সুওয়াল : মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী/৯৬ইং সংখ্যায়
নিম্নলিখিত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়।
প্রশ্ন : রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া জায়েয
কিনা?
উত্তর : ইনজেকশন নেয়া জায়েয।
মাসিক
মদীনার উক্ত উত্তর কতটুকু শুদ্ধ হয়েছে, নির্ভরযোগ্য দলীলের মাধ্যমে
জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : মাসিক মদীনার প্রদত্ত উত্তর
শুদ্ধ হয়নি বরং সম্পূর্ণ অশুদ্ধ বা ভুল হয়ছে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহের কিতাবে বর্ণিত উসুল ও বর্তমান আধুনিক বিশ্বের উন্নত চিকিৎসা
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভালরূপে তাহক্বীক্ব ও গবেষণা করার পর এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। কারণ ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশকৃত ঔষূধ
মগজে পৌঁছে।
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে,
من
حديث عائشة مرفوعا انما الافطار مما دخل وليس مما خرج واخرجه الطبرانى ولابن ابى
شيبة عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه الفطور مما دخل وليس مما خرج.
অর্থ : “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম হতে মারফু হিসাবে বর্ণিত- নিশ্চয়ই
রোযা ভঙ্গ হবে শরীরের ভিতর কিছু
প্রবেশ করলে,
বের হলে নয়। আর তিবরানী ও ইবনে আবি শায়বা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে, বের হলে রোযা ভঙ্গ
হবেনা।”
আর
ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে,
وما
وصل الى الجوف او الى الدماغ من مخارقة الاصلية كا لانف والاذن والدبر ........
فسد صومه.
অর্থ : “যা নাক, কান,
পায়খানার রাস্তা ইত্যাদির দ্বারা মগজ অথবা পেটে পৌঁছবে, তাতে রোযা ভঙ্গ
হয়ে যাবে।”
(বাদায়িউচ্ছানায়ে)
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে,
واما
وصل الى جوف الراس والبطن من الاذن والانف والدبر فهو مفطر بالاجماع.
অর্থ : “কান, নাক ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে ঔষুধ ইত্যাদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছা সকলের নিকটেই
রোজা ভঙ্গের কারণ।” (খোলাসাতুল ফতওয়া, অনুরূপ হেদায়া, আইনুল হেদায়া, মাবছূত, বাহ্রুর রায়েক, রদ্দুল মোহ্তার কিতাবেও উল্লেখ আছে।
উপরোক্ত
কিতাবসমূহে যদিও ঔষুধ ইত্যাদি মূল রাস্তা অর্থাৎ নাক, কান, মুখ ইত্যাদি দিয়ে মগজ অথবা পেটে পৌঁছার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ইমামগণের নিকট মূল রাস্তা শর্ত নয়। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা
হয়েছে যে,
وابو
حنيفة رحمه الله تعالى يقول المفسد للصوم وصل المفطر الى باطنه فالعبرة للواصل لا
للمسلك.
অর্থ : “ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রোযা ভঙ্গের কারণ হলো- রোযা ভঙ্গকারী কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ
করা, সুতরাং পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য, মূল রাস্তা নয়।” (মাবছূত)
আর ফতহুল
ক্বাদীর ২য় জিঃ ২৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,
وابو حنيفة رحمه الله عليه وسلم يعتبر الوصول.
অর্থ : “হযরত
ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য।”
অতএব, মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করুক অথবা মূল রাস্তা ব্যতীত অন্য কোন রাস্তা দিয়ে
প্রবেশ করুক না কেন, ঔষুধ যদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে রোজা
ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে- সকল প্রকার ইনজেকশন
ইত্যাদি মগজে পৌঁছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে
ইনজেকশন মগজে পৌঁছার প্রমাণ
রোগ
নিরাময়ের জন্যে আমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওষূধ সেবন করি। বিভিন্ন DOSAGE FORM - (ডোজেজ ফরম বলতে বোঝায়- ওষুধ গ্রহণের যত রকম
পদ্ধতি আছে যেমন- ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সাসপেনশান, সিরাপ,
ইনজাকশান ইত্যাদি)-এর মধ্যে ইনজেকশনও একটি পদ্ধতি। ইনজেকশন
পদ্ধতিটি মূলত Parenteral পদ্ধতির একটি অংশ। Parenteral পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়- The tern Parenteral (GK, Para enteron = beside the
intestine) refers to the roul of administration of drugs by injection under or
through one or more layers of skin or mucous membrane. অর্থাৎ পেরেনটারাল পদ্ধতিটি হচ্ছে সেই পদ্ধতি, যেখানে এক অথবা বেশী সংখ্যক শরীরের ত্বকের স্তর অথবা মিউকাস মেমব্রেনের স্তরের
মধ্য দিয়ে ইনজেকশনের
মাধ্যমে শরীরে ওষুধ প্রবেশ করানো হয়।
ইনজেকশনকে
পাঁচটা সাধারণ শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে-
১। দ্রবণ
জাতীয় ইনজেকশন (Solutions ready for injection)
২। শুস্ক
দ্রব্য,
কিন্তু শরীরে ইনজেকশন পদ্ধতিতে দেয়ার পূর্বে কোন দ্রবণে
দ্রবীভূত করে নেয়া যায়। যেমন- (Dry, Soluble products ready to be combined with
a solvent just prior to use)
৩।
সাসপেনশন জাতীয়। (Suspensions resdy for injection)
৪। শুষ্ক
অদ্রবণীয় দ্রব্য কিন্তু কোন Vehicle (মাধ্যম)-এ মিশিয়ে দেয়া
হয়। (Dry insoluble products ready to be combined with a vehicle just prior to
use)
৫।
ইমালশান জাতীয়। (Emulsion type)
এই পাঁচ
প্রকার ইনজেকশন আবার বিভিন্ন পথে শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং কোন পথে কোন ইনজেকশন
দেয়া হবে,
তা নির্ভর করে সাধারণতঃ ওষুধের গুণাগুনের ওপর। যেমন
সাসপেনশন জাতীয় ইনজেকশন সরাসরি রক্তে দেয়া হয়না, কেননা
সেখানে বড় বড় দানা Blood capillaries অর্থাৎ রক্ত জালিকা বন্ধ
করে দিতে পারে। আবার Solution জাতীয় ইনজেকশন ত্বকের স্তর দিয়ে
দিতে হলে Tonicity adjustment খুব গুরুত্বপূর্ণ। নতুবা ত্বকে Irritation অর্থাৎ জ্বালা হতে পারে। সে কারণেই Injection আবার
বিভিন্ন পদ্ধতিতে দেয়া হয়। এর মধ্যে নিচের মাধ্যমগুলি উল্লেখযোগ্য-
১। Intravenous (ইন্ট্রাভেনাস)
২। Subcutaneous (সাবকিউটেনিয়াস)
৩। Intradermal (ইন্ট্রাডারমাল)
৪। Intramuscular
(ইন্ট্রামাসকিউলার)
৫। Intrathecal (ইন্ট্রাথিকাল)
৬। Intra
areterial (ইন্ট্রা আরটারিয়াল)
Intravenous (ইন্ট্রাভেনাস) : এ
পদ্ধতিতে গণধভ (শিরা) -এর মাধ্যমে রক্তে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিতে ওষুধ
সরাসরি রক্তে মিশে যায়।
Subcutaneous (সাবকিউটেনিয়াস) : শরীরে
ত্বকের এবং মিউকাস মেমব্রেনের এক বা একাধিক স্তরের মধ্য দিয়ে এ পদ্ধতিতে ওষুধ
প্রয়োগ করা হয়। তবে এ পদ্ধতিতেও ওষুধ রক্ত স্রোতে মিশে যায়।
Intradermal (ইন্ট্রামাসকিউলার) : এ
পদ্ধতিতে ওষুধ শরীরের পেশীসমূহের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো হয় এবং কিছু সময় পর ওষুধ
রক্ত স্রোতে গিয়ে মিশে।
Intrathecal (ইন্ট্রাথিকাল) : অনেক সময়
CNS (Central Nervous System) অর্থাৎ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে
ওষুধ অন্যান্য পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে বিলম্বে পৌঁছে, আর সে
কারণেই এখন এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে ওষুধ সহজেই CNS-এ পৌঁছে।
এটা
সহজেই বোঝা যায় যে, ইনজেকশনের যে
কোন পদ্ধতিতেই শরীরে ওষুধ প্রয়োগ করা হোক না কেন শরীরে ওষুধের শোষনের কিছু সময়
পরেই রক্ত স্রোতের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে Goodman Gilman
Pharmacology-তে বলা হয়েছে- “Heart, Liver, kidney brain and other highly perfused orans receive most of the drug during the first few minutes after absorption”
অর্থাৎ ওষুধের শোষনের কয়েক
মিনিটের মধ্যেই হৃৎপিন্ড, যকৃৎ, কিডনী, মগজ এবং অন্যান্য অঙ্গে বেশীরভাগ ওষুধ চলে যায়।
ওষুধ
মূলত রক্তস্রোতের মাধ্যমেই শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে, কেননা রক্তকে বলা হয় Connective tissue. Blood-এর সংজ্ঞায় বলা হয়- Blood is vehicle for trensport of food
nutrients oxygen, water and all other essentials to the tissue cells and their
waste products are carried away. It (Blood) is a special
type of connective tissue.
অর্থাৎ
রক্ত হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে খাদ্য, অক্সিজেন,
পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান টিস্যুসমূহে পৌঁছে এবং
বর্জ্য দ্রব্যসমূহ বহন করে নিয়ে আসে। এটা এক ধরণের সংযোগ কলা (tissue)। সুতরাং Blood-এ পৌঁছে ওষুধ শরীরের
সর্বাংশে ছড়ায়,
অর্থাৎ মগজে পৌঁছে। তবে আমাদের আলোচনার প্রয়োজনে আমরা
এবারে মগজে ওষুধ প্রবেশের পথটি বর্ণনা করবো, তবে তার
পূর্বে মগজের গঠন নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
BRAIN (মগজ)
আমাদের
মগজের উপর আছে তিনটি পর্দা-
১। Dura Mater (ডুরা মেটার)
২। Arachnoid (এ্যারাকনয়েড)
৩। Pia Mater (পায়া মেটার)
ডুরা
মেটারের গঠন একটু পুরু এবং পায়া মেটার অত্যস্ত সুক্ষè একটি পর্দা, যা কিনা Brain (মগজ)কে ঢেকে আছে। আর এ দুয়ের মাঝামাঝি হলো এ্যারাকনয়েড। Blood venels (রক্ত নালী)- এ তিনটি পর্দা (Meninges) পার হয়ে মগজে বা Brain-এ পৌঁছেছে এবং জালিকার মত মগজের
অভ্যন্তরে ছড়িয়ে আছে।
এ
পর্যন্ত আলোচনায় তাহলে আমরা যে ধারণা পেলাম তা হচ্ছে-
১।
ইনজেকশন কত প্রকার এবং কত রকম পদ্ধতিতে দেয়া হয়,
২। তা
কিভাবে রক্তস্রোতের মাধ্যমে শরীরের সর্বাংশে ছড়ায়।
৩।
বিশেষত মগজের অভ্যন্তরে কি করে ইনজেকশনের পর ওষুধ প্রবেশ করে।
এখানে উল্লেখ্য
যে, ইনজেকশন সাধারণত: দু’ধরণের হয়ে থাকে- (১) ওষুধ ভিত্তিক
ইনজেকশন। (২) খাদ্য ভিত্তিক ইনজেকশন। উভয়টির একই হুকুম।
আমাদের
এতক্ষরে আলোচনায় এটাই দেখেছি যে, যত প্রকারের ইনজেকশন হোক না কেন, তা এক সময় রক্তস্রোতে মিশবে এবং মগজে পৌঁছে যাবে।
আর পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
من
حديث عائشة مرقوعا انما الافطار مما دخل وليس مما خرج واخرجه الطبرانى ولابن ابى
شيبة عن ابن عباس. (رضى) الفطر مما دخل وليس مما خرج.
অর্থ : “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম হতে মারফু হিসাবে বর্ণিত নিশ্চয়ই রোজা
ভঙ্গ হবে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, বের হলে নয়। আর তিবরানী ও ইবনে
আবি শায়বা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা হতে বর্ণনা করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে, বের হলে
রোযা ভঙ্গ হবে না।”
আর
ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে,
وما
وصلا الى الجوف اوالى الدماغ من مخارقة الاصلية كا لا نق والاذن والدبر ........
فسد صومه.
অর্থ : “যা নাক,
কান, পায়খানার রাস্তা ইত্যাদিরদ্বারা
মগজ অথবা পেটে পৌঁছবে, তাতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।”
(বাদায়িউচ্ছানায়ে)
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে,
واما
وصلا الى جوف الرأس والبطن من الاذن والانف والدير فهو مفطر بالاجماع.
অর্থ : “কান,
নাক ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ ইত্যাদি মগজ অথবা পেটে
পৌঁছা সকলের নিকটেই রোযা ভঙ্গের কারণ।”
(খোলাসাতুল ফতওয়া, অনুরূপ হেদায়া, আইনুল হেদায়া, মাবছূত,
বাহরুর রায়েক, রদ্দুল মোহতার কিতাবেও উল্লেখ
আছে।
উপরোক্ত
কিতাবসমূহে যদিও ওষুধ ইত্যাদি মূল রাস্তা অর্থাৎ নাক, কান, মুখ ইত্যাদি দিয়ে মগজ অথবা পেটে পৌঁছার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ইমামগণের নিকট মূল রাস্তা শর্ত নয়। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা
হয়েছে যে,
وابو
حنيفة رحمه الله تعالى يقول المفسد للصوم وصل المفطر الى با طنه فالعبرة للواصل لا
للمسلك.
অর্থ : “ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, রোযা
ভঙ্গের কারণ হলো- রোযা ভঙ্গকারী কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ করা, সুতরাং পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য, মূল রাস্তা নয়।” (মাবছূত)
আর ফতহুল
ক্বাদীর ২য় জি: ২৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,
وابو حنيفة رحمه الله عليه وسلم يعتبر الوصول.
অর্থ : “হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য।”
অতএব, মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করুক অথবা মূল রাস্তা ব্যতীত অন্য কোন রাস্তা দিয়ে
প্রবেশ করুক না কেন, ওষুধ যদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে রোযা
ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে- সকল প্রকার ইনজেকশন
ইত্যাদি মগজে পৌঁছে।
সুতরাং
রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ আরো বলেন, যে কোন জখম বা আঘাতেই ঔষুধ প্রয়োগ করা হউক না কেন, তা যদি
শিরায় পৌঁছে,
তবে তা সহজে মগজে পৌঁছবে। এ ব্যাপারে ফিক্বাহের কিতাবে
উল্লেখ করা হয়েছে,
بان
داواى جائفه والامة فان داواها بدواء يابس لا يفسد لا نه لم يصل الى الجوف ولا الى
الدماغ ولو علم انه كوصل يفسد فى قول ابى حنيفة وان داواها بدراء رطب يفسد عنه ابى
حنيفة.
অর্থ : “জায়েফা ও
আম্মাতে যে ঔষুধ দেয়া হয়, উক্ত ঔষুধ যদি শুকনা হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হবেনা। কেননা উক্ত ঔষুধ পেট অথবা মগজে পৌঁছেনা। আর যদি জানা
যায় যে উক্ত ঔষুধ মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার মতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর ঔষুধ যদি ভিজা হয়, তবুও
ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।” (বাদায়ে,
আইনুল হেদায়া, আলমগীরী, মাবছূত
ইত্যাদি)
মূলকথা
হলো- যে কোন অবস্থায়, যে কোন ঔষুধ প্রবেশ করানো হোক না কেন, যদি সেটা জানা যায় যে, মগজ অথবা পেটে পৌঁছেছে, তবে অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে যেহেতু জখমে ঔষুধ
প্রবেশ করালে তা রক্ত প্রবাহের শ্রোতে পৌঁছে যায় এবং রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে মগজে
পৌঁছে যায়,
সেহেতু জখমে ঔষুধ দিলেও রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য
মাসিক মদীনাসহ আরো কিছু পত্রিকা বাজারে চালু রয়েছে, যেগুলো
নিজের প্রভাব প্রতিপত্তিকে সমাজে টিকিয়ে রাখার জন্য ইলমহীন, মনগড়া ফতওয়া প্রদান করে থাকে। যা তাকে ও তার অনুসারীদেরকে গোমরাহীতে নিমজ্জিত
করে। আর যারা তাদের এ পরিচয় অর্থাৎ তারা দলীল বিহীন, মনগড়া
ফতওয়া প্রদানকারী হিসেবে জানার পরেও তাদের কাছে ফতওয়া জিজ্ঞাস করে এবং সে অনুযায়ী
আমল করে,
তারাও গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়। সুতরাং তাদের কাছে ফতওয়া
জিজ্ঞাসা করা ও সে অনুযায়ী আমল করা হতে বিরত থাকা সকল মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজের
অন্তর্ভূক্ত।
[রোজা অবস্থায় ইনজেকশন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক
আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২১ ও ২২তম সংখ্যা পড়ুন। তাতে বিস্তারিত দলীল-আদীল্লার
মাধ্যমে ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে যে, রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা
ভঙ্গ হবে।]
মুহম্মদ ওবাইদুল হক আজিম,
নিউ মার্কেট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
সুওয়াল : আমি দোকানের কর্মচারী, আমি পরিপূর্ণভাবে শরীয়তের মধ্যে থাকতে চাই। কিন্তু আমার মহাজন দোকানে অনেক সময়
দু’নম্বর মালামাল রাখে, সেটা তিনি এক নম্বর বলে বিক্রেতার
কাছে বিক্রয় করে এবং আমার প্রতিও নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, দু’নম্বর মালকে এক নম্বর বলে বিক্রয় করবে। মালিকের নির্দেশ অনুযায়ী আমি যদি মাল বিক্রি
করি, তাহলে আমার কতটুকু পাপ হবে বা এ বিয়য়ে শরিয়তের হুকুম কি? দলিলসহ বিস্তারিত জানাবেন।
জওয়াব : দু’নম্বর মালামাল এক নম্বর বলে
বিক্রি করা জায়েয নেই। কেননা এতে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয় এবং তার সাথে ক্রেতাকে
ধোকাও দেয়া হয়। মহান আল্লাহ পাক মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে উনার পবিত্র
কালামে পাক উনার
মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
لعنة الله على الكاذبين.
অর্থ : “মিথ্যাবাদীদের
প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার তায়ালার লা’নত।”
আর পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
হয়েছে,
একদা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাজারে একজন শস্য বিক্রেতার কাছে
গেলেন এবং যে শস্য বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে, তাতে
তিনি হাত প্রবেশ করিয়ে দেখলেন যে, ভিতরের শস্যগুলি কিছুটা ভেজা। তখন
তিনি বললেন,
“হে ব্যক্তি! তুমি কি এগুলো ক্রেতাকে ধোকা দেয়ার জন্য রেখেছ?” সে ব্যক্তি বললো- না, শস্যগুলি এ রকমই। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দেখো-
من غشى فليس منى.
অর্থ : “যে
ব্যক্তি ধোকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত না।”
কাজেই
কোন মহাজন যদি তার কর্মচারীকে দু’নম্বর মালামাল এক নম্বর বলে
বিক্রয় করার নির্দেশ দেয়, আর কর্মচারী সে অনুযায়ী মাল
বিক্রি করে,
তাহলে মহাজন ও কর্মচারী উভয়ে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে।
তবে দু’নম্বর মালামাল ভাল হলে বা তার গুনাগুণ থাকলে, তা
বর্ণনা করে বিক্রি করা যেতে পারে। আর যদি দোষ-ত্রুটি থাকে, তবে
বিক্রির সময় তা উল্লেখ করে বিক্রি করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম আ’যম,
হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ওয়াকেয়া
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
উনার লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ছিল। একদা তিনি উনার এক কাপড় বিক্রেতাকে কিছু কাপড় বিক্রি করার জন্য দিলেন। তার মধ্যে একটি কাপড়ে
কিছু দোষ ছিল। তিনি বলে দিয়েছিলেন যে, এ কাপড়টা যখন বিক্রি করবে, তখন দোষের কথা বলে দিয়ে বিক্রি করবে। কিন্তু সেই বিক্রেতা ভুলে দোষযুক্ত
কাপড়টা বিক্রি করে ফেললো, দোষের কথা বলতে মনে ছিলনা। ঐ দিন
সে বিক্রি করেছিল ত্রিশ হাজার দেরহাম। হযরত ইমাম আ’যম আবূ
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন আসলেন, তখন বললেন- হে ব্যক্তি! তুমি কত
টাকার মাল বিক্রি করলে? সে বিক্রেতা উত্তর দিল- ত্রিশ
হাজার দেরহাম। তিনি বললেন, দোষযুক্ত কাপড়টা কি বিক্রি হয়েছে? সে বললো- হ্যাঁ। তিনি বললেন, বিক্রির সময় দোষের কথা বলে বিক্রি
করেছ?
সে বললো- হুযূর! আমার মনে ছিলনা, আমি ভুলে
গিয়েছিলাম। হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি
বললেন,
“তুমি সর্বনাশ করেছ! এ পয়সা আমার জন্য খাওয়া জায়েয হবেনা।” তিনি সেই ত্রিশ হাজার দেরহাম দান করে দিলেন। (সুব্হানাল্লাহ)
সেই ইমাম
আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আমরা মুকাল্লিদ (অনুসারী)। সুতরাং
আমাদের অবস্থাও অনুরূপ হওয়া দরকার । অির্থাৎ হারাম-নাজায়েয থেকে পরহেজ তো থাকতেই
হবে, এমন কি সন্দেহ্জনক বিষয় থেকেও সতর্ক থাকা উচিৎ প্রত্যেকের, তবেই মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব। (আলমগীরী, শামী,
আইনুল হেদায়া, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে বেকায়া, মানাকেবে আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি।
আাবা-৪০
0 Comments:
Post a Comment