৪৩১ নং- সুওয়াল - জমি বন্ধক বা কট্ নামে এক প্রকার রীতি চালু রয়েছে। অর্থাৎ জমির মালিক প্রয়োজনের তাগিদে টাকা ওয়ালার নিকট হতে এক বিঘা কিম্বা এর বেশী-কমে জমির উপর দশ হাজার টাকা নিল। যতদিন জমির মালিক টাকা পরিশোধ করতে না পারবে, ততদিন টাকা ওয়ালা টাকার বিণিময়ে উক্ত জমির ফসল ভোগ করবে। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু জায়েয?

সুওয়াল - জমি বন্ধক বা কট্ নামে এক প্রকার রীতি চালু রয়েছে। অর্থাৎ জমির মালিক প্রয়োজনের তাগিদে টাকা ওয়ালার নিকট হতে এক বিঘা কিম্বা এর বেশী-কমে জমির উপর দশ হাজার টাকা নিল। যতদিন জমির মালিক টাকা পরিশোধ করতে না পারবে, ততদিন টাকা ওয়ালা টাকার বিণিময়ে উক্ত জমির ফসল ভোগ করবে। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু জায়েয?

 জাওয়াব - উপরে উল্লেখিত বর্ণনা মোতাবেক জমি বন্ধক বা কট্ রাখা ও নেয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়েয। কারণ টাকা দিয়ে জমি বন্ধক নিয়ে তার উৎপাদিত ফসল ভোগ করা সুদের শামিল। কেননা বন্ধক গ্রহীতার টাকা সম্পূর্ণই অক্ষত বা জমা থাকে, আর জমির ফসল সে ভোগ করে অতিরিক্ত হিসেবে। বন্ধকদাতা যতদিন বা যত বছর টাকা ফেরত না দিবে, ততদিন বা তত বছর বন্ধক গ্রহীতা জমির ফসল ভোগ করতেই থাকবে। অথচ তার কোন বিণিময় সে দিবে না। তার বিণিময় শুধু এতটুকু যে, সে জমির মালিককে টাকা কর্জ দিয়েছে। আর এরূপ টাকা কর্জ দিয়ে তার বিণিময়ে ফায়দা হাসিল করা খালেছ সুদ গ্রহণ করার নামান্তর। হ্যাঁ, জমি বন্ধক নিয়ে তার ফসল ভোগ করতে পারবে। তবে শর্ত হলো- সে যত টাকার ফসল ভোগ করবে, তত টাকা জমির মালিককে কর্জ দেয়া টাকা থেকে কাটা যাবে। অনেকে বলে থাকে, বন্ধক গ্রহীতা জমির খাজনা আদায় করলে বা দিলে সে ফসল ভোগ করতে পারবে। এটাও নাজায়েয ও হারাম ফতওয়া। শুদ্ধ হলো- খাজনা বাবদ বন্ধকী জমিনের উপর যতটাকা বন্ধক গ্রহীতা খরচ করবে, তত টাকারই ফসল ভোগ করতে পারবে। তার চেয়ে এক পয়সার ফসল বেশী ভোগ করলে, সেটাও সুদ হবে। আর যদি বন্ধক গ্রহীতা বর্গা নেয়, তবে বর্গা নিয়ে ফসল ফলানোর কারণে অন্যান্য যারা বর্গা নেয়, তাদের মত ১/২, ১/৩, ১/৪ ইত্যাদি অংশ ফসল সে পেতে পারে। কারণ জমি আবাদ করতে সে নিজের পয়সা খরচ করেছে। অথবা যদি বন্ধক গ্রহীতা জমি ইজারা, পত্তন কিম্বা ভাড়া হিসেবে নেয়, তবে সে ফসল ভোগ করতে পারবে। যেমন- অন্যান্য লোক জমি ইজারা, পত্তন বা ভাড়া নিয়ে ফসল ভোগ করে থাকে। অর্থাৎ সে যত বছর জমির ফসল ভোগ করবে, তত বছর ইজারা হিসেবে যত টাকা হবে, তত টাকা তার দেয়া কর্জ টাকা থেকে কাটা যাবে। অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, জমি বন্ধক গ্রহীতা কর্জ দেয়ার কারণে ইজারার টাকা বাজার দর থেকে কম দিতে পারবে না। যদি কিছু কম দেয়, তবে যত টাকা কম দিল, সে তত টাকাই সুদ খেল। অনেকে বলে থাকে, টাকা ফেরৎ নেয়ার সময় এক’শ, দু’শ বা কিছু টাকা কম নিলেই পিছনের যত বছরেরই ফসল সে ভোগ করে থাকুক না কেন, তা হালাল হয়ে যাবে। এটাও ভুল ফতওয়া। শুদ্ধ হলো- যত টাকা, যত পয়সার ফসল সে খেয়েছে, ঠিক তত টাকা, তত পয়সাই কম নিতে হবে। অন্যথায় সে সুদ খাবে। প্রশ্নোল্লিখিত পদ্ধতিতে জমি বন্ধক দেয়া ও নেয়া উভয়টাই হারাম।  অনেকে বলে থাকে, জমি বন্ধক না রাখলে জরুরতে টাকা পাওয়া যায়না। হ্যাঁ, জমি বন্ধক রেখে টাকা নেয়া জায়েয আছে, যদি সুদের শর্তে না হয়। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফে এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ সুদ নিতে এবং দিতে নিষেধ করেছেন। যেমন কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
يا ايها الذين امنوا لا تا كلوا الربوا اضعافا مضا عفة واتقوا الله لعلكم تفلحون.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণ, বহুগুণে সুদ খেওনা এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে ভয় কর, আশা করা যায়, তোমরা কামিয়াবী হাছিল করবে।” (সূরা আল্ ইমরান/১৩০) মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন,
يا ايها الذين امنوا اتقوا الله وذروا ما بقى من الربوا ان كنتم مؤمنين- فان لم تمعلوا فأذنوابحرب من الله ورسول له- وان تبتم فلكم رمؤس اموالكم لا تظلمون ولا تظلمون. অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক, তাহলে সুদের যা বাকী রয়েছে, তা ছেড়ে দাও। অতঃপর যদি ছেড়ে না দাও, তাহলে জেনে নাও, মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে যুদ্ধ ঘোষণা করা হলো। আর যদি তোমরা তওবা কর, তাহলে তোমাদের মালের মুলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলুম করো না এবং মজলুমও হইওনা।” (সূরা বাক্বারা/২৭৮,২৭৯) মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন,
احل الله البيع وحرم الربوا
অর্থঃ- মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বেচা-কেনাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” (সূরা বাক্বারা/২৭৫) হাদীছ শরীফ-এ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
درهم ربوا يأكله الروحر وهو يعلم اشد من ستة وثلاثين زنية.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি জেনে-শুনে এক দেরহাম (রৌপ্য মুদ্রা) সুদ খাবে, তার ৩৬বার জেনা করার চেয়েও বেশী গুণাহ্ হবে।” (আহ্মদ, দারে কুতনী, বায়হাক্বী)  অন্য হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে,
الربوا سبعون جزء ايسرها ان ينكح الرجل امه.  অর্থঃ- “সুদের গুণাহের সত্তর ভাগের ক্ষুদ্রতম ভাগ হচ্ছে- কোন ব্যক্তি স্বীয় মাতাকে বিবাহ করা।” (ইবনে মাযাহ্, বায়হাক্বী) উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা এটাই ছাবেত হয় যে, যে সুদ খায়, সে মহান আল্লাহ্ পাক উনার এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাফরমানীতে মশগুল। যার কারণে মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আর যার বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেন, তার ধ্বংস অনিবার্য্য, তা ইহ্কাল ও পরকাল অর্থাৎ উভয়কালেই এবং তার শেষ পরিণতি হচ্ছে- জাহান্নাম। অতএব যদি সুদের শর্ত ব্যতীত টাকা পাওয়া না যায়, তবে জরুরত হলে জমি বিক্রি করে কাজ সমাধা করতে হবে। তথাপিও কোন অবস্থাতেই সুদের শর্তে বন্ধক রাখা জায়েয নেই। আর বন্ধক গ্রহীতাগণ, তারা বলে থাকে যে, বিনা বন্ধকে টাকা কর্জ দিলে টাকা ফেরত পাওয়া যায়না। যদিও পাওয়া যায়, তবে তা যথাসময় পাওয়া যায়না এবং যথেষ্ট হয়রানি ও পেরেশানী ভোগ করতে হয়। 
তাদের উত্তর হলো- জমি বন্ধক নিতে পারবে, তবে সুদের শর্তে নয়, বরং যত টাকার ফসল খাবে, তত টাকা তার পাওনা টাকা থেকে বাদ দিবে। কেননা সে যে টাকা কর্জ দিয়েছে, সেটা হচ্ছে- কর্জে হাসানাহ্। আর কর্জে হাসানার ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ উল্লেখ করেছেন,
من ذا الذى يقرض الله قرضا حسنا فضاعفه له اضعافا كثيرة والله يقبض رببصط واليه تر جعون.  অর্থঃ- “কে এমন আছে যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে উত্তম কর্জে কর্জ দিবে? অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তাকে দ্বিগুণ, বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিবেন। আর আল্লাহ্ তায়ালা তিনিই সংকোচিত করেন এবং প্রশস্ততা দান করেন এবং উনারই নিকট তোমরা ফিরে যাবে।” (সূরা বাক্বারা/২৪৫) আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
ما من مسلم يقرض مسلما قر ضامرة الاكان كصد قته مرتين.
অর্থঃ- “এমন কোন মুসলমান নেই, যে কোন মুসলমানকে একবার কর্জ দেয়, তার ফযীলত মহান আল্লাহ্ পাক উনার রাস্তায় সমপরিমাণ সম্পদ দু’বার সদকা (দান) করার সমতুল্য।” কাজেই প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ সামর্থ থাকলে অভাবগ্রস্থ মুসলমানদেরকে কর্জে হাসানাহ্ দেয়া। আর যারা কর্জে হাসানাহ্ গ্রহণ করবে, তাদেরও উচিৎ, ওয়াদা মোতাবেক যথাসময়ে তা পরিশোধ করে দেয়া। কেননা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, “ওয়াদার খেলাফ করা মুনাফিকের লক্ষণ।” আবা-২৭

0 Comments: