পিডিএফ-
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১৬)
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের
পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও
বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী,
বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায়
বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায়
এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লেখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক
তাই। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা
মায়িদার’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا
اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু
হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” মূলতঃ এই
ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে
দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ
শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে
ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা
হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের
এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কেও
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের
প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা
অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী
ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল
দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’
অথচ ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে
দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের
মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খণ্ডন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে
যাবেন ইনশাআল্লাহ। তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে সাধারণ লোক মনে করবে ‘হানাফী
মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’
অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা
হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক
ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে
ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে। অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন
ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায
তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূ’র সাথে
নামায আদায় না করা,
হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি
কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর
কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
عن حابر رضى الله تعالى عنه قال قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার
ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির
সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়।
আল্লাহ
পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم
قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان
مقداره الف سنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি
নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে
জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর
হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্
মানাসিক)
হাদীছ
শরীফের বর্ণনা মুতাবিক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর *
৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব, এক
হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য,
ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায
ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে
আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ
করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে
দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা
রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে
কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই
হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা
দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে
নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই
রাখেনা। মূলকথা, যারাই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে
যাবে। পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠ করা জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ
করে দেয়ার মাধ্যমে লা’নত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে
কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার
ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে। কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ
নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও
যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর
ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ
করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া
মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
পূর্ববর্তী
আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার কারণে শহীদকারী রি’ল, য্কাওয়ান, আছিয়্যাহ
ও লিহ্ইয়ান গোত্রগুলোর প্রতি ‘বদ্দোয়া’ করার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস
‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করার পর তা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। যেমন, এ
প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لم يقنت رسول الله صلى الله
عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তা
পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী
শরহে হিদায়াহ ২য় খণ্ড ৫৯০ পৃষ্ঠা)
এ
প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী’ কিতাবের
৬ষ্ঠ খণ্ডের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على
رسول الله صلى الله عليه وسلم "ليس لك من الأمر شئ" ....... الخ، فصار
ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর মতে,
যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর উপর ليس لك من الامر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই
(ফজরে কুনূত) পাঠ করা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।” আর ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর
নামাযে ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন।
যেমন এ
প্রসঙ্গে “মিশকাত শরীফের”
১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعن ابى مالك الاشجعى قال قلت لابى يا
ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا
بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- “হযরত আবূ মালিক আল্ আশজায়ী
(তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার
পিতাকে একবার বললাম,
হে আমার পিতা! আপনি তো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সাথে,
হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায়
প্রায় পাঁচ বৎসরকাল পর্যন্ত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার পিছনে জামায়াতে
নামায আদায় করেছেন,
উনারা কি কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি
উত্তরে বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস্য! (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (ইবনে
মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা,
ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড) শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে
তাবিয়ীন, তাবে’ তাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি বরং ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত, নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, “মায়ারিফুস
সুনান”-এর ৪র্থ খণ্ড,
১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وقال ابو حنيفة لا قنوت فيه واليه ذهب
ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن المبارك واليث بن سعد وسفيان الثورى
واحمد واسحاق ويحى بن يحى الاندلسى وذهب اليه من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن
جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আ’যম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কোন
কুনূতই পাঠ করা যাবেনা। এ মতের উপর হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল
আল্লামা মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সকল অনুসরণীয় আছহাবগণের মতে যেমন হযরত
ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত লাইছ ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আন্দুলুসী
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবেনা।
অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর
ইবনে মাইমুনঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম আন্নাখয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা
যাবেনা। এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ তথা ইমামে আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে হানাফী
মাযহাবের সকল বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে
নাযেলা পাঠ করাকে মানসূখ,
নাজায়িয ও বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ
পূর্ববর্তী সংখ্যায় দেয়া হয়েছে। তবে হ্যাঁ, শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম
শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে ফজর নামাযঞ্জএবং অন্যান্য নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে কুনূতে
নাযেলাকে জায়িয বলেছেন। যা আমাদের হানাফীদের নিকট বিশুদ্ধ বর্ণনা নয়। আর
হানাফীগণের দলীল হচ্ছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত হাদীছ শরীফ। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ফজর নামাযসহ সকল নামাযেই কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। আর হানাফীদের মতে অন্যান্য নামাযে তো নয়ই বরং ফজর
নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।
কাজেই হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার
অর্থই হচ্ছে, শাফিয়ী মাযহাবের মতকে অনুসরণ করা যা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয় বরং সম্পূর্ণ হারাম
ও নাজায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৩/৩৪৪ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
فيكون كل من المذاهب الاربعة حقا بهذا
المعنى فالمقلد اذا قلد اى مجتهد يخرج عن الوجوب ولكن ينبغى ان يقلد احدا التزامه
ولايؤل الى اخر.
অর্থঃ- “যখন চার মাযহাবের প্রত্যেকটিই
হক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হলো,
তাই এ অর্থে মুকাল্লিদের জন্য যে কোন একটি মাযহাবের ইমামকে
অনুসরণ করাও ওয়াজিব। অতএব,
যে ব্যক্তি কোন এক মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করবে সে শুধু
সেটাই আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। অন্য কোন মাযহাবের অনুসরণ করবে না।” এ
প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”
কিতাবের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,
واما الثانى وهو انه اذا التزم الطبعية
يجب عليه ان يدوم على مذهب التزامه ولا ينتقل الى مذهب اخر.
অর্থঃ- “দ্বিতীয়তঃ কোনও মাযহাবকে
প্রকৃতভাবে গ্রহণ করলে দায়িমীভাবে সে মাযহাবেরই অনুসরণ করা ওয়াজিব। তাই এক মাযহাব
পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যাবেনা তথা হারাম। উপরোক্ত দলীলভিত্তিক
আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠলো যে, হানাফীদের জন্য শাফিয়ী বা
অন্যান্য মাযহাবের মাসয়ালার উপর আমল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। যেহেতু
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা শাফিয়ী মাযহাবে জায়িয, কিন্তু তা হানাফী মাযহাবে হারাম
বিদয়াত ও নাজায়িয। তাই হানাফীদের জন্য কুনূতে নাযেলা পাঠ করাও হারাম, নাজায়িয
ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ। কেন না ‘মানসূখ’ হয়ে
যাওয়া কোন আমল নামাযে সম্পাদন করলে যে নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যায় তাতে কারোই
দ্বিমত নেই। যেমন- ইসলামের প্রথম যুগে নামাযের মধ্যে কথা-বার্তা বলা, সালাম
দেয়া ইত্যাদি সবই বৈধ ছিল পরবর্তীতে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা
নামাযে কথা বলার আমল নিষিদ্ধ বা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। ফলে এখন নামাযের মধ্যে কথা বললে হানাফী মাযহাব মতে
তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।’
সুতরাং ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কথা বললে যেরূপ নামায ফাসিদ হয়ে
যায়; ঠিক তদ্রুপ ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলেও নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।
অনুরূপভাবে নামাযের মধ্যে
কোন নামাযী কথা বললে,
মনে মনে কিংবা উচ্চ আওয়াজে কারো জন্য দোয়া বা বদদোয়া করলে, হাঁচির
জবাবের নিয়তে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে, কোন আশ্চর্যজনক সংবাদ শুনে
সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুল্লিাহ,
লা-ইলাহা ইল্লাহ কিংবা আল্লাহু আকবার বললে নামায ফাসিদ হবে।
সুতরাং কুনূতে নাযেলাও অনুরূপ। কাজেই পরিস্কারভাবে ফুটে উঠল যে, অবশ্যই
কুনূতে নাযেলা পাঠে নামায ফাসিদ হবে। কেননা এটাও নামাযের বাইরের অংশ এবং এতে রুকু
থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চ আওয়াজে নাম ধরে, অন্যের কল্যাণে এবং অভিশাপে লম্বা
দোয়া পাঠ করতে হয়। তাতে কি করে নামায শুদ্ধ হতে পারে? মূলকথা হলো, কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা সম্পুর্ণ নাজায়িয, বিদয়াত, হারাম এবং নামায ফাসিদ ও বাতিল হওয়ার কারণ। এটাই হানাফী
মাযহাবের ফায়সালা এবং চুড়ান্ত ফতওয়া।
(পূর্ব
প্রকাশিতের পর)
ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয বলে ফতওয়া প্রদানকারীদের জিহালতপূর্ণ বক্তব্য
ও তার খণ্ডনমূলক জাওয়াব
৮ম
বক্তব্য ও তার খণ্ডনমূলক জাওয়াব
কুনূতে নাযেলাকে জায়িয করার লক্ষে তারা মূল দলীল
হিসেবে হযরত ইমাম আবু জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বরাতে নিম্নোক্ত
ইবারতটি পেশ করে থাকে-
انما
لا يقنت عندنا فى صلاة الفجر من غير بلية، فان وقعت فتنة او بلية فلا بأس به فعله
رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “আমাদের
মতে ফজর নামাযে কোন রকম মুছীবত ছাড়া কুনূত পড়া যাবে না। আর যদি কোন রকমের ফিত্না
অথবা মুছীবত দেখা দেয় তবে কুনূত (নাযেলা) পড়তে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এটা হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন।” তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে
প্রথমত: বলতে হয় যে,
এটা যে হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য, এ
ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য ও প্রমাণাদি কোন কিতাবাদীতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে উল্লেখ
নেই। এমনকি হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্বরচিত ও নির্ভরযোগ্য
কিতাবাদীর মধ্যেও উক্ত বক্তব্য উল্লেখ নেই। বরং তার স্বরচিত বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “শরহে
মায়ানিল আছার” তথা “তাহাবী শরীফ”-এর ১ম খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “কুনূতে নাযেলা মুছীবতকালীন সময়ে
অর্থাৎ যুদ্ধের সময়ে পাঠ করা যাবেনা এটাই ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার চুড়ান্ত অভিমত।” তাহলে উক্ত বক্তব্যকে বিনা দলীলে কি করে হযরত ইমাম তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে? দ্বিতীয়তঃ
এরপরেও যদি উক্ত বক্তব্যকে হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য
হিসেবে ধরে নেয়া হয়। তবুও উক্ত বক্তব্য দ্বারা কুনূতে নাযেলা জায়িয প্রমাণিত হয়না।
কেননা, উনার উক্ত বক্তব্য ইমামে আ’যম,
হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম আবূ
ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতের
সুস্পষ্ট খিলাফ। অথচ হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হলেন, তৃতীয়
তবক্বার একজন মাযহাব অনুসারী ফক্বীহ। তিনি মাযহাবের ইমামের মতের খিলাফ মত পেশ করতে
পারেন না। বরং তাঁকেও মাযহাবের ইমামের মতকে অনুসরণ করতে হবে। যেমন “ফতওয়ায়ে
শামী” কিতাবে ‘তবাক্বাতুল ফুক্বাহা’র অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
[১১৫২-১১৫৩]
الثالثة
طبقة المجتهدين فى المسائل التى لانص فيها عن صاحب المذهب كالخصاف وابى جعفر الطحاوى
ابى الحسن الكرخى وشمس الائمة السرخسى وفخر الاسلام البزدوى وفخر الدين قاضخان
وامثالهم فانهم لايقدرون على شئ من المخالفة لا فى الاصول ولا فى الفروع لكنهم
يستنبطون الاحكام فى المسائل التى لانص فيها على حسب الاصول القواعد.
অর্থঃ- “তৃতীয়
তবক্বার ফক্বীহগণ হচ্ছেন মাসায়িলের ফক্বীহগণ যেসব মাসয়ালা মাসায়িল-এর সমাধান
মাযহাবের ইমাম কর্তৃক দেয়া হয়নি সেসব মাসয়ালা মাসায়িলের সমাধান মাযহাব প্রণেতা
ইমামগণের উছূল অনুসারে উনারা নির্ণয় করার যোগ্যতা রাখেন।” এ স্তরের
ফক্বীহ হচ্ছেন যেমন হযরত খাচ্ছাফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু
জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল হাসান কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
শামসুল আইম্মা সারাখ্সী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ফখরুল ইসলাম বাযদুবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ফখরুদ্দীন কাযীখান রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রভৃতি আলিমগণ।
ঐ তবক্বার আলিমগণ তারা মূল উছূলের কিংবা কোন আনুসাঙ্গিক (শাখা প্রশাখা) মাসয়ালায়
ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিলাফ কোন মত পোষণ করার যোগ্যতা
রাখেন না। তবে যেসব মাসয়ালার সমাধান মাযহাবের ইমাম ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি
পরিস্কার ভাবে দিয়ে যাননি,
শুধুমাত্র সেটাই ইমাম ছাহেবের উছূল অনুসারে নির্ণয় করতে
পারবেন।” “শরহে বিকায়া”
কিতাবের ৭-৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১১৫৪-১১৫৫]
اكابر
المتاخرين من الحنفية كابى بكر احمد الخصاف والا مام ابى جعفر احمد الطحاوى ....
وامثالهم
فانهم يقدرون على الاجتهاد فى المسائل التى لا رواية فيها عن صاحب المذهب ولا
يقدرون على المخالفة له لا فى الاصول ولا فى الفروع لكنهم يستنبطونها على حسب اصول
قررها ومقتضى قواعد بسطها صاحب المذاهب.
অর্থঃ- “হানাফী
মাযহাবের মুতায়াখ্খিরীন আলিমগণ হচ্ছেন যেমন হযরত আবু বকর আহমদ খাচ্ছাফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম আবু জাফর আহমদ তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও প্রমুখ উলামাগণ এরা
সকলেই ইমাম আ’যম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যেসব মাসয়ালার বর্ণনা ও তার সমাধান দেননি সে
সব মাসয়ালার সমাধান ইমাম আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উছূল অনুযায়ী নির্ণয় করতেন মাত্র, উনারা
কেউই উছূলের মাসয়ালায় কিংবা আনুসঙ্গিক
মাসয়ালায় ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোন মতের খিলাফ মত পেশ করার যোগ্যতা রাখেন না। বরং
ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্দিষ্ট উছূল অনুযায়ী
মাসয়ালা নির্ণয় করতে পারেন মাত্র।” সুতরাং তর্কের খাতিরে যদিও ধরে
নেই যে, “হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বালা-মুছীবতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে
জায়িয বলেছেন”- উনার এ বক্তব্য যেহেতু মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতের সম্পূর্ণ খিলাফ, তাই ইমাম
তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত বক্তব্য দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কুনূতে
নাযেলা সম্পর্কে ইমাম আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত নিম্নে উল্লেখ করা হলো- “ফতহুল
কাদীর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৫৬-১১৬১]
ما
اخرجه ابو حنيفة عن حمادبن ابى سليمان عن ابراهيم عن علقمة وعن عبد الله بن مسعود
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يقنت فى الفجر قط الا شهرا واحدا لم ير قبله
ذلك ولا بعده وانما قنت فى ذلك الشهر يدعو على ناس من المشركين فهذا لا غبار عليه
ولهذا لم يكن انس نفسه يقنت فى الصبح.
অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম হাম্মাদ ইবনে আবী
সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীছ শরীফ
বর্ণনা করেন। আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ,
নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম মুশরিকদের প্রতি বদ্দোয়ায় শুধুমাত্র একমাস ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেন। এর পূর্বে ও পরে আর কখনই তাঁকে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে দেখা যায়নি। যা কখনই
অস্বীকার করার উপায় নেই (বরং ছহীহ বর্ণনা)। আর এই কারণেই হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু নিজেও ফজর নামাযে (এ বর্ণনার পরে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।( কেননা
এটা মানসুখ বা রহিত।) (বাযযার, তাবারানী, ইবনে আবী শাইবাহ) “আল বিনায়া” কিতাবের
২য় খণ্ডের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আছে,
[১১৬২-১১৬৩]
لابى
حنيفة ومحمد رحمهما الله انه اى القنوت فى الفجر منسوخ ولا متابعة فيه اى فى
المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার মতে নিশ্চয়ই ফজর নামাযের কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে। আর মানসুখ
তথা যা রহিত হয়, তা অনুসরণ করা জায়িয নেই বরং অনুসরণ করা হারাম। কাজেই কুনূতে নাযেলা যেহেতু
মানসুখ, সেহেতু এর অনুসরণ করা বা নতুন করে এখন নামাযে পাঠ করা হারাম। (ফতওয়ায়ে তাতার
খানিয়া ১ম খণ্ড ৬৬৭ পৃষ্ঠা) “শরহে মায়ানিল আছার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ আছে,
[১১৬৪]
فثبت
بما ذكرنا انه لا ينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره قياسا ونظرا على ما
ذكرنا من ذلك وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.
অর্থঃ- “কুনূতে
নাযেলা সম্পর্কে আমরা পূর্বে যেসব আলোচনা করেছি তা সবগুলোই যুক্তিভিত্তিক এবং
দলীলভিত্তিক ফয়সালাই আলোচনা করেছি। অতএব পরিশেষে উক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে
এটাই প্রমাণিত হলো যে,
ফজর নামাযে যুদ্ধাবস্থায় (বিপদকালীন সময়ে) এবং যুদ্ধবিহীন
অবস্থায় তথা অন্যান্য সময়েও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই। আর এটাই ইমামে আ’যম হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি
এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চুড়ান্ত অভিমত তথা বক্তব্য।” অতএব, উপরোক্ত
আলোচনার ভিত্তিতে পরিস্কার হয়ে উঠলো যে, ফত্ওয়ায়ে শামী, দেওবন্দ
এবং অন্যান্য কিতাবে হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উদ্ধৃতি দিয়ে
উল্লেখ করা হয়েছে যে,
“হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আমাদের
মতে মুছীবতকালীন সময়ে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়তে কোন দোষ নেই” এটা
তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজস্ব উক্তি হিসেবে ধরে নিলেও তা দলীল হিসেবে
গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু উনার উক্ত উক্তি আমাদের মাযহাবের ইমাম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি, হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলইহি এবং ইমাম মুহম্মদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতের সম্পূর্ণ খিলাফ।
স্মর্তব্য যে,
যেখানে মাযহাবের ইমাম ছাড়া হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিকেও অনুসরণ করা যাবেনা, সেক্ষেত্রে
কি করে হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে অনুসরণ করা জায়িয হতে পারে? কখনই
না। যেহেতু তিনি তৃতীয় স্তরের একজন ফক্বীহ, তিনি
ইমামের মতের খিলাফ কোন মত পেশ করতে পারেন না।
এ প্রসঙ্গে “আল-মালুমা” কিতাবে উল্লেখ আছে,
[১১৬৫]
قالوا
الواجب على المقلد المطلق اتباع مجتهد فى جميع المسائل فلا يجوز له ان يعمل واقعة
الا بتقليد مجتهد اى مجتهد كان.
অর্থঃ- “বিজ্ঞ
আলিমগণ বলেন, কোন ইমামের অনুসরণকারীর প্রতি যাবতীয় বিষয়ে শুধু উনারই অনুসরণ করা ওয়াজিব।
অতএব, যে কোন বিষয়ে যে কোন আমলে নির্দিষ্ট (একই) ইমামের অনুসরণ করা ছাড়া জায়িয নেই।” আর এই
অনুসরণ শুধুমাত্র প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামগণকেই করতে হবে। অন্য কোন ইমামগণকে
মাযহাবের দিক থেকে অনুসরণ করা জায়িয নেই বরং হারাম। আর তা যে কোন একজনকেই অনুসরণ
করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে
আহমদিয়া”-এর ৩৪৬ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
[১১৬৬]
قد
وقع الاجماع على ان الاتباع انما يجوز للاربع فلا يجوز الاتباع لابى يوسف ومحمد
وزفر وشمس الائمة اذا كان قولهم مخالفا للاربع وكذا لايجوز الاتبلع.
অর্থঃ- “শুধুমাত্র
মাযহাবের চার ইমামের অনুসরণ করা জায়িয। তাছাড়া অন্যান্য ইমামগণের অনুসরণ করা
হারাম। যেমন, হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম যুফার রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম শামছুল আইম্মা রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনারও ইত্তিবা বা অনুসরণ করা জায়িয নেই বরং হারাম এবং তাদের কথার উপরও আমল
করা জায়িয হবেনা যখন তারা চার ইমামের মধ্যে যে কোন ইমামের মতের খিলাফ মত পেশ
করবেন।” উপরোক্ত ইবারতের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠলো যে, কূনূতে নাযেলা ইমাম আ’যম হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে পাঠ করা জায়িয নেই বরং হারাম ও
বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। সুতরাং উক্ত ইমামগনের মতের খিলাফ হযরত ইমাম তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্তি কি করে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? কি করে
উনার উক্ত মত অনুসরণ করা জায়িয হতে পারে? মূলত: এটা কখনও হানাফী মাযহাবের
অনুসারীগণের জন্য জায়িয হবে না। বরং হারাম ও নাজায়িয এবং বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
তৃতীয়তঃ আরো বলতে হয় যে, হযরত
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি যেহেতু প্রথম জীবনে শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী
ছিলেন। তাই শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী হিসেবে হয়তোবা কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে জায়িয
বলেছেন। যেহেতু শাফিয়ী মাযহাবে এটা পাঠ করা বৈধ। অতঃপর তিনি শাফিয়ী মাযহাব
পরিবর্তন করে হানাফী মাযহাবের অনুসারী
হন। যেমন, উনার
লিখিত “শরহে মায়ানিল আছার”
কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৬৭-১১৬৮]
كان
شافعى المذهب.
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।” (কিতাবুল
ইরশাদ ফী তরজামাতিল মুযনীযা) আর এ কারনেই হয়তোবা প্রথম অবস্থায় শাফিয়ী মাযহাবের
অনুসরণে কুনূতে নাযেলার পক্ষে ফতওয়া দিয়েছিলেন। অতঃপর শাফিয়ী মাযহাব ত্যাগ করে
হানাফী মাযহাবের অনুসারী হন। “তাহাবী শরীফ”-এর ১ম খণ্ডের ৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
আছে,
[১১৬৯]
وصار
حنفى المذهب.
অর্থঃ- “অতঃপর
তিনি (অর্থাৎ হযরত ইমাম আবু জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি) হানাফী মাযহাবের
অনুসারী হন।” অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব পরিত্যাগ করে হানাফী মাযহাব গ্রহণ করেন। যার ফলে হানাফী
মাযহাবের অনুসরণে উনার লিখিত বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “শরহে মায়ানিল আছার” কিতাবে
যুদ্ধকালীন সময়েও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। অর্থাৎ কুনূতে
নাযেলা ফজর নামাযে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব, যদিও যুদ্ধাবস্থায় হোক না কেন, যেহেতু
তা মানসূখ হয়ে গেছে। যেমন এ প্রসঙ্গে “তাহাবী
শরীফ”-এর ১ম খণ্ডের ১৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৭০]
ان
الله عز وجل نسخ ذلك بقوله ليس لك من الامر شئ الاية ففى ذلك ايضا وجوب ترك القنوت
فى الفجر.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ পাক ليس لك من الامر شئ الخ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার
প্রয়োজন নেই” এ আয়াত শরীফের মাধ্যমে কুনূতে নাযেলা মানসুখ করেন। আর এ কারণেই ফজর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করাও ওয়াজিব তথা ফরয।” এ প্রসেঙ্গ বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “শরহে
মায়ানিল আছার” কিতাবের প্রথম খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৭১]
لا
قنوت فيها فى حال الحرب وفى حال عدم الحرب وكانت الفجر والمغرب والعشاء لا قنوت
فيهن فى حال عدم الحرب ثبت ان لا قنوت فيهن فى حال الحرب ايضا.
অর্থঃ- “যুদ্ধের
অবস্থায় এবং যুদ্ধবিহীন অবস্থায় ফজর নামাযে কোনক্রমেই কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয
নেই। আর যে কুনূত ফজর,
মাগরিব ও ইশার নামাযে পাঠ করা হতো সেটাও যুদ্ধবিহীন অবস্থায়
উক্ত নামাযসমূহে পাঠ করা বৈধ নয়। অতঃপর দলীল দ্বারা এটাও প্রমাণ করা হয়েছে যে, ফজর, মাগরিব ও
ইশার নামাযে যুদ্ধের অবস্থাতেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।” (অনুরূপ ই’লাউস
সুনান ৬ষ্ঠ খণ্ডে উল্লেখ আছে)
“শরহে মায়ানিল আছার” কিতাবের
১ম খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৭৩]
فثبت
بما ذكرنا انه لا ينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره قياسا ونظرا على ما
ذكرنا من ذلك وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.
অর্থঃ- “কুনূতে
নাযেলা সম্পর্কে আমরা পূর্বে যেসব আলোচনা করেছি তা সবগুলোই যুক্তিভিত্তিক এবং
দলীলভিত্তিক ফয়সালাই আলোচনা করেছি। অতএব পরিশেষে উক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে
এটাই প্রমাণিত হলো যে,
ফজর নামাযে যুদ্ধাবস্থায় (বিপদকালীন সময়ে) এবং যুদ্ধবিহীন
অবস্থায় তথা অন্যান্য সময়েও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই। আর এটাই ইমামে আ’যম হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চুড়ান্ত অভিমত তথা বক্তব্য।” মূলকথা
হলো, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সাব্যস্ত হলো যে, কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সম্পর্কিত
হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বরাতে চালিয়ে দেয়া উল্লিখিত উক্তি মোটেও
দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
কারণ প্রথমত: এটা যে
সত্যিই হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য তার সুস্পষ্ট ও
নির্ভরযোগ্য কোন প্রমাণ নেই। যেহেতু উনার নিজস্ব লেখা কোন কিতাবেই উক্ত বক্তব্য
উল্লেখ নেই। দ্বিতীয়ত: উক্ত বক্তব্যটি
হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ধরে নিলেও উক্ত বক্তব্যকে দলীল হিসেবে
গ্রহণ করা জায়িয নেই। কারণ উক্ত মতটি সম্পূর্ণরূপেই মাযহাবের ইমাম, ইমামে আয’ম হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতের খিলাফ। আর মাযহাবের ইমামের মতের
খিলাফ কোন মুকাল্লিদের মতকে গ্রহণ করা বা অনুসরণ করা হারাম।
তৃতীয়ত: যদি প্রমাণিত হয়
যে, হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন তবে তা অবশ্যই
শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী থাকা অবস্থায় করেছেন। কেননা, শাফিয়ী
মাযহাবে বালা-মুছীবতের সময়ে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। আর হানাফী মাযহাব গ্রহণ
করার পর তিনি হানাফী মাযহাব অনুযায়ী লিখিত উনার বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য কিতাব “তাহাবী
শরীফে” কুনূতে নাযেলা যুদ্ধকালীন বা বালা-মুছীবতের সময়েও পড়া নাজায়িয বলে চুড়ান্ত রায়
পেশ করেছেন। সুতরাং কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি
আলাইহি উনার এ রায়টিই অধিক ছহীহ, গ্রহণযোগ্য ও চুড়ান্ত রায়। এর বিপরীত কোন বক্তব্যই
গ্রহণযোগ্য নয়।
অতএব, তাদের ৮ম
বক্তব্যটিও দলীলবিহীন,
মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, জিহালতপূর্ণ বলে প্রমাণিত হলো।
৯ম
বক্তব্য ও তার খণ্ডনমূলক জাওয়াবঃ
কুনূতে নাযেলাকে জায়িয
প্রমাণ করার লক্ষে তারা আরো বলে থাকে যে, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে
কুনূতে নাযেলা পাঠের পক্ষে দলীল রয়েছে। যেহেতু “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে
রয়েছে সেহেতু কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে কোন অসুবিধা নেই।” তাদের
এরূপ বক্তব্যের জাওয়াবে প্রথমত: বলতে হয় যে, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের
মূল দলীল হচ্ছে হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথিত উক্তি। হযরত ইমাম
তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত উক্তি যে, দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয় তা
আমরা নির্ভরযোগ্য দলীল ও যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করেছি। কাজেই এর দ্বারাই “ফতওয়ায়ে
শামী” কিতাবের বক্তব্যের অসারতা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ এ দৃষ্টিকোন থেকে ‘কুনূতে
নাযেলা জায়িয হওয়া সম্পর্কিত’ ‘ফতওয়ায়ে শামী’ কিতাবের বক্তব্য দলীল হিসেবে
মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়ত: ‘ফতওয়ায়ে
শামী’ কিতাবের সব ফতওয়া বা মাসয়ালাই গ্রহণযোগ্য বা অনুসরণীয় নয়। বরং যেগুলো
নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে সেগুলোই কেবল গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়। ‘ফতওয়ায়ে
শামী’ কিতাবে কুনূতে নাযেলা বৈধ সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে তা যেহেতু হানাফী মাযহাবের
নির্ভরযোগ্য সকল কিতাবে বর্ণিত মতের খিলাফ তাই উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই
পরিত্যাজ্য। কারণ হানাফী মাযহাবের সকল নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বখ্যাত কিতাবেই ‘কুনূতে
নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত ও হারাম বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে।’ এ
প্রসঙ্গে হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ববিখ্যাত কিতাব, “কিতাবুল
হুজ্জাত”-এর ১ম খণ্ডের ৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৭৪]
وقال
ابو حنيفة رحمه الله لاقنوت فى صلاة الفجر لان رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت
شهرا واحدا ولم يقنت قبله ولا بعده.
অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূতই
পাঠ করা জায়িয নেই। কেননা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
শুধুমাত্র এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন। এর পূর্বে ও পরে আর কখনই এ কুনূত
তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
বিশ্ববিখ্যাত কিতাব,
“আল মাবসূত” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬৯ পৃষ্ঠায় আছে,
[১১৭৫]
لايقنت
فى شئ من الصلوات الا فى الوتر.
অর্থঃ- “বিত্র
নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কোন প্রকারের কুনূত পাঠ করা জায়িয নেই।” “আল
মাবসূত” কিতাবের ৬৯ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, [১১৭৬]
لاقنوت
فى شئ من الصلوات كلها فى سفر ولا حضر الا فى الوتر.
অর্থঃ- “বিতর
নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে ছফরে এবং মুকীম অবস্থায় কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করা জায়িয নেই।”
অতএব, এ দৃষ্টিকোন
থেকেও ‘ফতওয়ায়ে শামী’
কিতাবের বক্তব্য দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ ‘ফতওয়ায়ে
শামী’ কিতাবের বক্তব্য দ্বারা ‘কুনূতে নাযেলা’ জায়িয প্রমাণ হয়না। তৃতীয়ত: ‘ফতওয়ায়ে
শামী’ কিতাবে ‘কুনূতে নাযেলা নাজায়িয হওয়ারও প্রমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ আল্লামা শামী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতেও হানাফী মাযহাবে ফজর নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা
বৈধ নয়। বরং তা শাফিয়ী মাযহাবে জায়িয। যেমন, এ প্রসঙ্গে “ফতওয়া
শামী” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৭৭]
ولا
يقنت لغير اى غير الوتر وهذا نفى لقول الشافعى انه يقنت الفجر.
অর্থঃ- “বিত্র
নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে না, তথা
জায়িয নেই। এর দ্বারা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্যকে রদ করা
হয়েছে। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, আল্লামা
শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ভাষ্য অনুযায়ী ফজরে কুনূত পাঠ করা শাফিয়ী মাযহাবের
আমল। হানাফীদের জন্য তা অনুসরণ করা জায়িয নেই। যেমন এ প্রসঙ্গে, “ফতওয়ায়ে
শামী” কিতাবের তা’যিরের অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
[১১৭৮]
ان
حكم الملفق باطل بالاجماع.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
ইজমা হয়েছে যে, শরীয়তে মুলফিক বাতিল বা পরিত্যাজ্য। আর মূলফিক ঐ ব্যক্তিকে বলে যে একই সময়ে
দুই মাযহাবের আমল একত্রে অনুসরণ করে।” “তাফসীরে আহমদী” কিতাবের
এর ১ম খণ্ডের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৭৯]
لا
يجوز للحنفى العمل على مذهب الشافعى.
অর্থঃ- “হানাফীদের
জন্য শাফিয়ী মাযহাবের উপর আমল করা বৈধ নেই তথা হারাম।” অতএব, তাদের ৯ম
বক্তব্যও অশুদ্ধ,
দলীলবিহীন, জিহালতপূর্ণ ও ভিত্তিহীন হিসেবে প্রমাণিত হলো। কাজেই হানাফী
মাযহাব মতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও হারাম এটাই চুড়ান্ত ফতওয়া।
১০ম
বক্তব্য ও তার খণ্ডণমূলক জাওয়াবঃ
সারাদেশে কুনূতে নাযেলা
পাঠকারী ও কুনূতে নাযেলাকে জায়িযকারী খারিজীদের মূল সম্বল হচ্ছে “ফতওয়ায়ে
দেওবন্দ।” “ফতওয়ায়ে দেওবন্দে”
উল্লেখ আছে, ‘কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয।’ এর জবাবে
প্রথমত: বলতে হয় যে,
‘কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে ‘ফতওয়া দেওবন্দে’ যা লিখা
হয়েছে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দের’ পুঁজি
হচ্ছে, ‘ফতওয়ায়ে শামী।’
আর শামীওয়ালার পুঁজি হচ্ছে হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার কথিত নিম্নোক্ত ইবারত-
انما
لا يقنت عندنا فى صلاة الفجر من غير بلية، فان وقعت فتنة او بلية فلا بأس به فعله
رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “আমাদের
মতে ফজর নামাযে কোন রকম মুছীবত ছাড়া কুনূত পড়া যাবে না। আর যদি কোন রকমের ফিৎনা
অথবা মুছীবত দেখা দেয় তবে কুনূত (নাযেলা) পড়তে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এটা হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন।” পূর্ববর্তী দলীলভিত্তিক আলোচনা
দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার কথিত বক্তব্য ও ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের বক্তব্য ‘কুনূতে
নাযেলা জায়িয-এর’
পক্ষে দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ হযরত ইমাম
তাহাবী রহমতুল্লহি আলাইহি ও ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের বক্তব্য দ্বারা ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করা কখনোই জায়িয প্রমাণিত হয়না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে ‘শামী’র
মুকাল্লিদ ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দের’
বক্তব্য কি করে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? দ্বিতীয়ত:
কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দের’
বক্তব্য হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আবু হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মত ও নির্ভরযোগ্য
সকল হানাফী ফিক্বাহ্র কিতাবে প্রদত্ত্ব বক্তব্যের সম্পূর্ণই খিলাফ। কারণ আমাদের
হানাফী মাযহাবের ইমাম,
ইমামে আ’যম,
হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম আবু ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
মতে “যুদ্ধকালীন বা বালা-মুছীবতের সময়েও ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয
নেই।” যা হানাফী মাযহাবের সমস্ত বড় বড় ফিক্বাহ্র কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। যেমন এ
প্রসঙ্গে হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “কিতাবুল
হুজ্জাত”-এর ১ম খণ্ডের ৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৮০]
وقال
ابو حنيفة رحمه الله لاقنوت فى صلاة الفجر لان رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت
شهرا واحدا ولم يقنت قبله ولا بعده.
অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূতই
পাঠ করা জায়িয নেই। কেননা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
শুধুমাত্র এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন। এর পূর্বে ও পরে আর কখনই এ কুনূত
তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
বিশ্ববিখ্যাত কিতাব,
“আল মাবসূত” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [১১৮১]
لايقنت
فى شئ من الصلوات الا فى الوتر.
অর্থঃ- “বিত্র
নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কুনূত পাঠ করা জায়িয নেই।” “আল
মাবসুত” কিতাবের ৬৯ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১১৮২]
لاقنوت
فى شئ من الصلوات كلها فى سفر ولا حضر الا فى الوتر.
অর্থঃ- “বিত্র
নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে ছফরে এবং মুকীম অবস্থায়ও কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা
পাঠ করা জায়িয নেই।”
বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্র কিতাব, ‘হিদায়া’-এর শরাহ্
“আল বিনায়া (আইনী)”
কিতাবের ২য় খণ্ডের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আছে,
[১১৮৩-১১৮৪]
لابى
حنيفة ومحمد رحمهما الله انه اى القنوت فى الفجر منسوخ ولا متابعة فيه اى فى
المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার মতে, নিশ্চয়ই ফজর নামাযের কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে। আর মানসুখ তথা যা
রহিত হয়, তা অনুসরণ করা জায়িয নেই বরং অনুসরণ করা হারাম। কাজেই কুনূতে নাযেলা যেহেতু
মানসুখ, সেহেতু এর অনুসরণ করা বা নতুন করে এখন নামাযে পাঠ করা হারাম। (ফতওয়ায়ে
তাতারখানিয়া ১ম খণ্ড ৬৬৭ পৃষ্ঠা) “শরহে মায়ানিল আছার” কিতাবের
১ম খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৮৫]
فثبت
بما ذكرنا انه لا ينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولاغيره قياسا ونظرا على ما
ذكرنا من ذلك وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.
অর্থঃ- “কুনূতে
নাযেলা সম্পর্কে আমরা পূর্বে যেসব আলোচনা করেছি তা সবগুলোই যুক্তিভিত্তিক এবং
দলীলভিত্তিক ফয়সালাই আলোচনা করেছি। অতএব পরিশেষে উক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে
এটাই প্রমাণিত হলো যে,
ফজর নামাযে যুদ্ধাবস্থায় (বিপদকালীন সময়ে) এবং যুদ্ধবিহীন
অবস্থায় তথা অন্যান্য সময়েও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই। আর এটাই ইমামে আ’যম হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চুড়ান্ত অভিমত তথা বক্তব্য।” সুতরাং
উল্লিখিত বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবের নির্ভরযোগ্য বক্তব্যের বিপরীতে ‘ফতওয়ায়ে
দেওবন্দের’ দলীলবিহীন, মনগড়া ও অশুদ্ধ বক্তব্য কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? মূলকথা
হলো- কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দের’ বক্তব্যও সম্পূর্ণ ভুল, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর
ও হানাফী মাযহাবের মতের সম্পূর্ণ খিলাফ। স্মর্তব্য যে, ‘ফতওয়ায়ে
দেওবন্দে’ যে শুধু ‘কুনূতে নাযেলা’
সম্পর্কে ভুল ফতওয়া দেয়া হয়েছে তা নয় বরং আরো অনেক বিষয়েই ‘ফতওয়ায়ে
দেওবন্দে’ ভুল ফায়সালা দেয়া হয়েছে। যা সময়মত মাসিক আল বাইয়্যিনাতে খণ্ডন করা হবে
ইনশাআল্লাহ। (চলবে)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায়
থাকুন
0 Comments:
Post a Comment