৪৪৪ নং- সুওয়াল - পুরুষ ও মেয়েলোকের পেশাব-পায়খানা করার সুন্নাত তরীকা বা নিয়ম জানায়ে বাধিত করবেন।

সুওয়াল - পুরুষ ও মেয়েলোকের পেশাব-পায়খানা করার সুন্নাত তরীকা বা নিয়ম জানায়ে বাধিত করবেন। 

জাওয়াব - পেশাব করার সুন্নাত তরীকাঃ যখন পেশাবের হাজত হবে, তখন কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে ঢিলা-কুলুখ ও পানি সাথে নিয়ে যাবে, (যদি ইস্তেঞ্জাখানায় ঢিলা-কুলুখ ও পানি না থাকে) আর ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশের পূর্বে বিস্মিল্লাহ্ বলে দোয়া পড়ে প্রবেশ করবে। পর্দার স্থান খোলার পূর্বে মনে মনে বিসমিল্লাহ্ বলে কাপড় খুলবে এবং ইস্তেঞ্জা হয়ে গেলে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে বিস্মিল্লাহ্ বলে লজ্জাস্থান ঢেকে ফেলবে। আর পুরুষ হলে- পুরুষলিঙ্গ বাম হাত দিয়ে ধরে প্রস্রাব করবে। ইস্তেঞ্জাখানা থেকে বের হয়ে দোয়া পড়বে। দাঁড়িয়ে এবং ক্বিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে ইস্তেঞ্জা করবে না। উঁচু স্থানে বসে নীচু স্থানের দিকে প্রস্রাব করতে বসবে। বাতাসের দিকে মুখ করে বসবে না। শক্ত স্থানে পেশাব করবে না। অন্যথায় পেশাবের ছিটা শরীরে বা কাপড়ে লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। 
ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের নিয়মঃ পুরুষরা প্রস্রাবান্তে বাম হাতে ঢিলা-কুলুখ নিয়ে মুত্র নালীর অগ্রভাগে ধরবে। মূত্র নালীর অগ্রভাগের ভিজা দূর না হওয়া পর্যন্ত বেজোড় সংখ্যক ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করবে। ঢিলা-কুলুখ ও পানি ডান পার্শ্বে রাখবে। ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করার সময় এত্মিনানের জন্য কেউ ইচ্ছে করলে হাঁটা-হাঁটি করতে পারে বা উঠা বসা করতে পারে অথবা কাশি ইত্যাদি দিতে পারে, প্রস্রাব ঝড়া বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত। প্রস্রাবান্তে ঢিলা-কুলুখ নিয়ে পাক হওয়ার জন্য চেষ্টা করাকে ইস্তেবরা বলা হয়। এটা পুরুষের জন্য ওয়াজিব ও ফরজের অন্তর্ভূক্ত, আর মেয়েদের জন্য মোস্তাহাব। অবশ্যই হাঁটা-হাঁটির সময় পর্দার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে ও শালীনতা বজায় রাখতে হবে। আর প্রত্যেক ব্যাপারে বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখা আফজল। প্রস্রাব ঝড়া বা পড়া বন্ধ হওয়ার পরে পানি ব্যবহার করতে হবে। প্রথমে উভয় হাত তিনবার ধুয়ে লজ্জাস্থান তিনবার ধৌত করবে। অথবা হাত না ধুয়েও শুধু লজ্জাস্থান ধৌত করতে পারে। সর্বশেষে হাত ধুয়ে দাঁড়াবে।
পেশাবে মেয়েদের ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই। মেয়েরা পেশাব করার পর কিছুক্ষণ বিলম্ব করে পানি ব্যবহার করবে এবং কাপড় দিয়ে ভিজা স্থান মুছে অর্থাৎ ইস্তেনক্বা করে ইস্তেঞ্জাখানা থেকে বের হয়ে আসবে।   
পায়খানা করার সুন্নাত তরীকাঃ- যখন পায়খানার হাজত হবে, তখন মাথা ঢেকে বিস্মিল্লাহ্ বলে ও দোয়া পড়ে ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশ করবে। যদি ইস্তেঞ্জাখানায়  ঢিলা-কুলুখ ও পানির ব্যবস্থা না থাকে, তবে ঢিলা-কুলুখ ও পানি সাথে নিয়ে যাবে এবং বসার পূর্বে মনে মনে বিস্মিল্লাহ্ বলে কাপড় উঠায়ে বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে ফারাগাত মত বসবে। পানি ও কুলুখ ডান পার্শ্বে রাখবে। ইস্তেঞ্জা করা শেষ হয়ে গেলে ঢিলা-কুলুখ ও পানি ব্যবহার করবে। 
ঢিলা-কুলুখ ও পানি ব্যবহারের নিয়ম ঃ- পুরুষের জন্য শীত ও গ্রীষ্ম উভয়কালে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের জন্য পৃথক পৃথক নিয়ম রয়েছে। শীতকালে প্রথম ঢিলা পিছন হতে মুছে সামনে নিবে, দ্বিতীয় ঢিলা সামনে থেকে মুছে পিছনে  নিবে এবং তৃতীয় ঢিলা পিছন থেকে মুছে সামনে নিবে। আর গ্রীষ্মকালে প্রথম ঢিলা  সামনে থেকে মুছে পিছনে নিবে, দ্বিতীয় ঢিলা পিছন থেকে মুছে সামনে নিবে এবং তৃতীয় ঢিলা সামনে থেকে মুছে পিছনে নিবে। আর মেয়েদের জন্য শীত ও গ্রীষ্ম উভয়কালে প্রথমঢিলা সামনে থেকে মুছে পিছনে নিবে, দ্বিতীয় ঢিলা পিছন থেকে মুছে সামনে নিবে এবং তৃতীয় ঢিলা সামনে থেকে মুছে পিছনে নিবে।
পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য বেজোড় সংখ্যক (৩,৫,৭ ইত্যাদি) ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সুন¦ত। ঢিলা-কুলুখ ছোট হলে তা একবারেই ব্যবহার করতে হবে, আর যদি বড় হয় তাহলে সতর্কতা অবলম্বন করে একাধিকবার ব্যবহার করা যেতে পারে। ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করার পূর্বে যে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করবে, সেটাকে “উস্কুত আন জিকরিল্লাহ্” বলে তিনবার টোকা দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। 
পানি ব্যবহার করার নিয়মঃ- পায়খানার জন্য ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করার পর উভয় হাত তিনবার ভাল করে পানি দ্বারা ধৌত করবে। অতঃপর পায়খানার স্থান বেজোড় সংখ্যকবার উত্তমভাবে ধৌত করবে। অতঃপর পুণরায় উভয়হাত ধৌত করে পূর্বে বর্ণিত নিয়ম মোতাবেক পেশাবের জন্য ঢিলা-কুলুখ ও পানি ব্যবহার করবে।
ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সুন্নতে মুয়াক্কাদার অন্তর্ভূক্ত। পুরুষেরা এক, দুই বা তিন অঙ্গুলি অর্থাৎ মধ্যমা অনামিকা ও কনিষ্ঠা দ্বারা শৌচ কার্য্য সমাধা করতে পারে। তবে যত কম অঙ্গুলি ব্যবহার করে শৌচ করবে, ততই উত্তম। অঙ্গুলির পেট দ্বারা আড়াআড়িভাবে শৌচ করবে। তর্জনী (শাহাদাত), বৃদ্ধাঙ্গুলি ও হাতের তালুর দ্বারা শৌচ কার্য করবে না, এটাই আফজল। অঙ্গুলির নখ এবং হাতের পৃষ্ঠ দ্বারা শৌচ কাজ করলে অর্শ্ব রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
মহিলাগণ দু’ভাগে বিভক্ত। যারা বাকেরাহ বা অবিবাহিতা তারা হাতের তালু দিয়ে শৌচ কার্য সমাধা করবে। এটাই আফজল, অন্যথায় অঙ্গুলি ব্যবহারের মাধ্যমেও করতে পারে। আর যারা সায়েবা বা বিবাহিতা তারা দু’অঙ্গুলি বা তিন অঙ্গুলি দিয়ে শৌচ কার্য সমাধা করবে। অর্থাৎ মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা। এক অঙ্গুলি দিয়ে না করা আফজল। আর রোজাদার পুরুষ-মহিলা উভয়েই পানি ব্যবহারের সাথে সাথে নেকড়া দিয়ে ভিজা স্থান মুছে ফেলবে, যাকে ইস্তেনক্বা বলা হয়। অতঃপর উঠে ইস্তেঞ্জখানা ত্যাগ করবে। সাধারণতঃ ইস্তেনক্বা করা মোস্তাহাব। আর রোজা ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ইস্তেনক্বা করা ফরজ-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত। 
দোয়াঃ- ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশ করার পূর্বে “বিস্মিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবছি ওয়াল খাবায়িছ” -এ দোয়া পড়ে সেন্ডেল ব্যবহার করে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। 
আর বের হয়ে “গুফরানাকা আল্হামদুলিল্লাহি আযহাবা আন্নিল আযা ওয়া আফানি” -এ দোয়া পড়বে এবং বের হওয়ার সময় ডান পা আগে দিয়ে বের হবে। (আলমগীরি,শামী, মারাকিউল ফালাহ্, বাহরুর রায়েক, জামিউর রুমুস, শরহে বেক্বায়াহ, দূররুল মুখতার,জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ, শরহে মুলতাক্বা   মাজালিসুল আবরার, তাবিনুল হাক্বায়েক, সগিরী, কবিরী, হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, মাজমাউল আনহোর।)   আবা-২৮

0 Comments: