“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১১)


পিডিএফ-

“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-১১)





হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর  নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে সূরা মায়িদার৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.

অর্থঃ-তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।
মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল  বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মুতাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ওহাবী সম্প্রদায়
উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ছূরা কুনূতে নাযেলাসম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের প্রতি বদ্ দোয়াকরার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও মুছল্লীদেরকে প্রতি ফজর নামাযে’ ‘কুনূতে নাযেলাপাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যে তারা ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।অথচ কুনূতে নাযেলাসম্পর্কিত ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে সাধারণ লোক মনে করবে হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল নামাযঅনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে। 
অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূর সাথে নামায আদায় না করা, হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة

অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়।
আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 من ترك الصلوة مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.

অর্থঃ- যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্ মানাসিক)       
হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।)
অতএব, এক হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য, ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
মূলকথা, যারাই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার মাধ্যমে লানত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ছূরা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে।
কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করা হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার কারণে শহীদকারী রি, য্কাওয়ান, আছিয়্যাহ ও লিহ্ইয়ান গোত্রগুলোর প্রতি বদ্দোয়াকরার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস কুনূতে নাযেলাপাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ কুনূতে নাযেলাপাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস কুনূতে নাযেলাপাঠ করার পর তা মানসূখহয়ে যায়।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.

অর্থঃ- আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী শরহে হিদায়াহ ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারীকিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس لك من الأمر شئ .... الخ، فصار ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.

অর্থঃ- হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতে, যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ليس لك من الامر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই (ফজরে কুনূত) পাঠ করা মানসূখহয়ে যায়।
আর মানসূখহয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন। 
যেমন এ প্রসঙ্গে মিশকাত শরীফের১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وعن ابى مالك الاشجعى قال قلت لابى يا ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال اى بنى محدث.

অর্থঃ- হযরত আবূ মালিক আল্ আশজায়ী (তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে একবার বললাম, হে আমার পিতা! আপনি তো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে, হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায় প্রায় পাঁচ বৎসরকাল পর্যন্ত হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে নামায আদায় করেছেন, তাঁরা কি কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি উত্তরে বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস্য! (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (ইবনে মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা, ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড)
শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে তাবিয়ীন, তাবেতাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি বরং ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত, নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, “মায়ারিফুস সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقال ابو حنيفة لاقنوت فيه واليه ذهب ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن المبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد واسحاق ويحى بن يحى الاندلسى وذهب اليه من التابعين االاسود والشعبى وسعيد بن جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى.

অর্থঃ- হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের  নামাযে কোন কুনূতই পাঠ করা যাবেনা। এ মতের উপর হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল আল্লামা মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সকল অনুসরণীয় আছহাবগণের মতে যেমন হযরত ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত লাইছ ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আন্দুলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবেনা। অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম শাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর ইবনে মাইমুনঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম আন্নাখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা যাবেনা।
এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ তথা ইমামে আযম হযরত আবু হানীফা রহমুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে হানাফী মাযহাবের সকল বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে মানসূখ, নাজায়িয ও বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ পূর্ববর্তীু সংখ্যায় দেয়া হয়েছে।
তবে হ্যাঁ, শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজর নামাযঞ্জএবং অন্যান্য নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয।
হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে কুনূতে নাযেলাকে জায়িয বলেছেন। যা আমাদের হানাফীদের নিকট বিশুদ্ধ বর্ণনা নয়। আর হানাফীগণের দলীল হচ্ছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ফজর নামাযসহ সকল নামাযেই কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। আর হানাফীদের মতে অন্যান্য নামাযে তো নয়ই বরং ফজর নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।
কাজেই হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার অর্থই হচ্ছে, শাফিয়ী মাযহাবের মতকে অনুসরণ করা যা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয় বরং সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৩/৩৪৪ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,

فيكون كل من المذاهب الاربعة حقابهذا المعنى فالمقلد اذا قلد اى مجتهد يخرج عن الوجوب ولكن ينبغى ان يقلد احدا اتزامه ولايؤل الى اخر.

অর্থঃ- যখন চার মাযহাবের প্রত্যেকটিই হক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হলো, তাই এ অর্থে মুকাল্লিদের জন্য যে কোন একটি মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করাও ওয়াজিব। অতএব, যে ব্যক্তি কোন এক মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করবে সে শুধু সেটাই আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। অন্য কোন মাযহাবের অনুসরণ করবে না।
এ প্রসঙ্গে তাফসীরে আহমদিয়াকিতাবের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,

واما الثانى وهو انه اذا التزم الطبعية يجب عليه ان يدوم على مذهب التزامه ولا ينتقل الى مذهب اخر.

অর্থঃ- দ্বিতীয়তঃ কোনও মাযহাবকে প্রকৃতভাবে গ্রহণ করলে দায়িমীভাবে সে মাযহাবেরই অনুসরণ করা ওয়াজিব। তাই এক মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যাবেনা তথা হারাম।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠলো যে, হানাফীদের জন্য শাফিয়ী বা অন্যান্য মাযহাবের মাসয়ালার উপর আমল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। যেহেতু কুনূতে নাযেলা পাঠ করা শাফিয়ী মাযহাবে জায়িয, কিন্তু তা হানাফী মাযহাবে হারাম বিদয়াত ও নাজায়িয। তাই হানাফীদের জন্য কুনূতে নাযেলা পাঠ করাও হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ। কেন না মানসূখহয়ে যাওয়া কোন আমল নামাযে সম্পাদন করলে যে নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যায় তাতে কারোই দ্বিমত নেই। যেমন- ইসলামের প্রথম যুগে নামাযের মধ্যে কথা-বার্তা বলা, সালাম দেয়া ইত্যাদি সবই বৈধ ছিল পরবর্তীতে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা নামাযে কথা বলার আমল নিষিদ্ধ বা মানসূখহয়ে যায়। ফলে এখন নামাযের মধ্যে কথা বললে হানাফী মাযহাব মতে তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।
সুতরাং মানসূখহয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কথা বললে যেরূপ নামায ফাসিদ হয়ে যায়; ঠিক তদ্রুপ মানসূখহয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলেও নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।
অনুরূপভাবে নামাযের মধ্যে কোন নামাযী কথা বললে, মনে মনে কিংবা উচ্চ আওয়াজে কারো জন্য দোয়া বা বদদোয়া করলে, হাঁচির জবাবের নিয়তে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে, কোন আশ্চর্যজনক সংবাদ শুনে সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুল্লিাহ, লা-ইলাহা ইল্লাহ কিংবা আল্লাহু আকবার বললে নামায ফাসিদ হবে। সুতরাং কুনূতে নাযেলাও অনুরূপ। কাজেই পরিস্কারভাবে ফুটে উঠল যে, অবশ্যই কুনূতে নাযেলা পাঠে নামায ফাসিদ হবে। কেননা এটাও নামাযের বাইরের অংশ এবং এতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চ আওয়াজে নাম ধরে, অন্যের কল্যাণে এবং অভিশাপে লম্বা দোয়া পাঠ করতে হয়। তাতে কি করে নামায শুদ্ধ হতে পারে?
মূলকথা হলো, কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সম্পুর্ণ নাজায়িয, বিদয়াত, হারাম এবং নামায ফাসিদ ও বাতিল হওয়ার কারণ। এটাই হানাফী মাযহাবের ফায়সালা এবং চুড়ান্ত ফতওয়া।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয বলে ফতওয়া প্রদানকারীদের জিহালতপূর্ণ বক্তব্য ও তার খ-নমূলক জবাব

১ম বক্তব্য ও তার খ-নমূলক জবাব
যারা ফজর নামাযে কুনূতে নাযিলা পাঠ করাকে জায়িয বলে থাকে তারা প্রথমতঃ দলীল হিসাবে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت فى الفجر شهرا........

অর্থাৎ- হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং একমাস ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।
তাদের উক্ত বক্তবের জবাবে বলতে হয় যে, তারা দলীল হিসেবে যে হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে তাহলো হাদীছ শরীফের প্রথম অংশ, অথচ উক্ত হাদীছ শরীফেরই দ্বিতীয় অংশে ثم تركه. (অতঃপর তিনি উহা পরিত্যাগ করেন) এ শব্দের দ্বারা কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক তাফসীর, হাদীছ এবং ফিক্বাহর কিতাবসমূহে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া কুরআন শরীফের নছও হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে এবং তাদের পেশকৃত প্রত্যেক হাদীছের শেষাংশে কুনূতে নাযেলাকে পরিত্যাগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কম দৃষ্টিশক্তি, কম জেহেন, কম ইলম্, কম বুঝ কিংবা দাড়ি-কমা, সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে তারা শেষের অংশ বাদ দিয়ে নিজেদেরকে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তিমূলক আমল আক্বীদায় নিয়ে যাচ্ছে।
(দ্বিতীয় অংশ)
তাদের উক্ত বক্তব্যের খ-নমূলক জবাবের প্রথম অংশ গত সংখ্যায় পত্রস্থ হয়েছে। নিম্নে দ্বিতীয় অংশউল্লেখ করা হলো-
তাফসীরে রুহুর মায়ানী ৩য় খ-ের ৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭১১]

وعن مقاتل انها نزلت فى اهل بئر معونة وذلك ان رسول الله صلى الله عليه وسلم ارسل اربعين وقيل سبعين رجلا من قراء اصحابه وامر عليهم المنذربن عمرو الى بئر معونة على راس اربعة اشهر من احد ليعلموا للناس القران والعلم فاستصرخ عليهم عدو الله عامر بن الطفيل قبائل من سليم من عصية ورعل وذكوان فاحاطوابهم فى رحالهم فقاتلوا حتى قتلوا من عند اخرهم الاكعب بن زيد اخابنى النجار فانهم تركوه وبه رمق فلما علم بذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم وجد وجدا شديدا وقنت عليهم شهرا يلعنهم فنزلت هذه الاية فترك ذلك. والمعنى ليس لك من امر هؤلاء شئ.

অর্থঃ হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই ليس لك من الأمر شيئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফখানা বিরে মাউনাবাসীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। আর সেটা হল যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ছাহাবীগণের মধ্য থেকে যাঁরা ক্বারী ছিলেন, তাঁদের ৭০ জন, কারো বর্ণায় ৪০ জন (ছাহাবী) ব্যক্তিকে মুনযির ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নেতৃত্বে উহুদ যুদ্ধের চার মাস পরে মানুষদেরকে কুরআন শরীফ এবং দ্বীনি শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিরে মাউনায়প্রেরণ করেন।
অতঃপর যখন তাঁরা তথায় পৌঁছলেন তখন আল্লাহ পাক-এর শত্রু আমের ইবনে তুফায়েল মুনাফিক, হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণদের উপর আক্রমন করার জন্য সুলাইম, আছিয়্যা গোত্রের রিল এবং যাকওয়ান বলে চিৎকার করল। অতঃপর তারা বেরিয়ে এসে ক্বারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণদেরকে ঘিরে ফেলল, এমনকি শেষ র্পযন্ত বনী নাজ্জার গোত্রীয় (ভ্রাতা) কাব ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ছাড়া সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণদেরকে নির্মমভাবে শহীদ করে ফেলল। পরিশেষে (ঐ মুনাফিক ও কাফিরেরা কাব ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বল্লম বিদ্ধ ও মুমূর্ষ অবস্থায় সেখানে রেখে যায়।
অতঃপর হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের এই কঠিন মর্মান্তিক অবস্থার কথা জানতে পেরে শহীদকারী মুনাফিকদের প্রতি বদ দোয়ায় একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। পরে ليس لك من الأمر شيئ.
এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।
আয়াত শরীফ নাযিল হলে হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন তথা বন্ধ করেন। আর উক্ত আয়াত শরীফের অর্থ হচ্ছে তাঁদের ঐ সব গোত্রের প্রতি বদদোয়া, তওবা, কিংবা শাস্তির ব্যাপারে আপনার আর কোন কিছুই করার প্রয়োজন নেই।
উক্ত কিতাবে ৫১ পৃষ্ঠায় আছে,
[৭১২]

وان النهى عن ذلك كان ناسخا.

অর্থঃ ঐ সব গোত্রদের প্রতি বদদোয়া করতে নিষেধ করার অর্থই হচ্ছে কুনূতে নাযেলা-এর বিধানটি মানসুখ হয়ে গিয়েছে।
অনুরুপভাবে তাফসীরে মাযহারী ২য় খ-ের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭১৩-৭১৪]

ما رواه مسلم حديث ابى هريرة انه صلى الله عليه وسلم كان يقول فى الفجر اللهم العن رعلا وذكوان وعصية حتى انزل الله تعالى هذه الاية فان قصة رعل وذكوان كان بعد ذلك.

অর্থঃ ছহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্নিত আছে যে, হযরত রসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে বলতেন হে আল্লাহ পাক! রিল, যাকওয়ান এবং আছিয়্যা গোত্রের প্রতি লানত বর্ষণ করুন। অতঃপর যখন আল্লাহ পাক ليس لك من الأمر شيئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।এই আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করলেন, তখন ঐ সকল গোত্রদের প্রতি বদদোয়া করা বন্ধ করেন। কেননা রিল এবং যাকওয়ান এর (বদদোয়ার) ঘটনার পর এই আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়।
উক্ত কিতাবের ১৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়,
[৭১৫]

قال التفتازانى فهو من قبيل عظف الخاص على العام.

অর্থঃ হযরত তাফতাযানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ঐ সব গোত্রদের প্রতি বদ দোয়া করা নিষেধ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি খাছ করে যে আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করা হয়েছে, মূলতঃ এ নিষিদ্ধ নির্দেশনাটি সকল মুসলমানদের উপর সাধারণভাবে প্রযোজ্য।
তাফসীরে মাযহারী এর ২য় খ-ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৭১৬-৭৫০]

قوله تعالى "ليس لك من الأمر شئ" لمنعه عن الدعاء عليهم.

অর্থঃ আল্লাহ তায়ালার বাণী- ليس لك من الأمر شئএ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।এই আয়াত শরীফ দ্বারা তাদের প্রতি বদদোয়া করতে তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবশ্যই নিষেধ করা হয়েছে।
ইহা ছাড়াও আরো অসংখ্য তাফসীরের কিতাব সমূহে ليس لك من الأمر شئএ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।
আয়াত দ্বারা কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে নিষেধ ও মানসুখ করা হয়েছে। যেমনঃ তাফসীরে আহমদী ১ম খ- ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে তাবারী ৪র্থ খ- ৫৮ পৃঃ, তাফসীরে জালালাইন ১ম খ- পৃঃ ৬০, তাফসীরে হাশিয়ায়ে ছবী, ১ম খ- ১৭৮ পৃঃ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ১ম খ- ৩১৬ পৃঃ, তাফসীরে কুরতুবী ২য় খ- ১৯৯/২০০/২০১/২০২ পৃঃ, তাফসীরে কাসিমী ২য় খ- ১৩৬ পৃঃ, তাফসীরে বয়ানুল কুরআন ২য় খ- ৫৮ পৃঃ, তাফসীরে দ্বিয়াউল কুরআন ১ম খ- ২৭৪ পৃঃ, তাফসীরে মাওয়াহিবুর রহমান ২য় খ- ৮২ পৃঃ, তাফসীরে রুহুল বয়ান ৪র্থ জিঃ ৯১ পৃঃ, তাফসীরে তাসহীল লি উলুমিত তানযীল ১ম খ- ১৫৮ পৃঃ, তাফসীরে মাওয়ারদী, তাফসীরে হাসান বছরী, তাফসীরে হক্কানী ৪থ খ- ২৪ পৃঃ, তাফসীরে ইবনে আব্বাস ১ম খ- ২৭৬ পৃঃ, তাফসীরে আবি সুউদ ২য় খ- ৮২-৮৩ পৃঃ, তাফসীরে মুহাররারুল ওয়াজীয, তাফসীরে দুররে মানছূর ২য় খ- ৭০-৭১ পৃঃ, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ৩য় খ- ৫০ পৃঃ, তাফসীরে মাযহারী ২য় ১৩৫-১৩৬ পৃঃ, তাফসীরে কাশশাফ ১ম খ- ২১৬ পৃঃ, তাফসীরে যাদুল মাছীর ১ম খ- ৩৬৮ পৃঃ, তাফসীরে বাইযাবী ২য় খ- ২০৬ পৃঃ, তাফসীরে হাশিয়াতশ্ শিহাব ৩য় খ- ৬২ পৃঃ, তাফসীরে খাযেন ১ম খ- ৪১৭ পৃঃ, তাফসীরে বাগ্বী ১ম খ- ৪১৭ পৃঃ [৪৪৮-৪৪৯পৃঃ] তাফসীরে লুবাব ফী উলুমিল কিতাব ৫ম খ- ৫২৮-৫২৯, ৫৩০-৫৩১ পৃঃ, তাফসীরে সমরক্বান্দী ১ম খ- ৬০৩-৬০৬ পৃঃ, তাফসীরে আল কুরআনিল আযীম ১ম খ- ৬০২-৬০৩ পৃঃ, তাফসীরে মাজেদী, তাফসীরে নাজমুদ দুরার ২য় খ- খুলাছাতুল কুরআন, ছফওয়াতুত তাফাসীর ইত্যাদি তাফসীর সমূহ।
স্মর্তব্য যে, শুধু তাফসীরের কিতাব সমুহেই নয়, বরং নির্ভরযোগ্য সমস্ত হাদীছ শরীফের কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনুতে নাযেলা শুধুমাত্র একমাস পাঠ করার পর কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ দ্বারা কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি তা পরিত্যাগ করেন। তাই বর্তমানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত ও হারাম হবে এবং ফজর নামাযে মূলত কোন প্রকার কুনূতই পাঠ করা জায়িয নেই।
যেমন বুখারী শরীফের প্রথম খ-ের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৫১]

فعند ابى حنيفة رحمة الله تعالى ليس فى الفجر قنوت اصلا.

অর্থঃ ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজরের নামাযে اصلا (আছ্লান) তথা প্রকৃত পক্ষে কোন কুনূতই নেই। (চাই সেটা নাযেলা বা অন্য কোন কুনূত হোক না কেন?)
ছিহাহ সিত্তা এর অন্যতম বিশুদ্ধ কিতাব মুসলিম শরীফের১ম খ-ের ২৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৫২]

حدثنا محمد بن مثنى قال حدثنا عبد الرحمن قال حدثنا هشام عن قتادة عن انس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت شهرا يدعو على احياء من احياء العرب ثم تركه.

অর্থঃ ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, আমাদের কাছে হাদীছে বর্ণনা করেছেন মুহম্মদ ইবনুল মুছান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি আবার হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবের কয়েকটি গোত্রের প্রতি বদদোয়ায় শুধুমাত্র এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তিনি ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দেন।
মুসলিম শরীফের ১ম খ-ের ২৩৭ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে,
 [৭৫৩-৭৫৫]

حدثنى ابو الطاهر وحرملة بن يحيى قالا اخبرنا ابن وهب اخبرنى يونس بن يزيد عن ابن شهاب قال اخبرنى سعيد بن المسيب وابو سلمة بن عبد الرحمن بن عوف انها سمعا با هريرة يقول كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول حين يفرغ من صلوة الفجر من القراءة ويكبر ويرفع رأسه سمع الله لمن حمده ربنا لك الحمد يقول وهو قائم اللهم انج الوليد بن الوليد وسلمة بن هشام وعياش بن ابى ربيعة و المستضعفين من المؤمنين اللهم اشدد وطأتك على مضر واجعلها عليكم كسنى يوسف اللهم العن لحيان ورعلا وذكوان وعصية عصت الله ورسوله ثم بلغنا انه ترك ذلك لما انزل ليس لك من الامر شئ حدثنا محمدبن مهران الرازى ........ عن ابى سلمة ان ابا هريرة حدثهم ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت بعد الركعة فى قنوته اللهم انج الوليدبن الوليد اللهم نج سلمة بن هشام اللهم نج عياش بن ابى ربيعة اللهم نج المستضعفين من المؤمنين اللهم اشدد وطاتك على مضر اللهم اجعلها عليهم سنين كسنى يوسف قال ابو هريرة ثم رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم ترك الدعاء بعد فقلت اراى رسول الله عليه وسلم قد ترك الدعاء لهم.

অর্থঃ ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আবু তাহির রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হারমালা ইবনে ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিমা। তাঁরা দুজন বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইবনু ওহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমার কাছে বর্ণনা করেছেন ইউনুস ইবনে ইয়াযিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বলেন আমার কাছে বর্ণনা করেন সাঈদ ইবনে মুসাাইয়্যিব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তাঁরা উভয়ে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে শ্রবন করেছেন। তিনি বলেন, হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ফজরের নামাযে ক্বিরাত শেষ করে তাকবীর বলে রুকুতে যেতেন, এবং রুকু থেকে সামি আল্লাহুলিমান হমিদাহবলে মাথা উঠাতেন তখন দাড়িয়ে বলতেন (اللهم ... الى اخ) হে আল্লাহ্ পাক! ওলীদ ইবনে ওলীদ কে, সালামা ইবনে হিশাম কে, আইয়্যাশ ইবনে আবু রবিয়াহ কে এবং দুর্বল মুমিনদেরকে মুক্তি তথা নাযাত দান করুন। এবং হে আল্লাহ্ পাক! মুদার গোত্রের উপর কঠোর শাস্তি অবতীর্ণ করুন। তাদের উপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর সময়ের দুর্ভিক্ষের (বছর গুলির) ন্যায় দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন। হে আল্লাহ্ পাক! আপনি লিহ্ইয়ান, রিল, যাক্ওয়ান, এবং আছিয়্যা গোত্রের লোকেরা আল্লাহ ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ অমান্য করেছে তাই তাদের উপর লানত বর্ষণ করুন।
আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, অবশেষে আমাদের কাছে চুড়ান্ত খবর পৌঁছেছে যে, কুরআন শরীফের এই আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের প্রতি বদ দোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দিয়েছেন।
ليس لك من الأمر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।মুহম্মদ ইবনে মিহরান রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন যে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকু থেকে উঠে সামিআল্লাহুলিমান হামিদা বলার পর তিনি বলতেন ইয়া আল্লাহ পাক! ওলীদ ইবনে ওয়ালীদকে মুক্তি দাও, ইয়া আল্লাহ পাক! সালামা ইবনে হিশাম কে নাযাত দাও, ইয়া আল্লাহ পাক! আইয়্যাশ ইবনে আবী রবিয়্যাহকে এবং অত্যাচারিত দূর্বল মুমিনদেরকে মুক্তিদান করুন।
ইয়া আল্লাহ পাক! মুদার গোত্রের উপর কঠোর শাস্তি অবতীর্ণ করুন, ইয়া আল্লাহ পাক! হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর দুর্ভিক্ষের বছরগুলোর ন্যায় দুর্ভিক্ষ তাদের উপর নাযিল করুন। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা  আনহু বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে, পরে হযরত রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের প্রতি দোয়া এবং বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। (নাসায়ী শরীফ ১ম খ- ১৬৪ পৃঃ, মুসলিম শরীফ ১ম খ- ২৩৭ পৃঃ, বুখারী শরীফ ২য় খ- ৬৫৫ পৃঃ, মুসলিম শরীফ ১ম খ- ১৩৭ পৃঃ, বুখারী শরীফ ২য় খ-)
উপরোক্ত তাফসীর ও হাদীছ শরীফের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন সত্য কথাই, তবে এর পর আর কখনোই তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ তা মানসূখ হয়ে গেছে। তাই হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কুনূতে নাযেলাপাঠ করাকে বিদয়াত মনে করতেন।
আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ সকল ইমাম মুজতাহিদগণের মতেও হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস কুণূতে নাযেলাপাঠ করার পর তা মানসূখ হয়ে যায়। বর্তমানে তা পাঠ করা বিদয়াত ও নাজায়িয। অর্থাৎ ফযর নামাযে কোন প্রকার কুনূতই পাঠ করা যাবে না। যেমন এ প্রসঙ্গে-
বুখারী শরীফের ১ম খ- ২৭ পৃঃ আছে,
[৭৫৬]

فعند ابى حنيفة رحمه الله ليس فى الفجر قنوت اصلا.

অর্থঃ হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে আসলান তথা মূলতই ফজর নামাযে কোন প্রকারের কুনূতই নেই। অর্থাৎ ফজর নামাযে কোন কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বৈধ নেই। এ প্রসঙ্গে ছহীহ মুসলিম শরীফে ১ম খ-ের ১৩৭ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন,
[৭৫৭]

وذهب ابو حنيفة واحمد واخرون الى انه لا قنوت فى الصبح.

অর্থঃ হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আহ্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্য পরর্বতী ইমাম মুজতাহিদগণের মতে ফজর নামাযে কোন কুনূতই নেই। অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা কিংবা অন্য কোন কুনূত পাঠ করা জায়িয নেই। এ প্রসঙ্গে যেমন বিশ্ববিখ্যাত কিতাব শরহুয যারক্বানী দশম খ-ের ৪১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৫৮-৭৬০]

وفى رواية ثم بلغنا انه ترك ذلك لما انزل الله تعالى عليه (ليس لك من الامر شئ) رواه البخارى ومسلم.

অর্থঃ বর্ণিত আছে যে, অতঃপর আমরা বিশুদ্ধ সূত্রে জানতে পেরেছি যখন মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন তখনই হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দেন। (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ) বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, শরহুসসন্নাহ, শরহুয যারকানী, দশম খ-ের ৪১৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৭৬১]

(وفى رواية ابى دواد والنسانى) عن انس قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا ثم تركه لما نزل ليس لك من الامر شئ.

অর্থঃ আবু দাঊদ ও নাসায়ী শরীফে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন, অতঃপর আল্লাহ্ পাক যখন ليس لك من الأمر شئএ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।  আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন তখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। (আর এই পরিত্যাগ করার অর্থই হচ্ছে মানসুখ বা রহিত হওয়া।)
যার কারণে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার ব্যাপারে ইমাম ও মুজতাহিদগণের ইজমা হয়েছে যেমন যারকানী শরীফের দশম খ-ের  ৪১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৬২]

وبه تمسك الطحا وى فى ترك القنوت فى الصبح قال لانهم اجمعوا على نسخه.

অর্থঃ ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা সংক্রান্ত  হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বলেন কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার ব্যাপারে সকল ইমামগণের ইজমা হয়েছে। (বাযলুল মাজহুদ)
উল্লেখ্য যে, কুনূতে নাযেলা হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস পাঠ করেছিলেন।
অতঃপর কুরআন শরীফের ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফখানার দ্বারা আল্লাহ পাক নিষেধ করায় হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কূনুতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন। ফলে আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের মাধ্যমে উহা পাঠ করা মানসূখ হয়ে যায়। আর মানসুখের পর উহার উপর আমল করা বিদয়াতে (সাইয়্যাহ) তথা হারাম ও নাজায়িয।
যেমন, ছিহাহ সিত্তাহ-এর অন্যতম প্রসিদ্ধ কিতাব নাসায়ী শরীফের ১ম খ-ের ১৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৬৩]

اخبرنا اسحاق بن ابراهيم اخبرنا عبد الرزاق حدثنا معمرعن الزهرى عن سالم عن ابيه انه سمع النبى صلى الله عليه وسلم حين رفع راسه من صلوة الصبح من الركعة الاخرة قال اللهم العن فلانا وفلانا يدعو على اناس من المنافقين فانزل الله عزوجل ليس لك من الامر شئ  الى اخرها ترك القنوت.
اخبرنا اسحق بن ابراهيم اخبرنا معاذ بن هشام قال حدثنى ابى عن قتادة عن انس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت شهرا يدعو على حى من احياء العرب ثم تركه.
اخبرنا قتيبة عن خلف هو ابن خليفة عن ابى مالك الاشجعى عن ابيه قال صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يابنى انها بدعة.

অর্থঃ ইমাম নাসায়ী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেন ইসহাক ইবনে ইব্রাহীম রহমতুল্লহি আলাইহি, তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আব্দুর রায্যাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মুমার রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি থেকে তিনি সালিম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তার পিতা হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকূথেকে মাথা উঠানোর সময় এ কথা বলতে শুনেছেন যে, হে আল্লাহ্ পাক! অমুক অমুকের প্রতি লানত বর্ষণ করুন। এবং তিনি মুনাফিকদের প্রতি বদদোয়া করতেন অতঃপর আল্লাহ্ পাক ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফ নাযিল করেন। অতঃপর হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনুতে নাযলা পরিত্যাগ করেন।
ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বর্ণনা করেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন ইসহাক ইবনে ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে ... মুয়ায ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মাস (ফজর নামাযে) আরব গোত্রদের মধ্য থেকে কোন এক গোত্রের প্রতি বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেন।
(ফলে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যায়, আর মানসূখের উপর আমল করা বিদয়াত (সাইয়্যিয়াহ)।
অতঃপর ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত কুতাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খল্ফ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, যিনি হচ্ছেন ইবনে খলিফা, তিনি হযরত আবু মালিক আল আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে তিনি তাঁর পিতা সাঈদ বিন তারিক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে নামায পড়েছি কিন্তু তিনি ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়েন নেই। এবং হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর পিছনে নামায পড়েছি তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েন নেই।
অতঃপর হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনেও নামায পড়েছি তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েন নেই। এবং হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায পড়েছি তিনিও ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন নেই। এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনেও নামায পড়েছি কিন্তু তিনিও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন নাই।
অতঃপর সাঈদ বিন তারিক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে বৎস! (এখন) উহা পাঠ করা বিদয়াত।
উক্ত কিতাবের ১৬৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে,
[৭৬৪]

فانزل الله ليس لك من الأمر شئ الخ قوله.

(অতঃপর যখন আল্লাহ পাক অবতীর্ণ করলেন, অর্থঃ এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়,
[৭৬৫]

(فانزل الله تعالى ليس لك من الأمر شئ) هذا يدل على انه نسخ لعن الكافرين فى الصلوة.

অর্থঃ অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ করেন, আর এর দ্বারাই এটাই দালালত তথা প্রমাণ করে নামাযের মধ্যে কাফিরদের প্রতি বদদোয়া করার বিধানটি মানসুখ হয়ে গিয়েছে।
এবং উক্ত পৃষ্ঠায় হযরত মালিক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফের فلم يقنت এর ব্যাখ্যায় বলা হয়।
[৭৬৬]

قوله فلم يقنت هذا يدل على ان القنوت فى الصبح كان اياما ثم نسخ.

অর্থঃ فلم يقنتআর তিনি কুনূতে নাযেলা পড়েননিএর দ্বারাই এটাই দালালত তথা প্রমাণ করে যে, ফজর নামাযে কিছুদিন অর্থাৎ একমাস কুনূতে নাযেলা ছিল, অতঃপর তা মানসুখ হয়ে যায়।
(অর্থাৎ সাঈদ বিন তারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন যে, আমি রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু, হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায আদায় করেছি (فلم يقنت) কিন্তু তারা কেহই কুনূতে নাযেলা পড়েননি।) কেননা কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়েছে। (আর এ কারণেই মানসূখের আমল করাকে বিদ্য়াত বলা হয়েছে।)
 যেমন বুখারী শরীফের ১ম খ-ের ১১০ পৃষ্ঠায় ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[৭৬৭-৭৭০]

قد صح حديث ابى مالك سعيد بن طارق الاشجعى عن ابيه صليت خلف النبى صلى الله عليه وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم يا بنى انها بدعة رواه النسائ وابن ماجه والترمذى وقال حديث حسن صحيح لفظ ابن ماجه عن ابن مالك قال قلت لابى انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى رضى الله عنهم بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون فى الفجر قال اى بنى محدث.

অর্থঃ- আবূ মালিক সাঈদ ইবনে তারিক্ব আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা ছহীহ তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে ফজর নামায পড়েছি কিন্তু তিনি কুনূতে নাযেলা পড়েননি। অনুরুপভাবে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজর নামায পড়েছি তিনি কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজরের নামায পড়েছি তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি। হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজরের নামায পড়েছি তিনিও কুনুতে নাযেলা পড়েননি। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনেও ফজরের নামায পড়েছি কিন্তু তিনিও কুনূতে নাযেলা পড়েননি।
অতঃপর মালিক আল আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইকে তাঁর পিতা তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, হে বৎস! (কুনূতে নাযেলা মানসূখ হওয়ার পর এখন) উহা পাঠ করা বিদয়াত। ইহা নাসায়ী শরীফে, ইবনে মাজাহ শরীফ এবং তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে।
এবং ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই হাদীছ শরীফখানা হাসান ছহীহ। আর ইবনে মাজাহ-এর ভাষায় ইবনে মালিক আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, হে আমার পিতা! আপনি তো নিশ্চয়ই হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করেছেন, অনুরুপভাবে হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে পাঁচ বৎসর নামায আদায় করেছেন উনারা কি ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন? জবাবে তাঁর পিতা বললেন, হে বৎস! নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা পাঠ করা (محدث) মুহদাস তথা বিদয়াত হবে।
অনুরুপ বুখারী শরীফ ১ম খ- ১১০ পৃষ্ঠা ২নং হাশিয়া, নাসায়ী শরীফ ১ম খ- ১৬৪ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ ১ম খ- ৮৯ পৃষ্ঠা,  আবূ দাউদ শরীফ ১ম খ- ২১১ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম খ- ১১৪ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াজী ২য় খ- ৫৩ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১ম খ- ৪৩২ পৃষ্ঠা, শরহুয্ যারকানী ১ম খ-, নাইলুল আওতার ২য় খ- ৩৫৬ পৃষ্ঠা, আল ফাতহুর রব্বানী ১ম খ- ৩০৯ পৃষ্ঠা, শরহুস্ সুন্নাহ ২য় খ- ২৪৩ পৃষ্ঠা, আল আইনী ২য় খ- ৫৯৬ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় ১৮২ পৃষ্ঠা, তানজীমুল আশতাত ২য় খ-/ মিরয়াতুল মানাজিহ ২য় খ- ২৮৫ পৃষ্ঠা, আশরাফুত তাওজীহ ১৪৪ পৃষ্ঠা, বযলুল মাযহুদ ২য় খ- ৩৩৩ পৃষ্ঠা, মায়ারিফুস্ সুনান ৪র্থ খ- ২৩ পৃষ্ঠা, শরহে মায়ানিল আছার ১ম খ- ১৭৭ পৃষ্ঠা, ইলাউস্ সুনান ৬ষ্ঠ খ- ৮৩ পৃষ্ঠা, আল হিদায়া ১ম খ- ১৮৪ পৃষ্ঠা, দেরায়া এর হাশিয়া ১৪৭ নং পৃষ্ঠাতেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত বলা হয়েছে।
মিরকাত শরীফের ৩য় খ-ের ১৮৩ পৃষ্ঠা আরো বর্ণিত আছে,
[৭৭১]

روى عن ابن عباس انه بدعة.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন  নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা বিদয়াত।
উল্লেখিত হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো যে, কুনূতে নাযেলা ফজর নামাযে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস পাঠ করেন। অতঃপর তিনি আল্লাহ পাক-এর পবিত্র নির্দেশে তা পরিত্যাগ করেন। ফলে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই ঐ কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যায়। আর মানসূখ হওয়ার পর উহার উপর আমল করা বিদয়াত ও নাজায়িয হিসেবে প্রমাণিত হয়। আর নাওয়াসেখুল কুরআনএর মধ্যে উল্লেখ করা হয়।

والمنسوخ لا يعمل به.

অর্থঃ  মানসুখ হয়েছে তার দ্বারা কোন আমলই করাই যাবে না। (নাওয়াসিখুল কুরআন, ১২)
নাইলুল আত্তারকিতাবের ২য় খ-ের ৩৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৭৩]

والبيهقى انه قال القنوت فى صلاة الصبح بدعة.

অর্থঃ- ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজর নামযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত (অর্থাৎ  বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ)।
এখানে বিদয়াত বলতে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াকেই বুঝানো হয়েছে। কেননা সাধারণভাবে কোন জিনিসকে বুঝালে তার পূর্ণ জিনিসকেই বুঝায়। যেমন, ফরয বললে ফরযে আইনকে, সুন্নত বললে সুন্নতে মুয়াক্কাদাকে, মাকরূহ বললে মাকরূহে তাহরীমিকে, বিদয়াত বললে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকে বুঝায়। এ সম্পর্কে ফতওয়ায়ে শামীতে উল্লেখ আছে,
[৭৭৪]

المطلق يطلق على الفرد الكامل.

অর্থঃ- সাধারণভাবে কোন বস্তুকে বুঝালে তার পূর্ণাঙ্গ বস্তুকেই বুঝায়।
আওজাযুল মাসালিক ইলা মুওয়াত্তায়ে মালিককিতাবের ২য় খ-ের ৩০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৭৫]

هذا صريح فى نسخ قنوت اللعن ولذا قال ملك ليس عليه العمل.

অর্থঃ- ইহা প্রাঞ্জল কথা যে, বদ দোয়ার কুনূত অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়েছে। এই কারণেই ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন উহার উপর আমল করাই যাবেনা অর্থাৎ জায়িয নেই।
আল ফতহুর রব্বানীকিতাবের ১ম খ-ের ৩১০ পৃষ্ঠায় ও নাইনুল আওতার ২য় খ- ৩৫৭ পৃষ্ঠায়  উল্লেখ আছে,
[৭৭৬]

عن ابن عباس عند الدارقطنى والبيهقى ان القنوت فى صلاة الصبح بدعة.

অর্থঃ- দারে কুতনী এবং বাইহাক্বী শরীফের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত (সাইয়্যিয়াহ)।
আর বিদয়াত এ জন্যই বলা হয়েছে, যেহেতু আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফ দ্বারা কুনূতে নাযেলাকে মানসূখ করেছেন আর হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে উহা একমাস পাঠ করার পর তা পরিত্যাগ করেছেন এবং সকল উম্মতে মুহম্মদীকে উহা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। এর পরে উহার উপর আমল করা অবশ্যই বিদয়াত, নাজায়িয এবং হারামের অন্তর্ভুক্ত। আর এটাই হচ্ছে হানাফী মাযহাবের দলীলভিত্তিক চুড়ান্ত ফতওয়া।
আর হানাফী মাযহাবের একটি উছূল মনে রাখতে হবে যে, হানাফী মাযহাবের দলীল পেশ করতে গিয়ে যে সমস্ত রাবীর বর্ণিত হাদীছ শরীফকে প্রাধান্য দেয়া হয় তা হচ্ছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ। আর কুনূতে নাযেলার ব্যাপারেও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ দলীল হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আরো অন্যান্য ছাহাবীদের বর্ণিত হাদীছ শরীফও দলীল হিসাবে পেশ করা হয়েছে। আর হানাফী মাযহাবের হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে প্রাধন্য দেওয়া হয়। এ সম্পর্কে মিযানুল আখবার এবং উসূলুশ শাশীর মধ্যে উল্লেখ আছে।
যেমন, এ প্রসঙ্গে শরহে মায়ানিল আছারকিতাবের ১ম খ- ১৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৮১-৭৮২]

عن ابى حمزة ان ابراهيم عن علقمة عن عبد الله قال لم يقنت النبى صلى الله عليه وسلم الا شهرا لم يقنت قبله ولا بعده.
وحدثنا بن ابى داؤد قال ثنا المقدمى قال ثنا ابو معشر قال ابو حمزة عن ابراهيم عن علقمة عن ابن مسعود رضى الله عنه قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما ظهر عليهم ترك القنوت وكان ابن مسعود رضى الله عنه لا يقنت فى صلاة الغداة قال ابو جعفر فهذا ابن مسعود يخبر ان قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم الذى كان انما كان من اجل من كان يدعو عليه وانه قد كان ترك ذلك فصار القنوت منسوخا فلم يقنت وكان احد من روى ذلك ايضا عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قد اخبرهم ان الله عز وجل نسخ ذلك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس لك من الأمر شئ الى الاخ.
فصار ذلك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا ايضا فلم يكن هو يقنت بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان ينكر على من كان يقنت.

অর্থঃ- আবূ হামজা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা (ফজর নামাযে) পাঠ করেন। এর পূর্বে এবং পরে কখনও তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
ইমাম আবূ জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ খানা বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মাকদামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন আবূ মাশার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে আবূ হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছিয়্যা এবং যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ দোয়ায় একমাস ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তাদের উদ্দেশ্যে যখন ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়, তখন হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দেন।
আর এ কারণেই বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
হযরত আবূ জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে অন্যান্য ছাহাবীদেরকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, কুনূতে নাযেলা আছিয়্যা ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ দোয়ায় নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু সময় তথা একমাস পাঠ করেন। অতঃপর অতিশ্রীঘ্রই তা পরিত্যাগ করেন, ফলে কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যায়।
আর এ কারণেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের পর আর কখনও তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
আর যে সমস্ত রাবীগণ হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও একজন অন্যতম রাবী ছিলেন। অতঃপর তিনি অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণদেরকে ও এই সংবাদ দিয়েছেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কুনূতে নাযেলা মানসূখ করে দিয়েছেন। হযরত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর যখন ليس لك من الأمر شئএ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।
এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন। আর তখনই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট কুনূতে নাযেলা মানসূখ হওয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে যায়। আর এ কারণেই হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের পর আর কখনই তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
বরং যারা কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন তাঁদেরকে তিনি নিষেধ করতেন। (ইলাউস্ সুনান ৬ষ্ঠ খ- ৮৪, ৮৫ পৃষ্ঠা)
ইহা ছাড়াও শরহে মায়ানিল আছার নামক কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৮৩]

قال ابو جعفر فهذا عبد الله بن مسعود لم يكن يقنت فى دهره كله وقد كان المسلمون فى قتال عدوهم فى كل ولاية عمر رضى الله فى اكثرها فلم يكن يقنت لذلك وهذا ابو الدرداء ينكر القنوت وابن الزبير رضى الله تعالى عنه لايفعله وقد كان محاربا حينذ.

অর্থঃ- আবূ জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাঁর সারা জীবনে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এবং হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পূরা খিলাফতকালে কিংবা খিলাফতের অধিকাংশ সময় পর্যন্ত মুসলমানগণ যখন তাঁদের শত্রুদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন তখনও তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর এই কারণেই আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেন। আর ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও যুদ্ধাবস্থায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
আছারনামক কিতাবের ১ম খ- ৩৭ পৃৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৮৪-৭৮৫]

ان ابن مسعود لم يقنت هو ولا احد من اصحابه حتى فارق الدنيا يعنى فى صلاة الفجر سند صحيح. (اعلاء السنن جص৮৯)

অর্থ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউই জীবনে কখনো ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। (এর সনদ ছহীহ) (ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খ- ৮৯ পৃষ্ঠা)
আর কুনূতে নাযেলা মানসূখ হওয়ার কারণেই আমল করেননি। যেমন, ‘শরহে মায়ানিল আছার১ম খ-ের ১৭৬ পৃষ্ঠায় আছে,
[৭৮৬]

ان الله عز وجل نسخ ذلك بقوله ليس لك من الأمر شئ الى .. الخ. ففى ذلك ايضا وجوب ترك القنوت فى الفجر ..... ان رسول الله صلى الله عليه وسلم ترك ذلك حين انزلت عليه الاية التى ذكرنا.

অর্থঃ- নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ليس لك من الامر شئ الاية. (এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই) এ আয়াত শরীফ দ্বারা কুনূতে নাযেলাকে মানসূখ করে দিয়েছেন। আর এই কারণেই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব (ফরজ)। ... ... ...।
রাবী তথা ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন আমরা যে আয়াত শরীফখানা উল্লেখ করেছি সেই আয়াত শরীফখানা যখন অবতীর্ণ হয় তখনই স্বয়ং হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন। আর এই করণেই পরবর্তীতে উহার উপর আমল করা বিদয়াত (সাইয়্যিয়াহ)। যেমন, বুখারী শরীফ ১ম খ-ের ১১০ পৃষ্ঠা ২নং হাশিয়ায় আছে,
[৭৮৭-৭৯২]
হযরত সাঈদ বিন তারিক্ব আল আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর পিতাকে কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জবাবে বলেন, يا بنى انها بدعة.
অর্থঃ হে বৎস! নিশ্চয়ই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত।
ঐ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

يا بنى انها محدث.

হে বৎস! নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা পাঠ করা মুহদাছ তথা বিদয়াত। (মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, ইলাউস সুনান ৬ষ্ট খ- ৮৩ পৃৃষ্ঠা )
আমাদের হানাফী মাযহাব মতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয। এ প্রসঙ্গে ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শরহে মায়ানিল আছার নামক কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠার শেষে সঠিক ফয়সালা দিয়েছেন। তথায় উল্লেখ আছে,
[৭৯৩]

فثبت بما ذكرنا انه لاينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره قياسا ونظرا على ما ذكرنا من ذلك وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.

অর্থঃ কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে পূর্বে যে সব আলোচনা আমরা করেছি, তা সব যুক্তিভিত্তিক এবং দলীলভিক্তিক ফয়সালাই আমরা আলোচনা করেছি। অতএব, পরিশেষে উক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, ফজর নামাযে যুদ্ধাবস্থায় এবং যুদ্ধবীহিন অবস্থায় তথা অন্যান্য সময়েও কুনূতে নাযেলা পড়া জায়িয নেই। আর এটাই ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চুড়ান্ত অভিমত বা ফতওয়া।
ইলাউস সুনান৬ষ্ঠ খ-ের ৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৭৯৪-৭৯৫]

وعن علقمة رضى الله تعالى عنه قال كان بعد الله رضى الله تعالى عنه لا يقنت فى صلاة الصبح رواه الطحاوى واسناده صحيح اثار السنن جص ২০

অর্থঃ হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন না। তাহাবী শরীফে বর্ণিত আছে (এর সনদ ছহীহ) (আসারুস সুনান ২য় খ- ২০ পৃষ্ঠা)
ইলাউস সুনানকিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৬৫/৮৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়,
[৭৯৬-৭৯৮]

وعن الاسود قال كان ابن مسعود لايقنت فى شئ من الصلوات الا الوتر فانه كان يقنت فيه قبل الركعة اى الركوع رواه الطحاوى والطبرانى واسناده صحيح.

অর্থঃ আল আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কোন ফরজ নামাযেই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি শুধু বিতর নামায ব্যতীত। অর্থাৎ বিতির নামায ব্যতীত অন্য কোন ফরয নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর বিতর নামাযে যখন কুনূত পড়তেন তখন সেটা রুকূর পূর্বেই পড়তেন। ইমাম তাহাবী ও তিবরানী শরীফে ছহীহ সনদে বর্ণনা রয়েছে।
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
[৭৯৯]

وعن علقمة وعن الاسود الخ دلالتهما على ترك القنوت فى الفجر ظاهرة.

অর্থঃ হযরত আলক্বামা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আল আসওয়াদ রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁদের উভয়ের থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফের মাধ্যমে পরিস্কার হয়ে উঠেছে যে, ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবেনা।
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়,
[৮০০]

دلالة الاثار على ترك القنوت فى الفجر.

অর্থঃ ফজর নামাযে এবং অন্যান্য ফরয নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের ব্যাপারে আসার নামক কিতাবের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইলাউস সুনানকিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৮৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়,
[৮০১]

وعن ابن .......... انه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رفع راسه من الركعة الاخرة من الفجر يقول اللهم العن فلانا وفلانا وفلانا بعد ما يقول سمع الله لمن حمده ربنا ولك الحمد فانزل الله ليس لك من الامر شئ الى قوله فانهم ظالمون فان ذلك كان ثم نسخ.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি হযরত রসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই বলতে শুনেছেন যে, যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকূর পরে

سمع الله لمن حمده ربنا ولك الحمد.

(সামি আল্লাহু লিমান হামিদা রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ) বলে মাথা মুবারক উঠাতেন, অতঃপর বলতেন, হে আল্লাহ পাক! অমুক, অমুক এবং অমুক কে লানত বর্ষণ করুন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর

ليس لك من الأمر شئ الى فانهم ظالمون.

এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন তখন ঐ কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ হয়ে যায়।
আর উক্ত কিতাবে ৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,
[৮০২]

ان القنوت فى الفجر منسوخ معناه نسخ اصله.

অর্থঃ কেননা ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা মানসুখ। আর মানসুখের অর্থই হচ্ছে যার মূলেই মানসুখ।
আর মানসুখ সম্পর্কে বলা হয়েছে,

المنسوخ لا يعتدبه.

অর্থঃ আর যা মানসুখ হয়ে যায় তার দ্বারাই কোন দলীল গ্রহণ করাই যাবেনা। অর্থাৎ যা মানসুখ তা গ্রহণযোগ্য ও গনণা যোগ্য নয় ।
মায়ারিফুস সুনানকিতাবের ৪র্থ খ-ের ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮০৩-৮০৫]

صريح فى نسخ قنوت النازالة.

অর্থঃ ইহা সুস্পষ্ট দলীল যে কুনূতে নাযেলা মানসুখ। (আছারুস সুনান,শরহে মায়ানিল আছার ইত্যাদি)
নাওয়াসিখুল কুরআন১ম খ-ের ১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[৮০৬]

المنسوخ لا يعمل به.

অর্থাৎঃ যা মানসুখ বা রহিত হয়েছে তার উপর কোন আমল করা যাবেনা অর্থাৎ তার দ্বারা আমল করা বৈধ নেই।
বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ এ কিতাব আল আইনী২য় খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আছে,
[৮০৭]

ولابى حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ ........ ولامتابعة فيه اى فى المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.

অর্থঃ ইমাম আযম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে নিশ্চয়ই ফজরের নামাযের কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে। আর মানসুখ বা রহিত বিষয়ের উপর কোন ইত্তেবা তথা অনুসরণ করা জায়িয নেই। কেননা মানসুখ বা রহিত বিষয়ের উপর ইত্তেবা বা অনুসরণ করা হারাম।
শরহে মায়ানিল আছার, মায়ারিফুস সুন্নত কিতাবের ৪র্থ খ-ের ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮০৮-৮১০]

والحديث حجة لنا فى ترك القنوت فى الفجر وبصرح فيه بانه محدث صححه الترمذى واعترف الحافظ فى التلخيص.

অর্থঃ ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা সংক্রান্ত হাদীস শরীফখানাই আমাদের হানাফী মাযহাবের সুস্পষ্ট দলীল। আর ইহাও সুস্পষ্ট যে, ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত (সাইয়্যিয়াহ) ইমাম তিরমিযী ঐ হাদীছ শরীফখানাকে ছহীহ বলেছেন আর হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি তালখিস কিতাবে এই মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
ইলাউস সুনানকিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮১১]

ان قوله لم يقنت الا شهرا واحدا لم يقنت قبله ولابعده محمول على رعل وذكوان وعصية فلما نهى الله عزوجل عن الدعاء عليهم بقوله ليس لك من الأمر شئ انتهى وترك ذلك.

অর্থঃ হযরত রসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র এক মাস (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। এর পূর্বে এবং পরে কখনো কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এই অর্থের সম্ভাবনায় হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিল, যাকওয়ান এবং আছিয়্যাহ গোত্রদের প্রতি বদ দোয়ায় কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর যখন মহান আল্লাহ পাক ليس لك من الأمر شئ. এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করে তাদের প্রতি বদ দোয়া করতে নিষেধ করেন। তখন হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন।
ইলাইস সুনাননামক কিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৮১২]

فثبت بما ذكرنا انه لاينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره قياسا ونظرا على ماذكرنا من ذلك، وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.

অর্থঃ ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে যেসব যুক্তিভিত্তিক এবং দলীল ভিত্তিক আলোচনা করেছি তা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, যুদ্ধাবস্থায় এবং অন্যান্য সময়েও ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই। আর ইহাই ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চুড়ান্ত অভিমত।    
বিশ্ববিখ্যাত কিতাব আল আইনীএর ২য় খ-ের ৫৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقال قتادة عن علقمة عن ابى الدرداء قال لا قنوت فى الفجر واخرج ابو مسعود الرازى فى اصول السنة وجعل اول حديث من قال ان القنوت محمدث وان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه وقال الترمذى حديث حسن صحيح العمل عند اكثر اهل العلم.

অর্থঃ হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন ফজর নামাযে কোন কুনূত নেই। আর হযরত আবু মাসঊদ রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উছূলুস সুন্নাহ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, যিনি প্রথম হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছেন যে, নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা বিদয়াত এবং হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠের পর উহা পরিত্যাগ করেন। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই হাদীছ শরীফকেই হাসান ছহীহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর এ মতের উপর অধিকাংশ ইমাম ও মুজতাহিদ আমল করেছেন। (উছূলুস্ সুন্নাহ)
আল আইনীকিতাবের ২য় খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন যে,

وعن سعيد بن جبير قال اشهد انى سمعت ابن عباس يقول القنوت فى الفجر بدعة.

অর্থঃ- হযরত সাঈদ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমাকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত।
আর হিদায়াকিতাবের ১ম খ-ের ১৪৭ পৃষ্ঠায় হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

عن ابن عمر انه ذكر القنوت فقال والله انه لبدعة ما قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم غير شهر واحد.

অর্থঃ- হযরত আব্দূল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি কোন এক সময়ে কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত আলোচনা করার পর বলেন, “আল্লাহ পাক-এর শপথ করে বলছি; নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা বিদয়াত। হযরত রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস ব্যতীত আর কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।অতএব, বুঝা গেল রসূল পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা তরক করার কারণে উহার উপর আমল করা বিদয়াত। এ জন্যেই হানাফী মাযহাবের ফতওয়াও সেটাই। যেমন, মায়ারিফুস সুনান ৪র্থ খ-ের ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال ابو حنيفة لاقنوت فيه، واليه ذهب ابو يوسف ومحمد بن الحسن وساثر اصحبه وابن المبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد واسحاق ويحيى بن يحيى الا ندلسى واليه ذهب من التبعين الاسود والثعبى وسعيد بن جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى.
وروى عن الحسن وحكى ذلك عن ابى بكر وعمر وعثمان وعلى وابن مسعود وابن عباس وابن عمر وعبد الله بن الزبير وعبد الرحمن بن ابى بكر وابى مالك الاشجعى وابى الدرداء وقد ثبت عن ابن عمر وابن عباس وطاؤس وروى عن سعيد بن جبير الزهرى القول بانه فى الصبح بدعة وذكره الترمذى عن اكثر اهل العلم.

অর্থঃ হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই। হযরত ইমাম ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযহাবের সকল অনুসরণীয় ইমামগণ যেমন, হযরত ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত লাইছ ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে ইয়াহ্ইয়া আন্দুলুসী রহমতুল্লহি আলাইহিমগণের মতেও ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা ফজর নামাযে পাঠ করা জায়িয নেই।
অনুরূপভাবে তাবিয়ীনদের মধ্যে, ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম শাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম সাঈদ ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, আমর ইবনে সাইমুন রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম ইব্রাহীম আন নখ্য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতেও ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই। হযরত ইমাম হাসান রহমতুল্লহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন অনুুরুপভাবে হযরত আবূ রকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ মালিক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্র্ণিত আছে অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই। অনুরূপভাবে ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁদের সকলের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত, অবশ্যই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত (সাইয়্যিয়াহ) ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন। এটাই অধিকাংশ ইমাম ও মুজতাহিদগণের অভিমত।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, তারা কুনূতে নাযেলাকে জায়িয প্রমাণ করার জন্যে যে হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে তা মোটেও দলীল হিসেবে  গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সরাসরী আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই উক্ত হাদীছ শরীফখানা মানসূখ হয়ে গেছে। মানসূখ হাদীছ শরীফের উপর আমল করা ও দলীল হিসেবে পেশ করা হারাম ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়।
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

0 Comments: