৪৪৫নং - সুওয়াল - বিধর্মীদের সাথে লেনদেন তথা তাদের দোকানপাট থেকে দৈনন্দিনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী যথা- গোস্ত, মাছ, চাল, ডাল, তরি-তরকারী এবং তাদের পাকানো মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার ইত্যাদি ক্রয় জায়েয হবে কি? দলীলসহ জানতে চাই।

সুওয়াল - বিধর্মীদের সাথে লেনদেন তথা তাদের দোকানপাট থেকে দৈনন্দিনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী যথা- গোস্ত, মাছ, চাল, ডাল, তরি-তরকারী এবং তাদের পাকানো মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার ইত্যাদি ক্রয় জায়েয হবে কি? দলীলসহ জানতে চাই।

জাওয়াব - আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে সূরা হুজরাতের ১০ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
انما المؤمنون اخوة.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।” আর হাদীছ শরীফে আছে-
المسلم اخ المسلم.
অর্থঃ- “এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই।” কাজেই মুসলমানগণ যখন মাল-সামানা যেমন- চাল, ডাল, মাছ, গোস্ত, তেল, লবণ, মরিচ অথবা তৈরিকৃত খাদ্যদ্রব্য, যেমন-মিষ্টি, ছানা, সন্দেশ ইত্যাদি অথবা অন্যান্য দ্রব্য-সামগ্রী (যা খাদ্যের অন্তর্ভূক্ত নয়) ক্রয় করবে, তখন তার দায়িত্ব হবে প্রথমেই সেটা কোন মুসলমানের দোকান থেকে খরিদ করা। কারণ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হালাল খাওয়া ফরজ। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন- 
ياايها الناس كلوا مما فى الارض حلالا طيبا ولا تتبعوا خطوات الشيطان انه لكم عدو مبين.
অর্থঃ- “হে লোকসকল! তোমরা খাদ্য গ্রহণ কর জমিন হতে, যা হালাল ও পবিত্র। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাক্বারাহ্ ১৬৮) আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة.
অর্থঃ- “হালাল কামাই করা অন্যান্য ফরজের পরে ফরজ।” 
উল্লিখিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের আলোকে এটাই পরিস্ফুটিত হয় যে, মুসলমানদের জন্য হালাল কামাই করা ফরজ। তাই মুসলমান ব্যবসায়ীগণ হালাল কামাইয়ের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের জন্য উচিত, পণ্য দ্রব্য ক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ী মুসলমানকে সাহয্য করা। এটা হবে নেক কাজে সাহায্য করার শামিল। মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফ-এ তিনি ইরশাদ করেন,
تعاونوا على البر والنقوى.
অর্থঃ- “তোমরা নেকী ও পরহেজগারীর মধ্যে পরস্পর সাহায্য- সহযোগীতা কর।” (সূরা মায়েদা/২) আর হাদীছ শরীফে আছে-
والله فى عون العبد ماكان العبدفى عون اخيه.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দাকে সাহায্য করেন, যতক্ষণ বান্দা তার অপর ভাইকে সাহায্য করে থাকে।” 
অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ, সে যখন কোন খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য-সামগ্রী ক্রয় করবে, তখন তা প্রথমেই মুসলমান ব্যবসায়ীগণের নিকট তালাশ করবে,  সেখানে পেলে, সেখান থেকেই ক্রয় করতে হবে। আর যদি সেখানে না পাওয়া যায়, তবে বিধর্মী ব্যবসায়ীদের থেকে সেটা খরিদ করতে পারবে, যদি সেটা অত্যাবশ্যকীয় হয়। আর যদি এমন হয় যে, তা না কিনলেও চলে, তবে না কেনাই উত্তম। আরো লক্ষণীয় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য যে সকল খাদ্য-সামগ্রী খাওয়া জায়েয রয়েছে, সে সমস্ত খাদ্য-সামগ্রী যদি বিধর্মীদের মাধ্যমে তৈরি হয়। যেমন- মিষ্টি, ছানা, দধি ইত্যাদি এবং তার মধ্যে যদি নাপাকী (যা মুসলমানদের জন্য খাওয়া জায়েয নেই। যেমন গবর, চনা শুকরের চর্বি ইত্যাদি) থাকার সম্ভবনা থাকে, তবে তা খাওয়া জায়েয নেই। আর যদি নাপাকী নাও থাকে, তথাপিও তা খাওয়া তাক্বওয়ার খিলাফ। 
জানা আবশ্যক যে, বিধর্মীদের সাথে লেনদেন তথা তাদের দোকানপাট থেকে পণ্য-দ্রব্য এবং নাপাকী মিশ্রিত ব্যতীত তৈরীকৃত খাদ্য-সামগ্রী বেচা-কেনা জায়েয থাকলেও তাদের সাথে আন্তরিকভাবে মহব্বত বা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা কোন মতেই জায়েয নেই বরং হারাম। কুরআন শরীফে এরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক বলেন, 
ياايها الذين امنوا لا تتخذوا عدوى وعدوكم.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে (কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাসারা ইত্যাদি) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না।” (সূরা মুমতাহেনাহ্, আয়াত নং-১) 
এবং সূরা ইমরানের ১১৮ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
يا ايها الذين امنوا لا تتخذوا بطانة من دوتكم.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুসলমান ব্যতীত কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না।”   
আবা-২৮

0 Comments: