একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৩৮

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দীদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

রাতের গভীরে অদৃশ্য স্থান থেকে গায়িবী

আওয়াজে দুআ কবুলের স্বীকৃতি

বর্তমান বিষয়ে ইতঃপূর্বে ওলীআল্লাহগণ-উনারাও যে ইল্মে গইব-এর অধিকারী, সে সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা হয়েছে। এর দলীল হিসেবে সূরা কাহফ-এর ৬৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এর উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। ঐ আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক-তিনি ইরশাদ করেন:

وعلمنه من لدنا علما

অর্থ: আর আমি আমার পক্ষ থেকে উনাকে, অর্থাৎ আমার ওলী হযরত খিজির আলাইহিস সালাম-উনাকে ইল্মে লাদুন্নী (গইব-এর ইল্ম) দান করেছি। ইল্মে লাদুন্নী প্রসঙ্গে সূরা কাহফ- এর ৭১, ৭৪ ও ৭৭ নম্বর আয়াত শরীফে তিনটি সবিশেষ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো- ১. হযরত খিজির আলাইহিস সালাম-তিনি একটি চলমান নৌকা ছিদ্র করে দিলেন। ২. তিনি একজন বালককে হত্যা করলেন, যার চেহারা ছিলো লাবণ্যম-িত এবং সে ছিলো মিষ্টভাষী, ৩. তিনি একটি ভাঙ্গা দেয়াল মেরামত করে দিলেন।

বিষয়গুলো সংঘটনের কারণ সম্পর্কে জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম- তিনি প্রশ্ন করলে জবাবে হযরত খিজির আলাইহিস সালাম- তিনি বললেন: ছিদ্র না করলে ঐ এলাকার যালিম বাদশা- সে নৌকাটি তার অবৈধ দখলে নিয়ে নিতো। বালকটিকে হত্যা করা সম্পর্কে তিনি বললেন: বালকটি ছিলো জন্মগতভাবে কাফির। বড় হয়ে সে তার পিতা-মাতাকে নিদারুণ কষ্ট দিতো এবং তাদেরকে কাফির বানিয়ে ছাড়তো। ভাঙ্গা প্রাচীর মেরামত করা প্রসঙ্গে হযরত খিজির আলাইহিস সালাম- তিনি বললেন: ঐ প্রাচীরের নিচে গচ্ছিত ছিলো ইয়াতীম বালকদের গুপ্ত ধনরাশি। প্রাচীরটি মেরামত না করলে গুপ্তধন ভা-ার প্রকাশিত হয়ে পড়তো। অন্য মানুষেরা ঐ সম্পদ নিয়ে নিতো।

কালামুল্লাহ শরীফ-এ উল্লিখিত উপরোক্ত তিনটি ভবিষ্য ঘটনা থেকে প্রতিভাত হয় যে, হযরত খিজির আলাইহিস সালাম- তিনি ইল্মে গইব-এর অধিকারী। আর এ ইল্মে গইব-এর বিষয়টিকেই আল্লাহ পাক- তিনি উনার পবিত্রতম ভাষায় ইল্মে লাদুন্নী হিসেবে কালামুল্লাহ শরীফ-এ প্রকাশ করেছেন। হযরত খিজির আলাইহিস সালাম-উনাকে অনেকে নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। তাদের ধারণা আদৌ সঠিক নয়। তিনি মাশহুর ওলীআল্লাহ হযরত সিকান্দার যুলকারনাইন আলাইহিস সালাম-উনার উযীরে আযম ছিলেন। একজন নবী আলাইহিস সালাম-উনার পক্ষে একজন ওলীআল্লাহ-উনার অধীনে উযীর হওয়া উনার মুবারক শানের খিলাফ। তাই নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম-উনাদের পক্ষে উযীর হওয়া কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। এতে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, হযরত খিজির আলাইহিস সালাম-তিনি কোন নবী-রসূল নন। মূলত: তিনি ওলীআল্লাহ। হাদীছ শরীফ-এর মুবারক বর্ণনায়ও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তিনি বেমেছাল মর্যাদার একজন ওলীআল্লাহ।

নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম-উনারা সকলেই যে পরিপূর্ণরূপে ইল্মে গইব-এর অধিকারী, সে বিষয়েতো সূরা জ্বিন-এর ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াত শরীফ এবং  সূরা আলে ইমরান-এর ১৭৯ নম্বর আয়াত শরীফসহ আরো অনেক আয়াত শরীফই তার সুষ্পষ্ট প্রমাণ। একইভাবে ওলীআল্লাহগণ-উনারাও যে ইল্মে গইব-এর অধিকারী, সে বিষয়ও কুরআন শরীফ-এবং হাদীছ শরীফ-দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।

মিশকাত শরীফ-এর শরাহ্ মিরকাত শরীফ-এ উল্লেখ আছে:

العبد ينقل فى الاحوال حتى يصير الى نعت الروحانية فيعلم الغيب.

অর্থ: যখন কোন বান্দার আধ্যাত্মিক অবস্থা উন্নত হয়, তখন তিনি রূহানিয়তের গুণে গুণান্বিত হন এবং গইব সম্পর্কে অবগতিলাভ করেন।

يطلع العبد على حقائق الاشياء ويتجلى له الغيب وغيب الغيب

অর্থ: কামিল বান্দা-উনারা যাবতীয় বস্তুর হাক্বীক্বত (নিগূঢ় তত্ত্ব ও রহস্য) সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকেন এবং উনাদের নিকট অদৃশ্য বিষয়গুলোও প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

(চলবে)

আবা-১৯৮

0 Comments: