পিডিএফ-
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১৯)
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের
পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও
বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী,
বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায়
বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায়
এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লেখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক
তাই। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা
মায়িদার’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة
للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু
হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” মূলতঃ এই
ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে
দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ
শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে
ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা
হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের
এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কেও
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের
প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা
অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী
ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল
দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’
অথচ ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে
দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের
মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খণ্ডন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে
যাবেন ইনশাআল্লাহ। তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে সাধারণ লোক মনে করবে ‘হানাফী
মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’
অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা
হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক
ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে
ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে। অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন
ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায
তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূ’র সাথে
নামায আদায় না করা,
হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি
কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর
কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
عن حابر رضى الله
تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার
ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির
সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়।
আল্লাহ
পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى
النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف
سنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি
নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে
জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর
হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্
মানাসিক)
হাদীছ
শরীফের বর্ণনা মুতাবিক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর *
৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব, এক
হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য,
ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায
ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে
আদায় করেছে।
ফরয
নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে
যদি খালিছ তওবা করে,
তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন।
অন্যথায়
তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া
যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে
কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই
হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা
দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে
নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই
রাখেনা। মূলকথা, যারাই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে
যাবে। পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠ করা জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ
করে দেয়ার মাধ্যমে লা’নত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে
কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার
ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে। কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ
নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও
যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর
ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ
করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া
মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত অখ্যাত রাহমানী পয়গামের জিহালতপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর
বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব
বিগত
আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও
ওহাবী, খারিজী ও বিদ্য়াতীরা দীর্ঘদিন ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা বা
বদদোয়ার কুনূত পাঠ করে। সাথে সাথে অখ্যাত রহমানী পয়গাম ডিসেম্বর, ২০০২ সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার জবাবে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে জায়িয বলে ফতওয়া
দেয়া হয়। সঙ্গত কারণেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতের পাঠকদের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত একটি
সুওয়াল আল বাইয়্যিনাত কর্তৃপক্ষের নিকট আসে। মাসিক আল বাইয়্যিনাত এর ফেব্রুয়ারী’
২০০৩ সংখ্যায় রাহমানী পয়গামের বক্তব্য খণ্ডন করতঃ একটি জাওয়াব দেয়া
হয়। উক্ত জাওয়াব পেয়ে তারা সম্পূর্ণ লা-জাওয়াব হয়ে যায়। এর কিছুুদিন পর “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” থেকে একটি
গবেষণালব্ধ ও দলীলভিত্তিক লিফ্লেট সারা দেশে প্রচার করা হয়। যাতে বলা হয়েছে যে,
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনুতে নাযেলা পাঠ করা
বিদয়াত ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ।
“উক্ত লিফলেটের
একটি কপি তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আযীযুল হকের মাদ্রাসার শিক্ষক ঢাকা শাহজাহানপুর
আমতলা মসজিদের তথাকথিত খতীব মুফতী মনছূরুল হক্বের নিকট পৌছানো হয় এবং উক্ত
লিফলেটের জবাব দেয়ার জন্যে বলা হয়। মনছূরুল হক সাতদিনের মধ্যে উক্ত লিফলেটের
জাওয়াব দিবে বলে জানায়।
কিন্তু
দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তার কাছ থেকে উক্ত লিফলেটের কোন জাওয়াব পাওয়া গেলনা।
এরপর মাসিক আল বাইয়্যিনাতের পাঠকগণের পূনঃ পূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মাসিক আল
বাইয়্যিনাতের ১৩২তম সংখ্যা থেকে কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে আরো অধিক দলীল-আদিল্লাহ-এর
ভিত্তিতে আরো বিস্তারিতভাবে ফতওয়া প্রদান করা হয়। যা এখনো অব্যাহত আছে।
উক্ত
ফতওয়া প্রকাশের পর ওহাবী, খারিজী ও বিদয়াতী মৌলভী যারা “ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা” পাঠ করেছিল তারা সাধারণ
জনগণের নিকট জাহিল, গোমরাহ ও বিদয়াতী হিসেবে সাব্যস্ত হয়।
অবস্থা বেগতিক দেখে এবং নিজেদের জিহালতী ও গোমরাহী ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে
প্রকাশিত সুওয়াল, লিফলেট ও ফতওয়া কোনটাই খণ্ডন না করে দীর্ঘ
প্রায় তিন বৎসর পর রাহমানী পয়গাম আগস্ট’ ২০০৫ সংখ্যায়
সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, কারচুপিমূলক
বক্তব্য প্রদান করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইবারত কারচুপি করে ও শাফিয়ী মাযহাবের
মতকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে কুনূতে নাযেলাকে জায়িয করার ব্যর্থ অপপ্রয়াস
চালিয়েছে। তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অত্র সংখ্যা থেকে রাহমানী পয়গামে প্রদত্ত
কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও কারচুপিমূলক
প্রতিটি বক্তব্য ও দলীল খন্ডন করতঃ সঠিক জাওয়াব প্রদান করা হচ্ছে ইনশা আল্লাহ।
যাতে সাধারণ জনগণ পয়গাম গোষ্ঠীর জিহালতী, গোমরাহী, ধোঁকাবাজী, প্রতারণা ও জালিয়াতী সম্পর্কে আরো
সুস্পষ্টভাবে অবগত হতে পারে এবং তাদের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে নিজ ঈমান ও আমলকে
হিফাযত করতে পারে। নিম্নে ধারাবাহিকভাবে রাহমানী পয়গামে প্রদত্ত “কুনূতে নাযেলা” সম্পর্কিত জিহালতপূর্ণ বক্তব্যসমূহকে
পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করে তার বিশুদ্ধতায় ছহীহ দলীলভিত্তিক খণ্ডনমুলক জাওয়াব দেয়া
হলো।
পয়গাম
গোষ্ঠীর মনগড়া বক্তব্য ও দলীল-২
পয়গাম গোষ্ঠী অখ্যাত
রহমানী পয়গাম, আগস্ট-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় মনগড়াভাবে কুনূতে নাযেলাকে জায়িয করতে গিয়ে তার
স্বপক্ষে সর্বপ্রথম দলীল হিসেবে “বুখারী শরীফের” একখানা হাদীছ শরীফের বাংলা অনুবাদ
উল্লেখ করেছে। নিম্নে তাদের উল্লেখিত বাংলা হাদীছখানা হুবহু তুলে ধরা হলো-
“ছহীহ বুখারীতে হযরত আছেম রঃ-এর
সূত্রে বর্ণিত হয়েছে,
তিনি বলেন, আমি আনাছ রাঃকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, কুনূত
রুকুর আগে হবে নাকি রুকুর পরে হবে? তিনি বললেন, কুনূত
রুকুর আগে হবে। হযরত আছেম রাঃ বলেন, আমি বললাম, জনৈক
ব্যক্তি বলেছে যে,
আপনি তা রুকুর পরে পড়ার কথা বলেছেন। প্রতিউত্তরে হযরত আনাছ
রাঃ বলেন, সে মিথ্যা বলেছে। রাসূলুল্লাহ সাঃ মাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পড়তে যেয়ে রুকুর
পরে কুনূত পড়েছেন। হযরত আনাছ রাঃ বলেন, আমার ধারণা কুনূত পড়ার এ আমলটি
তখন হয়েছিলো যখন রাসূলুল্লাহ সাঃ ক্বারীদের একটি দল মুশরিকদের এক সম্প্রদায়ের নিকট
তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কুরআন শিক্ষা দিতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারা
(রাসূলুল্লাহ সাঃ ও তাদের মধ্যকার) চুক্তি ভঙ্গ করে এ সমস্ত ক্বারীদের শহীদ করে
দিয়েছিলো। যে কারণে রাসূল সাঃ তাদের উপর মারাত্মক ভাবে অসন্তুষ্ট হয়ে নামাযে
কুনূতে নাযেলা পড়ে তাদের উপর বদদোয়া করেছিলেন। (বুখারী শরীফ, পৃষ্ঠা
১৩৬, খণ্ড ১)”
পয়গাম
গোষ্ঠীর জিহালতপুর্ণ বক্তব্য ও মনগড়া দলীলের খণ্ডনমূলক জবাব
পয়গাম গোষ্ঠী তাদের বাতিল
মতকে ছাবিত করার তথা কুনূতে নাযেলাকে জায়িয করা লক্ষে পবিত্র “বুখারী
শরীফের” বরাতে বাংলায় যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে তা দ্বারা কুনূতে নাযেলা কখনোই
জায়িয প্রমাণিত হয় না। কেন না উক্ত বর্ণনায় কোথাও একথা উল্লেখ নেই যে, ফজরে দু’ প্রকার
কুনূত ছিল। ১. কুনূতে দায়েমী যা মানসুখ হয়ে গেছে। ২. কুনূতে নাযেলা যা মানসুখ হয়
নাই। তাছাড়া উক্ত বর্ণনার কোথাও একথাও উল্লেখ নেই যে কুনূতে নাযেলার আমল মানসূখ হয়
নাই বা কুনূতে নাযেলার আমল এখনো বহাল আছে। যদি তাই হয়ে থাকে তবে উল্লিখিত বর্ণনা
কি করে তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে গ্রহনযোগ্য হতে পারে?
মূলতঃ “বুখারী
শরীফে” বর্ণিত উল্লিখিত হাদীছ শরীফখানা তাদের বিপক্ষেই দলীল হিসেবে প্রযোজ্য। কারণ
উক্ত হাদীছ শরীফে সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ফজরে শুধুমাত্র কুনূতে নাযেলাই পাঠ করেছেন অর্থাৎ ফজর নামাযে নাযেলা
ব্যতীত অন্য কোন কুনূত বা দায়েমী কুনূত বলতে কোন কুনূত তিনি পাঠ করেননি। সাথে সাথে
এটাও উল্লেখ আছে যে,
তিনি ফজরে কুনূতে নাযেলা মাত্র একমাস পাঠ করেছেন। অর্থাৎ
একমাসের পর তিনি আর কখনোই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন নাই। যেহেতু অন্য বর্ণনায় রয়েছে
শুধুমাত্র একমাস পাঠ করার পর তা মানসুখ হয়ে যায়। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, “বুখারী
শরীফে” বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা কখনোই কুনূতে নাযেলা জায়িয প্রমানিত হয় না বরং
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নিষিদ্ধ হওয়ার কথাই সুস্পষ্টভাবে
প্রমাণিত হয়।
বুখারী
শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফ
নিয়ে
পয়গাম গোষ্ঠীর জালিয়াতী
ও
জিহালতীর প্রমাণ
পয়গাম গোষ্ঠী ভাল ভাবেই
বুঝতে পেরেছে যে,
বুখারী শরীফের উল্লিখিত হাদীছ শরীফে তাদের স্বপক্ষে কোনই
দলীল নেই তাই তারা সাধারণ জনগণকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে উল্লিখিত হাদীছ শরীফের
ইবারত উল্লেখ না করে তার মনগড়া বা মনমত বানানো অনুবাদ উল্লেখ করে চরম জালিয়াতীর
পরিচয় দিয়েছে। সাথে সাথে উক্ত হাদীছ শরীফের মনগড়া ও অশুদ্ধ অনুবাদ উল্লেখ করে চরম
জিহালতীরও পরিচয় দিয়েছে।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের জালিয়াতী ও
জিহালতীগুলো উল্লেখসহ “বুখারী শরীফে”
বর্ণিত উল্লিখিত হাদীছ শরীফখানার আরবী ইবারত ও সঠিক তরজমা
বা অনুবাদ তুলে ধরা হলো-
(১)
তারা বুখারী শরীফের ১ম
খণ্ডের ১৩৬ পৃষ্ঠার (হাদীছ শরীফখানার) যে বাংলা অনুবাদ দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে
সে অনুবাদই মূলতঃ সঠিক হয়নি বরং কয়েকস্থানে মারাত্মক অশুদ্ধ ও মনগড়া অনুবাদ করেছে।
এবং পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেনি যে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে কোন্
নামাযের কোন্ কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো। মূলত: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো বিতির নামাযের কুনূত সম্পর্কে। কেননা, হাদীছ
শরীফখানা উল্লেখ আছে,
বিতির নামাযের বাবে তথা অধ্যায়ে।
কাজেই পরিস্কার বুঝা
যাচ্ছে বিতির নামাযের দোয়ায়ে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো। অত:পর যখন আবার
জিজ্ঞাসা করা হয়েছে রুকুর আগে না পরে? উত্তরে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন,
রুকুর আগে। কারণ, বিতির নামাযে দোয়া কুনূত রুকুর
আগেই পড়তে হয়। আর সেই নিয়মটিই হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন। আবার
যখন হযরত আছেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, অমুক ব্যক্তি আপনার বরাতে আমার
কাছে বর্ণনা করেছেন যে,
আপনি নাকি কুনূত রুকুর পরে পড়ার কথা বলেছেন। জবাবে হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, যে ব্যক্তি বলেছে সে মিথ্যা
বলেছে।
অতএব বুঝা যাচ্ছে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু-এর এরূপ বলার কারণ হলো, যেহেতু হযরত আছেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বিতির নামাযের দোয়ায়ে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করেছিলেন এবং রুকুর আগে না পরে সেটাও জিজ্ঞাসা করায় হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বললেন তা রুকুর আগেই পড়েত হয়। যদিও উদ্বৃত হাদীছ শরীফখানার প্রথমাংশে
কোন্ নামাযের এবং কোন্ কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তা পরিস্কার উল্লেখ নেই।
তবে যেহেতু হাদীছ শরীফখানা বিতির নামাযের অধ্যায়ে এসেছে সেহেতু বুঝার ক্ষেত্রে কোন
অস্পষ্টতা নেই। বরং পরিস্কার ভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, এটা বিতির নামাযের দোয়ায়ে কুনূত
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো।
পরে যখন হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলা হলো অমুক ব্যক্তি আমার কাছে আপনার বরাতে বর্ণনা
করেছেন যে, আপনি রুকুর পরে দোয়া কুনূত পড়তে বলেছেন। তদুত্তরে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বললেন,
সে মিথ্যা বলেছে। এ কথা বলে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু রুকুর পরে বদদোয়ায় ফজর নামাযে একমাস হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন সেই কুনূতে লা’ন-এর কথা উল্লেখ করলেন।
পয়গাম গোষ্ঠীরা হাদীছ
শরীফখানার সিয়াক-সিবাক এবং তরজ তথা পূর্বাপর প্রাসঙ্গিকতা না বুঝার কারণে বিতির
নামাযের রুকুর আগের দোয়ায়ে কুনূতকে ফজরের নামাযের রুকুর পরে বদদোয়ার কুনূতের সঙ্গে
মিলিয়ে দিয়ে বলে থাকে,
ফজর নামাযে দু’প্রকার কুনূত রয়েছে। একটা রুকুর
আগে আর একটি রুকুর পরে।
এবং আরো বলে থাকে, ফজর
নামাযে রুকুর আগের যে দায়িমী কুনূত ছিলো তা মানসূখ হয়েছে এবং ফজর নামাযে রুকুর
পরের বদ দোয়ার কুনূত যেটা একমাস পড়েছিলেন সেটা মানসূখ হয়নি। মূলত: তারা যে হাদীছ
শরীফের মাফহুম সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ তার যথার্থ প্রমাণ এখানে মিলে যায়। অথচ হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যে রুকুর আগের কুনূত দ্বারা বিতির নামাযের দোয়ায়ে
কুনূতকে বুঝিয়েছেন আর রুকুর পরের কুনূত বলতে ফজর নামাযে বদ দোয়ার কুনূতকে বুঝিয়েছেন
তা তাদের মোটেও বোধগম্য নয়।
এ সম্পর্কে পরিস্কারভাবে
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরতুল আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর
বিখ্যাত কিতাব “মিরকাত শরীফের”
৩য় খণ্ডের ১৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
[১৩০২]
عن
علقمة ان ابن مسعود واصحاب النبى صلى الله عليه وسلم كانوا يقنتون فى الوتر قبل
الركوع (وفى رواية قبل الركوع) اى فى الوتر (وبعده) اى فى الصبح وقت قنوت النازلة.
অর্থঃ- “হযরত
আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহু
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণ বিতির নামাযে শুধু দোয়ায়ে কুনূত পড়তেন রুকুর পূর্বেই। অপর এক
বর্ণনায় এসেছে, রুকুর পূর্বে দোয়ায়ে কুনূত পড়তেন অর্থাৎ রুকুর পূর্বেই শুধু বিতির নামাযে
দোয়ায়ে কুনূত পড়তেন। আর পক্ষান্তরে রুকুর পরেও কুনূত পড়েছেন। অর্থাৎ রুকুর পরে যে
কুনূত পড়েছেন সেটা হচ্ছে ফজর নামাযের সময় কুনূতে নাযেলা।
কাজেই উল্লিখিত দলীল
দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, রুকুর পূর্বের কুনূত দ্বারা
উদ্দেশ্য হলো, বিতির নামাযের দোয়ায়ে কুনূত। আর রুকুর পরের কুনূত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুনূতে
লা’ন তথা কুনূতে নাযেলা যা মানসূখ হয়ে গেছে।
(২)
তারা বুখারী শরীফের ১ম
খণ্ডের ১৩৬ পৃষ্ঠার হাদীছ শরীফ খানার যে অনুবাদ করেছে তা সঠিক নয়। বরং তারা ইবারত
কারচুপি ও কাট্ছাট করে অনুবাদ করেছে।
পয়গাম
গোষ্ঠীর ভুল ও মনগড়া অনুবাদ:
(ক)
হযরত আছেম রাঃ-এর সূত্রে
বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
আমি আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, কুনূত
রুকুর আগে হবে নাকি রুকুর পরে হবে? তিনি বললেন, রুকুর
আগে হবে।
ইবারতসহ
সঠিক অনুবাদ:
[১৩০৩]
حدثنا
مسدد قال حدثنا عبد الواحد قال حدثنا عاصم قال سألت انس بن مالك عن القنوت فقال قد
كان القنوت قلت قبل الركوع اوبعده قال قبله.
অর্থঃ- “গ্রন্থকার
(তথা হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমাদের কাছে হযরত মুসাদ্দিদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হযরত আব্দুল ওয়াহিদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হযরত আছেম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। হযরত আছেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে (বিতির নামাযের দোয়া) কুনূত পড়া সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করলাম। অত:পর জবাবে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, অবশ্য
কুনূত (বিত্র নামাযে দোয়ায়ে) রয়েছে। (হযরত আছেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,) আমি
বললাম, কুনূত রুকুর আগে পড়া হবে নাকি পরে? তিনি বললেন, রুকুর
আগে।”
পয়গাম গোষ্ঠীর ভুল ও মনগড়া
অনুবাদ:
(খ)
তাদের উক্ত পত্রিকার ৩৪তম
পৃষ্ঠার ২নং কলাম ২২ নম্বর লাইনের অশুদ্ধ ও মনগড়া অনুবাদ এই যে, ....
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমার
ধারণা ...।
ইবারতসহ সঠিক অনুবাদ:
[১৩০৪]
اره كان بعث قوما.
অর্থঃ- “হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “আমি এটা চাক্ষুস দেখেছি”, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবীদের একটি কাফেলা মুশরিকদের কাছে
পাঠিয়েছিলেন ... ।
নিম্নে পয়গাম গোষ্ঠীর
উল্লিখিত “বুখারী শরীফ”-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফখানার পূর্ণ আরবী ইবারত ও সঠিক অনুবাদ উল্লেখ করা হলো-
“বুখারী শরীফ” এর ১ম
খণ্ডের ১৩৬ পৃষ্ঠায় আছে,
[১৩০৫]
حدثنا
مسدد قال حدثنا عبد الواحد قال حدثنا عاصم قال سالت انس بن مالك عن القنوت فقال قد
كان القنوت قلت قبل الركوع او بعده قال قبله قال فان فلانا اخبرنى عنك انك قلت بعد
الركوع فقال كذب انما قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد الركوع شهرا اراه كان
بعث قوما يقال لهم القراء زهاء مبعين رجلا الى قوم من المشركين دون اولئك وكان
بينهم وبين رسول الله صلى الله عليه وسلم عهد فقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم
شهرا يدعو يدعو عليهم اخبرنا احمد بن يونس قال حدثنا زائدة عن التيمى عن ابى مجلز
عن انس رضى الله تعالى قال قنت النبى صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على رعل
وذكوان.
অর্থঃ- “হযরত
মুসাদ্দাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, হযরত
আব্দুল ওয়াহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, হযরত
আছিম তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমি হযরত আনাস ইবনে মালিক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, কুনূত
অবশ্যই পড়া হত। আমি আরো জিজ্ঞাসা করলাম, রুকূর আগে না পরে? তিনি
বললেন, রুকূর আগেই।
হযরত আছিম রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন, অমুক ব্যক্তি আমাকে আপনার বরাত দিয়ে বলেছেন যে, আপনি বলেছেন, রুকূর
পরে। তখন হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু বলেন, সে ভুল বলেছে তবে হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাস রুকূর পরে একমাস ধরে কুনূত (নাযেলা) পাঠ করেছেন।
আমার জানা মতে, অর্থাৎ আমি যা দেখেছি,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্তরজন ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের একটি দল যাঁদেরকে কুররা (অভিজ্ঞ ক্বারী) বলা হয়
তাঁদেরকে মুশরিকদের একটি ক্বওমের কাছে প্রেরণ করলেন। যারা রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে নাই, তাদের
ব্যতীত অন্যান্যদের অর্থাৎ যারা চুক্তি বা ওয়াদা ভঙ্গ করেছে তাদের প্রতি বদদোয়া
করার লক্ষ্যে কেবলমাত্র একমাস (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। হযরত আছিম
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
যেটা আমাদের কাছে আহমদ ইবনে ইউনুস, তিনি
বলেন, আমাদের কাছে হযরত যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি তাইমিয়ী থেকে, তিনি আবূ
মিজলিয থেকে, তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস ধরে রিল এবং যাকওয়ান
গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদদোয়ায় (ফজরের নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন।” (বুখারী
শরীফ)
বুখারী
শরীফে শুধু এই একটি হাদীছ শরীফ নয়, বরং এ সম্পর্কে আরো বহু হাদীছ শরীফই উল্লেখ আছে
যেমন “বুখারী
শরীফের” ১ম খণ্ডের ১৭৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১৩০৬]
حدثنا
عمرو بن على حدثنا محمد بن فضيل حدثنا عاصم الاحول عن انس رضى الله تعالى عنه قال
قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا حين قتل القراء فما رأيت رسول الله صلى
الله عليه وسلم حزن حزنا قط اشد منه.
অর্থ- “আমর ইবনে
আলী বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন
মুহম্মদ বিন ফুযাইল,
তিনি আবার আছিম
আহওয়াল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা
করেন। তিনি বর্ণনা করেন,
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, বীরে
মাউনার ঘটনায় ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে যখন
(কাফির-মুশরিকরা) শহীদ করেছিল তখন শহীদকারীদের প্রতি বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস পাঠ করেছিলেন।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন,
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আর কখনও আমি
এর চেয়ে অধিক শোকাবহ অবস্থায় দেখিনি।”
“বুখারী শরীফের” ২য়
খণ্ডের ৫৮৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১৩০৭]
وعن
انس بن مالك ان رعلا وذكوان وعصية وبنى لحيان استمدوا رسول الله صلى الله عليه
وسلم على عدو فامدهم بسبعين من الانصار كنا نسميهم القراء فى زمانهم كانوا يحطبون
بالنهار ويصلون بالليل حتى كانوا ببير معونة قتلوهم وغدرو بهم فبلغ النبى صلى الله
عليه وسلم فقنت شهرا يدعو فى الصبح على احياء من احياء العرب على رعل وذكوان وعصية
وبنى لحيان قال انس فقرانا فيهم قرانا ثم ان ذلك رفع بلغوا عنا قومنا انا لقينا
ربنا فرضى عنا وارضانا وعن قتادة عن انس بن مالك حدثه ان نبى الله صلى اله عليه
وسلم قنت شهرا فى صلاة الصبح يدعوا على احياء من احياء العرب على رعل وذكوان وعصية
وبنى لحيان.
অর্থঃ- “হযরত
আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত যে,
রিল, যাকওয়ান, আছিয়্যা
ও বণী লিহ্ইয়ানের লোকেরা শত্রুর মুকাবিলা করার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলে হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্তর জন আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণকে পাঠিয়ে দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করলেন। সে সময়ে আমরা তাঁদেরকে
ক্বারী নামে অভিহিত করতাম। তাঁরা দিনের বেলায় লাকড়ি সংগ্রহ করতেন এবং রাতের বেলায়
নামাযে নিমগ্ন থাকতেন। অবশেষে যেতে যেতে তাঁরা যখন বীরে মাউনার নিকট পৌঁছলেন তখন
মুনাফিকরা (আমির বিন তুফাইল-এর আহবানে চারিগোত্রের লোকেরা) তাঁদের সাথে বিশ্বাস
ঘাতকতা করে এবং পরে তাঁদের সবাইকে শহীদ করে দেয়। এ মর্মান্তিক সংবাদ সাইয়্যিদুনা
হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌঁছলে তিনি একমাস পর্যন্ত
ফজরের নামাযে আরবের কতিপয় গোত্র তথা রিল, যাকওয়ান, আছিয়্যা
এবং বণী লিহইয়ান এর প্রতি বদ্দোয়ার উদ্দেশ্যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, তাঁদের সম্পর্কে আমরা আয়াত শরীফ
পাঠ করতাম। অবশ্য পরে তার তিলাওয়াত রহিত হয়ে যায়। আয়াত শরীফখানা ছিল এই-
بلغوا
عنا قومنا انا قد لقينا بنا فرضى عنا وارضانا.
অর্থাৎ- “আমাদের
ক্বাওমের লোকদেরকে জানিয়ে দিন। আমরা আমাদের প্রভূর সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি
আমাদের প্রতি সন্তুষ্টি হয়েছেন এবং আমরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্টি।” হযরত
ক্বাত্তাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণনা করেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই
আল্লাহ পাক-এর নবী,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরব গোত্রের মধ্য
হতে কয়েকটি গোত্রের প্রতি যথাক্রমে ‘রিল’ ‘যাকওয়ান’ ‘আছিয়্যাহ’ এবং ‘বণী
লিহ্ইয়ান’-এর প্রতি বদদোয়ায় ফজর নামাযে শুধুমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন।”
“বুখারী শরীফের” ২য়
খণ্ডের ৫৮৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১৩০৮-১৩১৮]
حدثنا
ابو معمر قال حدثنا عبد الوارث قال حدثنا عبد العزيز عن انس رضى الله تعالى عنه
قال بعث النبى صلى الله عليه وسلم سبعين رجلا لحاجة يقال لهم القراء فعرض لهم حيان
من بنى سليم رعل وذكوان عند بئر يقال لها بئر معونة فقال القوم والله ما اياكم
اردنا انما نحن مجتازون فى حاجة للنبى صلى الله عليه وسلم فقتلوهم فدعا النبى صلى
الله عليه وسلم عليهم شهرا فى صلاة الغداة وذلك بدء القنوت وما كنا نقنت.
অর্থঃ- “ইমাম
বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে আবূ মু’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা
করেছেন। তিনি বলেন,
আমাদের কাছে হযরত আব্দুল ওয়ারিস রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা
করেছেন। তিনি বলেন,
আমাদের কাছে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক প্রয়োজনে সত্তরজন লোক তথা
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমকে বীরে মাঊনা নামক স্থানে পাঠালেন। যাঁদেরকে
ক্বারী বলা হত। বণী সুলাইম গোত্রের দু’শাখা রিল
ও যাকওয়ান বীরে মাউনা নামক একটি কুপের নিকট তাঁদেরকে আক্রমণ করলে তাঁরা বললেন, আল্লাহ্
পাক-এর কসম! আমরা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমরা তো কেবল মাত্র হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশিত একটি কাজের উদ্দেশ্যে এ পথ দিয়ে যাচ্ছি।
এতদ্বসত্ত্বেও তারা
তাঁদেরকে নির্মমভাবে শহীদ করে ফেলল। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এ মর্মান্তিক সংবাদ জেনে একমাস যাবৎ ফজরের নামাযে তাঁদের তথা ঐ কাফিরদের
প্রতি বদ্দোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। আর এভাবেই তথা এ ঘটনার প্রেক্ষিতে কুনূতে
নাযেলা পড়ার উৎপত্তি শুরু হয়। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এর পূর্বে আমরা কখনও কুনূতে নাযেলা পড়িনি।”
‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কিত
অনুরূপ বর্ণনা নিম্নোক্ত কিতাবসমূহেও রয়েছে। যেমন, মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড ২৩৭ পৃষ্ঠা, তিরমিযী
শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ,
ইবনে মাজাহ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ফতহুল
বারী ২য় খণ্ড, উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ইলাউস্ সুনান ৬ষ্ঠ খণ্ড ৮২ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্
সারী, শরহে ইমাম নববী ৩য় খণ্ড, মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হিদায়া।
স্মর্তব্য যে, আহলে
সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতে
বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফজর নামাযে শুধুমাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম মুশরিকদের প্রতি বদ দোয়ায় একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন। এর আগে এবং
পরে আর কখনই কুনূতে নাযেলা পড়েননি। আর সেটা পড়েছিলেন দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকুর পরে।
রুকুর পূর্বে নয়। একমাস পাঠ করার পর কুনূতে নাযেলার উক্ত আমল মানসুখ হয়ে যায়।
পয়গাম গোষ্ঠীর উল্লিখিত
বুখারী শরীফের ১ম খণ্ডের ১৩৬ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতাংশ হাদীছ শরীফের অনুবাদই তার যথার্থ
প্রমাণ বহন করে এবং উক্ত হাদীছ শরীফখানা আরো প্রমাণ করে যে, বদ দোয়ার
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা ছাড়া অন্য কোন কুনূত ফজর নামাযে ছিলো না।
বুখারী
শরীফেই কুনূতে নাযেলা মানসূখ হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে
উক্ত হাদীছ শরীফখানার
ব্যাখ্যায় বুখারী শরীফের ১ম খণ্ডের ১৩৬ পৃষ্ঠাসহ আরো অনেক স্থানেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ..... কুনুতে
নাযেলা একমাস পড়ার পর তা পরিত্যাগ করেন। ফলে ঐ কুনূতে নাযেলা এর আমল মানসুখ হয়ে
যায়।
যেমন এ প্রসঙ্গে “বুখারী
শরীফ”-এর ১ম খণ্ডের ১৩৬ পৃষ্ঠায় ৬নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে যে,
[১৩১৯]
قال
الكرمانى زمانا يسيرا هذا ما قاله القسطلانى وكذا فى العينى وروى ابو داؤد عن انس
ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه فقوله ثم تركه يدل على ان القنوت فى
الفرائض كان ثم نسخ.
অর্থঃ- “ইমাম
কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কিছু সময় বা মাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন। যা ইমাম
কুসতালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অনুরূপ ‘আইনী’ কিতাবের
মধ্যেও উল্লেখ আছে, হযরত আবু
দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বরাতে বর্ণনা করেন
যে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন। অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ
করেন। অতএব তাঁর পরবর্তী বাণী ثم تركه (ছুম্মা তারাকাহু) ‘অতঃপর
তিনি উহা পরিত্যাগ করেন’
এর দ্বারা এটাই প্রমাণ করে যে, কুনূতে
নাযেলা একমাস ফরয নামাযসমুহে ছিল, অতঃপর পরবর্তীতে তা মানসুখ হয়ে যায়।”
“বুখারী শরীফ”-এর ২য়
খণ্ডের ৫৮৬ পৃষ্ঠায় ১০নং হাশিয়াতেও উল্লেখ আছে,
[১৩২০]
ثم تركه
يدل على ان القنوت فى الفرائض كان ثم نسخ.
অর্থঃ- “অতপর تركه (তারাকাহু) (তিনি কুনুতে নাযেলা
পরিত্যাগ করেছেন) এর দ্বারা এটাই প্রমাণ করে যে, কুনূতে নাযেলা ফরয নামায সমুহে
(একমাস) পড়া হয়েছিল অতঃপর তা মানসুখ হয়ে যায়।”
বুখারী শরীফের বিখ্যাত
ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী’
কিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৩২১]
ان الله
عزوجل نسخ ذالك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم "ليس لك من الامر
شئ" ..... الخ فصار ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.
অর্থঃ- “হযরত
ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতে, যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর
ليس لك
من الامر شئ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই (ফজরে কুনূত) পাঠ করা মানসূখ হয়ে যায়।”
“বুখারী শরীফ”-এর ১ম
খণ্ডের ১১০ পৃষ্ঠায় ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[১৩২২-১৩৪৩]
قد صح
حديث ابى مالك سعيد بن طارق الاشجعى عن ابيه صليت خلف النبى صلى الله عليه وسلم
فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم
يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يا بنى انها بدعة رواه النسائى وابن ماجة و
الترمذى وقال حديث حسن صحيح لفط ابن ماجة عن ابن مالك قال قلت لابى انك قد صليت
خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابن بكر وعمر وعثمان وعلى رضى الله عنهم
بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون فى الفجر قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- “আবূ
মালিক সাঈদ ইবনে তারিক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা
ছহীহ, তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে ফজর নামায পড়েছি কিন্তু তিনি কুনূতে নাযেলা পড়েননি।
হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজর নামায পড়েছি, তিনি
কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে
ফজরের নামায পড়েছি,
তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজরের নামায পড়েছি; তিনি কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত
আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনেও ফজরের নামায পড়েছি; কিন্তু
তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি।
অতঃপর হযরত মালিক আল
আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে তাঁর পিতা লক্ষ্য করে বললেন, হে বৎস!
(কুনূতে নাযেলা মানসূখ হওয়ার পর এখন) এটা পাঠ করা বিদয়াত। এটা নাসায়ী শরীফ, ইবনে
মাজাহ শরীফ এবং তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে।
হযরত ইমাম নাসায়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
এই হাদীছ শরীফখানা হাসান ছহীহ। আর ইবনে মাজাহ-এর ভাষায় হযরত
ইবনে মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আমার
পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
হে আমার পিতা! আপনি তো নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করেছেন, অনুরূপভাবে হযরত আবূ বকর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত
উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে
কুফায় পাঁচ বৎসর নামায আদায় করেছেন তাঁরা কি ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেছিলেন? জবাবে তাঁর পিতা বললেন,
হে বৎস! নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা এখন পাঠ করা (محدث) মুহদাছ তথা নব আবিস্কৃত
হবে অর্থাৎ বিদয়াত হবে।”
(বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ১১০ পৃষ্ঠা ২নং হাশিয়া, নাসায়ী
শরীফ ১ম খণ্ড ১৬৪ পৃষ্ঠা,
ইবনে মাজাহ ১ম খণ্ড ৮৯ পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ
শরীফ ১ম খণ্ড ২১১ পৃষ্ঠা,
তিরমিযী শরীফ ১ম খণ্ড ১১৪ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল
আহওয়াযী ২য় খণ্ড ৫৩ পৃষ্ঠা,
মিশকাত শরীফ ১ম খণ্ড ৪৩২ পৃষ্ঠা, শরহুয্
যুরকানী ১ম খণ্ড,
নাইলুল আওতার ২য় খণ্ড ৩৫৬
পৃষ্ঠা, আল ফতহুল রব্বানী ১ম খণ্ড ৩০৯ পৃষ্ঠা, শরহুস্ সুন্নাহ ২য় খণ্ড ২৪৩
পৃষ্ঠা, আল আইনী ২য় খণ্ড ৫৯৬ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় ১৮২ পৃষ্ঠা, তানযীমুল আশতাত ২য় খণ্ড মিরয়াতুল
মানাজীহ ২য় খণ্ড ২৮৫ পৃষ্ঠা, আশরাফুত তাওযীহ ১৪৪ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ২য় খণ্ড ৩৩৩ পৃষ্ঠা, মায়ারিফুস্
সুনান ৪র্থ খণ্ড ২৩ পৃষ্ঠা,
শরহে মায়ানিল আছার ১ম খণ্ড ১৭৭ পৃষ্ঠা, ইলাউস্
সুনান ৬ষ্ঠ খণ্ড ৮৩ পৃষ্ঠা,
আল হিদায়া ১ম খণ্ড ১৮৪ পৃষ্ঠা, দেরায়া
এর হাশিয়া ১৪৭ নং মুতায়াল্লাক)
পয়গাম
গোষ্ঠী মানসুখ হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে চরম জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয়
দিয়েছে
বুখারী শরীফসহ যে সকল
হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মাস কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেছেন। সে সকল হাদীছ শরীফগুলো মুলতঃ মানসুখ হাদীছ শরীফের অন্তর্ভূক্ত।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের আয়াত শরীফের মাধ্যমে উক্ত আমলকে মানসুখ
করে দেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে “আল
বিনায়া (আইনী) শরহুল হিদায়া” কিতাবের ২য় জিঃ ৫৯০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১৩৪৪-১৩৪৫]
وان
الله عز وجل نسخ ذلك بقوله (ليس لك من الامر شئ) الاية ففى ذلك ايضا وجوب ترك
القنوت فى الفجر.
অর্থঃ “নিশ্চয়ই
আল্লাহ পাক ليس لك من الامر شئ الاية
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার
প্রয়োজন নেই।” (সুরা আল ইমরানের ১২৮ নং) আয়াত শরীফ খানা অবতীর্ণ করার মাধ্যমেই ফজর নামাযের
কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ করেন। ফলে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করাও ওয়াজিব
তথা ফরযের অর্ন্তভূক্ত। (তাহাবী শরীফ)
এ প্রসঙ্গে “বাহরুর
রায়িক্ব শরহে কানযুদ দাক্বায়িক্ব” ১ম খণ্ডের ৪৪ পৃষ্ঠা এবং “শরহুন নিকায়া” ১ম
খণ্ডের ২২৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১৩৪৬-১৩৪৯]
ورواه
بو حنيفة عن حماد عن ابراهيم عن علقمة عن عيد الله ان النبى صل الله عليه وسلم لم
يقنت فى الفجر قط الا شهرا واحدا لم ير قبل ذلك ولا بعده وانما قنت فى ذلك الشهر
يدعوا على ناس من المشركين ولهذا لم يكن انس يقنت فى الصبح كما رواه الطبرانى
بسنده من حديث غالب بن فرقد الطحاوى قال كنت عند انس بن مالك شهرين فلم يقنت فى
صلوة الغدوة وما رواه البخارى ومسلم عن ابى سلمة وسعيد بن المسيب عن ابى هريرة ان
النبى صلى الله عليه وسلم لما رفع راسه من الركعة الثانية قال اللهم انج الوليد بن
الوليد اللهم انج سلمة ابن هشام وفى اخره ثم بلغنا انه ترك ذلك لما نزلت (ليس لك
من الأمر شئ) الاية.
অর্থঃ- “ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
হযরত ইব্রাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে,
তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
থেকে হাদীছ শরীফ খানা বর্ণনা করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন যে,
নিশ্চয়ই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস ফজর নামাযে মুশরিকদের প্রতি
বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন (অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন)। এর পূর্বে এবং পরে আর
কখনও আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে দেখা যায়নি। আর এই কারণেই হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। যেমন হযরত ইমাম
ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সনদে হযরত গালিব ইবনে ফারক্বাদ ত্বহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত আনাস ইবনে মালিক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা-এর পিছনে দুই মাস ধরে নামায আদায় করেছিলাম। দেখেছি তিনি
ফজরের নামাযে কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এটা ছাড়াও বুখারী শরীফ ও মুসলিম
শরীফে হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব
রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে। তাঁরা উভয়ে হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ফজরের নামাযে) দ্বিতীয় রাকয়াতে রুকু থেকে যখন
মাথা মুবারক উঠাতেন তখন দাঁড়িয়ে বলতেন,
اللهم
انج الوليد بن الوليد اللهم انج سلمة بن هشام الى اخره.
“আয় আল্লাহ পাক! ওয়ালীদ ইবনে
ওয়ালীদকে এবং সালামা ইবনে হিশামকে নাযাত দিন এভাবে হাদীছ শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত
পাঠ করতেন। হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, অতঃপর
আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছল যে, কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ, ليس لك من الامر شئ الاية “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।” অবতীর্ণ
হওয়ার পর হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
পরিত্যাগ করেছেন।
“হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের
১ম খণ্ডের ১৪৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১৩৫০-১৩৫২]
وعن
ابى هريرة ان النبى صلى الله عليه وسلم لما رفع راسه من الركعة الثانية من الصبح
قال اللهم انج الوليد الحديث ثم بلغنا انه ترك ذلك لما نزلت ليس لك من الامر شئ
(متفق عليه)
অর্থঃ- “হযরত আবু
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকয়াতে রুকু থেকে
যখন মাথা উত্তোলন করতেন,
তখন দাঁড়িয়ে বলতেন, اللهم انج الوليد ‘আয় আল্লাহ্ পাক! ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদকে নাযাত দান করুন।
অতঃপর আমাদের কাছে বর্ণনা সূত্রে এসে পৌছেছে যে, যখন আল্লাহ পাক ليس
لك من الامر شئ. “এ বিষয়ে
আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।” এই আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ করেন
তখন হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ
করেন। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
শুধু তাই নয় স্বয়ং হুয়ুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই হাদীছ শরীফের মাধ্যমে ফজর নামাযে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেন। ফলে তাঁর পূর্ববর্তী আমল মানসুখ হয়ে যায়।
যেমন এ প্রসঙ্গে “ইবনে
মাজাহ শরীফের” ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৩৫৩-১৩৫৫]
وعن
ام سلمة قالت نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن القنوت فى الفجر.
অর্থঃ- “হযরত
উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্নিত আছে। তিনি বলেন, হযরত
রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে
নিষেধ করেছেন।” (অনুরূপ আল ইলালুল মুতানাহিয়াহ ১ম খন্ড ৪৪১ পৃঃ বযলুল মাজহুদ ২য় জিঃ ৩৩৩ পৃঃ “মিরকাত
শরীফের” ৩য় খণ্ডের ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৩৫৬-১৩৮৭]
وعن
ام سلمة انه عليه السلام نهى عن القنوت فى الصبح.
অর্থঃ- “হযরত
উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়তে নিষেধ
করেছেন।”
(আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে
মাজাহ ৮৯ পৃঃ ফতহুর রব্বানী ৩য় খন্ড ৩১০ পৃষ্ঠা, আল আইনী ২য় খণ্ড ৫৯৩ পৃষ্ঠা, উমদাতুল
ক্বারী ৬ষ্ঠ খণ্ড ৭৩ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী, ইরশাদুস সারী ৩য় খণ্ড ৩৬৬ পৃষ্ঠা, মুযাহিরে
হক্ব ১ম খণ্ড ৪১৫ পৃঃ,
শরহুত তীবী ৩য় খণ্ড ১৫৯ পৃষ্ঠা, আবু দাউদ
শরীফ ১ম খণ্ড ২১১ পৃষ্ঠা,
মিশকাত ১১৩ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম খণ্ড ৫৩ পৃষ্ঠা, নাসায়ী
শরীফ ১ম খণ্ড ১৬৪ পৃষ্ঠা,
মুসলিম শরীফ ২য় খণ্ড ২৩৭ পৃঃ, বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ১৩৬ পৃষ্ঠা, ৬নং
হাশিয়া বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড ৫৮৬ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা, হাশিয়া ১
তানযীমুল আশতাত ১ম খণ্ড ১২৮ পৃষ্ঠা, আল বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া অর্থাৎ
আল আইনী ২য় খণ্ডের ৫৯০ পৃষ্ঠা, শরহুস্ সুন্নাহ ২য় খণ্ড ২৪৩ পৃষ্ঠা, আইনুল
হিদায়া ১ম খণ্ড ৬৮২ পৃষ্ঠা,
শরহে মায়ানিল আছার ১ম খণ্ড ১৭৪-১৭৫ পৃষ্ঠা, নাইলুল
আওতার ২য় খণ্ড ৩৫৮ পৃষ্ঠা,
বযলুল মাজহুদ ২য় খন্ড ৩৩৫ পৃষ্ঠা, মাওয়াহিবুল
লাদুন্ নিয়্যাহ, শরহুয্ যুরকানী ১০ খণ্ড)
উল্লিখিত
আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহের উপর ভিত্তি করেই হানাফী মাযহাবের ইমাম মুজতাহিদগণ
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার আমলকে বিদয়াত ও মানসুখ বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
স্মর্তব্য, এক মাস
পাঠের পর তা পরিত্যাগ তথা মানসুখের কারনে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু পরবর্তীতে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত বলেছেন।
[১৩৮৮]
عن
ابن عمر رضى الله عنه ذكر القنوت فقال والله انه لبدعة ما قنت رسول الله صلى الله
عليه وسلم غير شهر واحد.
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি নিজেই একদিন ফজর নামাযের
কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে আলোচনা করার পর বললেন, আল্লাহ পাক-এর কসম! অবশ্যই ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত। কেননা হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া
সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস ব্যতীত আর কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। (নূরুল হিদায়া
১মখণ্ড১১৭ পৃষ্ঠা।)
“আল ফিক্বহুল ইসলামী” কিতাবের
১ম খণ্ডের ৮১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৩৮৯]
واما
القنوت النبى صلى الله عليه وسلم فى الفجر شهرا فهو منسوخ بالاجماع لما روى ابن
مسعود انه عليه السلام قنت فى صلاة الفجر شهرا ثم تركه.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে
শুধুমাত্র একমাস যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন অতঃপর সেই কুনূতে নাযেলা সকল
ইমামগণের ঐক্যমতে মানসুখ হয়েছে।। কেননা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ফজর নামাযে কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তা বর্জন তথা
পরিত্যাগ করেন।”
“হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলাদ্ দুররিল
মুখতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৮১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১৩৯০]
قوله
لانه منسوخ قال انس رضى الله تعالى عنه قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح
بعد الركوع يدعو على احياء من العرب رعل وذكوان وعصية حين قتلوا القراء وهم سبعون
او ثمانون رجلا ثم تركه لما ظهر عليهم فدل على نسخه.
অর্থঃ- (ফজর নামাযে কুনূতে
নাযেলা মানসুখ সম্পর্কিত বর্ণনা হচ্ছে)ঃ হযরত আনাস রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে রুকুর পর আরবের কতিপয় গোত্র
রিল, যাকওয়ান ও আছিয়্যাহ-এর প্রতি বদ্দোয়ায় শুধুমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেন। আর এটা ঐ সময় পড়েছিলেন যখন তারা সত্তর অথবা আশিজন হাফিযে কুরআন ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদেরকে শহীদ করেছিলো। অতঃপর যখন নিষেধের আয়াত শরীফ
অবতীর্ণ হয়, তখন আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দেন। কাজেই, এ হাদীছ শরীফ খানাই প্রমাণ করে যে
কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে গেছে।”
‘মায়ারিফুস সুনান’ কিতাবের
৪র্থ খণ্ডের ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৩৯১-১৩৯৪]
ولابى
حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ ... ولا متابعة فيه اى فى المنسوخ
لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থঃ- “ইমাম আ’যম হযরত
আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে
নিশ্চয়ই ফজরের নামাযের কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ হয়ে গেছে। আর
মানসুখ বিষয়ের ইত্তিবা বা অনুসরণ করবেনা। কেননা মানসুখ বিষয়ের উপর ইত্তিবা বা
অনুসরণ করা নাজায়িয ও হারাম।” (হিদায়া, আল আইনী, আইনুল হিদায়া ইত্যাদি)
“নাসিখ-মানসুখ সম্পর্কিত ইল্ম না থাকার কারণেই পয়গাম গোষ্ঠী কুনূতে নাযেলা
সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও গোমরাহীমূলক
বক্তব্য
দিয়েছে”
মূলতঃ পয়গাম গোষ্ঠী মাযহাব
ও নাসিখ-মানসুখগত মাসয়ালা মাসায়িল না জানার কারণে মাগরিব নামাযে প্রথম রাকায়াতে
সূরা ফাতিহার পর জোরে বিসমিল্লাহ বলে, এক রাকায়াতে দু’ সূরা পাঠ
করে এবং হানাফী মাযহাব মতে কুনূতে নাযেলা ফজর নামাযে মুছীবতকালীন সময়ে পড়া জায়িয
বলে ফতওয়া দিয়ে যেমন গোমরাহীর মধ্যে নিপতিত হয়েছে। ঠিক অনুরুপভাবে কুরআন শরীফ ও
হাদীছ শরীফের নাসিখ মানসুখ না জানার কারণে মনগড়া ফতওয়া দিয়ে চরম গোমরাহীর পরিচয়
দিয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু এক বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন,
[১৩৯৫]
اتعرف
الناسخ والمنسوخ قال لا قال على رضى الله تعالى عنه هلكت واهلكت.
অর্থঃ- “তুমি কি
নাসিখ এবং মানসুখের পরিচয় করতে পার? বিচারক বললো না, তখন হযরত
আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তুমি নিজেও ধ্বংস তথা ক্ষতিগ্রস্থ
হয়েছো এবং অন্যকেও ক্ষতিগ্রস্থ করেছো।” (নাসিখূল কুরআন ১ম খণ্ড ১০৫ পৃষ্ঠা)
এ সম্পর্কে ‘নাওয়াসিখুল
কুরআন’ নামক কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে যে,
[১৩৯৬]
لذا
كان السلف الصالح يرى معرفة الناسخ والمنسوخ شرطا اهلية المفسر للتفسير و المحدث
للحديث.
অর্থঃ- “এ
কারণে সলফে ছলিহীন তথা প্রথম যুগের
ইমাম-মুজতাহিদগণ,
হাদীছ ও তাফসীর শাস্ত্রবিদগণের জন্য নাসেখ ও মানসূখের
পরিচয়ের জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে শর্তারোপ করেছেন।
উক্ত কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায়
আরো বলা হয়,
[১৩৯৭]
وقد
كان الامام على بن ابى طالب وعبد الله بن عمر وعبد الله بن عباس رضى الله تعالى
عنهم لايرضون لاحد ان يتحدث فى الدين الا اذا كان عارفا عالما بالناسخ والمنسوخ من
القران.
অর্থাৎ- “ইমামুল
মু’মিনীন হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আব্দুল্লাহ্
ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমাগণ এমন ছিলেন যে, দ্বীনের ব্যাপারে কেউ কোন মতামত পেশ করলে তাতে তাঁরা কোন
প্রকার সম্মতি দিতেন না,
তবে হ্যাঁ যদি সে ব্যক্তি পবিত্র কুরআনের নাসেখ ও মানসুখের
ব্যাপারে পরিচয় করতে পারতো এবং জ্ঞান রাখতো, তাহলে তাতে তাঁরা রায় পেশ করতেন।”
এ প্রসঙ্গে “নাওয়াসিখুল
কুরআন” নামক কিতাবের ১৪ ও ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৩৯৮]
فما
ثبت فيه محكما غير منسوخ نفذناه وعملناه وما كان منسوخا منه لم نعمل به.
অর্থঃ- “শরীয়তের
বিধানের মধ্যে মানসূখ ব্যতিত কোন শক্তিশালী দলীলের প্রমাণ পেলে আমরা তা বাস্তবায়িত
করতাম এবং তার উপর আমল করতাম। আর মানসূখ বা মাশ্রূহ কোন বিধান পেলে আমরা এর উপর
আমল করা থেকে বিরত থাকতাম। অর্থাৎ আমরা মানসূখের উপর কোন আমল করতাম না।”
হযরত ইমাম জাওযী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
[১৩৯৯]
المنسوخ
لايعمل به.
অর্থঃ- “মানসূখ
বা মাশ্রূহ এমন একটি বিধান যার উপর কোন আমল করা যাবেনা।” (নাওয়াসিখুল
কুরআন)
বিশ্বখ্যাত কিতাব “শরহুয্
যুরকানী”-এর ১০ম খণ্ডের ৪২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪০০]
لان
العمل بالمنسوخ لا يجوز اتفاقا.
অর্থঃ- “এ
ব্যাপারে সকল ইমামগণ এক মত যে, মানসুখ বিষয়ের উপর আমল করা নাজায়িয তথা হারাম।”
অতএব প্রমাণিত হলো যে, পয়গাম গোষ্ঠী
তাদের বাতিল মতকে ছাবেত করার তথা কুনূতে নাযেলাকে জায়িয করার উদ্দেশ্যে বুখারী
শরীফ থেকে সর্ব প্রথম যে দলীলখানা উল্লেখ করেছে তা দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহন যোগ্য
নয়। কারণ প্রথমতঃ উক্ত হাদীছ শরীফের কোথাও উল্লেখ নাই যে, বর্তমানে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে অথবা কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়নি।
দ্বিতীয়তঃ উক্ত হাদীছ
শরীফখানা হচ্ছে ‘মানসুখ’ অর্থাৎ উক্ত আমল পরবর্তীতে মানসুখ হয়ে গেছে। কাজেই মানসুখ হাদীছ শরীফকে দলীল
হিসেবে উল্লেখ করা চরম জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়।
অতএব, উক্ত
সঠিক ও নির্ভরযোগ্য দলীল ভিত্তিক খণ্ডনমূলক আলোচনার দ্বারা প্রাঞ্জলভাবে ফুটে উঠল
যে, বিশ্বখ্যাত হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কোন অবস্থাতেই কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
নাজায়িয ও হারাম। (অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায়
থাকুন
0 Comments:
Post a Comment