পিডিএফ-
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-৫)
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায
ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ সুন্নতের
পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও
বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী,
বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায়
বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায়
এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লেখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক। তদ্রুপ ‘মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায
ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার
মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা
মায়িদার’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ- “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু
হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” মূলতঃ এই
ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে
দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ
শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে
ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা
হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। উল্লেখ্য, ইহুদীদের
এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কেও
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের
প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা
অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন
পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার
করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’ অথচ ‘কুনূতে
নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের
মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে সাধারণ লোক মনে
করবে ‘হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’ অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম
করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ
তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ
করার কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে। অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন
ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায
তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূ’র সাথে
নামায আদায় না করা,
হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি
কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর
কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার
ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির
সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়। আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি
নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে
জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর
হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্
মানাসিক) হাদীছ শরীফের বর্ণনা মোতাবেক
হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন *
১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব,
এক হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য, ক্বাযা
নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে
ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময়
আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা
করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায়
করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায়
করবেনা আর তওবাও করবে না,
তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে
ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা
হয়েছে। নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার
পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে
হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত
কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। মূলকথা, যারাই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার
মাধ্যমে লা’নত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে
কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার
ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে। কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ
নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও
যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর
ফিরে আসতে পারে, সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে, সে
উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া
মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) (পূর্ব প্রকাশিতের
পর) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সম্পর্কে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের আমল ও মন্তব্য পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্তর জন
বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে নির্মমভাবে শহীদ
করার কারণে শহীদকারী রি’ল, য্কাওয়ান ও আছিয়্যাহ গোত্রত্রয়ের প্রতি ‘বদ্দোয়া’ করার
লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করার পর তা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। যেমন, এ
প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, [২৪৯-২৫১]
قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان.
অর্থাৎ- “হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আছিয়্যা ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের উপর ‘বদ্ দোয়া’ করার
লক্ষ্যে ‘একমাস কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করেন।” (শরহে মায়ানিল আছার, ত্বাহাবী শরীফ ১ম জিঃ ১৭৫ পৃষ্ঠা, উমদাতুল
ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা,
হিদায়াহ ২য় জিঃ ৫৯০ পৃষ্ঠা) উল্লেখ্য, যে সকল
হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,
আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছিলেন। সে সকল হাদীছ শরীফে এবং অন্যান্য
হাদীছ শরীফে একথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, ثم تركه “অতঃপর
তিনি তা পরিত্যাগ করেন।”
হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে, [২৫২-২৫৪]
لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তা
পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী
শরহে হিদায়াহ ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা) কারণ, এরপর থেকে ফজর নামাযে কুনূত পাঠ
করার হুকুম ও আমল ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। যেমন,
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল
ক্বারী’ কিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২৫৫]
ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس لك من الامر شئ .... الخ، فصار ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর মতে,
যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর উপর ليس لك من الامر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই
(ফজরে কুনূত) পাঠ করা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।” এ প্রসঙ্গে হিদায়া-এর শরাহ ‘আইনী’ কিতাবের ২য় খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, [২৫৬-২৫৭]
ولابى حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ ..... ولا متابعة فيه اى فى المنسوخ لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর
মতে অর্থাৎ হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধান ‘মানসূখ’ হয়ে
গেছে। আর ‘মানসূখ’ বিষয়কে ‘অনুসরণ করা বা এর উপর আমল করা সম্পূর্ণ নাজায়িয বা হারাম।’ (আইনুল
হিদায়া) আর ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর
নামাযে ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত মুবারকের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের কেউ কখনো ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি বরং এটাকে ‘বিদ্য়াত’ বলে মন্তব্য করেছেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হায়াত মুবারকে বা তাঁর উপস্থিতিতেই ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার আমল ‘মানসূখ’ হয়ে
যাওয়ার কারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তাঁর ওফাত
মুবারকের পরেও আর কখনো ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি বরং এটাকে বিদ্য়াত
বলেই জানতেন। যেমন এ প্রসঙ্গে “মিশকাত শরীফের” ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২৫৮-২৬০]
وعن ابى مالك الا شجعى قال قلت لابى يا ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- “হযরত আবূ মালিক আল্ আশজায়ী
(তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার
পিতাকে একবার বললাম,
হে আমার পিতা আপনি তো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সাথে,
হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায়
প্রায় পাঁচ বৎসরকাল পর্যন্ত হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে
নামায আদায় করেছেন,
তাঁরা কি কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি
উত্তরে বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস্য! (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (ইবনে
মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা,
ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড) ‘মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ’ “মিরকাত
শরীফের” ৩য় খ- ১৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২৬১-২৭৬]
وعن ابى مالك الا شجعى قال قلت لابى يا ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- “(তাবেয়ী) হযরত আবূ মালিক আল আশজায়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আমার পিতাকে বললাম হে
আমার পিতা, আপনি তো স্বয়ং রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে নামায
পড়েছেন, অনূরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, এবং
এখানে কুফায় প্রায় পাঁচ বৎসর কাল পর্যন্ত হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর
সাথে জামাতে নামায আদায় করেছেন, তাঁরা কি সকলেই কুনূত অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি
উত্তরে বললেন, হে আমার বৎস! (ফজর নামাযে) কুনূত পাঠ করা বিদ্য়াত।” (বুখারী
শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ,
তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে
মাজাহ শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী,
ইরশাদুস্ সারী, হিদায়া, শরহুল
হিদায়া, বিনায়া, আইনুল হিদায়া,
আওজাযুল মাসালিক, নাইলুল আওতার, মিরয়াতুল
মানজীহ ২য় খন্ড ২৮৫ পৃষ্ঠা) উপরোক্ত হাদীছ শরীফখানার ব্যাখ্যায় “আশরাফুত
তাওযীহ” নামক কিতাবে উল্লেখ করা হয়, [২৭৭] উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “খুলাফায়ে রাশিদীন তথা হযরত আবু
বকর, হযরত উমর হযরত উছমান হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউই ফরয নামায
সমূহে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” “নাসায়ী শরীফ”-এর ১ম খ-ের ১৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
আছে, [২৭৮]
اخبرنا قتيبة عن خلف هو ابن خليفة عن ابى مالك الاشجعى عن ابيه قال صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يا بنى انها بدعة.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন, হযরত কুতাইবা রহমাতুল্লাহি আলাইহি আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি
আবার খাল্ফ যিনি ইবনে খালীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে প্রসিদ্ধ এর থেকে বর্ণনা
করেছেন, তিনি হযরত আবু মালিক আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু
মালিক আশজায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁর পিতা বলেন, আমি হযরত
নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে জামায়াতে নামায আদায় করেছি কিন্তু রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম (ফজর) নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে নামায আদায় করেছি তিনিও কোন নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। একইভাবে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত
উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহ আনহু এর পিছনে নামায
পড়েছি কিন্তু তাঁরা কেউই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অতঃপর হযরত মালিক
আশজায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে লক্ষ্য করে তাঁর পিতা বললেন, হে আমার
বৎস! নিশ্চয়ই (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” “মায়ারিফুস্
সুনান”-এর ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২৭৯]
وقال ابو حنيفة لاقنوت فيه واليه ذهب ابو يوسف، ومحمد بن الحسن وسائراصحابه وابن المبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد واسحاق ويحيى بن الاندلسى واليه ذهب من التابعين الا سود والشعبى وسعيد بن جبير وعمروبن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى وروزى عن الحسن وحكى ذلك عن ابى بكر وعمر وعثمان وعلى وابن مسعود وابن عباس وابن عمر وعبد الله بن الزبير وعبد الرحمن بن ابى بكر وابى ملك الاشجعى وابى الدرداء، وقد ثبت عن ابن عمر وابن عباس وطاؤوس وروى عن سعيد بن جبير والزهرى القول بانه فى الصبح بدعة.
অর্থঃ- “ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
যাবেনা। অর্থাৎ কোন প্রকার কুনূতই ফজর নামাযে নেই। একইভাবে মাযহাবের অনুসারী ইমাম
হযরত আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম হযরত মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে
শুরু করে তাঁর মাযহাবের সকল অনুসারী যেমন হযরত ইবনুল মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল
লাইস ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সুফীয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি
এবং হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আনদুলুসী রহমতুল্লাহিঞ্জআলাইহিম প্রমুখগণের মতে, ‘ফজরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।’ অনুরূপভাবে বিখ্যাত তাবেয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যেমন হযরত আল আসওয়াদ আশ্শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর ইবনে মাইমুন রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম নাখ্য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রমুখগণের মতেও ‘কুনূতে নাযেলা ফজরের নামাযে পাঠ
করা জায়িয বা বৈধ নয়।’
হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, হযরত আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু, হযরত উছমান হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইবনে উমর, হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত আবু মালিক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবু
দারদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ থেকেও বর্ণিত আছে, ‘ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া
নাজায়িয তথা বৈধ হবেনা।’
এটা ছাড়াও হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
সাঈদ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁদের
বক্তব্য মোতাবেক ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” এ
সম্পর্কে ইবনে মাজাহ”-এর ৮৯ পৃষ্ঠার ১নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, [২৮০]
اخرج عن ابى شيبة عن ابى بكر رضى الله تعالى عنه وعمر رضى الله تعالى عنه وعثمان رضى الله تعالى عنه انهم كانوا لايقنتون فى الفجر.
অর্থঃ- “ইমাম আবু শায়বা রহমতুল্লাহি
আলাইহি বর্ণনা করেন,
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহুমগণের কেউই ফজরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” উক্ত কিতাবের ৮৯ পৃষ্ঠায় আরো
উল্লেখ আছে, [২৮১]
واخرج عن ابن عباس وابن مسعود وابن عمر وابن الزبير انهم كانوا لايقنتون فى صلوة الفجر.
অর্থঃ- “আবু শায়বা রহমতুল্লাহি বর্ণনা
করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ তাঁরা কেউই ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” “গায়াত, শরহুন
নিকায়া” কিতাবের ১ম খ- ২২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২৮২-২৮৩]
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه انه ذكر القنوت فقال والله انه لبدعة.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর
রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত, (তাঁকে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা
সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে,)
তিনি বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর কসম করে বলছি, অবশ্যই
কুনূতে নাযেলা বিদয়াত।” “শরহে যারক্বানী” কিতাবের
১০ খ-ের ৪১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২৮৪-২৯০]
وعن سعيد بن جبير قال اشهدأنى سمعت ابن عباس يقول ان القنوت فى صلاة الفجر بدعة.
অর্থঃ- “হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন,
আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, অবশ্যই আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (দারে কুতনী, নাইলুল
আওতার, আওজাযুল মাসালিক,
হিদায়া, আইনুল হিাদায়া, আইনী) “মায়ারিফুস্
সুনান”-এর ৪র্থ খ-ের ১৭-১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২৯১]
وقال ابو حنيفة لا قنوت فيه واليه ذهب ابو يوسف ومحمدبن الحسن وسائر اصحابه وابن المبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد واسحاق ... ...
... وقد ثبت عن بن عمر وابن عباس وطاووس وروى عن سعيد بن جبير الزهرى القول بانه فى الصبح بدعة وذكره الترمذى عن اكثر اهل العلم.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ ইবনুল হাসান
রহমতুল্লাহি আলাইহিহি-এর মতে ফজরের নামাযে কোন কুনূতই পড়া যাবে না। অনুরূপভাবে
তাঁর মাযহাবের সকল ইমাম ও মুজতাহিদগণের মতে, যেমন হযরত ইবনুল মুবারক
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত লাইস ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
সুফীয়ান ছাওরী, আহমদ, ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখগণের মতেও বৈধ নয়। ..... অনুরূপভাবে হযরত ইমাম
তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরঞ্জরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসঞ্জরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, হযরত
ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাঈদ ইবনে
যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁদের বক্তব্য
থেকে প্রমাণিত অবশ্যই ফজরে কুনূতে নাযেলা পড়া বিদয়াত।” অনুরূপভাবে হযরত ইমাম তিরমিযী
রহমতুল্লাহি আলাইহিহি বর্ণনা করেন যে, অধিকাংশ ইমাম ও মুজতাহিদগণের মতেও
ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত।” “মায়ারিফুস সুনান” কিতাবের
৪র্থ খ-ের ১৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে, [২৯২]
وحديث ابى مالك الاشجعى فى عدم القنوت فى الفجر عند الخلفاء الراشدين اقوى من كل شى.
অর্থঃ- “হযরত আবূ মালিক আশজায়ী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, খুলাফায়ে
রাশিদীনগণের যুগে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া হয়নি এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী ও
গ্রহণযোগ্য মত।”
“আছারুস্ সুনান” ১ম খ-ের ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২৯৩]
وعن الأسود ان عمر رضى الله تعالى عنه كان لايقنت فى صلاة الصبح، واسناده صحيح.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে যে,
নিশ্চয়ই হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজরের নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ।” “আছারুস্
সুনান”-এর ১ম খ-ের ২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [২৪৩]
وعن الأسود انه صحب عمر ابن الخطاب رضى الله تعالى عنه سنين فى السفر والحضر فلم يره قانتا فى الفجر حتى فارقه.
অর্থঃ- “হযরত আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর
সঙ্গে কয়েক বৎসর সফরে এবং মুকিম অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু তাঁকে জীবনের শেষ পর্যন্ত
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়তে দেখেননি।” হাদীছ
শরীফে আরো উল্লেখ আছে,
[২৯৫]
عن الاسود قال كان ابن مسعود لايقنت فى شئ من الصلوت الا وترا فانه كان يقنت (فيه) قبل الركعة اى الركوع (اسناد صحيح)
অর্থঃ- “হযরত আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
শুধুমাত্র বিত্র নামাযে রুকূর পূর্বে কুনূত পড়েছেন। তাছাড়া অন্য কোন নামাযে কোন
প্রকার কুনূত পাঠ করেননি। হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ।” (ইলাউস্
সুনান) হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে [২৯৬-২৯৮]
وعن علقمة والاسود ومسروق انهم قالوا كنا نصلى خلف عمر فلم يقنت. (رواه الطحاوى اسناده صحيح)
অর্থঃ- “হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি
হযরত আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মাসরুক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত।
তারা সকলেই তাবেয়ী ছিলেন,
তাঁরা বলেন, আমরা হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে ফজর নামায আদায় করেছি কিন্তু তিনি ফজর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।”
(ইমাম তাহাবী এটা ছহীহ সনদে বর্ণনা করেন) ইলাউস সুনান ৬ষ্ট
খন্ড ৮৪ পৃষ্ঠা, আছারুস সুনান ২য় খন্ড ২০ পৃষ্ঠা) উক্ত বিখ্যাত তাবেয়ী আলকামা ও আল আসওয়াদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, [২৯৯]
قوله عن علقمة وعن الاسود. الخ دلالتهما على ترك القنوت فى الفجر ظاهرة.
অর্থঃ- “বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আলকামা
রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উভয়ের পক্ষ থেকে বর্ণিত
হাদীছ শরীফদ্বয় কুনূতে নাযেলা ফজরের নামাযে তরক বা পরিত্যাগ করার ব্যাপারে
প্রকাশ্য তথা সুস্পষ্ট দলীল। (ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খ- ৮৪ পৃষ্ঠা) “ইলাউস
সুনান” কিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৮৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, [৩০০]
وعن ابى الشعثاء الى قوله عن نافع الخ قلت دلالة الاثار على ترك القنوت فى الفجر وغيرها من المكتوبة وعلى ان اكثر الصحابة كانوا لا يقنتون فيها.
অর্থঃ- “আবু শা’ছা
রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন ঐ ক্বওল সম্পর্কে যেটা হযরত ইমাম নাফে’ রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন, আছার সমূহের ভিত্তিতে প্রমাণিত যে, ফজরের নামাযে এবং অন্যান্য ফরয নামাযসমূহে কুনূতে নাযেলা তরক করা আবশ্যক।
এবং এটাও প্রমাণিত যে,
অধিকাংশ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” “আছারুস সুনান” ২য় খ-ের
২১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৩০১]
وعن عمران بن الحارث السلمى صليت خلف ابن عباس الصبح فلم يقنت (اسناده صحيح)
অর্থঃ- “হযরত ইমরান ইবনুল হারিস আস্
সালামী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে ফজরের নামায আদায় করেছি কিন্তু তিনি
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। হাদীছ শরীফখানা ছহীহ।” “আল জাওহারুন্ নক্বী” কিতাবের
১ম খ-ের ১৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩০২]
وعن مجاهد وسعيد بن جبير، ان ابن عباس كان لايقنت فى صلاة الفجر، اخرجه ابن ابى شيبة فى المصنف وسنده صحيح.
অর্থঃ- “হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজরের নামাযে কোন কুনূত পাঠ
করেননি।” (হযরত ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তার (মুছান্নাফের মধ্যে এ হাদীছ শরীফ
খানাকে ছহীহ হিসাবে বর্ণনা করেছেন) “ইলাউস্ সুনান”-এর ৬ষ্ঠ
খ-ের ৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩০৩]
وعن علقمة رضى الله تعالى عنه قال كان عبد الله رضى الله تعالى عنه لايقنت فى صلاة الصبح. (وسنده صحيح)
অর্থঃ- “হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন,
হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল্লা আনহু ফজরের নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।”
হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফ খানা ছহীহ
সনদে বর্ণনা করেছেন। “আছারুস সুনান”
এবং “ইলাউস্ সুনানে” আরো উল্লেখ করা হয়, [৩০৪-৩০৫]
وعن سعيد بن جبير رضى الله تعالى عنه قال صليت خلف ابن عمر وابن عباس فكانا لايقنتان فى صلاة الصبح وسنده صحيح.
অর্থঃ- “হযরত সাঈদ বিন জুবাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইবনে
আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে নামায আদায় করেছি কিন্তু
তাঁরা দু’জনই ফজরের নামাযে কোনদিনই কুনূত তথা কুনুতে নাযেলা পাঠ করেননি। হাদীছ শরীফখানা
ছহীহ।” “শরহে যুরক্বানী”
১ম খ-ের ৪৫৬ পষ্ঠা, “আল আছার”-এর ১ম
খ-ের ৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩০৬-৩০৭]
اخبرنا ابو حنيفة عن حماد عن ابراهيم ان ابن مسعود لم يقنت هو ولا احد من اصحابه حتى فارق الدنيا يعنى فى صلاة الفجر.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আ’যম আবূ
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত
ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বয়ং এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণ কেউই ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এমন কি দুনিয়া থেকে
বিদায় হওয়া পর্যন্তও কুনুতে নাযেলা পড়েননি। এ হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ।” “শরহে
মায়ানিল আছার”-এর ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে [৩০৮]
محمد بن مسلم الطائفى قال حدثنى عمرو بن دينار قال كان عبد الله بن الزبير رضى الله تعالى عنه يصلى بنا الصبح بمكة فلا يقنت.
অর্থঃ- “হযরত মুহম্মদ বিন মুসলিম তায়িফী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আমর বিন দীনার রহমতুল্লাহি
আলাইহি। তিনি বলেন,
বিখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু মক্কা শরীফে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। কিন্তু তিনি ফজর নামাযে
কোন প্রকারের কুনুত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। “শরহে মায়ানিল আছার”-এর ১৭৯
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৩০৮]
عن سعيد بن جبير قال صليت خلف ابن عمر رضى الله تعالى عنهما وابن عباس رضى الله تعالى عنهما فكانا لايقنتان فى صلوة الصيح.
অর্থঃ- “হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা
এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উভয়ের পিছনে ফজরের
নামায জামায়াতে আদায় করেছি কিন্তু তাঁরা উভয়েই ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি।” “শরহে মায়ানিল আছার”
কিতাবের ১৭৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, [৩১০]
وعن ابراهيم عن الاسود ان عمر رضى الله تعالى عنه كان لايقنت فى صلوة الصبح وعن الاسود وعمرو بن ميمون قال صلينا خلف عمر رضى الله تعالى عنه الفجر فلم يقنت وعن ابراهيم عن علقمة والاسود ومسروق انهم قالوا كنا نصلى خلف عمر رضى الله تعالى عنه فى الفجر فلم يقنت.
অর্থঃ- “(ছিক্বাহ রাবী) হযরত ইব্রাহীম আল
আসওয়াদ তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” হযরত আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি
এবং হযরত আমর বিন মাইমুনাঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমরা
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজরের নামায আদায় করতাম কিন্তু তিনি
ঐ নামাযে কোন কুনূতই পড়েননি। হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি
হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মাসরুক
রহমতুল্লাহি আলাইহি (তাবেয়ী) থেকে বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন, আমরা
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে ফজরের নামায আদায় করতাম কিন্তু তিনি
ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” “আল আছার” নামক
কিতাবের ১ম খ-ের ১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩১১]
وعن ابن الحارث السلمى قال صليت خلف ابن عباس رضى الله تعالى عنه الصبح فلم يقنت وفى رواية فى داره الصبح فلم يقنت قبل الركوع ولا بعده.
অর্থঃ- “হযরত ইবনুল হারিছ সালামী রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে
ফজরের নামায আদায় করেছি কিন্তু তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। অপর একটি বর্ণনায়
এসেছে তাঁর বাড়ীতে আমি তাঁরই পিছনে ফজরের নামায আদায় করেছি। কিন্তু তিনি রুকুর
পূর্বে কিংবা পরে কোন কুনূত পাঠ করেননি।” “আছার, আছারুস
সুনান, আবু দাউদ” কিতাবে উল্লেখ আছে,
[৩১২-৩১৪]
وعن علقمة قال كان عبد الله لا يقنت فى صلوة الصبح.
অর্থঃ- “হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ফজরের নামাযে কোন কুনুতই পাঠ করতেন না।” ‘শরহে মায়ানিল আছার’ নামক
কিতাবের ১ম খ-ের ১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩১৫]
عن عبد الرحمن بن الاسود عن ابيه قال كان ابن مسعود لا يقنت فى شئ من الصلوات الا الوتر فانه كان يقنت فيه قبل الركعة.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আল আসওয়াদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তাঁর পিতা বলেন, হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিত্র নামাযে রুকূর পূর্বে দোয়া
কুনূত পাঠ করা ব্যতীত অন্য কোন নামায সমূহে কুনূত পাঠ করেননি।” বিশ্বখ্যাত
হাদীছগ্রন্থ হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “তাহাবী
শরীফের” ১ম খ-ের ১৭৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, [৩১৬]
ثبت بما روينا عنه نسخ قنوت رسول الله صلى الله عيه وسلم بعد الركوع ونفى القنوت قبل الركوع اصلا وان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يفعله ولا خلفاؤه من بعده.
অর্থঃ- “আমরা হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে যে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছি তা থেকেই প্রমাণিত আছে যে, ফজর
নামাযে রুকুর পরে হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কুনূতে নাযেলা
পাঠ করতেন তা মানসুখ করা হয়েছে এবং রুকুর পূর্বের কুনূতকেও মূলতঃ নিষেধ করা হয়েছে।
আর মানসুখ হয়ে যাওয়ার পর হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি এবং খুলাফায়ে রাশিদীনগণও তাঁর পরে কখনো কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি।” “নাইলুল আওতার”
কিতাবের ৩য় খ-ে উল্লেখ আছে, [৩১৬]
ولاقنت ابوبكر وعمر رضى الله تعالى عنهما حتى ماتوا.
অর্থঃ- “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওফাত
মুবারক পর্যন্ত কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘শরহে
মায়ানিল আছার’ কিতাবের ১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, [৩১৮]
وقد روينا عن اخرين من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم ترك القنوت فى سائر الدهر.
অর্থঃ- “হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবীদের মধ্য থেকে যারা শেষ যুগের ছিলেন, তাঁরা
সকলেই সর্ব যুগে সর্বকালেই কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেছিলেন (রাবী বলেন) সেটাই
আমরা বর্ণনা করলাম।”
‘শরহে মায়ানিল আছার’ নামক কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ আছে, [৩১৯]
قال ابو جعفر فهذا عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه لم يكن يقنت فى دهره كله وقد كان المسلمون فى قتال عدوهم فى كل ولاية عمر رضى الله تعالى عنه او فى اكثرها فلم يكن يقنت لذالك وهذا ابو الدرداء ينكر القنوت وابن الزبير رضى الله تعالى عنه لا يفعله وقد كان محاربا حينئذ.
অর্থঃ- “হযরত আবু জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি
আলাইহিহি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাঁর সারাজীবনে
কুনূতে নাযেলা পড়েননি। এবং হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পুরা খিলাফতকালে
কিংবা খিলাফতের অধিকাংশ সময় পর্যন্ত মুসলমানগণ যখন তাঁদের শত্রুদের সাথে যুদ্ধে
লিপ্ত ছিলেন তখনও হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর এ
কারণেই হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কুনূতে নাযেলা-এর বিরোধিতা
করেছিলেন এবং হযরত ইবনে জুবাইর রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যুদ্ধে লিপ্ত থাকাকালীন
অবস্থায়ও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” ‘আল আইনী’ কিতাবের
২য় খ-ের ৫৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, [৩২০]
وقال قتادة عن علقمة عن ابى الدرداء قال لا قنوت فى الفجر.
অর্থঃ- “হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আলকামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে তিনি হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
থেকে বর্ণনা করে বলেন, হযরত আবু দারদা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ফজর
নামাযে কোন কুনূতই নেই। অর্থাৎ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বৈধ নয়।” উপরোক্ত দলীল-আদীল্লাহর ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো যে, কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যাওয়ার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা করাকে মানসূখ, বিদয়াত ও মুহদাছ বলে মন্তব্য করেছেন। আর এ কারণেই আখিরী
রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত মুবারকের
পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও কখনো কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি। (চলবে) পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায়
থাকুন
0 Comments:
Post a Comment