ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আ’যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-
একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দীদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
রাতের গভীরে অদৃশ্য স্থান থেকে গায়িবী
আওয়াজে দুআ’ কবুলের স্বীকৃতি
আল্লাহ পাক এবং সাইয়্যিদুল
আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন,
ছাহিবে লাওলাক, দলীলে কাবায়ে মাকসূদ, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ- উনাদের
অন্তর্দৃষ্টি ও সূক্ষ্মদর্শিতা পরিপূর্ণরূপে নির্ভুল। অন্তর মুবারকে সর্বক্ষণ
ইলহাম, ইলকা ও ইলমে লাদুন্নীর অভাবিত সংযোগে উনারা দায়িমীভাবে হিদায়েতের নূরের মধ্যে
নিমজ্জিত থাকেন। সাধারণ মানুষ, এমনকি প্রাণীকুলের মধ্যেও ইলহাম হয়ে থাকে। ওলীআল্লাহ-উনাদের
ইলহাম, ইলকা ও ইলমে লাদুন্নীর নির্যাস এক হলেও এগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য ভিন্নতর।
দার্শনিকদের দিব্যজ্ঞান ও মননশীলতা এবং ওলীআল্লাহ-উনাদের ইলহাম, ইলকা, কাশফ, স্বপ্ন, কারামত ও
ইলমে লাদুন্নী এক নয়। ইলমে লাদুন্নীর সংযোগে উনাদের ইলহাম, ইলকা, কাশফ, স্বপ্ন
কারামত সবসময় কুরআন শরীফ,
হাদীছ শরীফ-এর নিয়ন্ত্রণে থাকে। অর্থাৎ লক্ষ্যস্থল
ওলীআল্লাহ-উনাদের কোন বিষয়ই কখনো আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের ইচ্ছা ও পথের বিপরীত হয় না।
ওলীআল্লাহ-উনাদের যাহির ও
বাতিন পরিপূর্ণরূপে পরিচ্ছন্ন ও অনুগত হওয়া সত্ত্বেও উনারা কখনোই উনাদের ইলহাম, ইলকা, কাশফ, স্বপ্ন ও
কারামতকে সত্যের মাপকাঠি মনে করেন না। উনারা প্রাধান্য দিয়ে থাকেন উনাদের
ইস্তিক্বামতকে।
والمخلصون على خطر عظيم
অর্থ: “নিষ্কলুষ অন্তরের অধিকারী ওলীআল্লাহ-উনারা
অনুক্ষণ গভীর চিন্তা ও পেরেশানীতে নিপতিত”- এ হাদীছ
শরীফ-এর নির্দেশনায় নৈকট্য হাছিলকারী ওলীআল্লাহগণ-উনারা, উনাদের
ইলহাম, ইলকা, হাল, কারামত, স্বপ্ন ও কারামতসহ যাবতীয় বিষয় কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও
ক্বিয়াসের আলোকে নিগূঢ়ভাবে বিশ্লেষণ করে থাকেন। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর সঙ্গে
সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও উনাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়কেই উনারা অন্যের উপর
দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেন না। উনারা যে দলীল-প্রমাণের উপর নির্ভর করেন, তা হলো-
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও
ক্বিয়াস।
আল্লাহ পাক এবং সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের পক্ষ থেকে ওলীআল্লাহ-উনাদের ইছলাহপ্রাপ্ত
পবিত্র অন্তরে যে অদম্য প্রেরণার উদ্ভব হয়, কোন বিষয়ে অন্তরে অকাট্য ধারণার
উদ্রেক হয় এবং এসবের নির্ভুলতায় অন্তরে যে নূর উদ্ভাসিত হয়, তার নাম
ইলহাম, ইলকা। ওলীআল্লাহ-উনারা,
উনাদের নিদ্রাকালে স্বপ্নে, জাগরণকালে ধ্যানে ও অনুসন্ধানে, অন্তরে
কোন বিষয়ের প্রতিফলনে (কাশফে), অনুভবে এবং প্রত্যক্ষ অবলোকনে এবং বিশেষ অবস্থায় উনাদের হাল
ও কারামতে কোনই বিভেদ নেই। উনাদের অনুভব, অনুসন্ধান এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
সবকিছুই আল্লাহ পাক এবং রসূলু রব্বিল আলামীন, রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর
রহীম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের একান্ত অনুগত।
যাহির ও বাতিনের ভিন্নতাও
লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ-উনাদের ক্ষেত্রে অবান্তর। এরূপ মাক্বামের ওলীআল্লাহ-উনারা
অত্যন্ত সতর্কতা ও সাবধানতায় পথ চলেন। গায়রুল্লাহ থেকে উনারা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত-
একথা নিশ্চিতভাবে জানা সত্ত্বেও গায়রুল্লাহ-এর অনিষ্টতা সম্পর্কে সাবধানতা
অবলম্বনে উনারা সদা তৎপর। কারণ ইলহাম, ইলকা, কাশফ, স্বপ্ন, হাল ও
কারামতে ফাঁদ পাতার কারসাজিতে ইবলিস সার্বক্ষণিকভাবে তার কুকর্মে লিপ্ত। সাধারণের
ইলহাম, ইলকা, কাশফ ও স্বপ্নে থাকে শয়তানী প্রতারণা। আর ওলীআল্লাহ-উনাদের এসবে থাকে খোদায়ী
নূর। থাকে ইলমে লাদুন্নী এবং রহমতুল্লিল আলামীন, মাশুকে মাওলা, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় ইহসান এবং
উনার সঙ্গে দায়িমী তায়াল্লুক ও নিসবত। এ পার্থক্যের কারণেই ওলীআল্লাহগণ-উনারা
প্রকৃতই ওলীআল্লাহ এবং এসবের মিথ্যে দাবিদার সাধারণ মানুষ ও ভ-রা মূলতই পথভ্রষ্ট।
আল্লাহ পাক এবং উনার
প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনারা এবং উনাদের সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বাদে অন্যসব যাহিরী ও বাতিনী বিষয় অনুভব ও দর্শনে
ওলীআল্লাহ-উনাদের দায়িমী অনাগ্রহ বিদ্যমান। অপ্রকাশ্য বিষয়ের দর্শনলাভে উনাদের কোন
প্রবোধ এবং আকাঙ্খাজনিত বেদনার উপশম নেই। গোপন বিষয় হরহামেশা অনুভব ও দর্শনের
আপেক্ষিক যোগ্যতা উনাদের মুবারক স্বভাবের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। উনাদের বিবেচনায়
কাঙ্খিত কামিয়াবীর সোপান পরিমাপে এসব গোপনীয় বিষয় জানা ও দেখার যোগ্যতা কোন
গুরুত্ব বহন করে না। ওলীআল্লাহ-উনারা মূলত এমন বিষয় দেখার জন্য কাঙ্খিত, যা
পরিপূর্ণরূপে দুনিয়ায় দেখা সম্ভব নয় এবং যা আক্বল, সমঝ ও ধারণার সীমাহীন ঊর্ধ্বে।
এছাড়া অন্যসব বিষয় অনুভব ও দর্শনে উনাদের কোন অন্তরায় নেই। (চলবে)
আবা-১৯৭
0 Comments:
Post a Comment