“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-৯)
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে
ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের
অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে
এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ ‘মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায
ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার
মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র
কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদার’
৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ- “তোমরা
তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।”
মূলতঃ এই ইহুদীরাই
মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে দ্বীন
ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী
ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট
হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা
হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের
এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কেও
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের
প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা
অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন
পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার
করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’
অথচ ‘কুনূতে
নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের
মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন
ইনশাআল্লাহ।
তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার
কারণে সাধারণ লোক মনে করবে ‘হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’ অথচ
শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান
বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার
মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে
ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে।
অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন
ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায
তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূ’র সাথে
নামায আদায় না করা,
হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি
কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর
কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত
জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার
ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির
সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়।
আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان مقداره الف سنة.
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি নামায তরক করলো,
এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে
ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা
হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের
সমান।” (মাজালিসুল আবরার,
আল্ মানাসিক)
হাদীছ শরীফের বর্ণনা
মোতাবেক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০
দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।)
অতএব, এক
হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য,
ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায
ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে
আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ
করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে
দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা
রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে না, তাদের যে
কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই
হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা
ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি
ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায়
না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
মূলকথা, যারাই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে
বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয ফতওয়া
দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার মাধ্যমে লা’নত বা
কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া
দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট,
ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা
সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রই
সর্বদা করে যাচ্ছে।
কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে
যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল
ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে
তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী
বা সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে
উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
শাফিয়ী মাযহাবে ফযর বা
অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয ॥ হানাফী মাযহাবে নয়
পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা
প্রমাণিত হয়েছে যে,
সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার কারণে শহীদকারী রি’ল, য্কাওয়ান, আছিয়্যাহ
ও লিহ্ইয়ান গোত্রগুলোর প্রতি ‘বদ্দোয়া’ করার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস
‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করার পর তা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।
যেমন, এ
প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
[৫৫০-৫৫২]
لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.
অর্থঃ- “আল্লাহ
পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত
পাঠ করেছেন। অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে
কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩
পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী শরহে হিদায়াহ ২য় খ- ৫৯০
পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের
বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী’
কিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৫৩]
ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس لك من الأمر شئ .... الخ، فصار ذالك عندابن عمر رضى الله عنه منسوخا.
অর্থঃ- “হযরত
ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতে, যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ليس لك من الأمر شئ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই (ফজরে কুনূত) পাঠ করা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।”
আর ‘মানসূখ’ হয়ে
যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সময়ে
বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর নামাযে ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে “মিশকাত
শরীফের” ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৫৪-৫৫৬]
وعن ابى مالك الاشجعى قال قلت لابى يا ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- “হযরত আবূ
মালিক আল্ আশজায়ী (তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার
পিতাকে একবার বললাম,
হে আমার পিতা! আপনি তো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সাথে,
হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায়
প্রায় পাঁচ বৎসরকাল পর্যন্ত হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে
নামায আদায় করেছেন,
তাঁরা কি কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি
উত্তরে বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস্য! (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (ইবনে
মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা,
ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড)
শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে
তাবিয়ীন, তাবে’ তাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি বরং ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত, নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, “মায়ারিফুস
সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৫৭]
وقال ابو حنيفة لاقنوت فيه واليه ذهب ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن المبارك والليث بن سعد وسفيان الثورى واحمد واسحاق ويحى بن يحى الاندلسى وذهب اليه من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى والطاؤس والزهرى.
অর্থঃ- “হযরত
ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কোন কুনূতই পাঠ করা যাবেনা। এ মতের উপর
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল আল্লামা মুহম্মদ ইবনে
হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি-এর সকল অনুসরণীয় আছহাবগণের মতে যেমন হযরত ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
লাইছ ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইয়াহইয়া ইবনে
আন্দুলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
যাবেনা। অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর
ইবনে মাইমুনঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম আন্নাখয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা
যাবেনা।
এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের
হানাফী মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ তথা ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে হানাফী মাযহাবের সকল
বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে
মানসূখ, নাজায়িয ও বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ পূর্ববর্তীু সংখ্যায়
দেয়া হয়েছে।
তবে হ্যাঁ, শাফিয়ী
মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজর নামায এবং অন্যান্য
নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয।
শাফিয়ী মাযহাব মতে কুনূতে
নাযেলা
পাঠ করা জায়িয হওয়ার
প্রমাণ
এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত
তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৪র্থ খ-ের ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৫৮]
وقيل يقنت فى الفجر دائما فى سائر الصلوات اذا نزل بالمسلمين نازلة قاله الشافعى.
অর্থ: “বলা
হয়েছে যে, যখন মুসলমানদের মধ্যে বিপদ আসবে তখন ফযর নামাযে সর্বদা এমনকি সকল নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে। এটাই শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার মত।”
“মিরকাত শরীফ”-এর ৩য়
খ-ের ১৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৫৯]
قال الشافعى ان نزلت نازلة بالمسلمين قنت فى جميع الصلوات ...... ما زال رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت فى صلاة الصبح حتى فارق الدنيا.
অর্থ: “হযরত
ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন মুসলমানদের উপর বিপদ আসবে তখন
সকল ফরয নামাযসমূহে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে। তিনি দলীল হিসেবে হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাদীছ শরীফখানা পেশ করেন যে, হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা ফযরের নামাযে কুনূত পাঠ
করতেন, এমন কি দুনিয়া থেকে পৃথক হওয়া পর্যন্ত।”
হানাফীদের মতে উপরোক্ত
হাদীছ শরীফখানা বিশুদ্ধ নয়। কারণ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
উক্ত বর্ণনায় সম্পূর্ণ বিপরীত বর্ণনা বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে। যে বর্ণনাকে
হানাফীগণ দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যেমন, বিশ্বখ্যাত কিতাব “তানক্বীছুত
তাহক্বীক্ব আহাদীসুত তা’লীক্ব” ১ম খ-ের ৫২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৬০-৫৬১]
وعن انس بن مالك ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يقنت الا شهرا واحدا حتى مات.
অর্থ: “হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবদ্দশায় শুধুমাত্র একমাস
ব্যতীত আর কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” (আল আইনী ২য় খ-, ৫৯২
পৃষ্ঠা)
“আল ফিকহুল ইসলামী”-এর ১ম
খ-ের ৮১০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৫৬২]
واما القنوت النبى صلى الله عليه وسلم فى الفجر شهرا فهو منسوخ بالاجماع.
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে শুধুমাত্র একমাস কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেছিলেন,
তা ইজমা তথা সকল ইমাম ও মুজতাহিদগণ উনাদের ঐক্যমতে মানসুখ
বা রহিত হয়েছে।
আর মানসুখ বিধানের উপর আমল
করা যে জায়িয নেই,
এটাও ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত।”
যেমন “মাওয়াহিবুল
লাদুননিয়্যাহ” ও “শরহুয যারকানী”-এর ১০ খ-ের ৪২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৬৩]
لان العمل بالمنسوخ لا يجوز اتفاقا.
অর্থ: “সকল
ইমামগণ উনাদের ঐক্যমতে মানসুখ বা রহিত বিধানের উপর আমল করা নাজায়িয তথা হারাম।”
হযরত ইমাম শাফিয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিপক্ষে আমাদের দলীল হচ্ছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ খানা।
যেমন বিশ্বখ্যাত কিতাব “আল আইনী”-এর ২য়
খ-ের ৫৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৬৪]
لماروى ابن مسعود رضى الله عنه انه عليه السلام قنت فى صلاة الفجر شهرا ثم تركه هذا الحديث حدة لنا على الشافعى.
অর্থ: “কেননা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে শুধুমাত্র একমাস
কুনূরেত নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বর্জন তথা পরিত্যাগ করেন।
এ হাদীছ শরীফখানাই হচ্ছে শাফিয়ী মাযহাবের বিপক্ষে আমাদের হানাফী মাযহাবের সুস্পষ্ট
দলীল।”
অতএব, প্রমাণিত
হলো যে, ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। এটা শাফিয়ী মাযহাবের মত। হানাফী
মাযহাবের নয়। বরং হানাফী মাযহাব মতে ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয, বিদয়াত, হারাম।
হানাফীদের জন্য শাফিয়ী বা
অন্য মাযহাবের অনুসরণ করা নাজায়িয ও হারাম
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা
সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে কুনূতে
নাযেলাকে জায়িয বলেছেন। যা আমাদের হানাফীদের নিকট বিশুদ্ধ বর্ণনা নয়। আর
হানাফীগণের দলীল হচ্ছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত হাদীছ শরীফ। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ফজর নামাযসহ সকল নামাযেই কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। আর হানাফীদের মতে অন্যান্য নামাযে তো নয়ই বরং ফজর
নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।
কাজেই হানাফী মাযহাবের
অনুসারী হয়ে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার অর্থই হচ্ছে, শাফিয়ী
মাযহাবের মতকে অনুসরণ করা যা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয় বরং সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয।
যেমন এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৩/৩৪৪ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
[৫৬৫]
فيكون كل من المذاهب الاربعة حقا بهذا المعنى فالمقلد اذا قلد اى مجتهد يخرج عن الوجوب ولكن ينبغى ان يقلد احدا التزامه ولايؤل الى اخر.
অর্থঃ- “যখন চার
মাযহাবের প্রত্যেকটিই হক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হলো, তাই এ অর্থে মুকাল্লিদের জন্য যে
কোন একটি মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করাও ওয়াজিব। অতএব, যে ব্যক্তি কোন এক মাযহাবের
ইমামকে অনুসরণ করবে সে শুধু সেটাই আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। অন্য কোন মাযহাবের অনুসরণ
করবে না।”
এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে
আহমদিয়া” কিতাবের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,
[৫৬৬]
واما الثانى وهو انه اذا التزم الطبعية يجب عليه ان يدوم على مذهب التزامه ولا ينتقل الى مذهب اخر.
অর্থঃ- “দ্বিতীয়তঃ
কোনও মাযহাবকে প্রকৃতভাবে গ্রহণ করলে দায়িমীভাবে সে মাযহাবেরই অনুসরণ করা ওয়াজিব।
তাই এক মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যাবেনা তথা হারাম।
“কিমিয়ায়ে সায়াদাত”-এর ২৩৫
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৬৭]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “নিজ
মাযহাবের ইমামের খিলাফ করা কারো জন্যেই জায়িয নেই।
“কিমিয়ায়ে সায়াদাত”-এর ২৩৫
পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৫৬৮]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “নিজ
ইমামের ইজতিহাদের খিলাফ কোন কাজ করলে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে এবং প্রকৃতপক্ষে তা
করা হারাম হবে।”
“ইকদুলজিদ”-এর ১ম
খ-ের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৬৯]
المرجح عند الفقهاء ان العامى المنسب له مذهب لا يجوز مخالفته.
অর্থ: “ফক্বীহগণ
উনাদের নিকট প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত এই যে, কোন মাযহাব পন্থী সাধারণ ব্যক্তির
জন্যে নিজ মাযহাবের খিলাফ কোন আমল করা জায়িয নেই।”
হযরত ইমাম গাজ্জালী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন”
কিতাবে উল্লেখ করেন,
[৫৭০]
بل على المقلد اتباع مقلده فى كل تفصيل فان مخالفة للمقلد متفق على كونه منكرا بين المحققين.
অর্থ: “প্রত্যেক
মুকাল্লিদের প্রতিটি বিষয়েই একই ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। কেননা বিজ্ঞ সকল ইমামের
এটাই মত যে, নিজ মাযহাবের খিলাফ করা নিষিদ্ধ।”
প্রসিদ্ধ “তাহরীর” নামক
কিতাবে উল্লেখ আছে,
[৫৭১]
وكذا للعامى الانتقال من مذهب الى مذهب فى زماننا لا يجوز لظهور الخيانة.
অর্থ: “সব
সাধারণের জন্য বর্তমান যুগে এক মাযহাব ছেড়ে অন্য মাযহাবের অনুসরণ করা জায়িয নেই
বরং হারাম। কারণ এতে দ্বীনের খিয়ানত প্রকাশ পায়।”
আল্লামা জালালুদ্দীন
সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “জাযীলুল মাযহাব” কিতাবে উল্লেখ করেন,
[৫৭২]
اليوم من تحول من مذهبه فبئس ما صنع.
অর্থ: “বর্তমান
যুগে যে ব্যক্তি নিজ মাযহাব হতে ফিরে অন্য মাযহাবের আমল করে সে অতি জঘন্য কাজ
করলো।”
আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব “আল মালূমা” এ উল্লেখ
করেন,
[৫৭৩]
قالوا الواجب على المقلد المطلق اتباع مجتهد فى جميع المسائل.
অর্থ: “বিজ্ঞ
আলিমগণ বলেন, কোন ইমামের অনুসরণকারীর প্রতি যাবতীয় বিষয়ে শুধু উনারই অনুসরণ করা ওয়াজিব।”
নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ
“তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৭৪]
قد وقع الاجماع على ان الاتباع انما يجوز للاربع فلا يجوز الاتباع لابى يوسف ومحمد وزفر وشمس الائمة اذا كان قولهم مخالفا لاربع وكذا لايجوز الاتباع.
অর্থ: “ইজমা
সাব্যস্ত হয়েছে যে,
শুধু মাত্র মাযহাবের চার ইমামের অনুসরণ করা জায়িয তাছাড়া
অন্যান্য ইমামদের অনুসরণ করা হারাম। যেমন, হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম যুফার রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম শামছূল আইম্মা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ইত্তিবা বা অনুসরণ করাও
জায়িয নেই বরং হারাম। তাদের কথার উপরও আমল করা জায়িয হবেনা। যখন চার ইমামের মধ্যে
যে কোন ইমামের মতের খিলাফ (কোন মাযহাবের অনুসরণীয় ইমাম) মত পোষণ করে থাকেন।”
হযরত ইমাম আবু হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম
মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই বরং হারাম ও
বিদয়াত।
এরপরেও উক্ত ইমামগণ উনাদের
মতের খিলাফ করে হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়া ‘বিপদকালীন
সময়ে কুনূতে নাযেলা ফযর নামাযে পাঠ করা যাবে’- এটা কি করে মান্য করা যায়? এটা কখনও
হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ উনাদের জন্য মান্য করা জায়িয হবেনা বরং হারাম’ ও
নাজায়িয এবং বিদয়াত। এটা শুধু শাফিয়ী মাযহাবের জন্য জায়িয আছে। আর হানাফীদের জন্য
হানাফী মাযহাবের খিলাফ করে শাফিয়ী মাযহাবের মাসয়ালার উপর আমল করা নাজায়িয ও হারাম।
যেমন “তাফসীরে
আহমদী” কিতাবের ৩৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৭৫]
لا يجوز الانتقال من مذهب الى مذهب اخر كذلك لا يجوز ان يعمل فى مسئلة على مذهب وفى اخرى على اخر.
অর্থ: “এক
মাযহাবের পক্ষে যেমন অন্য মাযহাবে প্রত্যাবর্তন করা নাজায়িয তথা হারাম। ঠিক
তেমনিভাবে যে কোন একটি মাসয়ালায় এক মাযহাবের অনুসরণ আবার অন্য একটি মাসয়ালায় অন্য
এক মাযহাবের অনুসরণ করা জায়িয নেই বরং হারাম।”
[৫৭৬]
ان حكم الملفق باطل بالاجماع.
অর্থ: “সর্বসম্মতিক্রমে
শরীয়তে মুলফিক বাতিল তথা ভ্রষ্ট ও পরিত্যাজ্য।” (আর মুলফিক ঐ ব্যক্তিকে বলে, যে দুই
মাযহাবের মাসয়ালাকে একত্র করে আমল করে।)
“দুররুল মুখতার” কিতাবে
তাযিরের অধ্যায়ে আরো উল্লেখ আছে,
[৫৭৭]
من ارتحل الى مذهب الشافعى يعزر.
অর্থ: “যে
ব্যক্তি নিজ মাযহাবের আমল পরিত্যাগ করে শাফিয়ী (কিংবা অন্যান্য) মাযহাবের অনুসরণ
করে সে শাস্তির উপযুক্ত।”
“তাফসীরে আহমদী”-এর ৩৪৬
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৭৮]
لا يجوز للحنفى العمل على مذهب الشافعى رحمة الله عليه.
অর্থ: “হানাফীদের
জন্য শাফিয়ী মাযহাবের (মাসয়ালার উপর) আমল করা নাজায়িয তথা হারাম।”
অতএব, উপরোক্ত
দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কারভাবে ফুটে উঠলো যে, হানাফীদের
জন্য শাফিয়ী বা অন্যান্য মাযহাবের মাসয়ালার উপর আমল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও
নাজায়িয। যেহেতু কুনূতে নাযেলা পাঠ করা শাফিয়ী মাযহাবে জায়িয, কিন্তু
তা হানাফী মাযহাবে হারাম বিদয়াত ও নাজায়িয। তাই হানাফীদের জন্য কুনূতে নাযেলা পাঠ
করাও হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
হানাফী মাযহাবে যে সকল
রাবীগণ উনাদের বর্ণনাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে
স্মর্তব্য যে, ফিকাহশাস্ত্রের
মূলভিত্তি স্থাপন কারী ইমাম ও ফকীহ হচ্ছেন ইমামুল আইম্মা, ইমামুল আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহ আলাইহি। তিনি ফিক্বাহের মাসয়ালা ইসতিমবাত করতে গিয়ে ছিক্বাহ
রাবীগণ উনাদের ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকেই গ্রহণ করতেন। এজন্য তিনি উল্লেখ করেন,
اذا صح الحديث فهو مذهبى.
অর্থ: “ছহীহ
হাদীছ শরীফই আমার মাযহাব।”
অর্থাৎ আমার মাযহাবের প্রতিটি বিষয়ই ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা
সাব্যস্ত।
আর ইমামে আ’যম, হযরত আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি মাসয়ালা প্রণয়ন করতে যে সকল রাবীদের কাছ থেকে হাদীছ
শরীফ সংগ্রহ করে দলীল হিসাবে গ্রহণ করতেন সে সকল রাবীগণ হচ্ছেন হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে প্রথম স্তরের ফক্বীহ। যেমন চার
খলীফা এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হাকিমুল উম্মত হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
প্রমূখ রাবীগণ হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনাকে হানাফী মাযহাবের দলীল হিসেবে গ্রহণ
করতেন।
তবে বিশেষ করে অধিকাংশ
ক্ষেত্রে ফক্বীহুল উম্মত জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রিওয়ায়েত ও মতই হচ্ছে
হানাফী মাযহাবের মূল দলীল।
এ প্রসঙ্গে “ক্বাওয়ায়িদুল
ফিকহী” কিতাবের ৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৭৯-৫৮০]
اخذ الفقه (ابوحنيفة) عن التابعى الفقيه الصدوق الامام حماد بن ابى سليمان الاشعرى المتوفى سنة ১২০ وهو عن التابعى الجليل الامام الفقيه لسن فقهاء اهل الكوفة ابراهيم بن يزيد بن قيس النخعى الكوفى المتوفى سنة ৯৪ وهو عن كثيرين من اجلة التابعين منهم الامام الفقيه علقمة بن قيس بن عبد الله المولود فى حياة النبى صلى الله عليه وسلم والمتوفى سنة ৪২ والامام الفقيه العابد الاسود بن يزيد بن قيس بن يزيد ابو عمرو النخعى الكوفى المولود فى عصر النبى صلى الله عليه وسلم الراوى عن الخلفاء الراشدين المتوفى سنة ৭২ والامام الفقيه العابد عمروين شرحبيل ابو ميسرة الهمدانى المتوفى سنة ৬৪ وهؤلاء عن اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم منهم خادم النبى صلى الله عليه وسلم صاحب الوسادة والنعلين اشبه الناس بالنبى صلى الله عليه وسلم سمتا ودلا وهديا سيدنا عبد الله ابن مسعود رضى الله عنه المتوفى سنة ৩২.
অর্থ: “ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশিষ্ট তাবিয়ী ও তাবিয়ী ফকীহ হযরত ইমাম
হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছ থেকে ইলমে ফিক্বাহ
শিক্ষা করেন। যার ওফাত ১২০ হিজরী সনে। তিনি আবার কুফীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত
ফিকাহবিদ হযরত ইবরাহীম ইবনে ইয়াজিদ ইবনে কায়িস নখয়ী কুফী তাবিয়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার কাছ থেকে ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করেন। যার ওফাত ৯৬ হিজরী সনে।
তিনি আবার অধিকাংশ জলীলুল
ক্বদর তাবিয়ীনগণ উনাদের নিকট থেকে ফিক্বাহ শাস্ত্রের ইলম অর্জন করেছেন। বিশেষ করে
তাবিয়ীদের মধ্যে থেকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাবিয়ী আল ইমামুল ফক্বীহ হযরত আলক্বামা ইবনে
কায়িস ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬২ হিজরীতে ওফাত গ্রহণ করেন।
অনুরূপবাবে আল ইমামুল ফক্বীহুল আবিদ আল আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ ইবনে কায়িস ইবনে ইয়াযিদ
আমর নখয়ী কুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় জন্মগ্রহণ করেন এবং খুলাফায়ে
রাশিদীনগণ উনাদের নিকট থেকে হাদীছ শরীফ সংগ্রহ করেন। যার ওফাত মুবারক ৭২ হিজরী
সনে। অনুরূপভাবে আল ইমামুল ফক্বীহুল আবিদ আমর ইবনে শুরাহবিল আবু মাইসার আল হামদানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
ওফাত ৬৪ হিজরী। উনারা সবাই হযরত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী উনাদের নিকট থেকে ইলমে ফিক্বাহ
শিক্ষা গ্রহণ করেন। বিশেষ করে ছাহাবী উনাদের মধ্যে থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট খাদিম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যিনি হযরত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বালিশ মুবারক, না’লাইন
শরীফ সংরক্ষন করতেন। ছাহাবীগণ উনাদের মধ্যে তিনিই গুন বৈশিষ্ট্য এবং দ্বীনের পথ
প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ,
নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। তিনি ৩২ হিজরীতে ওফাতবরণ করেন।
(মিশকাত ৬০৫ পৃষ্ঠা)
“কাওয়ায়িদুল ফিকহী” কিতাবের
৫৬২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেক আছে,
[৫৮১]
وابن مسعود رضى الله عنهم فانتشر الدين والفقه فى الامة خصوصا عن اصحاب ابن مسعود وعلى من المفاتى بالكوفة كعلقمة بن قيس النخعى والاسود بن يزيد وعمرو بن شرحبيل ومسروق بن الاجدع واقرانهم ثم بعدهم ابراهيم النخعى فقيه اهل الكوفة وامثاله ثم بعدهم حماد ابن ابى سليمان واشباهه ثم بعد هم ابوحنيفة ومن حذا حذوه ثم بعدهم اصحاب ابى حنيفة رضى الله عنه كابى يوسف القاضى ومحمد الشيبانى ونعير هما رضى الله عنهم وهذه سلسلة الذهب من ائمة الدين فى القرون المشهود.
অর্থ: “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দ্বীন ও ফিক্বাহ উম্মতে
মুহম্মদীর মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রসার করেছেন। বিশেষ করে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সহচর তথা অনুসারীদের মাঝে কুফায় যাঁদেরকে
দ্বীন ও ফিক্বাহর শিক্ষা দিতেন উনারা হচ্ছেন যেমন, হযরত আলক্বামা ইবনে কায়িস নখয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত আমর ইবনে শুরাহবিল রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত
মাসরুক্ব ইবনে আল আজদায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনাদের সমসাময়িক যাঁরা ছিলেন
উনারা অতঃপর কুফাবাসীদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকীহ হযরত ইবরাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি এবং উনার সময়কার ফক্বীহগণ অতঃপর উনাদের পরে বিশিষ্ট ফক্বীহ হযরত হাম্মাদ
ইবনে আবু সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার সমপর্যায়ের যারা ছিলেন উনারা।
অতঃপর উনাদের পরে দ্বীন ও
ফিক্বাহের ধারক বাহক হন ইমাম আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার সমসাময়িক ও
পরে যাঁরা ছিলেন উনারা হচ্ছেন ইমাম আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ শাইবানী রহমতুল্লাহি আলাইহি আর এভাবে দ্বীন ও ফিক্বাহর
প্রচার ও প্রসারের ধারাবাহিকতা মাযহাবের ইমাম উনাদের মাধ্যমে ক্বিয়ামত পর্যন্ত
চলতেই থাকবে।
অতএব উপরোল্লিখিত আলোচনার
প্রেক্ষিতে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠলো যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হচ্ছেন আমাদের হানাফী মাযহাবের মূল।
ফক্বীহুল উম্মত হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফাযায়িল-ফযীলত ও
মর্যাদা-মর্তবা
কেননা এই প্রখ্যাত ফক্বীহ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফিক্বহী ইলমের সিলসিলা
পর্যায়ক্রমে ইমাম আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট পৌঁছেছে। আর ইমামে আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হুবহু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার যাবতীয় ফিক্বহের তর্য-তরীক্বা তথা মাযহাব গ্রহণ
করেন।
যেমন এ সম্পর্কে কিতাবে
উল্লেখ আছে, ইমাম আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উছূল (মুলধারা) তথা শরীয়তের মূল
মাসয়ালাসমূহ গ্রহণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
রিওয়ায়েত ও মতাবলম্বী ছিলেন। কারণ, তিনি ছিলেন সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফক্বীহ, বিজ্ঞ
বিদ্রান ও খাদিম। তাই উনাকে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার জ্ঞানে সমস্ত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হতেই অধিক মর্যাদা দেয়া হয়। উনার কতিপয়
বিশেষ কারণ নি¤েœ প্রদত্ত হলো-
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইসলামে ৬ষ্ট নম্বরের মুসলমান ছিলেন। তিনি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে বাড়িতে, ছফরে ও
যুদ্ধে সদা সর্বদা কাছে থাকতেন।
তিনি, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার না’লাইন
শরীফ, বালিশ মুবারক,
বিছানা মুবারক, ওযূর পানি মুবারক ইত্যাদি বহন
করতেন। (কাওয়ায়িদুল ফিক্বহী ৪ পৃষ্ঠা, মিশকাত, বুখারী
শরীফ, মুসলিম শরীফ,
তিরমিযী শরীফ ৫৪৪ পৃষ্ঠা)
“বুখারী শরীফ”-এর ২৭
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
“আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে অতি মুগ্ধ হয়ে মুহব্বতে নিজ বক্ষ
মুবারক উনার সাথে চেপে ধরতেন। এটার বরকতেই তিনি ছাহাবী উনাদের মধ্যে প্রধান ফক্বীহ
হয়েছিলেন।
তিনি বদরী ছাহাবী ছিলেন।
সমস্ত যুদ্ধেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ,
নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সঙ্গে ছিলেন,
এত অধিক ছোহবত ও খিদমতে থাকার কারণেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট তিনি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার সঠিক শিক্ষা লাভ
করেছিলেন। আর এর কারণেই উনার ব্যাপারে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মন্তব্য করেছেন যে, ‘যদি কারো
কামনা থাকে যে, যেভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে সেই ভাবেই শিখবে তবে হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট শিখবে।” (তিরমিযী
শরীফ ৫৪৪ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করে শুনাতেন এবং উনার নিকট থেকেও শুনতেন
এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকেও উনার নিকট
থেকে শিক্ষা নিতে আদেশ করতেন।
আর হাদীছ শরীফ উনার বিষয়ে
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলতেন যদি হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কোন হাদীছ শরীফ তোমাদের নিকট বর্ণনা
করেন তবে তা অতি সত্য ও ছহীহ মনে করিও। (হিকায়েতে ছাহাবী ৯৫ পৃষ্ঠা)
তিনি এত বড় বিশ্বস্ত
মুহাদ্দিছ ছিলেন যে,
উনার নিকট হতে তায়ালা আনহু, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনারা এরূপ বড় বড় ছাহাবীগণ হাদীছ শরীফ রিওয়ায়েত করেছেন। উনাকে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এত গভীর ভালবাসতেন যে উনাকে
নিজ পরিবারবর্গ তূল্য মনে করতেন এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যার প্রতি সন্তুষ্ট, আমিও উনার প্রতি সন্তুষ্ট, এবং তিনি
যাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট,
আমিও তার প্রতি অসন্তুষ্ট এবং আমি বিনা পরামর্শে কাউকেও
আমীর নিযুক্ত করলে তবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে
করবো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বেহেস্তী হিসেবে
সু-সুংবাদ দিয়েছেন।
হযরত উমর ফারুক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইলমে শরীয়তের একটি পরিপূর্ণ গুদাম বা ক্ষনী।
প্রসিদ্ধ তাবিয়ী হযরত ইমাম
আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবরাহীম তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
থেকে বর্ণনা করেন যে,
হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কোন বিষয়ে মতভেদ করতেন না
বরং একই মতে থাকতেন। (সাইফুল মাযাহিব ১৭৪/১৭৫ পৃষ্ঠা)
কিন্তু হযরত ইবরাহীম নখয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
মতকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি অধিক সুক্ষ্মদর্শী ছিলেন।
হযরত আবু মুসা আশয়ারী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে কেউ কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেতেন,
[৫৮২]
لاتسئلونى مادام هذا الحبر فيكم.
অর্থ: “তোমরা
আমাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিওনা যতক্ষণ তোমাদের মাঝে এই বিজ্ঞ আলিম (আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বিদ্যমান থাকেন।” (মিশকাত
২৬৪ পৃষ্ঠা)
এরূপ অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে
যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কুরআন শরীফ ও
হাদীছ শরীফ উনার এবং ইলমে দ্বীনের অঘাত জ্ঞানে পরিপূর্ণ ছিলেন। যা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও পরবর্তীতে তাবিয়ীনগণ হতে স্বীকৃত আছে।
তাই ইমামে আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অধিকাংশ বিষয়েই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাদীছ শরীফ উনার মতের ও আমলের অনুসারি ছিলেন। যেমন, নামাযে
শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠান, ঈদের নামাযে ছয় তাকবীর পড়া, ইমামের
পিছনে ক্বিয়ামত না পড়া,
নামাযে বিসমিল্লাহ ও আমিন চুপে বলা, বিতর তিন
রাকায়াত পড়া, দোয়ায়ে কুনূত বিতরের নামাযের শেষ রাকায়াতে রুকুর পূর্বে পড়া, সফরে চার
রাকায়াত ফরয নামাযের স্থলে দুই রাকায়াত কছর ফরয হিসেবে আদায় করা, ফযর
নামায সূর্যোদয়ের পূর্বে রওশনীতে পড়া, তারাবীর নামায বিশ রাকায়াত
জামায়াতে পড়া ইত্যাদি আমল ও মাসয়ালাসমূহে ইমাম আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মতাবলম্বী
ছিলেন।
কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে
হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা
উনার বক্তব্য ও আমল
অনুরূপভাবে ইমামে আ’যম আবূ
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি “ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা” পাঠ করার ক্ষেত্রেও ফক্বীহুল
উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বক্তব্য ও আমলকে
দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। “কুনূতে নাযেলা” সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বক্তব্য ও আমল হলো, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমাত্র ফযর নামাযে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেছেন এরপর তা মানসূখ হয়ে যায়। এর আগে ও পরে আর কখনো তিনি ফযর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। তাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি নিজেও এরপর আর কখনো ‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করেননি। বরং এটাকে বিদয়াত ও
নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে “উমদাতুল
ক্বারী” ৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় ও “শরহে মায়ানিল আছার” কিতাবের ১ম খ-ের ১৭৫ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ আছে,
[৫৮৩-৫৮৫]
وعن ابى حمزة عن ابراهيم عن علقمة عن عبد الله بن مسعود قال لم يقنت النبى صلى الله عليه وسلم الا شهرا لم يقنت قبله ولا بعده وحدثنا ابنا ابى داؤد قال حدثنا المقدمى قال ثنا ابو معشر قال ثنا ابو حمزة عن ابراهيم عن علقمة عن ابن مسعود رضى الله عنه قال قنت رسول الله صلى الله عيه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما ظهر عليهم ترك القنوت كان ابن مسعود رضى الله عنه لايقنت فى صلوة الغداة قال ابو جعفر فهذا ابن مسعود رضى الله عنه يخبر ان قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم الذى كان انما كان من اجل من كان يدعو عليه انه قد كان ترك ذلك فصار القنوت منسوخا فلم يكن هو من بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت وكان احد من روى ذلك ايضا عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه ثم قد اخبرهم ان الله عزو جل نسخ ذلك حين انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس لك من الأمر شئ فصار ذلك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا ايضا فلم يكن هو يقنت بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان ينكر على من كان يقنت.
অর্থ: “হযরত আবূ
হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা
(ফযর নামাযে) পাঠ করেন। এর পূর্বে এবং পরে কখনও আর কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
হযরত ইমাম আবূ জাফর তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি। তিনি বলেন,
আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত মাক্বদামী রহমতুল্লাহি
আলাইহি। তিনি বলেন আমাদের কাছে হযরত আবূ মা’শার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি
বলেন, আমাদের কাছে হযরত আবূ হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার থেকে,
তিনি হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হাদীছ শরীফ
বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আছিয়্যাহ এবং যাকওয়ান
গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদদোয়ায় একমাস ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তাদের
উদ্দেশ্যে যখন ليس لك من الامر شئ “এ বিষয়ে
আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।” আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়, তখন
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করা ছেড়ে
দেন। অর্থাৎ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন।
আর এ কারণেই হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি।
আবূ জাফর তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে
অন্যান্য ছাহাবী উনাদেরকে এভাবে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, আছিয়্যাহ ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের
প্রতি বদদোয়ায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ,
নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি কিছু সময় পর্যন্ত কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন। অতঃপর অতিশীঘ্রই তা
পরিত্যাগ করেন, ফলে কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যায়।
আর এ কারণেই হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করার পর আর কখনই
তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
আর যে সমস্ত রাবী
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা
করেছেন, উনাদের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও একজন
অন্যতম রাবী ছিলেন। অতঃপর তিনি অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ উনাকে এই সংবাদ দিয়েছেন যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি
কুনূতে নাযেলা মানসূখ করে দিয়েছে, যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ,
নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার উপর-
ليس لك من الأمر شئ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার
প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন। আর তখনই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার নিকট কুনূতে নাযেলা মানসূখ হওয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে যায়, আর এ
কারণেই হযরত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগের পর
আর কখনই তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং যারা কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন
উনাদেরকে নিষেধ করতেন।”
(ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খ- ৮৪, ৮৫ পৃষ্ঠা)
“শরহে মায়ানিল আছার” কিতাবের
১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৮৬]
قال ابو جعفر فهذا عبد الله بن مسعود لم يكن يقنت فى دهره كله وقد كان المسلمون فى قتال عدوهم فى كل ولاية عمر رضى الله عنه فى اكثرها فلم يكن يقنت لذالك وهذا ابو لدرداء ينكر القنوت وابن الزبير رضى الله تعالى عنه لايفعله وقد كان محاربا حينئذ.
অর্থ: আবূ জা’ফর
তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সারাজীবনে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এবং
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পূরা খিলাফতকালে কিংবা খিলাফতের অধিকাংশ
সময় পর্যন্ত মুসলমানগণ যখন উনাদের শত্রুদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন তখনও উমর
ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। আর এই কারণেই আবূ
দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেন। আর ইবনে
যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও যুদ্ধাবস্থায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
“আছার” কিতাবের
১ম খ- ৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেক আছে,
[৫৮৭-৫৮৮]
ان ابن مسعود لم يقنت هو ولا احد من اصحابه حتى فارق الدنيا يعنى فى صلاة الفجر سنده صحيح. (اعلاء السنن ج৬ ص ৮৯)
অর্থ: “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কেউই জীবনে কখনো ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
এই হাদীছ শরীফ উনার সনদ ছহীহ। (ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খ- ৮৯ পৃষ্ঠা)
বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহর কিতাব
“আল আইনী” ২য় খ-ের ৫৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৮৯-৫৯৩]
لماروى ابن مسعود رضى الله عنه انه عليه الصلاة والسلام قنت فى صلاة الفجر شهرا ثم تركه هذا الحديث حجة لنا على الشافعى رواه البزار فى مسنده والطبرانى فى معجمه وابن ابى شيبة فى مصنفه والطبرانى فى الاثار كلهم من حديث سويد القاضى عن ابى حمزة ميمون القصاب عن ابراهيم عن علقمة عن عبد الله بن مسعود قال لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولا بعده.
অর্থ: “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই
হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযরের নামাযে একমাস কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেন অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ তথা বর্জন করেন। আর এই হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা
সংক্রান্ত হাদীছ শরীফখানাই শাফিয়ী মাযহাবের বিপক্ষে আমাদের হানাফী মাযহাবের স্পষ্ট
দলীল।
হযরত ইমাম বাযযার
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসনাদে বর্ণনা করেন, তবারানী উনার মু’জামে, হযরত ইবনে
আবী শাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুছান্নাফে, “তবরানী আছার” কিতাবে
বর্ণনা করেন। আর উনারা প্রত্যেকেই সুয়াইদুল কাযী থেকে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা
করেছেন, তিনি হযরত আবু হামযা মাইমুনাল কাছছাব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি
হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার থেকে,
তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবলমাত্র একমাস ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেছিলেন। অতঃপর তা পাঠ করা বর্জন তথা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে এবং পরে আর
কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।”
“আল আইনী” কিতাবের
২য় খ-ের ৫৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৯৪]
كان ابن مسعود لا يقنت فى صلاته.
অর্থ: “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেই তার নামাযে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি।”
“কিতাবুল হুজ্জাত”-এর ১ম
খ-ের ১০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৯৫]
اخبرنا ابو حنيفة عن حماد عن ابراهيم النخعى ان عبد الله ابن مسعود لم يقنت هو ولا احد من اصحابه حتى فارق الدنيا فى الفجر.
অর্থ: “ইমামে আ’যম হযরত
আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি
হযরত ইবরাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে কেউই উনাদের জীবদ্দশায় ফযর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
এছাড়াও হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেই যে ইমামে আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় মাযহাবের দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন তার
বহু প্রমাণ রয়েছে।
“কিতাবুল উছূল”-এর ১ম
খ-ে “ফাহরাস”-এর ১২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৯৬]
وكان ابو حنيفة ياخذ بقول ابن مسعود رضى الله عنه.
অর্থ: “ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার বর্ণনাকেই গ্রহণ করেছেন।”
উক্ত কিতাবের ১৮৩ পৃৃষ্ঠায়
আরো উল্লেখ আছে,
[৫৯৭]
الذى بينا قول ابن مسعود رضى الله عنه وبه اخذ علماؤنا رحمة الله عليهم.
অর্থ: “আমরা
স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি যে, আমাদের মাযহাবের উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাওল শরীফ উনাকেই দলীল
হিসেবে গ্রহণ করেছেন। (কিতাবুল উছূল)
যেমন, অন্য এক
মাসয়ালার ব্যাপারে উল্লেখ আছে,
انما اخذنا بقول ابن مسعود رضى الله عنه.
অর্থ: “নিশ্চয়ই
আমরা হানাফীগণ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
বর্ণনাকে গ্রহণ করেছি।”
“আল ফিকহুল ইসলামী”-এর ১ম
খ-ের ৮১০ পৃষ্ঠায় আছে,
[৫৯৮]
واما القنوت النبى صلى الله عليه وسلم فى الفجر شهرا فهو منسوح بالاجماع لماروى ابن مسعود انه عليه السلام قنت فى صلاة الفجر شهرا ثم تركه.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে একমাস যেই কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেছেন,
তা সকল ইমামগণ উনাদের ঐক্যমতে মানসুখ বা রহিত হয়েছে। কেননা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র একমাস ফযর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন, অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন।
এছাড়া ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয, বিদয়াত ও
মানসুখ হওয়ার ব্যাপারে আরো অন্যান্য রাবীগণ উনাদের বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনাকে দলীল
হিসাবে গ্রহণ করেছেন। যেমন উম্মুল মুমিনীন, হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ।
“আল বিনায়া শারহুল হিদয়া”-এর ২য়
৫৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৫৯৯-৬০৮]
عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن القنوت فى صلاة الصبح.
অর্থ: “হযরত
উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযরের নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী
শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ,
মাজমাউয যাওয়ায়িদ, বযলুল মাজহুদ, মিরকাত, হিদায়া, আইনী)
“আল আইনী”-এর ২য়
খ-ের ৫৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬০৯-৬১১]
عن انس انه عليه السلام انما قنت شهرا يدعو على احياء من العرب ثم تركه. غالب بن فرقد الطحاوى قال كنت عند انس بن مالك شهرين فلم يقنت فى صلاة الغداة.
অর্থ: “হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবলমাত্র ফযরের নামাযে একমাস
আরব গোত্রের প্রতি বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন। অতঃপর তা পাঠ করা পরিত্যাগ
করেন।
হযরত গালিব ইবনে ফারক্বাদ
তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি দু’মাস ধরে
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছেই (নামাযেই) ছিলাম কিন্তু তিনি ফযর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।” (মিশকাত, মিরকাত
৩য় খ-)
এছাড়াও কুনূতে নাযেলা
মানসূখ, নাজায়িয, বিদয়াত ও হারাম হওয়ার ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের থেকে বর্ণিত
হাদীছ শরীফ উনাকেও দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মূলকথা হলো, হানাফী
মাযহাবে যে সকল রাবীগণ উনাদের বর্ণনাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে তন্মধ্যে মূল
ও অন্যতম হচ্ছেন,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আর
উনার মতেই ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত ও নাজায়িয। এটাই মূলতঃ হানাফী
মাযহাবের অভিমত।
হানাফী মাযহাব মতে ফযর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলে অবশ্যই নামায ফাসিদ হবে
উল্লেখ থাকে যে, আখিরী
রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবল মাত্র আরবের কয়েকটি
গোত্রের প্রতি বদদোয়ায় একমাস ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন। অতঃপর ঐ কুনূতে
নাযেলা পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে এবং পরে আর কখনই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। এমনকি
ওফাত মুবারক হওয়া পর্যন্ত।
ইসলামের প্রথম যুগে
নামাযের মধ্যে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠার সময় দুই হাত উঠানো বৈধ
ছিল, পরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিত্যাগ করার কারণে তা মানসূখ
হয়ে যায়। ফলে এখন নামাযের মধ্যে رفع اليدين করলে হানাফী মাযহাব মতে বৈধ হবে না। এ প্রসঙ্গে “আল আইনী”-এর ২য়
খ-ের ২৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬১২]
احتج به الشافعى من الذى روى من رفع اليدين فى الركوع فى الرفع سنة واراد بقوله محمول على الابتداء انه كان فى ابتداء الاسلام ثم نسخ كذا نقل عن ابن الزبيربن العوام رضى الله عنهما وابن الزبير من الاسماء العالية.
অর্থ: “রুকুর
সময় দু’হাত উঠানোর ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনাকে ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি দলীল হিসেবে গ্রহণ করে رفع اليدين কে সুন্নত বলেন। যা ইসলামের প্রথম যুগে ছিল অতঃপর رفع اليدين সম্পর্কিত হাদীছ শরীফখানা মানসূখ হয়ে যায়। যা হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের থেকে বর্ণনা করা
হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসমা আল আলিয়া
থেকে বর্ণনা করেন।
“আল আইনী”-এর ২য়
খ-ের ৩০০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[৬১৩-৬১৪]
ان ابن الزبير راى رجلا يرفع يديه فى الصلاة عند الركوع وعند رفع الراس من الركوع فقال له لا تفعل فان هذا شئ فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم تركه قال ابن الجزرى فى التحقيق زعمت الحنفية ان احاديث الرفع منسوخة بحديثين رووا احدهما عن ابن عباس رضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يرفع يديه كلما ركع وكلما رفع ثم صار الى افتتاح الصلاة وترك ما سوى ذلك والثانى رووه عن ابى الزبير انه راى رجلا يرفع يديه من الركوع فقال له فان هذا شئ فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم تركه وهذان حديثان لايعرفان اصلا.
অর্থ: “নিশ্চয়ই
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এক ব্যক্তিকে নামায
অবস্থায় রুকু করার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠার সময় رفع اليدين তথা দু’হাত উঠাতে দেখলেন। অতঃপর উনাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, আপনি আর “রফে
ইয়াদাইন” করবেন না। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ,
নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি সেটা করেছিলেন অতঃপর তা বর্জন তথা পরিত্যাগ করেছেন।
হযরত ইবনে জাযরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘তাহক্বীক’ নামক কিতাবে আছে, হানাফী মাযহাবের দাবী হলো, অবশ্যই ‘রফে
ইয়াদাইন’ সংক্রান্ত হাদীছ শরীফগুলো দু’টি হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে মানসুখ হয়েছে।
প্রথমটি হচ্ছে হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি
বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক রুকু এবং রুকু থেকে
মাথা উঠানোর সময় যে দু’হাত উঠাতেন তা সব কিছুই পরিত্যাগ করেন। শুধু মাত্র নামায আরাম্ভ করার সময় যে, দু’হাত
উঠাতে হয়, সেটা ব্যতীত।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, হযরত আবু
যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি
একজন ছাহাবী উনাকে নামাযে রুকু থেকে উঠার সময় দু’হাত উঠাতে দেখলেন। অতঃপর উনাকে
উদ্দেশ্যে করে বললেন যে,
এটা এমন বিষয় যা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি করেছেন। অতঃপর “রফে
ইয়াদাইন” পরিত্যাগ করেছেন। মূলতঃ এই হাদীছ শরীফ দু’খানা অনেকই জানেন না। (আল আইনী)
অতএব বুঝা গেল, ‘রফে
ইয়াদাইন’ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তরক করার কারণে মানসুখ হিসেবে
সাব্যস্ত হওয়ার ফলে হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো, নামাযের মধ্যে মানসুখের কোন আমল
করলে নামায ফাসিদ হবে।
“শরহুয যারকানী” ১০ম খ-ের
৪২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬১৫-৬১৯]
لان العمل بالمنوخ لايجوز اتفاقا.
অর্থ: “সকল
ইমামগণ উনাদের ঐক্যমতে মানসুখ তথা রহিত বর্ণনার উপর আমল করা নাজায়িয তথা হারাম।” (আইনুল
হিদায়া, হিদায়া, বিনায়া, আল আইনী)
বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বাহের
কিতাব “আল আইনী”-এর ২য় খ-ের ৫৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬২০-৬২১]
عن ابى حنيفة رحمة الله عليه ان من عمل عملا من رفع يديه عند الركوع وعند رفع الراس منه يفسد الصلاة.
অর্থ: “ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, কোন ব্যক্তি যদি এমন আমল বা কাজ
করে যে, রুকুর সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় তার দু’হাত উঠায়
তাহলে তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।” (আল হিদায়া মায়াদ দিরায়া হাশিয়া ১ম খ-/১৪৫ পৃষ্ঠা)
কেননা হানাফী মাযহাব মতে ‘রফে
ইয়াদাইন’ আমলে কাছীরের অন্তর্ভুক্ত, আর আমলে কাছীর নামাযে করলে নামায ফাসিদ হবে। অনুরূপভাবে
কুনূতে নাযেলা আমলে কাছীরের অন্তর্ভুক্ত। এর মাধ্যমে নামায ফাসিদ হবে।
“হিদায়া মায়াদ দিরায়া” ১৪৫
পৃষ্ঠায়, ১৬নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[৬২২]
ان المصلى اذا كان حنفيا لايقنت فى الفجر اقتداء الحنفى بشافعى المذهب غير جائر. وعن ابى حنيفة ان من رفع يديه عند الركوع وعند رفع الراس منه تفسد صلاته وجعل ذلك عملا كثير فصلاتهم فاسدة عندنا فلايصلح الاقتداءبهم (عناية).
অর্থ: “যদি
মুক্তাদী হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয় আর ইমাম যদি শাফিয়ী মাযহাবের হয় তাহলে
হানাফীগণ ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবেনা। (যেহেতু সেটা মানসুখ) এ কারণে
হানাফীদের জন্য শাফিয়ী মাযহাবের অনুসরণ করা জায়িয নেই। ইমাম আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, যে
ব্যক্তি রুকুর সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠার সময় ‘রফে ইয়াদাইন’ করে তবে
তার নামায ফাসিদ হবে। কেননা এগুলো আমলে কাছীরের অন্তর্ভুক্ত। ফলে আমাদের হানাফীদের
জন্য এগুলো আমল করা বৈধ হবেনা বরং নামায ফাসিদ হবে। (যেহেতু এ কাজগুলো মানসুখ
হওয়ায় আমলে কাছীরের অন্তর্ভুক্ত।”
উপরোক্ত ফতওয়ার মাধ্যমে
এটা সুস্পষ্টভাবে উদ্ভাসিত হল যে, রফে ইয়াদাইন নামাযের মধ্যে করলে হানাফী মাযহাব মতে নামায
ফাসিদ হবে। কেননা রফে ইয়াদাইন করা সংক্রান্ত হাদীছসমূহ মানসুখ হয়েছে।
তাই অনুরূপভাবে কুনূতে
নাযেলা যেহেতু মানসুখ হয়েছে সেহেতু নামাযের মধ্যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলেও হানাফী
মাযহাবের ফতওয়া মুতাবিক নামায ফাসিদ হবে।
কুনূতে নাযেলা মানসুখ
হওয়ার দলীল হচ্ছে যেমন,
“আল আইনী” কিতাবের ২য় খ-ের ৫৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬২৩-৬২৬]
لماروى ابن مسعود رضى الله عنه انه عليه السلام قنت فى صلاة الفجر شهرا ثم تركه هذا الحديث حجة لنا على الشافعى وعن علقمة عن عبد الله قال لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولا بعده وجه الاستدلال به انه يدل على ان قنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح انما كان شهرا واحدا او كان يدعو على اقوام ثم تركه فدل على انه كان ثم نسخ.
ان الله عز وجل نسخ ذلك بقوله ليس لك من الأمر شئ او يتوب عليهم او يعذبهم فانهم ظالمون نفى ذلك ايضا وجوب ترك القنوت فى الفجر.
অর্থ: “হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে কেবলমাত্র একমাস
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তা পাঠ করা বর্জন তথা পরিত্যাগ করেন।
আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এই কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা সংক্রান্ত
হাদীছ শরীফ খানা শাফিয়ী মাযহাবের বিপক্ষে আমাদের হানাফী মাযহাবের সুস্পষ্ট দলীল।
অনুরূপভাবে হযরত আলক্বামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনাদের থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলমাত্র একমাস ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেন। অতঃপর সেই কুনূতে নাযেলা পাঠ করা তরক করেন। এর পূর্বে এবং পরে কখনও তিনি
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি।
আর এই হাদীছ শরীফ দ্বারা
দলীল পেশ করার কারণ হল,
এই হাদীছ শরীফ প্রমাণ করে যে, অবশ্যই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আরবের) কয়েকটি গোত্রের প্রতি বদদোয়ায় কেবল
মাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তা পাঠ করা বর্জন তথা পরিত্যাগ করেন।
অতএব ثم تركه. এ শব্দের দ্বারাও প্রমাণ করে যে কুনূতে নাযেলা ছিল কিন্তু পরে
মানসুখ তথা রহিত হয়ে যায়।
(অনুরূপভাবে আরো বর্ণিত আছে)
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং উনার বাণী-
ليس لك من الأمر شئ الاية.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার
প্রয়োজন নেই।”
এই আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করার
মাধ্যমেও কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ করেন। আর এই কারণেই ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা
পরিত্যাগ করা ওয়াজিব তথা ফরয। (মায়ারিফুস সুনান, ইলাউস সুনান ৬ খ-, উমদাতুল
কারী ৬ খ-)
“আল বিনায়া শরহুল হিদায়া” কিতাবের
২য় খ-ের ৫৯০ পৃষ্ঠায় রয়েছে,
[৬২৭-৬২৮]
عن ابن مسعود قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعو على عصية وذكوان فلما نهى عليهم ترك القنوت.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আছিয়্যাহ এবং যাকওয়ান গোত্রের
প্রতি বদদোয়ায় কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন। অতঃপর যখন উনাদের
প্রতি বদদোয়া করতে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিষেধ করলেন তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন,
হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করা ছেড়ে দেন অর্থাৎ
পরিত্যাগ করেন। (আল আইনী)
অতএব, হাদীছ
শরীফ দ্বারা প্রমানিত হলো যে, ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ
থেকে নিষেধ। যা নামাযে বর্জন করা ফরয। আর কুরআন শরীফ উনার বাণী- ليس لك من الأمر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ দ্বারাও কুনূতে
নাযেলা মানসুখ। যা নামাযে পরিত্যাগ করাও ফরয। যদি ফযর কিংবা অন্যান্য ফরয নামাযে
কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ না করে বরং পাঠ করে, তাহলে ফরয ত্যাগের কারণে নামায
ফাসিদ হবে। আর ফিক্বাহের সমস্ত কিতাবে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, নামাযে
কোন রুকন তথা ফরযসমূহ ত্যাগ করলে নামায ফাসিদ হবে। নামায নতুন করে আদায় করতে হবে।
যেমন, “আল আইনী”-এর ২য়
খ-ের ৫৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[৬২৯]
انما يكون مفسدا اذا كان فى ركن من ار كان الصلاة او شرائطها.
অর্থ: “নামাযে
রুকনসমূহ এবং শর্তসমূহের কোন একটি রুকন বা শর্ত পরিত্যাগ করলে নামায ফাসিদ হয়ে
যাবে।”
যেমন, “আল আইনী”-এর ২য়
খ-ের ৫৯৭ পৃষ্ঠায় আছে,
[৬৩০-৬৩৩]
ولابى حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ وقد بينا وجهه مستوفى ولا متابعة فيه اى فى المنسوخ الان الاتباع فيه لايجوز.
অর্থ: “হযরত
ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার মতে ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ তথা বাতিল হয়েছে।
আর আমরা পরিস্কারভাবে এর কারণটি উল্লেখ করেছি যে, মানসুখ তথা রহিত বিষয়ের উপর কোন
ইত্তিবা বা অনুসরণ বৈধ নেই। কেননা মানসুখ বিষয়ে নামাযের মধ্যে ইত্তিবা বা অনুসরণ
করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। (বিনায়া, হিদায়া, আল আইনী, আইনুল
হিদায়া) (চলবে)
0 Comments:
Post a Comment