হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদের বেমেছাল সাহসিকতাপূর্ণ ঈমান, পরম আগ্রহপূর্ণ অন্তর এবং সুনিপুন হিকমতপূর্ণ জিহাদের দরুন কুরাইশ কাফির
মুশরিকরা আর ময়দানে টিকে থাকতে পারলো না। তারা এদিক সেদিক পালাতে শুরু করলো। কাফির
মুশরিকদের পক্ষের মহিলারাও একপর্যায় ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় উর্ধ্বশ্বাসে পিছন পানে
দৌঁড়ে যেতে লাগলো।
কিছুক্ষণ ধরে এরূপ কঠিন অবস্থা চলতে থাকে। হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সম্মানিত জিহাদের ময়দানে
পূর্ণভাবে আধিপত্য বিস্তার করে নেন। অবশেষে কাফির মুশরিকদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে।
তাদের সারিগুলোর ডান, বাম, সম্মুখ ও পিছন দিক হতে সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হতে থাকে। মনে
হচ্ছিল যেন তিন হাজার কাফির মুশরিক সাত শত নয় বরং ত্রিশ হাজার মুসলমান উনাদের সাথে
মুকাবিলা করছে। আর এদিকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
দৃঢ় ঈমান ও বীরত্বের সাথে অত্যন্ত উঁচুমানের মনোবল নিয়ে তরবারি মুবারক চালনা
করছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
কুরাইশ কাফির মুশরিকরা যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর একাধিকবার আক্রমণ করা ও প্রতিহত করার জন্যে
তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করা সত্বেও উনাদের অক্ষত অনুভব করল তখন তাদের মনোবল
এমনভাবে ভেঙ্গে পড়ল যে, তা ভাষায় বর্ণনা
করা অসম্ভব। কাট্টা কাফির সুওয়াবের হত্যার পর কাফির মুশরিকদের কারো সাহস হলো না যে, যুদ্ধ চালু করার জন্য তাদের ভূপতিত পতাকার নিকটবর্তী হয়ে
ওটাকে উঁচু করে ধরা। পরিশেষে কাফির মুশরিকরা পালিয়ে যাওয়ার পন্থা অবলম্বন করলো এবং
প্রতিশোধ গ্রহণের কথা সম্পূর্ণরূপে ভূলে গেল। (সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
ثُمَّ أَنْزَلَ اللَّهُ نَصْرَهُ عَلَى الْمُسْلِمِينَ وَصَدَقَهُمْ وَعْدَهُ، فَحَسُّوهُمْ بِالسُّيُوفِ حَتَّى كَشَفُوهُمْ عَنْ الْعَسْكَرِ، وَكَانَتْ الْهَزِيمَةُ لَا شَكَّ فِيهَا.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর স্বীয় সাহায্য তথা গায়েবী মদদ নাযিল
করলেন এবং উনাদের সাথে কৃত ওয়াদা মুবারক পূর্ণ করলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাফির মুশরিকদেরকে তরবারি মুবারক দ্বারা এমন
ভাবে কর্তন করতে লাগলেন যে, তারা তাদের
তাঁবু থেকে পালিয়ে গেল এবং নিঃসন্দেহে তাদের চরম পরাজয় ঘটে গেল।” (সীরতে ইবনে
হিশাম রহমতুল্লহি আলাইহি, মাওয়াহিবুল
লাদুন্নিয়া, খ¦তামুন নাবিইয়ীন ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল কামিলু
ফিত-তারিখ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ الزُّبَيْرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَنَّهُ قَالَ وَاَللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتنِي أَنْظُرُ إلَى خَدَمِ هِنْدِ بِنْتِ عُتْبَةُ وَصَوَاحِبُهَا مُشَمَّرَاتٌ هَوَارِبُ، مَا دُونِ أَخْذِهِنَّ قَلِيلٌ وَلَا كَثِيرٌ.
অর্থ: “হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি দেখি যে, হযরত হিন্দ বিনতু উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (পরবর্তীতে তিনি সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন) উনার এবং উনার সঙ্গিদের পদনালী দেখা যাচ্ছে। তারা পায়ের
কাপড় গুটিয়ে পালাচ্ছিল। তাদেরকে বন্দি করা কম বেশি কোনই প্রতিবধকতা ছিলো না।”
(সীরাতে ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, দালায়িলুন নুবুওওয়া লিল বাইহাক্বী, উয়ূনুল আছার, তারিখুল খমীস, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
عَنِ حَضْرَتْ الْبَرَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ فَلمَّا لَقِينَاهُمْ هَرَبُوا حتَّى رَأيْتُ النِّسَاءَ يَشْتَدِدْنَ في الْجَبَلِ، رَفَعْنَ عَنْ سُوقِهِنَّ، قد بَدَتْ خلاخِلُهُنَّ،
অর্থ: “হযরত বারা’ ইবনে আযীব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কাফির মুশরিকদের সাথে আমাদের মুকাবিলা হলে তাদের মধ্যে পলায়নের হিড়িক পরে যায়, এমনকি আমি নারিদের দেখি যে, তারা পায়ের গোছা হতে কাপড় উঠিয়ে নিয়ে দ্রুত বেগে পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পায়ের
অলংকার দেখা যাচ্ছিল।”(মানারুল ক্বরী শরহে মুখতাছারে ছহীহ্ বুখারী, ফতহুল মানয়াম শরহে ছহীহে মুসলিম, আল কাওছারুল জারী, আছ ছহীহ মিন আহাদিছি সীরাতুন নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
স্মরণীয় যে, মক্কার কাফির মুশরিকরা সম্মানিত উহুদের ময়দান থেকে সবাই এদিক সেদিক পলায়ন করল
যার ফলে ময়দানে কাফিরদের কেউই অবশিষ্ট থাকলো না। হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা যখন দেখলেন কাফির মুশরিকরা পলায়ন করেছে তারা আর ময়দানে নেই তখন উনারা
নিজেদের মাল-সামানা এবং কাফির মুশরিকদের
সম্পদগুলো গনীমত হিসেবে পেয়ে সংগ্রহ করতে লাগলেন। কারণ সম্মানিত জিহাদে কাফির
মুশরিকদের থেকে লব্ধ গনীমতকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলমানদের জন্য হালাল করে
দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ
উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
فَكُلُوا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَالًا طَيِّبًا ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ ۚ إِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ.
অর্থ: “সুতরাং আপনারা খাদ্য গনীমত হিসেবে, যে পবিত্র ও হালাল আহার করুন, অর্জন করেছেন তা থেকে। আর মহান আল্লাহ পাক উনাকেই ভয় কর। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ
পাক তিনি অতিক্ষমাশীল ও অতিদয়ালু।” (পবিত্র সূরা আল আনফাল শরীফ: পবিত্র সূরা শরীফ-
৮)
অর্থাৎ সম্মানিত জিহাদের ময়দান থেকে কাফির মুশরিকরা ছুটাছুটি করতে থাকে
ও তারা জিহাদের ময়দান থেকে এক পর্যায় পলায়ন করে। যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দেখলেন যে কাফির মুশরিকরা জিহাদের ময়দান থেকে
পালিয়ে গেছে তখন কিছু সংখ্যক সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা স্বীয় জিনিস পত্র গোছগাছ ও হালাল গনিমতের মাল সংগ্রহ করতে লাগলেন। কারণ হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অনেকেই মনে করলেন যে, সম্মানিত জিহাদের সমাপ্তি ঘটেছে তাই উনারা বিলম্ব না করে
গনিমতের মাল সংগ্রহ করা শুরু করেন। আর এ সুযোগে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখন তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) তিনি
চুপি চুপি পাহাড়ের আড়াল দিয়ে এসে অতর্কিত
হামলা করেন। এতে অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সম্মানিত
শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
সম্মানিত উহুদ জিহাদে কাফির মুশরিকরা এমন পরাজয়
বরণ করেছিল যে, তাদের কথিত পতাকা যা তারা যুদ্ধের
জন্য উত্তোলন করেছিল সেই পতাকা মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। তাদের পতাকা মাটিতে পড়ে যাওয়ার
ফলে তারা সম্মানিত জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যেতে লাগলো। তাদের পতাকা মাটিতে পড়ে
গেলেও পরবর্তীতে এক কাট্টা কাফির সুয়াব সেই পতাকা উত্তোলনের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়
এবং সেও সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হাত মুবারকে
নিহত হয়। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
কাট্টা কাফির সুয়াব সম্পর্কে হযরত হাসসান ইবনে
ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। যা হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক
আলিম উনাদের বর্ণনামতে এ সময় কাফির মুশরিকদের পতাকা একবারেই অবনমিত হয়ে পড়েছিল।
কিন্তু পরে যখন আমরাহ বিনতে আলকামা হারিছী কুরাইশ কাফির মুশরিকদের উদ্দেশ্যে তা
উত্তোলন করল তখন কাফির মুশরিকরা পুনরায় পতাকার চারপাশে সমবেত হলো। এক পর্যায় এই
পতাকা কাট্টা কাফির সুয়াব নামের এক হাবশীর হাতে এসে গেল। সে ছিল কাট্টা কাফির আবূ
ত্বলহার ক্রিতদাস এবং কাফির মুশরিকদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যক্তি যে এই কাফিরদের পতাকা
উঠিয়েছিল। কাট্টা কাফির এই পতাকা রক্ষা করতে গিয়ে ক্রমাগত লড়ে যেতে লাগল এমনকি যখন
তার উভয় হাত কেটে দেওয়া হলো, তখন সে হাঁটুর
উপর উপুড় হয়ে বুক ও গলার দ্বারা পতাকাকে ধরলো এবং নিহত না হওয়া পর্যন্ত তা ধরে
রাখলো। নাউযূবিল্লাহ! সে তখন বলছিল আয় আল্লাহ পাক! আমি কি কোন ওযর অবশিষ্ট রেখেছি।
(সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এ
প্রসঙ্গে হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
فَخَرْتُمْ بِاللِّوَاءِ وَشَرُّ فَخْرٍ ... لِوَاءٌ حِينَ رُدَّ إلَى صُؤَابِ
পতাকা নিয়ে তোমরা গর্ব করে থাক। পতাকা বিষয়ে
সবচেয়ে বেশী নিন্দনীয় ঘটনা ঘটল যখন সেটি সাওয়াব ক্রীতদাসের হাতে দেয়া হল।
جَعَلْتُمْ فَخَرَكُمْ فِيهِ بِعَبْدٍ ... وَأَلْأَمُ مَنْ يَطَا عَفَرَ التُّرَابِ
এ পতাকা নিয়ে তোমরা গর্ব করছো, এক ক্রিতদাসের কারণে যার মায়ের অবস্থা এই যে, তাকে ধূসর বর্ণের লোকেরা ব্যবহার করতো। (এখানে লোক দ্বারা
আবূ ত্বলহার দিকে ইংগিত করা হয়েছে)।
ظَنَنْتُمْ، وَالسَّفِيهُ لَهُ ظُنُونُ ... وَمَا إنْ ذَاكَ مِنْ أَمْرِ الصَّوَابِ
তোমরা ধারণা করেছিলে আর মুর্খ লোকেরা তো অনেক
কিছুই অনুমান করে থাকে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাস্তবতার সাথে ধারণার সম্পর্ক খুব কমই থাকে।
بِأَنَّ جِلَادَنَا يَوْمَ الْتَقَيْنَا ... بِمَكَّةَ بَيْعُكُمْ حُمْرَ الْعِيَابِ
নিশ্চয়ই যেদিন আমরা এবং তোমরা (সম্মানিত উহুদ
জিহাদে) মুখোমুখী হয়েছিলাম, সেদিন তোমাদের
ধারণা ছিল যে) তোমরা আমাদের চামড়া পবিত্র মক্কা শরীফে (বানিজ্যিক পণ্য রাখার) লাল
থলে বানিয়ে বিক্রি করবে। নাউযূবিল্লাহ!
أَقَرَّ الْعَيْنَ أَنْ عُصِبَتْ يَدَاهُ ... وَمَا إنْ تُعْصَبَانِ عَلَى خِضَابِ
তার দুহাত রক্তাক্ত হওয়ার দৃশ্যে আমি চোখ
জুড়িয়েছি। রক্তের খিযাবতো তাকে লাগাতেই হবে। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়
সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, তারিখুত ত্ববারী, আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো
বলেন। হযরত হাসসান ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাট্টা কাফির আমরাহ
বিনতে আলকামা হারিছী ও তার পতাকা উত্তোলন সম্পর্কে বলেন,
إِذَا عَضَلٌ سِيقَتْ إِلَيْنَا كَأَنَّهَا ... جَدَايَةُ شِرْكٍ مُعْلَمَاتِ الْحَوَاجِبِ
أَقَمْنَا لَهُمْ طَعْنًا مُبِيرًا مُنَكِّلًا ... وَحُزْنَاهُمُ بِالضَّرْبِ من كل جانب
فلولا لواء الخارثية أَصْبَحُوا ... يُبَاعُونَ فِي الْأَسْوَاقِ بَيْعَ الْجَلَائِبِ
অর্থ: “যখন বানূ আদ্বল শিরক এলাকার হরিণের
বাচ্চার মত আমাদের দিকে ধেয়ে এসেছিল, যখন তাদের ভ্রুর উপর চিহ্ন ছিল, তখন আমরা তাদের প্রতি দৃষ্টান্তমূলক বিধ্বংসী বর্শা নিক্ষেপ শুরু করি এবং
চারিদিক থেকে তরবারির আঘাত করে তাদের লাশের স্তুপে পরিণত করি। যদি আমরাহ হারিছীর
পতাকা না হতো, তবে তারা বাজারে বানিজ্যিক পণ্যের
ন্যায় বিক্রি হতো। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম
রহমতুল্লাহি আলাইহি, আর রওদ্বুল উনূফ, ইমতিয়াউল আসমা’ আল
বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
সম্মানিত জিহাদ শেষ মনে করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা উনাদের মাল-সামানা গোছগাছ ও কাফির মুশরিকরা আকস্মিক আক্রমণ:
পাহাড়ের সংকীর্ণ পথ পাহারায় যে তীরন্দাজ হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দায়িত্বে ছিলেন, উনারা দেখতে পেলেন সম্মানিত জিহাদে মুসলমান উনাদের বিজয় লাভ
হয়েছে,
অপরদিকে কাফির মুশরিকরা সম্মানিত জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন
করেছে। কোন কাফির মুশরিককে ময়দানে দেখা যাচ্ছিলনা। এমতাবস্থায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিজেদের মাল-সামানা গোছগাছ ও কাফির মুশরিকদের
থেকে গনিমতের মাল একত্রিত করতে লাগলেন। শুধুমাত্র হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ ১০ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারা সেই গিরিপথে অবস্থান মুবারক করছিলেন আর বাকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মাল-সামানা গোছগাছ করার জন্য গিরিপথ থেকে চলে
যান। এদিকে কাফিরদের দলের হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি
তখনও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) তিনি দু’বার এই গীরিপথ দিয়ে সম্মানিত
মুসলমান উনাদের উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিলেন। সর্বশেষে যখন দেখতে পেলেন
সামান্য কিছু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এখানে অবস্থান
মুবারক করছেন এবং এই পাহাড়ী পথটি একেবারেই অরক্ষিত। তখন হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার বাহিনী নিয়ে পিছন দিক থেকে হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর আক্রমণ করলেন। যার ফলে হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ দশজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনারা শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস
সালাম!
ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা এই
পরিস্থিতিতে চিন্তিত হয়ে পড়েন। পিছনদিক হতে কাফির মুশরিকদের আক্রমণে উনারা অনেকেই
শাহদতি শান মুবারক প্রকাশ ও আহত হতে থাকেন। এই সময়টি ছিলো মুসলমান উনাদের জন্য এক
মহাপরিক্ষার দিন। মহান আল্লাহ পাক তিনি অনেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক উনার মর্যাদা মুবারক দান করেন।
স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল্লাহ তথা মহাসম্মানিত
সম্মুখের দাঁত মুবারক শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার নূরুর রহমাত তথা
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চেহারা মুবারক নূরুন নাজাত বা মহাসম্মানিত রক্তাক্ত শান
মুবারক প্রকাশ করেন। উনার নূরুল হামরা’ তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঠোঁট মুবারক
ফেটে যান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে যে কুলাঙ্গার বদবখত আঘাত করেছিল সে ছিল কাট্টা কাফির উতবা ইবনে আবূ
ওয়াক্কাছ। (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সীরাতে ইবনে
হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, তারিখুল ইসলাম)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো
বলেন,
সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনের নূরুল্লাহ তথা মহাসম্মানিত ও
মহাপবিত্র দাঁত মুবারক শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার নূরুর রহমত তথা
মহাসম্মানিত চেহারা মুবারকও যখমী শান মুবারক প্রকাশ করেন, উনার নূরুল হুদা তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল হুদা বা
মাথা মুবারকের যখমী শান মুবারক হতে নূরুন নাজাত তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রক্ত
মুবারক প্রবাহিত হতে থাকেন এবং তিনি এই বলে নূরুন নাজাত তথা মহাসম্মানিত রক্ত
মুবারক মুছতে থাকেন, আর ইরশাদ মুবারক
করতে থাকেন
كَيْفَ يُفْلِحُ قَوْمٌ خَضَّبُوا
وَجْهَ نَبِيِّهِمْ بِالدَّمِ، وَهُوَ يَدْعُوهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ
অর্থ: “ঐ জাতি কিভাবে কামিয়াবী তথা সফলকাম হতে
পারে,
যারা তাদের হযরত নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নূরুর রহমাত তথা মহাসম্মানিত চেহারা মুবারক উনাকে নূরুন নাজাত বা মুবারক রক্তে
রঞ্জিত করে দিয়েছে। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! অথচ তিনি তাদেরকে
তাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে আহ্বান করছেন।” (মুসনাদে আহমদ, শরহুস সুন্নাহ, সুনানে ইবনে মাজাহ)
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত রুবাইহ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবূ সায়ীদ খুদরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে। তিনি হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে এ তথ্য বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই কাট্টা কাফির উতবা ইবনে আবূ ওয়াক্কাছ সেদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর পাথর নিক্ষেপ করে, নাউযুবিল্লাহ! তখন উনার সামনের ডান দিকের নীচের নূরুল্লাহ
তথা মহাসম্মানিত দাঁত মুবারক শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং নীচের নূরুল
হামরা বা ঠোঁট মুবারক যখমী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর নিশ্চয়ই কাট্টা কাফির
আব্দুল্লাহ ইবনে শিহাব যুহরীর কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মালাহাহ্ তথা মহাসম্মানিত ললাট মুবারক
যখমী শান মুবারক প্রকাশ করেন। নাউযূবিল্লাহ! আর কাট্টা কাফির ইবনে কামিয়া নূরে
মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নূরুর রহমাত তথা মহাসম্মানিত চেহারা মুবারক উনার উপরি অংশে এমন ভাবে আঘাত করে যে, উনার মুবারক শিরস্ত্রাণের দু’টি কড়া উনার নূরুল হুদা তথা
মহাসম্মানিত মাথা মুবারক উনার ভিতর ঢুকে যায় এবং তিনি একটি নীচু স্থানে তাশরিফ
মুবারক গ্রহণ করেন। এই নীচু স্থানটা কাট্টা কাফির আবূ আমির নামক জনৈক মুশরিক খনন
করেছিল,
যাতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
না জেনে নীচু স্থানে যেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন। নাউযুবিল্লাহ! এ সময় সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাহ তথা মহাসম্মানিত হাত মুবারক
ধরেন,
হযরত ত্বলহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি উনাকে ভর দিয়ে নীচু স্থান থেকে উপরে তাশরীফ মুবারক আনেন। হযরত আবূ সায়ীদ
খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হযরত মালিক ইবনে সিনান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার নূরুর রহমাত তথা মহাসম্মানিত চেহারা মুবারক থেকে নূরুন নাজাত তথা
মহাসম্মানিত রক্ত মুবারক চুষে চুষে পান করতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন,
مَنْ مَسّ دَمِي دَمَهُ لَمْ تُصِبْهُ النّارُ.
অর্থ: “আমার নূরুন নাজাত তথা মহাসম্মানিত রক্ত
মুবারক যার রক্তের সাথে মিশেছেন, জাহান্নামের
আগুন উনাকে স্পর্শ করবে না। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (উমদাতুল ক্বরী, শরহে কুসত্বলানী, উয়ূনুল আছার, আল মাওয়াহিবুল
লাদুন্নিয়াহ, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ)
সম্মানিত উহুদ জিহাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার মানহানীকারী এবং যারা উনাকে কষ্ট দিয়েছে তাদের উপর মহান আল্লাহ
পাক উনার লা’নত ও কঠিন আযাব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ
উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ رَسُوْلَ اللهِ لَـهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ.
অর্থ: “আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ!
সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ فَعَلُوا بِنَبِيِّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يُشِيرُ إِلَى رَبَاعِيَتِهِ، اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى رَجُلٍ يَقْتُلُهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেছেন, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (উনার নূরুল্লাহ তথা
মহাসম্মানিত দাঁত মুবারক উনার প্রতি ইশারা মুবারক করে) বলেছেন, যে সম্প্রদায় তাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার সঙ্গে এরূপ বেয়াদবী মূলক আচরণ করেছে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়াবহ
গযব ও কঠিন শাস্তি অবধারিত এবং যে ব্যক্তিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে হত্যা করেছেন তার
প্রতিও মহান আল্লাহ পাক উনার কঠিন আযাব-গযব অবধারিত রয়েছে। (বুখারী শরীফ: পবিত্র
হাদীছ শরীফ নং- ৪০৭৩, উমদাতুল ক্বরী, শরহে ক্বুসতাত্বলানী, আল কাওছারুল জারী, তুহফাতুল আশরাফ, কানযুল উম্মাল, মিশকাতুল মাছাবীহ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا، قَالَ اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى مَنْ قَتَلَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ دَمَّوْا وَجْهَ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হত্যা করেছেন, তার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার গযব ভয়াবহ। আর যে সম্প্রদায়
মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুর রহমত তথা
মহাসম্মানিত চেহারা মুবারক উনাকে নূরুন নাজাত তথা মহাসম্মানিত রক্তাক্ত শান মুবারক
শানিত করেছে তাদের প্রতিও মহান আল্লাহ পাক উনার কঠিন আযাব-গযব অবধারিত।” (বুখারী
শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৪০৭৪, মুসনাদে আহমদ, আল মুসতাদরিক, ফাতহুল বারী, উমদাতুল ক্বরী, আল কাওছারুল
জারী)
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ فِـى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَـهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا.
অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং
উনার রসূল, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে
কষ্ট দেয়,
তাদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত দুনিয়া ও আখিরাতে এবং
মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।”
(পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৫৭)
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
যারা কষ্ট দিয়েছে, উনার নূরুন
নাজাত মুবারক ঝরিয়েছে তাদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত অনন্তকাল ব্যাপী এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন যন্ত্রনাদায়ক
শাস্তি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي حَازِمٍ رحمة الله عليه، أَنَّهُ سَمِعَ حَضْرَتْ سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَهُوَ يُسْأَلُ عَنْ جُرْحِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ" أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَعْرِفُ مَنْ كَانَ يَغْسِلُ جُرْحَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَنْ كَانَ يَسْكُبُ المَاءَ، وَبِمَا دُووِيَ، قَالَ كَانَتْ حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلاَمُ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَغْسِلُهُ، وَ حَضْرَتْ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَسْكُبُ المَاءَ بِالْمِجَنِّ، فَلَمَّا رَأَتْ حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلاَمُ أَنَّ المَاءَ لاَ يَزِيدُ الدَّمَ إِلَّا كَثْرَةً، أَخَذَتْ قِطْعَةً مِنْ حَصِيرٍ، فَأَحْرَقَتْهَا وَأَلْصَقَتْهَا،
فَاسْتَمْسَكَ الدَّمُ، وَكُسِرَتْ رَبَاعِيَتُهُ يَوْمَئِذٍ، وَجُرِحَ وَجْهُهُ، وَكُسِرَتِ البَيْضَةُ عَلَى رَأْسِهِ.
অর্থ: “হযরত আবূ হাযিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি হযরত সাহল ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
থেকে শ্রবণ করেছেন। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আহত শান মুবারক গ্রহণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন।
জাওয়াবে তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ পাক
উনার ক্বসম! আমি ভালভাবেই জানি কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত জখম মুবারক ধুয়ে দিয়েছিলেন এবং
কে পানি ঢালছিলেন, আর কি দিয়ে উনার
সম্মানিত চিকিৎসা মুবারক করা হয়েছিল। তিনি আরো বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার (বানাত) মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রাবিয়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস
সালাম তিনি মহাসম্মানিত জখম মুবারক ধুয়ে দিয়েছিলেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি ঢালে করে পানি এনে তা ঢেলেছিলেন।
সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রাবিয়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি যখন দেখলেন যে, পানি ঢালার পরও নূরুন নাজাত তথা মহাসম্মানিত রক্ত মুবারক
পড়া বন্ধ না হয়ে বরং তা বৃদ্ধি হয়েছিলেন, তখন সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রাবিয়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি এক টুকরা
চাটাই মুবারক নিয়ে তা পুড়িয়ে উক্ত স্থান মুবারকে লাগিয়ে দিলেন। তখন নূরুন নাজাত
তথা মহাসম্মানিত রক্ত মুবারক পড়া বন্ধ হয়ে গেলেন। সেদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি নূরুল্লাহ তথা মহাসম্মানিত
দাঁত মুবারক ভেঙ্গে গিয়েছিলেন, এমন কি নূরুর
রহমত তথা মহাসম্মানিত চেহারা মুবারক জখম হয়েছিলেন এবং লৌহ শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে নূরুল
হুদা তথা মহাসম্মানিত মস্তক মুবারকে বিদ্ধ হয়েছিল। (বুখারী শরীফ: পবিত্র হাদীছ
শরীফ নং- ৪০৭৬, মুসলিম শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ
নং- ৪৭৪৪,
শরহুস সুন্নাহ, তুহফাতুল আহওয়াযী )
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ مَا نَصَرَ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ كَمَا نَصَرَ يَوْمَ أُحد قال فأنكر ذلك فقال بيني وبين من أنكر ذلك كِتَابُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ فِي يَوْمِ أُحُدٍ (وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللَّهُ وَعْدَهُ إِذْ تَحُسُّونَهُمْ بإذنه) يَقُولُ حَضْرَتْ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ وَالْحَسُّ الْقَتْلُ.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত উহুদ দিবসে আমাদেরকে যেমন মদদ বা সাহায্য
মুবারক করেছিলেন অন্য কোন সময় তেমনটি করেননি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস
সালাম! বর্ণনাকারী বলেন, এর মধ্যে কথা
উঠলে তিনি বলেন, যারা আমার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান
করে তাদের ও আমার মাঝে মীমাংসাকারী হলেন মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব তথা পবিত্র
কুরআন শরীফ। সম্মানিত উহুদ দিবস সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক
করেছেন,
وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللَّـهُ وَعْدَهُ إِذْ تَحُسُّونَهُم بِإِذْنِهِ
অর্থ:
“মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের দেয়া ওয়াদা বা প্রতিশ্রতি মুবারক পূর্ণ করেছেন যখন
আপনারা উনার নির্দেশক্রমে তাদেরকে (তথা কাফির মুশরিকদেরকে) হত্যা করছিলেন।”
সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র
আয়াত শরীফ- ১৫২ )
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি الْحَسُّ শব্দ মুবারক উনার অর্থ করেছেন, হত্যা করা। (মুসনাদে আহমদ, মুসতাদরিক, আল ফাতহুর রব্বানী, গায়াতুল মাক্বছুদ, দালায়িলুন নবুওওয়াহ, খাছায়িছুল
কুবরা)
উল্লেখ্য যে, যখন সম্মানিত উহুদ জিহাদের প্রথম ভাগে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশক্রমে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাফির মুশরিকদের নয় জন পতাকাবাহী সৈন্যকে হত্যা
করেন। পরবর্তীতে শত্রুদের বিপরীত দিক থেকে আক্রমণের ফলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু এই পরিস্থিতিতে চিন্তিত হয়ে পড়েন। এ সময় ইবলিস শয়তান চীৎকার দিয়ে মিথ্যা ঘোষণা দিচ্ছিল, ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
সম্মানিত শাহদতী শান মুবারক গ্রহণ করেছেন’। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ!
নাউযূবিল্লাহ! এই ঘোষণার সত্যতা নিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারা চিন্তায় পড়ে যান। বর্ণনাকারী বলেন, ঐ ঘোষণা সত্য বলে আমরা বিশ্বাস করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখতে পাই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি দু’ সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে উনার
নূরুল হুদা তথা মহাসম্মানিত মাথা মুবারক তুলেছেন। এ সময় আমাদের এমন অবস্থা হলো যেন
আমাদের কোন কিছুই হয়নি তথা খুশিতে আমাদের অন্তর ভরে গেল। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে আমাদের মাঝে
তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ دَمَّوْا وَجْهَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “ঐ সম্প্রদায়ের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার
কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টি প্রবল ভাবে নেমে আসুক, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুর রহমত তথা মহাসম্মানিত মুখমন্ডল মুবারক
নূরুন নাজাত তথা মহাসম্মানিত রক্তে রঞ্জিত মুবারক করে দিয়েছে। আবার তিনি ইরশাদ
মুবারক করলেন,
اللَّهمّ إِنَّهُ لَيْسَ لَهُمْ أَنْ يَعْلُونَا
অর্থ: “হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! কখনও
তারা যেন আমাদের উপর বিজয়ী হতে না পারে।”
বলতে বলতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদের নিকট তাশরীফ মুবারক গ্রহন করেন। অতপর তিনি কিছুক্ষণ বিশ্রাম মুবারক
গ্রহণ করলেন। (মুসনাদে আহমদ, আল জামিউছ ছহীহু
লিস সুনানে ওয়াল মাছায়িদ, আল মুসনাদুল
জামি’ আল ফাতহুর রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া)
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُسِرَتْ رَبَاعِيَتُهُ يَوْمَ أُحُدٍ، وَشُجَّ فِي رَأْسِهِ، فَجَعَلَ يَسْلُتُ الدَّمَ عَنْهُ، وَيَقُولُ: ্রكَيْفَ يُفْلِحُ قَوْمٌ شَجُّوا نَبِيَّهُمْ، وَكَسَرُوا رَبَاعِيَتَهُ، وَهُوَ يَدْعُوهُمْ إِلَى اللهِ؟গ্ধ، فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: {لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ} [آل عمران:
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার থেকে বর্ণিত। তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখের নূরুল্লাহ তথা
মহাসম্মানিত দু’টি দাঁত মুবারক শাহাদতী শান মুবারক এবং উনার নূরুল হুদা তথা মহা
সম্মানিত মাথা মুবারক যখমী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তিনি নিজের নূরুর রহমত তথা মহাসম্মানিত মুখমন্ডল মুবারক থেকে নূরুন নাজাত তথা
মহাসম্মানিত রক্ত মুবারক মুছতে মুছতে ইরশাদ মুবারক করেন, যে ক্বওমের লোক তাদের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার নূরুল্লাহ তথা মহাসম্মানিত দাঁত মুবারক ভেঙ্গে দিয়েছে, কি করে তাদের উন্নতি ও সফলতা আসবে? তিনি তাদের ব্যাপারে উক্ত দোয়া মুবারক করেছেন। এ ঘটনার
পরিপ্রেক্ষিতেই তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন, ‘হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই বিষয়ে আপনার
কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ অর্থাৎ আপনাকে মানহানী ও কষ্ট দেয়ার শাস্তি আমি স্বয়ং
মহান আল্লাহ পাক কাফির মুশরিকদের থেকে গ্রহণ করবো। তাদেরকে কঠিন আযাব গযবে নিপতিত
করবো। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা
মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (মুসলিম শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং-
৪৪৯৬,
মুসনাদে আহমদ, সুনানে তিরমিযী, ইবনে হাব্বান, মা’রিফাতুস সুন্নাহ ওয়াল আছার, ফাতহুল বারী, উমদাতুল ক্বরী)
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ (بْنِ مَسْعُوْدٍ) رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ، قَالَ كَأَنـِّي أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـحْكِي نَبِيًّا مِنَ الْأَنْبِيَاءِ ضَرَبَهُ قَوْمُهُ، وَهُوَ يَـمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ، وَيَقُولُ
্রرَبِّ اغْفِرْ لِقَوْمِي فَإِنّـَهُمْ لَا يَعْلَمُونَগ্ধ،
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেন আমি এখনও চাক্ষুষ দেখতে পাচ্ছি যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার এমন কোন এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করেছেন, উনার ক্বওম উনাকে আঘাত করেছে। অথচ তিনি নিজের নূরুর রহমত
তথা মহাসম্মানিত মুখম-ল থেকে নূরুন নাজাত তথা মহাসম্মানিত রক্ত মুবারক মুছতে মুছতে
মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এ দোয়া মুবারক করলেন, হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমার ক্বওমকে আপনি ক্ষমা করে দিন। কেননা তারা
আমাকে চিনতে পারেনি। অর্থাৎ তারা যে জঘন্যতম অপরাধ করেছে, তা তারা বুঝতে পারেনি। (মুসনাদে আহমদ শরীফ: পবিত্র হাদীছ
শরীফ নং- ২৩৩, বুখারী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ
নং- ৩৪৭৭,
মুসলিম শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ৪৪৯৭, ইবনে হাব্বান)
হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তারিখ
তথা ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছে। হযরত সুদ্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, “কাট্টা কাফির
ইবনে কামিয়া হারেছী সম্মানিত উহুদ জিহাদের ময়দানে উপস্থিত হয়ে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে একটি পাথর
নিক্ষেপ করে। যার ফলে উনার একটি নূরুল্লাহ (মহাসম্মানিত দাঁত মুবারক) শহাদতী শান
মুবারক প্রকাশ করেন, উনার নূরুন আলা
নূর (মহাসম্মানিত নাক মুবারক) ফেটে যান এবং নূরুর রহমত (মহাসম্মানিত মুখম-ল
মুবারক) নূরুন নাজাত (রক্তাক্ত) শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি প্রচ- ব্যথিত শান
মুবারক প্রকাশ করেন। এদিকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এই
পরিস্থিতিতে চিন্তিত হয়ে পড়েন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদেরকে ডেকে বলছিলেন,
عِبَادَ اللَّهِ، إِلَيَّ عِبَادَ اللَّهِ فَاجْتَمَعَ إِلَيْهِ ثَلَاثُونَ رَجُلًا فَجَعَلُوا يَسِيرُونَ بَيْنَ يَدَيْهِ
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাগণ! এদিকে
আমার নিকটে আসুন। মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাগণ এদিকে আমার নিকট আসুন! দেখো গেলো, ৩০ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সামনে এসে একিত্রত হলেন। অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
খিদমত মুবারকে হাযির হলেন।’ ইতিপূর্বে হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও
হযরত সাহল ইবনে হানীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারাও নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে
অবস্থান মুবারক করছিলেন। হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার নিজ দেহ
দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
আড়াল করে রেখেছিলেন। হঠাৎ শত্রুপক্ষের একটি তীর এসে হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকে বিদ্ধ হয়। ওই হাত মুবারক কাফিরদের তীরের আঘাতে অবশ
হয়ে যায়।
কাট্টা কাফির উবাই ইবনে খালাফ জুমাহী সে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে অগ্রসর
হয়। সে ক্বসম করেছিল যে, অবশ্যই নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করবে।
নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমিই বরং তাকে হত্যা করব। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা
রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম!
প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে আরো উল্লেখ
রয়েছে,
يَا كَذَّابُ أَيْنَ تَفِرُّ فَحَمَلَ عَلَيْهِ فَطَعَنَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَيْبِ الدِّرْعِ فَجُرِحَ جَرْحًا خَفِيفًا فَوَقَعَ يَخُورُ خُوَارَ الثَّوْرِ فَاحْتَمَلُوهُ وَقَالُوا لَيْسَ بِكَ جِرَاحَةٌ فَمَا يُجْزِعُكَ؟ قَالَ: أَلَيْسَ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ لَو كَانَت تَجْتَمِع ربيعَة وَمُضر لقتلهم. فَلَمْ يَلْبَثْ إِلَّا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ حَتَّى مَاتَ مِنْ ذَلِكَ الْجُرْحِ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,‘হে মিথ্যুক! তুই এখন কোথায় যাবি? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে আক্রমণ করলেন এবং তার লৌহ বর্মের ফাঁকে আঘাত করলেন। সে
সামান্য যখমী হল। কিন্তু তার ব্যথায় জর্জরিত হয়ে সে ষাঁড় গরুর মত চীৎকার দিতে লাগলো। তার সাথীরা তাকে তুলে নিয়ে গেল। তারা বলল, তোমার দেহেতো তেমন কোন যখম নেই, তাহলে তুমি এত অস্থির কেন? সে বলল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিতো বলেছেন যে, তিনি আমাকে অবশ্যই হত্যা করবেন। এক্ষণে যদি রাবীয়া ও
মুদ্বার উভয় গোত্রও আমার পক্ষ নিয়ে একত্রিত হত তবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সবাইকে হত্যা করতেন। ওই
সামান্য ক্ষতের পরিণতিতে একদিন কিংবা তারও কম সময়ের ব্যবধানে কাট্টা কাফির উবাই
ইবনে খালাফ জুমাহীর মৃত্যু হল।’
আরো বর্ণিত রয়েছে, যখন লোকজনের মধ্যে গুজব রটে যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত শহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।
নাউযূবিল্লাহ! তখন হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তরবারি মুবারক হাতে
নিয়ে কাফির মুশরিকদের সাথে বীরত্বতার সাথে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করতে করতে
শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
অপর দিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদেরকে আহ্বান মুবারক করতে করতে পাথরের পাশে অবস্থানরত হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ারা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনতে না পেরে জনৈক ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার প্রতি তীর নিক্ষেপের জন্যে ধনুকে তীর তাক
করলেন।
فَقَالَ أَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَفَرِحُوا بِذَلِكَ حِينَ وَجَدُوا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفَرِحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ رَأَى أَنَّ فِي أَصْحَابِهِ مَنْ يَمْتَنِعُ بِهِ، فَلَمَّا اجْتَمَعُوا وَفِيهِمْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَهَبَ عَنْهُمُ الْحُزْنُ فَأَقْبَلُوا يَذْكُرُونَ الْفَتْحَ وَمَا فَاتَهُمْ مِنْهُ وَيَذْكُرُونَ أَصْحَابَهُمُ الَّذِينَ قُتِلُوا،
অর্থ: ‘অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে পেয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলে
‘ফালইয়াফরাহু’ তথা খুবই খুশি মুবারক প্রকাশ করতে লাগলেন। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দেখতে পেলেন উনার
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে এখনও অনেকে আছেন
যারা উনার হিফাযত মুবারকে আসতে কোশেশ মুবারক করছেন তখন তিনি খুশি মুবারক প্রকাশ
করলেন। দেখতে দেখতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সবাই
একত্রিত হলেন। নিজেদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফিরে পেয়ে উনাদের সকলের দুঃখ কষ্ট মুবারক দূর হয়ে গেল।
অতঃপর উনাদের বিজয়, কাফির মুশরিকদের
পরাজয় ও পাওয়া না পাওয়া সম্পর্কে আলোচনা মুবারকে মশগুল হলেন, কারা সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন তা নির্ণয়
ও আলোচনা মুবারক করতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (তাফসীরে
বাগবী,
দুররে মানছূর, তাফসীরে মাযহারী, সীরাতুন নবী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে কাছীর, তারীখুত ত্ববারী, আল বিদায়া ওয়ান
নিহায়া)
স্মরণীয় যে, যারা বলেছিলেন যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক গ্রহণ করেছেন সুতরাং আপনারা নিজ
সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট ফিরে যান। উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র
আয়াত শরীফ নাযিল করলেন,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
একজন সুমহান রসূল (বা হাবীবুল্লাহ) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার পূর্বে অনেক হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা গত
হয়েছেন। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১৪৪)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের উপর আক্রমণ করার জন্য কাফির মুশরিকদেরকে নিয়ে হযরত আবূ
সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি)
তিনি পাহাড়ে আরোহণ করতে চাইলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা পূর্বের সকল বেদনা ভুলে এবার কাফির মুশরিকদের উপর পুনরায় আক্রমণ করার পূর্ণ
প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
لَيْسَ لَهُمْ أَنْ يَعْلُونَا
অর্থ:
‘তারা আমাদের উপর কখনও বিজয়ী হতে পারবে না।’ সুবহানাল্লাহ! সুবহানা
রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম!
নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত
উহুদ জিহাদের দিন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া মুবারক করলেন,
اللَّهُمَّ إِنْ تُقْتَلْ هَذِهِ الْعِصَابَةُ، لَا تُعْبَدْ فِي الْأَرْضِ
অর্থ: “ইয়া বারী ইলাহী! হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এই দল আজকে যদি শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন
তবে পৃথিবীতে আপনার ইবাদত-বন্দেগী করার কেউ থাকবে না।” পুনরায় নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার জন্য প্রস্তুত
হতে বললেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শত্রুপক্ষের
দিকে এবার পাথর নিক্ষেপ করা শুরু করলেন, একপর্যায় কাফির মুশরিকরা পাহাড় থেকে নেমে যেতে বাধ্য হলো। (পরিশেষে তারা
সম্মানিত উহুদ জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করে পবিত্র মক্কা শরীফের দিকে হাপাতে
হাপাতে দ্রুতগতীতে ফিরে গেল)। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (তাফসীরে
বাগবী,
দুররে মানছূর, তাফসীরে মাযহারী, তারিখুল খমীস, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে কাছীর, তারীখুত ত্ববারী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, পবিত্র মক্কা শরীফের কাফির মুশরিকদের পাঁচ জন নেতা অঙ্গীকার
করেছিলো যে, তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করবে। নাউযূবিল্লাহ!
নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! তাদের মধ্যে
একজন কাট্টা কাফির আব্দুল্লাহ ইবনে কামিয়া। সে তার গোত্রের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্ট, কটুভাষী এবং কঠোর হৃদয়ের লোক ছিলো। দ্বিতীয়জন ছিলো কাট্টা
কাফির উতবা ইবনে আবূ ওয়াক্কাস যুহরী। সে ছিলো হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার ভাই। যার আঘাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার নূরুল হামরা’ তথা মহাসম্মানিত ওষ্ঠ মুবারক ও নূরুল্লাহ তথা
মহাসম্মানিত দাঁত মুবারক জখমী শান মুবারক গ্রহণ করেছিলেন। তৃতীয়জন ছিলো কাট্টা
কাফির আব্দুল্লাহ ইবনে শিহাব যুহরী। চতুর্থ জন কাট্টা কাফির উবাই ইবনে খালাফ। কেউ
কেউ বলেছেন, পঞ্চম আরেক জন ছিলো। তার নাম
আব্দুল্লাহ ইবনে হুমায়িদ আযাদী।
এই সমস্ত
কাফির মুশরিকরা তাদের সামান্য ক্ষমতা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক উনাকে
নির্বাপিত করতে চেয়েছিল। নাউযূবিল্লাহ! অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত
নূর মুবারক উনাকে পরিপূর্ণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এ
সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
করেন,
يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللَّـهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّـهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
অর্থ: “তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক
উনাকে মুখের ফুঁৎকারে নিভাতে চায় কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি
উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক উনাকে পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেনই করবেন যদিও কাফির
মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (পবিত্র সূরা আছ ছফ্ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ -৮)
অর্থাৎ কাফির মুশরিকরা যতই ষড়যন্ত্র, বাহাদুরী তাকাব্বুরী করুক না কেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান মহাসম্মানিত শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা মুবারক সুস্পষ্টভাবে ও সর্বব্যাপ্তী প্রকাশ
করবেনই করবেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটাই করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা
রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম!
সম্মানিত উহুদ জিহাদে স্বয়ং খ¦লিক মালিক মহান
আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে সম্মানিত খুশি মুবারক করার লক্ষ্যে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন,
لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ أَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَإِنَّهُمْ ظَالِمُونَ
অর্থ: “(মহান আল্লাহ পাক) তিনি তাদের প্রতি
ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি দিবেন এই বিষয়ে আপনার কোন কিছুই করতে হবে না
কারণ তারাতো যালিম। (পবিত্র সূরা আলে ইমারন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১২৮)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট
দানকারীদের যথাযথ বিচার করবেন এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিবেন।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, সম্মানিত উহুদের জিহাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নূরুন নাজাত তথা মহাসম্মানিত রক্ত
মুবারক উনার ফোঁটা মুবারক মুছে ফেলেছেন এবং তা মাটিতে পড়তে দেননি। সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন, এ নূরুন নাজাত
তথা মহাসম্মানিত রক্ত মুবারক মাটিতে পড়লে নিঃসন্দেহে পৃথিবীবাসীদের উপর আসমান থেকে
আযাব নেমে আসবে। যার ফলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। অতপর মাটিতে আর কোন কিছুই উৎপন্ন হবে না। এজন্য রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়া মুবারক করলেন,
اللهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِي فَإِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থ: “ইয়া বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি
আমার ক্বওম তথা এদেরকে ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয়ই এরা অবুঝ।” (মুসনাদে আহমদ, ইবনে হাব্বান, মাদারিজুন নবুওওয়াহ)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল
আলামীন,
নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদের
দিন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মক্কাবাসীদের জন্য দোয়া মুবারক করেছেন যে, তারা না বুঝে আমাকে কষ্ট দিয়েছে। কাজেই তাদেরকে ক্ষমা করে
দিন,
তাদেরকে মাফ করে দিন। যেভাবে তায়েফের ময়দানে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার পরও
তিনি তাদের জন্য দোয়া মুবারক করেছেন। তবে যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দয়া ইহসান মুবারক লাভ করার পরও বেঈমানীতে
অটল ছিলো তাদের কঠিন শাস্তি হয়েছে। কারণ তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দিতে অবিচল ছিলো এবং কুফরীর মধ্যে অটল
ছিলো। নাউযূবিল্লাহ!
মহান
আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّهُ مَن يُحَادِدِ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ فَأَنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيهَا ۚ ذَٰلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيمُ.
অর্থ: “তারা (তথা কাফির মুশরিকরা ও মুনাফিকরা)
কি একথা জেনে নেয়নি যে, মহান আল্লাহ পাক
উনার সাথে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যে মুকাবিলা করে তার জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম বা
দোযখ। যেখানে সে চিরস্থায়ী অবস্থান করবে। এটাই হলো বড় লাঞ্চনা তথা মহাঅপমান।
(পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৬৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ رَسُوْلَ اللهِ لَـهُمْ عَذَاب اَلِيْم.
অর্থ: “আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ!
সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র
আয়াত শরীফ ৬১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَبَّ نَبِيًّا فَاقْتُلُوْهُ وَمَنْ سَبَّ اَصْحَابِـىْ فَاضْرِبُوْهُ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ
আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কোনো নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে গাল-মন্দ করে, মানহানী করে, আপনারা তাকে ক্বতল করুন, মৃত্যুদ- দিন।
আর যে ব্যক্তি আমার হযরত ছাহাবায়ে রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে গাল-মন্দ করবে, মানহানী করে, আপনারা তাকে প্রহার করুন।” সুবহানাল্লাহ! (আশ শিফা, ফাতাওয়ায়ে বায্যাযিয়্যাহ, আল মু’জামুছ ছগীর লিত ত্ববারনী)
0 Comments:
Post a Comment