সুওয়াল : সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী, আজমিরী,
সাঞ্জেরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে কিছু জানতে
আগ্রহী।
জাওয়াব : ৫৩৬ মতান্তরে ৫৩৭ হিজরীর ১৪ই রজব সোমবার
সুলতানুল হিন্দ,
গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ্, হযরত
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী, আজমিরী, সাঞ্জেরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত শরীফ গ্রহণ
করেন। উনার পিতা ছিলেন, হযরত গিয়াস উদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং মা ছিলেন, হযরত
উম্মুল ওয়ারা রহমতুল্লাহি আলাইহা। পিতা ও মাতা
উভয়ের দিক হতে তিনি ছিলেন- আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী অর্থাৎ
মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার খাছ আওলাদের অন্তর্ভুক্ত।
উনার বয়স মুবারক যখন ১৫ বৎসর, তখনই উনার
পিতা-মাতা উভয়ে বিছাল শরীফ লাভ করেন। পিতা-মাতার উনাদের বিছাল শরীফের পর তিনি ওয়ারিছ সুত্রে শুধুমাত্র একটি যাতী ও একটি আঙ্গুর ফলের বাগান লাভ করেন।
কিতাবে
উল্লেখ করা হয়,
গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি
আলাইহি একদিন ওয়ারিছ সুত্রে প্রাপ্ত উক্ত বাগানে কাজ করছিলেন। এমন সময় উক্ত বাগানে
তাশরীফ আনলেন, মজ্জুব
ওলী, হযরত ইব্রাহীম কান্দূজী রহমতুল্লাহি আলাইহি। গরীবে নেওয়াজ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী
রহমতুল্লাহি আলাইহি যেহেতু মাদারজাদ ওলী ছিলেন, তাই উনার অন্তরে ওলী আল্লাহগণ
উনাদের প্রতি ছিল অফুরন্ত ভক্তি ও মুহব্বত। তিনি হযরত ইব্রাহীম
কান্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খেদমতে কিছু আঙ্গুর ফল পেশ করলেন।
পক্ষান্তরে
হযরত ইব্রাহীম কান্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থলী থেকে কিছু খাদ্য বের করে চিবিয়ে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে খেতে
দিলেন। গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত খাদ্য
খাওয়ার পর উনার মধ্যে
ভাবান্তর সৃষ্টি হয়ে যায়। যার ফলে তিনি একমাত্র সম্পদ যাতী ও বাগান বিক্রি করে
দিয়ে ইলমে দ্বীন অর্জন করার জন্য সফরে বের হয়ে যান। প্রথমে বোখারা গিয়ে সাড়ে সাত
বৎসর ইলমে ফিক্বায় পূর্ণ বুৎপত্তি লাভ করেন। অতঃপর ইলমে তাসাউফ অর্জন করার লক্ষে মুর্শিদ
তালাশ করতে লাগলেন এবং তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠ ও বিশিষ্ট বুযুর্গ ও ওলী মহান
আল্লাহ পাক উনার হযরত ওছমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হয়ে প্রায়
সাড়ে বিশ বৎসর কঠোর রিয়াযত-মোশাক্কাত ও মোরাক্বাবা-মোশাহাদার মাধ্যমে ইলমে তাসাউফে
পূর্ণতা হাছিল করেন। এর পূর্বে উনার শায়খ হযরত উছমান
হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন! চলুন আপনাকে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট
সোপর্দ করে দিব।”
একথা বলে
হযরত উছমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিয়ে হজ্বে রওয়ানা হয়ে গেলেন, হজ্ব সমাপন করে অর্থাৎ কা’বা শরীফ যিয়ারত করার পর হযরত উছমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “হে মহান আল্লাহ পাক মুঈনুদ্দীন উনাকে আপনার নিকট সোপর্দ করে দিলাম, আপনি উনাকে কবুল করুন।” গায়েব থেকে নেদা হলো- “হে উছমান
হারুনী আমি মহান আল্লাহ পাক মুঈনুদ্দীন উনাকে কবুল করে নিলাম। (সুবহানাল্লাহ)
অতঃপর
মদীনা শরীফ গিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফ
যিয়ারত করলেন। তখন হযরত উছমান
হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন আপনি সালাম পেশ করুন।” তিনি
সালাম দিলেন- “আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” রওজা শরীফ থেকে জবাব আসলো- “ওয়া
আলাইকুম আস সালাম ইয়া কুতুবাল হিন্দ।” অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং উনাকে লক্বব বা উপাধী দিলেন- “কুতুবুল হিন্দ” বা হিন্দুস্থানের কুতুব।
উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নির্দেশক্রমে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন
চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ হিদায়েতের স্থল হিন্দুস্থানে চলে আসেন।
অতঃপর
অক্লান্ত কোশেশ,
অবর্ণনীয় রিয়াযত-মুশাক্বাত ও হিকমতপূর্ণ তাজদীদের মাধ্যমে হিন্দুস্থান থেকে
কুফরী-শেরেকী,
বিদয়াত-বেশরা সম্পূর্ণরূপে মুলোৎপাটিত করেন এবং উনার উসীলায় অসংখ্য লোক ঈমান লাভ করে
মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তাই কিতাবে উল্লেখ করা হয়, পৃথিবীর ইতিহাসে একজন মাত্র ব্যক্তি, যাঁর উসীলায় মহান আল্লাহ পাক এক
কোটিরও বেশী লোককে ঈমান দান করেন। (সুবহানাল্লাহ্)
গরীবে
নেওয়াজ,
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি এত বিরাট সফলতা
অর্জন করার একমাত্র কারণ হলো- তিনি আজীবন মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ ছিলেন।
এ
প্রসঙ্গে মহান মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক ফরমান,
ان
الذين قالوا ربنا الله ثم استقاموا تتنزل عليهم الملئكة.
অর্থ : “নিশ্চয়
যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে রব
হিসেবে মেনেছে এবং এর মধ্যে দৃঢ় রয়েছে, তাদের উপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম নাযিল হবে। অর্থাৎ তাদের
জন্যই রয়েছে গায়েবী মদদ।
মহান
আল্লাহ পাক অন্যত্র আরো ইরশাদ মুবারক ফরমান,
ولا تهنوا ولا تحزنوا وانتم الاعلون ان كنتم مؤمنين.
অর্থ : “তোমরা
চিন্তিত হইওনা,
পেরেশান হইওনা, তোমরাই কামিয়াবী অর্জন করবে, যদি তোমরা মু’মিন হতে পার।”
অতএব, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি
আলাইহি যেহেতু মু’মিনে কামেল ছিলেন এবং পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও
ক্বিয়াস উনাদের উপর
দৃঢ়ভাবে দায়েম-ক্বায়েম ছিলেন, তাই তিনি এত বিরাট কামিয়াবী বা
সফলতা অর্জন করেছেন।
এখানে
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি যে কতটুকু
কামিয়াবী বা সফলতা হাছিল করেছেন, নিন্মোক্ত ঘটনা থেকে তা
সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়।
সীরাত
গ্রন্থে উল্লেখ আছে, গরীবে নেওয়াজ, খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার যখন বিদায় নেয়ার সময় হলো, তখন উনার প্রধান খলীফা হযরত কুতুবুদ্দীন
বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ডেকে আনলেন এবং বললেন, “হে বখতিয়ার কাকী! আমার সময় শেষ, আমার নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার
যা নিয়ামত রয়েছে, তা আমি তোমাকে দিয়ে যাচ্ছি, তুমি তার
হক্ব আদায় করবে। আর তুমি দিল্লী চলে যাও, তোমার হিদায়েত বা দ্বীন প্রচারের
স্থল হলো- দিল্লী।” হযরত বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমার অনিচ্ছা সত্বেও শুধুমাত্র শায়খের নির্দেশ পালনার্থে আমি দিল্লী চলে
গেলাম। সেখানে গিয়ে বিশ দিন পর আমি সংবাদ পেলাম- আমার শায়খ, গরীবে নেওয়াজ, খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বিদায় নিয়েছেন। শায়খের
বিদায়ের কারণে আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। আমি আছর নামায পড়ে জায়নামাজে বসা ছিলাম। এমন সময় আমার
তন্দ্রা এসে যায়, আমি দেখতে পেলাম, আমি আমার শায়খের সম্মুখে উপস্থিত।
অতঃপর আমি শায়খকে সালাম দিলাম ও কদম বুছী করলাম। অতঃপর জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আমার শায়খ! আপনি মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার রেজামন্দীর জন্য
৯৭টি বৎসর ব্যায় করেছেন। মহান আল্লাহ পাক আপনার সাথে কি ব্যবহার করেছেন?
জবাবে
গরীবে নেওয়াজ,
হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হে বখতিয়ার কাকী! প্রথমতঃ মহান আল্লাহ পাক আমাকে ক্ষমা করেছেন। দ্বিতীয়তঃ
যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে সবচেয়ে সম্মাণিত ও শ্রেষ্ঠ, উনারা আরশের অধিবাসী হবেন। অর্থাৎ উনারা সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার
দীদারে মশগুল থাকবেন। মহান আল্লাহ পাক দয়া করে আমাকে সেই আরশের অধিবাসীদের অন্তর্ভূক্ত
করেছেন। অর্থাৎ আমি সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার দীদারে মশগুল আছি।” (সুবহানাল্লাহ্)
কাজেই
প্রমাণিত হলো যে, গরীবে নেওয়াজ, খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি
আলাইহি পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়ার কারণেই অর্থাৎ
সুন্নতের পূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই এতবিরাট সফলতা অর্জন করেছেন।
যে
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক উনার কালামে
পাকে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
قل
انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله وغفرلكم ذنوبكم والله غفوررحيم.
অর্থ : “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি
বলুন,
যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত পেতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ কর। যদি তোমরা আমাকে অনুসরণ কর, তবে মহান
আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুণাহখাতা ক্ষমা করবেন। মহান আল্লাহ পাক
ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
মহান
আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে
পাক উনার অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন,
من يطع الله ورسوله فقد فازفوزا عظيما.
অর্থ : “যে
ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত বা অনুসরণ করবে, সে বিরাট সফলতা অর্জন করবে।”
কাজেই
কামিয়াবী বা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুক্ষাতিসুক্ষ্ম, পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। যেমনটি করেছিলেন-
গরীবে নেওয়াজ,
হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি।
উনি যে
কতটুকু সুন্নতের অনুসরণ করতেন, সে প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা
হয়- গরীবে নেওয়াজ, খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন
নব্বই,
তখন তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার বিশেষ সাক্ষাত লাভ করলেন। যদিও মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়ালাগণ সর্বদাই
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার সাক্ষাত লাভ করে থাকেন। যখন বিশেষ সাক্ষাত লাভ করলেন, তখন
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন,
“হে মুঈনুদ্দীন (দ্বীনের সাহায্যকারী)! তুমি তো সত্যিই আমার
দ্বীনের সাহায্যকারী তুমি আমার সকল সুন্নতই পালন করলে, তবে একটি
সুন্নত এখনো বাকী রয়ে গেল কেন?”
গরীবে
নেওয়াজ,
খাজা হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি পরক্ষণে চিন্তা করে
বুঝতে পারলেন যে, মহান আল্লাহ পাক ও তার রাসূল, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দ্বীনের
খেদমতে ব্যস্ত থাকার কারণে তখনো বিবাহ করেননি। তাই তিনি নব্বই বৎসর বয়স মুবারকে পর
পর দু’টি বিবাহ করে এ সুন্নতও আদায় করলেন। (সুবহানাল্লাহ্)
মূলত
সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই মহান আল্লাহ পাক উনাকে কুদরতীভাবে লক্বব দান করেন- “হাবীবুল্লাহ্।”
উল্লেখ্য, নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মধ্যে হাবীবুল্লাহ হলেন-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যেমন মহান আল্লাহ পাক পবিত্র হাদীছ-এ কুদসী শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
متخذت خليلا وحبيبا.
অর্থ : “আমি আমার
রসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খলীল ও হাবীব হিসেবে গ্রহণ
করেছি।”
আর ওলী
আল্লাহগণ
উনাদের মধ্যে যদিও অনেকেই হাবীবুল্লাহ, কিন্তু
দু’জন ব্যক্তি পৃথিবীতে হাবীবুল্লাহ্ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। একজন হলেন, হযরত জুন্নুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আর
দ্বিতীয়জন হলেন,
সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
উনারা বিছাল শরীফ উনার পর উনাদের কপাল মুবারকে
কুদরতীভাবে সোনালী অক্ষরে লিখিত হয়েছিল-
هذا حبيب الله مات فى حب الله.
অর্থাৎ “ইনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, মহান আল্লাহ পাক উনার মহব্বতেই
ইন্তেকাল করেছেন।” (সুবহানাল্লাহ্)
স্মরণযোগ্য
যে, এই মহান ওলীর তরীক্বার নাম হলো- “চিশতীয়া তরীক্বা” অর্থাৎ তিনিই এ তরীক্বার ইমাম। এ তরীক্বা সম্পর্কেও রয়েছে বিশেষ সুসংবাদ।
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, মহান মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ
থেকে গাউসূল আ’যম,
বড় মুর্শিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আফজালুল আওলিয়া, মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার ন্যায় গরীবে নেওয়াজ, খাজা হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার
প্রতি
শত-সহস্রবার ইলহাম করা
হয়েছে এই বলে যে,
غفرت
لك ومن توسل بك بواسط اوبلا واسط الى يوم القيامة.
অর্থাৎ “(হে মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি) আপনাকে ক্ষমা করা হলো এবং আপনাকে
যারা মধ্যস্থতায় ও বিনা মধ্যস্থতায় উছীলা বানাবে, ক্বিয়ামত
পর্যন্ত তাদেরকেও ক্ষমা করা হলো।” (সুবহানাল্লাহ)
এ মহান
মুজাদ্দিদ ৬৩৩ মতান্তরে ৬৩৪ হিজরীর ৬ই রজব বিছাল
শরীফ গ্রহণ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)
অতএব, গরীবে নেওয়াজ, খাজা হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারক
উনার উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, উনাকে মহান আল্লাহ পাক অশেষ
মর্যাদা-মর্তবা দান করেছেন। আর তিনি এত মর্যাদা-মর্তবা অর্জন করেছেন, শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত ও মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ
হওয়ার কারণেই।
কাজেই
আমাদেরকেও উনার জীবনী
থেকে নছীহত হাছিল করতে হবে, অর্থাৎ কামিয়াবী বা মহান আল্লাহ
পাক উনার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে পরিপূর্ণভাবে হক্ব মতে-পথে দায়েম-ক্বায়েম থাকতে
হবে। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উনার অনুসরণ করার ও হক্ব মতে-পথে দায়েম-ক্বায়েম থাকার তাওফীক দান
করুন। (আমীন)
আবা-৪০
0 Comments:
Post a Comment