পিডিএফ-
“হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের
পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী,
দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরেকী ও
বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী,
বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায়
বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায়
এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব
লেখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী
মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ
হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক
তাই। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা
মায়িদার’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا
اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু
হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” মূলতঃ এই
ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে
দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ
শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই এজেন্ট। বর্তমানে
ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা
হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের
এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কেও
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা সম্প্রতি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের সময় শত্রুদের
প্রতি ‘বদ্ দোয়া’ করার লক্ষে সারাদেশব্যাপী এমনকি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও
মুছল্লীদেরকে ‘প্রতি ফজর নামাযে’
‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার আহ্বান জানায় এবং তারা
অনেক মসজিদেই ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী
ও বক্তব্যে তারা ‘ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করাকে জায়িয বলে প্রচার করেছে। আর এ ব্যাপারে তাদের মূল
দলীল হলো, ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ।’
অথচ ‘কুনূতে নাযেলা’ সম্পর্কিত ‘ফতওয়ায়ে
দেওবন্দ’-এর বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও হানাফী মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের
মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার প্রমাণ ও খ-ন অত্র ফতওয়াতেই আপনারা যথাসময়ে পেয়ে যাবেন
ইনশাআল্লাহ। তাদের উক্ত ভুল ফতওয়ার কারণে
সাধারণ লোক মনে করবে ‘হানাফী মাযহাব মতে বোধ হয় ‘ফজরে কুনূত পড়া জায়িয।’ অথচ শরীয়ত যেটাকে নাজায়িয ও হারাম
করেছে সেটাকে জায়িয বা হালাল মনে করা কুফরী বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অনুরূপ
তাদের উক্ত ভুল ও অর্ধেক ফতওয়ার কারণে হাজার হাজার মুছল্লী ফজর নামাযে কুনূত পাঠ
করার কারণে একটি ফরয আমল ‘নামায’ অনায়াসে ও অজান্তেই ফাসিদ বা বিনষ্ট করে দিচ্ছে বা দিবে। অথচ নামায হচ্ছে, দ্বীন
ইসলামের ভিত্তি বা খুঁটি। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, নামায
তরক করা, ইচ্ছা করে নামায ফাসিদ হয় এমন কাজ করা, নামাযে অবহেলা করা, খুশু-খুযূ’র সাথে
নামায আদায় না করা,
হারাম-নাজায়িয থেকে নামাযকে হিফাযত না করা ইত্যাদি
কার্যকলাপ কঠিন গুণাহ্র কাজ ও কুফরীর লক্ষণ। যেমন “মিশকাত শরীফ”-এর
কিতাবুছ্ ছলাহ্, বাবু ফাযায়িলিছ্ ছলাহ (নামাযের ফযীলত) অধ্যায়ের আল ফাছলুল্ আউয়াল-এর ৬নং হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
عن حابر رضى الله تعالى عنه قال قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দার
ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ অস্বীকৃতির
সাথে নামায ত্যাগ করলে বান্দা কাফির হয়ে যায়।
আল্লাহ
পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من ترك الصلوة حتى مضى وقتها ثم
قضى عذاب فى النار حقبا والحقبة ثمانون سنة والسنة ثلث مائة وستون يوما كل يوم كان
مقداره الف سنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি
নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে
জাহান্নামে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হোক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর
হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্
মানাসিক) হাদীছ শরীফের বর্ণনা
মুতাবিক হোক্বার পরিমাণ দুনিয়াবী বছর অনুযায়ী নিম্নরূপ-(৮০ বছর * ৩৬০ দিন = ২৮৮০০
দিন * ১০০০ বছর = ২,৮৮,০০০০০ বছর।) অতএব,
এক হোক্বা = ২,৮৮,০০০০০ বছর। উল্লেখ্য, ক্বাযা
নামায আদায়কারী ব্যক্তির উপর ওয়াক্ত মুতাবিক নামায ফরয হয়েছিল কিন্তু সে যথা সময়ে
ফরয আদায় করেনি। অর্থাৎ ওয়াক্ত ফউত হওয়ার পর সে আদায় করেছে। ফরয নামায যথা সময়
আদায় না করার কারণেই তাকে এক হোক্বা শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন সে যদি খালিছ তওবা
করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দিবেন। অন্যথায় তওবা ব্যতীত নামাযের ক্বাযা আদায়
করলেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি বা রেহাই পাওয়া যাবেনা। আর যারা নামাযের ক্বাযাও আদায়
করবেনা আর তওবাও করবে না,
তাদের যে কি শাস্তি হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে
ভাল জানেন। নামাযের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই হাদীছ শরীফে উল্লেখিত শাস্তির কথা বলা
হয়েছে। নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ বা ফউত হবার
পর কাযা আদায় করলেও যেখানে এক হোক্বা তথা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর শাস্তি ভোগ করতে
হয় সেখানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার কারণে নামায ভঙ্গ হওয়ার পর কাযা আদায় না করলে কত
কোটি বছর শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। মূলকথা, যারাই
ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করবে তাদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে বাতিল ফিরক্বার মৌলভীরা ফজর বা অন্যান্য নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
জায়িয ফতওয়া দিয়ে নিজেদের এবং সরলপ্রাণ মুছল্লীদের নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ করে দেয়ার
মাধ্যমে লা’নত বা কঠিন আযাবের উপযোগী হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ভুল ফতওয়া দিয়ে ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী, দাজ্জালে
কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’রা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার
ষড়যন্ত্রই সর্বদা করে যাচ্ছে। কাজেই এদের ভুল ফতওয়া থেকে যেন সাধারণ মুসলমানগণ
নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ভুল ফতওয়া দিচ্ছে তারাও
যেন সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া পাওয়ার পর ভুল ফতওয়া ও আমল থেকে তওবা করে হক্বের উপর
ফিরে আসতে পারে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভ
করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে
কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া
মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
পূর্ববর্তী
আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্তর জন বুযূর্গ ও ক্বারী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার কারণে শহীদকারী রি’ল, য্কাওয়ান, আছিয়্যাহ
ও লিহ্ইয়ান গোত্রগুলোর প্রতি ‘বদ্দোয়া’ করার লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে একমাস
‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করেন। এটাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর প্রথম ও শেষ ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে আর কখনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ, একমাস ‘কুনূতে
নাযেলা’ পাঠ করার পর তা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। যেমন, এ
প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لم يقنت رسول الله صلى الله
عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولابعده.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তা
পরিত্যাগ করেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি ফজরের নামাযে কুনূত তথা কুনূতে নাযেলা
পাঠ করেননি।” (উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৩য় জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, আইনী
শরহে হিদায়াহ ২য় খ- ৫৯০ পৃষ্ঠা)
এ
প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী’ কিতাবের
৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان الله عزوجل نسخ ذالك حين انزل على
رسول الله صلى الله عليه وسلم "ليس لك من الأمر شئ" ....... الخ، فصار
ذالك عند ابن عمر رضى الله عنه منسوخا.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর মতে,
যখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর উপর ليس لك من الامر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন তখন থেকেই
(ফজরে কুনূত) পাঠ করা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়।” আর ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি। বরং ফজর
নামাযে ‘কুনূতে নাযেলা’
পাঠ করাকে বিদ্য়াত বলে মন্তব্য করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে “মিশকাত
শরীফের” ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعن ابى مالك الاشجعى قال قلت لابى يا
ابت انك قد صليت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر وعثمان وعلى ههنا
بالكوفة نحوا من خمس سنين اكانوا يقنتون قال اى بنى محدث.
অর্থঃ- “হযরত আবূ মালিক আল্ আশজায়ী
(তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার
পিতাকে একবার বললাম,
হে আমার পিতা! আপনি তো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সাথে,
হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং এখানে কুফায়
প্রায় পাঁচ বৎসরকাল পর্যন্ত হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে জামায়াতে
নামায আদায় করেছেন,
তাঁরা কি কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন? তিনি
উত্তরে বললেন, হে আমার প্রিয় বৎস্য! (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াত।” (ইবনে
মাজাহ ৮৯ পৃষ্ঠা,
ইলাউস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড) শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে
তাবিয়ীন, তাবে’ তাবিয়ীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণও কখনো ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেননি বরং ফজরে কুনূতে নাযেলা পাঠ করাকে বিদ্য়াত, নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, “মায়ারিফুস
সুনান”-এর ৪র্থ খ-, ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وقال ابو حنيفة لا قنوت فيه واليه ذهب
ابو يوسف ومحمد بن الحسن وسائر اصحابه وابن المبارك واليث بن سعد وسفيان الثورى
واحمد واسحاق ويحى بن يحى الاندلسى وذهب اليه من التابعين الاسود والشعبى وسعيد بن
جبير وعمرو بن ميمون وابراهيم النخعى وطاؤس والزهرى.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আ’যম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফজরের নামাযে কোন
কুনূতই পাঠ করা যাবেনা। এ মতের উপর হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরতুল
আল্লামা মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমামে আ’যম, হযরত
ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সকল অনুসরণীয় আছহাবগণের মতে যেমন হযরত ইবনে
মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত লাইছ ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আন্দুলুসী
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবেনা।
অনুরূপভাবে তাবিয়ীনগণের মধ্যে হযরত ইমাম আল আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর
ইবনে মাইমুনঞ্জরহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম আন্নাখয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজরের নামাযে কোন প্রকার কুনূত পাঠ করা যাবেনা।
এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ তথা ইমামে আ’যম হযরত
আবু হানীফা রহমুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে হানাফী
মাযহাবের সকল বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে
নাযেলা পাঠ করাকে মানসূখ,
নাজায়িয ও বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ
পূর্ববর্তীু সংখ্যায় দেয়া হয়েছে। তবে হ্যাঁ, শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম
শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজর নামাযঞ্জএবং অন্যান্য নামাযে কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে কুনূতে
নাযেলাকে জায়িয বলেছেন। যা আমাদের হানাফীদের নিকট বিশুদ্ধ বর্ণনা নয়। আর
হানাফীগণের দলীল হচ্ছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত হাদীছ শরীফ। অর্থাৎ শাফিয়ী মাযহাব মতে ফজর নামাযসহ সকল নামাযেই কুনূত বা
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয। আর হানাফীদের মতে অন্যান্য নামাযে তো নয়ই বরং ফজর
নামাযেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয নেই।
কাজেই হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার
অর্থই হচ্ছে, শাফিয়ী মাযহাবের মতকে অনুসরণ করা যা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয় বরং সম্পূর্ণ হারাম
ও নাজায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”-এর ৩৪৩/৩৪৪ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
فيكون كل من المذاهب الاربعة حقا بهذا
المعنى فالمقلد اذا قلد اى مجتهد يخرج عن الوجوب ولكن ينبغى ان يقلد احدا التزامه
ولايؤل الى اخر.
অর্থঃ- “যখন চার মাযহাবের প্রত্যেকটিই
হক্ব হিসেবে সাব্যস্ত হলো,
তাই এ অর্থে মুকাল্লিদের জন্য যে কোন একটি মাযহাবের ইমামকে
অনুসরণ করাও ওয়াজিব। অতএব,
যে ব্যক্তি কোন এক মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করবে সে শুধু
সেটাই আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। অন্য কোন মাযহাবের অনুসরণ করবে না।” এ
প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদিয়া”
কিতাবের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,
واما الثانى وهو انه اذا التزم الطبعية
يجب عليه ان يدوم على مذهب التزامه ولا ينتقل الى مذهب اخر.
অর্থঃ- “দ্বিতীয়তঃ কোনও মাযহাবকে
প্রকৃতভাবে গ্রহণ করলে দায়িমীভাবে সে মাযহাবেরই অনুসরণ করা ওয়াজিব। তাই এক মাযহাব
পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যাবেনা তথা হারাম। উপরোক্ত দলীলভিত্তিক
আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠলো যে, হানাফীদের জন্য শাফিয়ী বা
অন্যান্য মাযহাবের মাসয়ালার উপর আমল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। যেহেতু
কুনূতে নাযেলা পাঠ করা শাফিয়ী মাযহাবে জায়িয, কিন্তু তা হানাফী মাযহাবে হারাম
বিদয়াত ও নাজায়িয। তাই হানাফীদের জন্য কুনূতে নাযেলা পাঠ করাও হারাম, নাজায়িয
ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ। কেন না ‘মানসূখ’ হয়ে
যাওয়া কোন আমল নামাযে সম্পাদন করলে যে নামায ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যায় তাতে কারোই
দ্বিমত নেই। যেমন- ইসলামের প্রথম যুগে নামাযের মধ্যে কথা-বার্তা বলা, সালাম
দেয়া ইত্যাদি সবই বৈধ ছিল পরবর্তীতে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা
নামাযে কথা বলার আমল নিষিদ্ধ বা ‘মানসূখ’ হয়ে যায়। ফলে এখন নামাযের মধ্যে কথা বললে হানাফী মাযহাব মতে
তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।’
সুতরাং ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কথা বললে যেরূপ নামায ফাসিদ হয়ে
যায়; ঠিক তদ্রুপ ‘মানসূখ’ হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করলেও নামায ফাসিদ হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে নামাযের মধ্যে কোন নামাযী কথা বললে, মনে মনে
কিংবা উচ্চ আওয়াজে কারো জন্য দোয়া বা বদদোয়া করলে, হাঁচির জবাবের নিয়তে
ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে,
কোন আশ্চর্যজনক সংবাদ শুনে সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুল্লিাহ, লা-ইলাহা
ইল্লাহ কিংবা আল্লাহু আকবার বললে নামায ফাসিদ হবে। সুতরাং কুনূতে নাযেলাও অনুরূপ।
কাজেই পরিস্কারভাবে ফুটে উঠল যে, অবশ্যই কুনূতে নাযেলা পাঠে নামায ফাসিদ হবে। কেননা এটাও
নামাযের বাইরের অংশ এবং এতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চ আওয়াজে নাম ধরে, অন্যের
কল্যাণে এবং অভিশাপে লম্বা দোয়া পাঠ করতে হয়। তাতে কি করে নামায শুদ্ধ হতে পারে? মূলকথা হলো, কুনূতে
নাযেলা পাঠ করা সম্পুর্ণ নাজায়িয, বিদয়াত, হারাম এবং নামায ফাসিদ ও বাতিল হওয়ার কারণ। এটাই হানাফী
মাযহাবের ফায়সালা এবং চুড়ান্ত ফতওয়া।
(পূর্ব
প্রকাশিতের পর)
ফজরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা জায়িয বলে ফতওয়া প্রদানকারীদের জিহালতপূর্ণ বক্তব্য
ও তার খ-নমূলক জবাব
৪র্থ
বক্তব্য ও তার খ-নমূলক জবাব
বিদয়াতীরা
কুনূতে নাযেলাকে জায়িয প্রমাণ করতে গিয়ে আরেকটি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য
প্রচার করে থাকে যে,
“কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার ব্যাপারে কোন আয়াত শরীফ এবং হাদীছ
শরীফ বর্ণিত নেই। অর্থাৎ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার কোথাও কুনূতে নাযেলাকে ‘মানসূখ’ করা
হয়নি।”
বিদয়াতীদের
উক্ত জিহালতপূর্ণ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, “কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার
কোথাও ‘কুনূতে নাযেলা মানসূখ’
করা হয়নি।”- এ ধরনের কথা তারাই বলতে পারে যারা কুরআন শরীফ, হাদীছ
শরীফ সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ। নচেৎ একথা কে না জানে যে, ‘সূরায়ে
আলে ইমরান’-এর ১২৮ নং আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি কুনূতে নাযেলার আমলকে ‘মানসূখ’ করে
দিয়েছেন। এছাড়াও অসংখ্য হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমেও স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ‘কুনূতে
নাযেলার’ আমলকে ‘মানসূখ’ করে দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ ফতওয়ার শুরুতে তাফসীর, হাদীছ, শরাহ, ফিক্বাহ
ও ফতওয়ার কিতাব থেকে পেশ করা হয়েছে। এখানেও সংক্ষেপে কিছু প্রমাণ করা হলো-
যেমন, এ
প্রসঙ্গে “তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ৩য় খ-ের ৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০২৬]
وعن
مقاتل انها نزلت فى اهل بنر معونة وذلك ان رسول الله صلى الله عليه وسلم ارسل
اربعين وقيل سبعين رجلا من قراء اسحابه وامر عليهم المنذربن عمرو الى بنر معونة
على راس اربعة اشهر من احد ليعلموا للناس القران والعلم فاستصرخ عليهم عدو الله
عامر بن الطفيل قبائل من سليم من عصية ورعل وذكوان فاحاطوابهم فى رحالهم فقاتلوا
حتى قتلوا من عند اخر هم الا كعب بن زيد اخا بنى النجار فانهم تركوه وبه رمق فلما
علم بذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم وجد وجدا شديدا وقنت عليهم شهرا يلعنهم
فنزلت هذه الاية فترك ذلك. والمعنى ليس لك من امر هؤلاء شئ.
অর্থ: “হযরত
মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই ليس
لك من الأمر شئ “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।”এ আয়াত
শরীফখানা “বিরে মাউনাবাসীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। আর সেটা হলো যে, আখিরী
রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার ছাহাবীগণ উনাদের মধ্যে যাঁরা ক্বারী ছিলেন, উনাদের
চল্লিশ জন কারো সত্তর জন (ছাহাবী) ব্যক্তিকে হযরত মুনযির ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে উহুদ যুদ্ধের চার মাস পরে মানুষদেরকে কুরআন শরীফ এবং
দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্য “বিরে মাউনায়”প্রেরণ করেন। অতঃপর যখন উনারা
তথায় পৌঁছলেন তখন মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু আমের ইবনে তুফায়েল মুনাফিক, হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের উপর আক্রমন করার জন্য সুলাইম, আছিয়্যা
গোত্রের রিল এবং যাকওয়ান বলে চিৎকার করলো। অতঃপর তারা বেরিয়ে এসে ক্বারী ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরক ঘিরে ফেলল, এমনকি
শেষ পর্যন্ত বনী নাজ্জার গোত্রীয় (ভ্রাতা) হযরত কা’ব ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাকে ছাড়া সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে
নির্মমভাবে শহীদ করলো। পরিশেষে (ঐ মুনাফিক ও কাফিরেরা) হযরত কা’ব ইবনে
যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বল্লম বিদ্ধ ও মুমূর্ষ অবস্থায় সেখানে রেখে
যায়। অতঃপর নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উনাদের এই কঠিন মর্মান্তিক অবস্থার কথা জানতে পেরে শহীদকারী
মুনাফিকদের প্রতি বদদোয়ায় একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। পরে
ليس
لك من الأمر شئ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার
প্রয়োজন নেই।” এ আয়াত শরীফখানা নাযিল হলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন তথা
বন্ধ করে দেন। আর উক্ত আয়াত শরীফ উনার অর্থ হচ্ছে উনাদের ঐ সব গোত্রের প্রতি আপনার
আর কোন কিছুই করার প্রয়োজন নেই।”
উক্ত
কিতাবের ৫১ পৃষ্ঠায় এটাও উল্লেখ আছে,
[১০২৭]
وان
النهى عن ذلك كان ناسخا.
অর্থ: “ঐ সব
গোত্রদের প্রতি বদদোয়া করতে নিষেধ করার অর্থই হচ্ছে কুনূতে নাযেলার বিধানটি মানসুখ
হয়ে গেছে।”
“তাফসীরে মাযহারী” কিতাবের
২য় খ-ের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেক আছে,
[১০২৮-১০২৯]
ما
رواه مسلم من حديث ابى هريرة انه صلى الله عليه وسلم كان يقول فى الفجر اللهم العن
رعلا وذكوان وعصية حتى انزل الله تعالى هذه الاية فان قصة رعل وذكوان كان بعد ذلك.
অর্থ: “ছহীহ
মুসলিম শরীফ-এ হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে
যে, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে বলতেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! রিল, যাকওয়ান এবং আছিয়্যা গোত্রের
প্রতি লা’নত বর্ষণ করুন। অতঃপর যখন মহান আল্লাহ পাক ليس لك من
الأمر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।”এই আয়াত
শরীফ অবতীর্ণ করলেন,
তখন ঐ সকল গোত্রদের প্রতি বদদোয়া করা বন্ধ করেন। কেননা রিল
এবং যাকওয়ান এর (বদদোয়ার) ঘটনার পর এই আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়।”
“তাফসীরে মাযহারী”কিতাবের
২য় খ-ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১০৩০-১০৬৫]
قوله
تعالى "ليس لك من الأمر شئ" لمنعه عن الدعاء عليهم.
অর্থ- “মহান
আল্লাহ পাক উনার বাণী-
ليس لك من
الأمر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।”এই আয়াত
শরীফ দ্বারা তাদের প্রতি বদদোয়া করতে তথা কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবশ্যই নিষেধ করা হয়েছে।
এছাড়াও
নিম্নোক্ত কিতাবসমূহেও উল্লেখ আছে যে, উক্ত আয়াত দ্বারা কুনূতে নাযেলা
পাঠ করাকে নিষেধ ও মানসুখ করা হয়েছে। যেমন : তাফসীরে আহমদী ১ম খ- ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
তাবারী ৪র্থ খ- ৫৮ পৃষ্ঠা,
তাফসীরে জালালাইন ১ম খ- পৃষ্ঠা ৬০, তাফসীরে
হাশিয়ায়ে ছবী, ১ম খ- ১৭৮ পৃষ্ঠা,
তাফসীরে ইবনে কাছীর ১ম খ- ৩১৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
কুরতুবী ২য় খ- ১৯৯,
২০০,
২০১,
২০২,
পৃষ্ঠা, তাফসীরে কাসিমী ২য় খ- ১৩৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
বয়ানুল কুরআন ২য় খ- ৫৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে দ্বিয়াউল কুরআন ১ম খ- ২৭৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
মাওয়াহিবুর রহমান ২য় খ- ৮২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল বয়ান ৪র্থ জিঃ ৯১
পৃষ্ঠা, তাফসীরে তাসহীল লি উলুমিত তানযীল ১ম খ- ১৫৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
মাওয়ারদী, তাফসীরে হাসান বছরী,
তাফসীরে হক্কানী ৪র্থ খন্ড ২৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
ইবনে আব্বাস ১ম খ- ২৭৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আবি সুউদ ২য় খ- ৮২-৮৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
মুহাররারুল ওয়াজিয,
তাফসীরে দুররে মানছূর ২য় খ- ৭০-৭১ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
রুহুল মায়ানী ৩য় খ- ৫০ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী ২য় ১৩৫-১৩৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
কাশশাফ ১ম খ- ২১৬ পৃষ্ঠা,
তাফসীরে যাদুল মাছীর ১ম খ- ৩৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
বাইযাবী ২য় খ- ২০৬ পৃষ্ঠা,
তাফসীরে হাশিয়াতুশ শিহাব ৩য় খ- ৬২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
খাযিন ১ম খ- ৪১৭ পৃষ্ঠা,
তাফসীরে বাগবী ১ম খ- ৪১৭ পৃষ্ঠা, [৪৪৮-৪৪৯
পৃষ্ঠা], তাফসীরে লুবাব ফী উলুমিল কিতাব ৫ম খ- ৫২৮-৫২৯, ৫৩০-৫৩১ পৃষ্ঠা, তাফসীরে
সমরক্বান্দী ১ম খ- ৬০৩-৬০৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আল কুরআনিল আযীম ১ম খ-
৬০২-৬০৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাজিদী,
তাফসীরে নাজমুদ দুরার ২য় খ-, খুলাছাতুল কুরআন, ছফওয়াতুত
তাফাসীর ইত্যাদি তাফসীর সমূহ।
স্মর্তব্য
যে, শুধু তাফসীরের কিতাব সমূহেই নয়, বরং নির্ভরযোগ্য সমস্ত হাদীছ শরীফ
উনার কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা শুধুমাত্র একমাস পাঠ করার
পর কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা কুনূতে নাযেলা মানসূখ হয়ে যাওয়ার
কারণে তিনি তা পরিত্যাগ করেন। তাই বর্তমানে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদয়াত ও হারাম
হবে আর নামায ভঙ্গের কারণও হবে। ফযর নামাযে মূলত কোন প্রকার কুনূতই পাঠ করা জায়িয
নেই।
যেমন, এ
প্রসঙ্গে “মুসলিম শরীফ উনার ১ম খ-ের ২৩৭ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে,
[১০৬৬-১০৭১]
حدثنى
ابو الطاهر وحرملة بن يحى قالا اخبرنا ابن وهب اخبرنى يونس بن يزيد عن ابن شهاب
قال اخبرنى سعيد بن المسيب وابو سلمة بن عبد الرحمن بن عوف انها سمعا ابا هريرة
يقول كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول حين يفرغ من صلوة الفجر من القراءة
ويكبر و يرفع رأسه سمع الله لمن حمده ربنا لك الحمد يقول وهو قائم اللهم انج
الوليد بن الوليد وسلمة بن هشام وعياش بن ابى ربيعة والمستضعفين من المؤمنين اللهم
اشدد وطاتك على مضر واجعلها عليكم كسنى يوسف اللهم العن لحيان ورعلا وذكوان وعصية
عصت الله ورسوله ثم بلغنا انه ترك ذلك لما انزل ليس لك من لامر شئ حدثنا محمدبن
مهران الرازى ......... عن ابى سلمة ان ابا هريرة حدثهم ان النبى صلى الله عليه
وسلم قنت بعد الركعة فى قنوته اللهم اتج الوليد بن الوليد اللهم نج سلمة بن هشام
اللهم نج عياش بن ابى ربيعة اللهم نج المستضعفين من المؤمنين اللهم اشدد وطاتك على
مضر اللهم اجعلها عليهم سنين كسنى يوسف قال ابو هريرة ثم رايت رسول الله صلى الله
عليه وسلم ترك الدعاء بعد فقلت اراى رسول الله صلى الله عليه وسلم قد ترك الدعاء
لهم.
অর্থ: “হযরত
ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা
করেছেন হযরত আবু ত্বাহির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত হারমালা ইবনে ইয়াহইয়া
রহমতুল্লাহি আলাইহিমা। উনারা দু’জন বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত ইবনু ওহাব
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
তিনি বলেন আমার কাছে বর্ণনা করেছেন ইউনুস ইবনে ইয়াযিদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি বলেন আমার কাছে বর্ণনা করেন হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব
রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমা উনারা উভয়ে হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
শ্রবন করেছেন। তিনি বলেন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ফযরের নামাযে ক্বিরায়াত শেষ করে তাকবীর
বলে রুকুতে যেতেন,
এবং রুকু থেকে “সামিআল্লাহুলিমান হমিদাহ”বলে মাতা
উঠোতেন তখন দাঁড়িয়ে বলতেন,
(اللهم
... الى اخرها) আয় মহান আল্লাহ পাক! ওলীদ ইবনে ওলীদ কে, সালামা
ইবনে হিশাম কে, আইয়্যাশ ইবনে আবু রবিয়াহ কে এবং দুর্বল মু’মিনদেরকে মুক্তি তথা নাযাত দান
করুন এবং আয় মহান আল্লাহ পাক! মুদার গোত্রের উপর কঠোর শাস্তি অবতীর্ণ করুন। তাদের
উপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সময়ের দুর্ভিক্ষের (বছর গুলির) ন্যায় দুর্ভিক্ষ
নাযিল করুন। আয় মহান আল্লাহ পাক! লিহইয়ান, রিল, যাকওয়ান, এবং
আছিয়্যা গোত্রের লোকেরা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারক
অমান্য করেছে তাই তাদের উপর আপনি লা’নত বর্ষণ করুন।
হযরত আবু
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, অবশেষে আমাদের কাছে চুড়ান্ত খবর
পৌঁছেছে যে, কুরআন শরীফ উনার ليس لك من الأمر شئ “এ বিষয়ে
আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।” এই পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার
পর নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি তাদের প্রতি বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দিয়েছেন।
অনুরূপভাবে
হযরত মুহম্মদ ইবনে মিহরান রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকেও বর্ণিত, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের কাছে
হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকু থেকে
উঠে সামিআল্লাহুলিমান হামিদা বলার পর তিনি বলতেন ইয়া মহান আল্লাহ পাক! ওলীদ ইবনে
ওয়ালীদকে মুক্তি দান করুন,
ইয়া মহান আল্লাহ পাক! সালামা ইবনে হিশাম কে নাযাত দান করুন, ইয়া মহান
আল্লাহ পাক! আইয়্যাশ ইবনে আবী রবিয়্যাহকে এবং অত্যাচারিত দূর্বল মু’মিনদেরকে
মুক্তি দান করুন।
ইয়া মহান
আল্লাহ পাক! মুদার গোত্রের উপর কঠোর শাস্তি অবতীর্ণ করুন, ইয়া মহান
আল্লাহ পাক! হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার দুর্ভিক্ষের বছরগুলোর ন্যায় দুর্ভিক্ষ
তাদের উপর নাযিল করুন। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি
দেখতে পেলাম যে, পরে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি তাদের প্রতি দোয়া এবং বদদোয়ায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে
দিয়েছেন। (নাসায়ী শরীফ ১ম খ- ১৬৪ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ১ম খ- ২৩৭ পৃষ্ঠা, বুখারী
২য় খ- ৬৫৫ পৃষ্ঠা,
মুসলিম শরীফ ১ম খ- ১৩৭ পৃষ্ঠা, বুখারী
শরীফ ২য় খ-)
উপরোক্ত
তাফসীর ও হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক মাস
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন সত্য কথাই, তবে এরপর আর কখনই তিনি কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি। কারণ তা মানসুখ হয়ে গেছে। তাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ
করাকে বিদয়াত মনে করতেন।
আমাদের
হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহিসহ সকল ইমাম মুজতাহিদগণ উনাদের মতেও ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমাস ‘কুনূতে নাযেলা’ পাঠ করার
পর তা তরক করার কারণে মানসূখ হয়ে যায়। ফলে বর্তমানে তা পাঠ করা বিদয়াত ও নাজায়িয।
অর্থাৎ ফযর নামাযে কোন প্রকার কুনূতই পাঠ করা যাবে না।
যেমন এ
প্রসঙ্গে “শরহুয যারক্বানী”
কিতাবের ১০ম খ-ের ৪১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেক আছে,
[১০৭২-১০৭৬]
وفى
رواية ثم بلغنا انه ترك ذلك لما انزل الله تعالى عليه (ليس لك من الامر شئ) رواه
البخارى ومسلم.
অর্থ: “বর্ণিত
আছে যে, অতঃপর আমরা বিশুদ্ধ সূত্রে জানতে পেরেছি যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ
উনার, ليس
لك من الأمر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।”এ পবিত্র
আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ করেন তখনই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বন্ধ করে দেন।
(মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ) বুখারী
শরীফ, মুসলিম শরীফ,
শরহুস সন্নাহ)
“শরহুয যারকানী”কিতাবের
১০ম খ-ের ৪১৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
[১০৭৭]
(وفى رواية ابى دوأد والنسسائى) عن انس قنت
رسول الله صلى الله عليه وسلم شهرا ثم تركه لما نزل ليس لك من الامر شئ.
অর্থ: “আবু দাউদ
ও নাসায়ী শরীফ-এ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমাস
কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন,
অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন ليس
لك من الأمر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।”এ আয়াত
শরীফখানা অবতীর্ণ করেন তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেন।
(আর এই পরিত্যাগ করার অর্থই হচ্ছে মানসুখ বা রহিত হওয়া।) যার কারণে কুনূতে নাযেলা
মানসুখ হওয়ার ব্যাপারে ইমাম ও মুজতাহিদগণ উনাদের ইজাম হয়েছে।”
“যারকানী শরীফ”-এর ১০ম
খ-ের ৪১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০৭৮]
وبه
تمسك الطحاوى فى ترك القنوت فى الصبح قال لانهم اجمعوا على نسخه.
অর্থ: “হযরত
ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা
সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ উনাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বলেন কুনূতে নাযেলা মানসূখ
হওয়ার ব্যাপারে সকল ইমামগণ উনারা ইজমা হয়েছে।
উল্লেখ্য
যে, কুনূতে নাযেলা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ফযর নামাযে একমাস পাঠ করেছিলেন। অতঃপর কুরআন শরীফ উনার ..... “এ বিষয়ে
আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।”পবিত্র আয়াত শরীফখানা দ্বারা মহান
আল্লাহ পাক তিনি নিষেধ করায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন। ফলে পবিত্র আয়াত
শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে উহা পাঠ করা মানসুখ হয়ে যায়। আর মানসুখের পর উহার
উপর আমল করা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ তথা হারাম ও নাজায়িয।
যেমন এ
প্রসঙ্গে “ইলাউস সুনান”
কিতাবের ৬ষ্ঠ খ-ের ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০৭৯]
ان
قوله لم يقنت الا شهرا واحدا لم يقنت قلبله ولا بعده محمول على معنى هاروى انه قنت
شهرا يدعو على رعل وذكوان وعصية فلما نهى الله عزوجل عن الدعاء عليهم بقوله ليس لك
من الامر شئ انتهى وترك ذلك.
অর্থ: “নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবলমাত্র
এক মাস (ফযর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। এর পূর্বে এবং পরে আর কখনো ঐ কুনূতে
নাযেলা পাঠ করেননি। এই হুকুমের স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রিল, যাকওয়ান
এবং আছিয়্যাহ গোত্রদের প্রতি বদদোয়ায় কেবলমাত্র একমাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন।
অতঃপর যখন মহান আল্লাহ পাক ليس لك من الامر شئ “এ বিষয়ে
আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।”এই পবিত্র আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করে
তাদের প্রতি বদদোয়া করতে নিষেধ করেন। পরিশেষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও ঐ কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করেন।”
“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের
৬ষ্ঠ খ-ের ৭৩ পৃষ্ঠায় এবং ২য় খ-ের ৫৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০৮০-১০৮৩]
......... وكان احد من روى عنه القنوت عن
رسول الله صلى الله عليه وسلم عبد الرحمن ابن ابى بكر فاخبر فى حديثه فان ما كان
يقنت به رسول الله صلى الله عليه وسلم دعاء على من كان يدعو عليه ان الله عز وجل
نسخ ذلك بقوله ليس لك من الامر شئ الى اخرها قفى ذلك ايضا وجوب ترك القنوت فى
الفجر.
অর্থ: “....... অতঃপর কুনূতে নাযেলা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ খানা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে যেসব রাবী বর্ণনা করেছেন উনাদের
মধ্যে অন্যতম একজন রাবী ছিলেন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস
সালাম, তিনিও এ হাদীছ শরীফ উনার ব্যাপারে বর্ণনা করেন যে, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাফিরদের
প্রতি বদদোয়ায় (ফযর নামাযে একমাস) কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক
উনার বানী ليس لك من الامر شئ ... “এ বিষয়ে
আপনার আর কোন কিছু করার প্রয়োজন নেই।”এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের
মাধ্যমে তা মানসুখ করে দেন। আর এ কারণেই ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা
ওয়াজিব।”তানযীমুল আশতাত ২৩৭ পৃষ্ঠা, অনুরূপ বিখ্যাত ফিক্বাহর কিতাব ‘আল আইনী’-এর ২য়
জি:, ৫৯০ পৃষ্ঠায় শাব্দিক কিছু পরিবর্তনসহ উল্লেখ আছে।)
“শরহে মায়ানিল আছার”কিতাবের
১ম খ-ের ১৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০৮৪]
ان
الله عز وجل نسخ ذلك بقوله ليس لك من الامر شئ او يتوب عليهم او يعذبهم الاية ففى
ذلك ايضا وجوب ترك القنوت فى الفجر.
অর্থ: “নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী
ليس
لك من الامر شئ.
“এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই
করার প্রয়োজন নেই”
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে কুনূতে নাযেলাকে মানসুখ
করেন। আর এ কারণে ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করাও ওয়াজিব তথা ফরয।”
“আল কিফায়া”কিতাবের
১ম খ-ে উল্লেখ আছে,
[১০৮৫-১০৮৯]
وهكذا
عن انس قال قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى صلاة الفجر شهرا او قال اربعين
يوما يدعو على رعل وذكوان وعصنية حين قتلوا القراء وهم سبعون رجلا اوثما نون رضى
الله تعالى عنهم وفى المبسوط فلما نزل قوله تعالى ليس لك من الامر شئ اويتوب عليهم
ترك ذلك و قال ابو عثمان النهدى رحمه الله صليت خلف ابى بكر رضى الله عنه سنتسين
وصليت خلف عمر رضى الله عنه كذلك فلم ار واحدا منهما يقنت فى صلاة الفجر وهم رووا
القنوت ورووا تركه ففعله المتاخر ينسخ المتقدم.
অর্থ: “অনুরূপভাবে
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমাস কিংবা
চল্লিশ দিন রিল, যাকওয়ান এবং আছিয়্যা গোত্রদের প্রতি বদ দোয়ায় ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ
করেন। আর এটা তখনই পড়েছিলেন যখন ঐ সব গোত্রের লোকেরা সত্তর জন কিংবা আশি জন
হাফিযুল কুরআন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে নির্মমভাবে শহীদ করে
ফেলে।”
এ
প্রসঙ্গে ‘মাবসুত’কিতাবে বলা হয়েছে যে,
যখন মহান আল্লাহ পাক ليس لك من
الامر شئ. “এ বিষয়ে আপনার আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই।” এ পবিত্র
আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন,
তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ কুনূতে নাযেলা বর্জন তথা পরিত্যাগ
করেন। আর হযরত আবু উসমান নাহদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি
দীর্ঘ দুই বৎসর হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার পিছনে এবং অনুরূপভাবে
হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিছনেও দুই বৎসর নামায আদায় করেছি।
কিন্তু তারা দু’জনের কোন একজনকেও ফযরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করতে দেখিনি। উনারা সকলেই
কুনূতে নাযেলা পাঠের বর্ণনাও দিয়েছেন এবং ইহা পরিত্যাগ তথা মানসুখের হাদীছ শরীফও
বর্ণনা করেছেন। অতএব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শেষ জীবনে যে কাজ করেছেন তথা কুনূতে
নাযেলা তরক করেছেন এই শেষ বর্ণনাটির দ্বারা উনার পূর্বের বর্ণিত কাজটি তথা কুনূতে
নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ হয়ে গেছে।”(ফতহুল কাদীর ১ম খ-, ৩৭৯
পৃষ্ঠা, ইনায়া, উমদাতুল ক্বারী ৬ষ্ঠ খ-, ৭৩ পৃষ্ঠা)
‘আল আইনী’কিতাবের
২য় খ-ের ৫৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০৯০-১০৯২]
وقال
قتادة عن علقمة عن ابى الدرداء قال لا قنوت فى الفجر واخرج ابو مسعود الرازى فى
اصول السنة وجعل اول حديث من قال ان القنوت محدث وان النبى صلى الله عليه وسلم قنت
شهرا ثم تركه وقال الترمذى حديث حسن صحيح العمل عند اكثر اهل العلم.
অর্থ: “হযরত
ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আলকামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের
থেকে, তিনি হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি
বলেন, ফযর নামাযে কোন কুনূতই নেই। আর আবু মাসউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘উছূলুস
সুন্নাহ’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, যিনি প্রথম হাদীছ শরীফ খানা বর্ণনা করেছেন, তিনি
বলেছেন যে, নিশ্চয়ই কুনূতে নাযেলা বিদয়াত এবং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবলমাত্র একমাস ফযর নামাযে কুনূতে
নাযেলা পাঠের পর তা পরিত্যাগ করেন। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই
হাদীছ শরীফ উনাকেই হাসান ছহীহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর এ মত অধিকাংশ ইমাম ও
মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের।”(শরহে মায়ানিল আছার)
[১০৯৩-১০৯৪]
والحديث
حجة لنا فى ترك القنوت فى الفجر وبصرح فيه بانه محدث صححه الترمذى واعترف الحافظ
فى التلخيص.
অর্থ: “ফযরের
নামাযে কুনূতে নাযেলা পরিত্যাগ করা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ খানাই আমাদের হানাফী
মাযহাবের সুস্পষ্ট দলীল। আর এটাও প্রমাণিত যে, ফযর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা
বিদয়াত (সাইয়্যিয়াহ)। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ঐ হাদীছ শরীফ
খানাকে ছহীহ বলেন। আর হযরত হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘তালখীস’কিতাবে
এই মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।”
“মায়ারিফুস সুনান”কিতাবের
৪র্থ খ-ের ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১০৯৫-১০৯৭]
صريح
فى نسخ قنوت النازلة
অর্থ: “এটা
সুস্পষ্ট দলীল যে,
কুনূতে নাযেলা মানসুখ। (আছারুস সুনান, শরহে
মায়ানিল আছার)
“নাওয়াসেখুল কুরআন”১ম খ-ের
১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
[১০৯৮]
المنسوخ
لايعمل به.
অর্থ: “যা
মানসুখ বা রহিত হয়েছে তার উপর কোন আমল করা জায়িয নেই। অর্থাৎ তার উপর আমল করা বৈধ
নয়।”
“আল আইনী”২য় খ-ের
৫৯৭ পৃষ্ঠায় আছে,
[১০৯৯-১১০০]
ولابى
حنيفة ومحمد انه اى ان القنوت فى الفجر منسوخ .... ولامتا بعة فيه اى فى المنسوخ
لان الاتباع فيه لا يجوز.
অর্থ: “ইমামে আ’যম হযরত
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
মতে নিশ্চয়ই ফযরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠের বিধানটি মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে।
আর মানসুখ বা রহিত বিষয়ের উপর কোন ইত্তিবা বা অনুসরণ করা জায়িয নেই। কেননা মানসুখ
বা রহিত বিষয়ের উপর ইত্তিবা বা অনুসরণ করা হারাম। (আইনুল হিদায়া)
উপরোক্ত
দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, কুরআন
শরীফ উনার সূরায়ে আলে ইমরান-এর ১২৮নং পবিত্র আয়াত শরীফ ও অসংখ্য ছহীহ ও
নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফ দ্বারাই মূলত: ফযর নামাযে ‘কুনূতে নাযেলা” পাঠ করার
আমল ‘মানসুখ’ হয়ে গেছে। যা সকল অনুসরণীয় হানাফী ইমামগণ স্বীকার করেছেন। সাথে সাথে নিজেদের
কিতাবে তা উল্লেখ করেছেন। যার কিছু প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে।
সুতরাং
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এত স্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও যারা বলে
যে, “কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ কুনূতে নাযেলা মানসুখ হওয়ার কোন প্রমাণ নেই”- তারা
আসলে আশাদ্দুদ দরজার জাহিল ও কাট্টা গোমরাহ।
অতএব, তাদের
চতুর্থ বক্তব্যও মিথ্যা,
অশুদ্ধ জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন বলে সাব্যস্ত হলো।
(অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment