৪৩৮ নং- মীলাদ-ক্বিয়াম করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয বা নাজায়েয?

সুওয়াল - বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ বা মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে বিভিন্ন জন বিভিন্ন আক্বীদা পোষণ করেন। কেউ বলে মীলাদ শরীফ পড়া বিদ্য়াত, আবার কেউ বলে ক্বিয়াম করা শিরক বা নাজায়েয। আবার অনেকে মীলাদ-ক্বিয়াম জায়েয বলেন এবং নিজেরাও মীলাদ-ক্বিয়াম করে থাকেন। এখন আমাদের প্রশ্ন হলো-মীলাদ-ক্বিয়াম করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয বা নাজায়েয? পূর্ববর্তী কোন ইমাম-মুজ্তাহিদ বা অনুসরণীয় কোন বুযূর্গ ব্যক্তি মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন কি? নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা জানায়ে বাধিত করবেন।


জাওয়াব - মীলাদ-ক্বিয়াম এর অনুষ্ঠান করা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ জায়েয ও সুন্নতে উম্মত বা মুস্তাহ্সান। নাজায়েয বা বিদ্য়াত  মোটেও নয়।  কিছু লোক قلت علم ও قلت فهم অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, মীলাদ-ক্বিয়াম করা বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বা নাজায়েয। এ ব্যাপারে মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীদের খোরা ও অবাস্তব যুক্তি হলো- “মীলাদ-ক্বিয়ামের এরূপ পদ্ধতি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা এবং খাইরুল কুরুনের অর্থাৎ তিন যুগের কেউ বর্তমান পদ্ধতিতে মীলাদ-ক্বিয়াম করেননি, তাই এটা বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বা নাজায়েয।”

মূলতঃ যদি এটাই হয়ে থাকে, তবে বর্তমানে ক্বওমী বা খারেজী মাদ্রাসাগুলোতে যে পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হয়, ওটাও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বা নাজায়েয। কারণ খাইরুল কুরুনের কেউ এরূপ পদ্ধতিতে ইল্ম অর্জন করেননি এবং বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের যে তর্জ-তরীকা বা নিয়ম-পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলোও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। কারণ খাইরুল কুরুনে দ্বীন প্রচারের এরূপ পদ্ধতি ছিলনা। অনুরূপ মাদ্রাসায় পড়ায়ে বেতন নেয়া, মাদ্রাসার জন্যে চাঁদা আদায় করা, খতমে বুখারীর মাহ্ফিল করা, ওয়াজ মাহ্ফিলের জন্যে স্টেজ  ও প্যান্ডেল তৈরী করা ইত্যাদি আরো অনেক কাজই বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বা নাজায়েয হবে। কেননা উক্ত কাজগুলোও তো খাইরুল কুরুনের সময় ছিলনা বা উনারা কেউ করেননি। মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীরা এগুলোকে বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বা নাজায়েয ফতওয়া দিবেন কি? 

মূলকথা হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস ভিত্তিক কোন বিষয়, যদিও তা খাইরুল কুরুনের পর উদ্ভাবিত হোক না কেন তা অবশ্যই শরীয়তে জায়েয। আর কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস বিরোধী কোন বিষয়, যদিও তা খাইরুল কুরুনেই উৎপত্তি লাভ করুক না কেন ওটা শরীয়তে সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য। কেননা, খাইরুল কুরুনেই ৭২টি বাতিল ফেরকা (যেমন- খারেজী, রাফেজী, শিয়া, মুতাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া ইত্যাদি) উৎপত্তি লাভ করে, তবে কি উক্ত বাতিল ফেরকা সমূহ অনুসরণীয়? কখনই নয় বরং খাইরুল কুরুনে উৎপত্তি লাভ করা সত্ত্বেও তারা বাতিল ও গোমরাহ্ কারণ, তাদের আক্বীদা ও আমল কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ বিপরিত।

সুতরাং কোন বিষয় শরীয়তে জায়েয বা নাজায়েয হওয়ার জন্য খাইরুল কুরুনে হওয়া বা না হওয়া শর্ত নয় বরং তা জায়েয বা নাজায়েয প্রমাণ করার মাপকাঠি হলো- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস।
তাছাড়া বিদ্য়াত বা নতুন উদ্ভাবিত বিষয় বলতেই শরীয়তে পরিত্যাজ্য নয়। বরং অধিকাংশ ওলামা, ফুদালা, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, মুহাক্কিক ও মুদাক্কিকগণের মতে বিদয়াত প্রধানতঃ দুই প্রকার-(১) বিদয়াতে হাসানাহ্ (২) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্। যা হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, 
عن جرير- قال ...... قال النبى صلى الله عليه وسلم- من سن فى الاسلام سنة حسنة- فله اجرها واجر من عمل بها من بعده.... ومن سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها ووزر من عمل بها من بعده. (رواه مسلم)
অর্থঃ- হযরত জরীর বিন আব্দুল্লাহ্ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে কেউ দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত) তার জন্য সে সাওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে তার সাওয়াবও সে পাবে। আবার যে কেউ দ্বীন ইসলামে কোন শরীয়ত বিরোধী পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে তার গুনাহ্ সে পাবে এবং তার পরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে তাদের গুনাহ্ও তার আমল নামায় দেয়া হবে।” (মুসলিম শরীফ)

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত শরাহ্ মিরকাত শরীফ-এ উল্লেখ করেন যে, 
قال الشا فعى رحمه الله تعالى مااحدث مما يخالف الكبتاب او السنة او الاثر او الاجماع فهو ضلالة. ومااحدث ممالا يخالف شيأمما ذكر فليس يمذ مؤم.
অর্থঃ-“ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- যে নতুন উদ্ভাবিত কাজ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, আছার (ছাহাবাই কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের আমল বা ক্বওল) অথবা ইজমার বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত, সেটাই গুমরাহী ও নিকৃষ্ট। আর যে নতুন উদ্ভাবিত কাজ উল্লেখিত কোনটির বিপরিত বা বিরুদ্ধ নয়, তা মন্দ বা নাজায়েয নয়।”

বিদ্য়াতের অনুরূপ সংজ্ঞা বা বক্তব্য ওমদাতুল ক্বারী শরহ্ েবুখারী জাওয়াহিরুল বিহার, শরহুল মুসলিম, জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ইরশাদুল উনূদ, তাহ্যীবুল আসমা ওয়াল লোগাত, ফতহুল মুলহিম, ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্বীন, মোজাহেরে হক্ব, ফাতহুল মুবীন শরহে বুখারী, আশয়্যাতুল লোময়াত, শামী, ইশবাউল কালাম, হুসনুল মাকাছেদ ইত্যাদি আরো অনেক কিতাব সমূহে রয়েছে। কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো। বিদ্য়াত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১৫ তম সংখ্যা পাঠ করুন। 
সুতরাং বিদ্য়াতের উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে সকল নতুন বিষয়সমূহ উৎপত্তি লাভ করবে, উহা যদি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের বিপরীত বা বিরুদ্ধ না হয়, তবে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়। আর যারা এরূপ নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবেন, তারা অশেষ সাওয়াবের অধিকারী হবেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি লাভে সামর্থ হবেন। 

মূলতঃ মীলাদ-ক্বিয়াম অনুরূপই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সমর্থিত একটি আমল, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই জায়েয। কেননা, কেউ প্রমাণ করতে সক্ষম হবেনা যে, মীলাদ-ক্বিয়ামের মধ্যে যেসকল আমল রয়েছে, উহার একটিও শরীয়ত বিরোধী, বরং উহার প্রত্যেকটাই শরীয়তসম্মত। যেমন- মীলাদ শরীফ-এর প্রথমেই পবিত্র কালামে পাক হতে তিলাওয়াত করা হয়। অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সালাত অর্থাৎ দরূদ শরীফ পাঠ করা হয়। বরকত লাভের উদ্দেশ্যে “তাওয়াল্লুদ শরীফ” অর্থাৎ পবিত্র বিলাদতের বর্ণনা আলোচনা করা হয় এবং সম্মানার্থে ও আদব রক্ষার্থে ক্বিয়াম করে বা দাঁড়িয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সালাম পাঠ করা হয়। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ঈমানদারদেরকে উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত ও সালাম পাঠ করার আদেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন,
ياايهالذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত ও সালাম পাঠ কর।”

উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর গুরুত্ব ও মাহাত্বের দিকে লক্ষ্য করে পরবর্তী মুজ্তাহিদ আলেমগণ (বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে মীলাদ শরীফ পাঠ করে থাকি) মীলাদ-ক্বিয়ামের এরূপ পদ্ধতি নির্ধারণ করেন। উদ্দেশ্য হলো- যেন সকলেই অল্প সময়ের মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সানা-ছিফত করতে ও উনার প্রতি দুরূদ ও সালাম পাঠ করতে পারেন। যেমন- বর্তমানে মাদ্রাসাগুলোতে যে সিলেবাস বা শিক্ষা পদ্ধতি চালু রয়েছে, তা আগে ছিলনা। এরূপ সিলেবাস পদ্ধতি নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য হলো- যাতে ছাত্ররা অল্প সময়ের মধ্যে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ পড়ার ও বুঝার মোটামুটি যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। সুতরাং মীলাদ-ক্বিয়ামের মূল উদ্দেশ্য হলো- সংক্ষেপে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত করা এবং দরূদ ও সালাম পাঠ করা।

মীলাদ শরীফ মূলতঃ তিনটি শব্দের সমষ্টি। যেমন- ميلاد (মীলাদ) অর্থাৎ জন্মের সময়, مولد (মাওলিদ) অর্থাৎ জন্মের স্থান এবং مولود (মাওলূদ) অর্থাৎ সদ্য প্রসূত সন্তান। অতএব সব মিলায়ে মীলাদ শরীফ-এর অর্থ দাঁড়ায়- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত ও জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা ও উনার প্রতি সালাত-সালাম পাঠ করা।
মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এরূপ ছানা-সিফত করা পবিত্র বিলাদতের আলোচনা করা, মহান আল্লাহ্ পাক উনার, হযরত ফেরেশতা, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি সকলেরই সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফের সকল স্থানেই উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত করেছেন এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও উনার ফেরেস্তাগণ সর্বদা উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করছেন। অনুরূপ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা সীমাহীনভাবে সাইয়্যিদুূল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার ছানা-সিফত করেছেন ও সর্বদাই ওনার প্রতি সালাত এবং সাল্লাম পাঠ করতেন। 

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে- “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে, হযরত আবু আমের আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘরে গেলেন। তিনি সেখানে দেখতে পেলেন যে, হযরত আবু আমের আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিজ সন্তানাদি ও আত্মীয়-স্বজনদের একত্রিত করে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত (জন্ম বৃত্তান্ত)-এর আলোচনা করছেন। এটা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত খুশি হলেন এবং বললেন, হে আমের! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তোমার জন্য উনার রহ্মতের দ্বার উন্মুক্ত করেছেন এবং সকল ফেরেস্তাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। আর যারা তোমার ন্যায় এরূপ আমল করবে, তারাও তোমার ন্যায় নাযাত পাবে।” (কিতাবুত-তানবীর ফী মাওলুদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মোস্তফা)।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে যে, একদিন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানকার সকল লোকদেরকে উনার নিজ ঘরে একত্রিত করে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র (বিলাদত) জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করেন, যা শুনে উপস্থিত সকলেই আনন্দচিত্তে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর সালাত ও সালাম পাঠ করেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
 حلت لكم شفاعتى.অর্থাৎ তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল। (মাওলুদুল কাবীর, দুররুল মুনাজ্জাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মোস্তফা)

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, সকলে একত্রিত হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতের আলোচনা করা, ওনার প্রতি সালাত ও সালাম পাঠ করা সুন্নতে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين.
অর্থঃ- “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীন তথা হেদায়েত প্রাপ্ত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের সুন্নত অবশ্য পালনীয়।” 
আর তাই দেখা যায়, পূর্ববর্তী অনেক ইমাম-মুজ্তাহিদগণ মীলাদ-ক্বিয়ামকে জায়েয বলেছেন ও সুন্নাত আদায় করার লক্ষ্যে নিজে মীলাদ-ক্বিয়ামের মজলিস করতেন। যেমন- বিশিষ্ট মুজ্তাহিদ, ইমাম তকীউদ্দীন সাবকী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজে মীলাদ-ক্বিয়াম করতেন এবং এটা জায়েয বলেন। শায়খ আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে ক্বালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, হাফেজ ইবনে হাজর মক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুফাস্সিরীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা প্রত্যেকেই উনার স্ব-স্ব কিতাবে মীলাদ-ক্বিয়াম জায়েয হওয়া সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা করেন।

তাছাড়া যিনি সর্ব প্রথম পাক-ভারত উপমহাদেশে হাদীছ শরীফ-এর প্রচার-প্রসার করেন অর্থাৎ বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আশ্রাফ আলী থানবী সাহেবের পীর, শায়খুল আরব ওয়াল আজম, হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মোহাজেরী মক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর হিদায়েতের কাজ করনেওয়ালা, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত আবু বক্বর সিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হাফেজে হাদীছ, আল্লামা রুহুল আমীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ন্যায় সর্বজন স্বীকৃত, অনুসরণীয় আলেম ও বুযূর্গগণের প্রত্যেকেই মীলাদ-ক্বিয়াম করতেন ও উনাদের স্ব-স্ব কিতাবে লিখেছেন যে, মীলাদ-ক্বিয়াম সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহ্সান, জায়েয তো বটেই।

উল্লেখিত বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজন স্বীকৃত ও অনুসরণীয় ইমাম-মুজ্তাহিদ, আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের কিতাবসমূহ হতে নিম্নে মীলাদ-ক্বিয়াম জায়েয হওয়ার কতিপয় দলীল পেশ করা হলো-
বিখ্যাত মুহাদ্দিস, শায়খ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর كرامات عزيزيه (কেরামাতে আযীযিয়াহ্) নামক কিতাবে উল্লেখ করেন,

ঊদূ লেখা ঢুকবে.....................................................................................
অর্থঃ- “সারা বৎসরে এই ফকীরের ঘরে দুই বার মাহ্ফিল হয়ে থাকে। প্রথমটি আশুরা অথবা তার ২/১ দিন পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহ্ফিলে ৪০০/৫০০ কখনো হাজার লোকও সমবেত হয়ে থাকে। উক্ত মাহ্ফিলে ইমাম হাসান, হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জীবনী হাদীছ শরীফ হতে আলোচনা করা হতো। ....
দ্বিতীয় মাহ্ফিলটি হতো মীলাদ শরীফের মাহ্ফিল। এতে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী (হাজার) লোক উপস্থিত হতো এবং দরূদ শরীফ পাঠে মশগুল হতো। অতঃপর আমি নিজেই সেখানে উপস্থিত হতাম।”
মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী সাহেবসহ সকল ওলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আযম আল্লামা হাজী এমদাদুল্লাহ্ মুহাজেরে মক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার হাফতে মাসায়েল কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
---
অর্থঃ- “মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলকে বরকত লাভের ওসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফের মজলিস করি এবং মীলাদ মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করি।
বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীন প্রচারকারী আল্লামা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রিসালাতুল ফায়সালা কিতাবে উল্লেখ করেন যে,

ঊদূ লেখা ঢুকবে.....................................................................................


অর্থঃ- “আমি ‘মুলাখ্যাছ’ কিতাবে ২৫ জন আলেম ও ইমামের বাণী ও কর্ম দ্বারা এবং নিজ তরীক্বার বুযুর্গদের বাণী ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফকে যথার্থভাবেই (জায়েয) সাব্যস্ত করেছি। মীলাদ নিষেধকারী ব্যক্তি হলেন মাত্র ফাকেহানী মালেকী। সুতরাং (মীলাদ জায়েয বলে ফতওয়া দানকারী) বৃহৎ জামায়াতের মতের বিরুদ্ধে তার এ ধোকাবাজী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আর, একজন মুজ্তাহিদ ও মক্কা শরীফের দু’জন বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ প্রাচীন আলেমের ফতওয়া ও বিখ্যাত কিতাবসমূহ এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফে “ক্বিয়াম” করা জায়েয প্রমাণ করেছি। আর উক্ত ক্বিয়াম, ক্বিয়ামে তা’যীমী বিধায় উহাকে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা (জায়েয) প্রমাণ করেছি।”
মাওলানা আশ্রাফ  আলী থানবী সাহেব তার طريقةء مسلاد(তরীকায়ে মীলাদ)  কিতাবের ৮ম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
ভাবার্থ ঃ- ঐ সকল কার্যাবলী (অর্থাৎ শীরনী, ক্বিয়াম ইত্যাদি) প্রকৃতপক্ষে মুবাহ্ কাজসমূহের অন্তর্ভূক্ত। তাতে কোন ক্ষতি নেই এবং সেজন্য প্রকৃত মীলাদ শরীফের ব্যাপারে কোন প্রকার নিষেধ আসতে পারেনা। উনার ইমদাদুল ফতওয়ার ৪র্থ খন্ডে ৩২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
والاحتفال بذكر الولادة ان كان خاليا عن البد عات المروجة جائز بل مندوب كسائر اذكارة صلى الله عليه وسلم- والقيام عند ذكر ولادته الشريفة حاشا الله ان يكون كفرا.
অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের বর্ণনা করার জন্য মাহ্ফিল করা জায়েয বরং মোস্তাহাব, যখন উহা (হিন্দুস্থানে) প্রচলিত বিদ্য়াত হতে পবিত্র হবে এবং (মীলাদ শরীফে) তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করার সময় ক্বিয়াম করা কখনো কুফরী নয়।
মীলাদ শরীফে ক্বিয়াম করা প্রসঙ্গে ব্জèৈঃ“ব্ধৈ (আল উসীলা) নামক কিতাবের ৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয় যে,
فى الدر المنظم ان القيام عند وضعه صلى الله عليه وسلم لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- শাহ্ আব্দুল হক এলাহাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় দুররুল মুনাজ্জাম কিতাবে লেখেন যে, হুযূর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনার সময় তাঁর সম্মানার্থেই ক্বিয়াম করা হয়।
সীরাতে হালবীয়া سيرة حلبيه কিতাবের ১ম খন্ড ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
جرت عادة كشيرة من المحبين اذا سمعوا بذكر وضعه صلى الله عليه وسلم ان يقاموا لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অধিকাংশ মহব্বতকারীগণের স্বভাব এটাই ছিল যে, তারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম বিবরণ শুনে সাথে সাথেই ক্বিয়াম করেন।
বড় কাটারা ও লালবাগ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, মুজাহিদে আযম, খাদেমুল ইসলাম, হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্বিয়াম সম্পর্কে উনার “তাসাউফ তত্ত্ব” কিতাবে লিখেন যে, মীলাদ শরীফের মধ্যে ক্বিয়াম করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।”
তাছাড়া আকাবারে দেওবন্দ তাদের কিতাবসমূহে বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মীলাদ-ক্বিয়াম করা হয়, এরূপ পদ্ধতিতে মীলাদ-ক্বিয়াম করাকে মোস্তাহাব বলেছেন। আর হিন্দুস্থানে মওলূদ খাঁ নামে যে সম্প্রদায় ছিল, যারা দাড়ী রাখতোনা, বাদ্য যন্ত্রসহ মীলাদ পাঠ করতো এবং বেপর্দাসহ আরো অনেক শরীয়ত বিরোধী কাজ সেখানে সংঘঠিত হতো, এরূপ মীলাদ-ক্বিয়ামকেই আকাবারে দেওবন্দ বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বা নাজায়েয ফতওয়া দেন। মূলতঃ এরূপ মীলাদ-ক্বিয়ামকে আমরাও নাজায়েয ও বিদ্য়াত বলে থাকি। আর তাই তারা কিতাবে লিখেন- মীলাদ মাহ্ফিলে যদি হিন্দুস্থানে প্রচলিত বিদ্য়াত বেশরা কাজ সংঘটিত না হয়, তবে তা অবশ্যই জায়েয ও মোস্তাহাব। 
উপরোক্ত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের বর্ণনা দ্বারা এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ-ক্বিয়াম করা জায়েয, সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান। বিদ্য়াত বা নাজায়েয মোটেও নয়। আরো প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী বহু অনুসরণীয় ও সর্বজন মান্য ও স্বীকৃত ইমাম, মুজ্তাহিদ আলেম, ফাযেল, মুফতী, মুহাদ্দিস সর্বপোরী অসংখ্য ওলী আল্লাহ্গণ নিজেরা মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন এবং উহা জায়েয বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন তিনি উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন যে,
ومن يشاقق الرسول من بعد ماتبين له الهدىى ويتبغ غير سبيل المؤمنين نوله ماتولى.
অর্থঃ- “যে কারো নিকট হিদায়েত বিকশিত হওয়ার পর রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  বিরুদ্ধাচরণ করবে আর মু’মিনগণের পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো যে দিকে সে ফিরেছে।”
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
ماراه المسلمون حسنى فهو عند الله حسن. لاتجتمع امتى على الضلالة. (مشكوة شريف)
অর্থঃ- “মুসলমানগণ (দ্বীনদার পরহেযগার আলেমগণ) যেটাকে ভাল মনে করেন, আল্লাহ্ পাক ও সেটাকে ভাল মনে করেন। আর আমার উম্মতগণ কখনো গোমরাহীর উপর একমত হবে না।” (মিশকাত শরীফ)

সুতরাং মীলাদ-ক্বিয়াম যেহেতু অসংখ্য আলেম, ফাযেল, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, ফক্বীহ, বুজুর্গ, ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরামগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত ও পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ মুসলমান মীলাদ-ক্বিয়াম করেন ও ওটাকে উত্তম মনে করেন সেহেতু মীলাদ-ক্বিয়াম করা শরীয়তে সম্পূর্ণ জায়েয বরং সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান। আর মীলাদ-ক্বিয়ামকে বিদ্য়াত ও নাজায়েয বলা গোমরাহী ও অজ্ঞতার নামান্তর।

এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, অনেকে বলে থাকে মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী ও রশীদ আহ্মদ গাঙ্গুহী সাহেব মীলাদ-ক্বিয়াম করা বিদ্য়াত বলেছে, অথচ তাদের পীর সাহেব যিনি শায়খুল আরব ওয়াল আযম হযরতুল আল্লামা হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি নিজে মীলাদ ক্বিয়াম করেছেন এবং মীলাদ ক্বিয়ামকে সাবিত করার জন্য তার পক্ষে কিতাবও লিখেছেন।

সুতরাং মীলাদ-ক্বিয়াম করা যদি বিদ্য়াতই হয়, তবে তাদের ফতওয়া মোতাবেক হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিদয়াতী, আর বিদয়াতীরা গোমরাহ্র অন্তর্ভূক্ত।  যেহেতু উনি বিদ্য়াতী ও গোমরাহ্, সেহেতু ওনার মুরীদ- মুতাক্বেদ যারা, তারাও বিদয়াতী ও গোমরাহ্। তার মধ্যে অন্যতম বিদ্য়াতী ও গোমরাহ্ হলো আশ্রাফ আলী থানবী সাহেব ও রশীদ আহ্মদ গাঙ্গুহী সাহেব। কেননা তারা ওনার বিশিষ্ট মুরীদের অন্তর্ভূক্ত। এক কথায় ওলামায়ে দেওবন্দ ও তাদের অনুসারী সকলেই বিদ্য়াতী ও গোমরাহ্-এর অন্তর্ভূক্ত। অথচ মীলাদ-ক্বিয়াম অবশ্যই জায়েয বরং সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান, আর হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজেরে মক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি সর্বজনমান্য ও অনুসরণীয় বুজুর্গ, হক্বানী আলেম, ওলী আল্লাহ পাক উনার অন্তর্ভূক্ত। 

উপরোক্ত দলীল ছাড়াও নিম্নোক্ত কিতাব সমূহে মীলাদ-ক্বিয়ামকে জায়েয বা সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান বলা হয়েছেঃ- (১) কিতাবুত্ তান্বীর ফী মাওলুদিল বাশার ওয়ান্নাযীর, (২) সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মোস্তাফা।, (৩) হুসনুল মাকাছেদ, (৪) সীরতে শামী, (৫) সীরতে নববী, (৬) যুরক্বানী, (৭) ইমদাদুল মোশতাক্ব, (৮) মাছাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, (৯) আদ্ দুররুল মুনাজ্জাম ফী বায়ানে হুকমু মাওলুদিন নবীয়্যিল আ’যম, (১০) সাবীলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতে খাইরিল ইবাদ, (১১) আল ইন্তিবাহ্ ফী সালাসিলে আওলিয়াইল্লাহ্, (১২) ফাতহুল মুবীন শরহে আরবাঈন লি ইমাম নববী, (১৩) মিয়াতে মাসায়িল, (১৪) মিরআতুয্ যামান, (১৫) মিছবাহুয্ যুজাজাহ্ আলা সুনানে ইবনে মাজাহ্, (১৬) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (১৭) নি’মাতুল ক্বোবরা, (১৮) আল মাওলূদুল কাবীর, (১৯) ইশবাউল কালাম, ফী ইছবাতিল মাওলুদে ওয়াল ক্বিয়াম, (২০) আশ্ শিফা লি ক্বাজী আয়াজ, (২১) আল মুলাখ্যাছ, (২২) কিতাবুস্ সীরাতিল মুহম্মদিয়াহ্ ওয়াত্ তরীক্বাতিল আহ্মদিয়া, (২৩) আল জাওহারুল মুনাজ্জাম, (২৪) আল ইনসানুল উয়ুন, (২৫) ইক্বদুল জাওহার, (২৬) আস্সুলুকুল মুয়াজ্জাম, (২৭) ক্বিয়ামুল মিল্লাহ্, (২৮) জামিউল ফত্ওয়া, (২৯) নুয্হাতুল মাজালিস, (৩০) মিশকাত শরীফ, (৩১) মিরকাত শরীফ, (৩২) লোময়াত্, (৩৩) আশয়্যাতুল লোম্য়াত, (৩৪) রদ্দুল মোহ্তার, (৩৫) হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ্ (৩৬) ফতওয়ায়ে বরকতীয়া, (৩৭) আহ্কামে শরীয়ত, (৩৮) সুন্নী বেহেশ্তী জিওর, (৩৯) জায়াল হক্ব, (৪০) মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আযীযিয়াহ্, (৪১) মাওয়ায়েজে আশ্রাফিয়া, (৪২) আশ্রাফুল জাওয়াব, (৪৩) মাক্তুবাতে মাদানী, (৪৪) হাশিয়ায়ে হায়দারী, (৪৫) মরকূমাতে ইমদাদিয়াহ্ ইত্যাদি কিতাব ছাড়াও আরো বহু কিতাবে উল্লেখ আছে।
আবা-২৮

0 Comments: