সুওয়াল : জনৈক ব্যক্তি বললো যে, নামাযে ইমাম সাহেবের পাগড়ী ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই। কারণ, নুরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আরবের লোকেরা
সূর্য্যরে তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পাগড়ী এবং টুপি ব্যবহার করতেন। অতএব, পাগড়ী ও টুপি ব্যবহার
করা সুন্নাত নয়। প্রশ্ন হলো- তার এ বক্তব্য কতটুকু শুদ্ধ দলীলসহ জানাবেন।
জাওয়াব : টুপি নামাযে ব্যবহার করা
সুন্নতে মুয়াক্কাদা, টুপি ব্যতীত নামায পড়া মাকরূহ, তাহরীমী।
এমন কি কেউ যদি টুপি ব্যতীত শুধু মাথায় রুমাল বাঁধে, আর রুমাল
বাঁধা সত্ত্বেও মাথার মধ্যভাগ খালি থাকে, এমতাবস্থায়ও নামায পড়া মাকরূহ।
আরো উল্লেখ যে,
মাথার মধ্যভাগ খালি রেখে পাগড়ী বেঁধে নামায পড়লে নামায
মাকরূহ হবে। গরমের জন্য মাথা খালি রেখে নামায পড়াও মাকরূহ। আর নামাযকে হালকা বা
তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মনে করে, টুপি না পড়ে নামায পড়া কুফরীর
অন্তর্ভুক্ত।
কেউ কেউ
বলেছেন,
“বিনয় প্রকাশার্থে টুপি ছাড়া নামায পড়লে মাকরূহ হবে না।” তবে অধিকাংশ তথা, সর্ব সম্মত ও ছহীহ মত হলো- উক্ত অবস্থাতেও টুপি পড়ে নামায
পড়া উত্তম ও আফযল।
উল্লেখ্য
যে, নামাযরত অবস্থায় টুপি পড়ে গেলেও, টুপি তুলে মাথায় দেয়া আফযল তবে
লক্ষ্য রাখতে হবে, যেম আমলে
কাছীর না হয়। (নূরুল ইজাহ, আলমগীরী, হাশিয়ায়ে
তাহতাবী,
শামী, দুঃরুল মুখতার, হাশিয়ায়ে শরহে বিকায়াহ, ফতওয়ায়ে হুজ্জাত ও তাতার খানিয়া)
আর পাগড়ী
পরিধান করা দায়েমী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। নামাযে পাগড়ী পরিধান করা সুন্নাত ও
মুস্তাহাব। পাগড়ী পড়ে নামায পড়লে সত্তর গুণ বেশি ফযীলত পাওয়া যায়। (মিরকাত শরীফ)
সুতরাং
নামাযে ইমাম সাহেবের পাগড়ী ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই, একথা বলা
কুফরী। কেননা সুন্নতকে হালকা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞা করা
কুফরীর শামিল। সাথে সাথে এ বক্তব্যও চরম জিহালতপূর্ণ ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত যে, “নুরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আরবের
লোকেরা সূর্য্যরে তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পাগড়ী ও টুপি ব্যবহার করতেন।”
কারণ, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নুরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা-কাজ
ইত্যাদি সব কিছুই ছিল ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যেমন পবিত্র
কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وما ينطق عن الهوى ان هو الاوحى يوحى.
অর্থ : “তিনি ওহী
ব্যতীত কোন কথা বলেন না ও কাজও করেন না।” (পবিত্র সূরা নযম শরীফ,
পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাবতীয় আমল-আখলাক্ব ওহীর দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত ছির। কাজেই সূর্যের তাপের কারণে পাগড়ী, টুপি
ব্যবহার করেছেন। একথা বলা নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যা তোহমত দেয়ার শামিল। যাদের
প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,
من كذب على متعمدا فليبوأ مقعده من النار.
অর্থ : “যে
ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা কথা বলে, সে যেন
দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশায়াতু লুময়াত, লুময়াত)
প্রসঙ্গক্রমে
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আরবের লোকেরা সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার
জন্য যদি পাগড়ী,
টুপি ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে
মাগরিব,
ইশা ও ফযরের নামাযের সময় তো সূর্যের তাপ ছিল না। তখন কিসের
থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পাগড়ী, টুপি ব্যবহার করেছিলেন?
মূলত তার
উক্ত কথা ভ্রান্ত, মনগড়া, জিহালতপূর্ণ ও কুফরীর শামিল, যা থেকে খালেস তওবা করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (শরহে ফিক্বাহে আকবর, আক্বায়েদে
নছফী,
তাকমীলুল ঈমান ইত্যাদি আক্বাঈদের কিতাব দ্রষ্টব্য)
আবা-৩৯
0 Comments:
Post a Comment