“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১)


পিডিএফ-

 “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১)

হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াশুরু করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়া এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ            সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।  তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। স্মর্তব্য যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে সূরা মায়িদা৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ-তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।           মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুনাফিক সেজে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লামকে কষ্ট দিয়েছিল, তাঁকে শহীদ করার চক্রান্ত করেছিল। এই ইহুদীরাই মুনাফিকী করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। আর মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল  বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মুতাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট।           বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ওহাবী সম্প্রদায়। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ছূরা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। যেমন, তারা প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত ও হারাম। নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক, কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক, মাযহাব মানার কোন প্রয়োজন নেই, পীর-মুরীদী শরীয়ত বিরোধী প্রথা, মীলাদ ক্বিয়াম করা র্শিক-বিদ্য়াত, শবে বরাত পালন করা বিদ্য়াত, তারাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাঊযুবিল্লাহ) অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা  ফরয।    পক্ষান্তরে উলামায়ে ছূতথা দুনিয়াদার মাওলানারা ছবি, টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, হরতাল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের  জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে।  (নাঊযুবিল্লাহ) অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া।    মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল। বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক তথা নমুনা।           দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা নাজায়িয ও হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে নাজায়িয ও হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।  যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)   উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ছূরা উল্লিখিত বিষয়গুলোর ন্যায় কুনূতে নাযেলাসম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের প্রতি বদ্ দোয়াকরার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি পৃথিবীর অন্যান্য অনেক মুসলিম দেশগুলোতেও মুছল্লীদেরকে প্রতি ফজর নামাযে’ ‘কুনূতে নাযেলাপাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে।             শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যে তারা ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।অথচ কুনূতে নাযেলাসম্পর্কিত ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ,দলীলবিহীনও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খণ্ডন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। তারা কুনূতে নাযেলাকেজায়িয প্রমাণ করার জন্যে একখানা হাদীছ শরীফকে মূল দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে।  যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان.
অর্থাৎ- হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছিয়্যা ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের উপর বদ্ দোয়াকরার লক্ষ্যে একমাস কুনূতে নাযেলাপাঠ করেন।” (শরহে মায়ানিল আছার ১ম জিঃ ১৭৫ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, হিদায়াহ ২য় জিঃ ৫৯০ পৃষ্ঠা)        অথচ যে সকল হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছিলেন। সে সকল হাদীছ শরীফে একথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, ثم تركه. “অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেন।হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে,
لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী শরহে হিদায়াহ ২য় খণ্ড ৫৯০ পৃষ্ঠা) কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে এরপর থেকে ফজরে কুনূত পাঠ করার হুকুম ও আমল মানসূখ বা রহিত হয়ে যায়। যেমন, এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারীকিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس لك من الامر شئ .... الخ فصار ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.
অর্থঃ- হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতে, যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ليس لك من الامر شئ.      এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই (ফজরে কুনূত) পাঠ করা মানসূখ হয়ে যায়।            তাই এ প্রসঙ্গে হিদায়া-এর শরাহ আইনীকিতাবের ২য় খণ্ডের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
ولابى حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ ....... ولامتابعة فيه اى فى المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থঃ- ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে অর্থাৎ হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধান মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। আর মানসূখ বা রহিত বিষয়কে অনুসরণ করা বা এর উপর আমল করা সম্পূর্ণ নাজায়িয বা হারাম।    আর মানসূখ হয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিশ্বখ্যাত কিতাব, “কিতাবুল হুজ্জাত”-এর ১ম খণ্ডের ১০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان ابن مسعود لم يقنت هو ولا احد من اصحابه حتى فارق الدنيا يعنى فى صلوة الفجر سنده صحيح.
অর্থাৎ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ জীবনে কখনো ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেননি।” (তার সনদটি ছহীহ্) (আছার ১ম খণ্ড ৬৭ পৃষ্ঠা)   এ কারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এটাকে বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহবলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
انها بدعة.
অর্থাৎ- ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করা বিদয়াত।” (কুরতুবী, বুখারী, নাসাঈ)  তারা ফতওয়ায়ে দেওবন্দেরবরাত দিয়ে বলে থাকে যে, “হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বালা-মুছীবতের সময় ফজরে কুনূত পড়া জায়িয বলেছেন।   বস্তুতঃ ফতওয়ায়ে দেওবন্দেরউক্ত বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এরূপ কথা বলেছেন। কারণ, তিনি তাঁর বিশ্বখ্যাত কিতাব তাহাবী শরীফে” ‘যুদ্ধাবস্থা বা অন্যান্য সময়েও ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করা জায়িয নেই বলে মত পেশ করেছেন।তাছাড়া যদি তিনি একথা বলেও থাকেন তবে তা ইমাম তাহাবীর একান্তই নিজের যা হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। এ প্রসঙ্গে শরহে মায়ানিল আছার বা তাহাবী শরীফ”-এর ১৮০ পৃষ্ঠায়  কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
لاينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره ...... وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله.
অর্থঃ- যুদ্ধাবস্থা বা অন্যান্য সময়েও ফজর নামাযে কুনুত পাঠ করা জায়িয নয়। এটা হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আযম আবূ হানীফা, ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মত।  তবে ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজরে কুনুত পাঠ করা জায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীরে কুরতুবীকিতাবে উল্লেখ আছে যে,
يقنت فى الفجر دائما فى سائر الصلوات اذا نزل بالمسلمين نازلة قاله الشافعى.
অর্থঃ- যখন মুসলমানদের মধ্যে বিপদ আসবে তখন ফজর নামাযে সর্বদা এমনকি সকল নামাযে কুনুত পাঠ করবে। এটা শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত।  অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ফজরে কুনূত পড়া জায়িয এটা মূলতঃ শাফিয়ী মাযহাবের মত। হানাফী মাযহাবের নয়, বরং হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মতে ফজরে কুনূত পড়া নাজায়িয ও বিদয়াত যদিও যুদ্ধ বা অন্যান্য বালা-মুছীবতের সময় হোকনা কেন। আর হানাফীদের জন্যে শাফিয়ী মাযহাবের অনুসরণ করা নাজায়িয ও হারাম।       এ প্রসঙ্গে তাফসীরে আহমদীকিতাবের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لايجوز الانتقال الى مذهب اخر كذالك لايجوز ان يعمل فى مسئلة على مذهب وفى اخرى على اخر.
অর্থঃ- এক মাযহাবের অনুসারীর মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যেরূপ জায়িয নেই; তদ্রুপ এক মাযহাব অনুসারীর জন্য অন্য মাযহাবের মাসয়ালা আমল করাও জায়িয নেই।” “তাফসীরে আহমদীকিতাবের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,
لايجوز للحنفية لعمل على مذهب الشافعى.
অর্থঃ- হানাফীদের জন্য শাফিয়ী মাযহাবের (মাসয়ালার উপর) আমল করা নাজায়িয তথা হারাম।         উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন- একথা যেরূপ সত্য তদ্রুপ পরবর্তীতে তা মানসূখ হয়ে যাওয়ায় তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে তিনি এবং তাঁর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কখনো ফজরে কুনূত পাঠ করেননি বরং এটাকে বিদ্য়াত বলে রায় দিয়েছেন- এটাও সত্য।       

দাজ্জালে কায্যাব, ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ছূরা অর্ধেক উল্লেখ করেছে আর অর্ধেক উল্লেখ করেনি। অথবা অর্ধেক জানে আর অর্ধেক জানেনা। আর এ ধরণের লোকদেরকেই বলে নীম মোল্লা বা আধা মৌলভী।এরা দ্বীনের ব্যাপারে মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদার জন্য অত্যন্ত ভয়ানক।             এ প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয় যে, “এক লোকের শরীরে একটি বাগী বা ফোঁড়া হয়, সে চিকিৎসার জন্যে গ্রাম্য এক ডাক্তারের নিকট যায়। ডাক্তার চিকিৎসা স্বরূপ লোহা গরম করে উক্ত বাগী বা ফোঁড়াতে দাগা দিয়ে দেয়। রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ীতে চলে যায়, কিন্তু রোগীর অবস্থা ক্রমেই মারাত্মক আকার ধারণ করে। এ অবস্থা দেখে রোগীর আত্মীয়-স্বজন ডাক্তারের নিকট এসে বলে- হে ডাক্তার সাহেব আপনি রোগীর কেমন চিকিৎসা করলেন যে, রোগী মরে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। আর আমরা এমন চিকিৎসাও কখনো দেখিনি যে, বাগী হলে, লোহা গরম করে দাগা দিতে হয়। একখা শুনে ডাক্তার সাহেব রাগাম্বিত হয়ে বলে উঠে- কেন, আমি কি বই না পড়ে চিকিৎসা করেছি? কাজেই আমার চিকিৎসা ঠিকই আছে। তখন রোগীর লোকজন বললো- দেখিতো আপনি কোন্ ডাক্তারী বই দেখে চিকিৎসা করেছেন? ডাক্তার সাহেব বইখানা বের করে তাদেরকে দেখিয়ে বলে- দেখো এখানে লেখা আছে বাগী বা ফোঁড়া হলে লোহা গরম করে দাগা দিবেএখানে এসে পৃষ্ঠা শেষ হয়ে যায়। আর উক্ত লেখার পরে কমা রয়েছে বিধায় লোকেরা বললো- পৃষ্ঠা উল্টাতে, কেননা এখানে কমা দেয়া হয়েছে, নিশ্চয় বক্তব্য সম্পূর্ণ হয়নি। কিন্তু হাতুরে ডাক্তার পৃষ্ঠা উল্টাতে নারাজ, তার মতে এটাই মূল বক্তব্য। অনেক অনুরোধের পর যখন ডাক্তার সাহেব পৃষ্ঠা উল্টালো তখন দেখলো, সেখানে লেখা রয়েছে- রোগী যদি গরু হয়।অর্থাৎ গরুর যদি বাগী বা ফোঁড়া হয়, তবে লোহা গরম করে দাগা দিবে।         অতএব, অর্ধেক পড়ে চিকিৎসা করা যেমন বিপদজনক। তদ্রূপ দুচারটা চটি রিসালা পড়ে ফতওয়া দেওয়াও বিপদজনক। কাজেই কোন কথা বলতে হলে বা কোন ফতওয়া দিতে হলে তা ভালরূপে তাহ্ক্বীক্ব করে দিতে হবে, নচেৎ ভুল হওয়া এবং সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তাই কোন ফার্সী কবি বলেন,
نيم حكيم خطر جان + نيم ملا خطر ايمان.
অর্থাৎ- নীম হেকীম বা আধা ডাক্তার যেরূপ জীবনের জন্যে হুমকিস্বরূপ তদ্রুপ নীম মোল্লা বা আধা মৌলভীও ঈমানের জন্য ক্ষতির কারণ।            কাজেই এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, নীম মোল্লারূপী উলামায়ে ছূদের কুনূতে নাযেলাসম্পর্কিত অর্ধেক, অশুদ্ধ ও দলীলবিহীন ফতওয়ার কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে।      তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে সাধারণ লোক মনে করবে হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল নামাযঅনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে।   অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূর সাথে নামায আদায় না করা, হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম) অর্থাৎ অস্বীকৃতির সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়। আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
 من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাজা আদায় করলো, সে জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্ মানাসিক)             হাদীছ শরীফের বর্ণনা মোতাবেক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব, এক হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর।            উল্লেখ্য, ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মোতাবেক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।         নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষায়ই রাখেনা। হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে,
عن عبد الله بن عمر بن العاص رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه ذكر الصلوة يوما فقال من حافظ عليها كانت له نورا وبرهانا. ونجاة يوم القيامة ومن لم يحافظ عليها لم تكن له نورا ولا برهانا ولانجاءة وكان يوم القيامة مع قارون وفرعون وهاما وابى بن خلف.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা নামাযের প্রসঙ্গ উপস্থাপন করে বললেন, যে এর হিফাযত করবে, এটা ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য নূর, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে এর হিফাযত করবে না তার জন্য এটা নূর, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে না। ক্বিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি কারূন, ফিরআউন, হামান ও উবাই বিন খলফের সাথে থাকবে।” (আহমদ, দারিমী ও বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল্ ঈমান)      নামাযের হিফাযত না করার অর্থ হলো, নামাযের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব ইত্যাদির দিকে লক্ষ্য না রাখা এবং যে সমস্ত কারণে নামায ফাসিদ বা বাতিল হয় সেদিকে লক্ষ্য না রেখে নামায আদায় করা। এমনি একটি নামায ভঙ্গকারী আমল হচ্ছে ফজর ও অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা।      মূলকথা যারাই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার মাধ্যমে লানত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।              প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ছূরা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে।             কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করা হলো।           আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ ও লুগাত বা অভিধানের আলোকে কুনূতশব্দের তাহ্ক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ
            স্মর্তব্য যে, قنوتকুনূতশব্দটি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ্ বা ফতওয়ার কিতাবে বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ কুনূতশব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। তাই কুনূতশব্দের লুগাতী ও ইস্তিলাহী সবগুলো অর্থ জানা থাকলে কুনূতে নাযেলাসম্পর্কিত ফতওয়াটি বুঝতে সহজ হবে। তাই অত্র ফতওয়ার  প্রথমেই কুনূতশব্দের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো- কুরআন শরীফের আলোকে  কুনূতশব্দের তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ   কুনূতقنوت শব্দটি باب نصر (বাবে নাছারা) এর মাছদার যা قنت মূল ধাতু থেকে নির্গত। যার অর্থ হচ্ছে, আনুগত্য করা, ধর্মপরায়ণ হওয়া, নতজানু হওয়া, বিনীত হওয়া ইত্যাদি। পবিত্র কুরআন শরীফে কুনূতশব্দটি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন, [১]
يا مريم اقنتى لربك.
অর্থঃ- হে মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম! আপনার রব-এর আনুগত্য করুন।” (সূরা আলে ইমরান/৪৩) [২]  কুনূতঅর্থ  الخشوع তথা নম্রতা ও বিনয়ী হওয়া। যেমন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
وقوموا لله قانتين.
অর্থঃ- তোমরা আল্লাহ পাক-এর উদ্দেশ্যে বিনীত অবস্থায় দাঁড়াও।” (সূরা বাক্বারা/২৩৮) [৩]
ومن يقنت منكن لله ورسوله وتعمل صالحا نؤتها اجرها مرتين.
অর্থঃ- তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য আনুগত্য স্বীকার করবে এবং সৎকাজ করবে আমি তাঁকে দূবার প্রতিদান দিব।” (সূরা আহযাব/৩১)  [৪]
 امن هو قانت اناء الليل ساجدا وقائما.
অর্থঃ- যেমন আল্লাহ পাক বলেন, যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদার মাধমে এবং দাঁড়িয়ে ইবাদত করে।” (সূরা যুমার/৯) [৫]
وكانت من القانتين.
অর্থঃ- তিনি (হযরত মারইয়াম আলাইহিস্ সালাম) ইবাদতকারীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।” (সূরা তাহরীম/১২) উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে ব্যবহৃত কুনূতশব্দটি একাধিক অর্থ প্রদান করেছে। যেমন, অনুগত হওয়া, বিনীত-বিনম্র হওয়া, দাসত্বের স্বীকৃতি দেয়া, ইবাদত করা, দাঁড়িয়ে ইবাদত করা ইত্যাদি। হাদীছ শরীফের আলোকে  কুনূতশব্দের তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ  [৬-৭ ]   উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের ন্যায় হাদীছ শরীফেও কুনূতশব্দটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করেছে। যেমন, প্রসিদ্ধ হাদীছ শরীফের কিতাব মিশকাত শরীফের১১ পৃষ্ঠার ৫নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
القنوت يجئى لمعان فى القاموس القنوت الطاعة والسكوت واتلدعاء والقيام فى الصلاة والانصات عن الكلام واقنت دعا على عدو و اطال القيام فى الصلاة ... وتواضع لله والمراد ههنا الذكر والدعاء المخصوص على مذهب الاكثرين.
অর্থঃ- কামূসনামক গ্রন্থে কুনূতের কয়েকটি অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, বিনয় প্রকাশ করা, নীরব থাকা, দোয়া করা, নামাযে ক্বিয়াম করা, কথা বলা থেকে চুপ থাকা, শত্রুর প্রতি বদদোয়া করা, নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়াম করা, ....... আল্লাহ পাক-এর উদ্দেশ্যে বিনয় প্রকাশ করা। তবে এর দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে যিকির এবং খাছ দোয়া তথা বিত্র নামাযে কুনূতে রাতি বা পাঠ। এটা অধিকাংশের মতে।  [৮-১১ ]    মিশকাত শরীফের শরাহ তানযীমুল আশতাতকিতাবের ২৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, হযরত ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং চার মাযহাবের ইমামগণের মতে, ‘কুনূতেরদশটি অর্থ বিদ্যমান। যেমন, আনুগত্য করা, নীরব থাকা, নামাযে দাঁড়িয়ে থাকা, দোয়া করা। তবে এখানে যিকির দ্বারা ঐ খাছ দোয়া উদ্দেশ্য যা স্থায়ীভাবে বিত্র নামাযে পড়া হয়।” (অনুরূপ অর্থ তালীকুছ ছবীহনামক কিতাবের ২য় খণ্ডের ১০১ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১১৩ পৃষ্ঠা, মায়ারিফুস্ সুনান ৪র্থ খণ্ড ১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)  [১২ ] তিরমিযী শরীফের১ম খণ্ডের ৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ্য আছে,
القنوت بمعنى طاعة وخشوع وصلاة ودعاء وعبادة وقيام وطول القيام وسكوت.
অর্থঃ- কুনূত অর্থ হলো আনুগত্য করা, বিনীত হওয়া, নামায, দোয়া, ইবাদত, ক্বিয়াম তথা দাঁড়িয়ে থাকা, দীর্ঘ  ক্বিয়াম করা এবং নীরব থাকা।  [১৩ ] ফতহুল ক্বদীরকিতাবের ১ম খণ্ড ৩৭৮ পৃষ্ঠার  হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
ما روى عن عمر رضى الله تعالى عنه ان المراد بالقنوت طول القراأة فى الصلاة.
অর্থঃ- হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই কুনূত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নামাযে দীর্ঘ ক্বিরায়াত পাঠ করা।” [১৪-১৫ ]  মিশকাত শরীফেরশরাহ আশরাফুত তাওযীহকিতাবের ১৪২ পৃষ্ঠায় কুনূত অর্থে বলা হয়েছে, “কুনূত অর্থ দীর্ঘ কিয়াম করা, নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়াম করা, নীরব থাকা, আনুগত্য করা, বিনয় প্রকাশ করা, দোয়া ইত্যাদি।” (মিশকাত শরীফ ৩ খণ্ড ১৮২ পৃষ্ঠা)  [১৬-১৭ ] আল মিশকাতুল মাছাবীহ”-এর শরাহ মিরয়াতুল মানাজীহকিতাবের ২৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, কুনূত অর্থ আনুগত্য করা, নীরব থাকা। উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- নামাযে দাঁড়িয়ে যে দোয়া পড়া হয়। এটা দ্বারা (বিত্র নামাযের) খাছ দোয়া উদ্দেশ্য।” (আওজাযুল মাসালিক ৩য় খণ্ড ৫০ পৃষ্ঠা)  [১৮-১৯] আমানিল আহবারগ্রন্থকার বলেন,
القنوت فى الحديث يرد بمعان متعددة كالطاعة والخشوع والصلوة والدعاء والعبادة والقيام وطول القيام والسكوت.
অর্থঃ- হাদীছ শরীফে রয়েছে কুনূত বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন, আনুগত্য অর্থে, বিনয়ী অর্থে, নামায অর্থে, দোয়া বা প্রার্থনা অর্থে, ইবাদত অর্থে, দাড়িয়ে থাকা অর্থে, দীর্ঘ ক্বিয়াম অর্থে, নীরব থাকা অর্থে। (আন নিহাতু ফী গারীবিল হাদীছ ওয়াল আছার ১১১ পৃষ্ঠা) হাদীছ শরীফের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, ‘কুনূতশব্দটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, লম্বা বা দীর্ঘ ক্বিরয়াত পাঠ করা অর্থে, আনুগত্য অর্থে, বিনয়ী অর্থে, নামায অর্থে, দোয়া বা প্রার্থনা অর্থে, ইবাদত অর্থে, দাঁড়িয়ে থাকা অর্থে, দীর্ঘ ক্বিয়াম অর্থে, চুপ বা নিরব থাকা অর্থে ইত্যাদি। ফিক্বাহ্-এর আলোকে  কুনূতশব্দের তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ  [ ২০]    কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের ন্যায় ফিক্বাহের কিতাবে কুনূতশব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, ফিক্বাহের কিতাব আল হিদায়াহকিতাবের ১৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ‘কুনূত’-এর অর্থ হচ্ছে,
لانه الدعاء فى الحديث خير الدعاء الخفى
অর্থঃ- কুনূত হলো দোয়া আর হাদীছ শরীফে আছে উত্তম  দোয়া হচ্ছে গোপন দোয়া।  [২১] নূরুল হিদায়াহকিতাবের ১ম খণ্ডের ১১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,   উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- কখনো কখনো কুনূত নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়ামের অর্থে আসে।  [২২ ] আশরাফুল হিদায়াহকিতাবের ১ম খণ্ডের ১৯৫ পৃষ্ঠায় قنوتকুনূতদ্বারা বিত্র নামাযের কুনূতকে বুঝানো হয়েছে।  [২৩-২৪] লাউস্ সুনানকিতাবের ষষ্ঠ খণ্ডের ৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “অবশ্যই কুনূত হচ্ছে একটি দোয়া।” (তাফসীরে জালালাইন) লুগাত বা অভিধানের আলোকে কুনূতশব্দের তাহক্বীক বা বিশ্লেষণ
লুগাত বা অভিধানেও কুনূতশব্দটির একাধিক অর্থ উল্লেখ রয়েছে। যেমন, (আস্ সুকূত) السكوت তথা চুপ থাকা বা নীরব থাকা। যেমন- قنت الرجل قنوتا লোকটি একেবারেই চুপ থেকেছে।           القيام فى الصلوة. তথা নামাযে দণ্ডায়মান হওয়া বা দাঁড়ানো অর্থে।  যেমন قنت لله সে আল্লাহ পাক-এর উদ্দেশ্যে দাঁড়াল। دعاء مشهور তথা প্রসিদ্ধ দোয়া। (যা বিত্র নামাযে পড়া হয়।)  طول القراءة فى الصلوةতথা নামাযে ক্বিরয়াত দীর্ঘ করা। عبادة তথা বন্দিগী করা ইত্যাদি। [২৫] বিখ্যাত লুগাত লুগাতে সাঈদী”-এর ৬০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “কুনূত অর্থ আনুগত্য করা, নীরব তথা চুপ থাকা, অনুসরণ করা, অনুকরণ করা, ঐ প্রসিদ্ধ দোয়া যা বিত্র নামাযে পড়া হয়।  [২৬] মুজামুল ওয়াজীযনামক লুগাতে ৫১৮ পৃষ্ঠায় কুনূতেরঅর্থে লেখা হয়েছে, (قنت) قنوتا যার অর্থ ঃ
أطاع الله وخضع له وأقر بالعبودية.
অর্থঃ- সে আল্লাহ পাক-এর আনুগত্য করেছে, বিনয় প্রকাশ করেছে ও দাসত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে।এখানে قنت قنوتا (ক্বানাতা কুনূতান) মাফউলে মতলক তাকীদ অর্থে। যেমন অর্থ হচ্ছে, সে আনুগত্য করার মত করেছে। মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
فى القران الكريم (ومن يقنت منكن لله ورسوله وتعمل صالحا نؤتها اجرها مرتين.
অর্থঃ- তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য আনুগত্য স্বীকার করবে এবং সৎকাজ করবে আমি তাঁকে দূবার প্রতিদান দিব।” (সূরা আহযাব/৩১)  قنوت (কুনূত)-এর অপর একটি অর্থে বলা হয়,
أطال اليام فى الصلاة.
অর্থঃ- সে নামাযে দীর্ঘ কিয়াম করেছে।   [ ২৭] قنوت (কুনূত) অর্থ الدعاء অর্থাৎ প্রার্থণা বা চাওয়া। যেমন বলা হয়, فهو قانت جمع قنت সে প্রার্থনাকারী,  ক্বানিতুন শব্দের বহুবচন কুন্নাত আসে। قنوت (কুনূত) অর্থ الطاعة (আত্ ত্বায়াহ) অর্থাৎ আনুগত্য করা বা বিনয় প্রকাশ করা ইত্যাদি। (আল মুজামুল ওয়াজীয/ ৫১৮)  [২৮] বিশ্ববিখ্যাত লুগাত লিসানুল আরবনামক অভিধানে কুনূতেরব্যাপক শাব্দিক অর্থ বর্ণিত হয়েছে যা নিম্নে তুলে ধরা হলো- القنوت (আল কুনূত) এর অর্থ الامساك عن الكلام তথা কথা বলা থেকে বিরত থাকা। অর্থাৎ চুপ থাকা। কেউ কেউ বলেন, الدعاء فى الصلاة. তথা নামাযের দোয়াই قنوت (কুনুত)। (قنوت) কুনূতের অর্থ হচ্ছে, الخشوع والاقرار بالعبودية. বিনীত হওয়া এবং আবদিয়াত বা গোলামীর স্বীকৃতি দেয়া। قنوت (কুনুত) অর্থ হচ্ছে,
القيام بالطاعة ليس معها معصية.
আনুগত্যের সহিত দণ্ডায়মান হওয়া, যাতে কোন প্রকার অবাধ্যতার লেশমাত্র নেই।  কেউ কেউ বলেন, কুনূতের অর্থ নীরব থাকা। আর এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
قال زيد بن ارقم رضى الله تعالى عنه كنا نتكم فى الصلاة حتى نزلت قوموا لله قانتين فأمرنا بالسكوت ونهينا عن الكلام فامسكنا عن الكلام فالقنوت ههنا الامساك عن الكلام فى الصلاة.
অর্থঃ- হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, (ইসলামের প্রথম যুগে) আমরা নামাযে কথা বলতাম। অতঃপর قوموا لله قانتين এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হলো। অতঃপর আমাদেরকে (নামাযে) চুপ থাকার আদেশ দেয়া হলো এবং কথাবার্তা বলা থেকে নিষেধ করা হলো। অতঃপর আমরা (নামাযে) চুপ তথা নিরব থাকতাম। এখানে কুনূতের অর্থ হচ্ছে নামাযে কথা বলা থেকে নীরব তথা চুপ থাকা।” (লিসানুল আরব ৬ষ্ঠ খণ্ড ৩৭৫৭ পৃষ্ঠা)  [২৯] যেমন, হাদীছ শরীফে  ইরশাদ হয়েছে,
 مثل المجاهد فى سبيل الله كمثل القانت الصائم.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় জিহাদকারীর দৃষ্টান্ত হলো নীরব রোযাদারের ন্যায়।  তবে কানিতুন দ্বারা يقال للمصلى অর্থাৎ নামাযীকে বুঝানো হয়েছে।
وفى الحديث تفكر ساعة خير من قنوت ليلة.
হাদীছ শরীফে আছে, রাতে কুনূতের (নামাযের) চেয়ে উত্তম হল কিছু সময় গভীরভাবে (দ্বীন সম্পর্কে) চিন্তা-ফিকির করা।
وقد تكرر ذكره فى الحديث ويرد بمعان متعددة كالطاعة والخشوع والصلوة والدعاء والعبادة والقيام وطول القيام والسكوت.
অর্থঃ- কুনূত শব্দটি হাদীছ শরীফে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন অর্থে তা বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন আনুগত্যতা অর্থে, বিনীত বা বিনম্র অর্থে, নামায অর্থে, প্রার্থনা অর্থে, গোলামী বা বন্দিগী অর্থে, দাঁড়ানো অর্থে, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো অর্থে, নীরব তথা চুপ থাকা অর্থে।
(قال) ابن سيده القنوت، الطاعة. هذا هو الأصل ومنه قوله تعالى.
অর্থঃ- ইবনে সাইয়্যিদাহ্-এর মতে কুনূত অর্থ আনুগত্য আর এটাই হল আসল অর্থ।
 ثم سمى القيام فى الصلاة قنوتا ومنه قنوت الوتر.
অর্থঃ- অতঃপর নামাযের মধ্যে ক্বিয়ামকে কুনূত বলে নামকরণ করা হয়েছে এবং এর দ্বারা বিত্র নামাযের কুনুতকে বুঝানো হয়েছে।” ‘কুনূতমাছদার থেকে ইছমে ফায়েলের ছিগা হলো-  القانت (আল ক্বানিত) যার অর্থ المطيع আনুগত্যকারী এবং এর অর্থ الذكر لله تعالى অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর যিকিরকারী।
كما قال الله عز وجل (امن هو قانت اناء الليل ساجدا وقائما.
অর্থঃ- যেমন আল্লাহ পাক বলেন, যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদার মাধমে এবং দাঁড়িয়ে ইবাদত করে।  (সূরা যুমার/৯) وقيل القانت العابد এবং বলা হয় আল ক্বানিতুঅর্থ হলো, ইবাদতকারী। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন,
(كانت من القانتين) اى من العابدين.
অর্থাৎ- (তিনি ইবাদতকারীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।) এখানে القانتينআল ক্বানিতীনএর ব্যাখ্যায় العابدين আল   আবিদীনঅর্থাৎ ইবাদতকারীগণ বলা হয়েছে।  কুনূত’-এর অপর একটি অর্থ হচ্ছে,
المشهور فى اللغة ان القنوت الدعاء.
অর্থঃ- লুগাতে প্রসিদ্ধ যে, কুনূত এর অর্থ হচ্ছে দোয়া।” (লিসানুল আরব  ফী গারিবীল হাদীছ ওয়াল আছার ৪ খণ্ড ১১১ পৃষ্ঠা)  [ ৩০-৩২] উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিখ্যাত লুগাতবিদ ইবনে মাজুর তার বিশ্ববিখ্যাত লুগাত লিসানুল আরব’-এর মধ্যে কুনূতের অর্থপ্রদান করতে গিয়ে বলেন,
حقيقة القنوت العبادة والدعاء لله عزوجل فى حال القيام ويجوز ان يقع فى سائر الطاعة لانه ان لم يكن قيام بالرجلين فهو قيام بالشئ بالنية.
অর্থঃ- কুনূতের হাক্বীক্বত বা মূল হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে ইবাদত এবং দোয়া করা। আর দাঁড়ানোর অবস্থাটা প্রত্যেক আনুগত্যের ব্যাপারে প্রযোজ্য। কেননা যদি দুপায়ের  সাহায্যে দাঁড়াতে নাও পারে, অতঃপর সে কোন বস্তুর সাহায্যে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ায়। কুনূত (قنوت) থেকে ক্বানিতুন (قانت) আর ক্বানিতুন (قانت) এর অর্থ হচ্ছে,
وحقيقة القانت انه القائم بأمر الله فالداعى اذا كان قائما خص بان يقال له قانت لانه ذاكر لله تعالى وهو قائم على رجليه.
অর্থঃ- কুনূত পাঠকারীর হাক্বীক্বত হচ্ছে যে, আল্লাহ তায়ালার আদেশে (নামাযে) দণ্ডায়মানরত থাকা। বিশেষ করে যখন কোন প্রার্থনাকারী দাঁড়ায় তখন তাকে বলে قانت (ক্বানিতুন) নামাযী। কেননা, সে আল্লাহ পাক-এর যিকিরকারী বা ইবাদতকারী এবং সে দুপায়ের সাহায্যে দণ্ডায়মান।
قال ابن سيده القانت القائم بجميع امر الله تعالى.
অর্থঃ- ইবনে সাইয়্যিদা বলেন, ক্বানিতুন বলা হয় যে আল্লাহ পাক-এর সমস্ত আদেশ পালনে সর্বদা দাঁড়িয়ে থাকে।
وجمع القانت من ذلك كله قنت.
قانت শব্দের বহুবচন হলো قنت (কুন্নাত) আল্লামা আজ্জাজ বলেন, قانت এর অর্থ নামাযে নীরব থাকা ব্যক্তি বা বিনীত প্রার্থী।  কুনূতের অপর একটি অর্থ হলো- ذل (জাল্লা।) অর্থাৎ- সে তার জন্য অভিশাপ করেছে। যেমন বলা হয়,
قنتت المرأة لبعلها.
অর্থঃ- মহিলাটি তার স্বামীকে বদ দোয়া বা অভিশাপ করেছে।      এটা দিবালোকের ন্যায় সুষ্পষ্ট যে,এ উদাহরণের মাধ্যমে قنوت (কুনূত)-এর পরিস্কার একটি অর্থ ফুটে উঠেছে। যাতে কুনূতে নাযেলারকথা বলা হচ্ছে। যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরব গোত্র তথা রিলএবং যাকওয়ানগোত্রদ্বয়ের প্রতি ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকূ থেকে উঠার পরে দাঁড়িয়ে একমাস যাবৎ বদ্দোয়া করেছিলেন। যার প্রমাণ হাদীছ শরীফে রয়েছে।  যেমন এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
وروى عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قنت شهرا فى صلاة الصبح بعد الركوع يدعو على رعل وذكوان.
অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে রুকূর পরে রিলএবং যাকওয়ানএর প্রতি বদদোয়া করে একমাস কুনূত পড়েছেন।” (এটাকেই কুনূতে নাযেলা বলা হয়)             এখানে কুনূতের অর্থ হচ্ছে- ذل له (যাল্লালাহু) অর্থাৎ তিনি তার জন্য বদ্দোয়া করেছেন। কিংবা অভিশাপ করেছেন। কেননা কুনূতের ব্যাপারে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন প্রকারের হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে যেটা যে অর্থের জন্য প্রযোজ্য ঠিক সেটা সেই অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে।       [লিসানুল আরব ৬ খণ্ড, ৩৭৪৭-৩৭৫৭ পৃষ্ঠা, লিসানুল আরব ফী গারায়িবিল হাদীছ ওয়াল আছার ৪ খণ্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, লুগাতুল ফুরক্বান ১৮৪ পৃষ্ঠা।]  [৩৩-৩৪ ] অনুরূপ বিশ্ববিখ্যাত লুগাত কামুসুল ফিক্বহী’-এর মধ্যেও কুনূত শব্দের অর্থ ذل له (যাল্লা লাহু) উল্লেখ আছে। অর্থাৎ সে তার জন্য বদ্দোয়া করেছে। (কামুসুল ফিক্বহী ১/৩০৯, আফরাতুল মাওয়ারিদ ৩৫১ পৃষ্ঠা)  [৩৫-৩৬ ]
قنت قنوتا اطاع الله تعالى، وخضع له واقر بالعبودية وفى القران الكريم ومن يقنت منكن لله ورسوله وتعمل صالحا نؤتها اجرها مرتين.
অর্থঃ- সে চরম বিনয়ী হয়েছে, সে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করেছে এবং তাঁরই জন্য বিনীত হয়েছে এবং গোলামীর স্বীকৃতি দিয়েছে। যেমন এ ব্যাপারে কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য করে এবং সৎ আমল করে তাদেরকে আমি দুবার প্রতিদান দিব। (সূরা আহযাব ৩১নং আয়াত শরীফ। قانتকানিতুন’-এর জমা বা বহুবচন হচ্ছে قنت (কুন্নাত)। আর قنت অর্থ হলো,
اطال اليام فى الصلاة والدعاء.
অর্থঃ- সে নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়াম করেছে এবং দোয়া করেছে।আর কুনূতের মাছদারী অর্থ যেমন, আনুগত্য করা, বিনীত বা বিনম্র হওয়া, প্রার্থনা করা ইত্যাদি।
ومنه دعاء القنوت اى الدعاء فى الصلاة فى محل مخصوص من القيام.
অর্থঃ- এটার আর একটি অর্থ হচ্ছে, কুনূতের দোয়া অর্থাৎ নামাযের মধ্যে বিশেষ স্থানে দাঁড়িয়ে যে দোয়া পড়া হয়।” (কামূসুল ফিক্বহী/৩০৯, গিয়াছুল লুগাত/৩৯৬)  [৩৭] কুনূতঅর্থ, নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়াম করা।
وفى الحديث افضل الصلاة طول القنوت والمراد طول القيام باتفاق العلماء كما قال النووى العبادة.
অর্থঃ- হাদীছ শরীফে রয়েছে, নামাযের মধ্যে উত্তম হলো, কুনূত (ক্বিরায়াত) দীর্ঘ করা এবং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে দীর্ঘ ক্বিয়াম করা, সকল উলামায়ে কিরামগণ এতে একমত। যেমন, হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কুনূতের অর্থ হচ্ছে ইবাদত। (আল কামূসুল ফিক্বহী/৩৫৯)  [৩৮-৩৯] বিশ্বখ্যাত আরবী লুগাত লুগাতুল ফিরূযী’-এর ১৯৫ পৃষ্ঠায় কুনূতের অর্থে বলা হয়েছে,
فرمانبردارى وخاموشى.
অর্থঃ- আনুগত্য করা এবং নীরব তথা চুপ থাকা।” (ফরহাঙ্গে আমিরাহ/৩৯৬)  [৪০] অনুরূপভাবে বিখ্যাত লুগাত আফরাতুল মাওরিদ’-এর ৩৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, قنت (ক্বানাতা) শব্দের অর্থ হচ্ছে সে বদ্দোয়া বা অভিশাপ করেছে। যেমন উদাহরণে বলা হয়েছে,
قنتت المرأة لبعلها.
অর্থঃ- মহিলাটি তার স্বামীকে বারবার তথা সর্বদা বদ্দোয়া করছে।  [ ৪১] বিশ্বখ্যাত লুগাত, ‘লুগাতুল হাদীছ’-এর ৩য় খণ্ডের ১৬০ এবং ১৬১ পৃষ্ঠায় কুনূতের বিভিন্ন অর্থের ব্যবহার দেখানো হয়েছে। যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো- উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- কুনূতের অর্থ হচ্ছে আনুগত্য করা, নীরব থাকা, দোয়া করা, নামাযে দাঁড়িয়ে থাকা, নীরবতার সাথে ইবাদত করা।আর قنوت (কুনূত) থেকে قناتة (কানাতাতুন) অর্থ হলো- كم خوراكى অর্থাৎ অল্প খাদ্য। আবার, ‘কুনূতেরআরো কতগুলো অর্থ হচ্ছে,  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- দুশমণ তথা শত্রুদের প্রতি বদ দোয়া করা। নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা, সর্বদা হজ্ব করা, অথবা জিহাদ করা, বিনয় বা আনুগত্য করা।যেমন বলা হয়,
تفكر ساعة خير من قنوت ليلة.
অর্থঃ- কিছু সময় আল্লাহ পাক-এর (কুদরত এবং সৃষ্টি) সম্পর্কে গভীর চিন্তা করা রাতভর ইবাদতের চেয়ে উত্তম।” (লুগাতুল হাদীছ ৩য় খণ্ড ১৬০ পৃষ্ঠা)  [৪২-৪৩]  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- ইবনে আম্বারী বলেন, কুনূতের চারটি অর্থ রয়েছে, (১) নামায পড়া, (২) দীর্ঘ ক্বিয়াম করা, (৩) আনুগত্য করা, (৪) নীরব থাকা।” (ফতহুর রহমান, লুগাতুল হাদীছ ৩য় খণ্ড ১৬১ পৃষ্ঠা)  [৪৪-৪৫]  বিশ্বখ্যাত লুগাত আল মুহকামুল মুহীতুল আযমনামক কিতাবে উল্লেখ আছে,  কুনূতের অর্থ হচ্ছে, الامساك عن الكلام অর্থাৎ- কথা বলা থেকে চুপ থাকা।
والدعاء فى الصلاة.
অর্থাৎ- নামাযে দোয়া পাঠ করা।
الخشوع والاقرار بالعبودية والقيام بالطاعة التى ليس معها معصية.
অর্থঃ- কুনূতের অর্থ হচ্ছে বিনম্র হওয়া, গোলামীর স্বীকৃতি দেয়া, আনুগত্যের সাথে দণ্ডায়মান হওয়া, যার মধ্যে কোন প্রকার দোষ বা অবাধ্যতার লেশমাত্র নেই।اطالة القيام অর্থাৎ- কিয়ামকে দীর্ঘ করা।’ ‘কুনূত’-এর অর্থ হচ্ছে আনুগত্য করা, অপর একটি অর্থ  হচ্ছে, ذل (যাল্লা) তথা বদদোয়া করা ইত্যাদি। (আল মুজামুল ওয়াসীত্ব ৭৬১ পৃষ্ঠা, আল কুল্লিয়াত ৭৩৪ পৃষ্ঠা)  [৪৭] মুখতারুছ্ ছিহ্হাহনামক লুগাতের ২৩০ পৃষ্ঠায়  কুনূতেরঅর্থ দেয়া আছে এভাবে-
اصله الطاعة ومنه قوله تعالى القانتين والقانتات وسمى القيام فى الصلاة قنوتا وفى الحديث افضل الصلاة طول القنوت ومنه قنوت الوتر باب الكل دخل.
অর্থঃ- কুনূতের অর্থ হলো আনুগত্য করা যেমন, এ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-এর বাণী, ‘যেসব পুরুষ ও মহিলা আনুগত্যকারী বা বিনয়ী হয়েছে।            নামাযের মধ্যে ক্বিয়াম করাকে কুনূতবলা হয়েছে। যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “উত্তম নামায হলো, কুনূত (ক্বিয়াম) দীর্ঘ করা।আর কুনূতের প্রত্যেক অধ্যায়ে কুনূতদ্বারা বিত্র নামাযের কুনূতকেই বুঝানো হয়েছে।  [৪৮] আল আফসাহু ফী ফিক্বহিল লুগাত’-এর ৬৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
القنوت الدعاء ويطلق على القيام فى الصلاة ودعاء القنوت اى دعاء القيام.
অর্থঃ- কুনূত শব্দটির অর্থ হচ্ছে দোয়া বা প্রার্থনা করা, যা নামাযের মধ্যে ক্বিয়াম করাকেই বুঝায়।  দোয়া কুনূত হচ্ছে দাঁড়িয়ে দোয়া পাঠ করা।  [৪৯] আল মুজামু লুগাতুল ফুক্বাহা”-এর ৩৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়,
القنوت بالضم الطاعة منه (القانتين والقانتات)
অর্থঃ- কুনূত শব্দের ق (ক্বাফ) এবং ن (নুন) অক্ষরে পেশ যোগে পড়তে হয়। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আনুগত্য স্বীকার করা বা বিনীত হওয়া। (আল্লাহ পাক বলেন, বিনয়ী পুরুষগণ ও বিনয়ী মহিলাগনের জন্য ক্ষমা ও মহাপুরুস্কার আছে।)
دعاء بعد تكبير فى قيام فى الصلاة ودعاء القنوت اللهم انا نستعينك ونستغفرك ..... الخ.
অর্থঃ- নামাযের তাকবীরের পর দাঁড়ানো অবস্থায় যে দোয়া পড়া হয় তাকেই কুনূত বলে।কুনূত বলতে দোয়ায়ে কুনূত যা বিত্র নামাযে পড়া হয়। যথা-
اللهم انا نستعينك ونستغفرك. الخ.
অর্থঃ- আয় আল্লাহ পাক! আমরা আপনার কাছে সাহায্য চাই এবং আপনার কাছেই ক্ষমা চাই ...।  [৫০] বিখ্যাত অভিধান উরপঃরড়হধৎু ড়ভ ওংষধসরপ ষবমধষ ঃবৎসরহড়ষড়মু অৎধনরপ রিঃয ঊহমষরংযনামক গ্রন্থের ৩৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “কুনূত অর্থ হচ্ছে, ওহাড়পধঃরড়হ রহ ঃযব ঢ়ৎধুবৎ অর্থাৎ নামাযে আনুগত্য করা বা যতœবান হওয়া।  [৫১-৫২] قنوت (কুনূত) মাছদার থেকে ইস্মে ফায়িলের واحد مذكر এর ছিগাহ হিসেবে قانت ( ক্বানিতুন) যার অর্থ হচ্ছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- দোয়া পাঠকারী এবং হুকুম পালনকারী। (কারীমুল লুগাত/১০৮, লুগাতে কিশওয়ারী/ ৫৪৮ পৃষ্ঠা)  [৫৩] আল ফায়িক ফী গরীবিল হাদীছ’-এর ৩য় খণ্ডের ১২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ‘কুনূতএর অর্থ বদ্দোয়া। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا فى الصلاة الصبح بعد الركوع يدعو على رعل وذكوان.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিলএবং যাকওয়ানগোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ্দোয়া করার উদ্দেশ্যে ফজর নামাযে রুকুর পরে এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।  কুনূতের অর্থে আরো বলা হয়,
وطول القيام فى الصلاة.
অর্থঃ- নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়াম করা।
ومنه حديث ابن عمر رضى الله تعالى عنهما انه سئل عن القنوت فقال ما اعرف القنوت الا طول القيام ثم قرأ (امن هو قانت اناء الليل ساجدا وقائما)
অর্থঃ- হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, তাঁকে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি উত্তরে বললেন, আমি দীর্ঘ ক্বিয়াম ছাড়া অন্য কোন কুনূতকে জানিনা বা চিনিনা। অতঃপর কুরআন শরীফের
 امن هو قانت اناء الليل ساجدا وقائما ... الخ.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদত করে।” (সূরা যুমার/৯) আয়াত শরীফ পাঠ করলেন।  হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে আরো একটি হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে যে,
عنه صلى الله عليه وسلم انه سئل اى الصلاة افضل طول القنوت.
তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, ‘কোন নামায উত্তম?’ উত্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘কুনূত (ক্বিয়াম)কে দীর্ঘ করা।কানিতুন-এর অপর এক অর্থ হচ্ছে, مطيل للقيام অর্থঃ- ক্বিয়ামকে দীর্ঘ কারী।  যেমন বলা হয়,
وكان الرجل قد نزر ان يقوم فى الشمس ساكتا لايتكلم فامره بأن يذكر الله مع قيامه.
অর্থঃ- লোকটি রোদ্রে নীরব ও নিশ্চুপ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছা করেছে এবং তৎসঙ্গে তাকে আদেশ করা হয়েছে যে, সে দাঁড়ানো অবস্থায় আল্লাহ্ তায়ালার যিকির করবে।কুনূত অর্থঃ يسوق بهم  অর্থাৎ সে তাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।কুনূত অর্থঃ
نفجت بهم الطريق رمت بهم فجأة (من نفجت الريح اذا جاءت بغتة) نكب اى فكبته الحجارة.
অর্থঃ- রাস্তা থেকে সড়িয়ে দেয়া। যেমন বলা হয়, তাদেরকে রাস্তা ভুলানো হয়েছে। কুনূত অর্থ তীর নিক্ষেপ করা। যেমন বলা হয়, সে অপ্রত্যাশিতভাবে তীর নিক্ষেপ করেছে। نكب অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন বলা হয়, পাথরই তাকে আঘাত করেছে।  [৫৪] বিশ্বখ্যাত লুগাত লুগাতে কিশওয়ারীনামক গ্রন্থের ৫৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “কুনূত অর্থ আদেশ পালন করা, আনুগত্য করা, দোয়া বা প্রার্থনা করা, নীরব থাকা এবং ঐ প্রসিদ্ধ দোয়াকে কুনূত বলা হয়, যা নামাযের মধ্যে পাঠ করা হয়।  [৫৫] আরবী-বাংলা অভিধাননামক লুগাতের ২০০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “قنوت (কুনূত) শব্দের قنت (ক্বানাতা) ফেল হিসাবে অর্থ হচ্ছে সে অনুসরণ করেছে, নম্রতা ও নীরবতার সাথে নামাযে দাঁড়িয়েছে আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে কাকুতি-মিনতি করেছে, অক্ষমতা প্রকাশ করেছে, কান্নাকাটি করেছে।  [৫৬] ফরহাঙ্গে রব্বানীলুগাতের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “قنوت (কুনূত) অর্থ বশ্যতা, বিত্র নামাযের দোয়া ইত্যাদি।  [৫৭] কুনূতের অর্থ হচ্ছে- বাধ্য হওয়া, চুপ থাকা। আর قنوت (কুনূত) থেকে قانت (ক্বানিতুন) এর অর্থ হচ্ছে- বিনয়ী, আনুগত্যকারী।” (আল কাওসার/৪৯৫)  [৫৮] আল মিছবাহুল মুনীরলুগাতের ৫১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
القنوت مصدر من باب قعد الدعاء ويطلق على القيام فى الصلاة ومنه قوله افضل الصلاة طول القنوت (دعاء القنوت) اى دعاء القيام ويسمى السكوت فى الصلاة قنوتا ومنه قوله تعالى قوموا لله قانتين.
অর্থঃ- القنوت (কুনূত) শব্দটি বাবে قعد (কায়াদা) এর ওজনে মাছদার। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোয়া বা প্রার্থনা করা এবং নামাযের মধ্যে ক্বিয়াম করার অর্থেও (কুনূত) ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন, এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে রয়েছে, উত্তম নামায হচ্ছে কুনূতকে দীর্ঘ করা। (দোয়ায়ে কুনূত), অর্থাৎ দাঁড়িয়ে দোয়া পড়া। নামাযে নীরব থাকাকেই কুনূত নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন এ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-এর বাণী তোমরা আল্লাহ পাক-এর জন্য নীরবতার সাথে দাঁড়িয়ে থাক।  [৫৯] আল মুনজিদনামক লুগাতের ৮৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- قنت (কানাতা) পদটি বাবে نصر (নাছারা) এর قنوت (কুনূতান) মাফউলে মতলক মাছদার থেকে এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে আনুগত্য করা, পুরোপুরি নীরবতার সাথে নামাযে দাঁড়িয়ে  থেকে আল্লাহ্ পাক-এর সামনে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা।  যেমন বলা হয়- قنت الله সে আল্লাহ পাক-এর আনুগত্য করেছেএবং قنت لله এরূপভাবেও পাঠ করা যায়। আবার قنت له অর্থ عاجزى وزارى كرنا অর্থাৎ বিনীত এবং কান্না করা অর্থেও قنوت (কুনূত) শব্দটি এসে থাকে। اقنت (আক্বনাতা) অর্থ ঃ
نمازمين طويل قيام كرنا.
অর্থাৎ- নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়াম করা।
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে 
অর্থাৎ- আল্লাহ পাক-এর উদ্দেশ্যে বিনীত এবং রোনাযারী করা।কুনূতের অর্থঃ উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থাৎ শত্রুদের প্রতি বদদোয়া করা।কুনূতের অর্থঃ সর্বদা হজ্ব আদায় করা, দীর্ঘ সময় জিহাদ করা।  ইসমে ফায়িল القانت (ক্বানিতুন) হিসাবে অর্থ হচ্ছে, যে নামাযী সদাসর্বদা ইবাদতে দায়িম ও কায়িম থাকে।  [৬০] বয়ানুল লিসাননামক লুগাতের ৬৩৪ পৃষ্ঠায় আছে, “কানিতুন অর্থ আনুগত্য কারী, দোয়া- বা প্রার্থনাকারী ইত্যাদি।  [৬১] বিশ্বখ্যাত লুগাত ফিরোযুল লুগাত’-এর  ৯৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, قنوت (কুনূত)-এর অর্থ হচ্ছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- এটা এমন একটি দোয়া যা বিত্র নামাযে পড়া হয়ে থাকে।কুনূতের অর্থ হচ্ছে, “আদেশ পালন করা, সরলতার সাথে বন্দিগী করা, নিরবতা পালন করা ইত্যাদি।  [৬২ ] আল মুহীতু ফিল লুগাতনামক অভিধানে উল্লেখ আছে,
القنوت الطاعة وهو الخشوع القيام وهو الصلاة دعاء بعد الرأة فى اخر الوتر.
অর্থঃ- কুনূতের অর্থ হচ্ছে আনুগত্য করা, নামায পড়া, দাঁড়িয়ে থাকা, বিনম্র হওয়া। বিত্র নামাযের শেষে ক্বিরয়াতের পর যে দোয়া পড়া হয় তাকেই কুনূত বলে।  [৬৩] আল মাগরিব ফী তারতীবিল মুরাবনামক লুগাতের ২য় খণ্ডের ১৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
القنوت الدعاء والطاعة والقيام فى قوله عليه الصلاة والسلام افضل الصلاة طول القنوت دعاء القنوت وهو اللهم انا نستعينك ونستغفرك ونؤمن بك ..... الخ.
অর্থাৎ- কুনূত অর্থ হলো দোয়া, আনুগত্য ও ক্বিয়াম। যেমন এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, উত্তম নামায হলো, কুনূত (ক্বিরয়াত) দীর্ঘ করা। আর দোয়ায়ে কুনূত হলো-
اللهم انا نستعينك ونستغفرك ونؤمن بك .... الخ.
অর্থঃ- আয় আল্লাহ পাক! আমরা আপনার কাছে সাহায্য চাই, আপনার কাছে ক্ষমা চাই এবং আপনার উপরই পূর্ণ ঈমান এনেছি ......।কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ ও লুগাত বা অভিধানের আলোকে কুনূতশব্দের উপরোক্ত তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ‘কুনূতশব্দের বহু অর্থ রয়েছে। যেমন, আনুগত্য, বিনয়, ক্বিয়াম, নিরবতা, যিকির, দোয়া, ইবাদত, লম্বা ক্বিয়াম, লম্বা ক্বিরয়াত, নতজানু হওয়া, ধর্ম পরায়ন, অল্প খাদ্য খাওয়া, কোশেশ করা, তাড়িয়ে দেয়া, হজ্ব করা, জিহাদ করা, আঘাত করা, তীর নিক্ষেপ করা, রাস্তা ভুলানো, আদেশ পালন করা, কান্নাকাটি করা, গোলামীর স্বীকৃতি দেয়া, চুপ থাকা, বিত্র নামাযে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করা ও শত্রুর প্রতি বদ্দোয়া করা ইত্যাদি। (অসমাপ্ত) পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

0 Comments: