৬৩২ নং- সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে একথা উল্লেখ আছে যে, মূর্খ হোক, আলিম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরযে আইন।তাদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুক সত্য? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে জানিয়ে বাধিত করবেন।


সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে একথা উল্লেখ আছে যে, মূর্খ হোক, আলিম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরযে আইন। (হযরতজীর মালফুজাত-৪ পৃষ্ঠা-৭, অনুবাদক মাওলানা ছাখাওয়াত উল্লাহ, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৫৬ অনুবাদক- ইসমাইল হোসেন, তাবলীগে ইসলাম পৃষ্ঠা-৩, লেখক- মাওলানা আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ, লেখক- মাওলানা এহতেশামুল হাসান কান্দলবী, পৃষ্ঠা-২২)
তাদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুক সত্য? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : তাদের এ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয়, তাবলীগ করা কি? তা ফরযে আইন না ফরযে কিফায়া?
ফরযে আইন হলো এমন ইবাদত, যা প্রত্যেককেই আলাদাভাবে ফরয হিসেবে পালন করতে হয়। যেমন- নামায, রোযা ইত্যাদি।
আর ফরযে কিফায়া হলো এমন ইবাদত, যা সমষ্টিগত লোকের প্রতি পালন করা ফরয। এ ফরয দেশবাসী, শহরবাসী, এলাকাবাসী বা কোন সম্প্রদায় থেকে একজন আদায় করলেই সকলের তরফ থেকে ফরযের হক্ব আদায় হয়ে যায়। যেমন- হাফিয বা আলিম হওয়া, জানাযার নামায পড়া ইত্যাদি।
উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে আরো বলতে হয়- যদি তাবলীগ করা ফরযে আইন হয়, তবে কার জন্য ফরযে আইন? এবং যদি ফরযে কিফায়া হয়, তবে কার জন্য ফরযে কিফায়া? আর যদি উভয়টাই হয়, তবে সেটাই বা কাদের জন্য।
মূলত : তাবলীগ করা ফরযে আইন ও ফরযে  কিফায়া উভয়টাই। যারা মুবাল্লিগে খাছ উনাদের জন্য তাবলীগে আম করা ফরজে কেফায়া। আর যারা মুবাল্লিগে আম তাদের জন্য তাবলীগে আম করা জায়িয নেই। তাদের করতে হবে তাবলীগে খাছ, যা মুবাল্লিগে আম ও খাছ উভয়ের জন্যই করা ফরযে আইন।
মুবাল্লিগে আম বা খাছ ব্যতীত আওয়ামুন্নাছ বা সাধারণ জনগণের জন্য তাবলীগে আম বা খাছ কোনটাই করা ফরযে আইন বা ফরযে কিফায়া নয়।
আর তাবলীগে আম করা কারো জন্যই ফরযে আইন নয়, যদিও সে মুবাল্লিগে খাছ হোক না কেন। আর তাবলীগে আম করা শুধু মুবাল্লিগে খাছ উনার জন্য ফরযে কিফায়া, যা মুবাল্লিগে আমের জন্য করা জায়িয নেই।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা তওবা শরীফ উনার ১২২নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
ما كان لمؤمنين لينفروا كا فة.
অর্থ : সকল মুমিনদের জন্য একসাথে কোন কাজে বের হওয়া উচিৎ নয়।
ইমাম, মুজতাহিদগণ এই আয়াত শরীফ থেকে উছূল বের করেছেন যে, মুমিনদের জন্য সমষ্টিগতভাবে কোন কাজ করা ফরযে আইন নয় বরং তা ফরযে কিফায়ার অন্তর্ভূক্ত। (তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, ফাতহুল ক্বাদীর, কাশশাফ, হাশিয়ায়ে সাবী, যাদুল মাসীর, খাজেন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)
অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য যেসব কাজ সমষ্টিগতভাবে করতে হয়, সেটা ফরযে কিফায়ার অন্তর্ভূক্ত। তা কখনো ফরযে আইন নয়, যা উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব যদি কেউ বলে- মূর্খ হোক, আলিম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরযে আইন। তবে তা সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ও ইজমা-ক্বিয়াস উনাদের খিলাফ বা পরিপন্থী হবে। আর ফরযে কিফায়াকে ফরযে আইন বলাও হারাম ও কুফরীর নামান্তর, যা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ওয়াজিব।
আবা-৩৫

0 Comments: