৪২৩ নং- ফারায়েজী আইনে তার সম্পত্তি কিভাবে ভাগ হবে?

সুওয়াল - হুমায়ূন আহমদ নামে জনৈক সাহিত্যিকের “শ্রাবণ মেঘের দিন” নামক তথাকথিত এক উপন্যাস কোন এক মাধ্যমে আমার হাতে এসে পৌঁছার পর উক্ত গ্রন্থের ৬০ পৃষ্ঠার কিছু সংলাপ আমার কাছে মারাত্মক আপত্তিজনক বলে মনে হলো। তাই আমি সেটা তুলে পাঠালাম। এখন এর প্রকৃত সমাধান কি হবে, সেটা জানালে বাধিত হবো। আর এ ধরণের তথাকথিত লেখকদের শরীয়তের দৃষ্টিতে কি ফয়সালা হওয়া উচিত তাও জানিতে বাসনা রাখি। “আমাদের আল্লাহ্র অংক জ্ঞান তেমন সুবিধার ছিলনা- অংকে তিনি সামান্য কাঁচা। সম্পত্তি ভাগের যে আইন কুরআন শরীফ-এ আছে, সেখানে ভুল আছে। যে ভুল হযরত আলী পরে ঠিক করেছিলেন, যাকে বলে আউল।” ...... যেমন ধরুন, এক লোকের বাবা আছে, মা আছে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রী আছে, সে মারা গেল। ফারায়েজী আইনে তার সম্পত্তি কিভাবে ভাগ হবে? মা পাবে ১/৬, বাবা ১/৬, দুই মেয়ে ২/৩, স্ত্রী ১/৮ এদের যোগ করলে হয় ২৭/২৪ তা তো হতে পারেনা।”

 জাওয়াব - এ প্রশ্নে হুমায়ূন আহমেদ নামে জনৈক এক উপন্যাসিকের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তার রচনায় হীন উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে মহান আল্লাহ্ পাক উনার প্রতি উদ্ধত্য ও ধৃষ্টতামূলক মন্তব্য এবং  কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফকে ভুল বলে উদ্ভট আখ্যা দেয়া হয়েছে। যা সরাসরি আল্লাহ্দ্রোহী ও কুফরীর শামিল।
 এছাড়া হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কেও অশালীন ও কটু মন্তব্য করা হয়েছে। কয়েকটি ভাগে আলোচ্য প্রশ্নের জবাব দেয়া হলো- 
(ক) কবি, সাহিত্যিক ও সাহিত্য সম্পর্কে শরীয়তের ব্যাখ্যা।
 (খ) সৃষ্ট চরিত্রের মুখে উচ্চারিত সংলাপের জন্য সংশ্লিষ্ট কবি-সাহিত্যিকই দায়ী।  
(গ) সেমতে হুমায়ূন আহমেদকে চিহ্নিতকরণ। 
(ঘ) ফারায়েজের বর্ণনা। 
(ঙ) ভগ্নাংশের বর্ণনা।  
(চ) ওয়ারিশদের বর্ণনা। 
(ছ) ইজ্তিহাদের বর্ণনা। 
(জ) আওল ও রদ্ব-এর বর্ণনা। 
(ঝ) হুমায়ূন আহমেদের বক্তব্য খন্ডন ও তার জওয়াব। 
(ঞ) তোমরা যারা জাননা, যাঁরা জানেন উনাদের কাছে জিজ্ঞেস করে নাও। 
(ট) সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে কৃত অপরাধের প্রেক্ষিতে হুমায়ূন আহ্মেদের পূনঃ নামকরণ। 
(ঠ) দেশের সরকার ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কর্তব্য।  
(ড) শরয়ী দৃষ্টিতে হুমায়ূন আহমেদের ফায়সালা।  
(ঢ) মুরতাদের শাস্তির হুকুম। 
  
(ক) কবি, সাহিত্যিক ও সাহিত্য  সম্পর্কে শরীয়তের ব্যাখ্যা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফে কবি-সাহিত্যিকদের কবিতা ও সাহিত্য ইত্যাদি রচনার ব্যাপারে নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কারা হেদায়েত প্রাপ্ত এবং কারা বিভ্রান্ত, তার বর্ণনাও দিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি এই বিভ্রান্ত কবি-সাহিত্যিকদের সম্পর্কে  কুরআন শরীফ-এ সূরা শুয়ারায় বলেন, 
والشعراء يتبعهم الغاون- الم ترأ نهم فى كل واد يهيمون- وانهم يقولون مالا يفعلون- الا الذين امنوا وعملوا الصالحات وذكر وا الله كشيرا وانتضروان من بعد ما ظلموا- وسيعلم الذين ظلموا اى منقلب ينقلبون.  অর্থঃ- “গোমরাহ্ (বিভ্রান্ত এবং পথভ্রষ্ট) লোকেরাই কবি-সাহিত্যিকদের অনুসরণ করে। আপনি কি দেখেন না যে, নিশ্চয়ই তারা (কবি-সাহিত্যিকরা) প্রতি ময়দানে (সর্বক্ষেত্রে) উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং নিশ্চয়ই তারা যা বলে, তা করেনা? তবে (কবি-সাহিত্যিকদের মাঝে) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে এবং (স্বীয় কবিতা-সাহিত্যের দ্বারা দ্বীন প্রচারের মাধ্যমে) বেশী বেশী মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে স্মরণ করেছে এবং যারা অত্যাচারিত, মজলুম হওয়ার পর (নিন্দাসূচক কবিতা-সাহিত্যের দ্বারা) উহার প্রতিশোধ গ্রহণ করে (তারা পথভ্রষ্টের অন্তর্ভূক্ত নয়) এবং অতিশীঘ্রই জালেম সম্প্রদায় জানতে পারবে, তারা কিরূপ প্রত্যাবর্তন স্থানে প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা শুয়ারা/২২৪-২২৭) যখন এ আয়াত শরীফসমূহ নাযিল হলো, তখন হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্নে রাওহা, হযরত হাস্সান ইব্নে সাবিত, হযরত কা’ব ইব্নে মালিক প্রমুখ বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা কাঁদতে কাঁদতে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হাজির হয়ে আরজ করলেন- ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কবি-সাহিত্যিকদের সম্পর্কে নাযিল করেছেন, “গোমরাহ্ লোকেরাই কবি-সাহিত্যিকদের অনুসরণ করে। আপনি দেখেন না যে, নিশ্চয়ই তারা (কবি-সাহিত্যিকরা) প্রতি ময়দানে (সর্বক্ষেত্রে) উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং নিশ্চয়ই তারা যা বলে, তা করেনা?” অথচ আমরাও কবিতা ও সাহিত্য রচনা করে থাকি। তাহলে আমাদের উপায় কি? তখন মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন এ সূরার শেষ আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করতে বলেন। তাতে বলা হয়েছে যে, “যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে এবং বেশী বেশী মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে স্মরণ করেছে এবং যারা মজলুম হওয়ার পরে উহার প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে (তারা পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত নয়),” সুতরাং তাদের সম্পর্কে পূর্বে আয়াত শরীফ প্রযোজ্য নয়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, “উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার কারণ হচ্ছে, তোমরা যে কবিতা-সাহিত্য রচনা করবে, তার মধ্যে যেন অশ্লীল, অশালীন, অর্থহীন, গোমরাহীপূর্ণ এবং ভ্রান্ত উদ্দেশ্য প্রণোদিত কোন কথা রচনা না করো। আর মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সত্যকে মিথ্যা থেকে পার্থক্য করার জন্য অর্থাৎ কারা হেদায়েত প্রাপ্ত আর কারা বিভ্রান্ত- তাদের চিহ্নিত করার জন্যও মহান আল্লাহ্ পাক তিনি এই আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন।  এরপর উনারা এতমিনান বা আশ্বস্ত হলেন যে, উনারা উদ্ভ্রান্ত নন এবং বিভ্রান্তকারী অশ্লীল, অশালীন কবিতা বা সাহিত্য রচয়িতা নন। বরং উনারা মহান আল্লাহ্ পাক উনার এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কবিতা-সাহিত্য রচনাকারী। হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, একবার মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কবিতা (সাহিত্য) সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তখন তিনি বলেন,
هو كلام مخسنه حشن وقبيح.  অর্থঃ- “কবিতা-সাহিত্য একপ্রকার বাক্য। তার ভালটা ভাল এবং তার মন্দটা মন্দ।” মন্দ সাহিত্য সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ্ পাক রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
لان يمتلى جوف رجل تيحا يره خير من ان يمتلى شعرا.  অর্থঃ- “কোন ব্যক্তির পেটকে পুঁজ দ্বারা পূর্ণ করা, কবিতা (সাহিত্য) দ্বারা ভর্তি করার চেয়ে উত্তম।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
তিনি আরো বলেন,
 هلك المتنطعون قالها تلاثا.  অর্থঃ- “কথা অতিরঞ্জিতকারী ধ্বংস হয়েছে, তিনি এটা তিনবার বল্লেন।” (মুসলিম শরীফ)

 (খ) সৃষ্ট চরিত্রের মুখে উচ্চারিত সংলাপের জন্য সংশ্লিষ্ট কবি-সাহিত্যিকই দায়ী : প্রায়শঃই দেখা যায় যে ইসলাম বিদ্বেষী কবি সাহিত্যিকরা তাদের রচনায় বিভিন্ন চরিত্রের দ্বারা মনগড়া সংলাপ বা কথোপকথনের মাধ্যমে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ইসলামদ্রোহী ও অবমাননামূলক বক্তব্য ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যখন জোরদার ব্যবস্থা নেয়া হয়, তখন তারা পার পেতে চায় এই বলে যে, সেসব ক্ষেত্রে তারা সাহিত্যের প্রয়োজনে সেগুলোর সমন্বয় ঘটিয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিশীল সাহিত্যে সাহিত্যিকই  এসব ক্ষেত্রে সর্বাংশে অভিযুক্ত হবে। কারণ এটা সম্পূর্ণরূপে তার নিজস্ব অনুভূতির দ্বারা তৈরী। 

(গ) সে মতে হুমায়ুন আহমেদকে চিহ্নিতকরণ : হুমায়ূন আহমেদ বা এ ধরণের মুরতাদ, নাদান লেখক, কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, ছড়াকার, তারা মূলতঃ তাদের বিদেশী প্রভূদের দ্বারা পরিচালিত হয়। এদের এ প্রভূরা হচ্ছে- বিধর্মী, কাফের, নাস্তিক্যবাদের প্রবক্তা, তথাকথিত মূক্তবুদ্ধির চর্চাকারী বা প্রগতিবাদী ও ইসলাম বিদ্বেষী। এরা চায় মুসলমানকে ঈমান আনার পর কাফেরে পরিণত করতে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “আহ্লে কিতাবদের অনেকেই (বিধর্মীরা) তাদের নিকট সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের অন্তর্নিহিত হিংসাবশতঃ তারা চায় তোমরা (মুসলমানরা) ঈমান গ্রহণের পর তোমাদেরকে কাফির বানিয়ে দেয়।” (সূরা বাক্বারা/১০৯) আর এদের দ্বারা মদদপুষ্ট ও নির্দেশিত হয়ে এদেরই সেবাদাস, নির্ভেজাল কায্যাব, আশাদ্দোদর্জার জাহেল ও নির্বোধরা- ইসলামের প্রতি খারাপ ধারণা, সংশয়, সন্দেহ সৃষ্টি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ ধরণের ইসলাম বিদ্বেষীমূলক, জিহালতপূর্ণ প্রলাপ বকে থাকে বা লিখে থাকে। 

(ঘ) ফারায়েজের বর্ণনা : ইল্মে ফিক্বাহ্র যে শাখায় মুসলমানদের সম্পত্তি বন্টনের নিয়ম-নীতি, মাসয়ালা-মাসায়েল বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে, তাকে ফারায়েজ শাস্ত্র বলে। ফারায়েজ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
تعلموا الفرائض وعلمو ها الناس فائها نصف العلم.  অর্থঃ- “তোমরা ফারায়েজ শিক্ষা গ্রহণ কর এবং মানুষকে তা শিক্ষা দাও। নিশ্চয়ই ফারায়েজ অর্ধেক ইল্ম।” (দারা কুতনী, মুস্তাদরেকে হাকেম) এ হাদীছ শরীফ থেকে ফারায়েজ সম্পর্কীয় ইল্ম যে কত গুরুত্বপূর্ণ এবং তত্ত্ববহ, তা প্রতীয়মান হয়। কাজেই এই গুরুত্বপূর্ণ এবং তত্ত্ববহ ইল্ম সম্পর্কে অনুধাবন করা হুমায়ূন আহ্মেদের মত নির্বোধের পক্ষে সত্যিই দূরহ ব্যাপার। ফারায়েজ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক  তিনি সূরা নিসার ১১-১২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমাদের সন্তানদের (অংশ পাওয়া) সম্বন্ধে পুত্রের অংশ দু’মেয়ের অংশের সমান, আর যদি মেয়ে (দুই বা) দু’য়ের অধিক হয়, তবে তারা মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তির দু’তৃতীয়াংশ পাবে। আর যদি একটিমাত্র মেয়ে হয়, তবে সে অর্ধাংশ পাবে। আর পিতা-মাতা অর্থাৎ উভয়ের প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তির পরিত্যাক্ত সম্পত্তির এক ষষ্ঠাংশ পাবে। যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান থাকে। আর যদি ঐ মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে এবং কেবল পিতা-মাতাই তার ওয়ারিশ হয়, তবে তার মাতার প্রাপ্য এক তৃতীয়াংশ। আর যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক ভাই-বোন থাকে, তবে তার মাতা এক ষষ্ঠাংশ পাবে, ওছিয়ত আদায় করার পর, যা মৃত ব্যক্তি ওছিয়ত করেছে। অথবা ঋণ (পরিশোধ)-এর পর। তোমাদের মূল (পিতা) ও শাখা (সন্তান)সমূহ যারা আছে, তোমরা পুরাপুরি জানতে পারনা যে, তন্মধ্যে কোন্ ব্যক্তি তোমাদের উপকার সাধনে অধিকতর নিকটবর্তী। এই আদেশ মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট হতে নির্ধারিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি মহা জ্ঞানী, বিজ্ঞানময়।  আর তোমরা অর্ধেক পাবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমাদের স্ত্রীগণ ত্যাগ করে গিয়েছে, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি ঐ স্ত্রীগণের কোন সন্তান থাকে, তবে তাদের ত্যাজ্য সম্পত্তি হতে তোমরা এক চতুর্থাংশ পাবে। ওছিয়ত আদায় করার পর, যা তারা ওছিয়ত করে যায় অথবা ঋণ (পরিশোধ)-এর পর। আর তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তি হতে এক চতুর্থাংশ পাবে, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের কোন সন্তান থাকে, তবে তারা তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তির এক অষ্টমাংশ পাবে, তোমাদের কৃত ওছিয়ত পৃথক করার পর অথবা ঋণ (পরিশোধ)-এর পর। আর এমন মৃত ব্যক্তি পুরুষ হোক বা নারী হোক, যার ওয়ারিশ অন্যে হবে- মূল ও শাখাবিহীন হয় এবং তার এক (বৈপিত্রেয়) ভাই অথবা এক বোন থাকে, তবে এতদুভয়ের প্রত্যেকেই এক ষষ্ঠাংশ পাবে। আর যদি তারা তদপেক্ষা (একের) বেশী হয়, তবে তারা সকলে এক তৃতীয়াংশের অংশীদার হবে, ওছিয়ত পূর্ণ করার পর। যেই ওছিয়ত করা হয়েছে অথবা ঋণ (পরিশোধ)-এর পর এই শর্তে যে, (ওছিয়তকারী ওয়ারিশদের) কারো ক্ষতি না করে। এ নির্দেশ মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহ্ পাক তিনি মহাজ্ঞানী, অতীব সহনশীল। উপরোক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ওয়ারিশগণের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের অনুপাত (অংশ) বর্ণনা করেছেন। আর এই অনুপাতই হচ্ছে ভগ্নাংশ।

(ঙ) ভগ্নাংশের বর্ণনা : এই ভগ্নাংশের ইতিহাস সম্পর্কে বলতে হয় যে, আল্লাহ্ পাকই প্রথম পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে ভগ্নাংশের কথা উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে খৃীষ্টপূর্ব সতেরশ শতকে মিশরে ভগ্নাংশের ব্যবহার শুরু হয়, তাও যৎসামান্য। আর ভগ্নাংশের আধুনিককালের ব্যবহার (যেমন অপ্রকৃত ভগ্নাংশ) শুরু হয়- সতের’শ খ্রীষ্টাব্দের পরে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফে চৌদ্দশত বছর পূর্বেই ভগ্নাংশের এই আধুনিক ব্যবহার সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন, যা তত্ত্বমূলক ও তথ্য সমৃদ্ধ। যেটা হুমায়ূন আহমেদের মত অপন্যাসিকের পক্ষে বোধগম্য না হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভগ্নাংশের অংক সম্পর্কে তার জ্ঞান এতই অপ্রতুল যে, সে ‘তিফ্লে মকতবাছত্ অর্থাৎ মকতবের শিশু তুল্য। ভগ্নাংশ সাধারণতঃ দু’প্রকার হয়ে থাকে- (১) প্রকৃত ভগ্নাংশ, (২) অপ্রকৃত ভগ্নাংশ। ভগ্নাংশের নিচের অংশকে বলা হয় ‘হর’ আর উপরের অংশকে বলা হয় ‘লব’। প্রকৃত ভগ্নাংশের লব সর্বদাই হর-এর চেয়ে ছোট হয়, যেমন ২৪/২৭। আর অপ্রকৃত ভগ্নাংশের লব সর্বদাই হর-এর সমান বা তার চেয়ে বড় হয়, যেমন- ২৭/২৪। 

(চ) ওয়ারিশদের বর্ণনা:  যাদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টিত হয়, তারা সাধারণতঃ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত- (ক) যাবিউল ফুরুজ, (২) আসাবা, (৩) যাবিউল আরহাম। কুরআন শরীফে যে সকল ওয়ারিশগণের অংশ বর্ণনা করা হয়েছে, তাদেরকে যাবিউল ফুরুজ বলা হয়। যাবিউল ফুরুজগণের জন্য ছয় প্রকার অংশ বর্ণিত হয়েছে- (ক) ১/২, (খ) ১/৪, (গ) ১/৮, (ঘ) ২/৩, (ঙ) ১/৩, (চ) ১/৬। যাবিউল ফুরুজ মোট ১২জন। তারমধ্যে ৪জন পুরুষ এবং ৮জন মহিলা। পুরুষ হচ্ছেন- (১) পিতা, (২) দাদা, (৩) বৈপিত্রেয় ভাই, (৪) স্বামী। আর মহিলারা হচ্ছেন- (১) স্ত্রী, (২) মেয়ে, (৩) পৌত্রি, (৪) সহোদরা বোন, (৫) বৈমাত্রেয়া বোন, (৬) বৈপিত্রেয়া বোন, (৭) মা, (৮) দাদি। মাইয়্যিতের সাথে যাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এবং যারা যাবিউল ফুরুজের নিদির্ষ্ট অংশ নেয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তির অধিকারী হয়, ফারায়েজের পরিভাষায় তাদেরকে আসাবা বলা হয়। আসাবা তিন প্রকার- (১) আসাবা বিনাফসিহী, যা শুধু পুরুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যেমন- (ক) ছেলে ও তার অধঃ বংশ, (খ) পিতা ও তার উর্ধ্ব বংশ, (গ) পিতার অধঃ বংশ, (ঘ) দাদার অধঃ বংশ। (২) আসাবা বিগাইরিহী। যাবিউল ফুরুজের বর্ণনায় যে সমস্ত মহিলাদের অংশ অবস্থাভেদে ১/২ ও ২/৩ ভাগ বর্ণিত হয়েছে, তারাই আসাবা বিগাইরিহীর অন্তর্ভূক্ত। (৩) আসাবা মা’আ গাইরিহী। যে সমস্ত মহিলারা অপর মহিলার বর্তমানে আসাবা হয়, তাদেরকে আসাবা মা’আ গাইরিহী বলা হয়। যেমন- মেয়ের বর্তমানে সহোদরা বোন বা বৈমাত্রেয়া বোন আসাবা হয়। যারা যাবিউল ফুরুজ বা আসাবা নয়, এমন আত্মীয়দেরকে ফারায়েজের পরিভাষায় যাবিউল আরহাম বলা হয়। যাবিউল আরহাম চার প্রকার। যেমন- (১) সন্তানের সন্তান- পৌত্র, দৌহিত্র, তাদের অধঃ বংশ। (২) যাদের সন্তানের সন্তান- নানা, নানী, দাদী, তাদের উর্ধ্ব বংশ। (৩) মাইয়্যিতের ভাই বোনের সন্তান। যেমন- ভাতিজি, ভাগিনি ইত্যাদি, তাদের অধঃ বংশ। (৪) দাদা-নানা বা দাদী-নানী, যেমন- ফুফু-খালা ইত্যাদি, তাদের অধঃ বংশ। উল্লেখ্য যে, আসাবা শ্রেণীর কোন ওয়ারিশ জীবিত থাকলে যাবিউল আরহামের কেউই ওয়ারিশ হবেনা। আবার যাবিউল ফুরুজের মধ্যে কেউ জীবিত থাকলে যাবিউল আরহামের কেউই ওয়ারিশ হবেনা। অবশ্য মাইয়্যিতের যাবিউল ফুরুজের মধ্যে শুধু স্বামী বা স্ত্রী থাকলে, আর আসাবা কেউই না থাকলে, অবশিষ্ট সম্পত্তি যাবিউল আরহামকে দেয়া হবে। 

(ছ) ইজতিহাদের বর্ণনা : মূলতঃ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সর্ব বিষয়েই উল্লেখ করেছেন এবং তার ফায়সালাও দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে- মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা আনআমের ৩৮নং আয়াত শরীফে বলেন,
ما فر طنا فى الكتاب من شيتى.
অর্থঃ- “আমি কিতাবে কোন বিষয়ে-ই তরক করিনি।” অর্থাৎ সর্ববিষয়েই উল্লেখ করেছি। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন,
كل فى كتاب مبين.
অর্থঃ- “সমস্ত কিছুই প্রকাশ্য কিতাবে উল্লেখ করেছি।” (সূরা হুদ, আয়াত নং-৬) আর এ কিতাবের বাস্তব প্রয়োগ দেখিয়েছেন- মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তেইশ বছরের হায়াতে তাইয়্যিবায় অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরআন শরীফ-এর সর্ব বিষয়ের ব্যাখ্যা করেছেন। যা আমরা হাদীছ শরীফ হিসেবে পেয়েছি। আর হাদীছ শরীফ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
تركت فيكم امرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كباب الله وسنة رسوله.  অর্থঃ- “আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতদিন পর্যন্ত তোমরা তা আঁকড়ে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা গোমরাহ্ হবেনা। মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব এবং আমার সুন্নাত (আদর্শ)।” (মুয়াত্তা) কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ-এর সুক্ষাতিসুক্ষ্ম বর্ণনাসমূহ পরবর্তী উম্মতদের জন্য অনুধাবন করা দূরহ হবে, সেজন্য মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সে সমস্ত বিষয় সুস্পষ্ট করে বর্ণনা দেয়ার জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে এবং পরবর্তীদের মধ্যে ফক্বীহ্ (সমঝদার) অর্থাৎ ইমাম, মুজ্তাহিদ এবং আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ উনাদেরকে এযাযত (অনুমতি) দিয়েছেন। তাই আমরা হাদীছ শরীফ-এ দেখতে পাই যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত মুয়াজ ইব্নে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইয়েমেনে গভর্ণর করে পাঠানোর প্রাক্কালে বলেছিলেন,
بم تقضى يا معاذ؟ فقال بكتاب الله، قال فان لم تجد؟ قال بسنة رسول الله، قال فان لم تحبد؟ قال اجتهد برائى، فقال الحمد لله الذى وفق رسول رسول الله بما يرضى به رسوله.  অর্থঃ- “হে মুয়াজ! তুমি কিসের দ্বারা ফায়সালা করবে? তিনি উত্তরে বলেন, মহান আল্লাহ্ পাক উনার কিতাবের দ্বারা। তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যদি উহাতে না পাও? তিনি জবাব দিলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (আপনার) সুন্নাতের দ্বারা। তখন তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, উহাতেও যদি না পাও? হযরত মুয়াজ ইব্নে যাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জাওয়াব দিলেন, তাহলে আমি (কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফ)-এর আলোকে) ইজ্তিহাদ করে ফায়সালা করবো। এটা শুনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ্ পাক উনার, যিনি উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিনিধিকে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছার তাওফিক দিয়েছেন, যাতে উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশী হন। তাদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি যার ভালাই চান, তাকে দ্বীনি সমঝ (ফিক্বহুন) দান করেন।” এ ইজ্তিহাদ করার প্রথম হক্বদার হচ্ছেন- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ। আর উনাদের মধ্যে প্রাধান্য প্রাপ্ত হচ্ছেন- হযরত খোলাফা-ই-রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ, উনাদের শানে মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, عليكم بسنتى وسنة خلفاء الراشدين المهدين تمسكوا بها وعضرا علها بالتواجد. অর্থঃ- “তোমাদের উপর আমার সুন্নাত (আদর্শ) এবং হেদায়াত প্রাপ্ত খোলাফা-ই-রাশেদীনের সুন্নাত (আদর্শ) পালন করা অপরিহার্য (ওয়াজিব)। আর তোমরা তাদের সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধর এবং উহাকে মাড়ীর দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে ধর।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্ ও আহ্মদ শরীফ) আর হযরত খোলাফা-ই-রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ইজ্তিহাদেরই ফসল হচ্ছে- এই আউল। মূলতঃ কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে মুজমাল আয়াত (অস্পষ্ট), যা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ ও তাফসীল আয়াত (স্পষ্ট), যা সহজবোধ্য তাদের সমন্বয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুজমাল আয়াত শরীফ থেকে মাসয়ালা বা আহ্কাম বের করার জন্য ইজতিহাদ বা ক্বিয়াস আবশ্যক। যেমন আবশ্যকীয় হয়েছে আওলের ক্ষেত্রে। 

 (জ) আওল ও রদ্ব-এর বর্ণনা : ফারায়েজ শাস্ত্রে সম্পত্তি বন্টনের সুবিধার্থে যে সমস্ত নিয়ম-কানুন বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আওল। তার বিপরীত হচ্ছে- রদ্ব। রদ্ব শব্দের অর্থ হলো ফিরায়ে দেয়া অর্থাৎ যাবিউল ফুরুজকে তার প্রাপ্য মীরাছ (অংশ) দেয়ার পর যে সম্পত্তি অতিরিক্ত থাকে, আর কোন আসাবাও না থাকে, তবে তা পুণরায় যাবিউল ফুরুজদের মধ্যে তাদের নির্দিষ্ট অংশ অনুযায়ী ফিরায়ে দেয়াকে ফারায়েজের পরিভাষায় রদ্ব বলা হয়। যেমন যদি দু’মেয়ে ওয়ারিশ হয়, আর স্বামী-স্ত্রী বা অন্য কোন ওয়ারিশ না থাকে, তবে ফারায়েজ মোতাবেক দু’মেয়ে ২/৩ অংশ সম্পত্তির ওয়ারিশ হয়। রদ্ব হওয়ার কারণে বাকী ১/৩ অংশ পুণরায় তাদের মধ্যেই সমহারে বন্টিত হবে। অর্থাৎ মাসয়ালা ৩ দিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু রদ্ব হওয়ার কারণে মাসয়ালা ২ দিয়ে হবে। রদ্বের সমস্ত সূরতেই অনুরূপভাবে অংশীদারগণের মাঝে সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে রদ্ব হয়না, যদি স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ওয়ারিশ না থাকে, তাহলে স্বামী ও স্ত্রী তাদের নির্দিষ্ট অংশ নেয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ইসলামী খিলাফত থাকলে বায়তুল মালে জমা হবে। আর যদি ইসলামী খিলাফত না থাকে, তাহলে ঐ অবশিষ্ট সম্পত্তি স্বামী কিম্বা স্ত্রী-ই পাবে রদ্ব হিসেবে।
 আওলের  সংজ্ঞা : 
আওল শব্দের অর্থ হলো- বৃদ্ধি, যা রদ্বের বিপরীত। যে ক্ষেত্রে যাবিউল ফুরুজদের মাঝে  কুরআন শরীফে বর্ণিত নির্দিষ্ট অংশ প্রদানের পর দেখা যায় যে, তাদের অংশের যোগফল মোট সম্পত্তির চেয়ে বেশী হয়ে যায়। (যোগফল ১-এর চেয়ে বেশী হয় বা লব, হরের চেয়ে বেশী হয়) সেক্ষেত্রে হরকে মূল না ধরে লবকে মূল ধরে  কুরআন শরীফে বর্ণিত অংশ মোতাবেক ওয়ারিশদের মধ্যে তাদের প্রাপ্য সম্পত্তির অংশ বন্টন করে দেয়ার নীতিকে আওল বলে। অথাৎ এক্ষেত্রে হরকে লব-এর সমান করার জন্য বৃদ্ধি করা হয় বলে একে আওল বা বৃদ্ধিনীতি বলে। যেমন কোন স্ত্রীলোকের যদি ওয়ারিশ শুধু স্বামী ও দু’সহোদরা বোন হয়, তবে স্বামী পাবে- ১/২ অংশ এবং দু’সহোদরা বোন পাবে- ২/৩ অংশ। অংশগুলির সমষ্টি = ১/২ + ২/৩ = ৩+৪/৬ = ৭/৬। এক্ষেত্রে ওয়ারিশদের প্রাপ্য সম্পত্তি কুরআন শরীফে বর্ণিত অংশ মোতাবেক ভগ্নাংশের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বন্টন করলে বন্টিত অংশসমূহের যোগফল মূল সম্পত্তি থেকে বেশী হয়ে যায়। কিন্তু ওয়ারিশদের প্রাপ্য সম্পত্তি বন্টনে সর্বাবস্থায়ই কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত অংশ অক্ষুন্ন রাখতে হবে। আর এই অক্ষুন্ন রাখার জন্যই হরকে মূল সংখ্যা হিসাবে গ্রহণ না করে লবকে মূল সংখ্যা হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। একেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্তিহাদকৃত আওল বলা হয়। আর এই আওলের ক্ষেত্রে কুরআন শরীফের আইনের কোন সংশোধনী করা হয়নি। বরং কুরআন শরীফের আইনকে অক্ষুন্ন রাখার জন্যই আওলের উদ্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে আওল হওয়ার কারণে সম্পত্তি বন্টন করতে হবে- ৬-এর পরিবর্তে ৭ দিয়ে। স্বামী পাবে-৩ ভাগ আর দু’সহোদরা বোন পাবে- ৪ ভাগ। অর্থাৎ  ৩+৪ = ৭। আওলের প্রবর্তক হলেন- খলীফাতুল মুসলিমীন, আমিরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি। যাবিউল ফুরুজের প্রাপ্য অংশ ছয় প্রকার। আর তার মাসয়ালা বা সংখ্যা হচ্ছে সাতটি। যেমন- ২, ৩, ৪, ৬, ৮, ১২ এবং ২৪। এরমধ্যে ২, ৩, ৪ এবং ৮-এর কোন আওল হয়না। ৬, ১২ এবং ২৪-এর আওল হয়। ৬-এর আওল হচ্ছে ৭, ৮, ৯ এবং ১০। আর ১২-এর আওল হচ্ছে ১৩, ১৫ এবং ১৭। যার উদ্ভাবক হলেন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি। আর ২৪-এর আওল হলো ২৭, যা মাসয়ালায়ে মিম্বরীয়া নামে মশহুর। যার প্রবর্তক হচ্ছেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ। বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনি একবার খুৎবা দেয়ার জন্য মসজিদের মিম্বরে উঠেছিলেন, এমতাবস্থায় উনাকে এ মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি মিম্বরের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়ই এ মাসায়ালার জাওয়াব দিয়েছিলেন, যার কারণে এ মাসয়ালাটি “মাসায়ালায়ে মিম্বরীয়া” নামে মশহুর হয়। উল্লেখ্য, ওয়ারিসগণের প্রতি সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে যেমন রদ্ব বা আওল হতে পারে, তেমনি রদ্ব ও আওল ব্যতীতও সম্পত্তি বর্ণিত হতে পারে। যেমন- দু’মেয়ে, পিতা ও মাতার মাঝে হয়। এক্ষেত্রে মূল মাসয়ালা বা সংখ্যা হচ্ছে- ৬ দুই মেয়ে পিতা মাতা ২/৩ ১/৬ ১/৬ সুতরাং এক্ষেত্রে ওয়ারিসদের বন্টিত অংশসমূহ যোগ করলে তা ৬/৬ বা ১ হয়। আওলের উদাহরণ : কোন সম্পত্তিতে প্রাপ্য অংশগুলির সমষ্টি নির্ণয় করতে গেলে ভগ্নাংশসমূহের হরগুলির যে ল.সা.গু হয়, সেই ল.স.গুটিকে ফারায়েজের পরিভাষায় বলা হয়- মূল মাসয়ালা বা সংখ্যা। যেমন- ২/৩, ১/৮, ১/৬ এই অংশগুলির সমষ্টি নির্ণয় করতে গেলে হর ৩, ৮, ৬ এর ল.সা.গু হবে ২৪। এই ২৪কেই মূল মাসয়ালা বা সংখ্যা বলা হয়। মূল মাসয়ালা বা সংখ্যা- ৬, এর আওল হয়- ৭, ৮, ৯ এবং ১০। উদাহরণ-  মূল সংখ্যা= ৬ এর আওল যখন ৭ হবে- স্বামী  দু’সহোদরা বোন ১/২  ২/৩ মৃত  স্ত্রী মূল সংখ্যা = ৬, আওল-৭ স্বামী বোন বোন       ২  আওল যখন ৮ হবে- স্বামী দু’সহোদরাবোন    দু’বৈপিত্রেয় বোন ১/২       ২/৩           ১/৬ মৃত স্ত্রী মূল সংখ্যা = ৬, আওল - ৮ স্বামী দু’সহোদরা বোন দু’বৈপিত্রেয় বোন                       ১ আওল যখন ৯ হবে-  স্বামী দু’সহোদরা বোন    দু’বৈপিত্রেয় বোন ১/২   ২/৩             ১/৩ মৃত স্ত্রী মূল সংখ্যা = ৬, আওল - ৯ স্বামী দু’সহোদরা বোন    দু’বৈপিত্রেয় বোন                     ২ আওল যখন ১০ হবে- স্বামী, দু’সহোদরা বোন, দু’বৈপিত্রেয় বোন, মা-  স্বামী দু’সহোদরা বোন   দু’বৈপিত্রেয় বোন মা  ১/২ ২/৩ ১/৩ ১/৬ মৃত স্ত্রী মূল সংখ্যা = ৬, আওল - ১০ স্বামী    দু’সহোদরা বোন  দু’বৈপিত্রেয় বোন    মা ৩                                 ১  মূল মাসয়ালা বা সংখ্যা= ১২ এর আওল হচ্ছে- ১৩, ১৫ ও ১৭ উদাহরণ-  ১২-এর আওল যখন ১৩ হবে স্ত্রী দু’সহোদরা বোন বৈপিত্রেয় বোন ১/৪ ২/৩ ১/৬ মৃত স্বামী মূল মাসয়ালা = ১২, আওল - ১৩ স্ত্রী দু’সহোদরা বোন     বৈপিত্রেয় বোন                        ২ ১২-এর আওল যখন ১৫ হবে- স্ত্রী দু’সহোদরা বোন    দু’বৈপিত্রেয় বোন ১/৪      ২/৩ ১/৩ মৃত স্বামী মূল মাসয়ালা = ১২, আওল - ১৫ স্ত্রী    দু’সহোদরা বোন    বৈপিত্রেয় বোন                       ৪          ১২-এর আওল যখন ১৭ হবে- স্ত্রী     দু’সহোদরা বোন দু’বৈপিত্রেয় বোন  মা ১/৪    ২/৩         ১/৩            ১/৬ মৃত স্বামী মূল মাসয়ালা = ১২, আওল - ১৭ স্ত্রী  দু’সহোদরা বোন  দু’বৈপিত্রেয় বোন মা   ৩                       ৪            ২ মূল মাসয়ালা বা সংখ্যা = ২৪ এর আওল হচ্ছে- ২৭। উদাহরণ  ২৪-এর আওল যখন ২৭ হবে- স্ত্রী দু’মেয়ে পিতা    মাতা ১/৮ ২/৩ ১/৬    ১/৬ মৃত স্বামী মূল মাসয়ালা = ২৪, আওল - ২৭ স্ত্রী দু’মেয়ে পিতা    মাতা   ৩   ১৬       ৪     

 (ঝ) হুমায়ুন আহমদের বক্তব্য  খন্ডন ও তার জাওয়াব উপরোক্ত আলোচনার পর হুমায়ুন আহমেদের বক্তব্যের বা কল্পিত কুটিল অভিযোগের অসারতা অনুধাবন করা যায়। প্রথমতঃ খালিক্ব মালিক রব মহান আলাহ্ পাক উনার ও কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ সম্পর্কে তার রচনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মূর্খতাসূচক, বিদ্বেষমূলক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। যা কিনা সরাসরি কুফরী ও ধর্মদ্রোহীতার শামিল। মূলতঃ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক তিনি হলেন, আলীমুল হাক্বীম। তিনিই সমস্ত জ্ঞানের উৎস ও অধিকর্তা এবং উনার প্রেরিত আসমানী কিতাবসমূহই পৃথিবীতে সব জ্ঞানের (দ্বীনসহ দুনিয়াবী সকল বিষয়- অঙ্ক, রসায়ন, পদার্থ ইত্যাদি) আঁধার ও উৎস। যা অনুধাবন করা কেবলমাত্র জ্ঞানীগণের পক্ষেই সম্ভব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, “তিনিই, যিনি (মহান আল্লাহ্ পাক) তিনি কিতাব নাযিল করেছেন আপনার উপরে, তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, যেগুলো কিতাবের মূল ভিত্তি। আর অন্যান্যগুলো রূপক, মর্মবিশিষ্ট। যাদের অন্তরে কুটিলতা বা বক্রতা রয়েছে, তারা রূপক বা মর্মবিশিষ্ট আয়াতসমূহের মনগড়া বা অপব্যাখ্যা করে ফিৎনা বিস্তার করে থাকে। যে আয়াতসমূহের মর্ম বা ব্যাখা আল্লাহ্ পাক ছাড়া কেউ বুঝেনা। আর যারা দ্বীনি জ্ঞানে পারদর্শী, তারা বলেন- আমরা এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করি, আর সবই আমাদের রব মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে নাযিল হয়েছে। আর যারা জ্ঞানী বা বোধশক্তিসম্পন্ন, তারা ছাড়া আর কেউ (এর থেকে) নসীহত গ্রহণ করেনা।” (সূরা ইমরান/৭) মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন, “তারা আয়ত্ব করতে পারবেনা মহান আল্লাহ্ পাক উনার ইল্ম থেকে কিছুমাত্র (ইল্ম), যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন তা (ইল্ম) ব্যতীত।” (সূরা বাক্বারা/২৫৫) উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, প্রথমতঃ যাদের অন্তরে বক্রতা বা কুটিলতা রয়েছে, তারাই মহান আল্লাহ্ পাক উনার আয়াত শরীফের মনগড়া বা অপব্যাখ্যা করে থাকে ফিৎনা বিস্তার করার জন্য। দ্বিতীয়তঃ যারা মহান আল্লাহ্ পাক উনার প্রদত্ত ইল্ম-এর দ্বারা আলেম, তারাই মহান আল্লাহ্ পাক উনার কালামুল্লাহ্ শরীফ থেকে নসীহত হাসিল করে থাকেন, তাদের গভীর প্রজ্ঞা, দূরদর্শীতা, সূক্ষ্ম সমঝ ও ফিকিরের কারণে। আরো প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি যাকে যতটুকু ইচ্ছা উনার ইল্ম থেকে ততটুকু ইল্ম বা সমঝ দিয়ে থাকেন। যেমন স্বচ্ছ অন্তরবিশিষ্ট হওয়ায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ মহান আল্লাহ্ পাক উনার মদদে গভীর প্রজ্ঞা, দূরদর্শীতা (ফেরাসাত), সূক্ষ্ম সমঝ ও ফিকির সম্পন্ন হওয়ার সুবাদে মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে নাযিলকৃত সম্পত্তি বন্টনের আয়াত শরীফ থেকে আওলের মাসয়ালা প্রবর্তন করে কুরআন শরীফের আয়াতের বাস্তাবায়নকে বিশেষ সহজসাধ্য করে দেন। পক্ষান্তরে বক্রদিল নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ কুরআন শরীফের আয়াতের অপব্যাখ্যা করে মুসলিম সমাজে ফিৎনা বিস্তারের অপপ্রয়াস চালিয়েছে। আর বক্রদিল বা কুটিল অন্তরবিশিষ্ট হওয়ার কারণে সে মহান আল্লাহ্ পাক উনার ইল্ম থেকে কিছু মাত্রই আয়ত্ত করতে পারেনি। যার কারণে সে এই সহজ কথা বুঝতে পারেনি যে, ফারায়েজের ক্ষেত্রে মূল কথা হচ্ছে, সেখানে আল্লাহ্ পাক কেবল কি অনুপাতে (অংশে) অংশীদারদের সম্পত্তি বন্টন হবে, সেটা হেকমতপূর্ণ ভাষায় বর্ণনা করেছেন মাত্র। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ওয়ারিশগণের প্রাপ্য সম্পত্তির অনুপাত (অংশ) নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সেই নির্দিষ্ট অংশ বন্টনে সাধারণত লসাগু পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যা সকলের জন্যই সহজবোধ্য। তবে এই সহজবোধ্য লসাগু পদ্ধতি অবলম্বনের কারণে যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্পত্তি বন্টন সহজ হয়েছে। এরপরেও লসাগু পদ্ধতি এত উন্নত হয়নি, যার দ্বারা সমস্ত সমস্যা সমাধান করে সকলকে সম্পত্তি বন্টন করে দেয়া যেতে পারে। অর্থাৎ লসাগু পদ্ধতি প্রয়োগের পরেও কিছু সমস্যা থেকে যায়। যা সমাধানকল্পে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ ইজ্তিহাদ করে আওলের প্রবর্তন করেন। এই আওলের প্রবর্তনের দ্বারা ল.সা.গু পদ্ধতির কারণে সৃষ্ট জটিলতা দূর করা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রেই আওল আর রদ্ব ব্যতীতও সম্পত্তি বন্টন সম্ভব হয়। কাজেই সেক্ষেত্রে কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ-এর কোন ভুলের প্রশ্নই উঠেনা। কারণ সেখানে অংশীদারদের অংশ প্রণয়ন করা হয়েছে মাত্র এবং তার প্রয়োজনে আওল বা রদ্ব নীতি ব্যবহারে কোন নিষেধ বাণী কোথাও আরোপ করা হয়নি। বরং পূর্বে বর্ণিত ইজ্তিহাদের আলোচনা দ্বারা বুঝা যায়, এ সম্পর্কে তাতে সম্পূর্ণ সায় ও উৎসাহ দেয়া হয়েছে। সুতরাং বলতে হয় যে, মূলতঃ উক্ত অপন্যাস রচনাকারীরই অঙ্ক সম্পর্কে জ্ঞান সত্যিকার অর্থেই খুব কাঁচা আর যেটা ভুল নয় তাকেও ভুল বলায় প্রমাণিত হয়, কোনটা যে ভুল আর কোনটা যে শুদ্ধ, সেটা বুঝতেও সে ভুল করে। কারণ যে কোন অপ্রকৃত ভগ্নাংশই (লব, হরের চেয়ে বেশী) অপর কতগুলো ভগ্নাংশের যোগফল হতে পারে। অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রেই কতগুলো ভগ্নাংশের যোগফল অপ্রকৃত ভগ্নাংশ হতে পারে। কাজেই আলোচ্য ক্ষেত্রে বর্ণিত ভগ্নাংশগুলোর যোগফল ২৭/২৪ হতে পারেনা। এ কথা নেহায়েত অজ্ঞ লোকের পক্ষেই বলা সম্ভব। আর যে ব্যক্তি বলে যে, সম্পত্তির বন্টিত অংশসমূহের যোগফল ১ এর চেয়ে বেশী হতে পারেনা। সে ব্যক্তির তাহলে জবাব দেয়া উচিত যে, সবক্ষেত্রে মোট সম্পত্তিটাই তাহলে কিভাবে ১ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- কারো প্রপিতাসহ যদি ৬০ বিঘা সম্পত্তি রেখে যায় এবং পিতামহ ২৪ বিঘা রেখে যায়, বাবা ২৭ বিঘা ও নিজে ৯ বিঘা রেখে যায়, তবে সব ক্ষেত্রেই রেখে যাওয়া সম্পত্তিকে ওয়ারিশদের মাঝে বন্টনের সময় ১ ধরা হচ্ছে। এভাবে ধরলে যা দাড়ায়, তা হলো- ৬০ = ২৪ = ২৭ = ৯ = ১। অতএব এখানে যেমন বোঝার বিষয় আছে, তেমনি ওখানেও (২৭/২৪) এর ক্ষেত্রে বোঝার বিষয় আছে। সুতরাং বুঝা যায় যে, অপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ তার অপন্যাসের সংলাপ রচনায় দূরভিসন্ধিমূলক হঠকারিতা ও প্রবঞ্চনার আশ্রয় নিয়েছে।  মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সূরা বাক্বারার ২য় আয়াতে বলেন, “ইহা এমন কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। যা কেবলমাত্র মুত্তাক্বীনদেরকে হিদায়াত দান করে।” আর সূরা বাক্বারার ২৬নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক যা বলেন, তার ভাবার্থ হচ্ছে- “যারা এই কিতাবকে মান্য ও তাযিম-তাক্রীম করে, তারাই হিদায়েত প্রাপ্ত হয়। আর যারা একে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, তারাই গোমরাহ্ হয়। মূলতঃ ফাসেকরা ব্যতীত কেউই গোমরাহ্ হয়না।” অতএব প্রত্যেক মুসলমানের উপরে ওয়াজিব, সে যেন কুরআন শরীফ-এর প্রতি কোনরূপ সন্দেহ পোষণ না করে এবং তার যথাযথ তাজীম তাক্রীম করে, যা তার ইহ্কাল ও পরকালে ইজ্জত, সম্মান ও মর্যাদা-মর্তবার কারণ হবে। অন্যথায় তার জন্য ইহ্কালে ও পরকালে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও অপমানজনক শাস্তিই থাকবে। কেননা এই কালামুল্লাহ্ শরীফের জিম্মাদার স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি এবং তিনিই একে নাযিল করেছেন। আর এটা বুঝা এবং আয়ত্ব করা কারো পক্ষে সম্ভব নয় মহান আল্লাহ্ পাক উনার রহ্মত ব্যতীত।  এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আমি কুরআন শরীফ নাযিল করেছি এবং নিশ্চয়ই আমি উহার হেফাজতকারী।” (সূরা হিজর/৯) “আপনার প্রতিপালকের কালিমা পরিপূর্ণ সত্য ও যথার্থ। তার কালিমার কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনি শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী।” (সূরা আনআম/১১৫) “তারা আয়ত্ব করতে পারবে না মহান আল্লাহ্ পাক উনার ইল্ম থেকে কিছুমাত্র, যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত।” (সূরা বাক্বারা/২৫৫) আবার, কুরআন শরীফ যে মহান আল্লাহ্ পাক উনার কালাম, সত্য ও সঠিক এবং নির্ভূল, যার অনুরূপ মানুষের পক্ষে লিখা সম্ভব নয়। সে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন-  “যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে, তাহলে তারা কুরআন শরীফ-এর সদৃশ কোন রচনা উপস্থিত করুক।” (সূরা তুর/৩৪) “আপনি বলে দিন, কুরআন শরীফ-এর অনুরূপ কিছু রচনা করার জন্য যদি সকল মানব-দানব একত্র হয় এবং তারা পরস্পর সহযোগিতা করে, তবুও তারা এর অনুরূপ কিছু রচনা করতে পারবে না।” (সূরা বনী ইস্রাইল/৮৮) “তারা কি বলে যে, এটা (কুরআন শরীফ) আপনার স্বরচিত? আপনি বলে দিন- যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ব্যতীত যাদের সম্ভব ডেকে নিয়ে এর অনুরূপ রচিত দশটি সূরা আন।” (সূরা হুদ/১৩) “তারা কি এরূপ বলে যে, এটা ( কুরআন শরীফ) আপনার স্বরচিত? আপনি বলে দিন- যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ব্যতীত যাদেরকে সম্ভব ডেকে নিয়ে এর অনুরূপ একটি সূরা আন।” (সূরা ইউনুস/৩৮) কুরআন শরীফ-এর উপরোক্ত আয়াতসমূহের দ্বারা এটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে কুরআন শরীফ-এ কোন ভূল নাই। যার কারণে কোন ভুল ধরাও সম্ভব নয়। মূলতঃ এটা মহান আল্লাহ্ পাক উনার কালাম। মানুষের তৈরী কোন কিতাব নয়। আরবী সাহিত্যের স্বর্ণযুগে যখন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কালামুল্লাহ্ শরীফ নাযিল করেন, তখন কেউ কেউ বলেছিল এটা মানুষের রচিত কিতাব। এবং এর মধ্যে ভূল ত্রূটি রয়েছে। তখন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা কাউসার নাযিল করে বিশ্ববিখ্যাত আরবী কবি-সাহিত্যিকদের আহ্বান বা চ্যালেঞ্জ করেন এ সূরার অনুরূপ একটি সূরা পেশ করতে বা তার কোন ভূল উল্লেখ করতে।   আর এই চ্যালেঞ্জস্বরূপ কাবা শরীফ-এ সূরা কাউসার এর প্রথম আয়াত শরীফ লটকিয়ে দেয়া হলো, তার পরবর্তী বাক্য মিলিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু তৎকালীন আরবী সাহিত্যের বিশ্বখ্যাত কবি লবিদ ও অন্যান্য কবিগণ অনেক কোশেশ করার পরও যখন কোন বাক্য রচনা করতে পারল না এবং কোন ভূলও উল্লেখ করতে পারল না। তখন কবি সম্রাট লবিদ একটি বাক্য দিয়ে মিলিয়ে ছিল যার অর্থ হচ্ছে, “এটা কোন মানুষের কালাম নয়।” শুধু এতটুকুই নয়, আজ চৌদ্দশত বৎসর যাবত মহান আল্লাহ্ পাক উনার দেয়া সেই চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তা বর্তমান থাকবে। যার মোকাবিলা করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়নি (যদিও তারা অতীতে অনেক কোশেশ করেছে)। আর ভবিষ্যতে কস্মিনকালেও তা সম্ভব হবে না। অথচ এই গন্ডমূর্খ, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল, নাদান সে বলে-  কুরআন শরীফ-এ নাকি ভুল রয়েছে। ..... নাউযুবিল্লাহ! তাই আমরা তাকে আল্লাহ্ পাক-এর দেয়া ঘোষণা মোতাবেক চ্যালেঞ্জ করছি যে, সে যেন  কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত ফারায়েজের আয়াত শরীফ-এর অনুরূপ আয়াত শরীফ পেশ করে, যার মধ্যে তার কথিত ভুল থাকবে না বা যা প্রয়োগে কোন সময়ই বন্টিত অংশসমূহের যোগফল ১ এর চেয়ে বেশী হবেনা। অর্থাৎ আওল ব্যতীত সবক্ষেত্রে সম্পত্তি বন্টন করা সম্ভব হবে। কিন্তু একথা ধ্রুব সত্য যে সে একা কেন তার সমমনা, সমজাতীয়, সমগোষ্ঠীর সমস্ত দল যদি ক্বিয়ামত পর্যন্তও একাদিক্রমে কোশেশ করে, তথাপিও অনুরূপ কোন আয়াত শরীফ পেশ করতে পারবে না। মূলতঃ এর দ্বারা মহান আল্লাহ্ পাক উনার কালাম কুরআন শরীফ-এরই চিরন্তন মহত্ত্ব ও মোযেযাই ফুটে উঠেছে। অতএব তার উচিত, সে যেন প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে ও খালিছ তওবা করে এবং তার কাফ্ফারা আদায় করে (উল্লেখ্য, শরীয়তের মাসয়ালা হচ্ছে- যে যেভাবে পাপ করে, সে সেভাবেই তার তওবা করবে)। আর তা না করলে সে মুসলমানদের নিকট মুরতাদ সাহিত্যিক বা ঔপন্যাসিক হিসেবে ঘৃণার পাত্ররূপে বিবেচিত হবে। আর শরীয়তের ফায়সালা মোতাবেক, মুরতাদ হিসেবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড।
দ্বিতীয়তঃ “যে ভুল হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনি ঠিক করেছিলেন, যাকে বলে আওল।” মূলতঃ ঐতিহাসিক তথ্যানুযায়ী এ কথাটিও সম্পূর্ণ ভুল। কারণ ফারায়েজের মাসয়ালায় আওলের সংযোজন করেন, হযরত ওমর বিন খত্তাব আলাইহিস সালাম। অর্থাৎ আওলের মূল উদ্ভাবক হলেন, হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যার মূল সংখ্যা হচ্ছে- ৬, ১২। আর পরবর্তীতে মূল সংখ্যা ২৪-এর ক্ষেত্রে আওল-এর প্রবর্তন হযরত আলী আলাইহিস সালাম। যেমন করেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও তেমনি করেছেন। হাক্বীক্বত আওলের প্রবর্তক হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি যেমন নিজ থেকে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করেননি। তদ্রুপ মাসায়ালায়ে মিম্বরীয়া-এর প্রবর্তক হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনিও নিজ থেকে কিছুই সংযোজন বা বিয়োজন করেননি। অর্থাৎ কুরআন শরীফে বর্ণিত অংশসমূহের মধ্যে কিছু যেমন বৃদ্ধিও করেননি তেমন বাদও দেননি। উনারা যা করেছেন, তা হচ্ছে সম্পত্তি বন্টনে লসাগু পদ্ধতিতে মূল মাসয়ালা বের করে ওয়ারিশদের প্রাপ্য অংশ বন্টনের ক্ষেত্রে কুরআন শরীফের বর্ণিত অংশ ঠিক রেখে প্রত্যেককে তার প্রাপ্য অংশ দেয়ার ফলে কোন ক্ষেত্রে হর থেকে লব বৃদ্ধি পেয়ে থাকলে তখন হরকে মূল সংখ্যা বা মাসয়ালা গ্রহণ না করে লবকে মূল মাসয়ালা বা সংখ্যা হিসাবে গ্রহণ করণ। আর এই গ্রহণের উদ্দেশ্য হচ্ছে- কুরআন শরীফ-এর ভুল সংশোধন নয়, বরং  কুরআন শরীফের হুকুমকেই বহাল রাখা। আবার এই গ্রহণের ফলে উনাদের দেয়া কোন সংশোধনই সংযুক্ত হয়নি। বরং কুরআন শরীফের হুকুমই- যা আল্লাহ্ পাক নাযিল করেছেন, তা অক্ষুন্ন থেকেছে। অতএব সাব্যস্ত হয় যে, কুরআন শরীফে সরাসরি বর্ণিত না হয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের কর্তৃক ইজ্তিহাদকৃত আওলের প্রবর্তনকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অবজ্ঞা করায় ইসলাম সম্পর্কে বা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর পরে ইসলামী শরীয়তের আরো দু’টো উৎস ইজমা-ক্বিয়াসের অস্তিত্ব সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদের চূড়ান্ত অজ্ঞতাই প্রকাশ পেয়েছে। অর্থাৎ ইজমা-ক্বিয়াস সম্পর্কে যদি সামান্য কিছু জ্ঞানও তার থাকতো, তবে এ ধরণের অসার কথা রচনা করে চরম কান্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় সে দিতনা। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনি কোন ভুল সংশোধন করেননি। বরং উনি পূর্ববর্তী  খলিফা হযরত ওমর আলাইহিস সালাম উনাকে অনুসরণ করেছেন মাত্র। আর এই অনুসরণের ফলশ্রুতিতে ইজ্তিহাদের মাধ্যমে তিনি আওল-এর ক্ষেত্রে একটি নতূন মাত্রা সংযোজন করেন। যা উপলব্ধি করা উক্ত গন্ডমূর্খ আশাদ্দোর্জার জাহিল, সঙ্কীর্ণমনা বদ্বখ্ত, বদ্নসীব, মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কালাম বুঝতে অক্ষম ও অযোগ্য হুমায়ূন আহমদ নামধারী পশ্বাধমের পক্ষে বুঝা আদৌ সম্ভব হয়নি। (ঝ) তোমরা যারা জাননা, যাঁরা জানেন উনাদের কাছে জিজ্ঞেস করে নাও। মহান আল্লাহ্ পাক যিনি মালিক, খালিক, যিনি আলিমুল গায়েবে ওয়াশ শাহাদাহ্ (দৃশ্য, অদৃশ্য সবকিছু জানেন), যিনি মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলের খবর রাখেন, যিনি প্রজ্ঞাময় জ্ঞানী। উনার জ্ঞানের কোন সীমা নেই। আবার মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তো সমস্ত জ্ঞানের মূল বটেই, তবে শুধু এতটুকুই নয়, বরং মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন (মুসলিম শরীফ)। যার কারণে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পরবর্তীতে উদ্ভৃত সমস্যাসমূহের সমাধানকল্পে নিম্নের আয়াত শরীফ নাযিল করেন- “আর যখন তাদের নিকট কোন বিষয় সম্পর্কিত সংবাদ পৌঁছে, তা শান্তি বা নিরাপত্তা সংক্রান্তই হোক (অর্থাৎ যা মুসলমানদের জন্য ফায়দাজনক বা গৌরবময়) কিম্বা ভীত সন্ত্রস্থজনকই হোক (অর্থাৎ যা আপতদৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য আপত্তিজনক), তখন তারা উহা (তৎক্ষনাত) প্রচার করে দেয় বা রটিয়ে দেয়। আর যদি তারা উহাকে (ঐবিষয়কে তারা না রটিয়ে) রসূলের নিকট এবং তাদের নিকট যারা এরূপ বিষয় বুঝতে সক্ষম, তাদের নিকট সমর্পন করতো (নিজেরা ঐ বিষয়ে নিজস্ব মত প্রকাশ না করিত) তাহলে তাদের মধ্যে যারা মুজ্তাহিদ ছিল (ইজ্তিহাদের মাধ্যমে), তারা জেনে নিত। (অতঃপর তাদেরকে সঠিক তত্ত্ব জানিয়ে দিত যার ফলশ্রুতিতে তারা কুফরী- শেরেকী থেকে বেঁচে যেত)। (সূরা নিসা/৮৩) উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর দ্বারা এটাই সাবেত হয় যে, যখন কোন ব্যক্তির (চাই সে মুসলমান হোক অথবা বিধর্মী হোক) নিকট ইসলাম সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা সাপেক্ষ বিষয় পৌঁছে, যার শরীয়তসম্মত সমাধান জানা নেই। তখন তার উচিৎ এই বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ অর্থাৎ মুহাক্কিক, মুদাক্কিক, আল্লাহ্ ওয়ালা আলিম, উনাদের নিকট জিজ্ঞেস করে শরীয়তসম্মত সমাধান জেনে নেয়া। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন- “পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ-এ সম্মুখ অথবা পশ্চাৎ থেকে কোন বাতিল প্রবেশ করবে না।” (সূরা হামিম সিজদা/৪২) আর “নিশ্চয়ই কুরআন সংরক্ষণ ও পাঠের ও দায়িত্ব আমারই। (সূরা ক্বিয়ামাহ্/১৭) এবং “অতঃপর নিশ্চয়ই এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্বও আমার।” (যা তোমাদের আকলে সহজে আসে না তার ব্যাখ্যা করবেন আমার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও পরবর্তীতে  করবেন নায়েবে রসূলগণ।) (সূরা ক্বিয়ামাহ্/১৯)।  এ প্রসঙ্গে তিনি আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, “তোমরা যারা জাননা, যারা জানে তাদের নিকট জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” 

(ট) সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে কৃত  অপরাধের প্রেক্ষিতে হুমায়ূন  আহমেদের পূনঃ নামকরণ  সুন্নত আদায়ার্থে হুমায়ুন আহমেদকে বলতে হয়- “অনুমান আহ্মক”। যেমন মক্কার এক ব্যক্তি যার নাম ছিল আমর ইবনে হিশাম, অত্যাধিক জ্ঞানের কারণে তাকে আবুল হাকাম বা জ্ঞানীর পিতা বলা হত। কিন্তু সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করার কারণে তাকে হুযূর পুর নূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু জাহিল বা মূর্খের পিতা নাম দিয়েছিলেন, যে নামে সে আজও পরিচিত। তদ্রূপ হুমায়ুন আহমেদ মুসলমানের ঘরে মুসলমান হিসেবে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও কেবলমাত্র নিছক অনুমান করে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি এবং কালামুল্লাহ্ শরীফ-এর বিরোধীতা করার কারণে তার আহমকী প্রকাশ পায়। তাই একটি সুন্নত আদায়ার্থে তাকে ‘অনুমান আহ্মক’ নামে আখ্যা দেয়া হলো। কারণ ‘হুমায়ুন আহমদ’ নাম-এর অর্থ চরম প্রশংসিত সৌভাগ্যবান। শুধুমাত্র খালিছ আক্বীদা পোষণকারী ব্যক্তি এই সুন্দর নামের অধিকারী হতে পারেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে আল্লাহ্দ্রোহী কথা বলে বা লিখে, জঘণ্যতম কুফরীতে লিপ্ত থাকে এবং মুরতাদে পরিণত হয়, সেই ব্যক্তি এমন (হুমায়ুন আহমেদ) নামের অধিকারী হতে পারে না। যেমন পারেনি আমর ইবনে হিশাম, কুফরী করার কারণে আবুল হাকাম হিসাবে থাকতে। বরং নিছক অনুমান নির্ভর কুফরী বক্তব্য প্রদান করায় তার নাম ‘অনুমান আহ্মক’ হওয়াই স্বাভাবিক।  নাম পরিবর্তনের উদাহরণ রসায়ন শাস্ত্রেও রয়েছে। কোন রাসায়নিক যৌগের ১টি মৌল সরে যদি তার স্থানে অন্য ১টি কার্যকরীমূলক প্রবেশ করে, তবে যৌগটি নতুন নাম ধারণ করে। যেমন- সহজ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বেনজিন- উ৬ঔ৬-এর ১টি হাইড্রোজেন (ঔ) অপসারিত করে যদি হাইড্রোক্সিল কার্যকরী মূলক (-ৃঔ) প্রবেশ করে, তবে যৌগটির নাম পরিবর্তীত হয়ে হবে ফেনল- উ৬ঔ৫-ৃঔ। তদ্রূপই লেখকের মুসলমানসুলভ বৈশিষ্ট্য হারিয়ে বা অপসারিত হয়ে কুফরী প্রবেশ করার কারণে তার পূর্ব নাম বহাল না থেকে পরিবর্তিত হয়ে ‘অনুমান আহমক’ হবে। 


(ঠ) দেশের সরকার ও ধর্মপ্রাণ  মুসলমানদের কর্তব্য  বলাবাহুল্য আমাদের দেশ শতকরা ৮৫% মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র এবং ইসলাম এখানে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। সেক্ষেত্রে মুসলমানেদের রব আল্লাহ্ পাক এবং তাদের প্রধান দ্বীনি কিতাব  কুরআন শরীফ সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ ও ঔদ্ধত্যমূলক ভাষায় সংলাপের দ্বারা রচিত উপন্যাস কি করে প্রকাশিত হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে নিস্ক্রিয়তা দেখানো যেতে পারে, তা অচিন্তনীয় বিষয় এবং বরদাশ্তের বাইরে। কেননা আল্লাহ্ পাক ও কালামুল্লাহ্ শরীফের বিরুদ্ধে চরম ধৃষ্টতামূলক বক্তব্যের দ্বারা সমগ্র মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চরম আঘাত হানা হয়েছে। তাই সরকারের উচিৎ অতি শীঘ্রই এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সে সাথে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরও উচিৎ এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া, এ ধরণের মুরতাদদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং তাদের নির্মূল করা।  

(ড) শরীয়তের দৃষ্টিতে  হুমায়ুন আহমদের ফায়সালা উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘শ্রাবণে মেঘের দিন’ অপন্যাসে উদ্ধৃত- মহান আল্লাহ্ পাক তিনি  কুরআন শরীফের আয়াত ও হযরত আলী আলাইহিস সালাম সম্পর্কে সংলাপ- সবৈব মিথ্যা, হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিত, হিন্দু দাদাদের খুশী করার উদ্দেশ্যে নিবেদিত, ইসলাম বিরোধী মহলে প্রসংশা কুড়াবার নিমিত্তে বিবৃত, অসংলগ্ন, অযথার্থ, অহেতুক, অসার, অসৎ উদ্দেশ্যমূলক এক কুৎসিৎ ও কুটিল মন্তব্য, যা সরাসরি কুফরী, কারণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর অবজ্ঞাসূচক সাহিত্যরস সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যঙ্গোক্তি, রসিকতাপূর্ণ সংলাপ তৈরী করা জঘণ্যতম কুফরী। যেটা তাকে মুরতাদ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে শরীয়তের ফায়সালা মোতাবেক তার উপর নিম্নে বর্ণিত মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। 

(ঢ) মুরতাদের শাস্তির হুকুম কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কিরূপে হিদায়েত দান করবেন ঐ সম্প্রদায়কে, (ঐ সমস্ত লোকদেরকে) যারা ঈমান আনার পর এবং রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সত্য বলে স্বাক্ষ্য দেয়ার পর ও উজ্জ্বল প্রমাণসমূহ পৌঁছার পর কুফরী করে? আর জালেম সম্প্রদায় মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে হিদায়েত লাভ করেনা।” (সূরা ইমরান/৮৬)  “যে ব্যক্তি ঈমানের পরিবর্তে কুফরী গ্রহণ করে, সে পথভ্রষ্ট হয়ে যায় সরল পথ থেকে।” (সূরা বাক্বারা/১০৮) “নিশ্চয়ই যারা কাফির হয়েছে ঈমান আনার পর, অতঃপর কুফরীতে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে, কখনো তাদের তওবা কবুল হবেনা এবং তারাই চুড়ান্ত পথভ্রষ্ট।” (সূরা ইমরান/৯০) “তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীন হতে ফিরে যায় অতঃপর কাফির অবস্থায়ই তার মৃত্যু হয়, তবে এরূপ লোকের আমলসমূহ ইহ্লোক ও পরলোকে বিনষ্ট হয়ে যাবে। তারাই হলো দোযখবাসী, তাতে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।” (সূরা বাক্বারা/২১৭)
হাদীছ শরীফ ঃ- “যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করেছে (অর্থাৎ ইসলাম পরিত্যাগ করে কাফের হয়েছে), তাকে কতল কর। অর্থাৎ তাকে মৃত্যুদন্ড দাও।” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ শরীফ ইত্যাদি)।  এরূপভাবে এ ধরণের মুরতাদদের সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা হচ্ছে- “যারা এসব উক্তি করে বা লিখে, যারা সাহায্য- সহযোগীতা করে, আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেয়, প্রচার-প্রসার ঘটায় অর্থাৎ বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন যে কোনভাবে সমর্থন করে, তারা সকলে মুরতাদ হবে এবং তাদের উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে অর্থাৎ তাদের স্ত্রী তালাক হবে (যদি বিয়ে করে থাকে) এবং এক্ষেত্রে পূণরায় তওবা না করে, বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবেনা। আর এই অবৈধ অবস্থায় সন্তান হলে সেই সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্ব বাতিল হয়ে যাবে (যদি হজ্ব করে থাকে), সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার ওয়ারিশ সত্ব বাতিল হবে। তাদেরকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কেননা হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ জিনাকার বা জিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে কতল করে, তাকে। (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ্, মসনদে শাফেয়ী, মসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরেকে হাকেম) আর এরা মারা যাবার পর যারা যানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা যানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগীতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে। কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গিয়েছে, তারা যদি যমীন (কুফরীর পরিবর্তে) পরিপূর্ণ স্বর্ণ তার ফিতিয়া বা কাফ্ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্য), তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে, যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি বা আযাব এবং তাদের জন্য সাহায্যকারী নেই। (সূরা ইমরান/৯১)
দলীলসমূহ ঃ- শরহে ফিক্বাহ্ আকবর, শরহে আক্বায়েদে নছফী, আক্বায়েদে হাক্কা, তাফমিলুল ঈমান, দুররুল মুখতার, খানিয়াহ্, কাজীখান, বাহ্রোর রায়েক, আলমগীরী, জামেউল ফুছুলিন, আল বায্যাযিয়া, হেদায়া, বেনায়া, আন কারোবিয়া, আল ফিক্বাহু আলা মাজাহিবিল আরবায়া, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন ইত্যাদি)
[ বিঃ দ্রঃ- কলেবর বৃদ্ধির কারণে অনুমান আহমক রচিত, উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংলাপের জবাব দানে আরো অনেক আকলী (দুনিয়াবী) ও নকলী (দ্বীনি) যুক্তি থাকা সত্ত্বেও তা বিবৃত করা হলোনা। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে তা দেয়া হবে ] আবা-২৭

0 Comments: