৬৯৩ নং- সুওয়াল : মাসিক আত-তাওহীদ রবীউছ ছানী ১৭ হিঃ আগস্ট/সেপ্টেম্বর’৯৬ সংখ্যার সমস্যা ও সমাধান বিভাগে অর্থাৎ আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া পটিয়া (মাদরাসা)-এর ফতওয়া বিভাগ থেকে মাসবুক-এর নামায আদায় সম্পর্কিত সমস্যার যে সমাধান দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়ে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। “তারা লিখেছে- ......... যে ব্যক্তি জোহরের এক রাকাত ইমামের সাথে পেয়েছে, সে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা সংযোজন করবে এবং এক রাকাত পূর্ণ করে বসবে। বৈঠকের পর বাকী দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করবে অন্য সূরা মিলানো ছাড়া নামায সমাপ্ত করবে।” (দুররে মুখতার ১/৫৫৭, আলমগীরী ১/৯১) এখন আমার সুওয়াল হলো- পটিয়া মাদ্রাসার ফতওয়া বিভাগ থেকে দুররে মুখতার ও ফতওয়ায়ে আলমগীরীর বরাত দিয়ে মাসবুক-এর নামায আদায় করা সম্পর্কিত যে মাসয়ালা প্রদান করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা সন্দিহান অর্থাৎ আমরা সংশয় ও সন্দেহের মধ্যে রয়েছি। সত্যিই কি উক্ত মাসয়ালা তাদের উল্লেখিত কিতাবদ্বয়ে এরূপরই রয়েছে? অথবা তারা মনগড়া দলীল দিয়েছে? এ বিষয়ে সঠিক ফায়সালা প্রদান করে আমাদের সন্দেহ ও সংশয় দূর করবেন বলে আশা রাখি।

 

সুওয়াল : মাসিক আত-তাওহীদ রবীউছ ছানী ১৭ হিঃ আগস্ট/সেপ্টেম্বর৯৬ সংখ্যার সমস্যা ও সমাধান বিভাগে অর্থাৎ আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া পটিয়া (মাদরাসা)-এর ফতওয়া বিভাগ থেকে মাসবুক-এর নামায আদায় সম্পর্কিত সমস্যার যে সমাধান দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়ে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। তারা লিখেছে- ......... যে ব্যক্তি জোহরের এক রাকাত ইমামের সাথে পেয়েছে, সে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা সংযোজন করবে এবং এক রাকাত পূর্ণ করে বসবে। বৈঠকের পর বাকী দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করবে অন্য সূরা মিলানো ছাড়া নামায সমাপ্ত করবে।” (দুররে মুখতার ১/৫৫৭, আলমগীরী ১/৯১)

এখন আমার সুওয়াল হলো- পটিয়া মাদ্রাসার ফতওয়া বিভাগ থেকে দুররে মুখতার ও ফতওয়ায়ে আলমগীরীর বরাত দিয়ে মাসবুক-এর নামায আদায় করা সম্পর্কিত যে মাসয়ালা প্রদান করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা সন্দিহান অর্থাৎ আমরা সংশয় ও সন্দেহের মধ্যে রয়েছি। সত্যিই কি উক্ত মাসয়ালা তাদের উল্লেখিত কিতাবদ্বয়ে এরূপরই রয়েছে? অথবা তারা মনগড়া দলীল দিয়েছে? এ বিষয়ে সঠিক ফায়সালা প্রদান করে আমাদের সন্দেহ ও সংশয় দূর করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াব : পটিয়া মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক আত-তাওহীদপত্রিকায় সে মাদ্রাসার ফতওয়া বিভাগ থেকে প্রকাশিত উক্ত মাসয়ালাটি সম্পূর্ণই অশুদ্ধ হয়েছে। আর উক্ত মাসয়ালার সপক্ষে দুররুল মুখতার ও ফতওয়ায়ে আলমগীরীর যে দলীল দেয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মিথ্যা দলীল দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। কারণ উক্ত কিতাবদ্বয়ে এরূপ কোন মাসয়ালা মোটেও উল্লেখ নেই।

বরং উক্ত কিতাবদ্বয়সহ সকল ফতওয়ার কিতাবেই উক্ত মাসয়ালাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে, যেমন ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে উল্লেখ আছে-

ولو ادرك ركعة من الرباعية فعليه ان يقضى ركعة يعرأ فيها الفا تحة والسورة ويتشهد ويقضى ركعة اخرى كذالك.

অর্থ : যদি (মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সহিত) চার রাকায়াত বিশিষ্ট নামাযের এক রাকায়াত পায়, তবে সে এক রাকায়াত সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়বে এবং বৈঠক দিয়ে) তাশাহ হুদ পড়বে। অতঃপর পরবর্তী এক রাকায়াত অনুরূপভাবেই (সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটিসূরা মিলিয়ে) আদায় করবে। অর্থাৎ বৈঠকের পর বাকী দুরাকায়াতের প্রথম রাকায়াতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা মিলিয়ে আদায় করবে।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জিলদ ৯১ পৃষ্ঠা)

আর দুররুল মুখতারকিতাবে উল্লেখ আছে,

فمدرك ركعة غير فجر يا تى بر كعتين بفا بحة وسورة وتشهد بينهما وبرابع الرباعى بفا تحة فقط.

অর্থ : অতঃপর (ইমামের সহিত) ফযর ব্যতীত অন্যান্য (অর্থাৎ যুহর, আছর, মাগরিব ও ইশা) নামাযের এক রাকায়াত প্রাপ্ত ব্যক্তি (ইমামের সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে) দুরাকায়াত নামায সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়বে এবং সে (তার) দুরাকায়াত নামাযের মধ্যে বৈঠক দিয়ে তাশাহহুদ পড়বে এবং (তার তৃতীয় রাকায়াত অর্থাৎ নামাযের) চতুর্থ রাকায়াতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহার সাথে নামায সমাপ্ত করবে।” (দুররুল মুখতার ১ম জিলদ ৫৯৬/৯৭ পৃষ্ঠা)

এবং কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

ولو ادركه فى ركعة الرباعى ..... ركعة بفاتحة وسورة وتشهد ثم ركعتين اولا هما بفا تحه وسورة وثا نيتهما بفاتحة خاصة.

অর্থ : যদি সে ইমামের সাথে চার রাকায়াত বিশিষ্ট নামাজের এক রাকায়াত পায়, ............. তাহলে (ইমামের সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে) এক রাকায়াত পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার সাথে অন্য একটি পবিত্র সূরা মিলিয়ে পড়বে এবং বৈঠক দিয়ে তাশাহুহুদ পড়বে। অতঃপর পরবর্তী দুরাকায়াত নামাযের প্রথম রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি পবিত্র সূরা মিলিয়ে পড়বে এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে (অর্থাৎ নামাযের চতুর্থ রাকায়াতে) শুধুমাত্র সূরা ফাতিহার সাথে নামায শেষ করবে।” (ফতওয়ায় শামী)

উপরোক্ত কিতাবদ্বয়ের এবারত দ্বারা এ কথাই সুষ্পষ্টভাবে সাবস্ত হলো যে, যে ব্যক্তি চার রাকায়াত নামাযে ইমামের পিছনে এক রাকায়াত পাবে, সে তার বাকী তিন রাকায়াত নামায আদায় করার সময় প্রথম ও দ্বিতীয় রাকায়াতে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার সাথে অন্য একটি পবিত্র সূরা মিলিয়ে আদায় করবে। তবে দুরাকায়াতের মধ্যখানে তাশাহুদ পাঠ করবে। আর তার তৃতীয় রাকায়াতে অর্থাৎ নামাযের চতুর্থ রাকায়াতে শুধুমাত্র পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করবে। অথচ মাসিক আত-তাওহীদপত্রিকায় বলা হয়েছে- বাকী তিন রাকাতের শুধুমাত্র প্রথম রাকাতে পবিত্র সূরা মিলাবে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতে সূরা মিলাবেনা। বরং মুধুমাত্র সূরা ফাতেহা পাঠ করে নামায সমাপ্ত করবে। যা কিনা সম্পূর্ণই ভুল ও উল্লেখিত কিতাবদ্বয়ের সত্যিকার বর্ণনার সম্পূর্ণ বিপরীত।

অতএব, উপরোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা দিবালোকের ন্যায় এ কথাই প্রমাণিত হ যে, মাসিক আত-তাওহীদপত্রিকার ফতওয়া বিভাগের কর্তৃপক্ষ, হয় তাদের অজ্ঞতা হেতু উক্ত কিতাবদ্বয়ের সঠিক অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়ে ভুল ফতওয়া প্রদান করেছে। নতুবা সাধারণ লোকদেরকে ধোকা বা প্রতারণা দেয়ার জন্য মিথ্যা দলীল পেশ করেছে। অথচ উল্লিখিত দুটির কোনটিই তাদের জন্য বৈধ হয়নি।

কারণ সাধারণ লোক তাদের কাছ থেকে নির্ভরযোগ্য ও সঠিক তথ্য জানার জন্যই সুওয়াল করে থাকে। সে ক্ষেত্রে যদি তারা বিনা তাহক্বীক্বে ভুল ফতওয়া প্রদান করে অথবা সাধারণ লোকদেরকে ধোকা দেয়ার জন্য মিথ্যা দলীল পেশ করে, তবে তা কি করে জায়িয হতে পারে? যেহেতু তাদের ভুল ফতওয়ার কারণে তারা  নিজেরা তো বটেই সাথে সাধারণ লোকেরাও গুমরাহীতে নিপতিত হয়।

যে প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

من افتى بغير علم كان اثمه على من افتاه.

অর্থ : যে ব্যক্তিকে ইলম ব্যতীত বা বিনা তাহক্বীক্বে ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদানুযায়ী আমল করেছে, তার পাপ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে তার উপরেই পড়বে।” (আবূ দাউদ শরীফ)

সুতরাং মাসিক আত-তাওহীদপত্রিকার কতৃপক্ষের উচিত, পরবর্তী সংখ্যায় নিজেদের ভুল স্বীকার করে উক্ত মাসয়ালাটির ভুল সংশোধনী দেয়া। আর যদি তারা সাধারণ লোকদের ধোকা দেয়ার উদ্দেশ্যে মিথ্যা দলীল পেশ করে থাকে, তবে তাদের এর থেকে খালেস তওবা করা উচিত। সাথে সাথে প্রতিটি মাসয়ালা ভালরূপে তাহক্বীক্ব করে নির্ভরযোগ্য দলীলের মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত। তবেই হক্ব মত ও হক্ব পথে ক্বায়িম থাকা সম্ভব, অন্যথায় নয়।

আাবা-৩৯

0 Comments: