৪৩৯ নং- সুওয়াল - ভোটের সংজ্ঞা কি? শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট পাওয়ার উপযুক্ত কে? কোন ফাসেক ব্যক্তিকে ভোট দিলে কি রকম অপরাধ হবে?

সুওয়াল - মাসিক মদীনা সেপ্টেম্বর/৯৫ইং সংখ্যায় নিম্মবর্ণিত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্নঃ- ভোটের সংজ্ঞা কি? শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট পাওয়ার উপযুক্ত কে? কোন ফাসেক ব্যক্তিকে ভোট দিলে কি রকম অপরাধ হবে?
উত্তরঃ- ভোট অর্থ কোন ব্যক্তি সম্পর্কে তার যোগ্যতা ও বিশ্বস্ততার বিষয় সাক্ষ্য প্রদান করা। জাতির নিতান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনকল্পে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার কাজটা ভোটের মাধ্যমেই সমাধা করা হয়। সেমতে ভোটরূপ সাক্ষ্যটি বিবেচনার সাথে প্রয়োগ করা অত্যান্ত জরুরী। যদি কেউ জেনেশুনে কোন চরিত্রহীন বা অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়, তবে সে ব্যক্তি প্রথমতঃ একটি গুরুত্বপূর্ণ আমানতের খেয়ানত করলো, যা শরীয়তের বিচারে কবীরাগুণাহ্। দ্বিতীয়তঃ তার ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যতগুলো অন্যায় কাজ করবে, সেসব অন্যায়ের ভাগীদার ভোট দাতাকে হতে হবে। এ কারনে দ্বীন ও শরীয়তের পরিপূর্ণ মাত্রায় অনুগত নয়, এরূপ ব্যক্তিকে ভোট দেয়া ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এখন আমার প্রশ্ন হলো- উক্ত উত্তরে ভোটকে আমানত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ বলে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। আর অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়া আমানতকে খেয়ানত করা ও কবীরা গুণাহের কারণ বলা হয়েছে। উক্ত উত্তর কতটুকু শুদ্ধ হয়েছে, তা দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব - মাসিক মদীনার উক্ত উত্তর সম্পূর্ণই কুফরী হয়েছে। কারণ হারাম কাজে উৎসাহিত করা, তাক্বীদ দেয়া ও হারাম কাজ না করাকে কবীরা গুণাহে আখ্যায়িত করা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। উত্তর তো সম্পূর্ণই কুফরী হয়েছে, আর প্রশ্নকারীর প্রশ্নও শুদ্ধ হয়নি। কারণ- 
(১) গণতন্ত্র হচ্ছে- বিধর্মী (ইহুদী-নাসারা)দের প্রবর্তিত পদ্ধতি, যা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত নয়। গণতন্ত্রের ইংরেজী হচ্ছে- উবসড়পৎধপু যা এসেছে গ্রীক উবসড়ং এবং কৎধঃড়ং থেকে। ‘ডেমস’ অর্থ জনগণ এবং ‘ক্রেটস’ অর্থ শাসন। আবার বাংলায় ‘গণ’ অর্থ জনগণ এবং ‘তন্ত্র’ অর্থ নিয়মনীতি বা পদ্ধতি। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণের নিয়ম-কানুন বা পদ্ধতি অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা বা সরকার পরিচালনা করা হয়। 
অথচ আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা মায়েদার ৪৯নং আয়াত শরীফে বলেন, “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারে আল্লাহ্ পাক যা নাযিল করেছেন, সে অনুযায়ী ফায়সালা করুন এবং তাদের নফসের অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আপনার প্রতি যা নাযিল করেছেন, যেন তার কোন নির্দেশ থেকে তারা আপনাকে বিচ্যুত করতে না পারে বা কোন আদেশ সম্পর্কে ফিৎনায় ফেলতে না পারে। অতঃপর যদি তারা ফিরে যায়, তবে জেনে রাখুন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি চেয়েছেন তাদেরকে তাদের কোন গুণাহের শাস্তি দিবেন এবং নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে অধিকাংশই ফাসেকের অন্তর্ভূক্ত।” 
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা বাক্বারার ১২০নং আয়াত শরীফে আরো বলেন, “(হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়েত। আপনার কাছে ইল্ম (কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার ও ইসলাম) আসার পর যদি তাদের (বিধর্মীদের) নফ্সের (নিয়ম-পদ্ধতি) অনুসরণ করেন, তবে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আপনার জন্য কোন ওলী বা সাহায্যকারী নেই বা পাবেন না।”
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭নং আয়াত শরীফে আরো বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক যা নাযিল করেছেন, সে অনুযায়ী যারা হুকুম বা ফায়সালা করে না, তারাই কাফির, জালেম ও ফাসেক।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ্ পাক উনার হুকুম মোতাবেক আমল করতে হবে। অন্যথায় মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে যেমন সাহায্য ও অভিভাবক পাওয়া যাবেনা, তদ্রুপ ঈমানদার হিসাবেও থাকা যাবেনা। 
শরীয়তে অর্থাৎ ইসলামে গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন সম্পূর্ণই হারাম। যা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এর সূরা ইমরানের ১৯নং আয়াত শরীফে বলেন, “নিশ্চয়ই ইসলামই একমাত্র মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট মনোনীত দ্বীন।”
উক্ত সূরার ৮৫নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্যকোন ধর্ম বা নিয়ম-নীতি তালাশ (অনুসরণ) করে, তার থেকে তা কখনই গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে।”
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন, “তিনিই (আল্লাহ্ পাক) যিনি তার রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে হিদায়েত ও দ্বীনে হক্বসহ পাঠিয়েছেন, যেন সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দান করেন। অর্থাৎ সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দেন। আর সাক্ষ্যদাতা হিসেবে মহান আল্লাহ্ পাক তিনিই যথেষ্ট।”
আর এ প্রসঙ্গে আহ্মদ ও বায়হাক্বী শরীফে হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করা হয়েছে- তিনি বলেন, একদিন হযরত ওমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা ইহুদীদের নিকট থেকে কিছু কথা শুনি, যাতে আর্শ্চয্যবোধ করি, তার থেকে কিছু কি আমরা লিখে রাখবো? তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনারা কি ইহুদী-নাসারাদের মত (ইসলাম সম্পর্কে) দ্বিধাগ্রস্থ রয়েছে? নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল দ্বীন নিয়ে এসেছি। এমনকি ইহুদীদের নবী হযরত মুসা আলাইহিস সালামও যদি জীবিত থাকতেন, তবে উনার উপরও আমার দ্বীন মানা ওয়াজিব হতো।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা এ কথাই স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার  নিকট একমাত্র ইসলামই গ্রহণযোগ্য, অন্যকোন ধর্ম বা নিয়ম-নীতি, পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়। আর ইসলাম ব্যতীত অন্যকোন নিয়ম-নীতি গ্রহণ করার অর্থই হচ্ছে- ইসলাম সম্বন্ধে দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া। আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় অন্য কোন নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণও যদি হায়াতে থাকতেন, তাহলে উনাদের উপর মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে নাযিলকৃত কিতাব অনুযায়ী আমল না করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মোতাবেক আমল করাই ওয়াজিব হতো।
তাহলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা সাধারণ উম্মত, তাদের পক্ষে এটা কি করে সম্ভব বা জায়েয হবে যে, তারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর নাযিলকৃত দ্বীন ইসলামকে ত্যাগ করে ইহুদী-নাসারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজুসী-মুশরিক তথা বিধর্মীদের মনগড়া প্রবর্তিত পদ্ধতি যেমন- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্র-মন্ত্র ও মতবাদের অনুসরণ ও আমল করে এবং অন্যান্যগণকেও অনুসরণ ও আমল করার জন্য তাক্বীদ ও উৎসাহ প্রদান করে এবং এটাও বলে যে, তা (গণতন্ত্র ইত্যাদি) না করা কবীরা গুণাহের কারণ।
একইভাবে ভোট প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, “এটা আমানত- যা খেয়ানত করা কবীরা গুণাহের অন্তর্ভূক্ত।”  
অথচ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস যা আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দলীল। তার যেকোন একটা দিয়েও কোন ব্যক্তির পক্ষে ক্বিয়ামত পর্যন্ত এটা প্রমাণ করা সম্ভব হবেনা যে, গণতন্ত্রে প্রচলিত নির্বাচনে দেয় ভোট শরীয়তের দৃষ্টিতে আমানত। এটা বলা সম্পূর্ণ কুফরী হয়েছে।
আরো বলা হয়েছে, ভোট সাক্ষ্যস্বরূপ। অথচ এটাও শরীয়তের দৃষ্টিতে সাক্ষ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়না। তথাপিও যদি আমরা মাসিক মদীনার কথা মোতাবেক সাক্ষ্য হিসেবে ধরে নেই, তাতেও কুফরী হয়ে যায়। কেননা নির্বাচনে পুরুষ ও মহিলার ভোটের মান সমান বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ গণতন্ত্রে মহিলার সাক্ষ্য, পুরুষের সাক্ষ্যের সমান বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা বাক্বারার ২৮২নং আয়াত শরীফে বলেন, “তোমরা পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী দাঁড় করাও। যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া যায়, তবে একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলার সাক্ষ্য গ্রহণ কর। অর্থাৎ ইসলামে দু’জন মহিলার সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান। কিন্তু গণতন্ত্রে একজন মহিলার সাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান। যা সম্পূর্ণ কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের খিলাফ।
গণতন্ত্রই যেখানে হারাম, সেখানে কি করে কোন মুসলমানের পক্ষে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের খিলাফ আমল করার জন্য অন্যান্য মুসলমানদেরকে তাক্বীদ দেয়া ও উৎসাহিত করা যেতে পারে?
উল্লেখ্য, ইসলামে গণতন্ত্র হারাম হওয়া সম্পর্কে আমরা কিছুদিন পূর্বে একটা হ্যান্ডবিল ছাপিয়েছিলাম, যা আল বাইয়্যিনাতের ২৬তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে হুবহু ছাপানো হয়েছে, তা সংগ্রহ করে পড়ুন। আরো বিস্তারিত জানতে হলে অপেক্ষায় থাকুন অতি শীঘ্রই আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ফতওয়া বিভাগে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করবো ইন্শাআল্লাহ্।
আবা-২৮
গণতন্ত্র করা হারাম ফতোয়া ।  লিংক-

0 Comments: