১৬২ নং- সুওয়াল : জঈফ হাদীছ কি আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য সিহাহ্ সিত্তার মধ্যে কি কোন জঈফ হাদীছ শরীফ রয়েছে?


সুওয়াল : জঈফ হাদীছ কি আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য সিহাহ্ সিত্তার মধ্যে কি কোন জঈফ হাদীছ শরীফ রয়েছে?
জাওয়াব: জঈফ হাদীছ শরীফ আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য। মূলতঃ কোন হাদীছ শরীফই জঈফ নয়, অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন কথাই জঈফ নয়। বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবীদের জুফতের কারণেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে জঈফ বলা হয়। আর এ জঈফ হাদীছ শরীফ আমলের জন্য অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে ইমাম উনাদের অভিমত ব্যক্ত করা হলো-
বিখ্যাত ফক্বিহ্ ইমাম কামালুদ্দিন মুহম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহেদ বিন হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
الضعيف غير المو ضوع يعمل به فى فضائل الاعمال.
অর্থঃ- মওযু নয়, এরূপ জঈফ হাদীছ শরীফ ফযীলতের আমলসমূহের জন্য গ্রহণযোগ্য।(ফতহুল ক্বাদীর)
          বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বিহ্ আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
الضعيف يعمل به فى فضائل الاعمال انفافا.
অর্থঃ- সকলের ঐক্যমতে জঈফ হাদীছ শরীফ ফযীলতের জন্য আমলসমূহে গ্রহণীয়।(মওজুআতুল কবীর-১০৮)  
          তবে এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কথা হলো- কোন জঈফ হাদীছ শরীফ যদি বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণনা করা হয়, তাহলে তা হাসান লি গায়রিহীর দরজায় পৌঁছে যায় এবং সেটা তখন আহ্কাম ও আক্বায়িদের দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে।
          আল্লামা সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন,
ويعمل بالضعيف ايضا فى الاحكام اذا كان به احتياط.
অর্থঃ- জঈফ হাদীছ শরীফ আহ্কামের জন্য গ্রহণযোগ্য যখন তাতে সাবধানতা অবলম্বন করা হবে অর্থাৎ যখন হাসান লি গায়রিহী হবে।(তাদরিবুর রাবী ১ম জিঃ পৃঃ ২৯৯)
          উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, জঈফ হাদীছ শরীফ ফযীলত হাসিলের জন্য আমল করা শুধু জায়েযই নয়, বরং হাসান লি গায়রিহী হলে আহ্কামের ব্যাপারেও গ্রহণযোগ্য হয়।
          ইমামগণ উনাদের রায় হলো- সিহাহ্ সিত্তার সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সহীহ্ নয়। বরং সেখানে জঈফ হাদীছ শরীফও রয়েছে। এমন কোন হাদীছ শরীফ উনার কিতাব নেই, যে কিতাবের সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সমস্ত মুহাদ্দিসগণ একমত হয়েছেন। কোন একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে একজন সহীহ বলেছেন, অন্যজন সেটাকে জঈফ বলেছেন। যেমন- হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুসলীম  রহমতুল্লাহি আলাইহি এমন বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে সহীহ্ নয় বলে ছেড়ে দিয়েছেন, অথচ হযরত ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইবনে মাযাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম দারুকুত্বনী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ ইমামগণ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে সহীহ বলে গ্রহণ করেছেন। (সায়েকাতুল মুসলিমীন)
          অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছে, যা অন্যান্য ইমামগণ জঈফ মনে করে ত্যাগ করেছেন। অথচ হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তা সহীহ্ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
          হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “হযরত ইমাম সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি আনদিয়া কিতাবের হাশিয়ায় উল্লেখ করেছেন- সহীহ বোখারীর ৮০ জন ও সহীহ মুসলীমের ১৬০ জন রাবীর বর্ণনাকৃত হাদীছ শরীফ জঈফ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।” (নুজহাতুন নাজ্জার)
          হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “ইমাম দারুকুত্বনী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম আবূ দাউদ দামেশকী রহমতুল্লাহি আলাইহি বুখারী ও মুসলীম শরীফ উনার ২০০টি হাদীছ শরীফকে জঈফ বলে উল্লেখ করেছেন।” (মুকাদ্দিমায়ে শরহে মুসলীম)
          ইমাম কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে এরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছে, যা কারো মতে সহীহ আর আরো মতে জঈফ।(শরহে বুখারী)
          কাশফুজ্জুনুন, মুকাদ্দিমায়ে ফতহুল বারী ইত্যাদি কিতাবে বোখারী শরীফের কিছু কিছু হাদীছ শরীফকে জঈফ বলা হয়েছে। সহীহ বুখারী ও মুসলীম শরীফে ২০ জন জাবারিয়াহ্, ২৩ জন ক্বদরিয়াহ্, ২ ৮জন শিয়া, ৪ জন রাফেজী, ৯ জন খারেজী, ৭ জন নাসেবী ও ১ জন জহমিয়াহ্ কর্তৃক হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। (সায়েকাতুল মুসলিমীন)
          এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত সহীহ্ হাদীছ শরীফ উনার কিতাবেই (কারো কারো মতে) কিছু সংখ্যক জঈফ হাদীছ শরীফ রয়েছে। সুতরাং এটাও প্রমাণিত হলো যে, জঈফ হাদীছ শরীফ মাত্রই পরিত্যাজ?বা বাতিল নয়।
লক্ষ্যনীয় যে, সিহাহ্ সিত্তার সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফই সহীহ নয়, তবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্যান্য কিতাবের তুলনায় উক্ত ছয়টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে সহীহ্ হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা তুলনামূলক বেশী, ফলে এ সমস্ত কিতাবকে বিশুদ্ধ ছয়টি হাদীছ শরীফ উনার কিতাব বলা হয়।
আরো উল্লেখ্য যে, উক্ত সিহাহ্ সিত্তার কিতাবের ক্ষেত্রেও ইখতিলাফ রয়েছে। উক্ত ছয়টি কিতাবই যে সিহাহ্ সিত্তার অন্তর্ভূক্ত, তা নয়। যেমন কেউ কেউ ইবনে মাযাহেক বাদ দিয়ে মুয়াত্তা ইমাম মালিককে সিহাহ্ সিত্তার অন্তর্ভূক্ত করেছেন। আবার অনেকে ইবনে মাযাহ পরিবর্তে দারুকুত্বনীকে সিহাহ্ সিত্তাহ্ বলেছেন।

আবা-১৬

0 Comments: