পিডিএফ-
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ (পর্ব-২০)
“হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার
কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ
পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর
নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার
কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত,
হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের
নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী
মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই
প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও
অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”
এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়,
যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ
করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত
বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদার’ ৮২নং আয়াত
শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوةللذين امنوا اليهود والذين
اشركوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর
যারা মুশরিক তাদেরকে।”
মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে
বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী
ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে
মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট,
ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব
তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে
নাযেলা’ সম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান
ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার
আহ্বান জানায় এবং তারা অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে।
শুধু তাই নয়,
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী
ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার
করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল দলীল হলো,
‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’ অথচ ‘কুনূতে
নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন
ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ।
তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে সাধারণ লোক মনে করবে ‘হানাফী
মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’ অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও
হারাম করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপভাবে
তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ করার
কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে।
অথচ নামায হচ্ছে,
দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই
বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায তরক করা,
ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ
করা, নামাযে অবহেলা করা,
খুশু-খুযূ’র সাথে
নামায আদায় না করা, হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি কার্যকলাপ
কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ।
যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুছ্ ছলাহ্,
অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং
হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
عن جابررضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين
العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
বান্দার ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো
নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা
কাফির হয়ে যায়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من ترك الصلوةحتى مضى وقتهاثم قضى عذاب فى النار
حقباوالحقبةثمانون سنةوالسنة ثلث ما ئة وستون يوماكل يوم كان مقداره الف سنه.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে
গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে জাহান্নামে
এক হুক্ববা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হুক্ববা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি
দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার,
আল্ মানাসিক)
হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক হুক্ববার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী
নিম্নরূপ-(৮০ বছর x ৩৬০ দিন = ২৮৮০০ দিন x ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব,
এক হুক্ববা = ২,৮৮,০০০০০ বছর।
উল্লেখ্য, ক্বাযা নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয
হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে।
ফরয নামায যথা সময় আদায় না করার কারণেই তাকে এক হুক্ববা শাস্তি
ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা করে,
তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন।
অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায় করলেও শাস্তি থেকে
অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায় করবেনা আর তওবাও করবে
না, তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে
ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই
হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার পর কাযা আদায় করলেও যেখানে
এক হুক্ববা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার
অপেক্ষাই রাখেনা।
মূলকথা, যারাই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ
বা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ
করে দেয়ার মাধ্যমে লা’নত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে
কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস
করার ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে।
কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান-আমল
হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক
ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর ফিরে আসতে পারে।
সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ
করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ
পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল
করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত অখ্যাত রাহমানী পয়গামের জিহালতপূর্ণ
ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব
বিগত আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম
দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ওহাবী, খারিজী ও বিদ্য়াতীরা দীর্ঘদিন ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা বা বদদোয়ার
কুনূত পাঠ করে। সাথে সাথে অখ্যাত রহমানী পয়গাম ডিসেম্বর, ২০০২ সংখ্যায়
এক জিজ্ঞাসার জবাবে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে জায়িয বলে ফতওয়া দেয়া হয়। সঙ্গত কারণেই
মাসিক আল বাইয়্যিনাতের পাঠকদের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত একটি সুওয়াল আল বাইয়্যিনাত কর্তৃপক্ষের
নিকট আসে। মাসিক আল বাইয়্যিনাত এর ফেব্রুয়ারী’ ২০০৩ সংখ্যায় রাহমানী পয়গামের
বক্তব্য খ-ন করতঃ একটি জাওয়াব দেয়া হয়। উক্ত জাওয়াব পেয়ে তারা সম্পূর্ণ লা-জাওয়াব হয়ে
যায়। এর কিছুুদিন পর “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” থেকে একটি
গবেষণালব্ধ ও দলীলভিত্তিক লিফ্লেট সারা দেশে প্রচার করা হয়। যাতে বলা হয়েছে যে, “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনুতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত ও নামায ফাসিদ হওয়ার
কারণ।
“উক্ত লিফলেটের
একটি কপি তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আযীযুল হকের মাদ্রাসার শিক্ষক ঢাকা শাহজাহানপুর আমতলা
মসজিদের তথাকথিত খতীব মুফতী মনছূরুল হক্বের নিকট পৌছানো হয় এবং উক্ত লিফলেটের জবাব
দেয়ার জন্যে বলা হয়। মনছূরুল হক সাতদিনের মধ্যে উক্ত লিফলেটের জাওয়াব দিবে বলে জানায়।
কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তার কাছ থেকে উক্ত লিফলেটের কোন জাওয়াব পাওয়া গেলনা।
এরপর মাসিক আল বাইয়্যিনাতের পাঠকগণের পূনঃ পূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে
মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ১৩২তম সংখ্যা থেকে কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে আরো অধিক দলীল-আদিল্লাহ-এর
ভিত্তিতে আরো বিস্তারিতভাবে ফতওয়া প্রদান করা হয়। যা এখনো অব্যাহত আছে।
উক্ত ফতওয়া প্রকাশের পর ওহাবী, খারিজী
ও বিদয়াতী মৌলভী যারা “ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা” পাঠ করেছিল তারা সাধারণ জনগণের
নিকট জাহিল, গোমরাহ ও বিদয়াতী হিসেবে সাব্যস্ত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে এবং
নিজেদের জিহালতী ও গোমরাহী ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত সুওয়াল, লিফলেট
ও ফতওয়া কোনটাই খ-ন না করে দীর্ঘ প্রায় তিন বৎসর পর রাহমানী পয়গাম আগস্ট’ ২০০৫ সংখ্যায়
সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর,
কারচুপিমূলক বক্তব্য প্রদান করে এবং
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইবারত কারচুপি করে ও শাফিয়ী মাযহাবের মতকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে
কুনূতে নাযেলাকে জায়িয করার ব্যর্থ অপপ্রয়াস চালিয়েছে। তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ১৪৮তম
সংখ্যা থেকে রাহমানী পয়গামে প্রদত্ত কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত মনগড়া, বিভ্রান্তিকর
ও কারচুপিমূলক প্রতিটি বক্তব্য ও দলীল খন্ডন করতঃ সঠিক জাওয়াব প্রদান করা হচ্ছে। যাতে
সাধারণ জনগণ পয়গাম গোষ্ঠীর জিহালতী,
গোমরাহী, ধোঁকাবাজী, প্রতারণা
ও জালিয়াতী সম্পর্কে আরো সুস্পষ্টভাবে অবগত হতে পারে এবং তাদের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে
নিজ ঈমান ও আমলকে হিফাযত করতে পারে।
নিম্নে ধারাবাহিকভাবে রাহমানী পয়গামে প্রদত্ত “কুনূতে
নাযেলা” সম্পর্কিত জিহালতপূর্ণ বক্তব্যসমূহকে পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করে
তার বিশুদ্ধতায় ছহীহ দলীলভিত্তিক খ-নমুলক জাওয়াব দেয়া হলো।
পয়গাম গোষ্ঠীর মনগড়া বক্তব্য ও দলীল-৩
পয়গাম গোষ্ঠী অখ্যাত রাহমানী পয়গাম, আগস্ট-২০০৫
ঈসায়ী সংখ্যায় মনগড়াভাবে কুনূতে নাযেলাকে জায়িয করতে গিয়ে তার স্বপক্ষে তৃতীয় দলীল
হিসেবে “সুনানে বাইহাক্বী”
থেকে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ
করেছে।
“হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ (রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু) হতে বর্ণিত,
وعن عبدالله قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا يدعوعلى
عصيةوذكوان فلماظهر عليهم تركى القنوت:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাস কুনূতে
নাযেলা পড়েছেন। এতে উছাইয়্যাহ এবং যাকওয়ান গোত্রের উপর বদ দু’য়া করেছিলেন
অতঃপর যখন তাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে ফেললেন তখন কুনূত পড়া বন্ধ করে দিলেন।
(সুনানে বাইহাক্বী- ২/২১৩)”
পয়গাম গোষ্ঠীর জিহালতপূর্ণ বক্তব্য ও মনগড়া দলীলের খ-ণমুলক জবাবঃ
পয়গাম গোষ্ঠীর উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, পয়গাম গোষ্ঠী
কুনূতে নাযেলাকে জায়িয করার অপচেষ্টা করতে গিয়ে “সুনানে বাইহাক্বী” থেকে উপরোক্ত
হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসেবে উল্লেখ করে আবারও চরম জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে।
কেননা হাদীছ শরীফের কিতাবে এমন অনেক হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে যেগুলো এখন আর দলীল হিসেবে
গ্রহন যোগ্য নয় এবং আমলেরও উপযুক্ত নয়। বরং সেগুলোকে দলীল হিসেবে পেশ করা এবং তদানুযায়ী
আমল করা চরম গোমরাহীর নামান্তর। যেমন হাদীছ শরীফে একথা সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে, হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নামাযরত অবস্থায় কথা বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে
কুরতুবী” ১ম খ-ের ২১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪০১-১৪০২]
قال السدى(قانتين) ساكتين د ليله ان الاية (قوموالله قائتين)نزلت فى المنع
من الكلام فى الصلاةوكان ذلكى مبا حافى صسدر الاسلام. وهذا هو الصحيح لما رواه
مسلم و غيره عن عبذ الله ا بن مسعود قال كنا نسلم على رسول الله صلى الله عليه
وسلم وهو فى الصلاةفيرد علينا-
অর্থঃ- “হযরত ইমাম সুদ্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, قومولله قانتين আয়াত শরীফের মধ্যে قانتين এর অর্থ হচ্ছে ساكتين “তোমরা বিনয়াবনতঃ নীরব অবস্থায় নামাযে দাঁড়াও।” তিনি দলীল
হিসেবে পেশ করেন যে, নিশ্চয়ই قومولله قانتين আয়াত শরীফ খানা নামাযে কথা
বলা থেকে নিষেধ করা প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। ইসলামের প্রথম দিকে নামাযে কথা বলা মুবাহ
ছিল। এ প্রসঙ্গে ‘মুসলিম শরীফ’
এবং অন্যান্য কিতাবে ছহীহ হিসেবে বর্ণনা
করা হয়েছে। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রসূল
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযরত অবস্থায় আমরা সালাম দিতাম তিনি নামাযে
থেকে আমাদের সালামের জবাব দিতেন।”
এখন আমাদের প্রশ্ন হলো- পয়গামগোষ্ঠী কি উক্ত হাদীছ শরীফকে দলীল
হিসেবে গ্রহন করে “নামাযে কথা বলাকে জায়িয” ফতওয়া দিবে? অর্থাৎ
“নামাযে কথা বলা জায়িয”
এক্ষেত্রে উক্ত হাদীছ শরীফখানা দলীল
হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে কি? কস্মিনকালেও না। কারণ উক্ত হাদীছ শরীফখানার হুকুম পরবর্তীতে
মানসুখ হয়ে গেছে। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে।
[১৪০৩]
فلمارجعنامن
عند النجا شى سلمنا عليه فلم يرد علينا فقلنا: يارسول الله كنا نسلم عليكى فى
الصلاة فترد علينا؟ فقال ان فى الصلاة شغلا وروى زيد بن ارقم قال كنا نتكلم فى
الصلاة يكلم الرجل صا حبه وهوالى جنبه فى الصلاة حتى نزلت "قوموالله
قانتين" فامر نا بالسكوت ونهينا عن الكلام.
অর্থঃ অতঃপর যখন আমরা আবিসিনিয়ার বাদশা নাজ্জাশী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর নিকট থেকে প্রত্যাবর্তন করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
সালাম দিলাম (তখন তিনি নামাযে ছিলেন) কিন্তু তিনি আমাদের সালামের জবাব দিলেন না। অতঃপর
নামায শেষে আমরা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, “হে আল্লাহ
পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি নামাযে থাকা অবস্থায় আপনাকে আমরা
সালাম দিতাম আপনি তো নামাযে থেকে আমাদের সালামের জবাব দিতেন? অতঃপর তিনি
বললেন, অবশ্যই (নামাযে কিছু নির্ধারিত আমল রয়েছে, যা ব্যতীত
অন্য কোন কাজে বা কথায় মশগুল হওয়া নিষেধ)। হযরত যায়িদ ইবনে আরক্বাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নামাযে থাকা অবস্থায় কথাবার্তা বলতাম। হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রত্যেক ছাহাবীই তাঁর পাশেই নামাযেরত ছাহাবীদের সঙ্গে কথাবার্তা
বলতেন, তখন
قوموالله قا نتين
“তোমরা আল্লাহ পাক-এর উদ্দেশ্যে নামাযে নীরব অবস্থায় দাঁড়াও” আয়াত শরীফ
অবতীর্ণ হলো। অতঃপর হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নামাযে
চুপ থাকার ব্যাপারে আদেশ করলেন এবং নামাযে কথা বলতে নিষেধ করলেন।”
অনুরূপভাবে হাদীছ শরীফে সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযে “রফয়ে ইয়াদাইন”
করেছেন। কিন্তু আমাদের হানাফী মযহাব
মতে “রফয়ে ইয়াদাইন”
জায়িয নেই। কারণ পরবর্তী বক্তব্য ও
আমল দ্বারা পূর্ববর্তী আমলটি মানসুখ হয়ে গেছে। যেমন এ প্রসঙ্গে-
“আল আইনী” কিতাব-এর
২য় খ-ের ৩০০ পৃষ্টায় আরো উল্লেখ আছে,
[১৪০৪-১৪০৫]
ان ابن الزبيرراى رجلا ير فع يد يه فى الصلاة عندالركوع وعندر فع الر اس
من الر كوع فقال له لا تفعل فان هذا شئ فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم تر
كه قال ابن الجنزرى فى التحقيق زعمت الحنفية ان احاديث الر فع منسو خةبحديثين رووا
احدهما عن ابن عباس زضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم ير فع يد
يه كلمار كع وكلما رفع ثم صارالى افتتاح الصلاة وتركى ماسوى ذلكى والثا ضى رووه عن
ابى الز بير انه راى رجلا يرفع يد يه من الر كوع فقال. له فان هذا شئ فعله. رسول
الله صلى الله عليه و سلم ثم تر كه وهذان حديثان لايعرفان اصلا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
এক ব্যক্তিকে নামায অবস্থায় রুকু করার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠার সময় رفع اليدين তথা দু’হাত উঠাতে
দেখলেন। অতঃপর তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
আপনি আর “রফে ইয়াদাইন” করবেন না।
কেননা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম সেটা করেছিলেন অতঃপর তা বর্জন তথা পরিত্যাগ
করেছেন।
হযরত ইবনে জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘তাহক্বীক’ নামক কিতাবে
আছে, হানাফী মাযহাবের দাবী হলো, অবশ্যই ‘রফে ইয়াদাইন’ সংক্রান্ত
হাদীছঞ্জশরীফগুলো দু’টি হাদীছ শরীফের মাধ্যমে মানসুখ হয়েছে।
প্রথমটি হচ্ছে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক রুকু
এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় যে দু’হাত উঠাতেন তা সব কিছুই পরিত্যাগ করেন। শুধু মাত্র নামায আরম্ভ
করার সময় যে, দু’হাত উঠাতে হয়,
সেটা ব্যতীত।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে,
হযরত আবু যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একজন ছাহাবীকে নামাযে রুকু থেকে উঠার সময় দু’হাত উঠাতে
দেখলেন। অতঃপর তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে, এটা এমন
বিষয় যা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন। অতঃপর “রফে ইয়াদাইন” পরিত্যাগ
করেছেন। মূলতঃ এই হাদীছ শরীফ দু’খানা অনেকেই জানেন না।” (আল আইনী)
অতএব, “নামাযে কথা বলা ও নামাযে “রফয়ে ইয়াদাইন” করা সম্পর্কিত
উক্ত হাদীছ শরীফগুলো যেরূপ দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয় তদ্রুপ কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত
“বাইহাক্বী শরীফের”
উল্লিখিত হাদীছ শরীফখানাও দলীল হিসেবে
গ্রহনযোগ্য বা আমলের যোগ্য নয়। কারণ কুনূতে নাযেলার আমল পরবর্তীতে মানসুখ হয়ে গেছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে কুবরা”
কিতাবের ১ম খ- ১৯১ পৃষ্ঠায় আছে,
انه منسوخ فلا يشرع بحال بناء على ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت ثم تر
كى. والتركى ينسخ. الفعل. هذا قول ابى حنيفةر حمه الله.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধানটি মানসুখ হয়ে গেছে। যেহেতু
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটা (ফজর নামাযে একমাস) পাঠ করেন। অতঃপর
ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। আর এ কারণেই বর্তমানে কুনূতে নাযেলা (নামাযে)
পাঠ করা শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা, উক্ত আমলটি তরকের অর্থই হচ্ছে উক্ত আমলটি তথা কুনূতে নাযেলা
পাঠের বিধানটি মানসুখ হয়ে যাওয়া। এটাই ইমাম আ’যম, হযরত ইমাম
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চূড়ান্ত অভিমত।” (ফতওয়ায়ে মাজমুয়াহ, মাউনা আলা
মাযহাবি আলামিল মাদীনাহ ১ম খ- ১১৩ পৃষ্ঠা)
কাজেই হাদীছ শরীফে থাকলেই যে, তা দলীল হিসেবে গ্রহনযোগ্য
ও আমলের উপযুক্ত হবে তা নয়। হাদীছ শরীফ সম্পর্কিত এই সাধারণ ইল্মও যাদের নেই তাদের
ফতওয়া কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এবং এধরণের মুর্খ লোকের জন্য ফতওয়া দেয়া কি করে জায়িয
হতে পারে?
দ্বিতীয়তঃ পয়গামগোষ্ঠী “ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
নিষেধ” এ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট অসংখ্য হাদীছ শরীফ থাকার পরও একটি তা’বীল বা
ব্যাখ্যাযোগ্য ও মানসুখ হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে যেরূপ নিজেদের জিহালতী
ও গোমরাহীকে চরমভাবে উদগীরণ করেছে। তদ্রুপ সাধারণ জনগণের সাথে মারাত্মক প্রতারণা করেছে।
নিম্নে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা নিষেধ হওয়া সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা
হলো। যেমন, এ প্রসঙ্গে “মিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খ-ের ১৮১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১৪০৬]
عن ام سلمة انه عليه ا لصلاةوالسلام نهى عن القنوت فى الصبح
অর্থঃ- “হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত আছে
যে, আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন।”
“ইবনু মাজাহ”-এর ৮৯ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ আছে,
[১৪০৭-১৪১৬]
وعن ام سلمة قا لت نهى رسول الله صلى الله عليه و سلم
عن القنوت فى الفجر.
অর্থঃ- “হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন।” (ফতহুর রব্বানী ৩য় খ- ৩১০ পৃঃ, আল আইনী ২য় খ- ৫৯৩ পৃঃ, তিরমিযী
শরীফ, আবু দাউদ শরীফ,
আল হিদায়া, নাসায়ী
শরীফ, বযলুল মাজহুদ,
আল ইলালুল মুতানাহিয়া, শরহুন নিকায়াহ)
“শরহুয যারকানী” কিতাবের ১০ম খ-ের ৪১৭নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪১৭]
و عن سعبد بن جبير قال اشهد انى سمعت ابن عباس يقول ان الفنوت فى
صلاةالفجر بدعة.
অর্থঃ- “হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অবশ্যই আমি শুনেছি, হযরত আব্দুল্লাহ্
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
নিশ্চয়ই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠ করা বিদয়াত।”
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, স্বয়ং হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “কুনূতে নাযেলার আমল মানসুখ হয়ে যাওয়ার কারণে সরাসরি ফজর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পাঠ” করতে নিষেধ করেছেন। এর কারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম এটাকে বিদয়াত মনে করতেন।
আমাদের প্রশ্ন পয়গামগোষ্ঠী এত সুস্পষ্ট ও অসংখ্য হাদীছ শরীফ
থাকার পরও এগুলোকে উল্লেখ না করে গোপন করে রাখলো কেন? হয় সাধারণ
জনগণকে ধোঁকা দিয়ে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার কুট উদ্দেশ্যে। অথবা তারা বাইহাক্বী
শরীফের ঐ একটি মাত্র হাদীছ শরীফ ব্যতীত আর কোন হাদীছ শরীফেরই খবর রাখে না। কাজেই যারা
দু’একটি হাদীছ শরীফ পড়ে ফতওয়া দেয় তাদের ফতওয়া ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক।
অতএব, যেখানে অসংখ্য হাদীছ শরীফে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে
নিষেধ করা হয়েছে। সেই অসংখ্য বর্ণনার বিপরীতে “বাইহাক্বীর” ঐ একটি
মাত্র বর্ণনা কি করে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ হতে পারে?
তৃতীয়তঃ পয়গামগোষ্ঠী “সুনানে বাইহাক্বী”তে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফের فلماظهر علهم এ অংশের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ তারা উক্ত অংশের
সম্পূর্ণ মনগড়া অর্থ করেছে। যেমন তারা فلما ظهر عليهم এর অর্থ করেছে “..” অতঃপর যখন তাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে ফেললেন। “অথচ উক্ত
অংশের সঠিক অর্থ হলো “যখন তাদের উপর কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে বা বদ দুয়া করতে) নিষেধ
করা হলো।” অনুসরনীয় ইমাম মুজতাহিদগণ উক্ত অংশের এরূপ অর্থই গ্রহন করেছেন।
কেননা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফখানা
অন্যত্র فلماظهر عليهم এর স্থলে فلما نهى عليهم সহ উল্লেখ আছে। যেমন এ প্রসঙ্গে
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব “আল আইনী” ২য় খ-ের ৫৯০ পৃষ্ঠায় উল্লখ আছে,
[১৪১৮-১৪২১]
وقال الطحاوى ثناابو داؤدالمقدمى ثناابو معشر ثناابو حمزةعن ابراهيم عن
علقمت عن ابن مسعودقال قنت رسول الله صلى الله عليه و سلم شهرا يد عو على
عصيةوذكوان فلما نهى عليهم تركى القنوت وكان ابن مسعودلا قنو ت فى صلاة الصبح. ثم
قال فهذا ابن مسعود يخبر انقنوت رسول الله صلى الله عليه وسلم الذى كان انماكان من
اجل من كان يدعوعليه. وانه قدكان تر كى ذلكى فصار القنوت منسوخا فلم يكن هومن
بعدرسو ل الله صلى الله عليه وسلم يقنت وكان احدمن روى عنه ايضا عن رسول الله صلى
الله عليه وسلم عبد الله بن عمررضى الله تعالى عنه ثم اخبر هم ان الله عزوجل نسخ
ذلكى حتى انزل على رسول الله صلى الله عليه وسلم (ليس لكى من الامرشئ او يتوب
عليهم او يعذ بهم فا نهم ظالمون 128 (ال عمران. فصار
ذلكى عند ابن عمر منسو خا ايضا فلم يكن هو يقنوت بعدر سول الله صلى الله عليه و
سلم وكان ينكر على من يقنت و كان احد من روى عنه القنوت عن ر سول الله صلى الله
عليه وسلم عبد الرحمن بن ابى بكر فاخبر فى حد يثه بان ما كان يقنت به رسول الله
دعاء على من كان يد عو عليه وان الله عز وجل نسخ ذلكى بقو له، (ليس لكى من الامر
شئ اويتوب عليهم اويعدبهم فا نهم ظا لمون) الاية ففى ذلكى ايضاوجوب تر كى القنوت
فى الفجر.
অর্থঃ- “ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের
কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ আল মাকদামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের
কাছে হযরত আবু মা’শার রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের
কাছে আবু হামযা-হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত
আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিহি ওয়া সাল্লাম ‘আছিয়্যাহ
এবং যাকওয়ান’ গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ্দোয়ায় কেবল মাত্র একমাস ফজর নামাযে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর যখন আল্লাহ পাক তাদের প্রতি বদ দোয়া করতে নিষেধ করেন তখন হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন। আর এই নিষেধাজ্ঞার
কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি। অতঃপর ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
কুনূতে নাযেলা পাঠের ব্যাপারে সংবাদ দিয়েছেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিহি
ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে (আছিয়্যাহ ও যাকওয়ান) তাদের প্রতি বদ্দোয়ায় কিছু সময় কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা পরিত্যাগ করেন।
ফলে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা মানসুখ হয়ে যায়। আর এই কারণেই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিত্যাগের পর আর কখনই কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি। আর যে সমস্ত রাবী রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে
হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তাঁদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও
ছিলেন একজন অন্যতম রাবী। অতঃপর তিনি ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের
উদ্দেশ্যে সংবাদ দিয়েছেন তখন আল্লাহ পাক উক্ত আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন,
ليس لكى من الامرشئ الاية.
‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ এ আয়াত শরীফ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ করে কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ করেন। আর এ আয়াত শরীফ
নাযিলের পর আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে কুনূতে নাযেলা মানসুখ
হওয়ার বিষয়টি আরোও স্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরকের পর তিনি আর কখনও কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি। বরং যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতেন তাকে নিষেধ করতেন। একইভাবে যেসব রাবী হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কুনূতে নাযেলার হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন
তাদের মধ্যে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও একজন অন্যতম
রাবী ছিলেন। তিনিও রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনূতে নাযেলা পাঠের
ব্যাপারে তার হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন যে,
হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম (আরবের আছিয়্যাহ্ ও যাকওয়ান) গোত্রের প্রতি বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন।
অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলাকে আল্লাহ তায়ালা মানসুখ তথা রহিত করে দেন, যেমনঃ
ليس لكى من الامرشئ.
‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’ এর মাধ্যমে। আর এ কারণেই ফজর
নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।” (আল বিনায়া
ফী শরহিল হিদায়া ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা,
উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ খ- ৭৩ পৃষ্ঠা, তানযীমুল
আশতাত ২৩৭ পৃষ্ঠা, শরহে মায়ানিল আছার ১ম খ- ১৭৪-১৭৫ পৃষ্ঠা)
“ইলাউস সুনান” কিতাবের
৬ খ-ের ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে ,
[১৪২২]
فلمانهى الله عز وجل عن الدعاء عليهم بقو له ليس لكى من الامر شئ وتر كى ذ
لكى.
অর্থঃ- মহান আল্লাহ পাক যখন তাঁর বাণী
ليس لكى من الامرشئ.
(এ বিষয়ে
আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই) আয়াত শরীফের মাধ্যমে তাদের প্রতি বদদোয়ায় কুনূত পড়তে
নিষেধ করলেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ
করলেন।
“অতএব, প্রমাণিত হলো যে,
ظهر عليهم এর সঠিক অর্থ হলো فلمانهى
علهم অর্থাৎ এ দৃষ্টিকোন থেকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বর্ণিত বায়হাক্বী শরীফের হাদীছ শরীফখানার সঠিক মর্মার্থ হলো “রসূলে পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসাইয়া ও যাকওয়ান গোত্রের উপর বদদোয়া করার লক্ষে একমাস
কুনূতে নাযেলা পড়েছেন। অতঃপর যখন (তাদের উপর বদ দুয়া করতে নিষেধ করেন) তখন তিনি কুনূত
পাঠ করা বন্ধ করে দেন”
অতএব, এদিক থেকেও তাদের উক্ত বক্তব্য দলীল হিসেবে গ্রহনযোগ্য নয়। তারা
হাদীছ শরীফের মনগড়া অর্থ করে সাধারণ লোকদেরকে ধোঁকা দিয়েছে।
চতুর্থতঃ পয়গামগোষ্ঠী দলীল হিসেবে “বাইহাক্বী” থেকে যে
হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে, উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারাই মুলত অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র এক মাসই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন। যেমন
উক্ত হাদীছ শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,
قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا
অর্থাৎ “রসূলে পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাসই কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।”
এর পূর্বে ও পরে আর কখনই তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। যেহেতু
তা মানসুখ হয়ে গেছে। যা উক্ত হাদীছ শরীফে বর্ণিত
تر كى القنوت
অর্থাৎ
“তিনি তা তরক করেন”
এ অংশ দ্বারা অকাট্যভাবেই সাব্যস্ত
হয়। কেননা আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম,
ইমাম আ’যম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ সকলেই تركى দ্বারা মানসুখ মুরাদ নিয়েছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফের বিখ্যাত ব্যাখাগ্রন্থ “মিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খ-ের ১৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪২৩-১৪২৪]
اخبره ابو حنيفة رضى الله عن حماد بن ابى سليمان عن ابراهيم عن علقمة عن
عبد الله ابن مسعود ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يقنت فى الفجر قط الا شهرا
واحدالم ير قبل ذلكى ولا بعده وانما قنت فى ذلكى الشهريد عو على ناس من المشر كين
فهذا لا غبار عليه ولهذا لم يكن انس نفسه يقنت فى الصبح كما رواه الطبر نى عن غالب
ابن الطحا وى قال كنت عند انس بن ما لكى شهر ين فلم يقنت فى صلوة الغد وة واذا ثبت
النسخ.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাম্মাদ ইবনে
আবী সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলকামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, হযরত আলকামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র
একমাস ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন। এর আগে এবং এরপরে আর কখনো ফজর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পড়তে তাঁকে দেখা যায়নি। আর ঐ একমাস যে কুনূত পড়েছিলেন, তা শুধু
মুশরিকদের উপর বদদোয়ায় পড়েছিলেন। অতএব এই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এর উপর অন্য কোন হাদীছ শরীফ প্রাধান্য পায়নি। এ কারণে
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়েননি।
যেমন ত্ববারানী শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত গালিব ইবনে তাহাবী বলেন, আমি দু’মাস আনাস
ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায আদায় করেছি কিন্তু তিনি ফজর নামাযে
কুনূতে নাযেলা পড়েননি, যেহেতু তা মানসুখ হিসেবে প্রমাণিত।
“শরহে মায়ানিল
আছার” ১ম খ-ের ১৭৬ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ আছে,
[১৪২৫]
ان الله عز وجل نسخ ذلكى بقو له ليس لكى من الامرشئ الى اخر هاالاية ففى
ذلكى ايضاوجوب تركى القنوت فى الفجر.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তাঁর বাণী
ليس لكى من الا مر شئ.
‘এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।’এ আয়াত শরীফের মাধ্যমে কুনূতে
নাযেলা মানসূখ বা রহিত করে দেন। আর এ কারণেই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করাও
ওয়াজিব তথা ফরয।
“আল আইনী” ২য় খ- ৫৯০
পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪২৬]
لما روى ابن مسعود رضى الله عنه انه عليه السلام قنت فى صلاة الصبح شهرا
ثم تر كه هذا الحد يث حخة لنا على الشا فعى، رواه البزار فى مسسنده وا لطبرا نى فى
معجمه وابن ابى شيبةفى مصنفه والطبرانى فى الاثار كلهم من حد يث سويد القاضى عن
حمزة ميمون القصاب عن ابراهيم عن علقمة عن عبدالله قال لم يقنت ر سول عليه السلام
فى الصبح الا شهرا ثم تر كه لم يقنت قبله ولا بعده وجه الاستدلال به انه يدل على
ان قنوت ر سول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح انما كان شهرا واحدا او كان يد عو
على اقوام ثم تر كه فدل على انه كان ثم نسخ.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে,
নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন অতঃপর সেই কুনূতে নাযেলা
পাঠ বন্ধ করেন। আর এ পরিত্যাগ করা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফখানাই শাফিয়ী মাযহাবের বিপক্ষে
আমাদের হানাফীগণের অকাট্য দলীল। আর এভাবেই বর্ণনা করেছেন হযরত ইমাম বাযযার রহমতুল্লাহি
আলাইহি তাঁর মুসনাদ শরীফে, হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মু’জামে, হযরত ইবনে
আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুছান্নাফে এবং হযরত ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি
তাঁর আছারের মধ্যে। আর তাঁদের প্রত্যেকের কিতাবের মধ্যে সুয়াইদুল কাযী-এর বর্ণিত হাদীছ
শরীফখানাই বর্ণনা করা হয়েছে। আর তিনি হযরত হামযা মাইমুনাল ক্বাছ্ছাব রহমতুল্লাহি আলাইহি
থেকে, তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত
আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা
করেছেন, তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন। এর আগে এবং পরে কখনও কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি। আর এই হাদীছ শরীফের মাধ্যমে দলীল
গ্রহণ করার কারণ হচ্ছে, ইহার দ্বারাই প্রমাণ করে যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছিলেন আর সেটা আরবের কয়েকটি কাফির
গোত্রের প্রতি বদদোয়ায় করেছিলেন। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম পরিত্যাগ করেন। অতএব এর দ্বারাই প্রমাণিত হলো যে, কুনূতে
নাযেলা ফজর নামাযে ছিল, অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা মানসুখ হয়ে যায়।”
এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে কুবরা”
কিতাবের ১ম খ- ১৯১ পৃষ্ঠায় আছে,
[১৪২৭-১৪২৯]
انه منسوخ فلا يشرع بحال بناء على ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت ثم تر
كى. والتر ك ينسخ. الفعل. هذا قول ابى حنيفة رحمه الله.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিধানটি মানসুখ হয়ে গেছে। যেহেতু
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটা (ফজর নামাযে একমাস) পাঠ করেন। অতঃপর
ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন। আর এ কারণেই বর্তমানে কুনূতে নাযেলা (নামাযে)
পাঠ করা শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা, উক্ত আমলটি তরকের অর্থই হচ্ছে উক্ত আমলটি তথা কুনূতে নাযেলা
পাঠের বিধানটি মানসুখ হয়ে যাওয়া। এটাই ইমাম আ’যম, হযরত ইমাম
আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চূড়ান্ত অভিমত।” (ফতওয়ায়ে মাজমুয়াহ, মাউনা আলা
মাযহাবি আলামিল মাদীনাহ ১ম খ- ১১৩ পৃষ্ঠা)
অতএব, পয়গামগোষ্ঠীর উল্লিখিত “বাইহাক্বীর” হাদীছ দ্বারাই
“কুনূতে নাযেলা”
মানসুখ প্রমাণিত হলো। কেন না হাদীছ
শরীফে ترك القنوت সুস্পষ্ট ভাবেই উল্লেখ আছে। আর ترك القنوت বা “কুনূত পরিত্যাগ”
করার অর্থই হলো কুনূতে নাযেলার আমল
মানসুখ হয়ে যাওয়া।
পঞ্চমতঃ সবচেয়ে মজার বিষয় হলো প্রতারক, ধোঁকাবাজ, জাহিল পয়গামগোষ্ঠী
উক্ত হাদীছ শরীফখানা যে “বাইহাক্বী শরীফ”
থেকে নকল করেছে উক্ত “বাইহাক্বী
শরীফের” অসংখ্য স্থানে কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে
উল্লেখ আছে, যেমন এ প্রসঙ্গে “সুনানে বাইহাক্বী”
শরীফের ২য় খ-ের ১৯৭ পৃষ্ঠায় হযরত আবু
হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণনায় এসেছে। সূরা আল ইমরান-এর ১২৮ নং আয়াত
শরীফের মাধ্যমে কুনূতে নাযেলা তথা কাফিরদের প্রতি বদদোয়ার হুকুমটি পরিত্যাজ্য হয়ে যায়
যা শুধু মাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমেই জারি হয় এবং তারই
মাধ্যমে বন্ধও হয়ে যায়। যেমন উক্ত হাদীছ শরীফ হচ্ছে,
[১৪৩০]
اللهم العن لحيان ور علان وذكوان و عصية عصت الله ورسو له ثم بلعنا انه تر
كى ذلكى لما ا نزل الله عز و جل ليس لك من
الامر شئ.
অর্থঃ- “আয় আল্লাহ পাক আপনি লিহইয়ান রিল যাকওয়ান এবং আছিয়্যাহ গোত্রের
লোকদের প্রতি লা’নত বর্ষণ করুন। যারা আল্লাহ পাক এবং তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অবাধ্যচারিতা করেছিল। অতঃপর রাবী বলেন, আমাদের
কাছে সংবাদ পৌছল যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটা পরিত্যাগ তথা
উক্ত বদদোয়া পাঠ করা বন্ধ করে দিয়েছেন যখন এই আয়াত শরীফখানা নাযিল হয়,
ليس لك من الا مر شئ.
(এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই) (তাহাবী শরীফ)
“সুনানুল
বাইহাক্বী” কিতাবের ২য় খ-ের ২১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৪৩১-১৪৩২]
هذا القنوت انهالبد عة ما فعله رسول الله صلى الله عليه و سلم الا شهرا ثم
تر كه... انه كان ثم ننخ
অর্থঃ- “অবশ্যই এই কুনূত তথা কুনুতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত। যেই কুনূতে
নাযেলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস পাঠ করার পর তা পরিত্যাগ
করেন। ... অবশ্যই উহা ছিল তবে পরিত্যাগের কারণে ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ
হয়ে যায়। (জাওহারুন্নক্বী)
‘সুনানুল
বাইহাক্বী’ ২য় খ-ের ২১৪ পৃষ্ঠায় কুনূতে নাযেলা এর আলোচনার শেষে উল্লেখ আছে,
[১৪৩৩-১৪৩৪]
عن ام سلمة ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى عن القنوت فى صلاة الصبح.
অর্থঃ- “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা
পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। (ছহীহ ইবনে মাজাহ ৮৯ পৃঃ)
আর এই জন্যেই “সুনানে বাইহাক্বী”
২/২১৪ পৃষ্ঠায় কুনূতে নাযেলার আলোচনার
একদম শেষে বলা হয়েছে,
[১৪৩৫]
عن ابن عمر فقو له مافعله الا شهرا ثم تر كه معناه تر كى القنوت بعد الر
كوع.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র একমাস কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তা পরিত্যাগ করেন। আর ঐ তরকের অর্থ হচ্ছে রুকুর পরে যে কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেছিলেন সেই কুনূতে নাযেলাই পরিত্যাগ করেন।
আর যে কুনূত ফজর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকুর পর পাঠ করা হতো।
সে কুনূতই হলো কুনূতে নাযেলা যা আমরা ইতিপূর্বেও মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে বহু কিতাবের
হাওলাসহ বহু সংখ্যায় উল্লেখ করেছি। যেমন মিরকাত শরীফের ৩য় খ-ের ১৮৫ পৃষ্ঠাতেও উল্লেখ
আছে যে,
[১৪৩৬]
وفى رواية (قبل الر كوع) اى فى الصبح و قت قنوت الناز لة.
অর্থঃ- “অপর বর্ণনায় আছে যে,
রুকুর পূর্বে কুনূত অর্থাৎ যা বিতির
নামাযে পাঠ করা হয়। আর রুকুর পরের কুনূত অর্থাৎ
যা ফজর নামাযে (বদ দুয়ায়) কুনূতে নাযেলার জন্য পাঠ করা হতো।
স্মর্তব্য, পয়গামগোষ্ঠী এসকল বর্ণনাগুলো না দেখার কারন কি? এটা সম্ভবতঃ
পাঠকদের বুঝতে আর বাকি নাই। যারা নিজেদের বদ আমলকে ছাবিত বা বৈধ করার উদ্দেশ্যে এরূপ
জালিয়াতী ও প্রতারণার আশ্রয় নেয় তারা কোন শ্রেণীর মাওলানা তা সহজেই অনুমেয়।
ষষ্ঠতঃ পয়গামগোষ্ঠীর বক্তব্য ও দাবীর সাথে দলীলের কোনই মিল নেই।
তাদের মুল বক্তব্য হলো “ফজরে দুই প্রকার কুনূত ছিল একটি দায়েমী যা মানসুখ হয়ে গেছে।।
আরেকটি হলো নাযেলা। যা মানসুখ হয়নি বরং এখানো বহাল আছে।” তাদের উল্লিখিত
বাইহাক্বীর হাদীছ শরীফে এধরনের কোন কথা উল্লেখ আছে কি? নেই। যদি
তাই হয় তবে দলীল হিসেবে উক্ত বর্ণনার কি মূল্য থাকতে পারে?
অতএব, পয়গামগোষ্ঠীর তৃতীয় বক্তব্য ও দলীলও ভুল, জিহালতপূর্ণ, মনগড়া ও
বিভ্রান্তিকর বলে প্রমাণিত হলো। অর্থাৎ তাদের তৃতীয় দলীল দ্বারাও তাদের বাতিল মতটি
ছাবিত হয় না।
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন
0 Comments:
Post a Comment