৪২৬ নং- সুওয়াল - আমাদের দেশে কোন ব্যক্তি মারা গেলে মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ার পর মুনাজাত করা হয়। এটা কি শরীয়ত সম্মত?

সুওয়াল - আত্ তাওহীদ এপ্রিল/৯৫ইং সংখ্যায় নিম্নবর্ণিত প্রশ্নত্তোর ছাপা হয়- প্রশ্নঃ- আমাদের দেশে কোন ব্যক্তি মারা গেলে মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ার পর মুনাজাত করা হয়। এটা কি শরীয়ত সম্মত? উত্তরঃ- জানাযার পর শরীয়তে মুনাজাত নেই। অবশ্য দাফনের পর মুনাজাত করার কথা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে। হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামক একজন ছাহাবীর দাফন কাজ শেষে নবী করীম স্বীয় হস্তদ্বয় উঁচু করে কেবলা মুখী হয়ে মুনাজাত করেছেন। (আজীজুল ফতাওয়া ১২৫) আবু দাউদ শরীফের বর্ণনায় আছে- দাফন কার্য সমাধার পর হুযূর (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার উপস্থিত ছাহাবী উনাদের বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য গুণাহ্ ক্ষমা চাও। তার কবরের এখন প্রশ্ন পর্বের সময়। সে যেন সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম হয় এ প্রার্থণা কর। (আবু দাউদ ২/৪৫০৯) এখন আমার প্রশ্ন হলো- উল্লেখিত উত্তর শুদ্ধ হয়েছে কি? বিস্তারিত জানতে বাসনা রাখি। 

জাওয়াব - না, উক্ত পত্রিকার উত্তর সম্পূর্ণ শুদ্ধ হয়নি। কারণ জানাযার নামাযের পর হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়েয ও সুন্নত। স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযা নামাযের পরে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও মুনাজাত করেছেন। যা হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। তবে কোন কোন ফিক্বাহ্র কিতাবে জানাযার নামাযের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করা মাকরূহ্ লেখা রয়েছে, যা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। অর্থাৎ অন্যান্য নামাযের ন্যায় জানাযার পরে একই অবস্থায় থেকে মৃত ব্যক্তিকে সরাসরি সম্মুখে রেখে মুনাজাত করা মাকরূহ্, তবে জানাযা শেষ করে নামাযের কাতার ভঙ্গ করে হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিম্নবর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে জায়েয ও সুন্নত। ১। উক্ত মুনাজাতকে ফরজ-ওয়াজিবের ন্যায় জরুরী মনে করা যাবেনা। সুন্নত মনে করেই করতে হবে। ২। জানাযার নামাযের সালাম ফিরানোর পর সাথে সাথে মুনাজাত করা যাবেনা। ৩। সালাম ফিরানোর পর কাতার ভঙ্গ করে মৃত ব্যক্তি থেকে সরে গিয়ে মুনাজাত করতে হবে। মূলকথা হলো- জানাযার নামাযের পর নামাযের কাতার ভঙ্গ করে মৃত ব্যক্তির জন্য সম্মিলিতভাবে দোয়াও মুনাজাত করা সুন্নত। যেমন ‘ফতহুল ক্বাদীর’, ‘সিফরুস সায়াদাত’ ও ‘যাদুল আখেরাত’ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানাযার নামাযের পর এ দোয়া করতেন- 
اللهم انت ربها وانت خلقتها وانت رزت رزقتها وانت هديتها الى الاسلام وانت فبضت روحها وانت اعلم بسرها وعلانيتها جئنا شفعاء فا غفر لها وارحمها انك انت الغقور الرحيم.
অর্থঃ- “আয় আল্লাহ পাক! আপনিই তার রব, আর আপনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে ইসলামের দ্বারা হিদায়েত দান করেছেন। আপনিই তার রূহ্ কবয করেছেন ও আপনিই তার জাহির ও বাতিন সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। আমি সুপারিশ করছি, তাকে মাফ করে দিন, তার প্রতি দয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” এছাড়াও জাদুল আখিরাত, জামিউর রূমুজ, তাতার খানিয়া ও হাদীয়াতুল মুসাল্লিন ইত্যাদি কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানাযার পরে মৃত ব্যক্তির জন্য অন্যান্য অনেক দোয়া করেছেন। এছাড়াও ক্বিফায়া, এনায়া, শরহে বরযখ, তোহ্ফাতুল গাফিলীন, আইনী শরহে বুখারী, ফতোয়ায়ে দেওবন্দ, ফতহুল ক্বাদীর, বাহ্রুর রায়েক, তাতার খানীয়া, মিরকাত শরহে মিশকাত, জাওয়াহিরুন্নাফীস, মত ও পথ, আবূ দাউদ শরীফ ইত্যাদি অসংখ্য ফিক্বাহ্র কিতাব দ্বারা প্রমাণিত যে, জানাযার নামাযের পর হাত উঠায়ে দোয়া করা জায়েয ও সুন্নত। (এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে হলে আমাদের প্রকাশিত মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২০তম সংখ্যা পড়ুন)।
আবা-২৭

জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া -

0 Comments: