১৫৬ নং- সুওয়াল : হরতাল শব্দের অর্থ কি? সর্বপ্রথম কোথায় হরতাল হয় এবং কে করে? তার ইতিহাস কি?আমাদের দেশে যে হরতাল করা হয়, তা শরীয়ত সম্মত কি?


সুওয়াল : হরতাল শব্দের অর্থ কি? সর্বপ্রথম কোথায় হরতাল হয় এবং কে করে? তার ইতিহাস কি?
          আমাদের দেশে যে হরতাল করা হয়, তা শরীয়ত সম্মত কি? যা সাধারণ রাজনৈতিক দল করে থাকে। আবার যারা ইসলামী দল হিসাবে রাজনীতি করে, তারাও ইসলামের পক্ষ হরতাল করে থাকে, তা কি জায়েয, না নাজায়েয বিস্তারিত দলীল-আদীল্লাহসহ জানায়ে বাধিত করবেন?
জাওয়াব : হরতাল শব্দের অর্থ বিশৃঙ্খলা, অত্যাচার, স্বেচ্ছাচার, অবাধ্যতা, অরাজকতা, প্রতিবন্ধকতা, প্রতিরোধ ইত্যাদি।
          হরতালের ব্যাখ্যায় বলা হয়, বিক্ষোভ প্রকাশের জন্য যানবাহন, হাটবাজার, দোকানপাট, অফিস-আদালত ইত্যাদি করা।
          হরতাল গুজরাটি শব্দ। হরঅর্থ- প্রত্যেক। তালাঅর্থ তালা। অর্থাৎ প্রতি দরজায় তালা।
          মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীনকাল হতেই দাবী আদায়ের কৌশল হিসেবে নানা প্রকার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যেমন- আমেরিকার ফিলাডেলফিয়াতে ১৭৮৬ সালে ছাপাখানার কর্মচারীরা, জার্মানে ১৯২০ সালে রাজনৈতিক কারণে, বৃটেনে ১৯২৬ সালে কয়লা শ্রমিকরা, এছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকার নানা স্থানে বিভিন্নগোষ্ঠী তাদের দাবী আদায় করার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করেছিল, তার নাম দেওয়া হয়েছে স্ট্রাইক।
          ভারত উপমহাদেশে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, বৃটিশদের রাউলাট আইন বাতিল করার জন্য তার প্রতিবাদে যে পদ্ধতি অবলম্বন করে, তার নাম দেয়া হয় হরতাল। এই হরতাল পালিত হওয়ার কথা ছিল ১৯১৮ সালের ৩০শে মার্চ। পরে এই তারিখ পিছিয়ে ৬ই এপ্রিল করা হয়। ফলে কোন স্থানে ৩০শে মার্চ আবার কোন স্থানে ৬ই এপ্রিল সব?প্রথম হরতাল পালিত হয়।
          বলাবাহুল্য, হরতাল গুজরাটি শব্দ। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু, সে দাবী আদায়ের পদ্ধতির নামকরণ করে হরতাল।
          মূলতঃ স্ট্রাইক শব্দের প্রবর্তক হলো- ইহুদী-নাছারা। আর হরতাল শব্দের প্রবর্তক হলো- মুশরিক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। আমাদের দেশে যে হরতাল করা হয়, তা ইসলামী শরীয়ত সম্মত নয়।
এ হরতাল নাজায়েয, হারাম। ইসলামী দল বা অনৈসলামী দল অর্থাৎ যে কোন দলই হোক না কেন, তারা যদি গণতন্ত্রের নামেই হোক আর ইসলামের নামেই হোক, হরতাল আহ্বান করে, তবে তা ইসলামী শরীয়ত সম্মত হবে না। হরতাল গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিক্ষোভ প্রকাশের একটি প্রক্রিয়া বিশেষ।
হরতাল হারাম হওয়ার উৎস ও কারণ হলো :
(১) বিজাতীয়দের উদ্ভাবিত পন্থা।
(২) জন-জীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি।
(৩) জান-মালের ক্ষতি।
(৪) একজনের অন্যায়ের শাস্তি অন্যকে দেয়া।
(৫) হারাম পন্থায় ইসলাম কায়েমের চেষ্টা।
(১) বিজাতীয়দের উদ্ভাবিত পন্থাঃ- হরতাল হচ্ছে ইসলামী রীতিনীতি বর্হিভূত বিজাতীয় ধ্যান-ধারণা ও অপকৌশল। যাতে শান্তি তো না-ই বরং অশান্তির পথকে প্রশস্ত করে। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ধর্ম। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআনুল করীমে ইরশাদ মুবারক করেন,   
ان الذين عند الله الاسلام
অর্থঃ- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনিত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। (পবিত্র আল ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن يبغ غير الاسلام ذينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخاسرين.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
          মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
ولن ترضى عنك اليهود ولا النصرى حتى تتبغ ملتهم قل ان هدى الله هو الهدى ولئن اتبعت اهواء بعد الذى جائك من العلم مالك من الله من ولى ولانصير.
অর্থঃ- ইহুদী ও নাছারারা কখনোই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, আপনি তাদের ধর্মের (নিয়ম-নীতির) যতক্ষণ পর্যন্ত অনুসরণ না করবেন। বলে দিন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়াত।
          আপনার কাছে সত্য ইলম (অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম আসার পরও যদি আপনি তাদের নফসের বা মনগড়া নিয়মনীতির অনুসরণ করেন, তবে আপনার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কোন অভিভাবক বা সাহায্যকারী নাই বা পাবেন না।
          উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ অনুযায়ী আমাদের কোন আমল করতে হলে, বিধর্মীও বিজাতীয় কোন পন্থা অনুসরণ করা যাবে না। বা তাদের থেকে কোন নিয়মনীতি গ্রহণ করা যাবেনা। শুধুমাত্র পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وعن جابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال: انا نسمغ احاديث من يهود تعجبا افرى ان نكتب بعضه فقال: امتهو كون انتم كما تهو كت اليهود والنصرى لقد جنتكم بها بيضاء نقية، ولو كان موسى حياما وسعه الا اتباعى.
অর্থঃ- হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর ইবনে খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, (ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্য্যবোধ করি, ওটার কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদন্দ্বে রয়েছো? যে রকম ইহুদী-নাছারারা দ্বিধাদন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূণ? উজ্জ্বল ও পরিস্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তিনিও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে উনাকেও আমার অনুসরণ করতে হতো। (মুসনদে আহমদ, বায়হাক্বী)
          সুতরাং উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে বুঝা গেল যে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ ছাড়া অন্য কোন বিজাতীয় পন্থার অনুসরণ করা হারাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يايها الذين امنوا لا تتخذوا اليهود والنصارى اولياء بعضهم اولياء بعض- ومن يتو لهم منكم فانه منهم.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্য করবে, সে তাদেরই দলভূক্ত হবে। (পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ, ৫১ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
          ইহুদী, হিন্দু, খৃষ্টান, বা অন্যান্য বিধর্মীদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা, এর অর্থ হলো- তাদের রীতি নীতির অনুসরণ না করা, তারা যেভাবে দাবি আদায় করে, সেভাবে দাবী আদায় না করা, তারা হরতাল করে মানুষকে কষ্ট দেয়, জান-মালের ক্ষতি করে, তারা লংমার্চ করে, ছবি তোলে, এ সমস্ত হারাম কাজ না করা, কারণ এগুলো মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশিত পথ নয়। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
عن عبد الله ين عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। (মুসনদে আহমদ শরীফ, সুনানে আবূ দাউদ শরীফ)
          এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত ঘটনা উল্লেখ করা যায়- হিন্দুস্থানে মহান আল্লাহ পাক উনার একজন জবরদস্ত ওলী ছিলেন। উনার ইন্তেকালের পর অন্য একজন বুজুর্গ ব্যক্তি তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ পাক উনার ওলী, আপনি কেমন আছেন? তখন সেই আল্লাহ পাক উনার ওলী জাওয়াবে বললেন, “আপাতত আমি ভালই আছি কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার ইন্তেকালের পর আমাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনারা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মুখে পেশ করেন। মহান আল্লাহ পাক  ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বলেন, “হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম! আপনারা তাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনারা বললেন, আয় আল্লাহ পাক‍! আমরা উনাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য নিয়ে এসেছি। এ কথা শ্রবণ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেননা সে পূঁজা করেছে।” এ কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগল। তখন আমি আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু পেশ করলাম, “আয় আল্লাহ পাক‍! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময় আপনার এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং পুঁজা করাতো দূরের কথা মন্দিরের নিকটবর্তীও কখনো যাইনি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “তুমি সেইদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূঁজা হচ্ছিল। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রঙ দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ যাচ্ছিল যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙীন রস নিশ্চুপ করে বলেছিলে- হে গর্দভ তোমাকে তো কেউ রঙ দেয়নি, এই হোলি পূঁজার দিনে আমি তোমাকে রঙ দিয়ে দিলাম। এটা কি তোমার পূঁজা করা হয়নি? তুমি কি জান না-
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভূক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।
          সুতরাং তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে।
          যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এই কথা বললেন, তখন আমি লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে বললাম, “আয় আল্লাহ পাক! আমি এটা বুঝতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “হ্যাঁ তোমাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হয়েছে।
          বনী ইসরাঈল আমলের অনুরূপ আরও একটি ওয়াকেয়া তফসীরে উল্লেখ করা হয়। মহান আল্লাহ পাক হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস সালাম উনার উপর ওহী নাযিল করলেন, হে আমার নবী! আপনার উম্মতের মধ্যে এক লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধে ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত (গুমরাহ)। তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “আয় আল্লাহ পাক! ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে কিন্তু বাকী ৪০ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “যেহেতু তারা ঐ গুণাহে লিপ্ত লোকদের সাথে মিলা-মিশা ও ওঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে আর গুণাহের কাজে বাধা দেয় না, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে।
          উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং তার ব্যাখ্যা মুবারক দ্বারা এটাই সাবেত হলো যে, বিজাতীয় বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক ও সীরত-সূরত কোনটাই অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। যদি কেউ করে তবে তার থেকে সেটা মহান আল্লাহ পাক গ্রহণ করবেন না বা কোন সওয়াবও দেবেন না এবং মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কোন মদদ পাবেনা। যার ফলে সে ইহকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পরকালেও তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে যাদেরকে সে অনুসরণ করত। কাজেই হরতাল কোনমতেই জায়েয নেই।
(২) জনজীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে : হরতাল হারাম হওয়ার আর একটি কারণ হলো- এতে মানুষের স্বাভাবিক কাজ-কর্মকে ব্যহত করে, জনজীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ولاتفسدوا فى الارض.
অর্থঃ- তোমরা যমীনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করোনা।?
          মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন,
الفتنة اشد من القتل.
অর্থঃ- ফিৎনা-ফাসাদ কতলের চেয়েও খারাপ।?
          হরতালের ফলে যারা দিন-মজুর, রোজ কামাই করে রোজ খায়, তাদের কষ্ট হয়। মুমিন মুসলমান না নিরাপদ থাকে, না শান্তিতে থাকে। বরং কষ্টে দিনাতিপাত করে, রোগিদের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে যায়। অথচ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ايذاء المسلم كفر.
অর্থঃ- কোন মুসলমানকে কষ্ট দেয়া কুফরী।?
          হরতাল এক ধরণের জুলুম, যা শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই নয় বরং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও হয়।
          মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
والله لا يحب الظا لمين.
অর্থঃ- মহান আল্লাহ পাক জালিমদেরকে পছন্দ করেন না।” (পবিত্র সূরা আল্ ইমরান, পবিত্র আয়াত  শরীফ-৫৭)
          এ পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন,
لا تظلمون ولا تظلمون.
অর্থঃ- তোমরা অত্যাচার করোনা এবং অত্যাচারিত হইওনা। (পবিত্র সূরা আল ইমরান, পবিত্র আয়াত শরীফ-১৪০)
          যে সমস্ত জালিমরা গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ়, তাদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
والله لا يهدى القوم الظالمين.
অর্থঃ- আর মহান আল্লাহ পাক তিনি জালিমদেরকে হিদায়াত দেন না। (পবিত্র সূলা আল্ ইমরান, পবিত্র  আয়াত শরীফ ৮৬)
          অর্থাৎ যে সমস্ত জালিম সম্প্রদায় তাদের জুলুমের মধ্যে দৃঢ় থাকে, তারা কখনো মহান আল্লাহ পাক উনার হিদায়েত লাভ করতে পারবে না।
          মূলতঃ হরতাল আর জুলুম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজেই যেখানে হরতাল হবে, সেখানেই জুলুম হবে। জুলুম ব্যতীত কোন হরতাল সংঘটিত হতে পারে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে জুলুম করতে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করেছেন। অতএব, হরতাল করা জায়েয নেই, তা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
(৩) জান-মালের ক্ষতি :- হরতালের ফলে জান-মালের ক্ষতি হয়। মানুষের সম্পদের ক্ষতি হয়, গাড়ী ভাংচুর করা হয়, গরীব সাধারণের আয়ের সম্বল রিক্সা ভেঙ্গে দিয়ে আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। হরতালের ফলে হতাহতও সংঘটিত হয়ে থাকে। যাদের হরতাল ডাকার কারণে এ সমস্ত নিহত-আহত হবে, তারাই হত্যাকারী হিসেবে সাবস্তও দায়ী হবে।
           পবিত্র কুরআনুল করীম উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
ومن يقتل مؤمنا متعمدا فجزاؤه جهنم خالدا فيها.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই চিরকাল থাকবে।” (পবিত্র সুরা আন নিসা, পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৩)
          আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
سباب المسلم فسق قاله كفر.
অর্থঃ- কোন মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসিকী, আর কতল করা কুফরী।(বুখারী শরীফ)
          বিদায় হজ্বের খুৎবায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
فان د مائكم واموالكم واعضاء منكم بينكم حرام.
অর্থঃ- একজনের জান-মাল, সম্পদ, অন্যজনের জন্য হারাম।
          এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ان الله اشترى من الؤمنين انفسهم واموالهم بان لهم الجنة.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের নিকট থেকে জান ও মালকে বেহেশতের বিণিময়ে খরিদ করেছেন।” (পবিত্র সূরা তওবা  শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)
          হরতালকারীরা স্বাভাবিক কাজ-কর্মে বাঁধা দেযার জন্য স্থানে স্থানে এক হয়ে যে পদক্ষেপ নেয়, (যেমন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, চড়াও ইত্যাদি) তাকে পিকেটিং বলা হয়ে থাকে। ১৮৫৯ সালে গ্রেট বৃটেনে পিকেটিং প্রথার প্রবর্তন হয়। যদিও তখনকার পিকেটিংকে শান্তিপূর্ণ পিকেটিং বলে অভিহিত করা হয়। মূলতঃ এটা খৃষ্টানদের প্রথা, তাই পিকেটিং করাও জুলুম করার শামিল, যা সম্পূর্ণ হারাম এবং বিজাতীয় পদ্ধতি বা প্রথা।
          সুতরাং হরতালের মাধ্যমে জান ও মালের ক্ষতি করা সম্পূর্ণ হারাম। হরতালের দ্বারা ব্যক্তিগত জান-মালের ক্ষতি তো হয়ই বরং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও ঘটে। কাজেই হরতাল করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয ও হারাম।
(৪) একজনের অন্যায়ের শাস্তি অন্যকে দেয়াঃ- মূলতঃ হরতাল যে কারণে করা হয়, অর্থাৎ অপরাধীকে শাস্তি দেয়া তা মোটেই হয়না। অপরাধী অর্থনৈতিক ও মানবিক সব দিক থেকেই বহাল তবিয়তে অবস্থান করে থাকে। কিন্তু শাস্তি ভোগ করে জনসাধারণ, যারা অপরাধী নয়। অথচ হরতালের ফলে একজনের অপরাধের শাস্তি অন্যজনকে চাপিয়ে দেয়া হয়, এটা দ্বীন ইসলাম উনার বিধান নয়। বরং মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক হলো,
ولا تزر وازرة وزراخرى.
অর্থঃ- একজনের গুণাহের বোঝা অন্যজন বহন করবে না।” (পবিত্র সূরা আন্আম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)
          অর্থাৎ একজনের অপরাধের শাস্তি আরেকজনকে দেয়া যাবেনা, যা মূলতঃ নিষেধ। কাজেই ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হরতাল সম্পূর্ণ হারাম।
(৫) হারাম পন্থায় ইসলাম কায়েমের চেষ্টাঃ- হারাম উপায়ে ইসলাম প্রচারের কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র ফিক্বাহ শরীফ উনাদের কিতাবের কোথাও নেই। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচার করতে হলে মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান অনুযায়ী করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক কুরআনুল করীমে ইরশাদ মুবারক করেন,
وان احكم بينهم بما انزل الله ولا تتبغ اهواء هم.
অর্থঃ- তারা আপনার নিকট কোন মোকদ্দমা নিয়ে আসলে, তার ফয়সালা শরীয়ত অনুযায়ী করুন। আর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।?
          এ পবিত্র আয়াত শরীফ হতে বুঝা যায় যে, সর্ববিধক ক্ষেত্রেই মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করতে হবে। আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান অনুযায়ী চলবেনা, তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ومن لم يحكم بما انزل الله فاولشك هم الظالمون.
অর্থঃ- মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন, তদনুযায়ী যারা ফয়সালা করেনা, তারাই কাফির।”
          অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে যারা মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালা করেনা, তাদেরকে ফাসেক, জালিম ইত্যাদি বলা হয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি হারামকে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وقد فصل لكم ما حرم عليكم.
অর্থঃ- তোমাদের প্রতি যা হারাম করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১২০)
          আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনা‌র তাফসীর মুবারক উনার মধ্যে বলেন,
الحلال بين والحرام بين وبينهما مشتبهات.
অর্থঃ- হালাল সুস্পষ্ট হারামও সুস্পষ্ট। এর মাঝে কিছু জিনিস আছে, যা সন্দেহজনক।
অনুরূপভাবে ভিন্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে,
  الحلالبين والحرام بين دع ما ير يبك الى مالا يربيك.
অর্থঃ- হালাম স্পষ্ট এবং হারাম স্পষ্ট। যা সন্দেহজনক, তা ছেড়ে দাও। যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই, সেদিকে ধাবিত হও। (বুখারী শরীফ)
          এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা এটাই প্রতিয়মান হয় যে, যা হারাম তাতো অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। আর যা সন্দেহজনক, তা থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী শরীয়ত উনার উসুল হলো-
ماادى الى الحرام فهو حرام.
 অর্থঃ- যা হারামের দিকে নিয়ে যায়, তাও হারাম।
          কাজেই যে সমস্ত কাজ মানুষকে হারামের দিকে নিয়ে যায়, তা পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। আর ছবি তোলা, গণতন্ত্র, লংমার্চ কুশপুত্তলিকা দাহ, হরতাল ইত্যাদি স্পষ্ট হারাম, তা অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। তাই সকলকে অনুসরণ করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يايها الذين امنوا الطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم.
অর্থঃ- হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ইত্বয়াত কর ও রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও ইত্বায়াত কর। আর উলীল আমর উনাদের অনুসরণ করো।
          আর নিষেধ করেছেন ঐ সমস্ত লোকদেরকে অনুসরণ করতে, যাদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন,
ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذ كرنا واتبغ هواه وكان امره قرطا.
অর্থঃ- ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা, যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফেল ও যে প্রবৃত্তির (নফসের) অনুসরণ করে এবং যার কাজসমূহ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ। (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
والذى خبث لا يخرج الانكدا.
অর্থঃ- যা নাপাক বা অপিবত্র, তা থেকে খারাপ ব্যতীত কিছুই বের হয়না।” (পবিত্র সূরা আরাফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
          উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- প্রস্রাব দ্বারা কাপড় ধুলে কাপড় পরিস্কার হবে ঠিকই, কারণ তাতে এসিড রয়েছে কিন্তু পাক হবেনা। কাজেই বাহ্যিকভাবে কোন জিনিসের মধ্যে যদিও ফায়দা দেখা যায় কিন্তু তা যদি ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ হবেনা। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يسئلونك عن الخمر والميسر قل فيهما اثم كبير ومنا فغ للناس واثمهما اكبر من نفعهما.
অর্থঃ- হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, মদ ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন, মদ ও জুয়ার মধ্যে মানুষের জন্য ফায়দা রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ই বড়, কাজেই এগুলি হারাম। (পবিত্র আল বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
          এখানে লক্ষ্যনীয় যে, মহান আল্লাহ পাক নিজেই বলেছেন যে, মদ ও জুয়ার মধ্যে ফায়দা রয়েছে। মদ পান করলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, জুয়া খেললে রাতারাতি অনেক টাকা পাওয়া যায়। তথাপি এগুলোর মধ্যে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ বেশী বলে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। অনুরূপভাবে হরতাল, লংমার্চ ছবি তোলা, গণতন্ত্র করা ও হারাম পন্থায় ইসলাম কায়েমের চেষ্টার মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে যদিও ফায়দা দেখা যায়, কিন্তু তা মদ ও জুয়ার মত মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের খিলাফ হওয়ার কারণে এ সমস্ত কার্যকলাপ হারাম। তাই বিনা তাহক্বীকে কোন কাজ করা যাবেনা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ولا تقولوا لما تضف السنتكم الكذب هذا حلال وهذا حرام لتفتروا على الله الكذب ان الذين يفترون على الله الكذب لا يفلحون.
অর্থঃ- তোমাদের নিকট যা আছে, তাকে তোমরা মিছামিছি এটা হালাল, এটা হারাম বলে অভিহিত করোনা। এতে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রতি তোমাদের মিথ্যা অপবাদ দেয়া হবে। নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তারা কখনই সফলকাম হয়না। (পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৬)
          অতএব, হরতাল করলে বিজাতীয়দের অনুসরণ করা হয়, জনজীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, জান-মালের ক্ষতি হয়। একজনের শাস্তি অন্যজনের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় এবং হারাম উপায়ে ইসলাম কায়েমের কোশেশ করা হয়, তাই ইত্যাদি কারণে হরতাল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة- ولا تتبعوا خظوت الشيطان. انه لكم عدو مبين.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
          কোন কোন তাফসীরকারক, এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার ক্ষেত্রে একটা ঘটনার উল্লেখ করেন। একদা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবারে বসা ছিলেন। এমন সময় উটের গোশতসহ কিছু খাদ্য হাজির করা হলো। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন যে, তিনি পূর্বে ইহুদী পন্ডিত ছিলেন এবং সেই ধর্মে উটের গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ বিধায় তিনি তা গ্রহণ করতেন না। কাজেই এখনো তিনি উটের গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকাতে চান। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চুপ করে থাকলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার বিধানের অপেক্ষায় রইলেন। কেননা,
وما ينطق عن الهوى. ان هو الا وحى يوحى.
অর্থঃ- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেন না। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন।
          এখানে লক্ষ্যনীয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উটের গোশত খাওয়াকে হারাম মনে করতেন না বরং হালালই জানতেন, শুধু পূর্বঅনভ্যাস হেতু খাওয়া হতে বিরত থাকার আবদার জানালেন, তাতেই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন, (তোমরা যখন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে দাখিল হয়েছোই) তোমরা পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও।
কাজেই আজকাল যারা হারাম কাজে তথা ছবি তোলা, লংমার্চ করা, অনৈসলামিক পন্থায় গণতন্ত্র করা, কুশপুত্তলিকা দাহ্, মেয়েদের মিছিল ও হরতালের মত জঘণ্য হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ভিতরে কতটুকু রয়েছে, আর কতটুকু দ্বীন ইসলাম থেকে থেকে দূরে সরে গেছে, তা ভাববার বিষয়!
অথচ প্রত্যেক জাতি তার স্বাতন্ত্রবোধ ও কৃষ্টি-কালচার বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট। যেমন গান্ধী, সে হিন্দুয়ানী কৃষ্টি-কালচার বজায় রাখার জন্য স্ট্রাইককে হরতাল নামে রূপান্তরিত করে। অথচ আজকাল কিছু কিছু মুসলমান তাদের নিজস্ব স্বাতন্ত্রবোধ, কৃষ্টি-কালচার সব কিছু বিসর্জন দিয়ে, কট্টর মুসলমান বিদ্বেষী হিন্দু মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নীতি বাস্তবায়নে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে, আত্মতৃপ্তি বোধ করছে। এ আত্মতৃপ্তিবোধের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে আবার মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়াও আদায় করছে। অথচ আক্বায়ীদের কিতাবে উল্লেখ আছে, হারাম কাজে শুকরিয়া আদায় করা কুফরী।
‌‌‌‌          (বিঃ দ্রঃ- স্থান সঙ্কুলানের অভাবে সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়া হলো। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরো অনেক দলীল-আদীল্লাসহ জবাব দেয়ার আশা রাখি ইনশাআল্লাহ )
আবা-১৬

0 Comments: