১৩১ নং- সুওয়াল : সম্প্রতি “মাসিক হক পয়গাম” পত্রিকার ফেব্রুয়ারী-৯৪, ২য় সংখ্যায় হাফিয সাহেবদের জন্য খতমে কুরআন পড়ে উজরত (পারিশ্রমিক) নেয়া জায়েয নয় বলা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে ইমদাদুল ফতওয়া, আহ্সানুল ফতওয়া ও ইমদাদুল মুফতিয়ীন কিতাবের হাওলা দেয়া হয়েছে। আবার অন্যান্য কিতাবে জায়েয বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে সঠিক মতটি জানালে কৃতজ্ঞ হবো?


সুওয়াল : সম্প্রতি মাসিক হক পয়গামপত্রিকার ফেব্রুয়ারী-৯৪, ২য় সংখ্যায় হাফিয সাহেবদের জন্য খতমে কুরআন পড়ে উজরত (পারিশ্রমিক) নেয়া জায়েয নয় বলা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে ইমদাদুল ফতওয়া, আহ্সানুল ফতওয়া ও ইমদাদুল মুফতিয়ীন কিতাবের হাওলা দেয়া হয়েছে। আবার অন্যান্য কিতাবে জায়েয বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে সঠিক মতটি জানালে কৃতজ্ঞ হবো?
জাওয়াব : যিনি কুরআন মজিদ খতম করবেন, উনাকে যদি স্থান ও সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়, তাহলে এর বিণিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয আছে। নির্ভরযোগ্য ফিক্বহের কিতাবে এ ব্যাপারে দুটি মত পরিলক্ষিত হয়।
(১) ওলামায়ে মুতাকাদ্দিমীন, (২) ওলামায়ে মুতাআখখিরীন।         
ওলামায়ে মুতাকাদ্দিমীনগণের মত হলো- ইমামতি, মুয়াজ্জিনী, ওয়াজ করে, পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে, মাদ্রাসায় পড়ায়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয নয়।
আর, ওলামায়ে মুতাআখখিরীনগণের মতে এ সমস্তের বিণিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয। মুতাকাদ্দিমীন বলতে চার মাযহাবের ইমামগণ, ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবু ইউসুফ  রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম যোফার রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সমসাময়িক ইমামগণকে বুঝায়। এরপর থেকে সকলেই ওলামায়ে মুতাআখখিরীনের অন্তর্ভূক্ত। ইমামগণের রায় মোতাবেক হিজরী তৃতীয় শতক হতেই মুতাআখখেরীন ইমাম ও ওলামাগণের ধারা শুরু হয়েছে, ইমাম কারখী, ইমাম কুদুরী, কাজীখান, শামসুল আয়েম্মা হালওয়ায়ী, শামসুল আয়েম্মা সুরুখসী, আবুল লাইস সমরকন্দি, হেদায়ার মুছান্নেফ প্রত্যেকেই ওলামায়ে মুতাআখখেরীনের অন্তর্ভূক্ত।
 জওহারাতুন নাইয়ারাহ কিতাবের লিখক আছহাবে তারজিহ অন্তর্ভূক্ত। তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করাকে জায়েয বলেছেন, এছাড়া বাহরুর রায়েক, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, মাদারেজুন নুবুওওত কিতাবে কুরআন শরীফ খতম করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয বলা হয়েছে। আল্লামা ইবনে নাজিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বাহরোর কিতাবে বলেন,
ان المفتى به جواز الدخذ على القرأة
 পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ে বেতন গ্রহণ করা জায়েয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত
আলমগীরী কিতাবে আছে,
اختلقوا فى الدستيجار على قراة القران عند القبر مدة معلومة قال بعضهم يجوز وهو المفتاركذ فى سراج الوهاج)
 কোন নির্দ্দিষ্ট সময়ে কবরের নিকট কুরআন শরীফ পড়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে আলেমগণের মধ্যে মতানৈক্য আছে, কতক বলেছেন এটা জায়েয, আর এটাই ফতওয়া গ্রাহ্য মত। সিরাজুল ওহ্হাজ কিতাবেও অনুরূপ মত রয়েছে উক্ত আলমগীরী কিতাব যা প্রায় সাতশত মুহাক্কিক আলেম মিলে লিখেছেন এবং বাহরোর রায়েক, জওহারাতুন নাইয়ারাহ্ মাদারেজুন নবুওওত, ফতওয়া আযীযী ইত্যাদি কিতাবের বিপক্ষে ইমদাদুল ফতওয়া, ইমদাদুল মুফতিয়ীন ও আহ্সানুল ফতওয়ার কিতাব ও এর মুছান্নিফগণ দলীল হতে পারেন না। এদের কোন কওল তারজীহ প্রাপ্ত নয়। বরং বাহরোর রায়েক, জওহারাতুন নাইয়ারাহ্, কাজীখান, হেদায়া এ সমস্ত কিতাব তারজিহ প্রাপ্ত। এ সমস্ত কিতাবের বিপক্ষে মত পোষণ করে অন্য কোন কিতাবের দলীল দিলে তা গ্রহণযোগ্য নহে।       স্থান ও সময় নির্ধারণ করে দিয়ে কুরআন শরীফ খতম বা তারাবীহ্ নামাযে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে বেতন গ্রহণ করা জায়েয প্রসঙ্গে আরো যে সমস্ত কিতাব লক্ষ্যণীয় তাহলো-
(১) দুররুল মুখতার, (২) আল আশবাহ্ ওয়ান নাযায়ের, (৩) মাজমাউল বিহার, (৪) শরহে আহবানিয়া, (৫) ফাতাওয়া কাজরুনী, (৬) ফাতাওয়া আলী আফেন্দী, (৭) ফাতাওয়া ফয়জী, (৮) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (৯) রোবউল ইফাদা, (১০) ইয়াতীমাতুত দোহর, (১১) তাতারখানিয়া, (১২) ফাতাওয়া হানুতী, (১৩) বাহজাতুল ফাতাওয়া, (১৪) জামিউর রুমুয, (১৫) ফতাওয়া বরকতীয়াহ ইত্যাদি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে শতাধিক কিতাবের দলীল দিয়ে উপরোক্ত বিষয়ের উপর ফাতওয়া দেয়ার ইরাদা রইলো।
আবা-১৪

0 Comments: