللهِ رَحْمَةُ اللهِ عًلَيْهِ هَلْ لَكَ فِي حَضْرَتْ وَحْشِيٍّ رَضِىَ الله تَعَالَى عَنْهُ نَسْأَلُهُ عَنْ قَتْلِ حَضْرَتْ حَمْزَةُ عَلَيْهِ السَّلَامِ قُلْتُ نَعَمْ، وَكَانَ حَضْرَتْ وَحْشِيٌّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ يَسْكُنُ حِمْصَ فَسَأَلْنَا عَنْهُ فَقِيلَ لَنَا هُوَ ذَاكَ فِي ظِلِّ قَصْرِهِ كَأَنَّهُ حَمِيتٌ قَالَ فَجِئْنَا حَتَّى وَقَفْنَا عَلَيْهِ بِيَسِيرٍ فَسَلَّمْنَا فَرَدَّ السَّلاَمَ قَالَ وَ حَضْرَتْ عُبَيْدُ اللهِ رَحْمَةُ اللهِ عًلَيْهِ مُعْتَجِرٌ بِعِمَامَتِهِ مَا يَرَى حَضْرَتْ وَحْشِيٌّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ إِلاَّ عَيْنَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَقَالَ حَضْرَتْ عُبَيْدُ اللهِ رَحْمَةُ اللهِ عًلَيْهِ يَا حَضْرَتْ وَحْشِيُّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَتَعْرِفُنِي قَالَ فَنَظَرَ إِلَيْهِ ثُمَّ قَالَ لاَ وَاللَّهِ
 অর্থ: “হযরত জা’ফর ইবনে আমর ইবনে উমাইয়া দ্বামরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে সফরে বের হলাম। আমরা যখন হিমস এলাকায় পৌঁছলাম তখন হযরত উবাইদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে বললেন, হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে চান কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হিমসে বসবাস করছিলেন। আমরা উনার সম্পর্কে লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলাম। আমাদেরকে বলা হলো, ঐ যে, তিনি উনার ঘরের ছায়ায় বসে আছেন যেন তিনি সুরক্ষিত। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা উনার কাছাকাছি গিয়ে সামান্য কিছু দূরে দাঁড়ালাম এবং উনাকে সালাম দিলাম। তিনি আমাদের সালামের জবাব দিলেন। হযরত জা’ফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত উবাইদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন এমন ভাবে পাগড়ি মুবারক (ও রুমাল মুবারক) পরিহিত ছিলেন যে, হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার দু’ চোখ এবং দু’ পা ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। এ অবস্থায় হযরত উবাইদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, হে হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপানি কি আমাকে চিনেছেন? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তখন উনার দিকে তাকালেন, অতঃপর বললেন, না। মহান আল্লাহ উনার ক্বসম! আমি আপনাকে চিনি নাই।
إِلاَّ أَنِّي أَعْلَمُ أَنَّ عَدِيَّ بْنَ الْخِيَارِ تَزَوَّجَ امْرَأَةً يُقَالُ لَهَا أُمُّ قِتَالٍ بِنْتُ أَبِي الْعِيصِ فَوَلَدَتْ لَهُ غُلاَمًا بِمَكَّةَ فَكُنْتُ أَسْتَرْضِعُ لَهُ فَحَمَلْتُ ذَلِكَ الْغُلاَمَ مَعَ أُمِّهِ فَنَاوَلْتُهَا إِيَّاهُ فَلَكَأَنِّي نَظَرْتُ إِلَى قَدَمَيْكَ قَالَ فَكَشَفَ حَضْرَتْ عُبَيْدُ اللهِ رَحْمَةُ اللهِ عًلَيْهِ عَنْ وَجْهِهِ ثُمَّ قَالَ أَلاَ تُخْبِرُنَا بِقَتْلِ حَضْرَتْ حَمْزَةُ عَلَيْهِ السَّلَامِ؟ قَالَ نَعَمْ إِنَّ حَضْرَتْ حَمْزَةُ عَلَيْهِ السَّلَامِ قَتَلَ طُعَيْمَةَ بْنَ عَدِيِّ بْنِ الْخِيَارِ بِبَدْرٍ فَقَالَ لِي مَوْلاَيَ جُبَيْرُ بْنُ مُطْعِمٍ إِنْ قَتَلْتَ حَضْرَتْ حَمْزَةُ عَلَيْهِ السَّلَامِ بِعَمِّي فَأَنْتَ حُرٌّ قَالَ فَلَمَّا أَنْ خَرَجَ النَّاسُ عَامَ عَيْنَيْنِ- وَعَيْنَيْنِ جَبَلٌ بِحِيَالِ أُحُدٍ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ وَادٍ- خَرَجْتُ مَعَ النَّاسِ إِلَى الْقِتَالِ فَلَمَّا اصْطَفُّوا لِلْقِتَالِ خَرَجَ سِبَاعٌ، فَقَالَ هَلْ مِنْ مُبَارِزٍ قَالَ فَخَرَجَ إِلَيْهِ حَضْرَتْ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامِ فَقَالَ يَا سِبَاعُ يَا ابْنَ أُمِّ أَنْمَارٍ مُقَطِّعَةِ الْبُظُورِ أَتُحَادُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
 তবে এটুকু জানি যে, নিশ্চয়ই আদী ইবনে খিয়ার সে এক মহিলাকে বিয়ে করেছিল, কেউ কেউ বলেন সেই মহিলা হলো, উম্মু কিতাল বিনতে আবুল ঈছ। পবিত্র মক্কা শরীফে তার একটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে আমি তার দুধমাতা খোঁজ করছিলাম, তখন ঐ বাচ্চাকে নিয়ে তার মায়ের সঙ্গে গিয়ে দুধমাতার কাছে তাকে সোপর্দ করা হয়। সে বাচ্চার পা দু’টির মতো আপনার পা দু’টি দেখতে পাচ্ছি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন হযরত উবাইদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুখের রুমাল সরিয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলবেন কি? তিনি বললেন হ্যাঁ, বলব। সম্মানিত বদর জিহাদে সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম তিনি তুয়াইমা ইবনে আদী ইবনে খিয়ারকে হত্যা করেছিলেন। তাই আমার মুনিব জুবাইর ইবনে মুত্বয়ীম আমাকে বলল, আপনি যদি আমার চাচার বদলা হিসেবে সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করতে পারেন, তাহলে আপনি স্বাধীন। রাবী বলেন, যে বছর উহুদ পর্বত সংলগ্ন আইনাইন পর্বতের উপত্যকায় জিহাদ হয়েছিল অর্থাৎ সম্মানিত উহুদ জিহাদ সংঘটিত হয়েছিল সে যুদ্ধে আমি পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকদের সাথে বেরিয়ে পরি। এরপর জিহাদের জন্য সকলে সারিবদ্ধ হলে সিবা নামক এক ব্যক্তি যুদ্ধের ময়দানে এসে বলল, দ্বন্দ্ব যুদ্ধের জন্য কেউ প্রস্তুত আছেন কি? হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত  হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি তার সামনে গিয়ে বললেন, হে মেয়েদের খতানাকরিণী উম্মু আনমারের ছেলে সিবা! তুমি কি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে দুশমনী করছ?
 قَالَ ثُمَّ شَدَّ عَلَيْهِ فَكَانَ كَأَمْسِ الذَّاهِبِ قَالَ وَكَمَنْتُ لِحَمْزَةَ عَلَيْهِ السَّلَامِ تَحْتَ صَخْرَةٍ فَلَمَّا دَنَا مِنِّي رَمَيْتُهُ بِحَرْبَتِي فَأَضَعُهَا ثُنَّتِهِ حَتَّى خَرَجَتْ مِنْ بَيْنِ وَرِكَيْهِ قَالَ فَكَانَ ذَاكَ الْعَهْدَ بِهِ فَلَمَّا رَجَعَ النَّاسُ رَجَعْتُ مَعَهُمْ فَأَقَمْتُ بِمَكَّةَ حَتَّى فَشَا فِيهَا الإِسْلاَمُ ثُمَّ خَرَجْتُ إِلَى الطَّائِفِ فَأَرْسَلُوا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَسُولاً فَقِيلَ لِي إِنَّهُ لاَ يَهِيجُ الرُّسُلَ
 বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তার উপর শক্ত আঘাত করলেন, যার ফলে সে অতীতের ইতিহাসে পরিনত হলো। হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে একটি পাথরের নিচে আত্মগোপন করে ওঁত পেতে বসেছিলাম। যখন তিনি আমার নিকটবর্তী হলেন আমি আমার বর্শা এমন জোরে নিক্ষেপ করলাম যে, তা ঠিক উনার নাভি মুবারকে গিয়ে পড়ল। তারপর উনার দু’ নিতম্বের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে গেল। হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এটাই হলো উনার শাহাদত মুবারক প্রকাশের মূল ঘটনা। এরপর সবাই ফিরে এলে আমিও তাদের সাথে ফিরে এসে পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান করতে লাগলাম। এরপর পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়সহ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিজয় লাভ হলে আমি তায়েফে চলে গেলাম। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তায়েফবাসী উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট দূত প্রেরণের ব্যবস্থা করলে আমাকে বলা হলো যে, যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দূতদের প্রতি অসীম দয়ালু এবং ক্ষমাশীল। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
قَالَ فَخَرَجْتُ مَعَهُمْ حَتَّى قَدِمْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا رَآنِي قَالَ آنْتَ حَضْرَتْ وَحْشِيٌّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ أَنْتَ قَتَلْتَ حَضْرَتْ حَمْزَةُ عَلَيْهِ السَّلَامِ قُلْتُ قَدْ كَانَ مِنَ الأَمْرِ مَا بَلَغَكَ، قَالَ فَهَلْ تَسْتَطِيعُ أَنْ تُغَيِّبَ وَجْهَكَ عَنِّي قَالَ فَخَرَجْتُ فَلَمَّا قُبِضَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخَرَجَ مُسَيْلِمَةُ الْكَذَّابُ قُلْتُ لأَخْرُجَنَّ إِلَى مُسَيْلِمَةَ لَعَلِّي أَقْتُلُهُ فَأُكَافِئَ بِهِ حَضْرَتْ حَمْزَةُ عَلَيْهِ السَّلَامِ قَالَ فَخَرَجْتُ مَعَ النَّاسِ فَكَانَ مِنْ أَمْرِهِ مَا كَانَ قَالَ فَإِذَا رَجُلٌ قَائِمٌ فِي ثَلْمَةِ جِدَارٍ كَأَنَّهُ جَمَلٌ أَوْرَقُ ثَائِرُ الرَّأْسِ قَالَ فَرَمَيْتُهُ بِحَرْبَتِي فَأَضَعُهَا بَيْنَ ثَدْيَيْهِ حَتَّى خَرَجَتْ مِنْ بَيْنِ كَتِفَيْهِ قَالَ وَوَثَبَ إِلَيْهِ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَضَرَبَهُ بِالسَّيْفِ عَلَى هَامَتِهِ.
 তিনি বলেন, তাই আমি উনাদের সঙ্গে রওয়ানা হলাম এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে গিয়ে হাযির হলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, আপনি কি ওয়াহশী? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনিই কি সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহি সালাম উনাকে শহীদ করেছিলেন? আমি বললাম, আপনার কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে তা সত্য। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমার সামন থেকে আপনার চেহারা কি সরিয়ে রাখতে সক্ষম? হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হ্যাঁ, তখন আমি চলে আসলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীন থেকে পর্দা মুবারক করার পর মিথ্যা নবী দাবিদার মুসাইলামাতুল কায্যাব আবির্ভূত হলো। আমি বললাম, আমি অবশ্যই মিথ্যা নবী দাবিদার মুসাইলামাতুল কাযযাবের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হব এবং তাকে হত্যা করে সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ মুবারক করার ক্ষতিপূরণ আদায় করব। হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, জিহাদের সময় আমি দেখলাম যে, হালকা কালো বর্ণের উটের মত উস্কখুস্ক চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তি একটি ভগ্ন দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার বর্শা দ্বারা তার উপর আঘাত করলাম এবং তার বুকের উপর এমনভাবে বসিয়ে দিলাম যে, তা তার দু’ কাঁধের মাঝ দিয়ে বেরিয়ে গেলতিনি বলেন, এরপর হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তলোয়ার দিয়ে তার মাথার খুলিতে প্রচন্ড আঘাত করে তাকে নিহত করলেন। (বুখারী শরীফ, উমদাতুল ক্বরী, মুসনাদে আহমদ, ছহীহ ইবনে হাব্বান)
 উল্লেখ্য যে, হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সম্মানিত উহুদ জিহাদে সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার পর পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আসার সাথে সাথে আমি পরাধিন থেকে স্বধীন হলাম। আমার শুধু উদ্দেশ্য ছিলো সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করা এবং আযাদ হওয়া। যুদ্ধ বিগ্রহ আমার কোন উদ্দেশ্য ছিলো না। তাই উনাকে শহীদ করার পর আমি কাফির মুশরিকদের দল থেকে বিছিন্ন হয়ে দূরে গিয়ে বসেছিলাম। (ফাতহুল বারী, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
  স্মরণীয় যে, তায়েফ থেকে প্রতিনিধিদল পবিত্র মদীনা শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিদার মুবারক এসে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন, উনাদের মধ্যে হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও ছিলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেছিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই সেই হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যিনি আপনার চাচাজান উনার শহীদকারী। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
 دَعُوهُ فَلِإِسْلَامِ رَجُلٍ وَاحِدٍ أَحَبّ إلَيّ مِنْ قَتْلِ أَلْفِ رَجُلٍ كَافِرٍ
 অর্থ: “(উনাকে কিছু বলা থেকে বিরত থাকুন।) এক হাজার কাফিরকে হত্যা করার তুলনায় একজন লোকের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (ফাতহুল বারী, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, আর রওদ্বুল উনূফ)
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীন থেকে পর্দা মুবারক করার পর কতিপয় লোক নুবুওয়াতের মিথ্যা দাবী করেছিল, যাদের মধ্যে মুসাইলামাতুল কায্যাব ছিল অন্যতম। খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি সেই মিথ্যা নবী দাবিদারদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন এবং এই জিহাদে হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মিথ্যা নবী দাবিদার মুসাইলামাতুল কায্যাবকে হত্যা করেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার কাফফারা আদায় করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
  হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মুসলিম বাহিনী যখন ইয়ামামার অধিপতি মিথ্যা নবী দাবিদার মুসায়লামাতুল কায্যাবকে হত্যা করার জন্য রওয়ানা হন, তখন আমি উনাদের সঙ্গে বের হই এবং বর্শাও সাথে নিয়ে নেই  সেই বর্শা-যেই বর্শা দ্বারা সাইয়্যিদুনা সাইয়্যিদুশ শুহাদা আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছিলাম। যখন উভয় দলের মাঝে জিহাদ শুরু হল, তখন আমি মিথ্যা নবী দাবিদার মুসাইলামাতুল কায্যাবকে দেখলাম, সে তরবারি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে চিনতাম না, তাই কাউকে জিজ্ঞাসা করে তার সম্পর্কে জেনে নিলাম এবং তাকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। অন্যদিক থেকে জনৈক হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে লক্ষ্য করে অগ্রসর হচ্ছিলেন। আমরা উভয়ই তার উপর আঘাত করার জন্য ইচ্ছা পোষন করি। আমি আমার বর্শা ঘুরিয়ে ঠিক করে তার দিকে ছুঁড়ে মারি যা তার গায়ে গিয়ে বিঁধে যায়। এদিকে হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার তরবারি দিয়ে তার উপর জোরে আঘাত হানলেন। সেই মিথ্যা নবী দাবিদার মুসাইলামাতুল কায্যাব নিহত হল। হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই ভালো জানেন আমাদের মধ্যে তাকে কে হত্যা করেছেন। যদি আমি তাকে হত্যা করে থাকি, তাহলে মনে করবো, একদিকে আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচাজান ও সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিকে শহীদ করেছি। বিপরীতে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘোর শত্রু, মুরতাদ ও কাট্টা কাফিরকে হত্যা তথা সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকটিকেও আমিই হত্যা করেছি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 হযরত ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, যেই আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ মিথ্যা নবী দাবিদার মুসাইলামাতুল কাযযাবকে হত্যা করেছিলেন তার নাম উল্লেখ করেছেন। উনার নাম হচ্ছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ ইবনে আসিম মাযনী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। কেউ কেউ উনার নাম হযরত আদী ইবনে সাহল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ হযরত ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নাম উল্লেখ করেছেন, যেমন নি¤œাক্ত কবিতায় উল্লেখ রয়েছে,
 أَلَمْ تَرَ أَنّي وَوَحْشِيّهُمْ ... قَتَلْت مُسَيْلِمَةَ الْمُفْتَتَنْ-
 وَيَسْأَلُنِي النّاسُ عَنْ قَتْلِهِ فَقُلْت ضَرَبْت، وَهَذَا طَعَنْ.
فَلَسْتَ بِصَاحِبِهِ دُوْنَهُ وَلَيْسَ بِصَاحِبِهِ دُوْنَ شن.
 অর্থ: “আপনি কি জানেন না? আমি ও হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমরা দু’জন মিলে মিথ্যা নবী দাবিদার মুসাইলামাতুল কায্যাবকে হত্যা করেছি। লোকে আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমি তাকে কিভাবে হত্যা করেছি। তখন আমি বলি যে, আমি তাকে আঘাত করেছি। আর এটি হলো সেই বর্শা।   অতএব হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বাদ দিয়ে আমার পক্ষে একা কাট্টা মুনাফিক ও মুরতাদ মুসাইলামাতুল কাযযাবকে হত্যা করার দাবী যেমন সঠিক হয়, তেমনি হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বাদ দিয়ে আমি একা তাকে হত্যা করাও বিষয়টি যথাযথ নয়। (ফাত্হুল বারী, আল ইছাবাতু ফি-তামীযিয ছাহাবী)
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত আব্দুল্লাহ ফদ্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সুলাইমান ইবনে ইয়াসার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ফারূকে আ’যম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ফারূকে আ’যম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইয়ামামর জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, সেদিন আমি শুনতে পেলাম, জনৈক ব্যক্তি উচ্চস্বরে বলছেন, মিথ্যা  নবী দাবিদার মুসাইলামাতুল কাযযাবকে হযরত ওয়াহশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হত্যা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!

0 Comments: