৬৯২ নং-সুওয়াল : বিদাত কি? বিদাত কয় প্রকার? বিদাতে হাসানা করা জায়িয কি না?

 

সুওয়াল : মাসিক মদীনা সেপ্টেম্বর/৯৬ইং সংখ্যায় নিম্ন বর্ণিত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্ন : বিদাত কি? বিদাত কয় প্রকার? বিদাতে হাসানা করা জায়িয কি না?

উক্তর : বিদাত শব্দের আভিধানিক অর্থ নতুন সৃষ্টি, নব আবিস্কৃত বিষয়াদি। শরীয়তের পরিভাষায় বিদাত বলা হয়, এরূপ আমলকে, যেসব আমলের প্রচলন হযরত নবী করীম বা সাহাবিগণের যুগে ছিল না, এমন যে কোন কাজকে পূন্যের কাজ মনে করে আমল করলে তা বিদাতরূপে গণ্য হবে। এক শ্রেণীর লোক নব আবিস্কৃত কোন কোন এবাদত-পদ্ধতিকে বিদাতে হাসানা বা উত্তম ও পছন্দনীয় বিদাতরূপে সাব্যস্ত করে থাকেন। কিন্তু বিদাতে হাসানা বা উত্তম হওয়ার কোন অবকাশ নাই। কারণ, মন্দ বিষয়টা মন্দই, এর মধ্যে মন্দের ভাল কিছু থাকতে পারে না। হযরত মুজাদ্দিদ আল ফিসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এক মকতুবে লিখেছেন যে, “এই অধম কোন প্রকার বিদাতের মধ্যেই উত্তম কিছু বা নূর প্রত্যক্ষ করে না। সর্ব প্রকার বিদাতের মধ্যেই অন্ধকার এবং মলিনতা অনুভব করে। আজ যদি কেউ দুর্বল দৃষ্টি শক্তির কারণে কোন বিদাতকে সবুজ ও সজীব দেখে, তবে আগামীকাল (কিয়ামতের দিনে) যখন দৃষ্টি শক্তি সতেজ হবে, তখন বুঝতে পারবে যে, এসব বিদাতে ক্ষতি ও অনুতাপ ব্যতীত আর কিছু নাই। বিশেষতঃ একাধিক ছহীহ হাদীছে যেখানে বিদাতকে গুমরাহী বলা হয়েছে, সেখানে বিদাতের মধ্যে সৌন্দর্য্য আবিস্কৃত হওয়ার অবকাশ কোথায়?

এখন আমার সুওয়াল হলো- মাসিক মদীনার বর্ণিত উত্তর অনুযায়ী সত্যিই কি বিদয়াতে হাসানা বলতে কোন বিদয়াত নেই? আর সকল বিদয়াতই কি গুমরাহী? বিদয়াত সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দিতে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যে ক্বওল উল্লেখ করা হয়েছে, তার সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা কি? নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

 

জাওয়াব : প্রথমত: বলতে হয় যে, বিদয়াত সম্পর্কিত মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, মনগড়া, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর। সাথে সাথে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ, মুহাদ্দিস ও ফক্বীহগণ তাদের কিতাবসমীহে বিদয়াতের যে সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার সম্পূর্ন বিপরীত। কারণ মাসিক মদীনায় লিখা হয়েছে, বিদাতে হাসানা হওয়ার কোন অবকাশ নাই বরং সকল বিদাতই গুমরাহী।

অথচ নিম্নোক্ত বিশ্ববিখ্যাত সকল কিতাবসমূহে বিদয়াতের যে ......... ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তাতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, .... বিদয়াত দুপ্রকার। যেমন- (১) বিদয়াতে হাসানা, (২) বিদয়াতে .......।

........ শরহে বুখারী শরীফ, মিরকাত শরীফ, শরহে মিশকাত শরীফ, ফতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম, আওওয়ারে কুদসিয়্যাহ, আল আযহার, কবীরী, শরহে মুনিয়াতুল মুছাল্লী, ইহইয়ায়ে উলুমুদ্দীন, মুযাহেরে হক্ব, হাশিয়ায়ে মিশকাত, আশয়াতুল লুময়াত, ফতওয়ায়ে শামী, ইশবাউল কালাম, আসমা ওয়াল লোগাত, হুসনুল মুকাসেদ, জামেউল উলুম ওয়াল হাকাম, ইরশাদুল উনুদ ইত্যাদি।

এছাড়াও আরো অসংখ্য অপণিত কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, বিদয়াত দুপ্রকার। বিদয়াতে হাসানা ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

উল্লেখ্য মদীনা সম্পাদক যেহেতু এ ব্যাপারে নেহায়েত মুর্খ বা অজ্ঞ, সেহেতু সে কোন কিতাবে বিদয়াতে হাসানা বলতে কোন বিদয়াত আছে বলে খুঁজে পায়নি। আর এ ধরণের লোকদের পক্ষে তা খুঁজে না পাওয়াই স্বাভাবিক।

দ্বিতীয়ত: বলতে হয় যে, মদীনা সম্পাদক বিদয়াতে হাসানাকে অস্বীকার করতে গিয়ে কাইউমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মাকতুবাত শরীফের যে ক্বওল উল্লেখ করেছে, তাও তার অজ্ঞতার কারণে অপব্যাখ্যা করেছে। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি উনার উল্লেখিত ক্বওলের সঠিকও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হলো নিম্নরূপ- হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “মি কোন বিদয়াতের মধ্যেই নূর দেখিনা, তা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহই হোক বা বিদয়াতে হাসানাই হোক।

মূলত হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত ক্বওল শরীফ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল অর্থাৎ সুন্নতের মধ্যে যে নূর রয়েছে, তা অন্য কারো আমরে মধ্যে নেই, আর তাই তো স্বাভাবিক। কেননা সুন্নতের মধ্যে যে নূর রয়েছে, তা বিদয়াতের মধ্যে কখনো পাওয়া সম্ভব নয়। আর তাই তিনি বলেছেন, “আমি কোন বিদয়াতের মধ্যেই নূর দেখিনা।অর্থাৎ সুন্নতের ন্যায় নূর দেখিনা। কাজেই হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপরোক্ত কথার দ্বারা বিদয়াতে হাসানাহ যে পরিত্যাজ্য, তা বুঝায় না। কেন না তিনি নিজেও অনেক বিদয়াতে হাসানাহ আমল করেছেন ও তা আমলে উৎসাহিত করেছেন। যেমন- তাছাউফের সমস্ত তরীক্বাগুলো যেহেতু খাইরুল কুরুনেতাছাউফের মাকামাতগুলো বর্তমান তরীক্বাগুলোর ন্যায় সুবিন্যস্ত আকারে সুন্নিবেশিত ছিল না। অথচ হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাসাউফের বেশিরভাগ তরীকার সংস্কার সাধন করেন। বিশেষভাবে নকশবন্দীয়া তরীক্বকে আরো বিস্তারিত ও ব্যাপক সংস্কার সাধনের মাধ্যমে নকশবন্দীয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া নামক তরীক্বায় প্রবর্তন করেন এবং নিজে এসকল তরীক্বার মাকামের বিন্যাস, হাল-অবস্থা বর্ণনা করে মুরীদ-মুতাক্বেদগণকে তালীম-তালক্বীন দিয়েছেন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনে এরকম আরো অনেক ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি বিদয়াতে হাসানাহ কাজকে কখনো পরিত্যাগ করেননি বা করতে বলেননি।

বস্তুত: মদীনা সম্পাদক মকতুবাত শরীফের উক্ত বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েই বিদয়াতে হাসানাকে অস্বীকার করেছে।

অতঃপর সে আরো লিখেছে যে, “একাধিক ছহীহ হাদীছে যেখানে বিদাতকে গুমরাহী বলা হয়েছে সে বিদাতের মধ্যে সৌন্দর্য্য আবিস্কৃত হওয়ার অবকাশ কোথায়?”

তার এ বক্তব্যটিও নিহায়েত অজ্ঞতাসূচক ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বিরোধী। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده.

অর্থ : যে কেউ দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়তসম্মত), তার জন্য সে সওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা এ পদ্ধতি অনুসরণ করবে, তাদের সওয়াবও সে পাবে।

(মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে নববী, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, মুযাহেরে হক্ব)।

এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, উক্ত হাদীছ শরীফে নতুন উদ্ভাবিত বিষয় অর্থাৎ বিদয়াতকে حسنة (হাসানাহ) বা উত্তম বলা হয়েছে। অথচ মদীনা সম্পাদক বলেছে, “বিদাত উত্তম হওয়ার অবকাশ নাই।একথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরোধিতা নয় কি? তাছাড়া সকল বিদয়াতই যদি মন্দ বা গুমরাহি হয়ে থাকে, তবে হযরত মর ইবনু খাত্তাব রহমতুল্লাহি আলাইহি তারাবীহ নামাযের জামায়াতের ক্ষেত্রে একথা কেন বললেন যে,

نعمة البدعة هذه.

অর্থ : এটা উত্তম বিদয়াত।

এখন প্রশ্ন দাড়ায়, মদীনার সম্পাদক সাহেব কি হযরত মর ফারূক আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রবর্তিত তারাবীহর নামাযের জামায়াতকে গুমরাহী বা মন্দ বলবেন?

মূলকথা হলো- সকল বিদয়াতই গুমরাহী নয়। বরং বিদয়াত অবশ্যই দুপ্রকার। যেমন- বিদয়াতে হাসানা ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

স্মরণযোগ্য যে, মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারি/৯৫ইং সংখ্যায়ও বিদয়াত সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের এরূপ ভুল উত্তর প্রদান করা হয়েছির। তারও সঠিক ও গ্রহণযোগ্য জাওয়াব আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২৩তম সংখ্যায় দেয়া হয়েছে।

মূলত মদীনা সম্পাদক গুমরাহীর উপর দৃড় থাকার কারণে দলীল-আদিল্লার মাধ্যমে তার ভুলগুলো সংশোধন করে দেয়ার পরও সে ভুলগুলি পূর্ণরাবৃত্তি করছে এবং অনেক মাসয়ালারই ভুল উত্তর প্রদান করে, যা কিনা তাকে ও তার অনুসারীদেরকে গোমরাহীর দিকে ধাবিত করছে।

[বিঃদ্রঃ- বিদয়াত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১৫তম অথবা ৩৬তম সংখ্যা পাঠ করুন।]

ফরজ নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-ভিতরে বিদয়াতের সংজ্ঞা দেওয়া আছে -

. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_655.html

২. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_972.html

৩. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_453.html

৪. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post.html

৫. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_1.html

৬. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_49.html

৭. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/10/blog-post_75.html

আবা-৩৯

0 Comments: