“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১৮)

পিডিএফ- 
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১৭)


হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। হানাফী মাযহাব মতে ফজর  নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
 তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।  মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে সূরা মায়িদার৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
 لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
  অর্থঃ-তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল  বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মুতাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ওহাবী সম্প্রদায়
উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ছূরা  কুনূতে নাযেলাসম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের প্রতি বদ্ দোয়াকরার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও মুছল্লীদেরকে প্রতি ফজর নামাযে’ ‘কুনূতে নাযেলাপাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে।  শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যে তারা ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।অথচ কুনূতে নাযেলাসম্পর্কিত ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খণ্ডন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে সাধারণ লোক মনে করবে হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল নামাযঅনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে। অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূর সাথে নামায আদায় না করা, হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
 عن حابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
 অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়।
আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
  من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.
 অর্থঃ- যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্ মানাসিক)
হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব, এক হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য, ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে।
ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন।
অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।  নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। মূলকথা, যারাই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার মাধ্যমে লানত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।  প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ছূরা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে। কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)


কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত অখ্যাত রাহমানী পয়গামের জিহালতপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব

বিগত আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ওহাবী, খারিজী ও বিদ্য়াতীরা দীর্ঘদিন ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা বা বদদোয়ার কুনূত পাঠ করে। সাথে সাথে অখ্যাত রহমানী পয়গাম ডিসেম্বর, ২০০২ সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার জবাবে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে জায়িয বলে ফতওয়া দেয়া হয়। সঙ্গত কারণেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতের পাঠকদের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত একটি সুওয়াল আল বাইয়্যিনাত কর্তৃপক্ষের নিকট আসে। মাসিক আল বাইয়্যিনাত এর ফেব্রুয়ারী২০০৩ সংখ্যায় রাহমানী পয়গামের বক্তব্য খণ্ডন করতঃ একটি জাওয়াব দেয়া হয়। উক্ত জাওয়াব পেয়ে তারা সম্পূর্ণ লা-জাওয়াব হয়ে যায়। এর কিছুুদিন পর গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফথেকে একটি গবেষণালব্ধ ও দলীলভিত্তিক লিফ্লেট সারা দেশে প্রচার করা হয়। যাতে বলা হয়েছে যে, “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনুতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ।  উক্ত লিফলেটের একটি কপি তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আযীযুল হকের মাদ্রাসার শিক্ষক ঢাকা শাহজাহানপুর আমতলা মসজিদের তথাকথিত খতীব মুফতী মনছূরুল হক্বের নিকট পৌছানো হয় এবং উক্ত লিফলেটের জবাব দেয়ার জন্যে বলা হয়। মনছূরুল হক সাতদিনের মধ্যে উক্ত লিফলেটের জাওয়াব দিবে বলে জানায়।  কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তার কাছ থেকে উক্ত লিফলেটের কোন জাওয়াব পাওয়া গেলনা। এরপর মাসিক আল বাইয়্যিনাতের পাঠকগণের পূনঃ পূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ১৩২তম সংখ্যা থেকে কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে আরো অধিক দলীল-আদিল্লাহ-এর ভিত্তিতে আরো বিস্তারিতভাবে ফতওয়া প্রদান করা হয়। যা এখনো অব্যাহত আছে। উক্ত ফতওয়া প্রকাশের পর ওহাবী, খারিজী ও বিদয়াতী মৌলভী যারা ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করেছিল তারা সাধারণ জনগণের নিকট জাহিল, গোমরাহ ও বিদয়াতী হিসেবে সাব্যস্ত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে এবং নিজেদের জিহালতী ও গোমরাহী ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত সুওয়াল, লিফলেট ও ফতওয়া কোনটাই খণ্ডন না করে দীর্ঘ প্রায় তিন বৎসর পর রাহমানী পয়গাম আগস্ট২০০৫ সংখ্যায় সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, কারচুপিমূলক বক্তব্য প্রদান করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইবারত কারচুপি করে ও শাফিয়ী মাযহাবের মতকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে কুনূতে নাযেলাকে জায়িয করার ব্যর্থ অপপ্রয়াস চালিয়েছে। তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অত্র সংখ্যা থেকে রাহমানী পয়গামে প্রদত্ত কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও কারচুপিমূলক প্রতিটি বক্তব্য ও দলীল খন্ডন করতঃ সঠিক জাওয়াব প্রদান করা হচ্ছে ইনশা আল্লাহ। যাতে সাধারণ জনগণ পয়গাম গোষ্ঠীর জিহালতী, গোমরাহী, ধোঁকাবাজী, প্রতারণা ও জালিয়াতী সম্পর্কে আরো সুস্পষ্টভাবে অবগত হতে পারে এবং তাদের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে নিজ ঈমান ও আমলকে হিফাযত করতে পারে। নিম্নে ধারাবাহিকভাবে রাহমানী পয়গামে প্রদত্ত কুনূতে নাযেলাসম্পর্কিত জিহালতপূর্ণ বক্তব্যসমূহকে পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করে তার বিশুদ্ধতায় ছহীহ দলীলভিত্তিক খণ্ডনমুলক জাওয়াব দেয়া হলো।

অখ্যাত রাহমানী পয়গামের
জিহালতপূর্ণ বক্তব্য- ১

 অখ্যাত রাহমানী পয়গাম আগস্ট-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ৩৪ পৃষ্ঠায় জিজ্ঞাসা ও জবাব বিভাগে কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত এক জিজ্ঞাসার জবাবে যা লিখেছে, তা দ্বারা তারা প্রথমত: এটাই বুঝাতে চেয়েছে যে, “জমহুরে ফুক্বাহা বিশেষত হানাফী মাযহাবের ফুক্বাহায়ে কিরামগণের মতে, কুনূতে নাযেলা তথা যুদ্ধ বিগ্রহ মহামারী ইত্যাদি দুর্যোগপূর্ণ সময়ে কুনূতে নাযেলা পড়ার হুকুম মানসুখ হয়নি। বরং কোন প্রকার দুর্যোগ ছাড়া দায়িমীভাবে বা সব সময়েই ফজরের নামাযে যে কুনূত পড়া হতো  তাই মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো ফজরের নামাযে দুপ্রকার কুনূত ছিল। ১. কুনূতে দায়েমী: যা কোন প্রকার দুর্যোগ ছাড়া দায়েমীভাবে পড়া হতো। হানাফী মাযহাব মতে  এ প্রকার কুনূত মানসুখ হয়ে গেছে। ২. কুনূতে নাযেলাঃ যা ফজর নামাযে যুদ্ধ-বিগ্রহ, বালা- মুছীবত, মহামারী ইত্যাদি সময়ে পড়া হতো। হানাফী মযহাব মতে এ প্রকারের কুনূত মানসুখ হয়নি।

রহমানী পয়গামের জিহালতপূর্ণ
বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জবাব

 তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমত: বলতে হয় যে, তাদের উপরোক্ত বক্তব্য প্রমাণ করে যে, তারা আশাদ্দুদ দরজার জাহিল ও চরম প্রতারক। শুধু তাই নয়, মাযহাবী ফায়সালার ব্যাপারেও তারা চরম অজ্ঞ। অর্থাৎ কোন্ হাদীছ শরীফ ও বক্তব্য হানাফী মাযহাবের আর কোন্টা শাফিয়ী বা অন্যান্য মাযহাবের এ সম্পর্কেও তারা নেহায়েতই অজ্ঞ। তাইতো তাদের গুরু শাইখুল হদছ নিজের বুযুর্গী জাহির করতে গিয়ে মাগরিব নামাযে সূরা ফাতিহার পর উচ্চস্বরে  অর্থাৎ জোরে বিস্মিল্লাহ পাঠ করতঃ সূরা ইখলাস পাঠের পর বিস্মিল্লাহ আস্তে পাঠ করে সূরা কাফিরুন পাঠের পর প্রথম রাকায়াত শেষ করে। অত:পর দ্বিতীয় রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর জোরে বিস্মিল্লাহ বলে সূরা ইখলাস তারপর সূরা নছর পড়েছে। (আগস্ট২০০৫- শাইখুল হাদীসের ২৪ ঘণ্টা দ্রষ্টব্য) অথচ আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাযে সূরা ফাতিহার পর দুই সূরা একই রাকায়াতে পাঠ করা, পরের সূরা আগে পড়া, আগের সূরা পরে পড়া, ছোট সূরা আগে পড়া, বড় সূরা পরে পড়া এবং জিহ্রী ও র্সিরী সকল নামাযেই জোড়ে বা উচ্চ স্বরে বিস্মিল্লাহপাঠ করা মাকরূহ।  শুধু তাই নয়, জিহ্রী নামাযে সূরার শুরু বা মধ্যখান যেখান থেকেই পাঠ করুক না কেন বিস্মিল্লাহপাঠ করতে হয়না। আর র্সিরী নামাযে যদি সূরার শুরু থেকে পাঠ করে তবে বিস্মিল্লাহপাঠ করতে হয়। আর যদি মধ্যখান থেকে পাঠ করে তবে বিস্মিল্লাহপাঠ করতে হয়না।  আর তারাবীহ্ নামাযে হাফিয ছাহেব যে একবার জোড়ে বা উচ্চস্বরে বিস্মিল্লাহপাঠ করেন তা মূলত: আয়াত শরীফ হিসেবে পাঠ করেন। কেননা, দুই সূরার মধ্যখানে যে বিস্মিল্লাহরয়েছে তা আয়াত শরীফ কিনা এ ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের ইমামগণের মাঝে ইখতিলাফ বা মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, আয়াত শরীফ, কেউ বলেছেন আয়াত শরীফ নয়। এ মতভেদের কারণেই হাফিয ছাহেবকে একবার জোড়ে বা উচ্চস্বরে বিস্মিল্লাহপাঠ করতে হয়, তাতে শ্রোতাদের খতম পূর্ণ হওয়ার ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ বা সংশয় থাকে না। কাজেই এর দ্বারা কি এটাই প্রমাণ করেনা যে, তারা মাযহাব সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ। সুতরাং কুনূতে নাযেলা হানাফী মাযহাব মতে মানসুখ হয়েছে- এটাও তাদের না জানাটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয়তঃ হানাফী মাযহাব মতে, ফজরে দায়েমী কুনূত মানসুখ হয়েছে। কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়নি  তাদের এ বক্তব্যও সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন এবং হানাফী ফক্বীহগণের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। কেননা তারা হানাফী মাযহাবের কোন নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে প্রমাণ করতে পারেনি এবং  কস্মিনকালেও পারবে না যে, ফজর নামাযে দুপ্রকার কুনূত ছিল। বরং আমরা অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণ করেছি যে, ফজর নামাযে এক প্রকার কুনূতই ছিল আর সেটাই হচ্ছে কুনূতে নাযেলা। যাকে কুনূতে ফজর ও কুনূতে লান বলেও কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিল, যাকওয়ান, আছিয়্যাহ ইত্যাদি ক্বওমের বিরুদ্ধে বদদোয়ায় ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকুর পর শুধুমাত্র এক মাস পাঠ করেছেন।  অতঃপর মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন এর নির্দেশ মুবারকে তিনি তা পাঠ করা বন্ধ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনোই তিনি কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর তখন থেকেই মূলতঃ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা এর আমল মানসুখ হয়ে যায়। এটাই হানাফী মাযহাবের ফতওয়া গ্রাহ্য বা বিশুদ্ধ অভিমত। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত নির্ভরযোগ্য দলীল আদিল্লাহ সমূহ যদিও মাসিক আল বাইয়্যিনাতের পূর্ববর্তী সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে। পাঠকগণের বুঝার সুবিধার্থে এখানেও তা পুনরায় উল্লেখ করা হলোযার মাধ্যমে আমরা গত সংখ্যায় অসংখ্য দলীলের দ্বারা সর্বপ্রথম প্রমাণ করেছি যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে শুধুমাত্র একমাসই কুনূত পাঠ করেছেন। আর উক্ত কুনূতকেই মূলত: কুনূতে লান ও কুনূতে নাযেলা বলা হয়। দ্বিতীয়ত: প্রমাণ করেছি যে, যে সকল কিতাবে ফজরের কুনূত মানসূখহওয়ার কথা উল্লেখ আছে তা দ্বারা মূলত: কুনূতে লান বা নাযেলাকেই বুঝানো হয়েছে।  তৃতীয়ত: অত্র সংখ্যায় প্রমাণ করা হবে যে, হানাফী মাযহাব মতে, ফজর নামাযে কুনূতে লান বা নাযেলার আমল মানসূখ হয়ে গেছে। যা ইতিপূর্বে আমরা পূর্ববর্তী সংখ্যাগুলোতেও প্রমাণ করেছি।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কুনূতে লান বা যুদ্ধ-বিগ্রহ, বালা-মুছীবতের সময় কুনূতে নাযেলা  পাঠ করার আমল মানসুখ হওয়ার প্রমাণ  পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে, যে সকল কিতাবে ফজর নামাযে কুনূতমানসুখ হওয়ার কথা উল্লেখ আছে তা দ্বারা কুনূতে নাযেলাকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ফজরে কুনূত মানসুখ হওয়ার অর্থ হলো কুনূতে নাযেলামানসুখ হওয়া। যেমন, এ প্রসঙ্গে তানযীমুল আশতাতকিতাবের ১ম খণ্ড ২৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১২৪৮-১২৫৩]
وعن الطحاوى عن ابن مسعود قال قنت النبى صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما ظهر عليهم ترك القنوت فقال الطحاوى فهذا ابن مسعود يخبر ان قنوت النبى صلى الله عليه وسلم انما كان من اجل من كان يدعو عليه وانه قد كان ترك ذلك فصار القنوت منسوخا بهر طحاوى نى كها كه اس قنوت كى راوى جو ابن عمر هى انهو نى كها كه الله نى اس قنوت كو منسوخ كرديا حين انزل الله تعالى ليس لك من الأمر شئ او يتوب عليهم او يعذبهم فانهم ظالمون هذا كنه فى العينى والبذل والتعليق والبدائع والترمذى.
অর্থঃ- ইমাম ত্বাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছিয়্যাহ্ এবং যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদদোয়ায় কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা ফজর নামাযে পাঠ করেন। অতঃপর যখন তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক আয়াত শরীফ ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।নাযিল করে তাদের প্রতি বদদোয়াকে নিষেধ করেন তখন রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করেন। অতঃপর হযরত ইমাম ত্বাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই (আছিয়্যাহ্ ও যাকওয়ান) তাদের প্রতি বদদোয়ায় কিছু সময় পর্যন্ত (একমাস) রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন, অতঃপর অতি শীঘ্রই তা পরিত্যাগ করেছিলেন, সেই কুনূতে নাযেলা  পরিত্যাগের সংবাদ অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দিয়েছেন। আর এই পরিত্যাগের ফলে কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যায়। অতঃপর হযরত ইমাম ত্বাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, হযরত আব্দূল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনিও কুনূতে নাযেলা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহ তায়ালাই কুনূতে নাযেলাকে মানসূখ করে দিয়েছেন। আর সেটা ঐ সময় যখন আল্লাহ পাক ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফ নাযিল করেন। আর এরূপ বর্ণনা আল আইনী, বযলুল মাজহুদ, তালীকুছ ছবীহ, বাদায়ে ও তিরমিযী কিতাবেও রয়েছে। মুসলিম শরীফেআরো উল্লেখ আছে যেমন,
[১২৫৪]
حدثنى ابو طاهر وحرملة بن يحيى قالا انا ابن وهب قال اخبرنى يونس بن يزيد عن ابن شهاب قال اخبرنى سعيد بن المسيب وابو سلمة بن عبد الرحمان بن عوف انها سمعا ابا هريرة يقول كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول حين يفرغ من صلوة الفجر من القراءة ويكبر ويرفع راسه سمع الله لمن حمده وربنا لك الحمد ثم يقول وهو قائم اللهم انج الوليد بن الوليد وسلمة بن هشام وعياش بن ابى ربيعة والمستضعفين من المؤمنين اللهم اشدد وطاتك على مضر واجعلها عليهم كسنى يوسف اللهم العن لحيان ورعلا وذكوان وعصية وعصت الله وروسوله ثم بلغنا انه ترك ذلك انزل ليس لك من الأمر شئ او يتوب عليهم او يعذبهم فانهم ظالمون.
অর্থঃ- হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবু তাহির রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত হারমালা ইবনে ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁরা উভয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আমরা ওহাবের সন্তান। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইউনুস ইবনে ইয়াযীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত সালামা ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁরা উভয়ে হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছ থেকে শুনেছেন। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে ক্বিরায়াত শেষ করার পর তাকবীর বলে রুকূকরতেন। অতঃপর سمع الله لمن حمده وربنالك الحمد বলে যখন মাথা মুবারক উঠাতেন তখন দাঁড়িয়ে বলতেন, আয় আল্লাহ পাক! ওলীদ বিন ওলীদকে, সালামা বিন হিশামকে, আইয়্যাশ ইবনে আবি রবিয়াকে এবং মুমিনদের মধ্যে যারা দুর্বল রয়েছেন তাঁদেরকে নাযাত দান করুন। আয় আল্লাহ্ পাক! আপনার শাস্তিকে কঠোর করুন মুদার গোত্রের প্রতি এবং তাদের উপর দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন, হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম এর সময়ের দুর্ভিক্ষের ন্যায়। অতঃপর রসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, আয় আল্লাহ পাক! লানত বর্ষন করুন লিহইয়ান, রিল, যাকওয়ান ও আছিয়্যাহ গোত্রের প্রতি যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবাধ্যচারিতা করে। অতঃপর যখন আল্লাহ পাক ليس لك من الأمرشئ এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন, তখন আমরা চুড়ান্ত ভাবে সংবাদ পেলাম যে, ঐ বদ্দোয়া অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা তিনি পরিত্যাগ করেছেন। উপরোক্ত হাদীছ শরীফ খানার দ্বারাই প্রমাণিত হল যে, কূনুতে নাযেলা ছিল, পরে ليس لك من الأمر شئ এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর তিনি (تركه) এটা পরিত্যাগ করেন। ফলে কূনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যায়।
বুখারী শরীফ”-এর ১ম খণ্ডের ১১০ পৃষ্ঠায় ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[১২৫৫-১২৭৭]
قد صح حديث ابى مالك سعيد بن طارق الاشجعى عن ابيه صليت خلف النبى صلى الله عليه وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يا بنى انها بدعة رواه النسائى وابن ماجة والترمذى وقال حديث حسن صحيح لفظ ابن ماجة عن ابن مالك قال قلت لابى امك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى رضى الله عنهم بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون فى الفجر قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- হযরত আবূ মালিক সাঈদ ইবনে তারিক্ব আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা ছহীহ তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে ফজর নামায পড়েছি কিন্তু তিনি কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজর নামায পড়েছি, তিনি কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজরের নামায পড়েছি, তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজরের নামায পড়েছি; তিনি কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনেও ফজরের নামায পড়েছি; কিন্তু তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি। অতঃপর হযরত মালিক আল আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে তাঁর পিতা লক্ষ্য করে বললেন, হে বৎস! (কুনূতে নাযেলা মানসূখ হওয়ার পর এখন) এটা পাঠ করা বিদয়াত। এটা নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ এবং তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে।  হযরত ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই হাদীছ শরীফখানা হাসান ছহীহ। আর ইবনে মাজাহ-এর ভাষায় হযরত ইবনে মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, হে আমার পিতা! আপনি তো নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করেছেন, অনুরূপভাবে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে কুফায় পাঁচ বৎসর নামায আদায় করেছেন তাঁরা কি ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন? জবাবে তাঁর পিতা বললেন, হে বৎস! নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা এখন পাঠ করা (محدث) মুহদাছ তথা নব আবিস্কৃত হবে অর্থাৎ বিদয়াত হবে।” (বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ১১০ পৃষ্ঠা ২নং হাশিয়া, নাসায়ী শরীফ ১ম খণ্ড ১৬৪ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ ১ম খণ্ড ৮৯ পৃষ্ঠা,  আবূ দাউদ শরীফ ১ম খণ্ড ২১১ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম খণ্ড ১১৪ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী ২য় খণ্ড ৫৩ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১ম খণ্ড ৪৩২ পৃষ্ঠা, শরহুয্ যুরকানী ১ম খণ্ড, নাইলুল আওতার ২য় খণ্ড ৩৫৬  পৃষ্ঠা, আল ফতহুল রব্বানী ১ম খণ্ড ৩০৯ পৃষ্ঠা, শরহুস্ সুন্নাহ ২য় খণ্ড ২৪৩ পৃষ্ঠা, আল আইনী ২য় খণ্ড ৫৯৬ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় ১৮২ পৃষ্ঠা, তানযীমুল আশতাত ২য় খণ্ড মিরয়াতুল মানাজীহ ২য় খণ্ড ২৮৫ পৃষ্ঠা, আশরাফুত তাওযীহ ১৪৪  পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ২য় খণ্ড ৩৩৩ পৃষ্ঠা, মায়ারিফুস্ সুনান ৪র্থ খণ্ড ২৩ পৃষ্ঠা, শরহে মায়ানিল আছার ১ম খণ্ড ১৭৭ পৃষ্ঠা, ইলাউস্ সুনান ৬ষ্ঠ খণ্ড ৮৩ পৃষ্ঠা, আল হিদায়া ১ম খণ্ড ১৮৪ পৃষ্ঠা, দিরায়া এর হাশিয়া ১৪৭ নং মুতায়াল্লাক) শরহে মায়ানিল আছারকিতাবের ১ম খণ্ড ১৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১২৭৮-১২৭৯]
عن ابى حمزة ان ابراهيم عن علقمة عن عبد الله قال لم يقنت النبى صلى الله عليه وسلم الا شهرا لم يقنت قبله ولا بعده.
وحدثنا ابن ابى داؤد قال ثنا المقدمى قال ثنا ابو معشر قال ابو حمزة عن ابراهيم عن علقمة عن ابن مسعود رضى الله عنه قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما ظهر عليهم ترك القنوت وكان ابن مسعود رضى الله عنه لا يقنت فى صلاة الغداة قال ابو جعفر فهذا ابن مسعود يخبر ان قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم الذى كان انما كان من اجل من كان يدعو عليه وانه قد كان ترك ذلك فصار القنوت منسوخا فلم يقنت وكان احد من روى ذلك ايضا عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قد اخبرهم ان الله عز وجل نسخ ذلك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس لك من الامر شئ او يتوب عليهم او يعدبهم فانهم ظالمون فصار ذلك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا ايضا فلم يكن هو يقنت بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان ينكر على من كان يقنت.
অর্থঃ- হযরত আবূ হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহুঞ্জআলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ব্যতীত কুনূতে নাযেলা (ফজর নামাযে) পাঠ করেননি। এর পূর্বে এবং পরে আর কখনও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।  হযরত ইমাম আবূ জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মকদামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে আবূ মাশার রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে আবূ হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলকামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছিয়্যা এবং যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ দোয়ায় একমাস ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তাদের উদ্দেশ্যে যখন ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়, তখন নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করা ছেড়ে দেন। অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দেন। আর এ কারণেই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। হযরত আবূ জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে অন্যান্য ছাহাবীগণকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, কুনূতে নাযেলা আছিয়্যাহ্ ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ দোয়ায় নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু সময় পর্যন্ত পাঠ করতেন। অতঃপর অতিশীঘ্রই তা পরিত্যাগ করেন ফলে কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যায়। আর এ কারণেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের পর আর কখনও তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর যে সমস্ত রাবী হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা একজন অন্যতম রাবী ছিলেন। অতঃপর তিনি অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকেও এই সংবাদ দিয়েছেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কুনূতে নাযেলা মানসূখ করে দিয়েছেন। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর যখনليس لك من الأمرشئ এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়। আর তখনই আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা-এর নিকট কুনূতে নাযেলা মানসূখ হওয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে যায়। আর এ কারণেই রসূল পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের পর আর তিনি কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং যারা কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন তাঁদেরকে নিষেধ করতেন।” (ইলাউস্ সুনান ৬ষ্ঠ খণ্ড ৮৪, ৮৫ পৃষ্ঠা) শরহে মায়ানিল আছার১ম খণ্ডের ১৭৬ পৃষ্ঠায় আছে,
[১২৮০]
ان الله عز وجل نسخ ذلك بقوله ليس لك من الأمر شئ الى .... الخ. ففى ذلك اضا وجوب ترك القنوت فى الفجر .... ان رسول الله صلى الله عليه وسلم ترك ذلك حين انزلت عليه الاية التى ذكرنا.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।এ আয়াত শরীফ দ্বারা কুনূতে নাযেলাকে মানসূখ করে দিয়েছেন। আর এই কারণেই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব (ফরয)। ... রাবী তথা ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমরা যে আয়াত শরীফখানা উল্লেখ করেছি সেই আয়াত শরীফখানা যখন অবতীর্ণ হয় তখনই স্বয়ং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন।” ‘ইলাউস সুনান’-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৮৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়,
[১২৮১]
وعن ابن عمر رضى الله عنه ..... انه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رفع راسه من الركعة الاخرة من افجر يقول اللهم العن فلانا وفلانا وفلانا بعد ما يقول سمع الله لمن حمده وربنا لك الحمد فانزل الله ليس لك من الأمر شئ الى قوله فانهم ظالمون فان ذلك كان ثم نسخ.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই তিনি রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকূর পরে এই বলতে শুনেছেন যে,
سمع الله لمن حمده ربنا لك الحمد.
(সামী আল্লাহু ....... রব্বানা লাকাল হামদ) বলে মাথা উঠাতেন তখন বলতেন, আয় আল্লাহ পাক! অমুক, অমুক এবং অমুককে লানত বর্ষণ করুন। অতঃপর আল্লাহ পাক ليس لك من الأمر شئ এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফ অবর্তীন করে ঐ কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ করে দেন। আল আইনীকিতাবের ২য় খণ্ডের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আছে, [১২৮২]
ولابى حنيفة ومحد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ ..... ولامتابعة فيه اى فى المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থঃ- ইমাম আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে, নিশ্চয়ই ফজরের নামাযের কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে। আর মানসুখ বা রহিত বিষয়ের উপর কোন ইত্তিবা বা অনুসরণ করা জায়িয নেই। কেননা মানসুখ বা রহিত বিষয়ের উপর ইত্তিবা বা অনুসরণ করা হারাম।” “শরহুন নিকায়া১ম খণ্ডের ২২৭ পৃষ্ঠায় এবং নূরুল হিদায়াকিতাবের ৬৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১২৮৩-১২৮৪]
ولهما (ابو حنيفة ومحمد) انه منسوخ ولامتابعة فيه.
অর্থঃ- ইমাম আযম, হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে, নিশ্চয়ই ফজরের নামাযের কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে। আর মানসুখ বিষয়ের প্রতি কোন প্রকারের ইত্তিবা করা বৈধ নয় তথা অনুসরণ নাজায়িয ও হারাম।” “আল ফিক্বহুল ইসলামী  কিতাবের ৮১২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১২৮৫]
عند ابى حنيفة ومحمد رحمهما الله وهو الاظهر لانه منسوخ ولا متابعة فيه.
অর্থঃ- ইমাম আযাম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হচ্ছে অবশ্যই ফজর নামাযের কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে। আর মানসুখ বা রহিত বর্ণনার উপর ইত্তিবা তথা অনুসরণ করা জায়িয নেই। উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, বিতরের ন্যায় কিংবা অন্য কোন প্রকারের কুনূতফজর নামাযে কখনই ছিলোনা। কাজেই ফজরে বিতরের ন্যায় কুনূত’ ‘মানসূখহয়েছে। একথা বলা জিহালত ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়।  মূলত: ফজরে যে কুনূত ছিল তা হচ্ছে কুনূতে নাযেলা।আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস তা পাঠ করেছিলেন। অতঃপর কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও অসংখ্য হাদীছ শরীফের মাধ্যমে তা মানসূখ হয়ে যায়। তাই হানাফী মাযহাব মতে, বর্তমানে যুদ্ধ-বিগ্রহ অবস্থায় হোক কিংবা অন্যকোন অবস্থায় হোকনা কেন। কোন অবস্থাতেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।
যেমন এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের বিশ্ববিখ্যাত ফক্বীহ তাঁর বিশ্বখ্যাত কিতাব শরহে মায়ানিল আছার তথা তাহাবী শরীফের ১ম খন্ডের ১৮০ পৃষ্ঠা এবং ইলাউস সুনান এর ৬ষ্ঠ ঘন্ড, ৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। এ প্রসঙ্গে ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শরহে মায়ানিল আছার নামক কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠার শেষে সঠিক ফয়সালা দিয়েছেন। তথায় উল্লেখ আছে,
[১২৮৬]
فثبت بما ذكرنا انه لا ينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره قياسا ونظرا على ما ذكرنا من ذلك وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.
অর্থঃ কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে পূর্বে যে সব আলোচনা আমরা করেছি, তা সব যুক্তিভিত্তিক এবং দলীলভিক্তিক ফয়সালাই আমরা আলোচনা করেছি। অতএব, পরিশেষে উক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, ফজর নামাযে যুদ্ধাবস্থায় এবং যুদ্ধবিহীন অবস্থায় তথা অন্যান্য সময়েও কুনূতে নাযেলা পড়া জায়িয নেই। আর এটাই ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চুড়ান্ত অভিমত বা ফতওয়া। শুধু তাই নয়, সরাসরী কুনূতে লান বা বদদোয়ার কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার কথাও বহু  নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে উল্লেখ রয়েছে। যেমন- এ প্রসঙ্গে শরহুল মুহাজ্জাব৩য় খন্ডের ৫০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১২৮৭-১২৮৯]
صريح فى نسخ قنوت النازلة.
অর্থঃ- এটা সুস্পষ্ট দলীল যে, কুনূতে নাযেলা মানসুখ।” (আসারুস সুনান, শরহে মায়ানিল আছার ইত্যাদি)
এ প্রসঙ্গে আওজাযুল মাসালিক”- এর ২য় খন্ড ৩০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১২৯০]
هذا صريح فى نسخ قنوت اللعن ولذا قال ملك ليس عليه العمل-
অর্থঃ- এটা স্পষ্ট কথা যে, বদ্দোয়ার যে কুনূত অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়েছে। আর এই মানসূখ হওয়ার কারণেই হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এর উপর আমল করাই যাবেনা তথা জায়িয নেই।যেমন- নাসাঈ শরীফ ১ জিঃ, ১৬৪ পৃষ্ঠায় فانزل الله ليس لك من الأمر شئ. এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়,
[১২৯০]
قوله (فانزل الله تعالى ليس لك من الأمر شئ) هذا يدل على انه نسخ لعن الكافرين فى الصلاوة.
অর্থঃ আল্লাহ পাক ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।এই আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ করেন আর এর দ্বারাই এটাই দালালত করে নামাযের মধ্যে কাফিরদের প্রতি বদদোয়ায় যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা হয়েছিল তা মানসুখ করা হয়েছে।হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শরহুল মুহাজ্জাব”-এর ৩য় খণ্ড, ৫০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,
[১২৯২-১২৯৪]
ثم ان كلام الطحاوى فى شرح الاثار صريح فى نسخ قنوت النازلة.
অর্থঃ- অতঃপর অবশ্যই হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বক্তব্য শরহে আছার’-এর মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, কুনূতে নাযেলা মানসুখ। (মায়ারিফুস সুনান ৪র্থ খন্ড) এ সম্পর্কে মিরয়াতুল মানাজীহ”-এর ২য় খণ্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১২৯৫]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- ফজর নামাযে যে কুনূতে নাযেলা ছিল তা শুধু মাত্র এক মাস ছিল। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যায়। আর এই হাদীছ শরীফ খানাই ইমামে আযম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দলীল।” “আল হিদায়াকিতাবের ১৪৫ পৃষ্ঠায় لامتابعة এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, [১২৯৬-১২৯৭]
والقنوت فى الوتر مشروع عندنا فيتابعه بخلاف الفجر فان القنوت فيه كان لنازلة فى زمن النبى صلى الله عليه وسلم وليس بمشروع فيه فبهذا البيان تبين الفرق بين المسئلتين.
অর্থঃ- বিত্র নামাযে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করা আমাদের হানাফীদের নিকট শরীয়ত সম্মত ও গ্রহণযোগ্য। তাই বিত্র নামাযে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব। কিন্তু এমতটি ফজরের নামাযের কুনূত পাঠের ব্যতিক্রম অর্থাৎ, ফজর নামাযের কুনূত পাঠে (শাফিয়ী ইমামকে) ইত্তেবা করা যাবে না। কেননা অবশ্যই ফজরের নামাযের কুনূতই হচ্ছে কুনূতে নাযেলা। যা হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় (কেবলমাত্র এক মাস) ছিল পরে তা মানসুখ হয়েছে। ফলে ফজর নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা শরীয়ত সম্মত নয়। হযরত শাইখুল ইসলাম আব্দুল হাই রহমতুল্লাহি আলাইহি বিত্র নামাযের দোয়ায়ে কুনূত এবং কুনূতে নাযেলার উভয় মাসয়ালাকে পৃথক করার জন্যই এভাবে বর্ণনা করেছেন। (দিরায়া) আল ফাতহুল কাদীরকিতাবে উল্লেখ করেন,
[১২৯৮]
ان قنوت النازلة نسخ.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে।” “মারিফুস্ সুনান৪র্থ খণ্ডের ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১২৯৯]
صريح فى نسخ قنوت النازلة.
অর্থঃ- এটা সুস্পষ্ট দলীল যে, কুনূতে নাযেলা-এর  বিধানটি মানসূখ হয়েছে। মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরয়াতুল মানাজীহ২য় খণ্ড, ২৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৩০০]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- প্রকৃতপক্ষে চার ওয়াক্ত নামাযে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার ব্যাপারে সকল ইমামগণ একমত পোষণ করছেন। কিন্তু ফজর নামাযের কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে মতভেদ আছে। তবে আমাদের হানাফী মাযহাবের চুড়ান্ত মতে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ হয়ে গেছে।” “আইনুল হিদায়াকিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১৩০১]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “(আমাদের হানাফী মাযহাব মতে) বিত্র নামাযের দোয়ায়ে কুনূত ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কোন প্রকারের কুনূত পড়া যাবেনা। তবে ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ মতের খিলাফ মত পোষণ করে বলেন যে, ফজরের নামাযে কুনূত পড়া যাবে। তবে আমাদের হানাফী মাযহাবের মতে ফজর নামাযে যে কুনূতের কথা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে কুনূতে নাযেলা। যা মানসুখ হয়ে গেছে। কেননা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র এক মাস ফজরের নামাযে কূনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে এবং পরে আর কখনও তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। হযরত ইমাম বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রত্যেকেই হযরত শুরাইকুল ক্বাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে এ হাদীছ শরীফ খানা বর্ননা করেন। তিনি হযরত আবু হামযা মাইমুন আল ক্বাছ্ছাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইবরাহীম নখ্য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীছ শরীফ খানা বর্ণনা করেন। অতএব, পয়গাম গোষ্ঠী যে বলেছে, “ফজরে দুপ্রকার কুনূত ছিল দায়েমী কুনূত ও কুনূতে নাযেলাদায়েমী কুনূত মানসুখ হয়ে গেছে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়নিপয়গাম গোষ্ঠীর এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, জিহালতপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন বলে প্রমাণিত হলো।  অর্থাৎ সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ফজরে কখনোই দুপ্রকার কুনূত ছিল না বরং কুনূতে নাযেলাযাকে কুনূতে লান বা কুনূতে ফজরওবলা হয় শুধু মাত্র এ এক প্রকার কুনূতই ছিল। যা রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র এক মাস ফজর নামাযে পাঠ করেছিলেন। পরবর্তীতে তা মানসুখ হয়ে যায়। যে কারণে হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কোন প্রকার কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।  এটাই কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত সবচেয়ে সঠিক, গ্রহনযোগ্য ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা। (অসমাপ্ত)

 পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন


0 Comments: