পিডিএফ-
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-৮)
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে
ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের
অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে
এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ ‘মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায
ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার
মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র
কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদার’
৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ- “তোমরা
তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।”
মূলতঃ এই ইহুদীরাই
মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে দ্বীন
ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী
ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট
হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা
হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের
এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কেও
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের
প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা
অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন
পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার
করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’
অথচ ‘কুনূতে
নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের
মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন
ইনশাআল্লাহ।
তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার
কারণে সাধারণ লোক মনে করবে ‘হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’ অথচ
শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান
বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার
মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে
ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে।
অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন
ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায
তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূ’র সাথে
নামায আদায় না করা,
হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি
কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর
কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত
জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার
ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির
সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়।
আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি নামায তরক করলো,
এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে
ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা
হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের
সমান।” (মাজালিসুল আবরার,
আল্ মানাসিক)
হাদীছ শরীফের বর্ণনা
মোতাবেক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০
দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।)
অতএব, এক
হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য,
ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায
ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে
আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ
করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে
দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা
রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে
কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই
হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা
ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি
ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায়
না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
মূলকথা, যারাই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার
মাধ্যমে লা’নত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া
দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট,
ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা
সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রই সর্বদা
করে যাচ্ছে।
কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে
যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল
ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে
তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী
বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে
উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হানাফী মাযহাব মতে ফজর
নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা মানসূখ, বিদ্য়াত ও নাজায়িয হওয়ার অকাট্য
প্রমাণ
পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা
প্রমাণিত হয়েছে যে,
সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমকে নির্মমভাবে শহীদ করার কারণে শহীদকারী রি’ল, য্কাওয়ান, আছিয়্যাহ
ও লিহ্ইয়ান গোত্রগুলোর প্রতি ‘বদ্দোয়া’ করার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করার পর তা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।
যেমন, এ
প্রসঙ্গে ‘তানযীমুল আশতাত’
কিতাবের ১ম খ- ২৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৪৪২-৪৪৭]
وعن الطحاوى عن ابن مسعود قال قنت النبى صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما ظهر عليهم ترك القنوت فقال الطحاوى فهذا ابن مسعود يخبر ان قنوت النبى صلى الله عليه وسلم انما كان من اجل من كان يدعو عليه وانه قد كان ترك ذلك فصار القنوت منسوخا-
يهر طحاوى نى كها كه امن قنوت كى رامن جو ابن عمر هى انهو نى كها كه الله نى اسى قنوت كو منسوح كرديا حين انزل الله تعالى ليس لك من الأمر شئ او يتوب عليهم او يعذبهم فانهم ظالمون هذا كله فى العينى والبذل والتعليق والبدائع والترمذى.
অর্থঃ- “ইমাম
ত্বাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু
থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত নবী
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছিয়্যাহ্ এবং যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি
বদদোয়ায় কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা ফজর নামাযে পাঠ করেন। অতঃপর যখন তাদের উদ্দেশ্যে
আল্লাহ পাক আয়াত শরীফ ليس لك من الأمر شئ الخ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” নাযিল করে তাদের প্রতি বদদোয়াকে নিষেধ করেন তখন রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করেন।
অতঃপর হযরত ইমাম ত্বাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
এই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই
(আছিয়্যাহ্ ও যাকওয়ান) তাদের প্রতি বদদোয়ায় কিছু সময় পর্যন্ত (একমাস) রসূলে পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন, অতঃপর
অতি শীঘ্রই তা পরিত্যাগ করেছিলেন, সেই কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের সংবাদ অন্যান্য ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দিয়েছেন। আর এই পরিত্যাগের ফলে কুনূতে
নাযেলা মানসূখ হয়ে যায়।
অতঃপর হযরত ইমাম ত্বাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, হযরত আব্দূল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা
তিনিও কুনূতে নাযেলা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহ
তায়ালাই কুনূতে নাযেলাকে মানসূখ করে দিয়েছেন। আর সেটা ঐ সময় যখন আল্লাহ পাক ليس لك من الأمر شئ الخ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” আয়াত শরীফ নাযিল করেন। আর এরূপ বর্ণনা আল আইনী, বযলুল মাজহুদ, তালীকুছ
ছবীহ, বাদায়ে ও তিরমিযী কিতাবেও রয়েছে।
‘মুসলিম শরীফ’ ১ম খ-ের
২৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৪৪৮-৪৪৯]
ذهب بو حيفة واحمد واخرون انه لا قنوت فى الصبح.
অর্থঃ- “ইমাম আ’যম হযরত
আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হানাফী মাযহাবের অন্যান্য
ইমামগণের মতে ফজর নামাযে কোন প্রকার কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা নাই। অর্থাৎ কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা যাবে না।”
(বুখারী ১ম খ- ১১০ পৃষ্ঠা)
“তুহফাতুল আহওয়াযী” কিতাবের
২য় খ-ের ৪৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৪৫০-৪৫৮]
اخرج الدار قطنى وعبد الرزاق وابو نعيم واحمد والبيهقى والحاكم وصحه عن انس ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا يدعو على قاتلى اصحابه ببئر معونة ثم ترك.
অর্থঃ- “আদ্দারু
কুতনী, আব্দুর রায্যাক,
আবূ নাঈম, আহমদ, বাইহাক্বী, হাক্বীম এবং বিশুদ্ধ কিতাবে ছহীহ ভাবে হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বীরে মাউনা নামক স্থানে তাঁর ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদের যারা শহীদ করেছিল সেসব শহীদকারীদের প্রতি
বদদোয়ায় কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন। (নাইলুল
আওতার ২য় খ- ৩৫৮ পৃষ্ঠা,
ফতহুর রব্বানী ১ম খ- ২৯৮
পৃষ্ঠা)
অতএব, প্রমানিত
হল যে, ترك শব্দের দ্বারাই কুনূতে নাযেলা منسوخ তথা রহিত হয়ে গেছে। আর ناسخ والمنسوخ কিতাবে আছে, والمنسوخ لايعمل به.
অর্থঃ- “যা
মানসুখ তা আমলযোগ্য নয়। অর্থাৎ মানসূখের উপর আমল করা জায়িয নেই।”
“মুসলিম শরীফে” আরো
উল্লেখ আছে যেমন,
[৪৫৯-৪৭৮]
حدثنى ابو طاهر وحرملة بن يحيى قالا انا ابن وهب قال الخبرنى يونس بن يزيد عن ابن شهاب قال اخبرنى سعيد بن المسيب والبو سلمة بن عبد الرحمان بن عوف انها سمعا ابا هريرة يقول كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول حين يفرغ من صلوة الفجر من القراءة ويكبر ويرفع راسه سمع الله لمن حمده وربنا لك الحمد ثم يقول وهو قائم اللهم انخ الوليد بن الوليد وسلمة بن هشام وعياش بن ابى ربيعة والمستضعفين من المؤمنين.
اللهم اشدد وطاتك على مضر واجعلها عليهم كسنى يوسف اللهم العن لحيان ورعلا وذكوان وعصية وعصت الله ورسوله ثم بلغنا انه ترك ذلك انزل ليس لك من الأمر شئ او يتوب عليهم او يعذبهم فانهم ظالمون.
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার
কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবু তাহির রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত
হারমালা ইবনে ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁরা উভয়ে বলেন, নিশ্চয়ই
আমরা ওহাবের সন্তান। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইউনুস ইবনে ইয়াজিদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং
হযরত সালামা ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁরা উভয়ে হযরত আবূ
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছ থেকে শুনেছেন। তিনিঞ্জবলেন, রসূলে
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে ক্বিরায়াত শেষ করার পর তাকবীর বলে
রুকূ’ করতেন। অতঃপর
سمع الله لمن حمده و ربنالك الحمد.
বলে যখন মাথা মুবারক
উঠাতেন তখন দাঁড়িয়ে বলতেন,
আয় আল্লাহ পাক! ওলীদ বিন ওলীদকে, সালামা
বিন হিশামকে, আইয়্যাশ ইবনে আবি রবিয়াকে এবং মু’মিনদের মধ্যে যারা দুর্বল রয়েছেন
তাঁদেরকে নাযাত দান করুন।
আয় আল্লাহ্ পাক! আপনার
শাস্তিকে কঠোর করুন মুদার গোত্রের প্রতি এবং তাদের উপর দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন, হযরত
ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়ের দুর্ভিক্ষের ন্যায়।
অতঃপর রসূলে পাক
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, আয় আল্লাহ পাক! লা’নত বর্ষন
করুন লিহইয়ান, রিল, যাকওয়ান ও আছিয়্যাহ গোত্রের প্রতি যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবাধ্যচারিতা করে। অতঃপর যখন আল্লাহ পাক
ليس لك من الأمر شئ الخ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন, তখন আমরা চুড়ান্ত ভাবে সংবাদ পেলাম যে, ঐ
বদ্দোয়া অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা তিনি পরিত্যাগ করেছেন।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ খানার
দ্বারাই প্রমাণিত হল যে,
কূনুতে নাযেলা ছিল, পরে
ليس لك من الأمر شئ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর তিনি (تركه) এটা পরিত্যাগ করেন। ফলে কূনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যায়।
অতএব, এই আয়াত
শরীফখানাই হচ্ছে,
কুনূতে নাযেলা এর ناسخ. (নাসেখ) বা শারেহ বা হুকুম রহিতকারী। (মুসলিম শরীফ ১ম খ- ২৩
পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ ১ম খ- ১১০ পৃষ্ঠা ১নং হাশিয়া, বুখারী শরীফ ২য় খ- ৬৫৫ পৃষ্ঠা, নাসায়ী
শরীফ ১ম খ- ১৬৪ পৃষ্ঠা,
আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ ১১৩ পৃষ্ঠা, নাইলুল
আওতার ২য় খ- ৩৬০ পৃষ্ঠা,
আল ফাতহুর রব্বানী ১ম খ- ২৯৯ এবং ৩০৯ পৃষ্ঠা শরহুস সুন্নাহ
২য় খ-ের ২৪২, ২৪৩ পৃষ্ঠা, আল আইনী (শারহুল হিদায়া) ৩য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা এবং ৫৯৭ পৃষ্ঠা ৫৯৫ পৃষ্ঠা, মিরকাত
শরীফ ৩য় খ- ১৭৮/১৭৯ পৃষ্ঠা,
ফতহুল বারী ২য় খ-, উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ খ- ৭৩ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্
সারী ২য় খ- ৩৬৩ পৃষ্ঠা,
(শরহে নববী) তানযীমুল আশতাত ২য় খ- ২৩ পৃষ্ঠা, আশরাফুত
তাওযীহ ১৪৬ পৃষ্ঠা,
মিরায়াতুল মানাজীহ ২য় খ- ২৮৩ পৃষ্ঠা, শরহে
মায়ানিল আছার ১ম খ- ১৭৫ পৃষ্ঠা, ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ ৮৪/৮৫ পৃষ্ঠা, আল
হিদায়া কিতাবের ১ম খ- ১৪৭ পৃষ্ঠা হাশিয়ায়ে
দিরায়া।
“নাসায়ী শরীফ”-এর ১ম
খ-ের ১৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৪৭৯]
اخبرنا اسحاق بن ابراهيم اخبرنا عبد الرزاق حدثنا معمر عن الزهرى عن سالم عن ابيه انه سمع النبى صلى الله عليه وسلم حين رفع راسه من صلوة الصبح من الركعة الاخرة قال اللهم العن فلانا و فلانا يدعو على اناس من المنافقين فانزل الله عزوجل ليس لك من الأمر شئ اويتوب عليهم اويعدبهم فانهم ظالمون ترك القنوت.
اخبرنا اسحق بن ابراهيم اخبرنا معاط بن هشام قال حدثنى ابى عن قتادة عن انس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت شهرا يدعو على حى من احياء العرب ثم تركه.
اخبرنا قتيبة عن خلف هو ابن خليفة عن ابى مالك الاشجعى عن ابيه قال صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يابنى انها بدعة.
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা
করেছেন হযরত ইসহাক ইবনে ইব্রাহীম রহমতুল্লহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের
কাছে বর্ণনা করেছেন আব্দুর রয্যাক রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের
কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মু’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি
হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি থেকে, তিনি হযরত সালিম রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে, তিনি তার পিতা থেকে। তাঁর পিতা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকয়াতে রুকূ’ থেকে মাথা মুবারক উঠানোর সময় এ
কথা বলতে শুনেছেন যে,
আয় আল্লাহ পাক! অমুক অমুকের প্রতি লা’নত বর্ষন
করুন। এবং তিনি মুনাফিকদের প্রতি বদদোয়া করতেন। অতঃপর আল্লাহ পাক
ليس لك من الأمر شئ او يتوب عليهم الى الخ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” আয়াত শরীফ নাযিল করেন। অতঃপর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনুতে
নাযলা পরিত্যাগ করেন।
হযরত ইমাম নাসায়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
আমাদের কাছে সংবাদ দিয়েছেন হযরত ইসহাক ইবনে ইব্রাহীম
রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সংবাদ দিয়েছেন হযরত মুয়ায ইবনে হিশাম
রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা হযরত
ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে। তিনি বলেন,
নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মাস
(ফজর নামাযে) আরব গোত্রদের মধ্য থেকে কোন একগোত্রের প্রতি বদ্দোয়ায় কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেন। অতঃপর তিনি তা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। (ফলে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে
যায়, আর মানসূখের উপর আমল করা বিদয়াত (সাইয়্যিয়াহ) যা পরবর্তী হাদীছ শরীফে উল্লেখ
করা হচ্ছে)
অতঃপর হযরত ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত কুতাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি
হযরত খল্ফ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে যিনি হচ্ছেন হযরত ইবনে খলীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি, তিনি হযরত আবু মালিক আল আশজায়ী রহমতুল্লহি আলাইহি থেকে তিনি তাঁর পিতা সাঈদ
বিন তারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে নামায পড়েছি; কিন্তু
তিনি ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়েননি এবং হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর
পিছনে নামায পড়েছি,
তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি।
অতঃপর হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর পিছনে নামায পড়েছি, তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি। এবং
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায পড়েছি, তিনিও
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর
পিছনেও নামায পড়েছি;
কিন্তু তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
অতঃপর সাঈদ বিন তারিক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে
বৎস্য! (এখন) এটা পাঠ করা বিদয়াত।”
“নাসায়ী শরীফ”-এর ১ম
খ-ের ১৬৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে,
[৪৮০]
فانزل الله ليس لك من الأمر شئ الخ.
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায়
বলা হয়,
قوله (فانزل الله تعالى ليس لك من الأمر شئ) هذا يدل على انه نسخ لعن الكافرين فى الصلوة.
অর্থঃ “আল্লাহ
পাক ليس لك من الأمر شئ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” এই আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ করেন আর এর দ্বারাই এটাই দালালত করে নামাযের মধ্যে
কাফিরদের প্রতি বদদোয়ায় যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা হয়েছিল তা মানসুখ করা হয়েছে। এবং
উক্ত পৃষ্ঠায় হযরত মালিক আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাদীছ শরীফের فلم يقنت এর ব্যাখ্যায় বলা হয়,
[৪৮১]
قوله فلم يقنت هذا يدل على ان القنوت فى الصبح كان اياما ثم نسخ.
অর্থঃ- فلم يقنت এর দ্বারাই এটাই দালালত করতেছে যে, ফজর নামাযে কিছুদিন অর্থাৎ একমাস
কুনূতে নাযেলা ছিল,
অতঃপর তা মানসুখ হয়ে যায়। (অর্থাৎ সাঈদ বিন তারিক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন যে, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে এবং হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আলী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায আদায় করেছি (فلم يقنت) কিন্তু তারা কেহই কুনূতে নাযেলা পড়েননি।) কেননা কুনূতে নাযেলা
মানসুখ তথা রহিত হয়ে গেছে। (আর এ কারণেই মানসূখের আমল করাকে بدعة বলা হয়েছে।)
“বুখারী শরীফ”-এর ১ম
খ-ের ১১০ পৃষ্ঠায় ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[৪৮২-৫০৩]
قد صح حديث ابى مالك سعيد بن طارق الاشجعى عن ابيه صليت خلف النبى صلى الله عليه وسلم فلم يقنت وصليت خلف النبى صلى الله عليه وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يا بنى انها بدعة رواه النسائى وابن ماجة والترمذى وقال حديث حسن صحيح لفظ ابن ماجة عن ابن مالك قال قلت لابى انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى رضى الله عنهم بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون فى الفجر قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- “আবূ
মালিক সাঈদ ইবনে তারিক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা
ছহীহ তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে ফজর নামায পড়েছি কিন্তু তিনি কুনূতে নাযেলা পড়েননি।
হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজর নামায পড়েছি, তিনি
কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে
ফজরের নামায পড়েছি,
তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজরের নামায পড়েছি; তিনি কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত
আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনেও ফজরের নামায পড়েছি; কিন্তু
তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি।
অতঃপর হযরত মালিক আল
আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে তাঁর পিতা লক্ষ্য করে বললেন, হে বৎস!
(কুনূতে নাযেলা মানসূখ হওয়ার পর এখন) এটা পাঠ করা বিদয়াত। এটা নাসায়ী শরীফ, ইবনে
মাজাহ শরীফ এবং তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে।
হযরত ইমাম নাসায়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
এই হাদীছ শরীফখানা হাসান ছহীহ। আর ইবনে মাজাহ-এর ভাষায় হযরত
ইবনে মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আমার
পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
হে আমার পিতা! আপনি তো নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করেছেন, অনুরূপভাবে হযরত আবূ বকর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত
উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে
কুফায় পাঁচ বৎসর নামায আদায় করেছেন তাঁরা কি ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেছিলেন? জবাবে তাঁর পিতা বললেন,
হে বৎস! নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা এখন পাঠ করা (محدث) মুহদাছ তথা নব আবিস্কৃত হবে অর্থাৎ বিদয়াত হবে।” (বুখারী
শরীফ ১ম খ- ১১০ পৃষ্ঠা ২নং হাশিয়া, নাসায়ী শরীফ ১ম খ- ১৬৪ পৃষ্ঠা, ইবনে
মাজাহ ১ম খ- ৮৯ পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ শরীফ ১ম খ- ২১১ পৃষ্ঠা, তিরমিযী
শরীফ ১ম খ- ১১৪ পৃষ্ঠা,
তুহফাতুল আহওয়াযী ২য় খ- ৫৩ পৃষ্ঠা, মিশকাত
শরীফ ১ম খ- ৪৩২ পৃষ্ঠা,
শরহুয্ যুরকানী ১ম খ-, নাইলুল আওতার ২য় খ- ৩৫৬ পৃষ্ঠা, আল ফতহুল রব্বানী ১ম খ- ৩০৯
পৃষ্ঠা, শরহুস্ সুন্নাহ ২য় খ- ২৪৩ পৃষ্ঠা, আল আইনী ২য় খ- ৫৯৬ পৃষ্ঠা, মিরকাত
শরীফ ৩য় ১৮২ পৃষ্ঠা,
তানযীমুল আশতাত ২য় খ- মিরয়াতুল মানাজীহ ২য় খ- ২৮৫ পৃষ্ঠা, আশরাফুত
তাওযীহ ১৪৪ পৃষ্ঠা, বযলুল
মাজহুদ ২য় খ- ৩৩৩ পৃষ্ঠা,
মায়ারিফুস্ সুনান ৪র্থ খ- ২৩ পৃষ্ঠা, শরহে
মায়ানিল আছার ১ম খ- ১৭৭ পৃষ্ঠা, ইলাউস্ সুনান ৬ষ্ঠ খ- ৮৩ পৃষ্ঠা, আল
হিদায়া ১ম খ- ১৮৪ পৃষ্ঠা,
দেরায়া এর হাশিয়া ১৪৭ নং মুতায়াল্লাক)
“মিরকাত শরীফ”-এর ৩য়
খ-ের ১৮৩ পৃষ্ঠা আরো বর্ণিত আছে,
[৫০৪]
روى عن ابن عباس انه بدعة.
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
কুনূতে নাযেলা বিদ্য়াত।”
উল্লিখিত হাদীছ শরীফের
ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো যে,
কুনূতে নাযেলা ফজর নামাযে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস পাঠ করেন। অতঃপর তিনি আল্লাহ পাক-এর নির্দেশে তা পরিত্যাগ
করেন। ফলে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই ঐ কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যায়। আর
মানসূখ হওয়ার পর এর উপর আমল করা বিদয়াত ও নাজায়িয হিসেবে প্রমাণিত হয়।
‘নাইলুল আওতার’ ২য় খ-ের
৩৫৭ পৃষ্ঠা, “ফতহুর রব্বানী’
১ম খ-ের ৩১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫০৫-৫০৬]
والبيهقى انه قال القنوت فى صلاة الصبح بدعة.
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজর নামযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
বিদয়াত (অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ)।
এখানে বিদয়াত বলতে বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াকেই বুঝানো হয়েছে। কেননা সাধারণভাবে কোন জিনিসকে বুঝালে তার পূর্ণ
জিনিসকেই বুঝায়। যেমন,
ফরয বললে ফরযে আইনকে, সুন্নত বললে সুন্নতে মুয়াক্কাদাকে, মাকরূহ
বললে মাকরূহে তাহরীমীকে,
বিদয়াত বললে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকে বুঝায়।
এ সম্পর্কে ‘ফতওয়ায়ে
শামীতে’ উল্লেখ আছে
المطلق يطلق على الفرد الكامل.
অর্থঃ- “সাধারণভাবে
কোন বস্তুকে বুঝালে তার পূর্ণাঙ্গ তথা মূল বস্তুকেই বুঝায়।”
‘আওজাযুল মাসালিক ইলা মুয়াত্তায়ে
মালিক’ কিতাবের ২য় খ-ের ৩০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫০৭]
هذا صريح فى نسخ قنوب اللعن ولذا قال ملك ليس عليه العمل.
অর্থঃ- “এটা
স্পষ্ট কথা যে, বদ্দোয়ার যে কুনূত অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়েছে। আর এই মানসূখ হওয়ার
কারণেই হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এর উপর আমল করাই যাবেনা তথা জায়িয
নেই।”
‘আল ফতর্হু রব্বানী’ কিতাবের
১ম খ-ের ৩১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “নাইনুল আওতার” ২য় খন্ড ৩৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫০৮-৫১১]
عن ابن عباس عند الدار قطنى والبيهقى ان القنوت فى صلاة الصبح بدعة.
অর্থঃ- “দারে
কুতনী’ এবং ‘বাইহাক্বী শরীফের’
মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত আছে,
নিশ্চয়ই ফজর নামাযের কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত
(সাইয়্যিয়াহ)।”
‘শরহে মায়ানিল আছার’ কিতাবের
১ম খ- ১৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫১২-৫১৩]
عن ابى حمزة ان ابراهيم عن علقمة عن عبد الله قال لم يقنت النبى صلى الله عليه وسلم الا شهرا لم يقنت قبله ولا بعده.
وحدثنا ابن ابى داؤد قال ثنا المقدمى قال ثنا ابو معشر قال ابو حمزة عن ابراهيم عن علقمة عن ابن مسعود رضى الله عنه قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما ظهر عليهم ترك القنوت وكان ابن مسعود رضى الله عنه لا يقنت فى صلاة الغداة قال ابو جعفر فهذا ابن مسعود يخبر ان قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم الذى كان انما كان من اجل من كان يدعو عليه وانه قد كان ترك ذلك فصار القنوت منسوخا فلم يقنت وكان احد من روى ذلك ايضا عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قد اخبرهم ان الله عز وجل نسخ ذلك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس لك من الأمر شئ او يتوب عليهم او يعدبهم فانهم ظالمون فصار ذلك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا ايضا فلم يكن هو يقنت بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان ينكر على من كان يقنت.
অর্থঃ- “আবূ
হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ব্যতীত কুনূতে নাযেলা (ফজর
নামাযে) পাঠ করেননি। এর পূর্বে এবং পরে আর কখনও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
হযরত ইমাম আবূ জাফর তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি। তিনি বলেন,
আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মকদামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি
বলেন, আমাদের কাছে আবূ মাশার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের
কাছে আবূ হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে
তিনি হযরত আলকামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছিয়্যা এবং যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি
বদ দোয়ায় একমাস ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তাদের উদ্দেশ্যে যখন
ليس لك من الأمر شئ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়,
তখন নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা
পাঠ করা ছেড়ে দেন। অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দেন। আর এ কারণেই আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
হযরত আবূ জাফর তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
এই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই রসূল
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে অন্যান্য
ছাহাবীগণকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, কুনূতে নাযেলা আছিয়্যাহ্ ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ
দোয়ায় নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু সময় পর্যন্ত পাঠ করতেন। অতঃপর
অতিশীঘ্রই তা পরিত্যাগ করেন ফলে কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যায়।
আর এ কারণেই হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের পর আর কখনও তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি।
আর যে সমস্ত রাবী হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, তাঁদের
মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা একজন অন্যতম রাবী ছিলেন।
অতঃপর তিনি অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকেও এই সংবাদ
দিয়েছেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কুনূতে নাযেলা মানসূখ করে দিয়েছেন। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর যখন
ليس لك من الأمر شئ الخ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়। আর তখনই আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমা-এর নিকট কুনূতে নাযেলা মানসূখ হওয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে যায়। আর এ কারণেই
রসূল পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের পর আর তিনি
কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং যারা কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন তাঁদেরকে নিষেধ
করতেন।” (ইলাউস্ সুনান ৬ষ্ঠ খ- ৮৪, ৮৫ পৃষ্ঠা)
“শরহে মায়ানিল আছার” নামক
কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫১৪]
قال ابو جعفر فهذا عبد الله بن مسعود لم يكن يقنت فى دهره كله وقد المسلمون فى قتال عدوهم فى كل ولاية عمر رضى الله تعالى عنه فى اكثرها فلم يكن يقنت لذلك وهذا ابو الدرداء ينكر القنوت وابن الزبير رضى الله تعالى عنه لايفعله وقد كان محاربا حينئذ.
অর্থঃ- “আবূ জা’ফর তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
এই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
তাঁর সারা জীবনে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এবং হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু এর পূরা খিলাফতকালে কিংবা খিলাফতের অধিকাংশ সময় পর্যন্ত মুসলমানগণ যখন তাঁদের
শত্রুদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন তখনও উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি। আর এই কারণেই হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কুনূতে
নাযেলা এর বিরোধিতা করেন। অর্থাৎ বিপক্ষে মত পোষণ করেন। আর ইবনে যুবাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও যুদ্ধাবস্থায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।”
‘আছার’ নামক
কিতাবের ১ম খ- ৩৭ পৃৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫১৫-৫১৬]
ان ابن مسعود لم يقنت هو ولا احد من اصحابه حتى فارق الدنيا يعنى فى صلاة الفجر سند صحيح.
অর্থ- “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণ কেহই জীবনে কখনো ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এর সনদ
ছহীহ।” (ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খ- ৮৯ পৃষ্ঠা)
‘শরহে মায়ানিল আছার’ ১ম খ-ের
১৭৬ পৃষ্ঠায় আছে,
[৫১৭]
ان الله عز وجل نسح ذلك بقوله ليس لك من الأمر شئ الى .. الخ. ففى ذلك ايضا وجوب ترك القنوت فى الفجر ..... ان رسول الله صلى الله عليه وسلم ترك ذلك حين انزلت عليه الاية التى ذكرنا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
আল্লাহ পাক
ليس لك من الأمن شئ الاية.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ দ্বারা কুনূতে নাযেলাকে মানসূখ করে দিয়েছেন। আর এই কারণেই ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব (ফরয)। ... রাবী তথা ইমাম তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
আমরা যে আয়াত শরীফখানা উল্লেখ করেছি সেই আয়াত শরীফখানা যখন
অবতীর্ণ হয় তখনই স্বয়ং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা
পরিত্যাগ করেন।”
[৫১৮-৫২৩]
“বুখারী শরীফ”-এর ১ম
খ-ের ১১০ পৃষ্ঠা ২নং হাশিয়ায় আছে, “হযরত সাঈদ বিন তারিক আল আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
থেকে বর্ণিত আছে,
তাঁর সন্তান তাঁকে কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে
তিনি জবাবে বলেন,
يا بنى انها بدعة.
অর্থঃ- “হে বৎস!
নিশ্চয়ই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।”
আরো উল্লেখ আছে,
يا بنى انها محدث.
অর্থঃ- “হে বৎস!
এটা নব আবিস্কৃত।”
অর্থাৎ মানসুখ হওয়ার পর এখন আমল করলে নতুন করে আবার বিদ্য়াত
উদ্ভব হবে।” (মুসলিম শরীফ,
নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, ইলাউস্
সুনান ৬ষ্ট খ- ৮৩ পৃৃষ্ঠা )
আমাদের হানাফী মাযহাব মতে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর
শরহে মায়ানিল আছার নামক কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠার শেষে সঠিক ফয়সালা দিয়েছেন,
[৫২৪]
فثبت بما ذكرنا انه لا ينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره قياسا ونظرا على ماذكرنا من ذلك وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.
অর্থঃ- “কুনূতে
নাযেলা সম্পর্কে পূর্বে যে সব আলোচনা আমরা করেছি সে সব যুক্তি ভিত্তিক এবং দলীল
ভিক্তিক ফয়সালাই করেছি। অতএব, পরিশেষে উক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, ফজর
নামাযে যুদ্ধাবস্থায় এবং যুদ্ধবিহীন অবস্থায় তথা অন্যান্য সময়েও কুনূতে নাযেলা পড়া
জায়িয নেই। আর এটাই ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম আবূ ইউসুফ
রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চুড়ান্ত অভিমত বা ফায়সালা।
‘ইলাউস সুনান’ ৬ষ্ঠ
খ-ের ৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫২৫-৫২৬]
وعن علقمة رضى الله تعالى عنه قال كان عبد الله رضى الله تعالى عنه لا يقنت فى صلاة الصبح رواه الطحاوى واسناده صحيح اثار السنن ج২ ص২০
অর্থঃ- “হযরত
আলকামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন
না। তাহাবী শরীফে বর্ণিত আছে এর সনদ ছহীহ।” (আসারুস সুনান ২য় খন্ড ২০ পৃষ্ঠা)
‘ইলাউস সুনান’ কিতাবের
৬ষ্ঠ খ-ের ৬৫/৮৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়,
[৫২৭-৫২৯]
وعن الأسود قال كان ابن مسعود لايقنت فى شئ من الصلوات الا الوتر فانه كان يقنت فيه قبل الركعة اى الركوع رواه الطحاوى والطبرانى واسناده صحيح.
অর্থঃ- “আল
আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কোন ফরয নামাযেই কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি শুধু বিত্র নামায ব্যতীত। অর্থাৎ বিত্র নামাযে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ
করেছেন। আর বিত্র নামাযে যখন দোয়ায়ে কুনূত পড়তেন তখন সেটা রুকুর পূর্বেই পড়তেন।
তাহাবী ও ত্ববারানী শরীফে ছহীহ সনদে বর্ণনা রয়েছে।
উক্ত কিতাবে আরো আছে,
[৫৩০]
وعن عقمة وعن الأسود الخ دلالتهما على ترك القنوب فى الفجر ظاهرة.
অর্থঃ- “হযরত
আলকামা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আল আসওয়াদ রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত হাদীছ শরীফের মাধ্যমে পরিস্কার হয়ে উঠেছে যে, ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা
পরিত্যাগ করতে হবে।”
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ
করা হয়,
[৫৩১]
دلالة الاثار على ترك القنوت فى الفجر وغيرها من المكتوبة وعلى ان اكثر الصحابة كانوا لايقنتون فيها لقول ابن عمر.
অর্থঃ- “ফজর
নামাযে এবং অন্যান্য ফরজ নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের ব্যাপারে ‘আসার’ নামক
কিতাবের নির্দেশণা দেয়া হয়েছে। আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমা-এর মাধ্যমে এটাই দালালত করে যে অধিকাংশ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।”
‘ইলাউস সুনান’-এর ৬ষ্ঠ
খ-ের ৮৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়,
[৫৩২]
وعن ابن عمر رضى الله عنه ....... انه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رفع راسه من الركعة الاخرة من الفجر يقول اللهم العن فلانا وفلانا وفلانا بعد ما يقول سمع الله لمن حمده وربنا لك الحمد فانزل الله ليس لك من الأمر شئ الى قوله فانهم ظالمون فان ذلك كان ثم نسخ.
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই
তিনি রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে
রুকূর পরে এই বলতে শুনেছেন যে,
سمع الله لمن حمده ربنا لك الحمد.
(সামী আল্লাহু ....... রব্বানা লাকাল হামদ) বলে মাথা উঠাতেন
তখন বলতেন, আয় আল্লাহ পাক! অমুক,
অমুক এবং অমুককে লা’নত বর্ষণ করুন। অতঃপর আল্লাহ পাক ليس لك من الأمر شئ الاية.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” আয়াত শরীফ অবর্তীন করে ঐ কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ করে দেন।
‘ইলাউস সুনান’-এর ৯৫
পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,
[৫৩৩]
ان القنوت فى الفجر منسوخ معناه نسخ اصله.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা মানসুখ। আর মানসুখের অর্থই হচ্ছে যার মূলেই মানসুখ।”
‘মায়ারিফুস সুনান’ কিতাবের
৪র্থ খ-ের ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৩৪-৫৩৬]
صريح فى نسخ قنوت النازلة.
অর্থঃ- “এটা
সুস্পষ্ট দলীল যে,
কুনূতে নাযেলা মানসুখ।” (আসারুস সুনান, শরহে
মায়ানিল আছার ইত্যাদি)
‘আল আইনী’ কিতাবের
২য় খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আছে,
[৫৩৭]
ولابى حنيفة ومحمد انه اى ان التنوت فى الفجر منسوح ..... ولامتابعة فيه اى فى المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থঃ- “ইমাম আ’যম হযরত
আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে
নিশ্চয়ই ফজরের নামাযের কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে। আর
মানসুখ বা রহিত বিষয়ের উপর কোন ইত্তিবা বা অনুসরণ করা জায়িয নেই। কেননা মানসুখ বা
রহিত বিষয়ের উপর ইত্তিবা বা অনুসরণ করা হারাম।”
‘ইলাউস সুনান’ নামক
কিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৩৮]
قال ابو جعفر فهذا عبد الله بن مسعود لم يكن يقنت فى دهره كله وقد المسلمون فى قتال عدوهم فى كل ولاية عمر رضى الله عنه اوفى اكثرها فلم يكن يقنت لذلك وهذا ابو الدرداء ينكر القنوت وابن الزبير رضى الله عنه لا يفعله وقد كان محاربا حينئذ.
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম আবু জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার সারাটি জীবনে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অথচ হযরত
উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতের বেশী সময় পর্যন্ত যখন মুসলমানগণ তাঁদের
শত্রুদের সাথে যুদ্ধাবস্থায় ছিলেন তখনও তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর এ
কারণেই হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কুনূতে নাযেলা-এর বিরোধিতা
করতেন। আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন
যুদ্ধাবস্থায় ছিলেন তখনও তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।”
“শরহে মায়ানিল আসার”, “মায়ারিফুস
সুন্নান” কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৩৯-৫৪১]
والحديث حجة لنا فى ترك القنوت فى الفجر وبصرح فيه بانه محدث صححة الترمذى واعترف الحافظ فى التلخيص.
অর্থঃ- “ফজরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ খানাই আমাদের হানাফী
মাযহাবের স্পষ্ট দলীল। আর এটাও সুস্পষ্ট যে, ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
বিদ্য়াত (সাইয়্যিয়াহ)। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঐ হাদীছ শরীফ খানাকে
সহীহ বলেছেন আর হাফিয রহমতুল্লহি আলাইহি তালখীস কিতাবে এই মতকেই প্রাধান্য
দিয়েছেন।”
“ইলাউস্ সুনান” কিতাবের
৬ষ্ঠ খ-ের ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৪২]
ان قوله لم يقنت الا شهرا واحدا لم يقنت قبله ولا بعده محمول على رعل وذكوان وعصية فلما نهى الله عزوجل عن الدعاء عليهم بقوله ليس لك من الأمر شئ انتهى وترك ذلك.
অর্থঃ- “হযরত
রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র এক মাস (ফজর নামাযে) কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেন। এর পূর্বে এবং পরে কখনো কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এই অর্থের
সম্ভাবনায় হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, “নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিল,
যাকওয়ান এবং আছিয়্যাহ গোত্রদের প্রতি বদ দোয়ায় কেবলমাত্র
একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর যখন আল্লাহ পাক ليس لك من الأمر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।” আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করে তাদের
প্রতি বদদোয়া করতে নিষেধ করেন তখন হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন।”
‘ইলাইস সুনান’ নামক
কিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৪৩]
فثبت بما ذكرنا انه لا ينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره قياسا ونظرا على ماذكرنا من ذلك، وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে যেসব
যুক্তিভিক্তিক এবং দলীলভিত্তিক আলোচনা করেছি তা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, যুদ্ধাবস্থায়
এবং অন্যান্য সময়েও ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই। আর এটাই ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অভিমত।”
‘আল আইনী’-এর ২য়
খ-ের ৫৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৪৪-৫৪৫]
وقال قتادة عن علقمة عن ابى الدرداء قال لاقنوت فى الفجر واخرج ابو مسعود الرازى فى اصول السنة وجعل اول حديث من قال ان القنوت محدث وان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه وقال الترمذى حديث حسن صحيح العمل عند اكثر اهل العلم.
অর্থঃ- “হযরত
কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
তিনি হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা থেকে বর্ননা করেন। তিনি বলেন ফজর নামাযে
কোন কুনূতেই নেই।
আর আবু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর ‘উছূলুস
সুন্নাহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি প্রথম হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ
করেছেন যে, নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা বিদয়াত এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম
কেবলমাত্র একমাস ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠের পর তা পরিত্যাগ করেন।
হযরত ইমাম তিরমিযী
রহমতুল্লাহি আলাইহি এই হাদীছ শরীফকেই হাসান ছহীহ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আর এ মতের
উপর অধিকাংশ ইমাম ও মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ আমল করেছেন।
‘আল আইনী’ কিতাবের
২য় খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে যে,
[৫৪৬]
وعن سعيد بن جبير قال اشهد انى سمعت ابن عباس يقول القنوت فى الفجر بدعة.
অর্থঃ- “হযরত
সাঈদ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমাকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত।”
‘হিদায়া’ কিতাবের
১ম খ-ের ১৪৭ পৃষ্ঠায় হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[৫৪৭]
عن ابن عمر انه ذكر القنوت فقال والله انه لبدعة ما قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم غير شهر واحد.
অর্থঃ- “হযরত
আব্দূল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি কোন এক সময়ে কুনূতে
নাযেলা আলোচনা করার পর বলেন, আল্লাহ পাক-এর শপথ করে বলছি; নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা বিদয়াত।
হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস ব্যতীত আর কখনই
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।”
এ প্রসঙ্গে “মাজমাউল
আনহুর ফী শরহে মুলতাকাল আনহুর” ১ম খ-ের ১২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৪৮]
قال اللهام (اللعظم) القنوت فى صلوة الفجر بدعت.
অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।”
“মায়ারিফুস সুনান”-এর ৪র্থ
খ-ের ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৪৯]
قال ابو حنيفة لاقنوت فيه، واليه ذهب ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن المبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد واسحاق ويحيى بن يحيى الاندلسى واليه ذهب من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى. وروى عن الحسن وحكى ذلك عن ابى بكر وعمر وعثمان وعلى وابن مسعود وابن عباس وابن عمر وعبد الله بن الزبير وغبد الرحمن بن ابى بكر وابى مالك الاشجعى وابى الدرداء وقد ثبت عن ابن عمروابن عباس وطاؤس وروى عن سعيد بن جبير الزهرى القول بانه فى الصبح بدعة وذكره الترمذى عن اكثر اهل العلم.
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করা জায়িয নেই। এ মতের উপর হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি-এর মাযহাবের সকল অনুসরণীয় ইমামগণ। হযরত ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, লাইছ ইবনে
সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে
ইয়াহ্ইয়া আন্দুলসী রহমতুল্লহি আলাইহিমগণের মতেও ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করা জায়িয নেই।
অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের
মধ্যে, হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম শা’বী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর
ইবনে সাইমুন রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইব্রাহীম আন নখ্য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতেও ফজরের নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয় নেই এবং হযরত ইমাম হাসান রহমতুল্লহি আলাইহি থেকে
বর্ণিত আছে অনুরূপ হযরত আবূ রকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত
আব্দুর রহমান ইবনে আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ
মালিক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আবূ
দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্র্ণিত আছে। অনুরূপভাবে ইমাম তাউস
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু থেকে ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি
সাঈদ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁদের সকলের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত যে অবশ্যই ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াতে (সাইয়্যিয়াহ)। হযরত ইমাম তিরমিযী
রহমতুল্লাহি আলাইহিও এটা বর্ণনা করেছেন। এটাই অধিকাংশ ইমাম ও মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণের অভিমত। (অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায়
থাকুন
0 Comments:
Post a Comment