৪০৬ নং- সুওয়াল - আযান এবং নামাযে কানে হাত স্পর্শ করার কারণ কি?

সুওয়াল - মাসিক মদীনা, জুলাই/৯৫ ঈসায়ী সনে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়।
প্রশ্নঃ- আযান এবং নামাযে কানে হাত স্পর্শ করার কারণ কি? 
উত্তরঃ- আযানের মধ্যে কানে আঙ্গুল দেয়া আযানের ওয়াজিব, সুন্নাত বা জরুরী কোন অনুসঙ্গ নয়। শব্দ উচ্চ করার জন্য একটি প্রচলিত নিয়ম মাত্র। কানের মধ্যে আঙ্গুল না দিলে বা কানে হাত না রাখলেও আযানের কোন ত্রুটি হবে না। নামাযের মধ্যে কোন পর্যায়েই কানে হাত দিতে হয় না। তাহ্রীমা বাঁধার সময় দুই হাতের তালু ক্বিবলামূখী করে কাঁধ বরাবর তুলতে হয়। উত্তোলিত হাত দ্বারা কান স্পর্শ করতে হয়, (অনেককেই যা করতে দেখা যায়) এটা মোটেও ঠিক নয়। 
অথচ আমরা জানি যে, কানে আঙ্গুল দিয়ে আযান দেয়া সুন্নাত এবং নামাযে তাহ্রীমা বাঁধার সময় কানে স্পর্শ করাও সুন্নাত। এখন আমদের প্রশ্ন হচ্ছে যে, মাসিক মদীনায় যা লেখা হয়েছে তা সঠিক হয়েছে কিনা, দলীল দ্বারা জানালে খুবই উপকৃত হব। 

জাওয়াব - মদীনার সম্পাদকের উপরোক্ত বক্তব্যটি দু’ভাগে বিভক্ত। 
প্রথমতঃ অংশে আযান প্রসঙ্গে, দ্বিতীয় হচ্ছে নামায প্রসঙ্গে। তার উভয় বক্তব্যই ভূল, মনগড়া, বানোয়াটি, দলীলবিহীন ও জিহালতপূর্ণ। মদীনার সম্পাদক যে বলেছে, আযানের মধ্যে কানে আঙ্গুল দেয়া আযানের ওয়াজিব, সুন্নাত বা জরুরী কোন অনুসঙ্গ নয়। এটা তার মারাত্মক ভূল হয়েছে। কারণ কর্ণ কুহরে অঙ্গুলি দিয়ে আযান দেয়া খাস সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত।
দ্বিতীয়তঃ সে বলেছে- এটা শব্দ উচ্চ করার জন্য একটা প্রচলিত নিয়ম মাত্র। এ কথায় তার মারাত্মক জিহালত প্রকাশ পেয়েছে। কেননা এটা প্রচলিত প্রথা নয়, কারণ স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কানে অঙ্গুলি প্রবেশ করিয়ে আযান দেয়ার জন্য বলেছেন। এতে অনেক ফায়দা রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে- আওয়াজ উচ্চ হওয়া। 
তৃতীয়তঃ সে আরো বলেছে- কানের মধ্যে আঙ্গুল না দিলে বা কানে হাত না রাখলেও আযানের কোন ত্রুটি হবে না। এটাও তার মারাত্মক ভ্রমাত্মক কথা। কারণ কানে অঙ্গুলি প্রবেশ করিয়ে আযান দেয়া সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। যা হযরত বেলাল  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আমল করেছেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে। 
অতএব, আযানে সুন্নাত তরক হওয়া বা করা মরাত্মক ত্রুটির কারণ। মদীনার সম্পাদকের আযান সম্পর্কে উপরোক্ত বক্তব্যসমূহ সম্পূর্ণই গলদপূর্ণ, মনগড়া, বানোয়াটী ও দলীলবিহীন। (তিরমিযি শরীফ, হিদায়া, শামী, বাদায়ে, বাহরুর রায়েক, আইনুল হিদায়া, শরহে বিক্বায়াহ্ ইত্যাদি কিতাবসমূহ)
মদীনার সম্পাদক উপরোক্ত উত্তরের শেষাংশে আরো বলেছে যে, নামাযের মধ্যে কোন পর্যায়েই কানে হাত দিতে হয় না। এ কথাটাও তার ভূল হয়েছে। কারণ তাক্বীরে তাহ্রীমার সময় হাত উত্তোলন করে কর্ণ স্পর্শ করা সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত।
দ্বিতীয়তঃ সে আরো বলেছে যে, তাহ্রীমা বাঁধার সময় দুই হাতের তালু ক্বিবলামূখী করে কঁাঁধ বরাবর তুলতে হয়। তার এ কথাটাও শুদ্ধ হয়নি। কেননা আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক পুরুষের জন্য খাছ সুন্নাত হচ্ছে- তাক্বীরে তাহ্রীমার সময় হাত ক্বিবলামুখী রেখে উত্তোলন করে বৃদ্ধাঙ্গুলী কানের লতি স্পর্শ করতে হবে। যা স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন। হানাফী মায্হাবে মেয়েরা তাক্বীরে তাহ্রীমা বাঁধার সময় কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলবে। সবশেষে সে আরো বলেছে যে, উত্তোলিত হাত দ্বারা কান স্পর্শ করতে হয়, (অনেককেই যা করতে দেখা যায়) এটা মোটেও ঠিক নয়। মদীনার সম্পাদকের এ শেষোক্ত কথাটাও  সুন্নাতের খিলাফ। কারণ হাত উত্তোলন করে কর্ণ স্পর্শ করা সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। (মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ, বায়হাক্বী শরীফ, শরহে বেক্বায়াহ্, নামায শিক্ষা- হাফেজে হাদীছ আল্লামা রুহুল আমিন  রহমতুল্লাহি আলাইহি, নূরুল ইজাহ্।) আবা-২৬

0 Comments: