সুওয়াল :
প্রচলিত তাবলীগ ওয়ালারা বলে থাকে যে, পীর ছাহেবগণের যেখানে শেষ, তাবলীগ ওয়ালাদের সেখানে শুরু। অতএব পীর সাহেবদের ইছলাহর জন্য দশ চিল্লার
দরকার।
তাদের
উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত বা সত্য, বিস্তারিতভাবে
জানার বাসনা রাখি।
জাওয়াব
: একথা সম্পূর্ণ শরীয়ত উনার খিলাফ, যা বলা নিহায়েত অজ্ঞতা, ধৃষ্ঠতাপূর্ণ, বেয়াদবীমূলক, অমার্জনীয় অপরাধ ও কুফরীর শামিল।
যদি কোন
ব্যক্তি উপরোক্ত আক্বীদা পোষণ করে, তাহলে সে ঈমান হারা হয়ে কুফরীতে
নিপতিত হবে।
কারণ
যাঁরা হক্কানী-রব্বানী পীর ছাহেব, উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ
ওলীর অন্তর্ভূক্ত। আর ইছলাহ প্রাপ্ত তারা তাদের শায়খ বা পীর ছাহেব-উনার ছোহবত
ইখতিয়ার করে অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয়টিতেই পারদর্শীতা লাভ করে বা
পূর্ণ ইছলাহ প্রাপ্ত হয়ে স্বীয় পীর ছাহেব উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক ও উনার
রাসূল,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে খিলাফত প্রাপ্ত হন। অতঃপর তারা
তাদের শায়খ বা পীর সাহেবের নির্দেশে আম মানুষকে ইছলাহ করার কাজে তথা দ্বীন
প্রচারের কাজে নিয়োজিত হন। অতএব তাদের ইছলাহ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য চিল্লার কোনই
জরুরত নেই।
মূলতঃ
চিল্লার দ্বারা কোন মানুষের পক্ষেই ইছলাহ প্রাপ্ত হওয়া সম্ভব নয়। যাঁরা খাছ, উনাদের তো প্রশ্নই উঠে না। আর যারা আম বা সাধারণ লোক, তারাও
চিল্লার মাধ্যমে ইছলাহ প্রাপ্ত হবে, এ কথাটিও সম্পূর্ণই অবান্তর।
সুতরাং
যারা বলে যে,
পীর সাহেবদের ইছলাহ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য দশ চিল্লার দরকার, সেটা পীর সাহেবগণ বা পীরানে তরীক্বত তথা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিম উনাদের শানে নিহায়েত অবমাননাকর উক্তি। যার দ্বারা উনাদের প্রতি ইহানত করা
হয়, যা কুফরীর শামিল।
কেননা
উনাদের শানে,
উনাদের মর্যাদা সম্পর্কে অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র
হাদীছ শরীফ রয়েছে। যা থেকে বোঝা যায়, উনারা সর্বোচ্চ স্তরের মর্যাদা ও
মর্তবার অধিকারী। যার তুলনায় প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকগণ তিফলে মক্তব বা
মক্তবের শিশু ব্যতীত নয়। যেমন হক্কানী আলিম বা আল্লাহ ওয়ালা উনাদের মর্যাদা-মর্তবা
সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(ক)
الاان اولياء الله لا خوف عليهم ولا هم يحزنون.
অর্থ : “সাবধান! যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী বা বন্ধু, উনাদের
কোন ভয় ও চিন্তা নেই।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ৬২)
(খ)
من عاد لو ليا فقد اذنته بالحرب
অর্থ : “যে আমার ওলীর সাথে বেয়াদবী করে, আমি তার বিরুদ্ধে জ্বিহাদ ঘোষণা
করি।”
(পবিত্র হাদীসে কুদসী শরীফ, বোখারী
শরীফ)
(গ)
ان اوليائى تحت قبائى لا يعرفو نهم الا غيرى.
অর্থ : “ওলীআল্লাহ উনারা আমার কুদরতের নীচে অবস্থিত, আমি ছাড়া
উনাদের কেউ চিনেনা।” (পবিত্র হাদীসে কুদসী শরীফ)
এখানে
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, পৃথিবীর প্রায় সকল মুহাক্কিক-মুদাক্কিক, মুজতাহিদ ঈমামগণই পীর ছাহেব ছিলেন বা পীর ছাহেবের কাছে বাইয়াত ছিলেন এবং উনারা
তাসাউফকেই চুড়ান্ত স্তর বা শেষ স্তর বলে নির্ধারণ করেছেন। যেমন- ইমামে আযম আবূ
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাঁর শানে শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বলেছেন যে,
الفقهاء كل عيال ابى حنيفة (رح) فى الفقه.
অর্থ : “সকল ফক্বীহগণ, ইলমের দিক দিয়ে (ফিক্বাহ শাস্ত্রে) ইমাম আযম আবূ হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সন্তান তুল্য।” (ই’লাউস
সুনান)
সেই
ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি পর্যায়ক্রমে ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম ও
ইমাম জাফর সাদিক আলাইহিস সালাম উনার কাছে বাইয়াত হন। আর বাইয়াত হয়ে ইমাম জাফর
সাদিক আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফে দু’বছর থেকে
ইলমে তাছাউফের তাকমীলে পৌঁছেন।
এ
প্রসঙ্গে ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لولا سنتان لهلك ابو نعمان.
অর্থ : “যদি দু’বছর না পেতাম, তবে আমি ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি (ইলমে
তাছাউফ অর্জন না করার কারণে) ধ্বংস হয়ে যেতাম।” (যদিও
তিনি ইলমে ফিক্বাহে পূর্ণ পারদর্শী ছিলেন।) (সাইফুল মুকাল্লেদীন, ইছনা আশারিয়াহ, দুররুল মোখতার, সীরাতে ইমামে আযম আবূ হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি)
উল্লেখ্য
যে, ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, এতবড়
ইমাম হওয়া সত্ত্বেও ইলমে তাছাউফ ব্যতীত খালিছ মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হতে পারতেন
না বলে নিজেই স্বীকার করেছেন।
অতএব
ইমামে আযম হওয়া সত্ত্বেও যদি উনার পক্ষে ইলমে তাসাউফ ব্যতীত ধ্বংস হওয়া থেকে
বেঁঁচে থাকা সম্ভব না হয়, তবে সেখানে সাধারণ মানুষের পক্ষে
কি করে ইলমে তাসাউফ ব্যতিরেকে ধ্বংস হতে বেঁঁচে থাকা সম্ভব?
আরো
উল্লেখ্য যে,
হযরত মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশ্ব বিখ্যাত আলেম
হওয়া সত্ত্বেও পীর সাহেবগণের ফযীলত সম্পর্কে বলেছেন, “আমি
মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি অসংখ্য কিতাবাদি পাঠ করে বিশ্ববিখ্যাত আলিম হওয়া
সত্ত্বেও,
আমি আমার পীর সাহেব হযরত শামস তাবরীজী রহমতুল্লাহি
আলাইহি-উনার কাছে বাইয়াত হওয়া তথা ইলমে তাসাউফ অর্জন করা ব্যতীত তাকমীলে পৌঁছতে
পারিনি বা আল্লাহ ওয়ালা হতে পারিনি।” (মসনবী শরীফ)
সুতরাং
পীর সাহেবগণের ফযীলত উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সহজেই অনুধাবন করা যায়। আরো অনুধাবনীয়
যে, সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম হওয়া সত্ত্বেও ধ্বংস থেকে বেঁচে থাকা বা তাকমীলে পৌঁছা বা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হওয়া আদৌ সম্ভব নয়, পীর সাহেবের কাছে বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্থাৎ ইলমে তাসাউফ অর্জন করা ব্যতীত।
তাহলে
প্রচলিত তাবলীগকারীগণ, এক কথায় ইলমে ফিক্বাহ, ইলমে
তাসাউফ শুন্য হওয়া সত্ত্বেও অর্থাৎ যতসামান্য শিক্ষা অর্জন করে এ কথা কি করে বলতে
পারে যে,
পীর সাহেবগণের যেখানে শেষ, তাবলীগ
ওয়ালাদের সেখানে শুরু!
হুজ্জাতুল
ইসলাম,
ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আল-মুনকেযু
মিনাদ্দালাল কিতাবে বলেছেন, “সবই অপূর্ণ, একমাত্র পীরানে তরীক্বত তথা আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাই পূর্ণ।”
কুতুবুল
আলম, কুতুবুল আক্বতাব, হযরত খাজা বখতিয়ার কাকী আউসী, ছুম্মা
দেহলভী,
কুদ্দিসা সেররুহুল বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাঁর অনুরূপ বুযুর্গ মহান আল্লাহ
পাক উনার যমিনে খুব কমই পয়দা হয়েছেন। যাঁর উছিলায় উনার যামানায় সারা বিশ্বের
অসংখ্য জ্বীন-ইনসান মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মা’রিফতের
সুধা লাভ করেছেন এবং পৃথিবীর ইতিহাসে যে দু’জন
ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়, যাঁরা মায়ের পেট থেকে ত্রিশ পারা পবিত্র
কুরআনে হাফিয অবস্থায় যমিনে তাশরীফ এনেছেন, উনাদের
মধ্যে অন্যতম। তিনি স্বীয় প্রনীত “দলীলুল আরেফীন” কিতাবের নবম মজলিসে সূফী সাহেবদের যে কত বড় ফযীলত রয়েছে, সে সম্পর্কে শায়খ মুহম্মদ আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ঘটনা উল্লেখ
করেন।
তিনি
বলেন যে,
আমার শায়েখ সুলতানুল হিন্দ, খাজা
গরীবে নেয়াজ,
হাবীবুল্লাহ, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী, সানজিরী,
সুম্মা আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি
পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যাঁর উছিলায় আল্লাহ পাক এক কোটিরও
বেশী লোককে ঈমান দিয়েছেন। এবং আরো উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর
ইতিহাসে যে দু’জন বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর উনাদের কপাল মুবারকে সোনালী
অক্ষরে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল, “হাজা হাবীবুল্লাহ, মাতা ফী হুব্বিল্লাহ।” অর্থাৎ ইনি আল্লাহ পাক উনার হাবীব, যিনি আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে বিছালা শরীফ গ্রহণ করেছেন। তিনি বর্ণনা করেন, একবার আমার শায়খ হযরত খাজায়ে খাজেগাঁ হযরত ওসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি, খাজা আওহাদুদ্দীন কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আমি যিয়ারত ও সফরে বের হয়ে সফর
করতে করতে পর্যায়ক্রমে মদীনা শরীফ ও তার আশ-পাশ এলাকা যিয়ারত করে দামেশকে গিয়ে
পৌঁছি। সেখানে বার হাজার হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের রওযা শরীফ যিয়ারতের
জন্য কয়েকদিন অবস্থান করি।
একদিন
দামেশকের এক মসজিদ যেখানে হযরত খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে একজন বিশিষ্ট
কামিল বুযুর্গ ব্যক্তি অবস্থান করতেন, সেখানে উনার মজলিশে হাজির হলাম
এমতাবস্থায় যে,
তিনি নছীহত করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন যে, ক্বিয়ামতের দিন সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণ হতে বুযুর্গগণও পর্যন্ত
অর্থাৎ আলিম,
দরবেশ ও বুযুর্গগণ সকলেই ফায়দা হাছিল করবেন। এককথায় হযরত
নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ব্যতীত অন্য সকলেই সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে
তরীক্বতগণ থেকে ফায়দা হাছিল করবেন।
একথা
বলার পর হযরত খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে এক ব্যক্তি বিতর্কে লিপ্ত
হলো। সে বললো,
আপনার বক্তব্যের পিছনে কোন দলীল আছে কি? অর্থাৎ এটা কোন কিতাবে আছে? উত্তরে খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি বললেন,
কিতাবের নামটা স্মরণ করতে পারছিনা। লোকটি বললো, কিতাবে লিখা না দেখানো পর্যন্ত বিশ্বাস করবোনা। খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি
যিনি মুস্তাজাবু দ্দাওয়াত (যার দোয়া কবুল করা হয়) ছিলেন। তিনি স্বীয় মস্তক আকাশের
দিকে উত্তোলন করে বললেন, কিতাবের নাম আমার মনে নেই, ‘ইয়া বারে ইলাহি, ভুলে যাওয়া কিতাবটি দেখিয়ে দিন।’ তৎক্ষণাৎ
হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি হুকুম দিলেন, যে কিতাবে ঐ কথা লিখা আছে, সেটা নিয়ে দেখাও। হযরত ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম উনারা ঐ কিতাব খুলে যেখানে ঐ কথা লিখা ছিল বের করে ঐ লোককে দেখিয়ে
দিলেন,
যে লোকটি খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্যের
প্রতিবাদ করেছিল। তখন সে ব্যক্তি লজ্জিত হয়ে খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
কদম মুবারকে পড়ে গেল এবং উনার নিকট মুরীদ হলো।
উপরোক্ত
ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার যমিনের উপর
যাঁরা সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বত, উনাদের কি বর্ণনাতীত ফযীলত রয়েছে।
আবার কেবল যমিনের উপরই নয় বরং কবরে, হাশরে এবং ক্বিয়ামতের ময়দানেও
সূফীয়ানে কিরামগণের ফযীলত বহাল থাকবে।
এ
প্রসঙ্গে সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজে বর্ণনা করেন, “আমার এক
প্রতিবেশী পীর ভাই, তরীক্বার আইন-কানুন মেনে চলতো না, হঠাৎ
মারা গেল। নিয়ম অনুযায়ী তাকে কাফন-দাফন করে প্রত্যেকে যে যার কাজে চলে গেল। কিন্তু
কৌতুহল বশতঃ আমি কবরের পাশেই দুনিয়া হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে খানিকক্ষণ বসে রইলাম। এমন
সময় দু’জন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সলাম উনারা এসে কবরে অবতরণ করলো, দেখেই বুঝতে পারলাম উনারা আযাবের হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম। কবরে নেমেই
উনারা আমার পীর ভাইকে শাস্তি প্রদানে উদ্যত হলো। এমন সময় আমার পীর ও মুর্শিদ খাঁজা
উসমান হারুনী কুদ্দেসু সিররুহুল আজীজ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মুখে
উপস্থিত হয়ে বললেন, “এ লোককে শাস্তি প্রদান করতে পারবে না, কারণ এ আমার মুরীদ।” হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম
উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধুর সম্মানার্থে চলে গেলেন, কিন্তু
একটু পরেই ফিরে এসে বললো, “হুযূর এ লোক আপনার মুরীদ, একথা সত্য কিন্তু সে আপনার তরীক্বার কাজ হতে বিরত ছিলো।” হযরত উসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “তার কাজ যাই হোক, সে তার জাতকে (অস্তিত্ব) আমার নিকট সমর্পণ করায় তার কাজ
আমার কাজের সংগে সংযুক্ত হয়ে গেছে। অতএব, তার রক্ষণাবেক্ষণ আমার কর্তব্য।” হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উনার বক্তব্য পেশ করার সাথে সাথেই হযরত
ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার হুকুম হলো, “আপনারা চলে আসুন, তাকে শাস্তি দিবেননা। আমি আমার বন্ধুর সম্মানে তাকে ক্ষমা
করে দিলাম।”
(আনিসুল আরওয়াহ)
ক্বিয়ামতের
দিন সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণকে মহান আল্লাহ পাক যে বর্ণনাতীত ফযীলত দান
করবেন,
সে প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কুতুবুল আলম, কুতুবুল আক্বতাব, হযরত বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার “দলীলুল আরেফীন” কিতাবে তদীয় পীর সাহেব, সুলতানুল
হিন্দ,
খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ
রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন। আর ইসরারুল আওলিয়া নামক কিতাবে বর্ণনা করা
হয়েছে,
শাইখুল ইসলাম, ইমামুল আইম্মা, হযরত ফরীদ উদ্দীন মসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় শায়খ, কুতুবুল আলম, কুতুবুল আফতাব, হযরত বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে উল্লেখ করেন, “ক্বিয়ামতের দিন সূফীয়ানে কিরাম বা
পীরানে তরীক্বতগণকে কবর থেকে উঠানো হবে। এরপর আল্লাহ পাক সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে
তরীক্বতগণকে আহবান করবেন। তখন উনাদের প্রত্যেকেই কম্বল কাঁধে নিয়ে উপস্থিত হবেন
এবং প্রত্যেক কম্বলে কম-বেশী একলাখ সুতা বা তার লাগানো থাকবে। প্রত্যেক সুতা বা
তারে কম-বেশী একলাখ গিঁট থাকবে। তখন উনাদের মুরীদগণ, পুত্র-কন্যা, শিশু-বাচ্চা সমস্ত বংশধর সেই সুতা বা তার ধরে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত না হাশরের কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি না পাবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ
তায়ালা উনাদের পুলছিরাতে পৌঁছাবেন। অতঃপর সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণের
সুতা বা তার ধরে থাকার বরকতে শায়েখের সাথে পুলছিরাতের ত্রিশ হাজার বছরের পথ চোখের
পলকে পার হয়ে বেহেশতে পৌঁছে তাতে বিনা দ্বিধায় প্রবেশ করবে। কোথাও কোন বাঁধার
সম্মুখীন হবেনা।” (সুবহানাল্লাহ)
আরো
উল্লেখ্য যে,
সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণের মুরীদ-মুতাক্বিদ, মুহিব্বীনগণ সকলেই পুলছিরাত পার হয়ে বেহেশতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত তাদের শায়খ
বা পীর সাহেব পর্যায়ক্রমে হাশরের ময়দানে এসে উচ্চস্বরে বলতে থাকবেন, “আমার মুহেব্বীনগণ কোথায়? তোমরা আমার কম্বলের তার বা সুতা
ধরে বেহেশতে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট চলে যাও।” (সুবহানাল্লাহ)
কাজেই
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত ধৃষ্টতাপূর্ণ, কুফরী
মূলক কথা,
যা সকল সূফীয়ানে কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উলামায়ে মুহাক্কিক ও
মুদাক্কিকগণের কথার সম্পূর্ণ খিলাফ, তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র
সুন্নাহ শরীফ উনার খিলাফ, যা থেকে পরহেজ করা বা বিরত থাকা
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের ও অন্য সকলের জন্যই ওয়াজিব ও ফরজের অন্তর্ভূক্ত।
আবার
পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে কেবল
যৎসামান্য ইসলামী শিক্ষা দেয়া হয়। অথচ যাঁরা পীরানে তরীক্বত, উনারা ইসলামের প্রায় পূর্ণ শিক্ষাই গ্রহণ করে তাকমীল বা পুর্ণতায় পৌঁছে
থাকেন।
আবা-৩৫
0 Comments:
Post a Comment