পিডিএফ-
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১৫)
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের
পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও
বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী,
বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায়
বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায়
এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লেখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক
তাই। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা
মায়িদার’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا
اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু
হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” মূলতঃ এই
ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে
দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ
শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে ইহুদীদের
এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা
হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের
এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কেও
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের
প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা
অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী
ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল
দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’
অথচ ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে
দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের
মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন
ইনশাআল্লাহ। তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে
সাধারণ লোক মনে করবে ‘হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’ অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম
করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ
তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ
করার কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে। অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন
ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায
তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূ’র সাথে
নামায আদায় না করা,
হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি
কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর
কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
عن حابر رضى الله تعالى عنه قال قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার
ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির
সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়।
আল্লাহ
পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم
قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان
مقداره الف سنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি
নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে
জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর
হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্
মানাসিক) হাদীছ শরীফের বর্ণনা
মুতাবিক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০
দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব,
এক হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য, ক্বাযা
নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে
ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময়
আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা
করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায়
করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায়
করবেনা আর তওবাও করবে না,
তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে
ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা
হয়েছে। নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার
পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে
হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত
কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। মূলকথা, যারাই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার
মাধ্যমে লা’নত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে
কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার
ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে। কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ
নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও
যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর
ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ
করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া
মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
পূর্ববর্তী
আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার কারণে শহীদকারী রি’ল, য্কাওয়ান, আছিয়্যাহ
ও লিহ্ইয়ান গোত্রগুলোর প্রতি ‘বদ্দোয়া’ করার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস
‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করার পর তা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। যেমন, এ
প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لم يقنت رسول الله صلى الله
عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তা
পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী
শরহে হিদায়াহ ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা)
এ
প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী’ কিতাবের
৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على
رسول الله صلى الله عليه وسلم "ليس لك من الأمر شئ" ....... الخ، فصار
ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর মতে,
যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর উপর ليس لك من الامر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই
(ফজরে কুনূত) পাঠ করা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।” আর ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর
নামাযে ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে “মিশকাত
শরীফের” ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعن ابى مالك الاشجعى قال قلت لابى يا
ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا
بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- “হযরত আবূ মালিক আল্ আশজায়ী
(তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার
পিতাকে একবার বললাম,
হে আমার পিতা! আপনি তো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সাথে,
হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায়
প্রায় পাঁচ বৎসরকাল পর্যন্ত হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে
নামায আদায় করেছেন,
তাঁরা কি কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি উত্তরে
বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস্য! (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (ইবনে
মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা,
ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড) শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে
তাবিয়ীন, তাবে’ তাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি বরং ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত, নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, “মায়ারিফুস
সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وقال ابو حنيفة لا قنوت فيه واليه ذهب
ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن المبارك واليث بن سعد وسفيان الثورى
واحمد واسحاق ويحى بن يحى الاندلسى وذهب اليه من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن
جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আ’যম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কোন
কুনূতই পাঠ করা যাবেনা। এ মতের উপর হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল
আল্লামা মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সকল অনুসরণীয় আছহাবগণের মতে যেমন হযরত ইবনে
মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত লাইছ ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আন্দুলুসী
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবেনা।
অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম
শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর
ইবনে মাইমুনঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম আন্নাখয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা
যাবেনা। এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ তথা ইমামে আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে হানাফী
মাযহাবের সকল বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে
নাযেলা পাঠ করাকে মানসূখ,
নাজায়িয ও বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ
পূর্ববর্তীু সংখ্যায় দেয়া হয়েছে। তবে হ্যাঁ, শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম
শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজর নামাযঞ্জএবং অন্যান্য নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে কুনূতে
নাযেলাকে জায়িয বলেছেন। যা আমাদের হানাফীদের নিকট বিশুদ্ধ বর্ণনা নয়। আর
হানাফীগণের দলীল হচ্ছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত হাদীছ শরীফ। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ফজর নামাযসহ সকল নামাযেই কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। আর হানাফীদের মতে অন্যান্য নামাযে তো নয়ই বরং ফজর
নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।
কাজেই হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার
অর্থই হচ্ছে, শাফিয়ী মাযহাবের মতকে অনুসরণ করা যা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয় বরং সম্পূর্ণ হারাম
ও নাজায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৩/৩৪৪ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
فيكون كل من المذاهب الاربعة حقا بهذا
المعنى فالمقلد اذا قلد اى مجتهد يخرج عن الوجوب ولكن ينبغى ان يقلد احدا التزامه
ولايؤل الى اخر.
অর্থঃ- “যখন চার মাযহাবের প্রত্যেকটিই
হক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হলো,
তাই এ অর্থে মুকাল্লিদের জন্য যে কোন একটি মাযহাবের ইমামকে
অনুসরণ করাও ওয়াজিব। অতএব,
যে ব্যক্তি কোন এক মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করবে সে শুধু
সেটাই আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। অন্য কোন মাযহাবের অনুসরণ করবে না।” এ
প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”
কিতাবের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,
واما الثانى وهو انه اذا التزم الطبعية
يجب عليه ان يدوم على مذهب التزامه ولا ينتقل الى مذهب اخر.
অর্থঃ- “দ্বিতীয়তঃ কোনও মাযহাবকে
প্রকৃতভাবে গ্রহণ করলে দায়িমীভাবে সে মাযহাবেরই অনুসরণ করা ওয়াজিব। তাই এক মাযহাব
পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যাবেনা তথা হারাম। উপরোক্ত দলীলভিত্তিক
আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠলো যে, হানাফীদের জন্য শাফিয়ী বা
অন্যান্য মাযহাবের মাসয়ালার উপর আমল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। যেহেতু
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা শাফিয়ী মাযহাবে জায়িয, কিন্তু তা হানাফী মাযহাবে হারাম
বিদয়াত ও নাজায়িয। তাই হানাফীদের জন্য কুনূতে নাযেলা পাঠ করাও হারাম, নাজায়িয
ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ। কেন না ‘মানসূখ’ হয়ে
যাওয়া কোন আমল নামাযে সম্পাদন করলে যে নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যায় তাতে কারোই
দ্বিমত নেই। যেমন- ইসলামের প্রথম যুগে নামাযের মধ্যে কথা-বার্তা বলা, সালাম
দেয়া ইত্যাদি সবই বৈধ ছিল পরবর্তীতে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা
নামাযে কথা বলার আমল নিষিদ্ধ বা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। ফলে এখন নামাযের মধ্যে কথা বললে হানাফী মাযহাব মতে
তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।’
সুতরাং ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কথা বললে যেরূপ নামায ফাসিদ হয়ে
যায়; ঠিক তদ্রুপ ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলেও নামায ফাসিদ হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে নামাযের মধ্যে কোন নামাযী কথা বললে, মনে মনে
কিংবা উচ্চ আওয়াজে কারো জন্য দোয়া বা বদদোয়া করলে, হাঁচির জবাবের নিয়তে
ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে,
কোন আশ্চর্যজনক সংবাদ শুনে সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুল্লিাহ, লা-ইলাহা
ইল্লাহ কিংবা আল্লাহু আকবার বললে নামায ফাসিদ হবে। সুতরাং কুনূতে নাযেলাও অনুরূপ।
কাজেই পরিস্কারভাবে ফুটে উঠল যে, অবশ্যই কুনূতে নাযেলা পাঠে নামায ফাসিদ হবে। কেননা এটাও
নামাযের বাইরের অংশ এবং এতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চ আওয়াজে নাম ধরে, অন্যের
কল্যাণে এবং অভিশাপে লম্বা দোয়া পাঠ করতে হয়। তাতে কি করে নামায শুদ্ধ হতে পারে? মূলকথা হলো, কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা সম্পুর্ণ নাজায়িয, বিদয়াত, হারাম এবং নামায ফাসিদ ও বাতিল হওয়ার কারণ। এটাই হানাফী
মাযহাবের ফায়সালা এবং চুড়ান্ত ফতওয়া।
(পূর্ব
প্রকাশিতের পর)
ফযরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয বলে ফতওয়া প্রদানকারীদের জিহালতপূর্ণ বক্তব্য
ও তার খ-নমূলক জবাব
৫ম বক্তব্য ও তার খ-নমূলক জবাব :
কুনূতে
নাযেলাকে জায়িয প্রমাণ করতে গিয়ে তারা আরো কয়েকটি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর
বক্তব্যের অবতারণা করে থাকে। তারা বলে ও লিখে থাকে যে, হযরত
খুলাফায়ে রাশিদীন তথা চার খলীফাসহ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ উনারা সকলেই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।”
তাদের
উক্ত কথাও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন
নির্ভরযোগ্য ইবারত বা দলীল উল্লেখ করতে পারেনি এবং পারনবেওনা। বরং তার বিপরীতে
বিশ্বখ্যাত সমস্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, কুনূতে
নাযেলা মানসূখ হয়ে যাওয়ার পর খুলাফায়ে রাশিদীন ও ছাহাবায়ে কিরামগণ কেউই কখনো
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেনি। নি¤েœ তার প্রমাণ স্বরূপ বিশ্ববিখ্যাত
কিতাবের ইবারত উল্লেখ করা হলো।
যেমন এ
প্রসঙ্গে “শরহে মায়ানিল আছার”
নামক কিতাবের ১ম খ-ের ১৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১০১]
قنت
حتى انزل الله تعالى ليس لك من الأمر شئ الخ فترك لذلك ......... القنوت من اصحاب
رسول الله صلى الله عليه وسلم اى انهم لم يفعلوه بعد ترك رسول الله صلى الله عليه
وسلم.
অর্থ: “কুনূতে
নাযেলা যেটা ফযর নামাযে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি পাঠ করতেন। যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ليس
لك من الامر شئ. ‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ পবিত্র
আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করলেন,
তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করলেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই পরিত্যাগের পর ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা আর কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।”
বিশ্বখ্যাত
হাদীছ গ্রন্থ হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “তাহাবী শরীফ”-এর ১ম খ-, ১৭৫
পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১১০২]
ثبت
بما روينا عنه نسخ قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد الركوع ونفى القنوت قبل
الركوع اصلا وان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يفعله ولا خلفاؤه من بعده.
অর্থ: “আমরা
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে যে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছি তা
থেকেই প্রমাণিত আছে যে,
ফযর নামাযে রুকুর পরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন তা মানসুখ
করা হয়েছে এবং রুকুর পূর্বের কুনূতকেও মূলত: নিষেধ করা হয়েছে। আর মানসুখ হয়ে
যাওয়ার পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি এবং খুলাফায়ে রাশিদীনগণ উনারাও উনার পরে কখনো কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি।”
“নাইলুল আওতার” কিতাবের
৩য় খ-ে উল্লেখ আছে,
[১১০৩]
ولاقنت
ابوبكر وعمر رضى الله عليه تعالى عنهما حتى ماتوا.
অর্থ: “হযরত আবূ
বরক ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা
ওফাত মুবারক পর্যন্ত কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।”
ইমাম
তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘শরহে মায়ানিল আছার’ কিতাবের ১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
[১১০৪]
وقد
روينا عن اخرين من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم ترك القنوت فى سائر الدهر.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীগণ উনাদের মধ্য থেকে যাঁরা শেষ
যুগের ছিলেন, উনারা সকলেই সর্ব যুগে সর্বকালেই কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেছিলেন (রাবী বলেন)
সেটাই আমরা বর্ণনা করলাম।”
স্মর্তব্য, বিদয়াতীরা
ফতওয়ায়ে শামীর বরাতে বলে থাকে যে, “আল্লামা হাযিমী বর্ণনা করেছেন খুলাফায়ে রাশিদীন কুনূতে
নাযেলা ফযর নামাযে পাঠ করেছেন। তাদের এ বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং চরম
জিহালতপূর্ণ। কেন না এ বিষয়ে অসংখ্য কিতাবে অসংখ্য বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে
যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্তৃক কুনূতে নাযেলা তরকের তথা মানসুখের
পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা বিশেষ করে হযরত আলী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ অন্যান্য খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ উনাদের কেউই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। যা অসংখ্য বিখ্যাত তাফসীর ও
ফিক্বাহ, ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে।
অতএব, এক্ষেত্রে
শুধুমাত্র হাযিমী-এর একক বর্ণনা কিভাবে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? তাই
বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে হাযিমী-এর উক্ত বক্তব্যকে
রদ করা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে “আল আইনী” কিতাবের ২য় খ-ের ৫৯৫ পৃষ্ঠা, “ফতহুল ক্বাদীর’ কিতাবের
১ম খ-ের ৩৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১০৫-১১০৯]
وقد
صح ابى ما لك سعد بن طارق الاشجعى عن ابيه صليت خلف النبى صلى الله عليه وسلم فلم
يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم يقنت
وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يا بنى انها بدعة رواه النسائى وابن ماجة والترمذى
وقال حديث حسن صحيح ولفظه ولفظ ابن ماجة عن ابى مالك قال قلت لابى ياابت انك قد
صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى بالكوقة نحوا من
خمس سنين اكانو يقنتون فى الفجر قال اى بنى محدث وهو ايضا ينفى قول الحازمى فى ان
القبوت عن الخلفاء الاربعة.
অর্থ: “ছহীহ বা
বিশুদ্ধ সূত্রে হযরত আবূ মালিক সাদ ইবনে তারিক্ব আল আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার পিতা থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। উনার পিতা তারিক্ব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
আমি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে নামায পড়েছি কিন্তু তিনি কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি,
অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার
পিছনেও নামায পড়েছি,
কিন্তু তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার পিছনে নামায পড়েছি, কিন্তু তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি। হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিছনে নামায পড়েছি কিন্তু
তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার পিছনেও
নামায আদায় করেছি কিন্তু তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অতঃপর তারিক্ব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলে হযরত মালিক আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে
উদ্দেশ্যে করে বললেন,
হে বৎস! নিশ্চয়ই ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা এখন
বিদয়াত। হযরত খুলাফায়ে রাশিদ্বীন তথা চার খলীফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন হাযিমীর এ বক্তব্য উল্লেখিত বিশুদ্ধ বর্ণনার মাধ্যমেই রদ
হয়ে গেল।” (নাসায়ী শরীফ,
ইবনে মাজাহ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
হযরত ওমর
ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেই কুনূতে নাযেলাকে বিদয়াত বলেছেন। যেমন
এ প্রসঙ্গে “শরহুন নিকায়া”
কিতাবের ১ম খ-ের ২২৯ পৃষ্ঠায় আছে,
[১১১০-১১১৫]
وعم
عمر رضى الله عنه ذكر القنوت فقال والله انه لبدعة.
অর্থ: “হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একদিন কুনূতে নাযেলা প্রসঙ্গে আলোচনা করে বললেন, মহান
আল্লাহ পাক উনার কসম! অবশ্যই কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত তথা বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ। (হিদায়াহ,
আইনুল হিদায়াহ, আল আইনী, ইবনে
মাজাহ শরীফ, তিরমিযী শরীফ।)
“আছারুস সুনান” ২য় খ-ের
২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১১৬]
وعن
عمران بن الحارث السلمى صليت خلف ابن عباس الصبح فلم يقنت. اسناد الصحيح.
অর্থ: “হযরত
ইমরান ইবনুল হারিছ আস সালামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিছনে জামায়াতে ফযরের
নামায আদায় করেছি,
দেখেছি তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” হাদীছ
শরীফ খানা ছহীহ সনদে বর্ণিত।
“আছারুস সুনান” কিতাবে
উল্লেখ আছে,
[১১১৭-১১১৯]
وعن
سعيد بن جبير رضى الله تعالى عنه قال صليت خلف ابن عمر وابن عباس فكانا لايقنتان
فى صلاة الصبح. وسنده صحيح.
অর্থ: “হযরত
সাঈদ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি হযরত
ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
পিছনে জামায়াতে নামায আদায় করেছি, কিন্তু উনারা দু’জনই ফযরের নামাযে কোনদিনই কুনূত
তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ। (তাহাবী শরীফ, ইলাউস
সুনান)
হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা যুদ্ধ-জিহাদ, বালা-মুছীবতের
সময়ও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এ প্রসঙ্গে ইমাম আবূ জা’ফর
তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “শরহে মায়ানিল আছার” নামক
কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১২০]
قال
ابو جعفر فهذا عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه لم يكن يقنت فى دهره كله وقد
كان المسلمون فى قتال عدوهم فى كل ولاية عمر رضى الله تعالى عنه او فى اكثرها فلم
يكن يقنت لذالك وهذا ابو الدرداء ينكر القنوت وابن الزبير رضى الله تعالى عنه لا
يفعله وقد كان محاربا حينئذ.
অর্থ: “হযরত আবূ
জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সারাজীবনে কুনূতে নাযেলা পড়েননি এবং হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পুরা খিলাফতকালে কিংবা খিলাফতের অধিকাংশ সময়
পর্যন্ত মুসলমানগণ যখন উনাদের শত্রুদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন তখনও উমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর এ কারণেই হযরত আবু দারদা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করতেন এবং হযরত ইবনে
যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যুদ্ধে লিপ্ত থাকাকালীনও কুনূত নাযেলা পাঠ
করেনি।”
“আল আইনী” কিতাবের
২য় খ-ের ৫৯০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়,
[১১২১-১১২৫]
وقال
الطحاوى ثنا ابو داؤد المقدمى ثنا ابو معشر ثنا ابو حمزة عن ابراهيم عن علقمة عن
ابن مسعود قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما
نهى عليهم ترك القنوت وكان ابن مسعود لايقنت فى صلاته به.
ثم
قال فهذا ابن مسعود يخبر ان قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم الذى كان انما كان
من اجل من كان يدعو عليه، وانه قد كان ترك ذلك فصار القنوت منسوخا فلم يكن هو من
بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت وكان احد من روى عنه ايضا عن رسول الله صلى
الله عليه وسلم عبد الله بن عمر رضى تعالى عنه ثم اخبرهم ان الله عز وجل نسخ ذلك
حتى انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم (ليس لك من الا مر شئ اويتوب عليهم او
يعذبهم فانهم ظالمون) 128 ال عمران. فصار ذلك عند ابن عمر منسوخا ايضا فلم يكن هو
يقنت بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان ينكر على من يقنت وكان احد من روى عنه
القنوت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عبد الرحمن بن ابى بكر فاخبر فى حديثه بان
كان يقنت به رسول الله دعاء على من كان يدعو عليه وان الله عزوجل نسخ ذلك بقوله
(ليس لك من الامر شئ او يتوب عليهم او يعذبهم فانهم ظالمون) الاية ففى ذلك ايضا
وجوب ترك القنوت فى الفجر.
অর্থ: “হযরত
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফখানা
বর্ণনা করেছেন হযরত আবু দাউদ আল মাকদামী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের
কাছে হযরত আবু মা’শার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে আবু হামযা
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উনাদের থেকে, তিনি
হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আখিরী
রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘আছিয়্যা
এবং যাকওয়ান’ গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদদোয়ায় কেবল মাত্র একমাস ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেন। অতপর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের প্রতি বদদোয়া করতে নিষেধ করেন তখন
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে
নাযেলা পরিত্যাগ করেন। আর এই নিষেধাজ্ঞার কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অতপর হযরত
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে সংবাদ
দিয়েছেন, যা আখিরী রসূল,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে আছিয়্যা ও যাকওয়ান তাদের প্রতি বদদোয়ায় কিছু সময় কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেন। অতপর অতি শীঘ্রই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা পরিত্যাগ করেন। ফলে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করা মানসুখ হয়ে যায়। আর এ কারণেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু। আখিরী রসূল,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পরিত্যাগের পর আর কখনও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
আর যে
সমস্ত রাবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হাদীছ
শরীফ বর্ণনা করেছেন উনাদের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনিও ছিলেন একজন অন্যতম রাবী। অতঃপর তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণ উনাদের উদ্দেশ্যে সংবাদ দিয়েছেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা
আলে ইমরানের ১২৮নং পবিত্র আয়াত শরীফ ليس لك من
الامر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই”- সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর অবতীর্ণ করে কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ
করেন।
আর এ
পবিত্র আয়াত শরীফ অবতীর্ণের পর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার কাছে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার বিষয়টি আরোও স্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরকের পর আর কখনও কুনূরেত নাযেলা পাঠ
করেননি। বরং তিনি যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন তাকে নিষেধ করতেন।
একইভাবে
যেসব রাবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কুনূতে নাযেলার
হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর ছিদ্দীক্ব
আলাইহিস সালাম তিনিও একজন অন্যতম রাবী ছিলেন। তিনিও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুনূতে নাযেলা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফখানা
বর্ণনা করেছেন, যা আরবের আছিয়্যা ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ দোয়ায় একমাস পাঠ করতেন।
অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ليس لك من
الامر شئ الاية. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই” এই
পবিত্র আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণের মাধ্যমে মানসুখ করে দেন। আর এ কারণেই ফযর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব তথা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। (আল বিনায়া ফী শরহিল
হিদায়া ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা,
উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ খ- ৭৩ পৃষ্ঠা, তানযীমুল
আশতাত ২৩৭ পৃষ্ঠা,
শরহে মায়ানিল আছার ১ম ১৭৪, ১৭৫ পৃষ্ঠা)
“মায়ারিফুস সুনান” কিতাবের
৪র্থ খ-ের ১৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,
[১১২৬]
وحديث
ابى مالك الاشجعى فى عدم القنوت فى الفجر عند الخلفاء الراشدين اقوى من كل شئ.
অর্থ: “হযরত আবু
মালিক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, খুলাফায়ে
রাশিদীনগণ উনাদের যুগে ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া হয়নি এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী ও
গ্রহণযোগ্য মত।”
“আছারুস সুনান” ১ম খ-ের
২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১২৭]
وعن
الأسود ان عمر رضى الله تعالى عنه كان لايقنت فى صلاة الصبح، واسناده صحيح.
অর্থ: “হযরত
ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ফযরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ।”
“আছারুস সুনান”-এর ১ম
খ-ের ২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১২৮]
وعن
الأسود انه صحب عمر ابن الخطاب رضى الله تعالى عنه سنين فى السفر والحضر فلم يره
قانتا فى الفجر حتى فارقه.
অর্থ: “হযরত আল
আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব
রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে কয়েক বৎসর সফরে এবং মুকিম অবস্থায় ছিলেন।
কিন্তু উনাকে জীবনের শেষ পর্যন্ত ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়তে দেখেননি।”
হাদীছ
শরীফ-এ আরো উল্লেখ আছে,
[১১২৯]
عن
الاسود قال كان ابن مسعود لايقنت فى شئ من الصلوات الا وتر فانه كان يقنت (فيه)
قبل الركعة اى الركوع (اسناد صحيح).
অর্থ: “হযরত আল
আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুধুমাত্র বিতর নামাযে
রুকুর পূর্বে কুনূত পড়েছেন। তাছাড়া অন্য কোন নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করেননি।
হাদীছ শরীফখানার সনদ ছহীহ।”
(ইলাউস সুনান)
“শরহে যুরক্বানী” ১ম খ-ের
৪৫৬ পৃষ্ঠা এবং “আল আছার”-এর ১ম খ-ের ৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৩০-১১৩১]
اخبرنا
ابو حنيفة عن حماد عن ابراهيم ان ابن مسعود لم يقنت هو ولا احد من اصحابه حتى فارق
الدنيا يعنى فى صلاة الفجر.
অর্থ: “হযরত
ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম হাম্মাদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনাদের থেকে,
তিনি হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা
করেছেন যে, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বয়ং এবং
অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কেউই ফযরের নামাযে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি। এমন কি দুনিয়া থেকে বিদায় হওয়া পর্যন্তও কুনূতে নাযেলা পড়েননি।
এ হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ।”
উপরোক্ত
দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, হযরত
খুলাফায়ে রাশেদীনগণ উনারাসহ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমণ
উনাদের কেউ কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার পর কখনোই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন নাই।
এমনকি যুদ্ধ বিগ্রহ,
বালা-মুছীবতের সময়েও নয়। এত সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকার পরও
তাদের এ কথা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন। বস্তুত: তাদের এ ৫ম
বক্তব্যও সম্পূর্ণই মিথ্যা ও দলীলবিহীন বিহেবে প্রমাণিত হল।
৬ষ্ঠ বক্তব্য ও তার খ-মূলক জবাব :
কুনূতে
নাযেলাকে জায়িয প্রমাণ করতে গিয়ে তারা আরেকটি গোমরাহী ও কুফরীমূলক বক্তব্যের
অবতারণা করে বলে যে,
“হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ও হযরত মুয়াবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেছেন।”
তাদের
উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথম কথা হলো, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই
কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ তাদের বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, হযরত আলী
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ও হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা একজন
অপরজনকে কাফির মনে করতেন। কেননা সমস্ত কিতাবে উল্লেখ আছে এবং তারাও বলে থাকে ও
লিখে থাকে যে, “কুনূতে নাযেলা কাফিরের প্রতি বদদোয়ায় পড়া হতো।” কাজেই প্রমাণিত হলো যে, তাদের
বক্তব্য মুতাবিক হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ও হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা কাফির। নাউযুবিল্লাহ!
মূলত:
উনাদের উপর মিথ্যা ও কুফুরের তোহমত দিয়ে তারা নিজেরাই কাফির হয়েছে। কেননা বুখারী
শরীফ-এ আছে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
[১১৩২]
من
غاظه اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر.
অর্থ: যে
ব্যক্তি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তথা দোষারোপ
করে সে ব্যক্তি কাফির।”
আর
পবিত্র সূরা ফাতাহ ২৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন,
[১১৩৩]
ليغيظبهم
الكفار.
অর্থাৎ
কাফিরেরাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ
পোষণ করে থাকে।”
আর হাদীছ
শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
[১১৩৪]
حب
الصحابة ايمان وبغضهم كفر.
অর্থ:
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মুহব্বত ঈমান এবং উনাদের
বিদ্বেষ পোষণ কুফরী। (কানযুল উম্মাল)
তাদের
উক্ত বক্তব্যের জবাবে দ্বিতীয় কথা হলো, আমরা পূর্বে নির্ভরযোগ্য দলীল
দ্বারা প্রমাণ করেছি যে,
কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যাওয়ার পর খুলাফায়ে রাশেদীনগণ
উনারাসহ ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের কেউ কখনো কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। যেমন “শরহে
যুরক্বানী” ১ম খ-ের ৪৫৬ পৃষ্ঠা,
“আল আছার”-এর ১ম খ-ের ৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৩৫-১১৩৬]
اخبرنا
ابو حنيفة عن حماد عن ابراهيم ان ابن مسعود لم يقنت هو ولا احد من اصحابه حتى فارق
الدنيا فى الفجر يعنى فى صلاة الفجر.
অর্থ: “হযরত
ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম হাম্মাদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনাদের থেকে তিনি হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন
যে, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বয়ং এবং
অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা কেউই ফযরের নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এমন কি দুনিয়া থেকে বিদায় হওয়া পর্যন্তও কুনূতে নাযেলা
পড়েননি। এ হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ।”
যদি তাই
হয়ে থাকে, তবে “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এবং হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।” তাদের
একথা কি করে সত্য ও দলীলভিত্তিক হতে পারে? মূলত: তাদের উক্ত বক্তব্য মিথ্যা
ও দলীলবিহীন।
কাজেই
উল্লেখিত নির্ভরযোগ্য দলীর আদিল্লাহর মাধ্যমে প্রমাণিত হল যে, তাদের
৬ষ্ঠ বক্তব্যও সম্পূর্ণ অশুদ্ধ, মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন এবং কুফুরীমূলক হয়েছে।
৭ম বক্তব্য ও তার খ-নমূলক জবাব :
কুনূতে
নাযেলাকে জায়িয করার লক্ষে তারা আরো বলে থাকে যে, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার মতে মুছীবত কালীন সময়ে ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা উত্তম।
এর জবাবে
বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট এবং ধোকাপূর্ণ। কারণ সকল
বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ইমাম আ’যম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চূড়ান্ত মতে ফযর নামাযে কোন প্রকারের কুনূত পাঠ
করা যাবেনা। চাই কুনূতে নাযেলা হোক বা অন্য কোন কুনূত হোকনা কেন। বিশেষ করে কোন
ক্রমেই কুনূতে নাযেলা কাফিরদের সাথে যুদ্ধকালীন সময়ে পাঠ করা যাবেনা। যেহেতু ফযর
নামাযে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে গিয়েছে। আর মানসুখ বিধানের উপর আমল করা জায়িয
নেই। সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয। ইহাই হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমাম আ’যম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চুড়ান্ত ফতওয়া। অনুরূপ ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারও অভিমত। নি¤েœ এ
সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত কিতাবের পৃষ্ঠাসহ ইবারত উল্লেক করা হলো।
যেমন, “মায়ারিফুস
সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৩৭]
وقال
ابو حنيفة لا قنوت فيه واليه ذهب ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن
السبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد واسحاق ويحى بن يحى الاندلسى وذهب اليه
من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس
والزهرى.
অর্থ: “হযরত
ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ফযরের নামাযে কোন কুনূতই পাঠ করা
যাবেনা। এ মতের উপর হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল
আল্লামা মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সকল অনুসরণীয় আছহাবগণ উনাদের মতে যেমন
হযরত ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত লাইছ ইবনে সা’দ
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি, ও হযরত
ইয়াহইয়া ইবনে আন্দুলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মতে ফযরের নামাযে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা যাবেনা। অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণ উনাদের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর ইবনে মায়মুন রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইবরাহীম আননাখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মতে ফযরের নামাযে কোন প্রকার
কুনূত পাঠ করা যাবেনা।
“মায়ারিফুস সুনান”-এর ৪র্থ
খ-, ২৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১১৩৮]
والحديث
حجة لنا فى ترك القنوت فى الفجر وبصرح فيه بانه محدث وصحيح الترمذى واعترف الحافظ
فى التلخيص.
অর্থ: “ফযরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফখানা আমাদের হানাফী
মাযহাবের দলীল এবং এটাও সুস্পষ্ট যে, ফযরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া
বিদয়াত। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই হাদীছ শরীফ উনাকে ছহীহ
বলেছেন এবং হযরত ইমাম হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই মতকেই উনার কিতাব তালখীছে
প্রাধান্য দিয়েছেন।”
এর উপর
ভিত্তি করেই আমাদের হানাফী মাযাহাবের ইমাম-মুজতাহিদ তথা ইমামে আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেকে
হানাফী মাযহাবের সকল বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ফযর নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ,
নাজায়িয ও বিদয়াত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হানাফী
ফিক্বাহের বিশ্বখ্যাত কিতাব আল হিদায়া-এর শরাহ ‘আল আইনী’ কিতাবের
২য় খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৩৯-১১৪০]
ولابى
حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ ..... ولا متابعة فيه اى فى المنسوخ
لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থ: “ইমামে আ’যম, হযরত আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে
অর্থাৎ হানাফী মাযহাব মতে,
ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধান ‘মানসুখ’ হয়ে
গেছে। আর ‘মানসুখ’ বিষয়কে ‘অনুসরণ করা বা এর উপর আমল করা সম্পূর্ণ নাজায়িয তথা হারাম।’ (আইনুল
হিদায়া)
“ছহীহ মুসলিম শরীফ”-এর ১ম খ-, ২৩৭
পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[১১৪১]
وذهب
ابو حنيفة واحمد واخرون الى انه لاقنوت فى الصبح.
অর্থ: “ইমাম আ’যম, হযরত আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং পরবর্তী অপরাপর
সকলের মতে ফযরের নামাযে কোন প্রকার কুনূতই নেই। অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
জায়িয নেই।”
ফযরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার উপর সকল ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের
ইজমা হয়েছে। হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ মতকেই গ্রহণ করেছেন।
যেমন এ
সম্পর্কে ‘নাইনুল আওতার’-এর ২য় খ-, ৩৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৪২-১১৪৭]
تمسك
بهذا الطحاوى فى ترك القنوت فى الفجر قال لانهم اجمعوا على نسخه فى المغرب فيكون
فى الصبح كذلك.
অর্থ: “হযরত
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা তরক করার মতকেই
মজবুতীর সাথে গ্রহণ করেছেন। হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, মাগরিবের
নামাযের কুনূত মানসুখ হওয়ার ব্যাপারে সকল ইমামদের যেমন ইজমা হয়েছে, অনুরূপভাবে
ফযরের নামাযে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইমামদের ইজমা হয়েছে।” (অনুরূপভাবে
‘ফতহুল বারী’ ২য় খ-, ৪৯০ পৃষ্ঠায়,
‘শরহুয যুরকানী’ ১ম খ- ৪৫৭ পৃষ্ঠা, ‘ইরশাদুস
সারী’ ২য় খ-, ২৩৫ পৃষ্ঠা,
‘আল আইনী’ ২য় খ-, ‘যুরকানী শরীফ’ ১০ম খ-, ৪১৮
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।)
আরো
উল্লেখ্য যে, হানাফী ও হাম্বলী মাযহাব মতে বিতর নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কুনূত নেই।
যেমন ‘মুওয়াত্তায়ে মালিক’-এর বিখ্যাত শরাহ “আওজাযুল মাসালিক”-এর ২য় খ-, ৩০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৪৮]
فعلم
بذلك ان الحنفية ولاحنابلة متفقون فى دوام القنوت الوتر دون الصبح.
অর্থ: “জ্ঞাতব্য
বিষয় এই যে, নিশ্চয়ই হানাফী এবং হাম্বলী মাযহাব এ ব্যাপারে এক মত যে, বিতর
নামাযে সর্বদা কুনূত পাঠ করবে। কিন্তু ফযর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করবেনা।”
“বুখারী শরীফ”-এর ১ম খ-, ২৭
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৪৯]
فعند
ابى حنيفة رحمه الله تعالى ليس فى الفجر قنوت اصلا.
অর্থ: “হযরত
ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে ফযরের নামাযে (আছলান) তথা
প্রকৃতপক্ষেই কোন প্রকারের কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা নেই।”
“ই’লাউস সুনান”-এর ৬ষ্ঠ
খ-, ৯৫ পৃষ্ঠায় এবং “শরহে মায়ানিল আছার”
কিতাবের ১ম খন্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১১৫০-১১৫১]
فثبت
بما ذكرنا انه لاينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره قياسا ونظرا على ما
ذكرنا من ذلك، وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.
অর্থ: “হযরত
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে পূর্বের
যে সমস্ত যুক্তিভিত্তিক এবং দলীলভিত্তিক আলোচনা আমরা করেছি, তা থেকে
এটাই প্রমাণিত হলো যে,
যুদ্ধাবস্থায় এবং অন্যান্য সময়েও ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠ করা জায়িয নেই। এটাই ইমাম আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণ উনাদের চুড়ান্ত অভিমত।”
কাজেই “ইমাম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা উত্তম।” তাদের এ
৭ম বক্তব্যও জিহালতপূর্ণ,
ডাহা মিথ্যা ও প্রতারণামূলক বলে প্রমাণিত হলো।
মূলকথা
হলো, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে,
১. হযরত
ছাহাবায়ে কিরামগণ বিশেষ করে খুলাফায়ে রাশেদীনগণ উনাদের কেউ ওফাত মুবারক পর্যন্ত
বহু যুদ্ধ জিহাদ ও বালা-মুছীবতের সময়েও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং এটাকে
বিদয়াত ও নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
২. “হযরত আলী
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ও মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা পরস্পর
পরস্পরের প্রতি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন” একথা বলে এবং ‘নাজায়িয
ও হারামকে জায়িয ও হালাল’
একথা বলে এবং ‘নাজায়িয ও হারামকে জায়িয ও হালাল’ বলে তারা
কাট্টা কুফরী করেছে। আর যে কুফরী করে তার জিন্দেগীর সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যায়।
হজ্জ করে থাকলে হজ্জ বাতিল হয়ে যায়। বিবাহ করে থাকলে স্ত্রী তালাক হয়ে যায়। এদের
পিছনে নামায পড়াতো যাবেই না বরং এ অবস্থায় তওবা না করে মারা গেলে তাদের জানাযা
পড়াও জায়িয হবেনা। ইসলামী খিলাফত থাকলে তাদেরকে তওবার জন্য তিন দিন সময় দেয়া হতো
তিন দিনের মধ্যে তওবা না করলে তাদের শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদ-। এটাই সমস্ত
আক্বাঈদের কিতাবে উল্লেখ আছে। আর এটাই মূলত শরীয়তের ফায়সালা।
৩.
পরবর্তীতে তাবেয়ীন,
তাবে তাবেয়ীন ও ইমাম-মুজতাহিদগণ বিশেষ করে হানাফী মাযহাবের
ইমাম আবু হানীফা,
ইমাম মুহম্মদ ও ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহিম সহ
সকলেই কুনূতে নাযেলা মানসুখ ও নাজায়িয হওয়ার উপর ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেন।
এ ব্যাপারে
বিস্তারিত জানার জন্য নি¤েœাক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহও দেখা যেতে পারে। যেমন, তাফসীরে
আহমদী ১ম খ- ১১২ পৃষ্ঠা,
তাফসীরে তাবারী ৪র্থ খ- ৫৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
জালালাইন ১ম খ- পৃষ্ঠা ৬০,
তাফসীরে হাশিয়ায়ে ছবী, ১ম খ- ১৭৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
ইবনে কাছীর ১ম খ- ৩১৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে কুরতুবী ২য় খ- ১৯৯/২০০/১০১/২০২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
কাসিমী ২য় খ- ১৩৬ পৃষ্ঠা,
তাফসীরে বয়ানুল কুরআন ২য় খ- ৫৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
দ্বিয়াউল কুরআন ১ম খ- ২৭৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাওয়াহিবুর রহমান ২য় খ- ৮২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
রুহুল বয়ান ৪র্থ জি: ৯১ পৃষ্ঠা, তাফসীরে তাসহীল লি উলুমিত তানযীল ১ম খ- ১৫৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
মাওয়ারদী, তাফসীরে হাসান বছরী,
তাফসীরে হক্কানী ৪র্থ খ- ২৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
ইবনে আব্বাস ১ম খ- ২৭৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আবি সুউদ ২য় খ- ৮২-৮৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
মুহাররারুল ওয়াজীয,
তাফসীরে দুররে মানছূর ২য় খ- ৭০-৭১ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ৩য় খ- ৫০ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
মাযহারী ২য় ১৩৫-১৩৬ পৃষ্ঠা,
তাফসীরে কাশশাফ ১ম খ- ২১৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
যাদুল মাছীর ১ম খ- ৩৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বাইযাবী ২য় খ- ২০৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
হাশিয়াতশ শিহাব ৩য় খ- ৬২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে খাযেন ১ম খ- ৪১৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
বাগবী ১ম খ- ৪১৭ পৃষ্ঠা,
তাফসীরে লুবাব ফী উলুমিল কিতাব ৫ম খ- ৫২৮-৫২৯, ৫৩০-৫৩১
পৃষ্ঠা, তাফসীরে সমরক্বান্দী ১ম খ- ৬০৩-৬০৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আল কুরআনিল আযীম ১ম খ-
৬০২-৬০৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাজেদী,
তাফসীরে নাজমুদ দরার ২য় খ- খুলাছাতুল কুরআন, বুখারী
শরীফ ১ম খ- ১১০ পৃষ্ঠা ২নং হাশিয়া, নাসায়ী শরীফ ১ম খ- ১৬৪ পৃষ্ঠা, ইবনে
মাজাহ ১ম খ- ৮৯ পৃষ্ঠা,
আবু দাউদ শরীফ ১ম খ- ২১১ পৃষ্ঠা, তিরমিযী
শরীফ ১ম খ- ১১৪ পৃষ্ঠা,
তুহফাতুল আহওয়াজী ২য় খ- ৫৩ পৃষ্ঠা, মিশকাত
শরীফ ১ম খ- ৪৩২ পৃষ্ঠা,
শরহুয যুরকানী ১ম খ-, নাইলুল আওতার ২য় খ- ৩৫৬ পৃষ্ঠা, আল ফাতহুর রব্বানী ১ম খ- ৩০৯ পৃষ্ঠা, শরহুস সুন্নাহ ২য় খ- ২৪৩ পৃষ্ঠা
আল আইনী ২য় খ- ৫৯৬ পৃষ্ঠা,
মিরকাত শরীফ ৩য় খ- ১৮২ পৃষ্ঠা, তানজীমুল
আশতাত ২য় খ-, মিরয়াতুল মানাজিহ ২য় খ- ৫৯৬ পৃষ্ঠা আশরাফুত তাওজীহ ১৪৪ পৃষ্ঠা, বযলুল
মাযহুদ ২য় খ- ৩৩৩ পৃষ্ঠা,
মায়ারিফুস সুনান ৪র্থ খ- ২৩ পৃষ্ঠা, শরহে
মায়ানিল আছার ১ম খ- ১৭৭ পৃষ্ঠা, ইলাউস সুনান ৬ষষ্ঠ খ- ৮৩ পৃষ্ঠা, আল
হিদায়া ১ম খ- ২৩ পৃষ্ঠা এবং ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, রদ্দুল
মুহতার, দুররুল মুখতার,
কানযুলদ দাকায়িক, বাহরুর রায়িক, ফতহুর
ক্বাদীর, আল আইনী, আইনুল হিদায়া,
ইনায়া, কুনিয়া, বিনায়া, কিফায়া, ফিক্বহুল ইসলামিয়া, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, কিতাবুল
হুজ্জাত, কিতাবুল আছল ইত্যাদি সমস্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহেই হানাফী মাযহাব মতে, কুনূতে
নাযেলা মানসুখ হওয়ার ও ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয, হারাম ও
বিদয়াত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। (চলবে)
0 Comments:
Post a Comment