৪২৪ নং- সুওয়াল - জোয়াল্লিন ও দোয়াল্লিন-এর মধ্যে কোনটি সঠিক?

সুওয়াল - মাসিক মদীনা জুন/৯৫ঈসায়ী সংখ্যায় নিম্নের প্রশ্নত্তোরটি ছাপানো হয়- প্রশ্নঃ- জোয়াল্লিন ও দোয়াল্লিন-এর মধ্যে কোনটি সঠিক? উত্তরঃ- উভয়টিই ঠিক। আরবের বিভিন্ন অঞ্চল ও গোত্রের মধ্যে কোন কোন হরফের উচ্চারণে কিছুটা বিভিন্নতা রয়েছে। সেসব বিভিন্ন উচ্চারণে কুরআন পাঠ বৈধ বলে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে। সুতরাং এ নিয়ে বিবাদ করার কোন কারণ নেই। এখন প্রশ্ন হলো- মাসিক মদীনার উক্ত উত্তর অনুসারে “দোয়াল্লীন-এর স্থলে জোয়াল্লীন” পড়লে নামায হবে কিনা?

 জাওয়াব - মাসিক মদীনার উক্ত উত্তর সম্পূর্ণরূপে ভুল, অসুদ্ধ, বানোয়াট, কল্পণাপ্রসুত, বিভ্রান্তিকর ও অজ্ঞতামূলক। মূলতঃ দোয়াল্লীনকে জোয়াল্লীন, মাগদুবকে মাগজুব অর্থাৎ দোয়াদকে দাল ইত্যাদি অক্ষর পরিবর্তন করে পড়লে অর্থের পরিবর্তন হওয়ার কারণে লাহানে জলী হবে ও নামায বাতিল হয়ে যাবে। কেননা শামী কিতাবের ১/৬৫৯ পৃষ্ঠায় ও মারাকিউল ফালাহ্ কিতাবের টিকা তাহ্তাবীর ১৯৮নং পৃষ্ঠায় লিখিত রয়েছে- যদি কেউ এক অক্ষরের স্থলে অন্য অক্ষর পরিবর্তন করে, এক্ষেত্রে যদি উক্ত শব্দের মর্ম অতিরিক্ত বিকৃত হয়ে পড়ে কিম্বা উক্ত শব্দ অর্থশূণ্য হয়ে পড়ে, তবে উক্ত শব্দ কুরআন শরীফ-এর অন্যস্থলে থাকুক আর না থাকুক উহাতে নামায বাতিল হয়ে যাবে। কাজেই ضالين- কে دالين পড়লে অর্থের পরিবর্তন হয়। যেমন-ولامالضالين অর্থ- আর পথভ্রষ্টদের পথ  নয় এবং ولا الدالين অর্থ- পথ প্রদর্শনকারীদের পথ নয়। যা সম্পূর্ণ উল্টো অর্থ। আর এরূপ পড়লে কুফরী হবে। যেমন ফিক্বাহে আক্বরের টিকা ২০৫ পৃষ্ঠার মধ্যে লেখা রয়েছে-
فى المحبط سئل الامام الفضلى عمن يقرأ الطاء المعجمة مكان الضاد المعجمة او يقرأ اصحاب الجنة مكان اصحب النار او على العكس فقال لا يجرز اما مته ولو تعمد يكفر فلت اما كون تعمده كفرا فلا كلام فيه.
অর্থঃ- মুহীত কিতাবে আছে- ইমাম ফজলী রহমতুল্লাহি আলাইহি জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, কোন ব্যক্তি দোয়াদ-এর স্থলে জোয়া পড়ে কিম্বা “আছহাবুল” জান্নাহ্-এর স্থলে “আছহাবুন্নার” পড়ে অথবা উহার বিপরীত (পড়ে) তার সম্পর্কে। তদুত্তরে তিনি বলেছিলেন, তার ইমামতি করা জায়িয নেই। আর যদি সে স্বেচ্ছায় এরূপ করে, তবে সে কাফির হবে। হযরত আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় এরূপ পড়লে সে কাফির হবে, এতে মতভেদ নেই। তাহ্জীব কিতাবে আছে, ولو قرأ الضاد مكان الظاء او على العكس تفسد صلاته عند ابى حنيفة ومحمدوح.
অর্থঃ- যদি কেউ দোয়াদকে জোয়ার স্থলে অথবা জোয়াকে দোয়াদ-এর স্থলে পড়ে, তবে ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে তার নামায বাতিল হবে। ফতোয়ায়ে সিরাজিয়ার ২১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
ولو قرأ ولا الضالين يألذال او بالظاء عند عا مة المشاتخ رح تفسد صلاته.  অর্থঃ- অধিকাংশ ফক্বীহ্গণের মতে যদি কেউ ولا الضالين-এর (দোয়াদকে) (যাল) অথবা (জোয়া)-এর দ্বারা পরিবর্তন করে পড়ে, তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। মুনইয়াতুল মুসাল্লী কিতাবে বলা হয়েছে, اما اذا قرأ مكان الذال ظاء او قرأ الظاء مكان الضاد او على القلب تفسد صلاته عليه اكثهم الا ئمة.
অর্থঃ- অধিকাংশ ইমামগণের মতে যখন কেউ (যাল)-এর স্থলে (জোয়া) অথবা (দোয়াদ)-এর স্থলে (জোয়া) অথবা তার বিপরীত পড়ে, তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং নামাযের মধ্যে দোয়াল্লীন-এর স্থলে জোয়াল্লীন পড়লে লাহানে জলী হবে, নামায ফাসেদ হবে, ইচ্ছাকৃতভাবে এরূপ অক্ষর পরিবর্তন করে পড়লে কুফরী হবে এবং যে এরূপ পড়বে, তার ইমামতি করা জায়েয হবেনা, তার পিছনে নামায পড়লে নামায হবেনা। (তাফসীরে আযীযী, জাজরী, গায়াতুল বায়ান, কাওয়ায়েদে ছামারকান্দ, তাহ্তাবী, ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া, হুলইয়া, আলমগীরী, খাজানাতুল আহ্কাম, খাজানাতুল আকমাল, কাজিখান, খোলাছাতুল ফতওয়া, কাবেরী, ছগীরী ইত্যাদি) [পরবর্তীতে ইন্শাআল্লাহ্ আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় দোয়াল্লীন ও জোয়াল্লীন সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া দেয়া হবে।]
আবা-২৭

দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

0 Comments: