পিডিএফ-
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১৩)
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের
পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও
বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী,
বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায়
বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায়
এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লেখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক। তদ্রুপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক
তাই। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা
মায়িদার’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا
اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু
হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” মূলতঃ এই
ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে
দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ
শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে
ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা
হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। উল্লেখ্য, ইহুদীদের
এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কেও
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের
প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা
অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী
ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল
দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’
অথচ ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে
দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের
মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন
ইনশাআল্লাহ। তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে
সাধারণ লোক মনে করবে ‘হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’ অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম
করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ
তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ
করার কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে। অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন
ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায
তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূ’র সাথে
নামায আদায় না করা,
হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি
কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর
কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
عن حابر رضى الله تعالى عنه قال قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার
ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির
সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়। আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم
قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان
مقداره الف سنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি
নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে
জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর
হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্
মানাসিক) হাদীছ শরীফের বর্ণনা
মুতাবিক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০
দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব,
এক হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য, ক্বাযা
নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে
ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময়
আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা
করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায়
করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায়
করবেনা আর তওবাও করবে না,
তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে
ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা
হয়েছে। নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার
পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে
হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত
কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। মূলকথা, যারাই ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে
বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয ফতওয়া
দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার মাধ্যমে লা’নত বা
কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে
ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা
সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রই
সর্বদা করে যাচ্ছে। কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের
ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও
দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে
পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে সে
উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া
মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) পূর্ববর্তী আলোচনা
দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে,
সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার কারণে শহীদকারী রি’ল, য্কাওয়ান, আছিয়্যাহ
ও লিহ্ইয়ান গোত্রগুলোর প্রতি ‘বদ্দোয়া’ করার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস
‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করার পর তা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। যেমন, এ
প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لم يقنت رسول الله صلى الله
عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তা
পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী
শরহে হিদায়াহ ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা) এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল
ক্বারী’ কিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على
رسول الله صلى الله عليه وسلم "ليس لك من الأمر شئ" ....... الخ، فصار
ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর মতে,
যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর উপর ليس لك من الامر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই
(ফজরে কুনূত) পাঠ করা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।” আর ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর
নামাযে ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে “মিশকাত
শরীফের” ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعن ابى مالك الاشجعى قال قلت لابى يا
ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا
بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- “হযরত আবূ মালিক আল্ আশজায়ী
(তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার
পিতাকে একবার বললাম,
হে আমার পিতা! আপনি তো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সাথে,
হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায়
প্রায় পাঁচ বৎসরকাল পর্যন্ত হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে
নামায আদায় করেছেন,
তাঁরা কি কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি
উত্তরে বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস্য! (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (ইবনে
মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা,
ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড) শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে
তাবিয়ীন, তাবে’ তাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি বরং ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত, নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, “মায়ারিফুস
সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وقال ابو حنيفة لا قنوت فيه واليه ذهب
ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن المبارك واليث بن سعد وسفيان الثورى
واحمد واسحاق ويحى بن يحى الاندلسى وذهب اليه من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن
جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আ’যম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কোন
কুনূতই পাঠ করা যাবেনা। এ মতের উপর হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল
আল্লামা মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সকল অনুসরণীয় আছহাবগণের মতে যেমন হযরত ইবনে
মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত লাইছ ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আন্দুলুসী
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবেনা।
অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর
ইবনে মাইমুনঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম আন্নাখয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা
যাবেনা। এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ তথা ইমামে আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে হানাফী
মাযহাবের সকল বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে
নাযেলা পাঠ করাকে মানসূখ,
নাজায়িয ও বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ
পূর্ববর্তীু সংখ্যায় দেয়া হয়েছে। তবে হ্যাঁ, শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম
শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজর নামাযঞ্জএবং অন্যান্য নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে কুনূতে
নাযেলাকে জায়িয বলেছেন। যা আমাদের হানাফীদের নিকট বিশুদ্ধ বর্ণনা নয়। আর
হানাফীগণের দলীল হচ্ছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত হাদীছ শরীফ। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ফজর নামাযসহ সকল নামাযেই কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। আর হানাফীদের মতে অন্যান্য নামাযে তো নয়ই বরং ফজর
নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।
কাজেই হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার
অর্থই হচ্ছে, শাফিয়ী মাযহাবের মতকে অনুসরণ করা যা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয় বরং সম্পূর্ণ হারাম
ও নাজায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৩/৩৪৪ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
فيكون كل من المذاهب الاربعة حقا بهذا
المعنى فالمقلد اذا قلد اى مجتهد يخرج عن الوجوب ولكن ينبغى ان يقلد احدا التزامه
ولايؤل الى اخر.
অর্থঃ- “যখন চার মাযহাবের প্রত্যেকটিই
হক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হলো,
তাই এ অর্থে মুকাল্লিদের জন্য যে কোন একটি মাযহাবের ইমামকে
অনুসরণ করাও ওয়াজিব। অতএব,
যে ব্যক্তি কোন এক মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করবে সে শুধু
সেটাই আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। অন্য কোন মাযহাবের অনুসরণ করবে না।” এ
প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”
কিতাবের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,
واما الثانى وهو انه اذا التزم الطبعية
يجب عليه ان يدوم على مذهب التزامه ولا ينتقل الى مذهب اخر.
অর্থঃ- “দ্বিতীয়তঃ কোনও মাযহাবকে
প্রকৃতভাবে গ্রহণ করলে দায়িমীভাবে সে মাযহাবেরই অনুসরণ করা ওয়াজিব। তাই এক মাযহাব
পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যাবেনা তথা হারাম। উপরোক্ত দলীলভিত্তিক
আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠলো যে, হানাফীদের জন্য শাফিয়ী বা
অন্যান্য মাযহাবের মাসয়ালার উপর আমল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। যেহেতু
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা শাফিয়ী মাযহাবে জায়িয, কিন্তু তা হানাফী মাযহাবে হারাম
বিদয়াত ও নাজায়িয। তাই হানাফীদের জন্য কুনূতে নাযেলা পাঠ করাও হারাম, নাজায়িয
ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ। কেন না ‘মানসূখ’ হয়ে
যাওয়া কোন আমল নামাযে সম্পাদন করলে যে নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যায় তাতে কারোই
দ্বিমত নেই। যেমন- ইসলামের প্রথম যুগে নামাযের মধ্যে কথা-বার্তা বলা, সালাম
দেয়া ইত্যাদি সবই বৈধ ছিল পরবর্তীতে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা
নামাযে কথা বলার আমল নিষিদ্ধ বা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। ফলে এখন নামাযের মধ্যে কথা বললে হানাফী মাযহাব মতে
তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।’
সুতরাং ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কথা বললে যেরূপ নামায ফাসিদ হয়ে
যায়; ঠিক তদ্রুপ ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলেও নামায ফাসিদ হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে নামাযের মধ্যে কোন নামাযী কথা বললে, মনে মনে
কিংবা উচ্চ আওয়াজে কারো জন্য দোয়া বা বদদোয়া করলে, হাঁচির জবাবের নিয়তে
ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে,
কোন আশ্চর্যজনক সংবাদ শুনে সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুল্লিাহ, লা-ইলাহা
ইল্লাহ কিংবা আল্লাহু আকবার বললে নামায ফাসিদ হবে। সুতরাং কুনূতে নাযেলাও অনুরূপ।
কাজেই পরিস্কারভাবে ফুটে উঠল যে, অবশ্যই কুনূতে নাযেলা পাঠে নামায ফাসিদ হবে। কেননা এটাও
নামাযের বাইরের অংশ এবং এতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চ আওয়াজে নাম ধরে, অন্যের
কল্যাণে এবং অভিশাপে লম্বা দোয়া পাঠ করতে হয়। তাতে কি করে নামায শুদ্ধ হতে পারে? মূলকথা হলো, কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা সম্পুর্ণ নাজায়িয, বিদয়াত, হারাম এবং নামায ফাসিদ ও বাতিল হওয়ার কারণ। এটাই হানাফী
মাযহাবের ফায়সালা এবং চুড়ান্ত ফতওয়া।
(পূর্ব
প্রকাশিতের পর)
ফজরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয বলে ফতওয়া প্রদানকারীদের জিহালতপূর্ণ বক্তব্য
ও তার খ-নমূলক জবাব
৩য় বক্তব্য ও তার খ-নমুলক জবাব
বিদয়াতীরা
কুনতে নাযেলাকে জায়িয প্রমান করার জন্য আরেকটি মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করে থাকে যে, “ফযর
নামাযে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়নি বরং বিতর নামাযের দোয়ায়ে কুনুতের ন্যায় কুনূত
মানসুখ হয়েছে।”
এর জবাবে
বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ অশুদ্ধ, বিভ্রান্তিমূলক এবং বানোয়াট। কারণ, ফযর
নামাযে বিতর নামাযের দোয়ায়ে কুনূতের ন্যায় কোন দোয়ায়ে কুনূত ছিল না বা নেই। দোয়ায়ে
কুনূত শুধু ই’শার নামাযের পরে বিতর নামাযে পড়তে হয়। আর ফযর নামাযে শুধু কুনূতে নাযেলা ছিল
যা মানসুখ হয়েছে। অর্থাৎ কুনূতে নাযেলাই মানসুখ হয়েছে।
যেমন এ
সম্পর্কে “ফতওয়ায়ে শামী”
কিতাবের ২য় খ-ের ১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৪৭]
قوله
ولايقنت لغيره. اى غير الوتر وهذا نفى لقول الشافعى رحمه الله انه يقنت للفجر.
অর্থ: “বিতর
নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কোন প্রকারের কুনূত পাঠ করা যাবে না। এর দ্বারা হযরত
ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযর নামাযে কুনূত পাঠের
বক্তব্যকে খ-ন করা হয়েছে।”
আর
আমাদের হানাফী মাযহাবের চুড়ান্ত বক্তব্য হলো, ফযর নামাযে কুনূত পাঠের যে বর্ণনা
হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে তা মূলত: কুনূতে নাযেলাকেই বুঝানো হয়েছে যা মানসুখ হয়েছে। ফলে
ফযর নামাযে বা অন্যান্য নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা হারাম। যেমন, এ
প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে কাযীখান”
কিতাবের ১ম খ-ের ২৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৪৮]
لايقنت
لان القنوت فى صلاة الفجر منسوخ.
অর্থ: “ফজরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়বে না। কেননা ফযরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া সম্পর্কিত
বর্ননাটি মানসুখ হয়ে গেছে।”
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের
১ম খণ্ডের ১১১ পৃষ্ঠায় উল্লেক আছে,
[৯৪৯-৯৫৫]
ولا
يقنت فى غير الوتر كذا فى المتون.
অর্থ: “বিতর
নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কোন প্রকারের কুনূতই পাঠ করা যাবে না। এরূপ বর্ণনা ‘মাতুন’ কিতাবেও
রয়েছে।” (শরহে বিকায়া ১ম খ- ১৭০ পৃষ্ঠার বাইনাস সুতুরে, আল মুখতাসারুল কুদুরী ২৮ পৃষ্ঠা, জাওহারাতুন
নাইয়্যিরাহ ১ম খ- ৭৪ পৃষ্ঠা, ইনায়া, দিরায়া, হিদায়া)
“আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের
১ম খ-ের ১৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৫৬]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “হানাফী
উলামায়ে কিরামগণ উনাদের মতে বিতর নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কুনূত নেই।”
“নুরুল হিদায়া” কিতাবের
১ম খ-ের ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৫৭]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “বিতর
নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কোন প্রকার কুনূত পড়া জায়িয নেই।”
“তাফসীরে আহমদী” কিতাবের
১ম খ-ের ১১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৫৮]
لان
دعاء القنوت عندنا انما يجب فى الصلوة الوتر خاصة ولا يجوز فى صلوة الفجر اصلا.
অর্থ: “আমাদের
হানাফী মাযহাব মতে শুধুমাত্র বিতর নামাযে দোয়া কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব। আর ফযর
নামাযে মূলত কোন প্রকার কুনূতই পাঠ করা জায়িয নেই।”
“গায়াতুল আওতার” কিতাবের
১ম খ-ের ৩১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৫৯]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “ফযর
নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে না। কেননা ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠের বিধানটি মানসুখ হয়ে গেছে।”
“বুখারী শরীফ”-এর ১ম
খ-ের ১৩৬ পৃষ্ঠার ৬ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[৯৬০-৯৭৩]
وعن
انس رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه فقوله ثم تركه يدل
على ان القنوت فى الفرائض كان ثم نسخ.
অর্থ: “হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র
একমাস (ফযর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পড়ে ছিলেন। অত:পর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
পরিত্যাগ তথা বন্ধ করেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শেষের বর্ণনা (ثم
تركه) “অত:পর তিনি পরিত্যাগ করেছেন।” এ কথার
দ্বারা এটাই প্রমাণ করে যে,
ফরয নামাযসমূহে কুনূতে নাযেলা ছিল পরে তা মানসুখ তথা রহিত
হয়ে গেছে।” অনুরুপ বর্ণনা নিম্নোক্ত কিতাবসমূহের মধ্যেও রয়েছে। যেমন- (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী
শরীফ, আবু দাউদ শরীফ,
নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, তাহাবী
শরীফ, মিশকাত শরীফ,
মিরকাত শরীফ, আশরফুত তাওযীহ, মিরয়াতুল
মানাজীহ, ইরশাদুস সারী,
ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী ইত্যাদি।)
“হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলাদ দুররিল মুখতার” কিতাবের
১ম খ-ের ২৮১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৯৭৪]
قوله
لانه منسوخ. قال انس رضى الله تعالى عنه قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى
الصبح بعد الركوع يدعو على احياء من العرب رعل وذكوان وعصية حين قتلوا القراء وهم
سبعون او ثما نون رجلا ثم تركه لما ظهر عليهم فدل على نسخه.
অর্থ:
(ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা মানসুখ সম্পর্কিত বর্ণনা হচ্ছে) হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে রুকুর পর আরবের কতিপয় গোত্র
রিল, যাকওয়ান ও আছিয়্যাহ-এর প্রতি বদদোয়ায় শুধুমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন।
আর এটা ঐ সময় পড়েছিলেন যখন তারা সত্তর অথবা আশিজন হাফিযে কুরআন ছাহাবীদেরকে শহীদ
করেছিলো। অত:পর যখন নিষেধের আয়াত শরীফ অবর্তীণ হয়, তখন আখিরী রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দেন। কাজেই, এ হাদীছ শরীফ খানাই প্রমাণ করে যে
কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে গেছে।”
এ
প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে নাওয়ায়িল”
কিতাবের ৬০ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে,
[৯৭৫]
والقنوت
فى صلوة الفجر منسوخ عندنا.
অর্থ: “আমাদের
হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফতওয়া হলো ফযরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
সম্পর্কিত বর্ণনাটি মানসুখ হয়েছে।”
“আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের
১ম খ-ের ১৯৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৯৭৬]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “তরফাইন
তথা ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (নির্ভরযোগ্য) দলীল হলো এই যে, ফযর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধানটি মানসুখ তথা রহিত হয়ে গেছে। মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে শুধু এক মাস কুনূতে নাযেলা পড়ার পর উহা বর্জন তথা
পরিত্যাগ করেছেন।”
“হাশিয়ায়ে তাহতাবী” কিতাবের
১ম খ-ের ১৮১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৯৭৭]
لهما
انه منسوخ.
অর্থ: “ইমামে আ’যম হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে
নিশ্চয়ই ফযর নামাযের কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ হয়েছে।”
“ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের
১ম খ-ের ৬৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৭৮]
الكلام
فى القنوت فى مواضع، احدها لاقنوت الا فى الوتر عندنا. والثالى ان القنوت مشروع
عندنا قبل الركوع وعند الشافعى رحمه الله بعد الركوع والثالث ان القنوت فى الوتر
فى جميع السنة عندنا وقال الشافعى رحمه الله لاقنوت الا فى النصف الاخير من شهر
رمضان.
অর্থ: “কুনূতের
ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে। প্রথমত: আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো, বিতর
নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কোন প্রকার কুনূতই নেই। দ্বিতীয়ত: বিতর নামাযে যে
দোয়া কুনূত পড়তে হবে,
সেটা আমাদের হানাফী মাযহাবের বিধান সম্মত বা আইনগত মত হচ্ছে
তা রুকুর পূর্বে পড়তে হবে। আর ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে রুকুর পরে
পড়তে হবে। তৃতীয়ত: আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হচ্ছে, বিতর
নামাযের দোয়া কুনূত সারা বৎসর পড়তে হবে তথা পড়া ওয়াজিব। তবে হযরত ইমাম শাফিয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, রমাদ্বান শরীফ উনার পনের দিন
ব্যতীত কোন কুনূত নেই।”
উল্লিখিত
ফতওয়া থেকেও পরিস্কারভাবে বুঝা গেলো যে, ফযরের নামাযে কোন প্রকার কুনূতই
নেই এবং এটাও ফুটে উঠলো যে,
ফযর নামাযে এবং অন্যান্য ফরয নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাট করা
যাবে না। কেননা এ কিতাবের ইবারতে উল্লেখ করা হয়েছে হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বলেছেন যে,
রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ পনের দিন ব্যতীত অন্য কোন নামাযে
কুনূত নেই। কাজেই ফযর নামাযে কিংবা অন্যান্য ফরয নামাযসমূহে কুনূতে নাযেলা পাঠের
পক্ষে হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা দিয়ে যারা বলে থাকে যে, এটা
জায়িয তাদের বর্ণনা এবং বক্তব্য সম্পূর্ণই ভূল ও অশুদ্ধ।
“হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলাল মারাকিইল
ফালাহ” কিতাবের ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৭৯]
ولهما
ان قنوت الفجر منسوخ.
অর্থ: “আমাদের
হানাফী মাযহাবের ইমাম,
ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে অবশ্যই ফযর নামাযের কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সম্পর্কিত
বর্ণনাটি মানসুখ হয়ে গেছে।”
এ
প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে কুবরা”
কিতাবের ১ম খ- ১৯১ পৃষ্ঠায় আছে,
[৯৮০-৯৮২]
انه
منسوخ فلا يشرع بحال بناء على ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت ثم ترك. والترك
ينسخ. الفعل هذا قولى ابى حنيفة رحمه الله.
অর্থ: “নিশ্চয়ই
কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধানটি মানসুখ হয়ে গেছে। যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেটা (ফযর নামাযে একমাস) পাঠ করেন। অতঃপর
ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। আর এ কারণেই বর্তমানে কুনূতে নাযেলা
(নামাযে) পাট করা শরীয়তসম্মত নয়। কেননা, উক্ত আমলটি তরক্বের অর্থই হচ্ছে
উক্ত আমলটি তথা কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ হয়ে যাওয়া। এটাই ইমাম আ’যম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চূড়ান্ত অভিমত।” (ফতওয়ায়ে
মাজমুয়াহ, মাউনা আলা মাযহাবি আলামিল মাদীনাহ ১ম খ- ১১৩ পৃষ্ঠা)
“আল হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের
প্রথম খ-ের ১৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৮৩]
حديث
ابن مسعود ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت فى صلاة الفجر ثم تركه. البزار
والطبرانى من حديث بن مسعود لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا
شهرا ثم ترك لم يقنت قبله ولا بعده ..... واخرجه الطحاوى بلفظ قنت رسول الله صلى
الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما ظهر عليهم ترك القنوت.
অর্থ: “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত
আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আখিরী রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযরের নামাযে শুধুমাত্র একমাস কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর সেই কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। হযরত ইমাম
বাযযার এবং তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরো হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে
কুনূতে নাযেলা কেবল মাত্র একমাস পাঠের পর তা পাঠ করা পরিত্যাগ তথা বন্ধ করেন। এর
পূর্বে এবং পরে তথা ওফাত মুবারক উনার পূর্ব পর্যন্ত আর কখনো কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি।
হযরত
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কর্তৃক অপর এক বর্ণনায় আছে যে, আখিরী
রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি আছিয়্যা এবং যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদদেয়ায় একমাস কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেন। অতঃপর যখন তাদের প্রতি বদদোয়া করতে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিষেধ করেন তখন
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করেন।”
লক্ষ্যণীয় যে, বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বাহ এর কিতাব আল
আইনী কিতাবে فلم ظهر عليهم ترك القنوت এর স্থলে فلما نهى عليهم ترك القنوت উল্লেখ আছে। অর্থাৎ যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের প্রতি বদদোয়া করতে নিষেধ করলেন।
তখন থেকে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করেন।
এ
প্রসঙ্গে “আল আইনী” ২য় খ-ের ৫৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৮৪-৯৮৫]
وقال
الطحاوى حدثنا ابو داود المقدمى ثنا ابو معشر ثنا ابو حمزة عن ابراهيم عن علقمة عن
ابن مسعود رضى الله عنه قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية
وذكوان فلما نهى عليهم ترك القنوت.
অর্থ: “হযরত
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ খানা
বর্ণনা করেন হযরত আবু দাউদ আল মাক্বদামী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের
কাছে হযরত আবু মাশার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের
কাছে আবু হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবরাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
থেকে তিনি হযরত আলকামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি
আবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা
করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আছিয়্যা এবং
যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদদোয়ায় একমাস কুনূতে নাযেলা (ফযর নামাযে) পাঠ করেন।
অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের প্রতি বদদোয়া করতে নিষেধ করেন।
তখন নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন।” (শরহুন নিকায়া ১ম খ- ২২৮ পৃষ্ঠা।)
“আল বিনায়া (আইনী) শরহুল হিদায়া” কিতাবের
২য় জিঃ ৫৯০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেক আছে,
[৯৮৬-৯৮৭]
وان
الله عز وجل نسخ ذلك بقوله (ليس لك من الامر شئ) الاية ففى ذلك ايضا وجوب ترك
القنوت فى الفجر.
অর্থ: “নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ পাক তিনি
ليس
لك من الامر شئ الاية.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার
প্রয়োজন নেই।” (সূরা আল ইমরানের ১২৮ নং) আয়াত শরীফ খানা অবতীর্ণ করার মাধ্যমে ফযর নামাযের
কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ করেন। ফলে ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করারও ওয়াজিব
তথা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। (তাহাবী)
“হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের
১ম খ-ের ১৪৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেক আছে,
[৯৮৮]
وعن
ابى هريرة ان النبى صلى الله عليه وسلم لما رفع راسه من الركعة الثانية من الصبح
قال اللهم انج الوليد الحديث ثم بلغنا انه ترك ذلك لما نزلت ليس لك من الامر شئ
(متفق عليه)
অর্থ: “হযরত আবু
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে
দ্বিতীয় রাকয়াতে রুকু থেকে যখন মাথা উত্তোলন করতেন, তখন দাঁড়িয়ে বলতেন, اللهم
انج الوليد. ‘আয় মহান আল্লাহ পাক! ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদকে নাযাত দান করুন।
অতঃপর
আমাদের কাছে বর্ণনা সূত্রে এসে পৌছেছে যে, যখন মহান আল্লাহ পাক ليس
لك من الامر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।” এই আয়াত
শরীফখানা অবতীর্ণ করেন তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন।
(বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
আর এই
পরিত্যাগ তথা মানসুখের কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি পরবর্তীতে ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদয়াত তিনি বলেছেন। যেমন এ
প্রসঙ্গে “আল হিদায়া মায়াদ দিরায়া” ১ম খ-ের ১৪৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[৯৯১-৯৯২]
عن
ابن عمر رضى الله عنه ذكر القنوت فقال والله انه لبدعة ما قنت رسول الله صلى الله
عليه وسلم غير شهر واحد.
অর্থ: “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি নিজেই একদিন ফযর নামাযের
কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে আলোচনা করার পর বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! অবশ্যই
ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত। কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র একমাস ব্যতীত আর কখনও কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি। (নূরুল হিদায়া ১ম খ- ১১৭ পৃষ্ঠা।)
“আল বিনায়া” ২য় জি:
৫৯৭ পৃষ্ঠায় আছে,
[৯৯৩-৯৯৫]
لابى
حنيفة ومحمد رحمهما الله انه اى القنوت فى الفجر منسوخ ولا متابعة فيه اى فى
المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থ:
হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার মতে নিশ্চয়ই ফযর নামাযের কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি
মানসুখ হয়েছে। আর মানসুখ তথা যা রহিত হয়, তার
অনুস্বরণ করা জায়িয নেই বরং অনুস্বরণ করা হারাম। কাজেই কুনূতে নাযেলা যেহেতু
মানসুখ, সেহেতু এর অনুসরণ করা বা নতুন করে এখন নামাযে পাঠ করা হারাম।” (আল হিদায়া, ফতওয়ায়ে
তাতারখানিয়া ১ম খ-,
৬৭৭ পৃষ্ঠা)
“আইনুল হিদায়া” কিতাবের
১ম খ-ের ১৮২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৯৯৬]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “(আমাদের
হানাফী মাযহাব মতে) বিতর নামাযের দোয়ায়ে কুনূত ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কোন
প্রকারের কুনূত পড়া যাবেনা। তবে ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ মতের খিলাফ মত পোষণ করে বলেন যে, ফযরের
নামাযে কুনূত পড়া যাবে। তবে আমাদের হানাফী মাযহাবের মতে ফযর নামাযে যে কুনূতের কথা
বলা হয়েছে, তা হচ্ছে কুনূতে নাযেলা। যা মানসুখ হওয়ার ফলে এখন তা পাঠ করা জায়িয নেই তথা
হারাম। কেননা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র এক মাস ফযরের নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন।
অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে এবং পরে আর কখনও তিনি
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। যহরত ইমাম বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইবনে আবী শাইবা
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রত্যেকেই হযরত শুরাইকুল ক্বাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
থেকে এ হাদীছ শরীফ খানা বর্ণনা করেন। তিনি হযরত আবু হামযা মাইমুন আল ক্বাছছাব
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত ইবরাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি
হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন।
“শরহুন নিকায়া” ১ম খ-ের
২২৭ পৃষ্ঠায় এবং “নূরুল হিদায়া”
কিতাবের ৬৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেক আছে,
[৯৯৭-৯৯৮]
ولهما
(ابو حنيفة ومحمد) انه منسوخ ولامتابعة فيه.
অর্থ: “ইমাম আ’যম, হযরত আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, নিশ্চয়ই
ফযরের নামাযের কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে। আর মানসুখ বিষয়ের প্রতি কোন প্রকারের
ইত্তিবা করা বৈধ নয় তথা অনুসরণ নাজায়িয ও হারাম।”
“আইনুল হিদায়া” কিতাবের
১ম খ-ের ৫৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেক আছে,
[৯৯৯]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “ছহীহ
ইবনে মাজাহ শরীফ-এ”
স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, উম্মুল মু’মিনীন
হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, আখিরী
রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ফযরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে নিষেধ করেছেন।
উপরের
বর্ণিত দলীলের ভিত্তিতে এটা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ঠভাবে ফুটে উঠল যে, ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার অনুসারী হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে কুনূতে নাযেলা মানসুখ, নিষিদ্ধ
এবং হারাম।
“শরহুন নিকায়া” কিতাবের
১ম খ-ের ২২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০০০]
واعلم
ان قنوت الفجر منسوخ عندنا.
অর্থ: “জেনে
রাখুন, অবশ্যই ফযর নামাযের কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা আমাদের হানাফী মাযহাবে মানসুখ তথা
বাতিল।”
“বাহরুর রায়িক শরহে কানযুদ
দাক্বায়িক্ব” ১ম খ-ের ৪৪ পৃষ্ঠার এবং “শরহুন নিকায়া” ১ম খ-ের ২২৯ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত
আছে,
[১০০১-১০০৪]
ورواه
ابو حنيفة عن حماد عن ابراهيم عن علقمة عن عبد الله ان النبى صلى الله عليه وسلم
لم يقنت فى الفجر قط الا شهرا واحدا لم ير قبل ذلك ولا بعده وانما قنت فى ذلك
الشهر يدعو على ناس من المشركين ولهذا لم يكن انس يقنت فى الصبح كما رواه الطبرانى
بسنده من حديث عالب بن فرقد الطحاوى قال كنت عند انس بن مالك شهرين فلم يقنت فى
صلوة الغدوة وما رواه البخارى ومسلم عن ابى سلمة وسعيد بن المسيب عن ابى هريرة ان
النبى صلى الله عليه وسلم لما رفع راسه من الركعة الثانية قال اللهم انج الوليد بن
الوليد اللهم انج سلمة ابن هشام وفى اخره ثم بلغنا انه ترك ذلك لما نزلت (ليس لك
من الامر شئ) الاية.
অর্থ: “ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি
হযরত ইবরাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে,
তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার থেকে হাদীছ শরীফ খানা বর্ণনা করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বলেন যে,
নিশ্চয়ই আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবলমাত্র একমাস ফযর নামাযে মুশরিকদের
প্রতি বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাট করেন (অতঃপর তার পরিত্যাগ করেন)। এর পূর্বে এবং
পরে আর কখনও আখিরী রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুনূতে নাযেলা পাট করতে দেখা যায়নি। আর
এই কারণেই হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি। যেমন হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সনদে হযরত গালিব ইবনে
ফারক্বাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত
আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনার পিছনে দুই মাস ধরে নামায আদায়
করেছিলাম। দেখেছি তিনি ফযরের নামাযে কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এটা ছাড়াও
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ-এ হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত
সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। উনারা উভয়ে হযরত
আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, আখিরী
রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি (ফযরের নামাযে) দ্বিতীয় রাকায়াতের রুকু থেকে যখন মাথা মুবারক উঠাতেন
তখন দাঁড়িয়ে বলতেন,
اللهم
انج الوليد بن الوليد اللهم انج سلمة بن هشام الى اخره.
“আয় মহান আল্লাহ পাক! ওয়ালীদ ইবনে
ওয়ালীদকে এবং সালামা ইবনে হিশামকে নাযাত দিন এভাবে হাদীছ শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত
পাঠ করতেন। হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, অতঃপর
আমাদের কাছে সংবাদ পৌছল যে,
কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ,
ليس
لك من الامر شئ الاية.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার
প্রয়োজন নেই।” অবতীর্ণ হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ
করেছেন।
“কানযুদ দাক্বায়িক্ব”, “বাহরুর
রায়িক,” মিনহাতুল খালিক্ব”
কিতাবে উল্লেখ আছে,
[১০০৫-১০০৭]
عن
عبد الله رضى الله عنه قال لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا
شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولا بعده وفى لفظ الطحاوى قنت رسول الله صلى الله عليه
وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما ظهر عليهم ترك القنوت.
অর্থ: “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী
রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি শুধু মাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন, অতঃপর তা
পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে এবং পরে আর কখনো ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। হযরত ইমাম
তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার থেকে আরো একখানা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন যে, আখিরী রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আছিয়্যা এবং
যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদদোয়ায় শুধুমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর
যখন তাদের প্রতি বদদোয়া নিষেধের আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হল, তখন
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দেন।” (শরহে বিকায়া ১ম খ- ১৭০ পৃষ্ঠায় ১০
নং হাশিয়া)
“শরহুন নিক্বায়া” কিতাবের
১ম খ-ের ২২৯ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১০০৮-১০০৯]
وعن
ابن عمر انه ذكر القنوت فقال والله انه لبدعة ما قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم
غير شهر واحد ..... ما اخرجه ابن ابن ماجه والنسائى والترمذى وقال حسن صحيح عن ابى
مالك الاشجعى سعيد بن طارق بن الاشيم عن ابيه قال صليت خلف النبى صلى الله عليه
وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان
فلم يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يا بنى انها بدعة قال البخارى طارق بن
اشيم له صحبة.
অর্থ: “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একদিন কুনূতে নাযেলা আলোচনা
করার পর বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! অবশ্যই কুনূতে নাযেলা পাঠ করা এখন বিদয়াত। কেননা
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি শুধু একমাস ব্যতীত আর কখনও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
হযরত
ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম তিরমিযী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা সকলেই হযরত আবু মালিক আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
পিতা কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ শরীফ খানাকে হাসান ছহীহ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। হযরত
আবু মালিক আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা তারিক্ব ইবনে আশীম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বলেন যে,
আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে নামায আদায় করেছি কিন্তু (তরকের
পর) তিনি আর কখনো কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। হযরত আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার পিছনেও নামায আদায় করেছি কিন্তু তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
অনুরূপভাবে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিছনেও নামায পড়েছি কিন্তু
তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অতঃপর হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
পিছনে নামায পড়েছি কিন্তু তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি এবং হযরত আলী
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার পিছনেও নামায আদায় করেছি কিন্তু তিনিও কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি। অতঃপর তারিক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলে হযরত মালিক আজায়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, প্রি বৎস! নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা
(এখন পাঠ করা) বিদয়াত তথা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
হযরত
ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত তারিক্ব বিন আশীম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীদের মধ্যে অন্যতম একজন ছাহাবী ছিলেন।
(ফতহুল ক্বাদীর ১ম খ-,
৩৭৭ পৃষ্ঠা)
এছাড়াও
নুরুল ঈযাহ কিতাবের ৯৪ পৃষ্ঠায় আরো বলঅ হয়েছে যে, আমাদের হানাফী মাযহাবে শুধুমাত্র
বিতর নামাযে দোয়া কুনূত তথা
اللهم
انا نستعينك ...... الى اخرها.
(আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা)
.... থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হয়। এটা ছাড়া অন্য কোন নামাযে কোন প্রকারের দোয়া কুনূত
বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে না। যেমন ইবারত খানা হচ্ছে,
[১০১০-১০১১]
ولا
يقنت فى غير الوتر والفنوت معناه والدعاء وهو ان يقول اللهم انا نستعينك .......
الى اخرها.
অর্থ: “শুধুমাত্র
বিতর নামাযের দোয়া কুনূত ব্যতীত অন্য কোন নামাযে দোয়া কুনূত কিংবা কুনূতে নাযেলা
পাঠ করবেনা, আর নামাযে কুনূতের অর্থই হচ্ছে দোয়া কুনূত যথা اللهم
انا نستعينك. (আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা .... শেষ
পর্যন্ত) এই দোয়া পাঠ করবে। (শরহুন নিকায়া ১ম খ-, ১২৮ পৃষ্ঠা)
“ফতহুল বারী” কিতাবের
২য় খ-ের ৪৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০১২-১০১৬]
وقد روى
مسلم من حديث البراء خحو حديث انس هذا تمسك به الطحاوى فى ترك القنوت فى الصبح قال
لا نهم اجمعوا على نسخه فى المغرب فيكون فى الصبح كذلك انتهى.
অর্থ: “হযরত
ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। অনুরূপভাবে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
থেকেও ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়া সংক্রান্ত হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা
করেন। আর ইমাম আবু জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে
দলীল গ্রহণ করেছেন যে,
ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাজ্য। তিনি বলেন, মাগরিবের
নামাযের কুনূতে নাযেলা মানসুখ তথা রহিত হওয়ার ব্যাপারে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ও ইমামগণ উনাদের যেমন ইজমা হয়েছে অনুরূপভাবে
ফযর নামাযের কুনূতে নাযেলা মানসুখ বা রহিত হওয়ার ব্যাপারেও ইমামগণ উনাদের ইজমা
হয়েছে।” (আল আইনী ২য় খ-,
৫৯৫ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস সারী ২য় খ-, ২৩৪
পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় খ-,
৩৬০ পৃষ্ঠা, শরহে মায়ানিল আছার ১ম খ-, ১৭৭
পৃষ্ঠা)
“আল ফিক্বহুল ইসলামী” কিতাবের
১ম খ-ের ৮১০ পৃষ্ঠায় উল্লেক আছে,
[১০১৭]
واما
القنوت النبى صلى الله عليه وسلم فى الفجر شهرا فهو منسوخ بالاجماع لما روى ابن
مسعود انه عليه السلام قنت فى صلاة الفجر شهرا ثم تركه.
অর্থ: “নিশ্চয়ই
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে শুধুমাত্র একমাস যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন অতঃপর সেই
কুনূতে নাযেলা সকল ইমামগণ উনাদের ঐক্যমতে মানসুখ হয়েছে। কেননা হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে
কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তা বর্জন তথা পরিত্যাগ করেন।”
“আল ফিক্বহুল ইসলামী” কিতাবের
৮১২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১০১৮]
عند ابى
حنيفة ومحمد رحمهما الله وهو الاظهر لا نه منسوخ ولا متابعة فيه.
অর্থ: “ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হচ্ছে অবশ্যই ফযর নামাযের কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে। আর
মানসুখ বা রহিত বর্ণনার উপর ইত্তিবা তথা অনুসরণ করা জায়িয নেই।
“মা’দানুল হক্বায়িক্ব শরহে কানযুদ
দাক্কায়িক্ব” ১ম খ-ের ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০১৯]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “বিতর
নামাযে ছাড়া অন্য কোন নামাযে দোয়া কুনূত কিংবা কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে না। এবং
বিতর নামায ব্যতীত ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠকারীর পিছনেও কোন প্রকারের কুনূত
তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে না। لايقنت الخ. এর ব্যাখ্যায় ফক্বীহগণ ফিক্বাহ শাস্ত্রে বলেন, হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য
অভিমত যে, বিতর নামায ব্যতিত অন্য কোন নামাযে কোন প্রকারের কুনূত নেই। তাই বিতর নামাযের
দোয়া কুনূত ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কোন প্রকার কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
যাবে না। আর আমাদের হানাফী মাযহাবের বক্তব্য হলো ফযরের নামাযে যে কুনূত পাঠের কথা
হাদীছ শরীফ-এ উল্লেক আছে,
মূলত: সেটা হচ্ছে কুনূতে নাযেলা যা মানসুখ হয়েছে। ফলে সেটা
পাঠ করা জায়িয নেই তথা হারাম। কেননা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র
একমাস (আরব গোত্রের প্রতি বদদোয়ায়) ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তা
পাঠ করা পরিত্যাগ তথা বন্ধ করেন। এর পূর্বে এবং পরে তখন থেকে ওফাত মুবারক পর্যন্ত
আর কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। (বাযযার, তাবারানী, ইবনে আবু
শাইবা)
আর স্বয়ং
হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উম্মুল মু’মিনীন
হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। আর
উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আখিরী রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফযর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। হযরত গালিব ইবনে ফারক্বাদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনিও বলেন,
আমি দু’মাস হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
সঙ্গে থেকে পিছনে নামায আদায় করেছি কিন্তু তিনিও ফযর নামাযে কুনূত তথা কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি। (তাবারানী, ইবনে আবি শাইবাহ)
“ফতওয়ায়ে শামী” ২য় খ-ের
৮-৯ পৃষ্ঠায় ‘দুররুল মুখতার’
কিতাবের ইবারতে উল্লেখ আছে,
[১০২৩-১০২৪]
وياتى
الماموم بقنوت الوتر لا الفجر لانه منسوخ.
অর্থ: “কোন
হানাফী মুক্তাদী শাফিয়ী ইমামের পিছনে বিতর নামাযের দোয়া কুনূত পাঠ করবে। কিন্তু
ফযরের নামাযে কুনূতে নাযেলা ঐ ইমামের অনুসরণে পাঠ করবে না। কেননা ফযর নামাযের
কুনূতে নাযেলা মানসুখ তথা বাতিল। (কুনূতে নাযেলা যেহেতু মানসুখ ও বিদয়াত তাই এর উপর
আমল করা জায়িয নেই।)
“রদ্দুল মুহতার” কিতাবের
২য় খ-ের ৪৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০২৫]
انه ليس
له ان يتابعه فى البدعة والمنسوخ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই
বিদয়াত ও মানসুখ বর্ণনার উপর ইত্তিবা বা অনুসরণ করা নাজায়িয তথা হারাম।”
উপরোক্ত
দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, বিতরের
ন্যায় ‘কুনূত’ ফযর নামাযে কখনই ছিলোনা। কাজেই ফযরে বিতরের ন্যায় ‘কুনূত’ ‘মানসুখ’ হয়েছে।
একথা বলা জিহালত ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়।
মূলত:
ফযরে যে কুনূত ছিল তা হচ্ছে ‘কুনূতে নাযেলা।’ আখিরী রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র
একমাস তা পাঠ করেছিলেন। অতঃপর কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ ও অসংখ্য হাদীছ শরীফ উনার
মাধ্যমে তা মানসুখ হয়ে যায়। তাই হানাফী মাযহাব মতে বর্তমানে ফযর নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও হারাম।
অতএব, বিদয়াতীরা
ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে জায়িয প্রমাণ করার জন্য ৩য় যে বক্তব্য পেশ করে
থাকে তাও ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন প্রমাণিত হলো। (অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment