ফরজ
নামাযের পর হাত উঠায়ে
সম্মিলিতভাবে
মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট
বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া
(পূর্ব
প্রকাশিতের পর)
গবেষণা
কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন উনার এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে গবেষণা
কেন্দ্র,
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে টুপি, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুময়ার নামায ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর নবম ফতওয়া
হিসাবে “ফরজ নামাযের পর মুনাজাত ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ
পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
আমাদের ‘মাসিক আল
বাইয়্যিনাত’
পত্রিকায় ফরজ নামাযের পর হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া গত চার সংখ্যা থেকে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হচ্ছে। গত
সংখ্যা হতে মুনাজাত সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ের অকাট্য দলীলসমূহ পেশ করা হচ্ছে।
আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করা :
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানের পর হাত উঠায়ে
মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনাদের কোথাও আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করতে নিষেধ করা হয়নি, বরং কিতাবে উল্লেখ রয়েছে- নামাযের বাহিরের যে কোন মুনাজাতে হাত উঠানো সুন্নত।
অতএব, আযানের পর উভয় হাত উঠায়ে মুনাজাত করাও সুন্নত প্রমাণিত হয়।
তবে এটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার আমল দ্বারা প্রমাণিত নেই কিন্তু মুনাজাতের সময় হাত উঠানো সম্পর্কে বহু পবিত্র
হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। অতএব, আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত
করাকে বিদয়াত বলার কোনই অবকাশ নেই।
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
(১)
استفبد
من هذا الحديث والذى قبله- ان يسن رفغ اليدين الى السماء فى كل دعاء ....... وقال
النووى ومن ادعى حصرها فقد غلط علطا فا حشا. (مرقت شرح مشكوة)
অর্থঃ- (দোয়ায় হাত উঠানো
সংক্রান্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা) এটাই প্রমাণিত হয় যে, সকল
দোয়াতেই হাত উঠানো সুন্নত। .......... ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বলে কোন বিশেষ দোয়ায় হাত উঠানো জায়েয, তবে
নিশ্চয়ই উনার এ দাবী ভ্রমাত্মক। (মিরকাত শরহে মিশকাত)
(২)
يرفع
هما لمطلق الدعاء فى سائر الا مكنة والازمنة على طبق ما وردت به السنة. (شامى)
অর্থঃ- পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার বর্ণনা মতে সর্বস্থানে, সকল সময়, সমস্ত
দোয়াতে হাত উঠানো প্রমাণিত হয়। (শামী)
(৩)
ووجهه عموم دليل الرفح للدعاء ويجب بانه
مخصوصة بما ليس فى الصلوة لا جماع على ان لا رفغ فى دعاء التشهد. (فتح القدير)
অর্থঃ- দোয়ার মধ্যে হাত
উঠানোর দলীল কোন দোয়ার জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট নয়। সকল দোয়াতেই হাত উঠানো জায়েয।
তবে নামাযের মধ্যস্থিত দোয়ায় হাত উঠানো বিধেয় নয়, কেননা
সর্বসম্মত মত হলো- তাশাহুদের দোয়াতে হাত উঠানো জায়েয নয়। (ফতহুল ক্বাদীর)
(৪)
سوال:- کیا فرماتے ھین علماء دین و خلفاء شرع متین- اس
مسئلہ مین کہ دعا مانگنا ھاتھ اطھاکر بعد اذان کے کیسا ھے؟
অর্থঃ- আযানের পর হাত
উঠায়ে মুনাজাত করা সম্পর্কে ওলামায়ে দ্বীনের রায় কি?
جواب:- بالتخصیص دعاء اذان مین ھاتھ اطھاناتو نھین دیکھاگیا
مگر مطلقا دعا مین ھاتھ اطھانا احادیث قولیۃ، فعلیۃ، مرفوعۃ، موقوفہ کثیرہ شھیدہ سے
ثابت ھے من غیر تخصیص بدعاء دون دعاء. پس دعاء اذان مین بھی ھاتھ اطھانا سنت ھوگا.
لا طلاق الدلائل.
(امداد الفتاوی ج 1 صفہ 102)
অর্থঃ- “বিশেষভাবে আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করা পরিলক্ষিত হয়না। তবে সাধারণভাবে
(যে কোন) মুনাজাতের সময় হাত উঠানো সম্পর্কে বহু ক্বাওলী, ফে’লী,
মরফূ, মওকূফ ও বহু প্রসিদ্ধ হাদীছ শরীফ
বিদ্যমান রয়েছে। কোন দোয়াকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সুতরাং আযানের পর হাত উঠায়ে
মুনাজাত করাও সুন্নত প্রমাণিত হয়। কেননা দলীলসমূহ মুত্লক্ব (ব্যাপক)।” (ইমদাদুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ-১০২)
(৫)
سوال:- اذان کی دعا مین ھاتھ اطھا کر دعا پرھے مسنون کیاھے؟
সুওয়ালঃ- আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করবে কি? সুন্নত তরীক্বা কোনটি?
جواب:- ھرطرح درست ھے- (فتاوے دیوبند ج 1 صفہ95)
জাওয়াবঃ- প্রত্যেক অবস্থায়
জায়েয আছে। অর্থাৎ হাত উঠায়ে এবং না উঠায়ে উভয় অবস্থায় জায়েয। (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ২য়
জিঃ পৃঃ ৯৫)। (তবে হাত উঠানোই উত্তম, কেননা দোয়ায় হাত উঠানো আদবের
অন্তর্ভূক্ত)।
(৬)
سوال:- بعد اذان رفع یدین کرکے مناجات کرنا ثابت ھے یا نھین؟
সুওয়ালঃ- আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করা প্রমাণিত আছে
কি?
جواب:- خصوصیت کے ساتھ اس موقع پر رفع یدین ثابت نھین ھے
اگر چہ عموما دعاء مین رفع یدین کا مستحب ھونا اسکے استحباب کو مقتضی ھے- (فتاوے
دار العلوم دیوبند ج2 صفہ 110)
জাওয়াবঃ- বিশেষভাবে আযানের
মুনাজাতে হাত উঠানো প্রমাণিত নেই। তবে সাধারণভাবে যেহেতু মুনাজাতের মধ্যে হাত
উঠানো মুস্তাহাব, তাই আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব হওয়ার
প্রমাণই বহন করে। (ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ২য় জিঃ পৃঃ ১১০)
সুতরাং আযানের দোয়াতেও হাত উঠানো জায়েয ও
সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত হবে।
(৭)
اذان کے بعد دعا مین ھاتھ اطھانا منقول نھین ھے ویسے
مطلقا دعا مین ھاتھ اطھانا قولی اور فعلی (حدیث) سے ثابت ھے- لھذا دعائے اذان مین ھاتھ
اطھانے کو سنت کی خلاف ورزی نھین کھا جاتیگا- (فتاوئے رحیمیہ ج 3صفہ 16)
অর্থঃ- আযানের পর হাত
উঠায়ে মুনাজাত করা (আমল দ্বারা) বর্ণিত
নেই। তবে সাধারণভাবে মুনাজাতে হাত উঠানো ক্বাওলী এবং ফে’লী (উভয়
প্রকার হাদীছ শরীফ) দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। তাই
আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করাকে সুন্নতের খিলাফ (বিপরীত) বলা যাবেনা। (ফতওয়ায়ে
রহীমীয়া,
৩য় জিঃ পৃঃ ১৬)
(৮)
سوال:- اذان کے بعد ھاتھ اطاھاکر مناجات کرنا کیسا ھے........؟
جواب:- اذان کے بعد جوالفاظ ادا کیئے جاتے ھین وہ دعاکے
الفاظ ھین اور رفع یدین اذاب دعا مین سے ھے- لس لئے ھاتھ اطھانے مین مضانقہ نھین-
(کفایۃ المفتی ج 3 صفہ 8)
অর্থঃ- সুওয়াল- আযানের পর
হাত উঠায়ে মুনাজাত করা কিরূপ?
জাওয়াব- আযানের পর যে সকল শব্দসমূহ পড়া হয়, সেগুলো দোয়ার শব্দ। আর দোয়ার সময় উভয় হাত উঠানো আদবের অন্তর্ভূক্ত। তাই হাত
উঠায়ে মুনাজাত করাতে কোন ক্ষতি নেই। (কেফায়াতুল মুফতী, ৩য় জিঃ পৃঃ ৮)
(৯)
سوال:- اذان کے بعد مناجات کیسی ھے؟
جواب:- اذان کے بعد دعاء وسیلہ مستحب ھے- کذا فی درمختار
ج 1 صفہ 412. (فتاوئے محمودیہ ج 2 صفہ 32)
অর্থঃ- সুওয়াল- আযানের পর মুনাজাত করা কি?
জাওয়াব- আযানের পর দোয়ায়ে
উসীলা পড়া (অর্থাৎ মুনাজাত করা) মুস্তাহাব। অনুরূপ দুররুল মোখতার ১ম জিঃ পৃঃ ৪১২
উল্লেখ রয়েছে। (ফতওয়ায়ে মাহ্মূদিয়া ২য় জিঃ পৃঃ ৩২)
(১০) হাফিজে হাদীছ বাহরুল উলূম, ফক্বীহুল উম্মত, সাইয়্যিদুল মুনাজিরীন, রঈসুল
মুহাদ্দিসীন,
তাজুল মুফাসসিরীন, শায়খুল মাশায়েখ, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ব ত্বরীক্বত হযরাতুল আল্লামা হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী
মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীর হাটী রহমতুল্লাহি
আলাইহি (খলীফায়ে ফুরফুরা শরীফ) উনার লিখিত “জরুরী
মাসায়েল”
কিতাবে উল্লেখ করেন, “আযানের
পর হাত উঠায়ে দোয়া করা জায়েয।”
(১১) আযানের পর মুয়াজ্জিন ও স্রোতাদের হাত উঠায়ে
মুনাজাত করা মুস্তাহাব। শুধু আযানের পর নয়, নামাযের
মধ্যস্থিত (দোয়া কুনূত, দোয়ায়ে মাসূরা ইত্যাদি) দোয়া
ব্যতীত সকল দোয়ার জন্য হাত উঠানো এবং উক্ত হাত মুখমন্ডলে মসেহ্ করাও মুস্তাহাব। (ফতওয়ায়ে
সিদ্দীক্বিয়া পৃঃ ১৪৫)
অতএব, স্পষ্ট
প্রমাণিত হয় যে,
আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করা জায়েয ও সুন্নত। এটাকে বিদয়াত বলা গোমরাহীর নামান্তর।
ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া ও হাত উঠায়ে মুনাজাত করা:
জুমুয়ার দিন ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া ও আযানের পর উভয় হাত উঠায়ে দোয়া করা জায়েয এবং এর
স্বপক্ষে বহু নির্ভযোগ্য দলীলসমূহ রয়েছে। অথচ কিছু লোক জিহালতের কারণে এটাকে
নাজায়েয ও বিদয়াত বলে থাকে। তাদের উক্ত
বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়।
নিম্নে তার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দরীলসমূহ পেশ করা হলো-
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে,
(১-২)
عن
ابى امامة قال سمعت معاوية بن ابى سفيان رضى الله عنهما- وهو جالس على المنبر اذن
المؤذن فقال الله اكبر، الله اكبر- الخ- فلما ان قضى التأذين- قال يا ايها الناس
انى سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم على هذا المجلس حين اذن المؤذن يقول ما
سمعتم منى من معالتى. (يخارى شريف، نسائ شريف)
অর্থঃ- হযরত আবূ উমামাহ্
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, “আমি
শুনেছি ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জুমুয়ার দিন মিম্বরের উপর
বসে মুয়াজ্জিনের আযানের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও আযানের শব্দসমূহকে উচ্চারণ করেন এবং আযান
শেষে বলেন,
হে লোক সকল, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জুমুয়ার দিন মিম্বরে বসা অবস্থায়
মুয়াজ্জিনের আযান শ্রবণে এরূপ বলতে শুনেছি, যেরূপ
তোমরা আমার থেকে শুনতে পেলে।” (বুখারী শরীফ, নাসাঈ শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত
রয়েছে-
(৩)
قال
النبى صلى الله عليه وسلم- من قال حين يسمع الاذان والاقامة اللهم ربذة الدعةة
الخ. حلت له شفاعتى يوم القيامة. (بخارى شريف)
অর্থঃ- নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আযান ও ইক্বামত শ্রবণ করে, আল্লাহুম্মা
রব্বা হাজিহিদ্ দাওয়্যাতি ........ এ দোয়া পাঠ করবে, তার জন্য
ক্বিয়ামতের দিন আমি শুপারিশ করবো।” (বুখারী শরীফ)
(৪) উমদাতুর
রিওয়াইয়্যাহ কিতাবে উল্লেখ আছে, ছানী আযানের পর দোয়া করা যাবে
কিন্তু ইমাম সাহেব খুৎবা শুরু করার পূর্বে দোয়া করতে হবে।
(৫) কেউ
কেউ নিম্নোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা ছানী আযানের পর দোয়া করা নাজায়েয বলে
থাকেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اذاخرج
الامام فلاصلوة ولا كلام. (طبرانى شريف)
অর্থঃ- ইমাম যখন (খুৎবার
জন্য) বের হয়,
তখন নামায পড়া ও
কথা বলা নিষেধ। (তিবরানী শরীফ)
(৬-৯) অথচ উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় সাহেবাইন
অর্থাৎ ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
“ইমাম হুজরা (রুম) হতে বের হলে নামায পড়া নিষেধ, কিন্তু
খুৎবা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত (দ্বীনি) কথা বলা জায়েয।” (আলমগীরী, কাফী, সিরাজুল ওয়াহজ্, তাহতাবী)
(১০) ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুয়াত্তা
শরীফে উল্লেখ করেন, ইবনে শিহাব জুহুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
خروج الامام يقطع الصلوة وخطبته يقطع الكلام.
অর্থঃ- “ইমামের আগমন নামাযকে বন্ধ করে দেয়, আর উনার খুৎবা কথা-বার্তাকে বন্ধ
করে দেয়।”
অর্থাৎ ইমাম সাহেব যখন খুৎবার জন্য হুজরা (রুম) হতে বের
হবেন,
তখন নামায (সুন্নত
বা নফল) পড়া নিষেধ। আর যখন খুৎবা শুরু করে দিবেন, তখন নামাযের সাথে সাথে কথা-বার্তা বলাও নিষেধ।
কাজেই খুৎবা শুরু করার পূর্বে দোয়া-দরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল ও দ্বীনী
কথা-বার্তা বলা জায়েয। অতএব, ছানী আযানের পর হাত তুলে মুনাজাত
করাও জায়েয।
(১১-১৭)
জুমুয়ার ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া এবং ছানী আযানের পর দোয়া করা বা পড়া সম্পর্কে
আইম্মায়ে মুজতাহীদগণ উনাদের মধ্যে ইখতিলাফ (মত বিরোধ) রয়েছে। হযরত ইমামে আ’যম আবূ
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মাকরূহ্ তানযীহী। কিন্তু সাহেবাইন রহমতুল্লাহি
আলাইহি,
ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম
শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে মুস্তাহাব। (হিদায়া, নূরুদ্দেরায়া, নুরুল হেদায়া, ইনায়া, নেহায়া, ইমদাদুল মুফতীন, মায়ারেফে মাদানিয়া)
(১৮) তবে
সহীহ্ ক্বওল মতে ইমাম আবূ হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতেও ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পড়া মাকরূহ্
নয়। এ প্রসঙ্গে কিতাবে
উল্লেখ করা হয়-
واما
قبل الشروع بعد صعوده على المنبر فيكره الكلام الدنيوى اتفاقا- واما الكلام
الدنيوى اتفاقا- واما الكلام الدينى كا لتسبيح والتهليل فلا يكره عند هما- وروى
بعض المشائخ عنه انه يكره. ولاصح انه لا يكره عنده ايضاصرحبه فى النهاية وغيره-
فعلى هذا لا يكره اجبة اذان الشائى ودعاء الوسيلة بعده مالم يشرع الامام فى الخطبة
وقد ئبت ذلك من فعل معاوية رضى الله عنه فى الصحيح البخارى- حاشيهء هداية، وهكذا
فى النهايه، وحاشيهء شرح وقاية)
অর্থঃ- “ইমাম সাহেব মিম্বরে উঠে খুৎবা পাঠ শুরু করার পূর্বে দুনিয়াবী (পার্থিব)
কথা-বার্তা বলা সর্ব সম্মতিক্রমে মাকরূহ্। আর ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার মতে দ্বীনী কথা-বার্তা যেমন- তাসবীহ-তাহ্লীল, দোয়া-দুরূদ
পাঠ করা মাকরূহ্, তবে অধিক সহীহ্ মত হলো- ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকটও ছানী আযানের
জাওয়াব দেওয়া মাকরূহ্ নয়।” কিন্তু কোন কোন মাশায়েখগণ ইমাম
আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন যে, “খুৎবা
শুরু করার পূর্বে দোয়া-দরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল পাঠ করা মাকরূহ্
নয়। এ ব্যাপারে নেহায়া ও অন্যান্য কিতাবে স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং এর
দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া ও খুৎবা
শুরু করার পূর্বে আযানের দোয়া পড়া মাকরূহ্
নয়। (বরং জায়েয) আর এটা সহীহ্ বুখারী
শরীফের হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আমল দ্বারাও প্রমাণিত হয়।
এরূপ শরহে বেকায়ার হাশীয়াতেও উল্লেখ আছে। (হাশিয়ায়ে হেদায়া, নেহায়া, শরহে বেকায়া)
এবং
বুখারী শরীফ উনার হযরত আবূ উমামাহ্
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ হতে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার আমল দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, ছানী আযানের পর দ্বীনী কথা-বার্তা যেমন- দোয়া-দুরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল, মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়া
জায়েয,
তবে তা খুৎবা শুরু করার পূর্বে হতে হবে। সুতরাং ছানী আযানের
জাওয়াব দেয়া এবং আযানের পর খুৎবা শুরু করার পূর্বে হাত উঠায়ে মুনাজাত করাও জায়েয
প্রমাণিত হয়।
(১৯) আর
ছানী আযানের পর খুৎবা শুরু করার পূর্বে যদি দ্বীনী কথা-বার্তা বলা নিষেধ বা
নাজায়েয হতো,
তবে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আযানের
পর কথা বলতেন না। আর তাই বখারী শরীফ উনার শরাহ্ আইনী কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
مما
يستفاد منه تعلم العلم وتعليمه من الامام وهو على المنبر وفيه اجابة الخطيب للمؤذن
وهو على المنبر وفيه قول المجيب "وانا كذالك" وظاهره ان هذا المقد
اريكفى لكن الاولى ان يقول مثل قول المؤذن. (عينى شرح بخارى)
অর্থঃ- “উল্লেখিত (হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আযানের পর কথা বলা
সংক্রান্ত) পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা (নিম্নলিখিত) বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, (১) খতীব মিম্বরে থাকা অবস্থায় মুক্তাদীগণকে কোন মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়া, (২) মুক্তাদীগণ কোন মাসয়ালা শিক্ষা করা, (৩)
মুয়াজ্জিনের আযানে (আমি এরূপ বলছি) শ্রোতাদের জবাব দেয়া জায়েয। প্রকাশ থাকে যে, ঐভাবে সংক্ষেপে জবাব দিলেও চলবে, তবে পরিপূর্ণ জবাব দেয়াই উত্তম।
(আইনী শরহে বুখারী)
সুতরাং উপরোক্ত কিতাবের ইবারত দ্বারাও
প্রমাণিত হয় যে,
ছানী আযানের জবাব দেয়া ও দোয়া পড়া জায়েয।
আর যেহেতু কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
(২০)
يسن
رفع اليدين الى السماء فى كل رعاء. (مرقات شرح مشكوة)
অর্থঃ- “সকল দোয়ায় (নামাযের বাহিরে) হাত উর্দ্ধে উঠানো সুন্নত।” (মিরকাত শরহে মিশকাত)
(২১)
استفيد
من هذا الحديث والذى قبله- انه يسن رفع اليدين الى السماء فى كل دعاء ...... وقال
النورى ومن ادعى حصرها فقد غلط غلطا فا حشا. (مرقات شرح مشكوة)
অর্থঃ- (দোয়ায় হাত উঠানো
সংক্রান্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা) এটাই প্রমাণিত হয় যে, সকল
দোয়াতেই হাত উঠানো সুন্নত। ........ হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বলে কোন বিশেষ দোয়ায় হাত উঠানো জায়েয, তবে
নিশ্চয়ই উনার এ দাবী ভ্রমাত্মক। (মিরকাত শরহে মিশকাত)
(২২)
يرفح
هما لمطلق الدعاء فى سائر الا مكنة والازمنة على طبق ما وردت به السنة. (شامى)
অর্থঃ- পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার বর্ণনা মতে সর্বস্থানে, সকল সময়, সমস্ত
দোয়াতে হাত উঠানো প্রমাণিত হয়। (শামী)
অতএব, ছানী
আযানের পর যেহেতু দোয়া করা জায়েয প্রমাণিত, সেহেতু
হাত উঠায়ে দোয়া করাও জায়েয ও সুন্নত প্রমাণিত হয়।
(২৩)
وقد
ثبت فى صحيح البخارى ان معاوية رضى الله عنه اجاب الاذان وهو على المنبر وقال يا
ايها لناس انى سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم على هذا المجلس حين اذن المؤذن
يقول مثل ما سمعتم منى معالتى. فاذا ثبت الاجابة عن صا حب الشرع وصاحبه فما معنى
الكراهة- (التعليق الممجد على مؤطاء محمد صفه ১০৭)
অর্থঃ- সহীহ্ বুখারী শরীফ
উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে- হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মিম্বরে
বসে ছানী আযানের জবাব দিয়েছেন। এবং বলেছেন, হে
মানুষেরা আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে মিম্বরে বসে এরূপে ছানী আযানের জবাব দিতে শুনেছি, যেরূপ আমাকে তোমরা জবাব দিতে শুনলে। সুতরাং যখন ছানী আযানের জবাব দেয়া নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের হতে প্রমাণিত, তখন এটাকে মাকরূহ্ বলার অর্থ কি? (সুতরাং এটা মাকরূহ্ নয়) (আত্তা’লীকুল মুমাজ্জাদ আ’লা মোয়াত্বায়ে মুহম্মদ পৃঃ ১০৭)
(২৪)
قال
بعضهم انما كان يكره ما كان من كلام الناس واما التسبيح ونحوه فلا (يكره) وقال
بعصهم كل ذالك مكروه والاول اصح- (بحر الرائق)
অর্থঃ- কেউ কেউ বলেন, মানুষের কথা-বার্তা অর্থাৎ দুনিয়াবী কথা-বার্তা মাকরূহ্। আর তাসবীহ্-তাহ্লীল
এবং অনুরূপ (দোয়া-দুরূদ) পড়া মাকরূহ নয়। এবং কেউ কেউ বলেন, সবই
মাকরূহ্। তবে প্রথমটিই সহীহ্ (বিশুদ্ধ) মত। (অর্থাৎ মাকরূহ্ নয়)। (বাহরুর
রায়েক)
(২৫)
علامة
لكهنوى فرما .. هين- فلاتكره اجابة الاذان الذان الذى يؤذن بين يدى الخطيب وقد ثبت
ذالك من فعل معاوية فى صحيح البخارى. (عمدة الرعاية ج১ صفه ২৪৪)
অর্থঃ- আল্লামা লৌক্ষ্ণবী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বলেন, জুমুয়ার ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া মাকরূহ্ নয়। কেননা নিশ্চয়ই
এটা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আমল দ্বারা সহীহ্ বুখারীতে
প্রমাণিত রয়েছে। (ওমদাতুর রেয়াইয়াহ্ ১ম জিঃ পৃঃ ২৪৪)
(২৬)
قد
ثبت اجابة الثانى عن النبى صلى الله عليه وسلم ومعارية رضى الله عنه ما اخرجه
البخارى فان الكراهة. (نفع المفتى والسائل صفه ১০৩)
অর্থঃ- নিশ্চয়ই ছানী
আযানের জবাব দেয়া নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ও হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে প্রমাণিত রয়েছে। যেটা হযরত
ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা তিনি করেছেন। সুতরাং মাকরূহ্ কোথায়? (নাফ্উল মুফতী ওয়াস সায়েল পৃঃ ১০৩)
(২৭)
جمعہ کی اذان ثانی کا جواب دینا مختلف فیہ ھے، صاحبین کے
نزدیک جائز ھے اور امام صاحب کے قول مین مختلف روایت ھین- ایک روایت سے جواز معلوم
ھوتاھے- اور ایک روایت سے کراھت معلوم ھوتی ھے-
اور طحطاوی نے اس کا اصح ھونا نقل کیاھے-
اور امام صاحب سے جویہ قول مشھور ھے کہ خروج امام قاطع
صلوۃ و کلام ھے- اسکا مطلب یہ ھے کہ خروج امام قاطع کلام الناس ھے اور قاطع سائر الکلام خطبۃ شروع ھوجانا ہے- پس ابتداء
خطبہ سے پھلے کلام دینی یعنی تبیح وجواب اذان جائز ھے- ویہ وردت الاحادیث ناظفۃ کما
ذکرتہ فی اعلاء السنن فعن ابی ھریرۃ مرفوعا-
خروج الامام یوم الجمعۃ یقطع الصلوات و کلامہ یقطع الکلام اخرجہ البیھقی،
وسندہ حسن- (امداد الاحکام ج 1 صفہ 327)
অর্থঃ- জুময়ার ছানী আযানের
জবাব দেয়ার মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ছাহেবাইন উনার নিকট জায়েয এবং ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার ক্বাওলের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এক বর্ণনা মতে জায়েয প্রমাণিত হয়, আরেক বর্ণনা মতে মাকরূহ্ বুঝা যায় এবং তাহতাবী এটাকে অধিক সহীহ্ বলে বর্ণনা
করেছেন। ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ যে ক্বাওল রয়েছে, “ইমাম ছাহেবের আগমন নামায ও
কথা-বার্তাকে নিষেধ করে” এ কথার মূল অর্থ হলো- ইমাম
ছাহেবের আগমন সকলের কথা-বার্তাকে বন্ধ করে দেয় এবং তিনি খুৎবা শুরু করার সাথে সাথে
সর্ব প্রকার কথা-বার্তা নিষিদ্ধ।
সুতরাং খুৎবা শুরু করার পূর্বে দ্বীনি কথা-বার্তা
অর্থাৎ তাসবীহ্-তাহ্লীল ও আযানের জাওয়াব দেয়া জায়েয। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। যেমন ইলাউস সুনান কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে মরফূ হাদীছ শরীফ বর্ণিত- জুমুয়ার দিন ইমাম ছাহেবের (খুৎবার জন্য)
আগমন সকল নামাযকে নিষিদ্ধ করে দেয় এবং তার
খুৎবা কথা-বার্তাকে বন্ধ করে দেয়। এটা বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন ও তার সনদ হাসান। (ইমদাদুল
আহ্কাম ১ম জিঃ পৃঃ ৩২৭)
(২৮)
امام محمد رحمۃ اللہ کے نزدیک اذان خطبہ کا جواب دینا
جائز ھے-
امام ابو یوسف و امام محمد رحمۃ اللہ علیہما خطبہ شروع ھونے
سے پھلے غیر خطیب کیلئے کلام دینی کو جائز
فرماتے ھین- تو اجابت اذان اور دعاء وسیلہ ان کے نزدیک جائز ھے-
(کفایت المفتی ج3 صفہ 226-217(
অর্থঃ- হযরত ইমাম মুহম্মদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ছানী আযানের জাওয়াব দেয়া জায়েয। হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ
রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা খুৎবা শুরু
করার পূর্ব পর্যন্ত মোক্তাদীগণের দ্বীনি কথা-বার্তা বলা জায়েয বলেছেন। তাই ছানী
আযানের জবাব দেয়া এবং মুনাজাত করা উনাদের নিকট জায়েয। (কেফায়াতুল মুফতী, ৩য় জিঃ পৃঃ ২১৭-২২৬)
অতএব, মূলকথা
হলো- উপরোল্লেখিত বিস্তারিত ও নির্ভরযোগ্য অকাট্য দলীল-আদীল্লার ভিত্তিতে স্পষ্টই
প্রমাণিত হয় যে,
জুমুয়ার দিন ছানী আযানের জবাব দেয়া জায়েয ও ছানী আযানের পর
খুৎবা শুরু করার পূর্বে দ্বীনী কথা-বার্তা অর্থাৎ তাসবীহ- তাহ্লীলের ন্যায় আযানের
পর হাত তুলে মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব, মাকরূহ্
মোটেও নয়।
নামাযের পর করণীয় আমল বা তাসবীহ্-তাহ্লীল:
নামাযের পর কোন কোন সময় তাকবীর অথবা অন্য কোন
দোয়া-দরূদ,
তাসবীহ্-তাহ্লীল ও ইস্তেগফার পাঠ করা সুন্নত। কেননা তা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফে’ল (আমল) ক্বাওল (বাক্য) দ্বারা
স্পষ্ট প্রমাণিত।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা
হয়,
(১-৩)
عن
ابن عباس رضى الله عنه قال- كنت اعرف انقضاء صلوة النبى صلى الله عيه وسلم
بالتكبير. (بخرى شريف، مسلم شريف، مشكوة شريف)
অর্থঃ- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামাযের সমাপ্তি আমি “তাকবীর”
দ্বারাই বুঝতে পারতাম।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এখানে তাকবীর অর্থে- “আল্লাহু
আকবার”কে বুঝানো হয়েছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফরজ
নামাযের পর কোন কোন সময় দুই, একবার তাকবীর বলাও সুন্নত।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ
মুবারক হয়েছে,
(৪-৬)
عن
ثوبان رضى الله عنه قال- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا انصرف من صلوته
استغفر ثلاثا وقال اللهم انت السلام ومنك السلام تباركت يا ذا الجلال والاكرام.
(مسلم شريف، مشكوة شريف وكذا فى الابن ماجه)
অর্থঃ- হযরত সাওবান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, “নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন নামায
শেষ করে ঘুরে বসতেন, তখন তিনবার ইস্তেগফার পাঠ করতেন। অতঃপর বলতেন, আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম ........।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, অনুরূপ ইবনে মাযায় উল্লেখ আছে)
ইস্তেগ্ফার অর্থ ক্ষমা চাওয়া। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফরজ নামাযের পরে
তিনবার আস্তাগ্ফিরুল্লাহ্ (অর্থাৎ আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা চাই) পাঠ
করতেন। অথবা বলতেন,
استغبفر
الله الذى لا اله الا هوا لحى القيوم واتوب اليه.
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ
দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ফরজ নামাযের পর কোন কোন সময়
ইস্তেগ্ফার বা তাওবা করাও সুন্নত।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত
রয়েছে-
(৭-৮)
عن
على رضى الله عنه قال – كان رسول الله صلى الله عليه وسلم- اذا سلم من الصلوة قال-
اللهم اغفر لى ما قدمت وما اخرت وما اسررت وما اعلنت وما انت اعلم به منى- انت
المقدم- انت المؤخر. (ابودود شريف، ترمذى شريف)
অর্থঃ- হযরত আলী কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার হতে বর্ণিত- “নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন নামাযের
সালাম ফিরাতেন,
তখন এই দোয়া পাঠ করতেন- আল্লাহুমাগ্ফিরলী মাকদ্দামাত ওমা
আখ্খারাত ওমা আসরারতু ওমা আলান্তু ওমা আন্তা আ’লামু
বিহী মিন্নী আন্তাল মুকাদ্দাম আন্তাল মুয়া আখ্খার।” (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমীযী শরীফ)
(৯) এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن
الحسن بن على رضى الله عنهما- قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قرأ اية
الكر سى فى دبرالصلوة المكتوبة كان فى ذمة الله الى الصلوة الاخرى. (رواه الطبرانى
فى الكبير)
অর্থঃ- হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ফরজ নামাযের পর পবিত্র
আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, সে ব্যক্তি পরবর্তী ফরজ নামায পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার জিম্মায়
থাকবে। (তিবরানী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ
মুবারক হয়েছে,
(১০)
عن
ام سلمة رضى الله عنها- قالت- ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يقول اذا صلى الصبح
حين يسلم "اللهم انى اسئلك علما تا فعا ورزقا طيبه وعملا متقبلا. (ابن ماجه ج ১ صفه ১৫২)
অর্থঃ- হযরত উম্মে সালমা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, “নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফরজ নামাযের
সালাম ফিরানোর পর বলতেন, আয় আল্লাহ পাক! আপ আমাকে উপকারী
ইলম, হালাল রিযিক দান করেন ও কবুলযোগ্য আমল করার তৌফিক দিন।” (ইবনে মাযাহ্ ১ম জিঃ পৃঃ ১৫২)
(১১-১২)
তবে যে ফরজ নামাযের পর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ রয়েছে, সেই ফরজ
নামাযের পর তাসবীহ্-তাহ্লীল, দোয়া-দরূদ পাঠ না করে সুন্নতে
মুয়াক্কাদার পর পড়াই উত্তম। (মারাক্বিউল ফালাহ্, বেহেস্তী জিওর)
অর্থাৎ যে সকল ফরজ নামাযের পর সুন্নত রয়েছে, সে সকল ফরজ নামাযের পর সংক্ষিপ্তভাবে মুনাজাত করে সুন্নত পড়ায় মশগুল হবে।
যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
(১৩)
سوال:- تسبیح فاطمی- معوذتین ایۃ الکرسی و غیرہ وطیفہ پرھنے
کیلےء فرائض کے بعد متصلا پرھنا افضل ھے یا سنن و نوافل سے فارغ ھوکر؟
অর্থঃ- সুওয়াল- তাসবীহ্
ফাতেমী,
তাউয, আয়াতুল কুরসী ইত্যাদি ওযীফা ফরজ
নামাযের পর পর পড়াই উত্তম, না সুন্নত নামায পড়ার পর?
جواب:- سنن و نوافل کے بعد افضل- اور جس فرض نماز کے بعد
سنن و نوافل نھین جیسے فجر و عصر تو بعد فرض متصلا افضل ھے- کذا فی الطحطاوی علی
مراقی الفلاح صفہ 252 و فی الشامی ج1 صفہ 356 (فتاوئے محمودیہ ج 2 صفہ 157)
জবাব : সুন্নত নামায পড়ার
পর (তাসবীহ্-তাহ্লীল) পড়া উত্তম। এবং যে সকল ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায নেই, যেমন- ফজর
ও আসর নামাযের পর পরই (তাসবীহ্-তাহ্লীল) পাঠ করা উত্তম।
অনুরূপ তাহতাবী পৃঃ ২৫২, শামী ১ম জিঃ পৃঃ ৩৫৬ কিতাবে উল্লেখ আছে। (ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ২য় জিঃ পৃঃ ১৫৭)
(১৪)
بے شک فرائض کے بعد اللہم انت السلام انت الاسلام و الی
دعا مسنون اور افضل ھے اس لئے اکثر اسی کو پرھا جاتا ھے لیکن دوسری دعا اور درود
شریف پرھنے سے بلکہ اس قدر خاموش رھنے سے بھی سنت ادا ھو جاتی ھے- کذا فی رسائل
الارکان صفہ 133) فتاوئے رحیمیہ ج3 صفہ 25)
অর্থঃ- নিঃসন্দেহে ফরজ
নামাযের পর দোয়া পড়া সুন্নত এবং উত্তম। আর তাই অধিকাংশ সময় তা পড়া হয়। কিন্তু
অন্যান্য দোয়া-দুরূদ পড়া বা ঐ সময় পর্যন্ত চুপ থাকাতেও সুন্নত আদায় হয়ে যায়। তাই
অন্যান্য দোয়া-দুরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল পাঠ করাকে পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ
বলা সহীহ্ নয়। অনুরূপ রাসায়েলে আরকান পৃঃ ১৩৩ এ উল্লেখ আছে। (ফতওয়ায়ে রহীমিয়া
৩য় জিঃ পৃঃ ২৫)
উপরোল্লেখিত বিস্তারিত ও নির্ভরযোগ্য দলীলের
ভিত্তিতে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, ফরজ নামাযের পর যেরূপ দোয়া করা সুন্নত, তদ্রুপ তাসবীহ্-তাহ্লীল, তাকবীর ও ইস্তেগফার পাঠ করাও
সুন্নত।
নামাযের
পর মুখ ফিরানো :
(১-৫) মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি যে ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায নেই, সেই ফরজ
নামাযের সালাম ফিরানোর পর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের
দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। সুতরাং যে ফরজ নামাযের পর সুন্নত নেই, সেই ফরজ নামাযের পর ঘুরে বসা সুন্নত।
শরহে কবীরী, মুনিয়া, শামী,
হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা, বেহেস্তি
জিওর ইত্যাদি ফিক্বাহের কিতাবসমূহে অনুরূপ উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে তার বিস্তারিত
দলীল-আদীল্লাহ পেশ করা হলো-
(৬-৮)
عن
سمرة بن جندب رضى الله عنه قال- كان النبى صلى الله عليه وسلم- اذا صلى صلوة اقبل
علينا بوجهه. (يخارى شريف ج১ صفه ১১৭،
فتح البارى ج ১ صفه ৩৩৩، تيسيرالبارى ج১ صفه ৫৫৭)
অর্থঃ- হযরত সামুরাহ ইবনে
জুন্দুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন নামায
শেষ করতেন,
তখন আমাদের দিকে চেহারা মোবারক ফিরিয়ে বসতেন।” (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ১১৭, ফতহুল
বারী ১ম জি পৃঃ ৩৩৩, তাইসীরুল বারী ১ম জিঃ পৃঃ ৫৫৭)
(৯-১০)
عن
زيد بن خالد- قال- صلى لنارسول الله صلى الله عليه وسلم صلوة الصيح بالحديبية فلما
انصرف اقبل على الناس. (بخارى شريف ج১ صفه ১১৭، تيسير البارى ج১ صفه ৫৫৭)
অর্থঃ- হযরত যায়েদ ইবনে
খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
আমাদের সাথে হুদায়বিয়ায় ফজরের নামায আদায় করলেন, যখন নামায শেষ করলেন, মুসল্লীগণের
দিকে ফিরে বসলেন।” (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ১১৭, তাইসীরুল বারী ১ম জিঃ পৃঃ ৫৫৭)
(১১)
عن
انس بن مالك رضى الله عنه قال- اخر رسول الله صلى الله عليه وسلم- الصلوة ذات ليلة
شطر الليل ثم خرج علينا فلما صلى اقبل علينا بوجهه. (بخارى شريف ج ১ صفه ১১৭)
অর্থঃ- হযরত আনাস্ ইবনে
মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, “নূরে
মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
(কোন এক রাত্রে) ইশার নামায আদায় করতে মধ্য রাত্র পর্যন্ত বিলম্ব করলেন, অতঃপর (ঘর হতে) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন, যখন নামায শেষ করলেন, আমাদের
দিকে চেহারা মোবারক ফিরায়ে বসলেন।” (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ১১৭)
(১২-১৩)
وكان
انس بن مالك- ينفتل عن يمينه وعن يساره- (بخارى شريف ج১ صفه ১১৮، معارف مدنى ج ৫ صفه ৭৯)
অর্থঃ- “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ডানে এবং বাঁয়ে (উভয়)
দিকেই ঘুরে বসতেন।” (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ১১৮, মায়ারিফে মাদানী ৫ম জিঃ পৃঃ ৭৯)
(১৪-১৮)
عن
عبد الله بن مسعود رضى الله عنه قال لا يجعل احد كم للشيطان شيئا من صلاته يرى ان
خقاعليه ان لا ينصرف الا عن يمينه- لقد رأيت النبى صلى الله عليه وسلم كثيرا ينصرف
عن يساره. (بخارى شريف ج১ صفه ১১৮،
فتح البارى شرح بخارى شريف ج২ صفه ৩৩৭،
مسلم شريف ج১ صفه ২৪৭،
نساى شريف صفه ২০০، ابودود شريف ج১ صفه ১৫৬)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্
ইবনে মাস্উদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “তোমাদের
কেউ যেন স্বীয় নামাযের একাংশ শয়তানকে দান না করে, এটা
এরূপে যে,
নামাযের পর ডান দিকে ঘুরে বসা অবশ্য কর্তব্য মনে করে। অথচ
আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
অনেক সময় বাম দিকেও ফিরে বসতে দেখেছি।” (বুখারী
শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ১১৮, ফাতহুল বারী ২য় জিঃ পৃঃ ৩৩৭, মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ২৪৭, নাসাঈ
শরীফ পৃঃ ২০০, আবূ দাউদ শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ১৫৬)
(১৯-২০)
عن
سدى قال- سألت انسا كيف انصرف اذا صليت عن يمينى او عن يسارى؟ قال- اما انا فاكثر
مارأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم ينصرف عن يمينه. (مسلم شريف ج১ صفه ২৪৭، نسائ شريف ج১ صفه ২০০)
অর্থঃ- হযরত দ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “আমি হযরত আনাস ইবনে মালিক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম- নামায শেষ করার পর কিভাবে মুখ
ফিরাবো,
আমার ডান দিকে না বাম দিকে? হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মূলতঃ
আমি অধিকাংশ সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে উনার ডানে ফিরে বসতে দেখেছি। (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ২৪৭, নাসাঈ শরীফ পৃঃ ২০০)
(২১)
عن
انس بن مالك رضى الله عنه- ان النبى صلى الله عليه وسلم كان ينصرف عن يمينه. (مسلم
شريف ج১ صفه ২৪৭)
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে
মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (নামায শেষে) উনার ডান দিকে ফিরে বসতেন।” (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ২৪৭)
(২২-২৪)
عن
قبيصة بن هلب- انه صلى مح النبى صلى الله عليه وسلم- فكان ينصرف عن شقيه- اى حينا
عن يمينه وحينا عن شماله. (ابودؤد شريف ج১ صفه ১৫৬، طحطا ويشريف، حجة لله البالغة)
অর্থঃ- হযরত ক্বুবাইছা
ইবনে হুলব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। “তিনি নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নামায
আদায় করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়
দিকে ঘুরে বসতেন। অর্থাৎ কখনো উনার ডান দিকে, কখনো বাম
দিকে ঘুরে বসতেন।” (আবূ দাউদ শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ১৫৬, তাহ্তাবী শরীফ, হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা)
(২৫)
نماز پرھ کر داھنے یا بانین دونون طرف پھر بیطھنا درست ھے-
(تیسیر الباری شرح بخاری ج 1 صفہ 560)
অর্থঃ- “নামায শেষ করে ডানে অথবা বামে উভয় দিকে ঘুরে বসা জায়েয (সুন্নত)।” (তাইসীরুল বারী ১ম জিঃ পৃঃ ৫৬০)
(২৬-২৭)
নূরে
মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ফরজ নামাযের পর (যে নামাযের পর সুন্নত নেই)
اللهم انت السلام ومنك السلام تباركت يا
ذا الجالال ولاكرام.
উক্ত দোয়া পড়া পরিমাণ সময়
ক্বিবলা মূখী থেকে ডান দিকে বা বাম দিকে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে চেহারা মোবারক
ফিরায়ে বসতেন। অতঃপর যিকির ও দোয়া ইত্যাদি আদায় করতেন। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা, ফতহুল মুলহিম)
মাসয়ালা: প্রথম কাতারে মাসবূক্ব (যে এক বা দুই রাকায়াত পর জামাতে
শরীক হয়েছে) থাকলে ইমাম পিছনের দিকে অর্থাৎ মুক্তাদীগণ উনাদের দিকে মুখ করে বসতে
পারবেন না। ডানে বা বামে ফিরতে পারবেন। আর প্রথম কাতারে মসবূক্ব না থাকলে ইমাম যে
কোন দিকে ফিরতে পারবেন। (শামী, কবীরী, দুররুল মুখতার, শরহে মুনিরা)
মাসয়ালা: ইমাম ছাহেব সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবেন
(যে ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায নেই)।
তবে প্রথম কাতারে যদি কোন মসবুক্ব থাকে, তাহলে ডান দিকে অথবা বাম দিকে
ফিরে বসবেন। শীত, গ্রীষ্মে একই হুকুম এবং এটাই সহীহ্ মত। (খোলাছা, নূরুদ্দেরায়া শরহে হেদায়া)
মাসয়ালা: ইমাম ছাহেবের সাথে একজন মুক্তাদী থাকলে পিছনে ফিরতে হবেনা।
(শামী)
(২৬-২৮)
روایت فقھیہ اور حدیث سے یہ واضح ھوتاھے کہ جن نمازون کے
بعد سنتین ھین روبقبلہ دعاء مانگ کر سنتون کے لئے کھرے ھوجاے- اور حدیث بخاری شریف
کان رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم اذا صلی اقبل علینا بوجھہ ان نمازون پر محمول ھے
جن کے بعد سنتین نھین ھین- (فتاوئے دیوبند ج 2 صفہ 195 کذا فی الدر المختار، تاتاب
خانیہ)
অর্থঃ- ফিক্বাহের কিতাবের
ও হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, “যে সকল ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায রয়েছে, সে সকল
ফরজ নামাযের সালাম ফিরানোর পর ক্বিবলামুখী
থেকেই দোয়া করে সুন্নতের জন্য দাড়িয়ে যাবে এবং বুখারী শরীফ উনার এ হাদীছ শরীফ- “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
নামায শেষ করে আমাদের দিকে চেহারা মোবারক ফিরায়ে বসতেন” এটা ঐ
সকল ফরজ নামাযের জন্য প্রযোজ্য যার পরে
সুন্নত নামায নেই।” (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ২য় জিঃ পৃঃ ১৯৫, অনুরূপ
দুররুল মোখতার,
ও তাতারখানিয়ায় উল্লেখ রয়েছে।
(২৯)
ان حضرت صلی اللہ علیہ وسلم اکثر داھنی طرف اور کبھی کبھی
بائین طرف بھی پھرتے تھے اسلئے فقھاء کرام نے بھی دونون طرف ھوکر بیطھنے اور دعاء
مانگنے کو مستحب لکھا ھے (فتاوئے دیوبند ج 2 صفہ 167)
অর্থঃ- “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
অধিকাংশ সময় ডানে এবং কখনো কখনো বাঁয়েও ফিরতেন। এজন্য ফুক্বাহা-ই-কিরামগণও উভয়
দিকে ঘুরে বসাকে এবং মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব লিখেছেন।” (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ২য় জিঃ পৃঃ ১৬৭)
(৩০)
جن نمازون کے بعد سنتین نھین ھین جیسے فجر و عصر- ان مین
امام کو اختیار ھے خواہ دتی طرف منہ کرکے بیطھے یا بائین طرف اور حدیث شر یف سے
دونون امر ثابت ھین- اور فقھاء حنفیہ نے بھی دوتون مین اختیار دیاھے- (فتاوے دیوبند
ج4 صفہ 139)
অর্থঃ- “যে সকল নামাযের পর সুন্নত নামায নেই, যেমন- ফজর ও আসর নামায, এ
সকল নামাযের পর ইমাম ইচ্ছে করলে ডান দিকে
অথবা বাম দিকে ঘুরে বসতে পারেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা উভয়টাই প্রমাণিত রয়েছে
এবং হানাফী মায্হাবের ফক্বীহগণও উভয়টা ইচ্ছাধীন করেছেন।” (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ৪র্থ জিঃ পৃঃ ১৩৯)
(৩১-৩২)
امام ھوتو مقتدیون کی طرف داھنی یا بائیی طرف کو منہ پھر
کور بیطھ جائے- اسکے بعد دعا مانگے بشرطیکہ کوی مسبوق اسکے مقابلہ مین نماز نہ پرھ
رھا ھون- (اشرفیہ بھشتی زیور ج11 صفہ 33)
অর্থঃ- “ইমাম সাহেব (নামায শেষ করে) ডানে অথবা বাঁয়ে অথবা মোক্তাদীগণের দিকে মুখ
ফিরায়ে বসবে এবং মুনাজাত করবে, তবে শর্ত হলো- কোন মসবূক যেন তার
সামনে (প্রথম কাতারে) না থাকে।” (আশ্রাফী বেহেস্তী জিওর
১১জিঃ পৃঃ ৩৩)
(৩৩)
داھنے بائین منہ پھرانا سنت ھے- کذافی مراقی الفلاح صفہ
123 (فتاوئے محمودیہ ج 2 صفہ 53)
অর্থঃ- (নামায শেষে) ডানে
বা বাঁয়ে মুখ ফিরায়ে বসা সুন্নত। অনুরূপ মারাকিউল ফালাহ্ পৃঃ ১৬৩ কিতাবে উল্লেখ
আছে। (ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ২য় জিঃ পৃঃ ৫৩)
উপরোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়
যে, যে ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায নেই, সেই ফরজ নামাযের পর ডানে, বায়ে অথবা প্রথম কাতারে যদি মাসবুক্ব না থাকে, তবে
মৃক্তাদীগণের দিকে মুখ ফিরায়ে বসা সুন্নত। আর যে ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায রয়েছে, সে নামাযের ক্বিবলামুখী হয়ে দোয়া করবে। তবে প্রথম কাতারে যদি মাসবূক থাকে, তবে ডান দিকে ফিরে বসাই উত্তম। কারণ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অধিকাংশ সময় ডান দিকে ঘুরে বসতেন।
মুনাজাতের পরিমাপ :
(১-২)
কিতাবে
উল্লেখ রয়েছে যে, যে সকল ফরজ নামাযের
পর সুন্নত ও নফল নামায রয়েছে (যেমন- যোহর, মাগরীব,
ইশা) এ সকল ফরজ নামাযের পর সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করা সুন্নত।
অতিরিক্ত লম্বা মুনাজাত করা মাকরূহ্ তানযীহি। (মুনিয়া ও গায়াতুল আওতার)
(৩-৪)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن
عائشة رضى الله عنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا سلم لم يقعد الا
مقدار مايقرل اللهم انت السلام ومنك السلام تباركت يا ذا الجلال والاكرام. (مسلم
شريف، مشكوة شريف)
অর্থঃ- হযরত ছিদ্দীকা
আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নূরে
মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
নামাযের সালাম ফিরানোর পর “আল্লাহুম্মা আন্তাস্ সালাম ওয়া
মিনকাস্ সালাম তাবারক্তা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম” এ দোয়া
পড়া পরিমাণ সময়ের অধিক বসতেন না। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
(৫-৬)
উক্ত পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আল্লামা মানাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
لم
يقعد الا مقدار ما يقول. الخ اى بين الفرض والسنة.
অর্থঃ- “এ পরিমাণ দোয়া পড়া পর্যন্ত বসতেন, অর্থাৎ এ দোয়া পড়তেন ফরজ ও
সুন্নতের মাঝে।” (আযীযী, ইলাউস সুনান)
অতএব, প্রমাণিত
হয় যে,
যে সকল ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায রয়েছে, তার পরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণতঃ এরূপ সংক্ষিপ্ত দোয়াই করতেন। হযরত ইমাম আ’যম
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এটারই
অনুসরণ করতেন।
আর যে সকল ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায নেই, যেমন-
ফজর ও আসর নামায, তার পরে
যতটুকু ইচ্ছা মুনাজাত লম্বা করা যাবে।
(৭-৯)
وفى
الحجة، الامام اذ قرغ من الظهر والمغرب والعشاء يشرغ فى السنة- ولا يشتغل بادعيه
طويلة كذا فى التاتار خانية. (عالمكربه ج১ ص ৭৭)
অর্থঃ- কিতাবুল হুজাহ্তে
উল্লেখ আছে- ইমাম সাহেব যখন যোহর, মাগরিব ও ইশার নামায শেষ করবেন।
(তখন সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নত নামায শুরু করবেন, মুনাজাত
দীর্ঘ করবেন না। অনুরূপ তাতারখানিয়াতে উল্লেখ আছে। (ফতওয়ায়ে আলমগিরী ১ম জিঃ পৃঃ
৭৭)
(১০)
جن فرائض کے بعد سنن ھین- ان کے بعد امام اور مقتدیان
مختصر دعامانگ کر سنتین ادا کرے- (فتاوے دار العلوم دیوبند ج 2 صفہ 197)
অর্থঃ- “যে সকল ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায
রয়েছে,
সে সকল নামাযের পরে ইমাম ও মুস্তাদীগণ সংক্ষিপ্ত মুনাজাত
করে সুন্নত আদায় করবে।” (ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ২য়
জিঃ পৃঃ ১৯৭)
(১১)
سوال= فرائض کے بعد سنن اور نوافل سے پھلے دعاء مین اللھم
انت السلام- الخ- سے زیادہ پرھنا جائز ھے یا نھین شاہ ولی اللہ رحمۃ اللہ علیہ نے
حجۃ اللہ البالغہ مین دیگر ادعیہ نقل کرکے ان کا پرھنا اولی لکھا ھے اس بارہ مین کیا
حکم ھے؟
সুওয়ালঃ- অর্থঃ- “ফরজ নামাযসমূহের পর সুন্নতসমূহের
পূর্বে মুনাজাতকে “আল্লাহুম্মা আন্তাস্ সালাম” এই দোয়া হতে
লম্বা বা দীর্ঘ করা জায়েয কি? হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্
মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হুজ্জাতুল্লা হিল বালেগাহ্ কিতাবে
অন্যান্য দোয়াসমূহ উল্লেখ করে তা পাঠ করা উত্তম বলেছেন, এ
ব্যাপারে ফায়সালা কি?”
جواب= ان ادعیہ و اذکار کا پرھنا بعد نماز فرض کے قبل
سنن رواتب جاز اور مستحب ھے اور اس مین کچھ حرج نھین ھے- اور بعض فقھاء نے جویہ لکھا
کہ بعد فرائض کے- اللہم انت السلام- الخ- سے زیادہ نہ پرھے تو اسکا مطلب یہ نھین ھے
کہ اس سے زیادہ پرھنا مکروہ ھے- نہ غرض اس سے تحدید ھے- اور اگر بعض فقھاء گی بوجہ
ظاھر بعض روایت حدیث کے رائے ھو بھی تو دیگر اکثر فقھاء بوجہ روایت کثیرہ احادیث کے
دیگر اذکار وادعیہ ماثورہ جائز اور مستحب فرماتے ھین- جیسا کہ حضرت شاہ ولی اللہ
رحمۃ اللہ علیہ نے تحریر فرمایا ھے- (فتاوے دیوبند ج1 صفہ 200)
জাওয়াব- অর্থঃ- “ফরজ নামাযের পর সুন্নতে মুয়াক্কাদার পূর্বে ঐ সকল দোয়া ও তাসবীহ্-তাহ্লীল পাঠ
করা জায়েয ও মুস্তাহাব। উহা পাঠ করাতে কোন ক্ষতি নেই। যে সকল ফক্বীহগণ ফরজ নামাযের পর “আল্লাহুম্মা
আন্তাস্ সালাম”-
হতে দীর্ঘ দোয়া পড়া যাবেনা বলেছেন, উনাদের এ
কথার উদ্দেশ্য এটা নয় যে, তার চেয়ে মুনাজাত দীর্ঘ করা মাকরূহ্
এবং কোন সীমারেখা বর্ণনা করাও উদ্দেশ্য নয়। যদিও কোন কোন ফক্বীহ্ উনারা পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার কোন বর্ণনা দ্বারা এ অভিমত ব্যাক্ত করেছেন, কিন্তু
অন্যান্য অধিকাংশ ফক্বীহ্গণ অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে ফরজ নামাযের
পরে (এ দোয়া ব্যতীতও) অন্যান্য দোয়া ও তাসবীহ্-তাহ্লীল পাঠ করা জায়েয ও মুস্তাহাব
বলেছেন। যেরূপ হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
লিখেছেন। (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ২য় জিঃ পৃঃ ২০০)
(১২)
جن نمازون کے بعد سنتین ھین جیسے طھ، مغرب، عشاء ان کے
بعد بھت دیرتک دعا نہ مانگے بلکہ مختصر دعا مانگ کر سنتون پرھنے مین مشغول ھو جائے-
اور جس نمازون کے بعد سنتین نھین ھین جیسے فجر، عصر- ان کے بعد جتنی دیرتک چاھئے
دعا مانگے-
(علم الفقہ ج2 صفہ 163)
অর্থঃ- “যে সকল ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায রয়েছে, যেমন-
যোহর,
মাগরীব, ইশা- এসব নামাযের পরে দীর্ঘ
মুনাজাত করবেনা বরং সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নত নামায পড়তে থাকবে। আর যে সকল ফরজ
নামাযের পর সুন্নত নামায নেই, যেমন- ফজর,
আছর- এসব নামাযের পর যতটুকু ইচ্ছা মুনাজাত দীর্ঘ করতে
পারবে।”
(ইলমুল ফিক্বাহ্ ২য় জিঃ পৃঃ ১৬৩)
(১৩-১৫)
جن نمازون کے بعد سنتین ھین ان مین اولی یہ ھے کہ دعاء
طویل نہ مانگے- اور اد سنن کے بعد پرھے- اور دعا قصیر کی مفدار اللہم انت السلام ھے
اسکے قریب قریب اور دعاء پرھی جاوے- و ھذا کل فی الدر المختار و ردا المحتار=
(امداد الاحکام ج1 صفہ 244ب)
অর্থঃ- “যে সকল ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায রয়েছে, উহার পর
মুনাজাত দীর্ঘ না করাই উত্তম। দোয়া-দরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল সুন্নতের পর আদায়
করবে এবং সংক্ষিপ্ত দোয়ার পরিমাপ হলো- “আল্লাহুম্মা আন্তাস্ সালাম” অথবা তার সমপরিমাণ কোন দোয়া করা।” এটা দুররুল মোখতার ও রদ্দুল মোহতার
কিতাবেও উল্লেখ আছে। (ইমদাদুল আহ্কাম ১ম জিঃ পৃঃ ২৪৪)
(১৬)
جن نمازن کے بعد سنت مؤکدہ ھین ان فروضون کے بعد زیادہ
تاخیر کرنے کو مکروہ لکھا ھے- مگر صحیح یہ
ھے کہ کچھ حرج نھین- پس بھتر ھے کہ امام جتنی دیر دعامامنگے اسکے ساتھ دعا مانگے-
(عزیز الفتاوی ج1 صفہ 312)
অর্থঃ- যে ফরজ নামাযের পর
সুন্নতে মুয়াক্বাদা রয়েছে, সে সকল নামাযের পর (মুনাজাত) অধিক দীর্ঘ করা মাকরূহ্
লিখা হয়। কিন্তু ছহীহ মত হলো- মাকরূহ্ নয়। সুতরাং উত্তম হলো- ইমাম সাহেব মুনাজাত
যতটুকু দীর্ঘ করবে, মুক্তাদীগণও উনার সাথে মুনাজাত করবে। (আজীজুল ফতওয়া ১ম
জিঃ পৃঃ ৩১২)
(১৭)
جن نمازون کے بعد سنتین ھین جیسے ظھر، مغرب- عشاء انکے
بعد بھت دیرتک دعانہ مانگے بلکہ مختصر دعا مانگ کر ان سنتون کے پرھنے مین مشغول ھوجاوئے- اور جن نمازون کے بعد سنتین نھین ھین- جیسے-
فجر و عصر ان کے بعد جتنی دیرتک چاھئے دعا مانگے- (اشرفیہ بھشتی زیور ج 11 صفہ 32)
অর্থঃ- যে সকল (ফরজ)
নামাযের পর সুন্নত নামায রয়েছে, যেমন- যোহর,
মাগরীব, ইশা- তাদের পর মুনাজাত দীর্ঘ
করবেনা,
বরং সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নত পড়ায় মশগুল হবে। আর যে
সকল ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায নেই, যেমন-
ফজর ও আসর তাদের পর মুনাজাত যতটুকু ইচ্ছা দীর্ঘ করবে। (আশ্রাফী বেহেস্তী জিওর
জিঃ ১১,
পৃঃ ৩২)
(১৮-২৩)
جن فرائض کے بعد سنتین ھین انکے بعد دع مختصر ھونا چاھئے
سنن مین زیادہ تاخیر کرنا مکروہ ھے- کذا فی در المختار- شامی- تاتار خانیۃ- منیۃ
المصلی و عالمگیریہ-
(احسن الفتاوی ج1 صفہ 346)
অর্থঃ- যে সকল ফরজ নামাযের
পর সুন্নত নামায রয়েছে, তাদের পর সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করা
উচিত। সুন্নত নামায আদায় করতে অধিক বিলম্ব করা মাকরূহ্। অনুরূপ দুররুল মুখতার, শামী,
তাতারখানিয়া, মুনিয়াতুল মুছল্লী, আলমগিরী কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। (আহ্সানুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ৩৪৬)
সুতরাং স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, যেই ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায রয়েছে, সে নামাযের পর মুনাজাত অতিরিক্ত দীর্ঘ করা ঠিক
হবেনা।,
বরং সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নত নামায শুরু করবে। আর যে নামাযের পর সুন্নত নামায নেই, সে নামাযের পর মুনাজাত যতটুকু পরিমাণ খুশী দীর্ঘ
করতে পারবে।
(অসমাপ্ত )