৪০৭ নং- সুওয়ালঃ-আমি একটি বাড়ীতে লজিং থাকি। বাড়ীওয়ালা একটি চাকুরী করে এবং চাকুরীর সূত্রে বিভিন্ন উপায়ে সে ঘুষ গ্রহণ করে থাকে। অবৈধ পথে উপার্জিত এ অর্থ দিয়ে সে প্রয়োজনীয় বাজার করে থাকে এবং বাড়ীর কেউ নামায পড়ে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমার জন্য জেনে-শুনে এসব খাবার গ্রহণ বৈধ হবে কি? এবং এতে করে আমার নামায রোজা আদায় হবে কি?

সুওয়ালঃ- মাসিক মঈনুল ইসলাম, জিলহজ্জ সংখ্যা, ১৪১৫হিঃ নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা ও তার সমাধান ছাপানো হয়ঃ-
জিজ্ঞাসাঃ আমি একটি বাড়ীতে লজিং থাকি। বাড়ীওয়ালা একটি চাকুরী করে এবং চাকুরীর সূত্রে বিভিন্ন উপায়ে সে ঘুষ গ্রহণ করে থাকে। অবৈধ পথে উপার্জিত এ অর্থ দিয়ে সে প্রয়োজনীয় বাজার করে থাকে এবং বাড়ীর কেউ নামায পড়ে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমার জন্য জেনে-শুনে এসব খাবার গ্রহণ বৈধ হবে কি? এবং এতে করে আমার নামায রোজা আদায় হবে কি? 
সমাধানঃ- যদি আপনি এ বিষয়ে নিশ্চিত হন যে, আপনাকে প্রদেয় খাবার অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থের ক্রয়কৃত, তখন সে খাবার গ্রহণ জায়েয হবেনা। যদি খাবার ক্রয়ে হালাল-হারাম উপার্জনের সংমিশ্রণ ঘটে, এ ক্ষেত্রেও যদি হারাম উপায়ে উপার্জনের পরিমাণ বেশী হয়, খাবার গ্রহণ জায়েয হবেনা। হ্যাঁ, যদি আপনি অপারগ হন অর্থাৎ কোথাও খাবারের ব্যবস্থা করতে না পারেন, তখন এ বলে আপনি খেতে পারবেন যে, আমি শুধু হালাল পথে উপার্জিত অর্থের ক্রয়কৃত খাবারই খাচ্ছি। তবে এক্ষেত্রেও যথাসাধ্য এড়িয়ে চলার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। 
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে- উল্লেখিত জিজ্ঞাসার সমাধান সহীহ্ হয়েছে কিনা, জানায়ে ধন্য করবেন।
জাওয়াবঃ- উপরোক্ত বক্তব্য পূর্ণাঙ্গ ও শুদ্ধ হয়নি। কারণ লজিং-এর দু’টি অবস্থা রয়েছে। প্রথমতঃ হচ্ছে- যে বাড়ীর মালিক লজিং রাখে, সে তার সন্তান-সন্ততিদের পড়ানোর জন্য রেখে থাকে। আর যে লজিং থাকে, সেও এ পড়ানোর বিণিময়ে থাকা-খাওয়া পেয়ে থাকে। এছাড়াও অনেকেই বাড়ী-ঘর দেখা-শোনা, হাট-বাজার করা ও নিত্য প্রয়োজনীয় কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে লজিং রেখেও থাকে, আবার থেকেও থাকে। দ্বিতীয়তঃ হচ্ছে- অনেকে আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি ও সাওয়াব প্রাপ্তির আশায় তালেবে ইল্মদেরকে কোন কাজের বিণিময় ব্যতীত লজিং রেখে থাকে এবং অনেকে স্কুল-কলেজের ছাত্র গরীব ছাত্রদের উপকারার্থে কোন কাজের বিণিময় ব্যতীত লজিং রেখে থাকে। অতএব অবস্থা হচ্ছে দু’টো। প্রথমটি হচ্ছে- থাকা-খাওয়া, যা শ্রমের বিণিময়ে হয়ে থাকে। 
দ্বিতীয়টি হচ্ছে- থাকা-খাওয়া, যা শ্রম ব্যতীত আল্লাহ্র ওয়াস্তে হয়ে থাকে। শরীয়তের উসুল হচ্ছে- শ্রমের মাধ্যম যদি হালাল হয়, তবে শ্রমের বিণিময়ও হালাল, যদিও বিণিময় দাতা হারাম থেকে দিয়ে থাকুক না কেন। আর শ্রমের মাধ্যম যদি হারাম হয়, তবে শ্রমের বিণিময়ও হারাম। যদিও বিণিময় দাতা হালাল থেকে দিয়ে থাকুক না কেন। সুতরাং প্রথম অবস্থায় অর্থাৎ শ্রমের বিণিময়ে যে লজিং থাকবে, তার জন্য লজিং বাড়ীর মালিকের উপার্জন হালাল কি হারাম তা দেখার বিষয় নয়। যেমন-ফিক্বাহ্র কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে- কোন ক্বারী সাহেব যদি কোন সুদখোরের বাড়ীতে তার ছেলে-মেয়েদেরকে কোরআন শরীফ শিক্ষা দেয়, তবে সে ক্বারী সাহেব কি পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারবেন? জাওয়াবে বলা হয়েছে, পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারবেন। 
অতএব প্রথম সূরতে যারা লজিং থাকবে, তাদের জন্য থাকা-খাওয়া জায়েয রয়েছে।
দ্বিতীয় সূরত হচ্ছে- খাওয়া যদি শ্রম ব্যতীত আল্লাহ্র ওয়াস্তে হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই হালাল-হারাম তমীজ করতে হবে। কারণ  হাদীছ শরীফে এরশাদ হয়েছে-
كل لحم نبت من السحت كانت النار اولىبه.
অর্থ- “ঐ সমস্ত গোশ্ত যা হারাম দ্বারা তৈরি হয়েছে, তার জন্য জাহান্নামের আগুণ-ই উপযুক্ত।” 
আর যদি কেউ এমন মাজুর হয় যে, তার থাকা-খাওয়ার কোনই ব্যবস্থা নেই, তখন শরীয়তের উসুল হচ্ছে- 
الضرورات تبح المحذرات.
অর্থঃ- “জরুরত হারামকে মোবাহ্ করে দেয়।” কাজেই যে মাজুর তার জন্য জায়েয রয়েছে। তবে তার উচিত হালাল থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থার জন্য কোশেশ করা। (মুজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে আমিনীয়া)
আবা-২৬

0 Comments: