পিডিএফ-
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের
অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে
এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক। তদ্রুপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক
তাই।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র
কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদার’
৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن
اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ-“তোমরা
তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” মূলতঃ এই
ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে
দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ
শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে
ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা
হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের
এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কেও
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের
প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা
অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী
ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল
দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’
অথচ ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে
দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের
মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খণ্ডন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে
যাবেন ইনশাআল্লাহ। তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার
কারণে সাধারণ লোক মনে করবে ‘হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’ অথচ
শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান
বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার
মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে
ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে।
অথচ নামায হচ্ছে,
দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা
যে, নামায তরক করা,
ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে
অবহেলা করা, খুশু-খুযূ’র সাথে নামায আদায় না করা, হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি
কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর
কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
عن
جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين
الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত
জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার
ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির
সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়।
আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من
ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة
ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি নামায তরক করলো,
এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে
ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা
হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের
সমান।” (মাজালিসুল আবরার,
আল্ মানাসিক)
হাদীছ শরীফের বর্ণনা
মুতাবিক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০
দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।)
অতএব, এক
হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য,
ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায
ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে
আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ
করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে
দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা
রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে
কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই
হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা
ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি
ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায়
না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
মূলকথা, যারাই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার
মাধ্যমে লা’নত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া
দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট,
ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা
সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রই
সর্বদা করে যাচ্ছে।
কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে
যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল
ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে
তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী
বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে
উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা
প্রমাণিত হয়েছে যে,
সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার কারণে শহীদকারী রি’ল, য্কাওয়ান, আছিয়্যাহ
ও লিহ্ইয়ান গোত্রগুলোর প্রতি ‘বদ্দোয়া’ করার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্
নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করার পর তা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।
যেমন, এ
প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لم
يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله
ولابعده.
অর্থঃ- “আল্লাহ
পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত
পাঠ করেছেন। অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে
কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩
পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী শরহে হিদায়াহ ২য় খণ্ড ৫৯০
পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের
বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী’
কিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان
الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم "ليس لك من
الأمر شئ .... الخ، فصار ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.
অর্থঃ- “হযরত
ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতে, যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ليس لك من
الامر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছু
করার প্রয়োজন নেই।”
এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই (ফজরে কুনূত) পাঠ করা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।” আর ‘মানসূখ’ হয়ে
যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সময়ে
বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর নামাযে ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে “মিশকাত
শরীফের” ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعن
ابى مالك الاشجعى قال قلت لابى يا ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه
وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال
اى بنى محدث.
অর্থঃ- “হযরত আবূ
মালিক আল্ আশজায়ী (তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার
পিতাকে একবার বললাম,
হে আমার পিতা! আপনি তো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সাথে,
হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায়
প্রায় পাঁচ বৎসরকাল পর্যন্ত হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে
নামায আদায় করেছেন,
তাঁরা কি কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি
উত্তরে বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস্য! (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (ইবনে
মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা,
ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড) শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে
তাবিয়ীন, তাবে’ তাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি বরং ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত, নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, “মায়ারিফুস
সুনান”-এর ৪র্থ খণ্ড,
১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وقال
ابو حنيفة لاقنوت فيه واليه ذهب ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن
المبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد والسحاق ويحى بن يحى الاندلسى وذهب
اليه من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى
وطاؤس والزهرى.
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কোন কুনূতই পাঠ করা যাবেনা। এ মতের উপর
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল আল্লামা মুহম্মদ ইবনে
হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি-এর সকল অনুসরণীয় আছহাবগণের মতে যেমন হযরত ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
লাইছ ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইয়াহইয়া ইবনে
আন্দুলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
যাবেনা। অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর
ইবনে মাইমুনঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম আন্নাখয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা
যাবেনা। এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ তথা ইমামে আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে হানাফী
মাযহাবের সকল বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে
নাযেলা পাঠ করাকে মানসূখ,
নাজায়িয ও বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ
পূর্ববর্তীু সংখ্যায় দেয়া হয়েছে। তবে হ্যাঁ, শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম
শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজর নামায এবং অন্যান্য নামাযে কুনূত বা কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা জায়িয। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে কুনূতে
নাযেলাকে জায়িয বলেছেন। যা আমাদের হানাফীদের নিকট বিশুদ্ধ বর্ণনা নয়। আর
হানাফীগণের দলীল হচ্ছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত হাদীছ শরীফ। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ফজর নামাযসহ সকল নামাযেই কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। আর হানাফীদের মতে অন্যান্য নামাযে তো নয়ই বরং ফজর
নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।
কাজেই হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার
অর্থই হচ্ছে, শাফিয়ী মাযহাবের মতকে অনুসরণ করা যা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয় বরং সম্পূর্ণ হারাম
ও নাজায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৩/৩৪৪ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
فيكون
كل من المذاهب الاربعة حقا بهذا المعنى فالمقلد اذا قلد اى مجتهد يخرج عن الوجوب
ولكن ينبغى ان يقلد احدا التزامه ولايؤل الى اخر.
অর্থঃ- “যখন চার
মাযহাবের প্রত্যেকটিই হক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হলো, তাই এ অর্থে মুকাল্লিদের জন্য যে
কোন একটি মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করাও ওয়াজিব। অতএব, যে ব্যক্তি কোন এক মাযহাবের
ইমামকে অনুসরণ করবে সে শুধু সেটাই আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। অন্য কোন মাযহাবের অনুসরণ
করবে না।” এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”
কিতাবের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,
واما
الثانى وهو انه اذا التزم الطبعية يجب عليه ان يدوم على مذهب التزامه ولا ينتقل
الى مذهب اخر.
অর্থঃ- “দ্বিতীয়তঃ
কোনও মাযহাবকে প্রকৃতভাবে গ্রহণ করলে দায়িমীভাবে সে মাযহাবেরই অনুসরণ করা ওয়াজিব।
তাই এক মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যাবেনা তথা হারাম। উপরোক্ত
দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠলো যে, হানাফীদের
জন্য শাফিয়ী বা অন্যান্য মাযহাবের মাসয়ালার উপর আমল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও
নাজায়িয। যেহেতু কুনূতে নাযেলা পাঠ করা শাফিয়ী মাযহাবে জায়িয, কিন্তু
তা হানাফী মাযহাবে হারাম বিদয়াত ও নাজায়িয। তাই হানাফীদের জন্য কুনূতে নাযেলা পাঠ
করাও হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ। কেন না ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়া
কোন আমল নামাযে সম্পাদন করলে যে নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যায় তাতে কারোই দ্বিমত
নেই। যেমন- ইসলামের প্রথম যুগে নামাযের মধ্যে কথা-বার্তা বলা, সালাম
দেয়া ইত্যাদি সবই বৈধ ছিল পরবর্তীতে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা
নামাযে কথা বলার আমল নিষিদ্ধ বা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। ফলে এখন নামাযের মধ্যে কথা বললে হানাফী মাযহাব মতে
তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।’
সুতরাং ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কথা বললে যেরূপ নামায ফাসিদ হয়ে
যায়; ঠিক তদ্রুপ ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলেও নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।
অনুরূপভাবে নামাযের মধ্যে কোন নামাযী কথা বললে, মনে মনে কিংবা উচ্চ আওয়াজে কারো
জন্য দোয়া বা বদদোয়া করলে,
হাঁচির জবাবের নিয়তে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে, কোন
আশ্চর্যজনক সংবাদ শুনে সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুল্লিাহ, লা-ইলাহা
ইল্লাহ কিংবা আল্লাহু আকবার বললে নামায ফাসিদ হবে। সুতরাং কুনূতে নাযেলাও অনুরূপ।
কাজেই পরিস্কারভাবে ফুটে উঠল যে, অবশ্যই কুনূতে নাযেলা পাঠে নামায ফাসিদ হবে। কেননা এটাও
নামাযের বাইরের অংশ এবং এতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চ আওয়াজে নাম ধরে, অন্যের
কল্যাণে এবং অভিশাপে লম্বা দোয়া পাঠ করতে হয়। তাতে কি করে নামায শুদ্ধ হতে পারে? মূলকথা হলো, কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা সম্পুর্ণ নাজায়িয, বিদয়াত, হারাম এবং নামায ফাসিদ ও বাতিল হওয়ার কারণ। এটাই হানাফী
মাযহাবের ফায়সালা এবং চুড়ান্ত ফতওয়া।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ফজরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয বলে
ফতওয়া প্রদানকারীদের জিহালতপূর্ণ বক্তব্য
ও তার খণ্ডনমূলক জবাব
২য়
বক্তব্য ও তার খণ্ডনমুলক জবাব
বিদ্য়াতীরা ‘কুনুতে
নাযেলাকে’ জায়িয প্রমাণ করার জন্যে কোন কোন সময় নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানাও দলীল হিসেবে
পেশ করে থাকে। যেমন,
“মিরকাত শরীফ” ৩য় খণ্ডের ১৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮১৮]
وعن
انس قال ما زال رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت فى صلاة الصبح حتى فارق الدنيا.
অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে সর্বদা কুনূত পাঠ করতেন এমন কি
ওফাত মুবারক পর্যন্ত।”
তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, আমাদের
হানাফী মাযহাবে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীছ
শরীফখানা দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকেই ছহীহ সনদে ঐ একই প্রসঙ্গে ভিন্নমত বর্ণিত রয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে
ইরশাদ হয়েছে,
[৮১৯-৮২১]
وعن
انس ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه.
অর্থঃ- “হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠের পর ঐ
কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন।” (মিরকাত শরীফ ৩য় খণ্ড ১৮১ পৃষ্ঠা, আবু দাঊদ
শরীফ, নাসায়ী শরীফ) উপরোক্ত হাদীছ শরীফের শেষের অংশ ثم
تركه (তিনি তা
পরিত্যাগ করেন) এর মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে উঠলো যে, কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে। তা
একই রাবী তথা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারাই
প্রমাণিত হলো। আর হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর এ মতটিই ছহীহ ও গ্রহনযোগ্য।
এ ছাড়াও কুনূতে নাযেলা যে
একমাস পড়ার পর মানসূখ হয়ে যায় তা অন্যান্য আরো বহু নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারাও
প্রমাণিত আছে। যেমন এ প্রসঙ্গে “মিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খণ্ডের ১৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত
আছে,
[৮২২-৮২৭]
ثم
نقول فى دفع قبله انه منسوخ كما صرح به المصنف يعنى صاحب الهداية تمسك بما رواه
البزارو ابن ابى شيبة والطبرانى والطحاوى كلهم من حديث شريك القاضى عن ابى حمزة
القصاب عن ابراهيم عن علقمة عن عبد الله ابن مسعود قال لم يقنت رسول الله صلى الله
عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولا بعده. وحاصل تضعيفهم اى
الشافعية.
অর্থঃ- “আমরা
দ্বন্দ্বের সমাধানের র্পূবেই বলেছি (হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রথম
বর্ণিত) অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা পাঠের হাদীছ শরীফখানা মানসুখ হয়েছে। এ ব্যাপারে আল
হিদায়া গ্রন্থকার স্পষ্ট দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন, যেটা বর্ণনা করেছেন হযরত ইমাম
বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইবনু আবী শাইবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁরা
প্রত্যেকেই হযরত শুরাইক আল ক্বাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা
করেছেন। তিনি আবার হযরত আবু হামযা আল ক্বাছছাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
হযরত ইব্রাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে,
তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আখিরী
রসূল, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে
এবং পরে আর কখনও তা পাঠ করেননি। অতএব পরিশেষে এটাই প্রমানিত হলো যে, তাদের
তথা শাফিয়ী মাযহাবের কুনূতে নাযেলার পক্ষে বর্ণিত দলীল দুর্বল।” (শরহু
মায়ানিল আছার ১ম খণ্ড ১৭৫ পৃঃ, তাহাবী শরীফ, বায্যার, তাবারানী, ইলাউস সুনান ইত্যাদি) “কিতাবুল হুজ্জাত” এর ১ম
খণ্ডের ১০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮২৮]
اخبرنا
ابو حنيفة عن حماد عن ابراهيم النخعى ان النبى صلى الله عليه وسلم لم ير قانتا فى
الفجر حتى فارق الدنيا الا فى شهر واحد قنت فيه يدعو على حى من المشركين لم ير
قانتا قبله ولا بعده. وابا بكر رضى الله تعالى عنه لم يرقانتا حتى فارق الدنيا.
অর্থঃ- “ইমাম
মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম হাম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইব্রাহীম নখ্য়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর ওফাত মুবারক পর্যন্ত শুধুমাত্র একমাস
ব্যতীত ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে দেখা যায়নি, আর সেটা
ছিল মুশরিকদের প্রতি বদদোয়ায়। এর পূর্বে ও পরে তাঁর হায়াত মুবারকে আর কখনও কুনূতে
নাযেলা পাঠ করতে দেখা যায়নি। অনূরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুকেও তাঁর ওফাত মুবারক পর্যন্ত কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে দেখা যায়নি।” দ্বিতীয়তঃ
বলতে হয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওফাত মুবারক পর্যন্ত ‘কুনুতে
নাযেলা’ পাঠ করেছেন, বলে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বরাতে যে বর্ণনা পেশ করা হয়, তা সঠিক
নয়। কারণ স্বয়ং হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা
হয়েছিল যে, ‘হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি নাকি বলেছেন? আখিরী
রসূল, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওফাত মুবারক
পর্যন্ত ফজরের নামাযে সর্বদা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।’ তখন তিনি
উত্তরে বললেন, যে বলেছে সে মিথ্যা বলেছে। কেননা আমি বলেছি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পড়েছেন তা
মুশরিকদের প্রতি বদদোয়ায়। সারা জীবন পড়েননি। কেননা তা মানসুখ হয়েছে।” যেমন এ
সর্ম্পকে “মিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খণ্ডের ১৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮২৯-৮৩০]
وعن
عاصم بن سليمان قال قلنا لانس بن مالك ان قوما يزعمون ان النبى صلى الله عليه وسلم
لم يزل يقنت فى الفجر فقال مذبوا انمال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا
واحدا يدعو على احياء من المشركين فهذا عن انس صريح فى مناقضة رواية ابى جعفر عنه
وفى انه منسوخ.
..... قاله صاحب تنقيح التحقيق وانص من ذلك
فى النفى العام ما اخرجه ابو حنيفة عن حمادبن ابى سليمان عن ابراهيم عن علقمة عن
عبد الله بن مسعود ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يقنت فى الفجر قط الا شهرا
واحدا لم ير قبل ذلك وانما قنت فى ذلك الشهر يدعو على ناس من المشركين فهذا لا
غبار عليه ولهذا لن يكن انس نفسه يقنت فى الصبح كما رواه الطبرانى عن غالب بن فرقد
الطحاوى قال كنت عند انس بن مالك شهرين فلم يقنت فى صلاة الغدوة واذا ثبت النسخ.
অর্থঃ- “হযরত
আছিম ইবনে সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত
আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বললাম কতক সম্প্রদায়ের
লোকেরা এরূপ ধারণা করে যে,
হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি সর্বদা
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়েছেন? উত্তরে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তারা
মিথ্যা বলেছে। কেননা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুশরিকদের
প্রতি বদদোয়ায় শুধুমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পড়েছেন। (তাছাড়া সারা জীবনে আর কখনো
পড়েননি)। অতএব, এই হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফখানাই সুস্পষ্ট
এবং যা প্রকাশ্যভাবে হযরত আবু জাফর রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণিত হাদীছ
শরীফের বিপরীত। ফলে হযরত আবু জাফর রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণনা, আখিরী
রসূল, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারাজীবন কুনূতে
নাযেলা পড়েছিলেন তা মানসুখ। ...... আর ‘তানক্বীহুত তাহক্বীক্ব’ গ্রন্থকার
বলেন, বর্জন তথা মানসুখের দ্বারা কুনূতে নাযেলাকে যে নফী বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এ নছ
দ্বারা আমভাবে সকল মানুষের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া প্রযোজ্য। যা হযরত ইমামে আ’যম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
হযরত হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র ফজর নামাযে একমাস ব্যতীত অন্য কোন
সময় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। যা শুধুমাত্র মুশরিকদের প্রতি বদদোয়ায় পাঠ
করেছিলেন। এর পূর্বে ও পরে আর কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অতএব ইহাকে কেহই
অস্বীকার করতে পারবে না। আর এ কারনেই হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজেও
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। যেমন হযরত ইমাম তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি
হযরত গালিব ইবনে ফারকাদ আত তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, আমি দু’মাস ধরে
হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সঙ্গে থেকে তার পিছনে নামায
আদায় করেছি কিন্তু তিনি ফজরের নামাযে কোন দিনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। যেহেতু
কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধান মানসুখ হওয়ার প্রমাণ রয়েছে।”
তৃতীয়ত: বলতে হয় যে, আখিরী
রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই যে শুধু একমাস
কুনূতে নাযেলা পাঠ করে তা তরক করেছেন তা নয়, বরং সাথে সাথে উম্মতদেরকেও কুনূতে
নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। যার ফলে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদয়াত বলে ফতওয়া দেন। যেমন, এ
প্রসঙ্গে “মিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খণ্ডের ১৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[৮৩১]
عن
ام سلمة انه عليه الصلاة والسلام نهى عن القنوت فى الصبح.
অর্থঃ- “হযরত
উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত আছে যে, আখিরী
রসূল, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন।”
“ইবনে মাজাহ”-এর ৮৯
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮৩২-৮৪১]
وعن
ام سلمة قالت نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن القنوت فى الفجر.
অর্থঃ- “হযরত
উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে
নিষেধ করেছেন।” (ফতহুর রব্বানী ৩য় খণ্ড ৩১০ পৃঃ, আল আইনী ২য় খণ্ড ৫৯৩ পৃঃ, তিরমিযী
শরীফ, আবু দাউদ শরীফ,
আল হিদায়া, নাসায়ী শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আল
ইলালুল মুতানাহিয়া,
শরহু নিকাহ)
“শরহুয যারকানী” কিতাবের
১০ম খণ্ডের ৪১৭নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮৪২]
وعن
سعيد بن جبير قال اشهد انى سمعت ابن عباس يقول ان القنوت فى صلاة الفجر بدعة.
অর্থঃ- “হযরত
সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
অবশ্যই আমি শুনেছি, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত।”
“মিরকাত শরীফ”-এর ৩য়
খণ্ড ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮৪৩]
وقد
صح حديث ابى مالك سعد بن طارق الاشجعى عن ابيه فقال صليت خلف النبى صلى الله عليه
وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان
فلم يقنت وصليت خلف على لم يقنت ثم قال يا بنى انها بدعة.
অর্থঃ- “হযরত আবু
মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা হযরত সা’দ ইবনে তারিক আল আশজায়ী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে (ফজর)
নামায পড়েছি কিন্তু তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায পড়েছি তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
অনুরূপভাবে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায আদায় করেছি তিনিও
কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনেও নামায আদায়
করেছি তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনেও
নামায পড়েছি তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অতঃপর তিনি ছেলেকে উদ্দেশ্য করে
বললেন, হে বৎস! এখন কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত।”
“শরহুয্ যারকানী” কিতাবের ১০ খণ্ডের ৪১৭ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ আছে,
[৮৪৪-৮৫৯]
والقنوت
محدث ويحتمل ان يكون مراده انه لم يكن من اول فرض الصلاة وانما حدث بعد الهجرة.
অর্থঃ- “কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত। এ
বক্তব্য দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, ইসলামের প্রথম অবস্থায় তা ফরয
নামাযে ছিলনা, তাই হিজরতের পর কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (আল মুগ্নী ১ম খণ্ড ৭৮৭ পৃষ্ঠা, শরহুয
যারকানী ১০/৪১৬ পৃঃ,
মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবু দাঊদ
শরীফ, নাসায়ী শরীফ,
ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, লুমুয়াত, আশয়াতুল
লুমুয়াত, মিরকাত, তীবী, ফতহুল বারী, উমদাদুল ক্বারী,
ইরশাদুস সারী)
স্মর্তব্য যে, হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত বিদয়াতীদের উল্লিখিত হাদীছ শরীফকে
মুলতঃ শাফিয়ীগণ দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাই তাদের মতে ফজরে কুনূত বা কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা সুন্নত। আর হানাফীগণ বিশেষ করে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ সমূহকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে “ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা”
পাঠ করাকে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে ফতওয়া দেন। আর দ্বন্দ্ব
এড়াতে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ শরীফকে তা’বীলী
অর্থে গ্রহণ করেন। অর্থাৎ হানাফীদের মতে উক্ত হাদীছ শরীফের তা’বীলী
অর্থ হলো “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওফাত মুবারক পর্যন্ত ফজরে طول
القنوت তথা
দীর্ঘ ক্বিরায়াত পাঠ করেছেন” যেমন- এ
প্রসঙ্গে “মিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খণ্ডে উল্লেখ আছে, [৮৬০]
وذهب
بعضهم الى انه يقنت فى الصبح وبه ....... حتى قال الشافعى ان نزلت نزلة بالمسلمين
قنت فى جميع الصلوات وتاول .... ولم يتركه فى الصبح بدليل ماروى عن انس قال مازال
رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت فى صلاة الصبح حتى فارق الدنيا.
অর্থঃ- “কিছু
সংখ্যক ওলামা অর্থাৎ হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর মাযহাব অনুসারীরা
يقنت
فى الصبح অর্থাৎ
ফজর নামাযে কুনূত পড়েছিলেন,
এই হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আর হযরত ইমাম
শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, যখন মুসলমানদের উপর কোন বালা
মুছীবত অবতীর্ণ হবে,
তখন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায সমুহে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে।
তিনি তাবীল তথা ব্যাখ্যা করেছেন যে, বালা মুছীবত যখন দুরীভুত হয় তখন
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য চার
ওয়াক্ত নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু ফজর নামাযে কুনূত ত্যাগ
করেননি। তাঁর দলীল হলো,
مازال
رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت فى الصبح حتى فارق الدنيا.
অর্থঃ- “হুযুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওফাত মুবারক পর্যন্ত ফজর
নামাযে কুনূত পাঠ করেছিলেন।” কাজেই হযরত ইমাম শাফিয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযহাব মতে মুছীবতের সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে আর মুছীবতকালীন
সময় ছাড়া শুধু ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বৈধ।
“তানক্বীহুত্ তাহক্বীক লি আহাদীছিত
তালীক” কিতাবের ১ম খণ্ড ৫২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮৬১]
وان
صح الحديث فهو محمول على انه مازال يطول فى صلاة الفجر فان القنوت لفظ مشترك بين
الطاعة والقيام والسكوت وغير ذلك قال الله تعالى (امن هو قانت اناء اليل) وقال
رسول الله صلى الله عليه وسلم افضل الصلاة طول القنوت.
অর্থঃ- “যদি হযরত
ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আবু জাফর রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর
বর্ণিত হাদীছ শরীফকে বিশুদ্ধ ধরা হয়, তবে উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা ফজর
নামাযে দীর্ঘ ক্বিরায়াত পাঠ করাকেই বুঝাবে। কেননা কুনূত শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক
শব্দ যা আনুগত্য,
দীর্ঘ ক্বিয়াম, নীরবতা ইত্যাদি অর্থে আসে। যেমন
আল্লাহ তায়ালার বাণী (امن هو قانت اناء اليل) আর হযরত রসূলে পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন উত্তম নামায হচ্ছে ঐ নামায, যে
নামাযে দীর্ঘ ক্বিরায়াত পাঠ করা হয়।
“মিরকাত শরীফ”-এর ৩য়
খণ্ডের ১৮২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[৮৬২-৮৬৫]
وعن
انس من رواية ابى جعفر (الرازى) اما على الغلط او على طول القيام فانه يقال عليه
ايضا فى الصحيح عليه الصلاة والسلام افضل الصلاة طول القنوت القيام ولا شك ان صلاة
الصبح اطول الصلوات قياما.
অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বরাত দিয়ে
আবু জাফর রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি কুনূতে নাযেলা প্রসঙ্গে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা
হয়তো অশুদ্ধ। অথবা (ঐ কুনূত দ্বারা) طول القيام. তথা দীর্ঘ ক্বিয়ামকেই
বুঝানো হয়েছে। কেননা বিশুদ্ধ কিতাবে বিশুদ্ধ বর্ণনায় এটাও বলা আছে যে, হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন উত্তম নামায হচ্ছে দীর্ঘ
ক্বিয়ামের নামায। (অর্থাৎঃ লম্বা ক্বিরায়াতের নামায) আর নিঃসন্দেহে সেটা হচ্ছে
ফজরের নামাযে। আর এই ফজর নামায সমূহে তিনি দীর্ঘ ক্বিয়াম করতেন।” (আল
বিনায়া, শরহুল হিদায়া,
নূরুল হিদায়া ফিক্বহুস সুনান ওয়াল আছার ১০৫ পৃষ্ঠা)
“তিরমিযী শরীফ”-এর ১ম
খণ্ডের ৫১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[৮৬৬-৮৭৩]
وعن
جابر قال النبى صلى الله عليه وسلم اى الصلاة افضل قال طول القنوت.
অর্থঃ- “হযরত
জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আালাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল কোন নামায উত্তম? তিনি
জওয়াবে বললেন, طول
القنوت (তুলুল কুনুত)
অর্থাৎ নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়াম করা।” (এখানে قنوت (কুনূত) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে
নামাযে লম্বা ক্বিরায়াত পাঠ করা।) (তানক্বীহু তাহক্বীক্ব আহাদীছুত তালীক্ব ১ম খণ্ড
৫২৯ পৃঃ। অনুরুপ ভাবে আল মুজামুল মুফাহরাস ৫/৪৭৩ পৃঃ, শরহুয
যারকানী ১০/৪১১ পৃঃ,
বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবু দাঊদ
শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ।)
“আল কামুসূল ফিক্বহী” কিতাবের
৩৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮৭৪]
وفى
الحديث افضل الصلاة طول القنوت والمراد طول القيام باتفاق العلماء.
অর্থঃ- “হাদীছ
শরীফে রয়েছে নামাযের মধ্যে উত্তম হল কুনূত দীর্ঘ করা, এর
দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে দীর্ঘ ক্বিয়াম করা। সকল উলামায়ে কিরামগণ এতে একমত পোষণ
করেছেন। আর দীর্ঘ কিয়াম দ্বারা মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দীর্ঘ ক্বিরায়াতে নামায আদায়
কর। যারা ফজর নামাযে কুনূত পড়ার দলীল দিয়ে থাকেন সেই দলীল দ্বারা মুলত ফজরের
নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়াম তথা দীর্ঘ ক্বিরায়াতে নামায পড়ানোকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন- এ প্রসঙ্গে “ফতহুল
ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৭৮ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[৮৭৫]
ما
روى عن عمر رضى الله تعالى عنه ان المراد بالقنوت طول القراءة فى الصلاة.
অর্থঃ- “হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই কুনূত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে
নামাযে দীর্ঘ ক্বিরায়াত পাঠ করা।”
“তাফসীরে কুরতুবী” ৩য়
খণ্ডের ২১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮৭৬-৮৮২]
وقال
عليه السلام افضل الصلاة طول القنوت وقال الربيع القنوت طول اليام ........ وكذلك
اطال القيام والقراءة والدعاء فى الصلاة او اطال الخشوع والسكوت.
অর্থঃ- “হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
উত্তম নামায হল কুনূত দীর্ঘ করার নামায। হযরত রবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
কুনূত-এর অর্থ হলো ক্বিয়ামকে দীর্ঘ করা। অনুরূপভাবে দীর্ঘ
ক্বিয়াম ও ক্বিরাআত অর্থে,
অধিক বিনয় অর্থে এবং অধিক নীরব অর্থে আসে। (তাফসীরে ইবনে
কাঁছীর, রুহুল মায়ানী,
রুহুল বয়ান, জামিউল বয়ান, মাযহারী, জালালাঈন
ইত্যাদি)
“আল আইনী” কিতাবের
২য় খণ্ডের ৫৯২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[৮৮৩]
انه
مازال يطول فى الصلاة فان القنوت لفظ مشترك بين الطاعة والقيام والخشوع والسكوت
وغير ذلك.
অর্থঃ- “হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা নামাযে কিরায়াত দীর্ঘ করতেন।
কেননা কুনূত শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। যেমন আনুগত্য অর্থে, ক্বিয়াম
অর্থে, বিনয় অর্থে, নীরবতা অর্থে এবং অন্যান্য অর্থেও আসে।” “মিরকাত শরীফ”-এর ৩য়
খণ্ডের ১৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৮৮৪-৮৯০]
عنه
عليه الصلاة والسلام افضل الصلاة طول القنوت القيام لاشك ان صلاة الصبح.
অর্থঃ- “হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, উত্তম নামায হলো দীর্ঘ কুনূতের
নামায। অর্থাৎ দীর্ঘ ক্বিয়ামের নামায। নিঃসন্দেহে তা ফজরের নামাযকে বুঝানো হয়েছে।
(নুরুল হিদায়া ১ম খণ্ড ১১৭ পৃঃ, শরহে বিকায়া, হিদায়া, দিরায়া, আইনী, আইনুল
হিদায়া।
কাজেই বলা যায় যে, হযরত আবু
জাফর রাযী ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়ার পক্ষে যে হাদীছ শরীফের বর্ণনা দিয়েছেন, তা হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ছহীহ বর্ণিত হাদীছ শরীফের সম্পুর্ণ খিলাফ। শুধু
তাই নয় আরো অসংখ্য জলীলুল ক্বদর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের
পক্ষ থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ মারফু হাদীছ শরীফেরও খিলাফ। কাজেই উক্ত হাদীছ শরীফ
খানা কুনূতে নাযেলার ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে
গ্রহনযোগ্য নয়। অতএব কুনূতে নাযেলা
প্রসঙ্গে উক্ত হাদীছ শরীফ খানাকে উল্লেখ করা জিহালত বৈ কিছুই নয়। কেননা উক্ত হাদীছ
শরীফে বর্ণিত ‘কুনূত’ দ্বারা طول القيام বা طول القراءة অর্থাৎ দীর্ঘ ক্বিরাআতকেই বুঝানো হয়েছে। মুল কথা হলো স্বয়ং
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলার আমল তরক
করার কারণে এবং উম্মতদেরকে সরাসরী নিষেধ করার ফলে কুনূতে নাযেলার আমল ‘মানসুখ’ হয়ে যায়।
যা বহু নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে।
যেমন- মিরকাত শরীফের ৩য়
খণ্ড ১৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[৮৯১-৯০১]
وعن
انس ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه (رواه ابو داؤد والنسائى)
অর্থঃ- “হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা
পাঠের পর উহা বর্জন তথা পরিত্যাগ করেন। (তানকীহুত্ তাহক্বীক ১ম/৫২৫, আবু দাউদ
শরীফ, নাসায়ী শরীফ,
বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ইবনে
মাজাহ শরীফ, উমদাতুল ক্বারী,
ফতহুল বারী, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ ১০, ইরশাদুস্
সারী)
শুধু তাই নয়, বরং
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে সরাসরী নিষেধও করেছেন।
যেমন- “আত তা’লীক্ব” ১ম খণ্ডের ৫২২ পৃষ্ঠা,
“কিতাবুল হুজ্জাত” ১ম খণ্ডের ১০৫ পৃষ্ঠা, “ইবনে
মাজাহ” কিতাবের ৮৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[৯০২-৯১৪]
وعن
ام سلمة قالت نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن القنوت فى الفجر.
অর্থঃ হযরত উম্মু সালামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত রসূলে পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ
করেছেন। (মিরকাত ৩য় খণ্ড ১৮৩, আবু দাউদ
শরীফ, তিরমিযী শরীফ,
নাসায়ী শরীফ, হিদায়া, শরহুন
নিকায়া, আইনুল হিদায়া লুগাতুল হাদীছ, আল মুজামুল মুফাহরাস ৫ম খণ্ড ৪৭৩ পৃষ্ঠা, আহাদীসুত
তা’লীক্ব ১ম খণ্ড ৫২৩ পৃঃ)
“শরহে মায়ানিল আছার” কিতাবের
১ম খণ্ডের ১৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯১৫]
قنت
حتى انزل الله تعالى ليس لك من الأمر شئ فترك لذلك القنوت ...... من اصحاب رسول
الله صلى الله عليه وسلم اى انهم لم يفعلوه بعد ترك رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “কুনূতে
নাযেলা যেটা (ফজর নামাযে) হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ
করতেন, অতপর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন, যখন আল্লাহ্ পাক তাঁর উপর ليس
لك من الأمر شئ. “এ বিষয়ে
আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই” এই আয়াত শরীফখানা অবর্তীন করেন। আর হযরত রসূলে পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামদ্ধএর এই পরিত্যাগের পর তাঁর ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে আর কেউই কখনও কুনুতে নাযেলা পাঠ করেননি। “তুহফাতুল
আহওয়াযী” কিতাবের ২ম খণ্ডের ৪৩৩ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে,
[৯১৬-৯১৯]
اخرج
الدر قطنى وعبد الرزاق وابو نعيم والحمد والبيهقى والحاكم وصححه وعن انس ان النبى
صلى الله عليه وسلم قنت شهرا يدعو على قاتلى اصحابه بير معونة ثم ترك.
অর্থঃ- “হযরত
দারু ক্বত্নী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুর রায্যাক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু
নাঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি,
আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁরা সকলেই তাদের বিশুদ্ধ কিতাবে ছহীহভাবে
বর্ণনা করেন যে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “বীরে মাউনা” নামক
স্থানে তাঁর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে যারা শহীদ করেছিল সে
সব শহীদ কারীদের প্রতি বদদোয়ায় তিনি কেবল মাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন
অতঃপর উহা পরিত্যাগ তথা বন্ধ করে দেন। অর্থাৎঃ ثم ترك (ছুম্মা তারাকা) দ্বারা কুনূতে
নাযেলা منسوخ. (মানসুখ) তথা রহিত হয়ে যায়। (নাইনুল আওতার ২য়
খণ্ড ৩৫৮ পৃঃ, ফতহুর রব্বানী ১ম খণ্ড ২৯৮ পৃঃ) “মায়ারিফুস সুনান” ৪র্থ
খণ্ডের ১৮ পৃষ্ঠা)
“আল ফাতহুল কাদীর” কিতাবে
উল্লেখ করেন, [৯২০]
ان
قنوت النازلة نسخ.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে।” “নাওয়াসিখুল কুরআন” -এর ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯২১-৯২৩]
والمنسوخ
لا يعمل به.
অর্থঃ- “যা
মানসুখ বা রহিত হয় তার উপর বা তার দ্বারা কোন আমল করা যাবেনা তথা বৈধ নয়। (কিতাবে
নাসিখ ওয়াল মানসুখ,
নাওয়াসিখুল কুরআন)
“আল হিদায়া” কিতাবের
১ম খণ্ডের ১৪৭ পৃষ্ঠায় হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[৯২৪-৯২৫]
عن
ابن عمر انه ذكر القنوت فقال والله انه لبدعة ما قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم
غير شهر واحد.
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি
একদিন কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে আলোচনা করার পর বললেন, আল্লাহ পাক-এর কসম! অবশ্যই কুনূতে
নাযেলা বিদয়াত। কেননা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল মাত্র
একমাস ব্যতীত আর কখনও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। (কিতাবুল হুজ্জাত ১ম খণ্ড ১০০/১০১
পৃঃ)
তাছাড়া ثن
تركه এই হাদীছ
শরীফ খানার মাধ্যমেও কুনূতে নাযেলা পরিত্যাজ্য তথা বতিল হিসেবে পরিগনিত। যেমন এর
ব্যাখ্যায় “মিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খণ্ডের ১৮১ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে,
[৯২৬-৯৩০]
وفى
مسلم اتم من هذا وليس فيه ثم تركه وفى شرح السنة ذهب اكثر اهل العلم الى ان لا
يقنت فى الصلوات لهذا الحديث والذى بعده.
অর্থঃ- মুসলিম শরীফে
বর্ণিত আছেঃ অতঃপর হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা
পরিত্যাগ করেছেন। এই বাণীর তথা এই হাদীছ শরীফের শেষের অংশ দ্বারা পুর্নাঙ্গভাবে
বুঝানো হয়েছে যে,
ফজর নামাযে কুনুতে নাযেলা নেই। (অর্থাৎ মানসুখ হয়েছে) আর
শরহে সুন্নাহ এর মধ্যে রয়েছে অধিকাংশ ইমাম ও মুজতাহিদের মতে- ثم
تركه. অতঃপর
তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন এর পরে এই হাদীছ শরীফের আলোকে সকল ফরয নামাযসমূহে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা যাবেনা তথা নিষেধ। (আলফাদুল হাদীছিন্ নববী, আলমুজাম।)
তিনি শুধুমাত্র একমাস
ব্যতীত জীবনে আর কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। যেমন “তানক্বীহুত্
তাহক্বীক্ব আহাদীছুত তালীক্ব” ১ম খণ্ড ৫২১ পৃষ্ঠায় আছে,
[৯৩১]
عن
سفيان عن عاصم عن انس بن ملك ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يقنت الا شهرا واحدا
حتى مات.
অর্থঃ- “হযরত
সুফিয়ান (ছাওরী) রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আছিম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন,
নিশ্চয়ই হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর
ওফাত মুবারক পর্যন্ত শুধুমাত্র একমাস ব্যতীত আর কখনই কুনূতে নাযেলা (ফজর নামাযে)
পাঠ করেননি।
এ প্রসেঙ্গে বিখ্যাত কিতাব
“ইলাউস্ সুনান”-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৩২]
ان
القنوت فى الفجر منسوخ معناه نسخ اصله.
অর্থঃ- “অবশ্যই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধানটি মানসূখ হয়েছে।” আর
মানসূখের অর্থই হচ্ছে যার মূলেই মানসূখ।
“মারিফুস্ সুনান” ৪র্থ
খণ্ডের ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৯৩৩]
صريح
فى نسخ قنوت النازلة.
অর্থঃ- “এটা
সুস্পষ্ট দলীল যে,
কুনূতে নাযেলা-এর
বিধানটি মানসূখ হয়েছে। “বুখারী শরীফ”-এর ১ম খণ্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
আছে,
[৯৩৪]
عند
ابى حنيفة رحمة الله ليس فى الفجر قنوت اصلا.
অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে আছলান তথা মূলতঃই ফজর নামাযে কোন
প্রকার কুনূত নেই। অর্থাৎ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।” অতএব
প্রমাণিত হল যে, ফজর নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধান রহিত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, যে কোন
নামাযেও কুনুতে নাযেলা পাঠ করা যাবেনা। আর ফজর নামাযে যে কুনূতের কথা বলা হয়েছে তা
দ্বারা নামাযে দীর্ঘ ক্বিরায়াত পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। ফলে কোন দ্বন্দ্ব থাকল না।
এটাই আমাদের হানাফী মাযহাবের চুড়ান্ত ফায়সালা। যেমন এ সর্ম্পকে ফিকাহ-এর
কিতাবসমূহে বিস্তারিত আলোচনা পূর্বেই করা হয়েছে। এর পরেও সংক্ষেপে কিছু আলোচনা
নিম্নে তুলে ধরা হচ্ছে।
“আল হিাদায়া মায়াদ দিরায়া” ১ম
খণ্ডের ১৪৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[৯৩৫-৯৩৮]
لما
روى ابن مسعود رضى الله تعالى عنه انه عليه السلام "قنت فى صلوة الفجر شهرا
ثم ترك" فان قنت الامام فى صلوة الفجر يسكت من خلفه عند ابى حنيفة رح ومحمد
رح ..... ولهما انه منسوخ ولا متابعة فيه.
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত নবী
পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম আরবের কয়েকটি গোত্রের প্রতি বদদোয়ায় কেবলমাত্র
একমাস কুনূতে নাযেলা ফজর নামাযে পাঠ করেন। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ বর্জন তথা
বন্ধ করে দেন। অতএব এখন যদি কোন হানাফী অজানা বশত শাফিয়ী মাযহাবের ইমামের পিছনে
ফজর নামায আদায় করে,
আর শাফিয়ী ইমাম কুনূতে নাযেলা পড়ে বা যে কোন কুনূত পড়ে তখন
হানাফী মুছল্লী চুপ থাকবে। এটাই ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি এর অভিমত। ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা
রহমতুল্লাহি আলইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, যেহেতু
ফজর নামাযের কুনূত,
তথা কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে। আর মানসুখ বিষয়ের প্রতি
ইত্তিবা করা জায়িয নেই তথা হারাম। (আইনুল হিদায়া, নুরুল হিদায়া, আইনী)
আর منسوخ. এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা
হয়েছে যে,
انه
منسوخ لما روينا ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه (عناية)
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
ফজর নামাযের কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা মানসুখ। যেটা আমরা পূর্বেই বর্ণনা করেছি যে, হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মাস ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠের পর উহা পরিত্যাগ তথা বন্ধ করে দিয়েছেন। (অর্থাৎ মানসুখ করে দিয়েছেন)
“আল হিদায়া” কিতাবের
১৪৫ পৃষ্ঠায় لامتابعة এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
[৯৩৯-৯৪০]
والقنوت
فى الوتر مشروع عندنا فيتا بعه بخلاف الفجر فان القنوت فيه كان لنازلة فى زمن
النبى صلى الله عليه وسلم وليس بمشروع فيه فبهذا البيان تبين الفرق بين المسئلتين.
অর্থঃ- বিত্র নামাযে
দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করা আমাদের হানাফীদের নিকট শরীয়ত সম্মত ও গ্রহণযোগ্য। তাই বিত্র
নামাযে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব। কিন্তু এমতটি ফজরের নামাযের কুনূত পাঠের
ব্যতিক্রম অর্থাৎ,
ফজর নামাযের কুনূত পাঠে (শাফিয়ী ইমামকে) ইত্তেবা করা যাবে
না। কেননা অবশ্যই ফজরের নামাযের কুনূতই হচ্ছে কুনূতে নাযেলা। যা হযরত নবী পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় (কেবলমাত্র এক মাস) ছিল পরে তা মানসুখ
হয়েছে। ফলে ফজর নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা শরীয়ত সম্মত নয়। হযরত
শাইখুল ইসলাম আব্দুল হাই রহমতুল্লাহি আলাইহি বিত্র নামাযের দোয়ায়ে কুনূত এবং
কুনূতে নাযেলার উভয় মাসয়ালাকে পৃথক করার জন্যই এভাবে বর্ণনা করেছেন। (দিরায়া)
“আল হিদায়া মায়াদ দিরায়া” ১ম খণ্ড
১৪৫ পৃষ্ঠায় ১৬ ও ১৮নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[৯৪১-৯৪৬]
لان
المصلى اذا كان حنيفة لايقنت وقال ابو اليسر اقتداء الحنفى بشا فعى المذهب غير
جائزلما روى عن ابى حنيفة رحمه الله تعالى ان من رفع يديه عنه الركوع وعند رفع
الراس منه تفسد صلاته وجعل ذلك عملا كثيرا فصلاتهم فاسدة عندنا لايصح الاقتداء بهم
(عناية).
অর্থঃ- “কোন
মুছল্লী যদি হানাফী হয়,
আর ইমাম যদি শাফিয়ী মাযহাবের হয় তখন হানাফী মুক্তাদীগণ ফজর
নামাযে কুনূত ইমামের অনূসরণে পাঠ করবে না। আর ফক্বীহ্ আবুল ইয়াসির রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন হানাফীদের জন্য (কুনূতে নাযেলার ক্ষেত্রে) শাফিয়ী মাযহাবের ইক্তিদা বা
অনুসরণ করা নাজায়িয তথা হারাম। কেননা এ সম্পর্কে ইমামে আ’যম হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে যে, যে
ব্যক্তি রুকু করারঞ্জসময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় দু’হাত উত্তোলন করবে, তার
নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।
আর অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি
আ’মলে কাছীর করবে,
তারও নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অতএব উল্লিখিত বিষয়ে
তাদের ইক্তিদা করা জায়িয নেই। (আইনুল হিদায়া ১ম খণ্ড ৬৮৮ পৃষ্ঠা, ইনায়া, কিতাবুল
হুজ্জাত, মাবসুত, ফতওয়ায়ে কুবরা।)
উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল
ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, বিদয়াতীরা কুনূতে নাযেলাকে জায়িয
করার জন্য হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বরাতে যে হাদীছ শরীফখানা দলীল
হিসেবে পেশ করে থাকে। তা মূলতঃ শাফেয়ী মাযহাবের দলীল। হানাফীদের নিকট উক্ত হাদীছ
শরীফখানা দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়।
কারণ হানাফী মাযহাব মতে ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে
গেছে। বর্তমানে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত ও হারাম এবং নামায ফাসিদ
হওয়ার কারন। যা অসংখ্য হাদীছ শরীফ ও দলীল আদিল্লাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।
(অসমাপ্ত) পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন
0 Comments:
Post a Comment