“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-৭)
পিডিএফ-
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন
ইসলামের নির্ভীক সৈনিক,
সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে
এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক। তদ্রুপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক
তাই। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদার’ ৮২নং আয়াত
শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু
হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” মূলতঃ এই
ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে
দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ
শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে
ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা
হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। উল্লেখ্য, ইহুদীদের
এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কেও
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের
প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা
অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী
ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল
দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’ অথচ ‘কুনূতে
নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের
মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন
ইনশাআল্লাহ। তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে
সাধারণ লোক মনে করবে ‘হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’ অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম
করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ
তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ
করার কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে। অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন
ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায তরক
করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূ’র সাথে
নামায আদায় না করা,
হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি
কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর
কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার
ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির
সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়। আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون شنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি
নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে
জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর
হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্
মানাসিক) হাদীছ শরীফের বর্ণনা মোতাবেক
হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন *
১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব,
এক হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য, ক্বাযা
নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে
ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময়
আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা
করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায়
করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায়
করবেনা আর তওবাও করবে না,
তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে
ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা
হয়েছে। নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার
পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে
হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত
কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। মূলকথা, যারাই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার
মাধ্যমে লা’নত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে
কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার
ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে। কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ
নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও
যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর
ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ
করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া
মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) (পূর্ব প্রকাশিতের
পর) হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা মানসূখ, বিদ্য়াত
ও নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্তর জন
বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে নির্মমভাবে শহীদ
করার কারণে শহীদকারী রি’ল, য্কাওয়ান, আছিয়্যাহ ও লিহ্ইয়ান গোত্রগুলোর প্রতি ‘বদ্দোয়া’ করার
লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করার পর তা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। যেমন, এ
প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, [৩৫৮-৩৬০]
لم يفنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তা
পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী
শরহে হিদায়াহ ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা) এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল
ক্বারী’ কিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৬১]
ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم "ليس لك من الامر شئ"
..... الخ، فصار ذلك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوحا.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর মতে,
যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর উপর ليس لك من الامر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই
(ফজরে কুনূত) পাঠ করা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।” আর ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর
নামাযে ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে “মিশকাত
শরীফের” ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৬২-৩৬৪]
وعن ابى مالك الاشجعى قال قلت لابى يا ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- “হযরত আবূ মালিক আল্ আশজায়ী
(তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার
পিতাকে একবার বললাম,
হে আমার পিতা! আপনি তো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সাথে,
হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায়
প্রায় পাঁচ বৎসরকাল পর্যন্ত হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে
নামায আদায় করেছেন,
তাঁরা কি কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি
উত্তরে বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস্য! (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (ইবনে
মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা,
ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড) শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে
তাবিয়ীন, তাবে’ তাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি বরং ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত, নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, “মায়ারিফুস
সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৩৬৫]
وقال أبو حنيفة لا قنوت فيه واليه ذهب ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن السبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد واسحاق ويحى بن يحى الاندلس وذهب اليه من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আ’যম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কোন
কুনূতই পাঠ করা যাবেনা। এ মতের উপর হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল
আল্লামা মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সকল অনুসরণীয় আছহাবগণের মতে যেমন হযরত ইবনে
মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত লাইছ ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি, ও হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আন্দুলুসী
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবেনা।
অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর
ইবনে মায়মুনঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম আন্নাখয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা
যাবেনা। “মায়ারিফুস সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ২৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, [৩৬৬-৩৬৭]
والحديث حجة لنا فى ترك القنوت فى الفجر وبصرح فيه بانه محدث وصحيح الترمذى واعترف الحافظ فى التلخيص.
অর্থঃ- “ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা
পরিত্যাগ করা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফখানা আমাদের হানাফী মাযহাবের দলীল এবং এটাও
সুস্পষ্ট যে, ফজরের নামাযে কুনুতে নাযেলা পড়া বিদ্য়াত। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি
আলাইহি এই হাদীছ শরীফকে ছহীহ বলেছেন এবং হযরত ইমাম হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি এই
মতকেই তাঁর কিতাব তালখীছে প্রাধান্য দিয়েছেন।” এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের হানাফী
মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ তথা ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে হানাফী মাযহাবের সকল
বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলাকে মানসূখ, নাজায়িয
ও বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হিদায়া-এর শরাহ ‘আইনী’ কিতাবের
২য় খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২৬৮-৩৬৯]
ولابى حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ ....... ولامتابعة فيه اى فى المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত আবূ
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে অর্থাৎ
হানাফী মাযহাব মতে,
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধান ‘মানসূখ’ হয়ে
গেছে। আর ‘মানসূখ’ বিষয়কে ‘অনুসরণ করা বা এর উপর আমল করা সম্পূর্ণ নাজায়িয বা বিদ্য়াত।’ (আইনুল
হিদায়া) হানাফী মাযহাবের যে সকল বিশ্বখ্যাত নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে কুনূতে নাযেলাকে মানসূখ, নাজায়িয
ও বিদ্য়াত বলা হয়েছে তার বর্ণনা হানাফী মাযহাব-এর বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য
ফিক্বাহ্র কিতাব “শরহুন নিকায়া”-এর ১ম খ-ের ২৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৭০]
اعلم ان قنوت الفجر منسوخ عندنا.
অর্থঃ- “জেনে রাখ, আমাদের
হানাফী মাযহাব মতে অবশ্যই ফজরের নামাযের কুনূত বা কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে।” বিশ্বখ্যাত
কিতাব “শরহুয্ যুরকানী”-এর ১০ম খ-ের ৪২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৭১]
لان العمل بالمنسوخ لا يجوز اتفاق.
অর্থঃ- “এ ব্যাপারে সকল ইমামগণ এক মত যে, মানসুখ
বিষয়ের উপর আমল করা নাজায়িয তথা হারাম।” হানাফী ফিক্বাহ্র বিশ্ববিখ্যাত
কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী”-এর ১ম খ-ের ২৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৭২]
ولو صلى خلف من يقنت فى صلاة الفجر لا يقست لان القنوت فى صلاة الفجر منسوخ.
অর্থঃ- “যদি কোন ব্যক্তি এমন ব্যক্তির
(শাফিয়ী ইমামের) পিছনে নামায পড়ে, যে ব্যক্তি (ইমাম) ফজরের নামাযে কুনত পাঠ করে তখন মুক্তাদী
তার পিছনে কুনূত পাঠ করবে না। কেননা (হানাফী মাযহাব মতে) ফজর নামাযের কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে গেছে।” স্মর্তব্য
যে, হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযের কুনূত বা কুনূতে নাযেলা যে মানসূখ হয়ে গেছে তার
প্রমাণ নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহেও রয়েছে। মিছালস্বরূপ তার কয়েকটি প্রমাণ পেশ
করা হলো। যেমন “তাফসীরে তাবারী”
৪র্থ খ-ের ৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৭৩-৩৭৬]
عن سعيد بن المسيب وابى سلمة بن عبد الرحمن انهما سمعا ابا هريرة يقول كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول حين يفرغ فى صلوة الفجر من القرأة ويكبر ويرفع رأسه سمع الله لمن حمده ربنا لك الحمد ثم يقول وهو قائم اللهم الج الوليدبن الوليد وسلمة بن هشام وعياش ابن ابى ربيعة و المستضعفين من المؤمنين اللهم اشدد وطأتك على مضر واجعلها عليهم كسنى يوسف اللهم العن لحيان ورعلا وذكوان وعصية عصب الله ورسوله ثم بلغنا انه ترك ذلك لما نزل قوله ليس لك من الامر شئ اويتوب عليهم اويعذبهم فانهم ظالمون الاية.
অর্থঃ- “হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব ও
হযরত আবূ সালামা ইবনে আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তাঁরা
উভয়ে হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছেন, তিনি
বলেন, হযরত রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে ক্বিরায়াত পাঠের
পর তাকবীর বলে রুকূ করেন। তারপর সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে যখন মাথা উত্তোলন
করতেন, তখন তিনি রব্বানা লাকাল হামদ বলে দাঁড়িয়ে যেতেন। অতঃপর দাঁড়ানো অবস্থায় বলতেন, আয়
আল্লাহ পাক! আপনি ওলীদ বিন ওলীদ, সালামা ইবনে হিশাম, আইয়্যাশ ইবনে আবী রাবীয়া এবং
মুমিনগণের মধ্যে যারা দুর্বল, তাদেরকে মুক্তি দান করুন। আর আয় আল্লাহ পাক! মুদার গোত্রকে
নিষ্পেষিত করুন এবং তাদের উপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সাল্লাম-এর সময়ের দুর্ভিক্ষের
ন্যায় দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন। আয় আল্লাহ পাক! লিহইয়ান, রিল’ যাকওয়ান
ও আছিয়্যা এবং যারা আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
নাফরমানী করে তাদের সকলের উপর আপনার লা’নত বর্ষন করুন। তারপর আমারা জানতে
পারলাম, আল্লাহ পাক যখন
ليس لك من الامر شئ الخ.
‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন, তখন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে কাফিরদের উপর বদ দোয়ায় যে
কুনূত পড়েছিলেন সেই কুনূতে নাযেলা পাঠ পরিত্যাগ তথা বন্ধ করেন।” (অনুরূপ
তাফসীরে রুহুল মায়ানী জিঃ ৩ পৃষ্ঠা ৫০, তাফসীরে মাযহারী জিঃ ২ পৃষ্ঠা ১৩৬, শরহুয্
যুরক্বানী ১০ম/ ৪১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।) “তাফসীরে কুরতুবী” ৪র্থ
খ-ের ২০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৭৭-৩৮০]
ان هذه الاية ناسخة للقنوت الذى كان النبى صلى الله عليه وسلم يفعله بعد الركوع فى الركعة الاخيرة من الصبح واحتج بحديث ابن عمر انه سمغ النبى صلى الله عليه وسلم يقول فى صلاة الفجر بعد رفع رأسه من الركوع فقال اللهم ربنا ولك الحمد فى الاخره ثم قال اللهم العن فلانا وفلانا فانزل الله عزوجل "ليس لك من الامر شئ الاية".
অর্থঃ- “এই আয়াত শরীফ খানাই হচ্ছে কুনূতের
নাসিখ অর্থাৎ ফজর নামাযের কুনূতে নাযেলাকে নাসিখ তথা রহিতকারী, যা হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকয়াতে রুকূর পরে পাঠ
করেছিলেন। আর কুনূতে নাযেলা যে মানসুখ সে সম্পর্কে ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু-এর হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসাবে উল্লেখ করা হয়। নিশ্চয়ই তিনি হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, যখন রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন, অতঃপর
বলতেন,
اللهم ربنا ولك الحمد.
‘আয় আল্লাহ পাক! অমুক অমুকের প্রতি আপনি লা’নত বর্ষন করুন।’ অতঃপর
আল্লাহ পাক ليس لك من الامر شئ. ‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ করেন। ফলে
তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ বন্ধ করেন।” (অনুরূপ তাফসীরে দুররুল মানছুর
জিলঃ ২ পৃষ্ঠা ৭০,
৭১,
তাফসীরে রুহুল মায়ানী জিঃ ৩ পৃষ্ঠা ৫০, তাফসীরে কুরআনুল আযীম জিঃ ১, ৬০২
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।) উল্লেখ্য, ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার হুকুম ও আমল যে শুধু আয়াত শরীফ দ্বারাই
মানসূখ হয়েছে তা নয়;
বরং এর সাথে সাথে সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাও ফজরের কুনূত বা
কুনূতে নাযেলাকে মানসূখ বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন, “ইবনে মাজাহ শরীফের” ৮৯
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৩৮১-৩৮৩]
وعن ام سلمة قالت نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن القنوت فى الفجر.
অর্থঃ- “হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা থেকে বর্নিত আছে। তিনি বলেন, হযরত রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন।” (অনুরূপ
আল ইলালুল মুতানাহিয়াহ ১ম খন্ড ৪৪১ পৃঃ বযলুল মাজহুদ ২য় জিঃ ৩৩৩ পৃঃ মিশকাত শরীফের
ব্যাখ্যাগ্রন্থ “মিরয়াতুল মানাজীহ”
২য় খ-, ২৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৮৪] উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “প্রকৃতপক্ষে চার ওয়াক্ত নামাযে
কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার ব্যাপারে সকল ইমামগণ একমত পোষণ করছেন। কিন্তু ফজর
নামাযের কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে মতভেদ আছে। তবে আমাদের হানাফী মাযহাবের
চুড়ান্ত মতে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ হয়ে গেছে।” “মিরকাত
শরীফের” ৩য় খ-ের ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩৮৫-৪১২]
وعن ام سلمة انه عليه السلام نهى عن القنوت فى الصبح.
অর্থঃ- “হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়তে নিষেধ করেছেন।” (আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে
মাজাহ ৮৯ পৃঃ ফতহুর রব্বানী ৩য় খন্ড ৩১০ পৃষ্ঠা, আল আইনী ২য় খ- ৫৯৩ পৃষ্ঠা, উমদাতুল
ক্বারী ৬ষ্ঠ খ- ৭৩ পৃষ্ঠা,
ফতহুল বারী, ইরশাদুস সারী ৩য় খ- ৩৬৬ পৃষ্ঠা, মুযাহিরে
হক্ব ১ম খ- ৪১৫ পৃঃ,
শরহুত তীবী ৩য় খ- ১৫৯ পৃষ্ঠা, আবু দাউদ শরীফ ১ম খ- ২১১ পৃষ্ঠা, মিশকাত
১১৩ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম খ- ৫৩ পৃষ্ঠা, নাসায়ী শরীফ ১ম খ- ১৬৪ পৃষ্ঠা, মুসলিম
শরীফ ২য় খ- ২৩৭ পৃঃ,
বুখারী শরীফ ১ম খ- ১৩৬ পৃষ্ঠা, ৬নং
হাশিয়া বুখারী শরীফ ২য় খ- ৫৮৬ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা, হাশিয়া ১
তানযীমুল আশতাত ১ম খ- ১২৮ পৃষ্ঠা, আল বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া অর্থাৎ আল আইনী ২য় খ-ের ৫৯০
পৃষ্ঠা, শরহুস্ সুন্নাহ ২য় খ- ২৪৩ পৃষ্ঠা, আইনুল হিদায়া ১ম খ- ৬৮২ পৃষ্ঠা, শরহে
মায়ানিল আছার ১ম খ- ১৭৪-১৭৫ পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় খ- ৩৫৮ পৃষ্ঠা, বযলুল
মাজহুদ ২য় খন্ড ৩৩৫ পৃষ্ঠা,
মাওয়াহিবুল লাদুন্ নিয়্যাহ, শরহুয্ যুরকানী ১০ খ-) “মিরকাত
শরীফ”-এর ৩য় খ-ের ১৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৪১৩]
اخبره ابو حنيفة رضى الله عنه عن حماد بن ابى سليمان عن ابراهيم عن علقمة عن عبد الله ابن مسعود ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يقنت فى الفجر قط الا شهرا واحدا لم ير قبل ذلك ولا بعده وانما قنت فى ذلك الشهر يدعو على ناس من المشركين فهذا لاغبر عليه ولهذا لم يكن انس نفسه يقنت فى الصبح كما رواه الطبرنى عن غالب ابن الطحاوى قال كنت عند انس بن ملك شهرين فلم يقنت فى صلوة الغدوة واذا ثبت النسخ.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি হযরত হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলকামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে,
হযরত আলকামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস ফজর নামাযে কুনূত
(নাযেলা) পাঠ করেছিলেন। এর আগে এবং এর পরে আর কখনো ফজর নামাযে কুনূত পড়তে তাকে
দেখা যায়নি। আর ঐ একমাস যে কুনূত পড়েছিলেন, তা শুধু মুশরিকদের উপর বদ দোয়ায়
পড়েছিলেন। অতএব এই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর
বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এর উপর অন্য কোন হাদীছ শরীফ প্রাধান্য পায়নি। এ কারণে হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূত (নাযেলা)
পড়েননি। যেমন ত্ববারানী শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত গালিব ইবনে তাহাবী বলেন, আমি দু’মাস আনাস
ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায আদায় করেছি কিন্তু তিনি ফজর
নামাযে কুনূত (নাযেলা) পড়েননি, যেহেতু তা মানসুখ হিসেবে প্রমাণিত। “আল আইনী
(শরহুল হিদায়া)” ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠায়,
“তানযীমুল আশতাত” ১ম খ- ২৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৪১৪-৪১৭]
عن ابراهيم عن علقمة عن عبد الله اى ابن مسعود قال لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولا بعده.
অর্থঃ- “হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি
হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি আবার আব্দুল্লাহ অর্থাৎ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি
বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস ফজর নামাযে কুনূত
(নাযেলা) পাঠ করেছিলেন। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা ত্যাগ করেছেন। এর পূর্বে এবং পরে আর
কখনও তিনি কুনূতে নাযেলা পড়েননি।” (ইবনে মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ৬/৭৪ পৃষ্ঠা) “বুখারী
শরীফ”-এর ১ম খ-ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় ৬নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে যে, [৪১৮]
قال الكرمانى زمانا يسيرا هذا ما قاله القسطلانى وكذا فى العينى وروى ابو داؤد عن انس ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه فتوله ثم تركه يدل على ان القنوت فى الفرائض كان لم نسخ.
অর্থঃ- “ইমাম কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, একমাস বা কিছু সময় মাত্র কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন। যা ইমাম কুসতালানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
এভাবে ‘আইনী’ কিতাবের মধ্যেও উল্লেখ
আছে, হযরত আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু-এর বরাতে বর্ণনা করেন যে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন। অতঃপর
তিনি তা পরিত্যাগ করেন। অতএব তাঁর পরবর্তী বাণীরু ثم تركه ‘অতঃপর তা
পরিত্যাগ করেন’ এর দ্বারা এটাই প্রমাণ করে যে, কুনূতে নাযেলা একমাস ফরয
নামাযসমুহে ছিল, তবে পরবর্তীতে তা মানসুখ হয়ে যায়।” “বুখারী শরীফ”-এর ২য়
খ-ের ৫৮৬ পৃষ্ঠায় ১০নং হাশিয়াতেও উল্লেখ আছে, [৪১৯]
ثم تركه يدل على ان القنوت فى الفرائض كان ثم نسخ.
অর্থঃ- “অতপর تركه (তিনি কুনুতে নাযেলা পরিত্যাগ করেছেন) এর দ্বারা এটাই প্রমাণ করে
যে, কুনূত নাযেলা ফরয নামায সমুহে (একমাস) পড়া হয়েছিল অতঃপর তা মানসুখ হয়ে যায়।” “মিরকাত
শরীফ”-এর ৩য় জিঃ ১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৪২০]
ثم لم يقنت بعد ذلك فى الصبح ابدا.
অর্থঃ- “অতঃপর কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের
পর আর কখনও ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” “ফতহুল বারী”-এর ২য়
খ-ের ৪৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৪২১-৪২৪]
وقد روى مسلم من حديث البراء نحو حديث انس هذا وتمسك به الطحاوى فى ترك القنوت فى الصبح قال لانهم اجمعوا على نسخه فى المغرب فيكون فى الصبح كذالك انتهى.
অর্থঃ- “মুসলিম শরীফে’ হযরত
বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, অনুরূপভাবে হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে। আর হযরত ইমাম তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি এই হাদীছ শরীফের মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করেছেন যে, ফজরের
নামাযে কুনূত (নাযেলা) পরিত্যাজ্য। তিনি আরো বলেন, মাগরিব নামাযের কুনূত মানসুখ
হওয়ার উপর ইমামগণের যেমন ইজমা হয়েছে, অনুরূপভাবে ফজর নামাযের কুনূত
(নাযেলা) মানসুখ হওয়ার উপর ইমামগণের ইজমা হয়েছে।” (অনুরূপ নাইলুল আওতার ২য় খ- ৩৬০
পৃঃ, শরহুয যুরক্বানী ১ম খ- ৪৫৭ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী ২য় খ- ২৩৪ পৃষ্ঠা, ফতহুল
বারী ২য় খন্ড ৪৯০ পৃষ্ঠা) “উমদাতুল ক্বারী”
৬ষ্ঠ খ- ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৪২৫]
قال الطحاوى حدثنا ابن ابى داؤد حدثنا المقدمى حدثنا ابو معشر حدثنا ابو حمرة عن ابراهيم عن علقمة عن ابن مسعود قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما ظهر عليهم ترك القنوت.
وكان ابن مسعود لا يقنت فى صلاته ثم قال فهذا ابن مسعود يخبر ان قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم الذى كان يقنته انما كان من اجل من كان يدعو عليه وانه قد كان ترك ذلك فصار اعنوت منسوخا فلم يكن هو من بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت وكان احد من روى عنه صلى الله عليه وسلم ايضا عبد الله ابن عمر ثم احبر ان الله عز وجل نسخ ذلك حين انزل (الله تعالى) على رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس لك من الأمر شئ اويتوب الخ. فصار ذلك عند ابن عمر منسوخا ايضا فلم يكن هو يقنت بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان ينكر على من كان يقنت وكان احد من روى عنه القنوت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عبد الرحمن ابن ابى بكر فاخبر فى حديثه فان ما كان يقنت به رسول الله صلى الله عليه وسلم دعاء على من كان يدعو عليه ان الله عز وجل نسخ ذلك بقوله ليس لك من الأمر شئ او يتوب عليهم او يعذبهم الاية ففى ذلك ايضا وجوب ترك القنوت فى الفجر.
অর্থঃ- “ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ বর্ণনা করেন হযরত ইবনে আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি
বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত মাকদামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি
বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবু
মা’শার রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে হযরত আবূ হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আছিয়্যাহ্ এবং যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ দোয়ায় একমাস কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেছেন। অতঃপর যখন তাদের উদ্দেশ্যে আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হলো তখন হযরত নবী পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন। (অর্থাৎ কুনূতে
নাযেলা পাঠ বন্ধ করেন) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনিও ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অতঃপর রাবী বলেন, এই হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই বর্ণনা করেছেন, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনূত সম্পর্কে, তিনি যে
কুনূতে নাযেলা কাফেরদের প্রতি বদ দোয়ায় (কিছু সময় পাঠ) করতেন অতঃপর তা তিনি
পরিত্যাগ করেছেন। ফলে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যায় আর এ কারণেই তিনি (আব্দুল্লহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর পরিত্যাগের পর আর কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর যারা নবী পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এই হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একজন রাবী ছিলেন। অতঃপর
তিনি বর্ণনা করেছেন যে,
কুনুতে নাযেলা আল্লাহ তায়ালাই মানসূখ করে দিয়েছেন। যখন
আল্লাহ পাক তাঁর রসুল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর
ليس لك من الامر شئ الاية.
আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন তখনই হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার বিষয়টিও
স্পষ্ট হয়ে উঠল। আর এ কারণে তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
পরিত্যাগের পর কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং যারা কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন তিনি
তাঁদের নিষেধ করতেন। অনুরূপভাবে কুনূতে
নাযেলা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফখানা রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে
যেসব রাবী বর্ণনা করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন রাবী ছিলেন হযরত আব্দুর রহমান
ইবনে আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনিও এ হাদীছ শরীফের ব্যাপারে বর্ণনা
করেন যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফিরদের প্রতি বদদোয়ায় (ফজর নামাযে
একমাস) কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর বানী-
ليس لك من الامر شئ الاية.
‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ আয়াত শরীফের মাধ্যমে তা মানসুখ
করে দেন। আর এ কারণেই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা ফরয-ওয়াজিব। “আল আইনী” ২য় খ-
৫৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৪২৬]
لماروى ابن مسعود رضى الله عنه انه عليه السلام قنت فى صلاة الصبح شهرا ثم تركه هذا الحديث حجةلنا على الشافعى، رواه البزار فى مسنده والطبرانى فى معجمه وابن ابى شيبة فى مصنفه والطبرانى فى الاثار كلهم من حديث سويد القاضى عن حمزة ميمون القصاب عن ابراهيم عن علقمة عن عبد الله قال لم يقنت رسول عليه السلام فى الصبح الاشهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولا بعده وجه الاستدلال به انه يدل على ان قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح انما كان شهر واحدا او كان يدعو على اقوام ثم تركه فدل على انه كان لم نسخ.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই
নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেন অতঃপর সেই কুনূতে নাযেলা পাঠ বন্ধ করেন। আর এ পরিত্যাগ করা সংক্রান্ত
হাদীছ শরীফখানাই শাফিয়ী মাযহাবের বিপক্ষে আমাদের হানাফীগণের অকাট্য দলীল। আর
এভাবেই বর্ণনা করেছেন হযরত ইমাম বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুসনাদ শরীফে, হযরত
ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মু’জামে, হযরত ইবনে
আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুছান্নাফে এবং হযরত ত্ববারানী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তাঁর আছারের মধ্যে। আর তাঁদের প্রত্যেকের কিতাবের মধ্যে সুয়াইদুল কাযী-এর
বর্ণিত হাদীছ শরীফখানাই বর্ণনা করা হয়েছে। আর তিনি হযরত হামযা মাইমুনাল ক্বাছ্ছাব
রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে,
তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, হযরত
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন
অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন। এর আগে এবং পরে কখনও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর
এই হাদীছ শরীফের মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করার
কারণ হচ্ছে, ইহার দ্বারাই প্রমাণ করে যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন আর সেটা আরবের কয়েকটি কাফির গোত্রের প্রতি বদদোয়ায়
করেছিলেন। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিত্যাগ
করেন। অতএব এর দ্বারাই প্রমাণিত হলো যে, কুনূতে নাযেলা ফজর নামাযে ছিল, অতঃপর ঐ
কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যায়।” “আল আইনী” ২য় খ-ের ৫৯০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়, [৪২৭-৪৩০]
وقال الطحاوى ثنا ابو داؤد المقدمى ثنا ابو معشر ثنا ابو حمزة عن ابراهيم عن علقمة عن ابن مسعود قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما نهى عليهم ترك القنوت وكان ابن مسعود لاقنوت فى صلاة الصبح.
ثم قال فهذا ابن مسعود يخبر ان قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم الذى كان انما كان من اخل من كان يدعو عليه، وانه قد كان ترك ذلك فصار القنوت منسوخا فلم يكن هو من بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت وكان احد من روى عنه ايضا عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه ثم اخبرهم ان الله عزوجل نسخ ذلك حتى انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم (ليس لك من الامر شئ او يتوب عليهم او يعذبهم فانهم ظالمون) ১২৮ ال عمران.
فصار ذلك عند ابن عمر منسوخا ايضا فلم يكن هو يقنوت بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان ينكر على من يقنت وكان احد من روى عنه القنوت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عبد الرحمن بن ابى بكر فاخبر فى حديثه بان ما كان يقنت به رسول الله دعاء على من كان يدعو عليه وان الله عز وجل نسخ ذلك بقوله، (ليس لك من الأمر شئ او يتوب عليهم او يعدبهم فانهم ظالمون) الاية ففى ذلك ايضا وجوب ترك القنوت فى الفجر.
অর্থঃ- “ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ আল মাকদামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি
বলেন, আমাদের কাছে হযরত আবু মা’শার রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের
কাছে আবু হামযা হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত আলকামা
রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন,
হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিহি ওয়া সাল্লাম ‘আছিয়্যাহ
এবং যাকওয়ান’ গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ্দোয়ায় কেবল মাত্র একমাস ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেন। অতঃপর যখন আল্লাহ পাক তাদের প্রতি বদ দোয়া করতে নিষেধ করেন তখন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন। আর এই নিষেধাজ্ঞার
কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি। অতঃপর ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে সংবাদ দিয়েছেন যে, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে (আছিয়্যাহ ও যাকওয়ান) তাদের
প্রতি বদ্দোয়ায় কিছু সময় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর অতি শীঘ্রই হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা পরিত্যাগ করেন। ফলে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
মানসুখ হয়ে যায়। আর এই কারণেই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই
নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিত্যাগের পর আর কখনই কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি। আর যে সমস্ত রাবী রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীছ
শরীফ বর্ণনা করেছেন তাঁদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও
ছিলেন একজন অন্যতম রাবী। অতঃপর তিনি ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের উদ্দেশ্যে সংবাদ দিয়েছেন তখন আল্লাহ পাক উক্ত আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন,
ليس لك من الامر شئ الاية.
‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ এ আয়াত শরীফ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ করে কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ করেন।
আর এ আয়াত শরীফ নাযিলের পর আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে
কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার বিষয়টি আরোও স্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরকের পর
তিনি আর কখনও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন তাকে
নিষেধ করতেন। একইভাবে যেসব রাবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে
কুনূতে নাযেলার হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু
বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও একজন অন্যতম রাবী ছিলেন। তিনিও রসূলে পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে তার হাদীছ শরীফ
বর্ণনা করেছেন যে,
হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আরবের
আছিয়্যাহ্ ও যাকওয়ান) গোত্রের প্রতি বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর ঐ
কুনূতে নাযেলাকে আল্লাহ তায়ালা মানসুখ তথা রহিত করে দেন, যেমনঃ
ليس لك من الامر شئ.
‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ এর মাধ্যমে। আর এ কারণেই ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা ফরয-ওয়াজিব এর অন্তর্ভুক্ত।” (আল
বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ খ- ৭৩ পৃষ্ঠা, তানযীমুল
আশতাত ২৩৭ পৃষ্ঠা,
শরহে মায়ানিল আছার ১ম খ- ১৭৪-১৭৫ পৃষ্ঠা) “আইনুল
হিদায়া”-এর ১ম খ-ের ৬৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৪৩১] উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “আমাদের হানাফীদের নিকট কুনূতে
নাযেলা মানসুখ। কেননা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কেবলমাত্র একমাস
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন। অতঃপর তিনি ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বর্জন তথা বন্ধ
করেন। এর পূর্বে এবং পরে আর কখনও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। হযরত ইমাম বাযযার
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, এবং হযরত
ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁরা প্রত্যেকেই হযরত শারীকুল কাযী
রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে এ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। আর তিনি আবার হামযা মাইমনুল
কাছ্ছাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদিযাল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে (মানসুখ হওয়ার) হাদীছ
শরীফ খানা বর্ণনা করেন। “শরহে মায়ানিল আছার”
১ম খ-ের ১৭৬ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ আছে,
[৪৩২]
ان الله عز وجل لسخ ذلك بقوله ليس لك من الأمر شئ او يتوب عليهم او يعذبهم الاية ففى ذلك ايضا وجوب ترك القنوت فى الفجر.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তাঁর বাণী
ليس لك من الأمر شئ.
‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’এ আয়াত শরীফের মাধ্যমে কুনূতে
নাযেলা মানসূখ বা রহিত করে দেন। আর এ কারণেই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ
করাও ওয়াজিব তথা ফরয। ‘উমদাতুল
ক্বারী’ ৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় ও ‘শরহে মায়ানিল আছার’ নামক কিতাবের ১ম খ-ের ১৭৫ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ আছে, [৪৩৩-৪৩৫]
وعن ابى حمزة عن ابراهيم عن علقمة عن عبد الله قال لم يقنت النبى صلى الله عليه وسلم الا شهرا لم يقنت قبله ولا بعده.
وحدثنا ابن ابى داؤد قال حدثنا المقدمى قال ثنا ابو معشر قال ثنا ابو حمزة عن ابراهيم عن علقمة عن ابن مسعود رضى الله عنه قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصبة وذكوان فلما ظهر عليهم ترك القنوت كان ابن مسعود رضى الله عنه لايقنت فى صلوة الغدوة قال ابو جعفر فهذا ابن مسعود رضى الله عنه.
يخبر ان قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم الذى كان انما كان من اجل من كان يدعو عليه انه قد كان ترك ذلك فصار القنوت منسوخا فلم يكن هو من بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت وكان احد من روى ذلك ايضا عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه ثم قد اخبرهم ان الله عزو جل نسخ ذلك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس لك من الأمر شئ اويتوب عليهم اويعذبهم فانهم ظالمون فصار ذلك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا ايضا فلم يكن هو يقنت بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان ينكر على من كان يقنت.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হামযা রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে,
তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত নবী
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা (ফজর নামাযে)
পাঠ করেন। এর পূর্বে এবং পরে কখনও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। হযরত ইমাম আবূ জাফর
তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ দাঊদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত মাক্বদামী রহমতুল্লাহি
আলাইহি। তিনি বলেন,
আমাদের কাছে হযরত আবূ মাশার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের
কাছে হযরত আবূ হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি
থেকে, তিনি হযরত আলকামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা
করেছেন। তিনি বলেন,
হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছিয়্যাহ্
এবং যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদদোয়ায় একমাস ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন।
অতঃপর তাদের উদ্দেশ্যে যখন
ليس لك من الامر شئ.
‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়, তখন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করা ছেড়ে দেন। অর্থাৎ
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দেন। আর এ কারণেই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। হযরত আবূ জাফর
তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে
অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, কুনূতে
নাযেলা আছিয়্যাহ্ ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদদোয়ায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু সময় পর্যন্ত পাঠ করতেন। অতঃপর অতি শীঘ্রই তা পরিত্যাগ
করেন, ফলে কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যায়। আর এ কারণেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে
নাযেলা পরিত্যাগের পর আর কখনও তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর যে সমস্ত রাবী
হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, তাদের
মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও একজন অন্যতম রাবী
ছিলেন। অতঃপর তিনি অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে এই
সংবাদ দিয়েছেন যে,
নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কুনূতে নাযেলা মানসূখ করে দিয়েছেন। হযরত
রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর যখন
ليس لك من الامر شئ.
‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়। আর তখনই
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর নিকট কুনূতে নাযেলা মানসূখ
হওয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে যায়। আর এ কারণেই রসূল পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া
সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করার পর আর কখনই তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
বরং যারা কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন তাঁদেরকে নিষেধ করতেন। (ইলাউস্ সুনান ৬ষ্ঠ খ- ৮৪, ৮৫
পৃষ্ঠা) “শরহে মায়ানিল আছার”
নামক কিতাবের ১ম খ-ের ১৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৪৩৬]
قتت حتى انزل الله تعالى ليس لك من الأمر شئ الخ فترك لذلك ...... القنوت من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم اى انهم لم يفعلوه بعد ترك رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “কুনূতে
নাযেলা যেটা ফজর নামাযে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করতেন।
যখন আল্লাহ পাক ليس لك من الامر شئ الخ. ‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করলেন, তখন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করলেন।
আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এই পরিত্যাগের পর ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আর কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” “আল আইনী
শরহুল হিদায়া” ২য় খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, [৪৩৭]
ولابى حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ وقد بينا وجهه مستوفى ولا متابعة فيه اى فى المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز-
অর্থঃ- “ইমাম আ’যম হযরত
আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মতে
ফজর নামাযের কুনূতে নাযেলা মানসূখ। আর মানসূখ হওয়ার কারণটা আমরা পুরাপুরি
(স্পষ্টভাবে) বর্ণনা করেছি যে, মানসূখের ব্যাপারে কোন অনুসরণ নেই। কেননা মানসূখের ব্যাপারে
অনুসরণঞ্জকরা নাজায়িয তথা হারাম। অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা মানসূখ। তাই কোন ইমাম ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলে মুক্তাদীদের জন্য কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে
ইমামের অনুসরণ করা যাবে না। কেননা, মানসূখের অনুস্বরণ করা জায়িয নেই
বরং হারাম।” ‘আইনুল হিদায়া’
১ম খ-ের ৬৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৪৩৮-৪৪০]
ولهما انه منسوخ ولامتابعة فيه.
অর্থঃ- “ইমাম আ’যম হযরত
আবূ হানীফা ও মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমা-এর মতে কুনূতে নাযেলা মানসূখ। আর
মানসূখের অনুসরণ জায়িয নেই। (হিদায়া, আইনী) ‘আল আইনী’ কিতাবের
২য় খ-ের ৫৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৪৪১-৪৪২]
وعن ام سلمة رضى الله عنها ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن القنوت فى صلاة الصبح ومنها ماروى عن ابن عمر انه ذكر القنوت فقال انه لبدعة ما قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم غير شهر واحد ثم تركه .... واحتجه النسائي.
অর্থঃ- “হযরত
উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে
নিষেধ করেছেন। এবং হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে আরো বর্ণিত
আছে যেটা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করা
হয়েছে। তিনি কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে আলোচনা করার পরে বললেন নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা
ফজর নামাযে পাঠ করা বিদয়াত। কেননা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন। অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন। আর
ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি নাসায়ী শরীফে এই হাদীছ শরীফ খানাকে গ্রহণযোগ্য
দলীল হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। (অসমাপ্ত) পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন
0 Comments:
Post a Comment