প্রশ্ন : একজন ইমাম সাহেব বললেন, মিলাদ পড়ার কোন দলীল কুরআন-হাদীসে নাই। কথা হলো যে, মিলাদ
অনুষ্ঠান করতেছি তাতে আমাদের কি কোন ভুল হইতেছে? ইহার কোন
প্রমাণ থাকলে বিস্তারিত জানাবেন।
উত্তর : আমার জানামতে আমাদের দেশে প্রচলিত আনুষ্ঠানিক
মৌলুদের কোন প্রমাণ কুরআন-হাদীছ বা ফিক্বাহ-তাফসীরের কিতাবে নাই।
এখন আমার
সুওয়াল হলো,
“মীলাদ শরীফ” সম্পর্কে মাসিক মদীনার উপরোক্ত
বক্তব্য কতটুকু সঠিক? আর সত্যিই কি পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ বা তাফসীর ও ফিক্বাহর কোন কিতাবে
মীলাদ শরীফ উনার প্রমাণ
নেই? নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে জাওয়াব দানে উপকৃত করবেন।
জাওয়াব : মীলাদ শরীফ সম্পর্কিত “মাসিক মদীনার” উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
কারণ
মদীনা সম্পাদক যেভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে তাতে এটাই বুঝানো হয়েছে যে, মদীনা সম্পাদকের যেটা জানা নাই সেটা আমল করা ভুল বা গুণার কারণ। মূলতঃ তার
জানা না থাকলেই যে, তা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ উনাদের কিতাবে নাই বা তা আমল করা ভুল।
এ দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর ও শরীয়ত বিরোধী। মীলাদ শরীফ পাঠ করা জায়েয এটা যে, পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফিক্বাহের কিতাবে রয়েছে, তা মদীনা সম্পাদকের জানা না থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ দু’চারটি চটি রেসালা পড়ে ইসলামের সব বিষয় জানা সম্ভব নয়।
মূলত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ,
তাফসীর ও ফিক্বাহের অসংখ্য কিতাবের দলীল-প্রমাণ দ্বারা
অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা সুন্নাতুল্লাহ, সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুন্নতে হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও সুন্নতে উম্মত তথা মোস্তাহসান।
কারণ, মীলাদ (ميلاد), মাওলিদ (مولد), ও মওলূদ (مولود) এ তিনটি শব্দের সমষ্টি হচ্ছে মীলাদ শরীফ, যার অর্থ
দাড়ায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আ’লামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত ও ছালাত-সালাম পাঠ করা। যা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার নির্দেশের অন্তর্ভূক্ত।
অতএব
মীলাদ শব্দের অর্থ যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার ছানা-ছিফত ও ছালাত-সালাম পাঠ করা হয়ে থাকে, তবে তো
তা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ সকলেরই সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। কেননা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন, স্বয়ং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার প্রায় সর্বত্র সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার ছানা-ছিফত করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক ও উনার হযরত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই
সর্বদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করেন এবং আমাদেরকেও
পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
যেমন, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ان
الله وملئكته يصلون على النبى يا ايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থ : “নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক ও উনার হযরত
ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম
উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করেন। হে
ঈমানদারগণ,
তোমরাও উনার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ কর।” (পবিত্র সূরা আহাযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
আর তাই
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
অসংখ্য পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ছালাত-সালাম পাঠ করার
গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن
ابن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اولى الناس بى يوم القيامة اكثرهم
على صلوات. (رواه الترمذى)
অর্থ : হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন,
“ঐ ব্যক্তিই ক্বিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে, যে ব্যক্তি আমার প্রতি অধিক মাত্রায় ছালাত পাঠ করবে।” (তিরমিযী
শরীফ) আর অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن
ابن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم. ان لله ملئكة سياحين فى الارض
يبلغونى من امتى السلام. (نسائى- دارمى)
অর্থ : হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহান
আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন উনার কিছু সংখ্যক হযরত ফেরেস্তা
আলাইহিমুস সালাম উনারা রয়েছেন, যারা পৃথিবীতে ভ্রমণ করে বেড়ান
এবং আমার উম্মতের পাঠকৃত সালাম আমার নিকট পৌঁছায়ে দেন। (নাসাঈ, দারেমী শরীফ)
অতএব, সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ শরীফ পাঠ করা অর্থাৎ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার ছানা-ছিফত করা ও উনার প্রতি
ছালাত ও সালাম পাঠ করা পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনাদেরই নির্দেশ বা আমল।
তবে
প্রশ্ন উঠতে পারে, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় তার প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে কি? হ্যাঁ বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় তা অবশ্যই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্মত। কারণ মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن
يشاقق الرسول من بعد ما تبين له الهدى واتبع غير سبيل المؤمنين نوله ماتولى.
অর্থ : “হিদায়েত
প্রকাশিত হওয়ার পর যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার বিরোধীতা করবে এবং মু’মিনদের পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ
করবে,
আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে।” (পবিত্র সূরা নিছা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৫)
উপরোক্ত
আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মু’মিনদের
পথ বা পদ্ধতি অবশ্যই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য, যার কারণে মোমেনদের পথকে অনুসরণ করার
নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
عن جرير قال- قال النبى صلى
الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة حسنة قله اجرها واحرمن عمل بها من بعده .....
ومن سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها ووزر من عمل بها من بعده. (رواه مسلم)
অর্থ : “হযরত
জরীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বলেন, যে কেউ ইসলামে কোন উত্তম পদ্ধতি
উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়তসম্মত) তার জন্যে সে সাওয়াব পাবে এবং তারপর যারা এ পদ্ধতির
অনুসরণ করবে তার সওয়াবও সে পাবে। ....... আবার যে কেউ দ্বীন ইসলামে কোন শরীয়ত
বিরোধী পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে, তার গুণাহ সে পাবে এবং তার পরে
যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে তাদের গুণাহও তার আমলনামায় দেয়া হবে।” (মুসলিম শরীফ)
মূলকথা
হলো, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়, তা মু’মিনদের প্রবর্তিত উত্তম পদ্ধতি, যার বিরোধীতা করতে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য
যে, মীলাদ শরীফ উনার এরূপ
পদ্ধতি নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাতে করে মানুষ অল্প সময়ে
নিয়মতান্ত্রিক বা শরীয়ত সম্মতভাবে সাইয়্যিদুল, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করতে পারে
এবং তার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করতে পারে। যেমন বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসায়
ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া হয়, তা “খাইরুল
কুরুনের”
অনেক পরে উদ্ভাবন করা হয়েছে এ জন্য যে, যাতে করে অল্প সময়ে সহজভাবে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করতে পারে, এটা যদি পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফসম্মত হতে পারে, তবে যার ছানা-ছিফত করা ও যার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ ও উনার সন্তুষ্টি পাওয়ার কারণ। উনার ছানা-ছিফত করার ও উনার প্রতি ছালাত-সালাম পাঠ করার
মীলাদ শরীফের উক্ত পদ্ধতি কেন পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্মত হবেনা? অবশ্যই এটা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্মত। কারণ কারো পক্ষেই প্রমাণ
করা সম্ভব হবেনা যে, মীলাদ শরীফ এ যে সকল আমল রয়েছে, তার একটিও শরীয়ত বিরোধী। বরং তার প্রত্যকটাই শরীয়ত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ,
ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত। যেমন- “মীলাদ
শরীফ উনার প্রথমেই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। কারণ
কোন নেক কাজ পবিত্র কুরআন
শরীফ তিলাওয়াত উনার
মাধ্যমে শুরু করা রহমত, বরকত তথা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের কারণ।” অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার উপর ছালাত পাঠ করা হয়। কারণ ছালাত পাঠ করা মহান
আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই নির্দেশ। এখানে
প্রশ্ন উঠতে পারে, মীলাদ শরীফ এ যেরূপ সম্মিলিতভাবে ছালাত পাঠ করা হয়, তার
প্রমাণ পবিত্র কুরআন
শরীফ অথবা পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে কি? অবশ্যই পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে তার প্রমাণ রয়েছে। যেমন- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال
النبى صلى الله عليه وسلم- اذا جلس قوم يصلون على حفت بهم الملئكة من لدن اقدامهم
الى عنان السماء بايديهم قراطيس الفضة واقلالم الذهب يكتبون الصلا على النبى صلى
الله عليه وسلم وبيقولون زيدوا زادكم الله.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
“যখন কোন সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে বসে এবং সম্মিলিতভাবে আমার
প্রতি ছালাত পাঠ করে, তখন হযরত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাদের পা থেকে আকাশ পর্যন্ত বেষ্টন করে নেন। তাদের হাতে থাকে রূপার কাগজ ও
সোনার কলম। যার দ্বারা তারা ছালাতের সাওয়াব লিখতে থাকেন এবং বলেন, তোমরা আরো অধিক মাত্রায় ছালাত পাঠ কর, মহান আল্লাহ
পাক তোমাদের উন্নত করবেন।” (দুররুল মুনাজ্জাম, কাশফুল গুম্মাহ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن
ابن عمر رضى الله عنهما. قال النبى صلى الله عليه وسلم زينوا مجالسكم بالصلوة على
فان صلاتكم على نور لكم يوم القيامة. (ديلمى مسئد الفردوس.)র্
অর্থ : হযরত ইবনে উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
“তোমাদের মজলিসকে আমার প্রতি ছালাত পাঠের দ্বারা সুসজ্জিত
কর। কারণ তোমাদের ছালাত পাঠ ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের জন্যে নূরে পরিণত হবে।” (দায়লমী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত
হলো যে,
সম্মিলিতভাবে মজলিসে ছালাত পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ।
শরীয়ত সম্মত তো অবশ্যই। তাই মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে সম্মিলিতভাবে ছালাত পাঠ করা হয়। সাথে সাথে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে শরীয়তসম্মত সুন্দর সুন্দর
কাছীদা পাঠ করা হয়। কারণ স্বয়ং হযরত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার শানে কাছীদা পাঠ করতেন। যেমন বিশিষ্ট সাহাবী বিখ্যাত কবি, হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রচিত কাছীদা পাঠ করে শুনানোর
জন্য স্বয়ং নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ মিম্বর মুবারক উনার পাশে উনার জন্যে আরেকটি মিম্বর স্থাপন করে
দিয়েছিলেন,
যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু কাছীদাসমূহ পাঠ করতেন। কাজেই মীলাদ শরীফ এ যে কাছীদা পাঠ করা হয় তা সুন্নতে হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। শরীয়তসম্মত তো বটেই। অতঃপর “তাওয়াল্লুদ
শরীফ”
পাঠ করা হয়। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার “তাওয়াল্লুদ
বা জন্মবৃত্তান্ত ও জীবনী আলোচনা করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনাদেরই নির্দেশ, যেমন- পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اذكروا نعمة الله عليكم.
অর্থ : “তোমাদেরকে
(সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামক যে নিয়ামত
দেয়া হয়েছে) তোমরা মহান আল্লাহ
পাক উনার সে নিয়ামতের স্মরণ করো, অর্থাৎ উনার আলোচনা কর।” (পবিত্র সূরা
ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
মূলত
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাওয়াল্লুদ
শরীফ বা জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করা শরীয়ত সম্মত তো অবশ্যই, সাথে
সাথে অফুরন্ত রহমত, বরকত ও সন্তুষ্টি লাভের কারণ। তাই মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে “তাওয়াল্লুদ
শরীফ”
পাঠ করা হয়। অতঃপর ক্বিয়াম বা দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করা হয়। কারণ অনুসরণীয় সকল ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক,
মুদাক্কিক ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিম উনাদের সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা
আদবের অন্তর্ভূক্ত। তাই সোনার মদীনায় রওজা শরীফ যিয়ারতের সময় দাঁড়িয়ে সালাম পেশ
করতে হয়। এ প্রসঙ্গে এ দেশেরই প্রখ্যাত আলেম, মুজাহিদে
আযম, হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরীদপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ কিতাব “তাসাউফ তত্বে” লিখেছেন, “মদীনা শরীফ উনার মধ্যে যেহেতু দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করতে
হয় সেহেতু মীলাদ শরীফ উনার মধ্যেও
দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।” তাছাড়া শরীয়তের কোথাও
দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করতে নিষেধ করা হয়েছে এরূপ একটি প্রমাণও কেউ পেশ করতে পারবেনা। তাই মীলাদ শরীফে ক্বিয়াম করা হয়
অর্থাৎ দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা হয়।
অতঃপর সব
শেষে মুনাজাত করা হয়। কারণ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,
الدعاء مخ العبادة.
অর্থাৎ “দোয়া বা মুনাজাত হচ্ছে, ইবাদতের মুল বা মগজ।” তাই মীলাদ শরীফে শেষে মুনাজাত করা
হয়। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র মীলাদ শরীফ,
পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার পদ্ধতি এবং পবিত্র মীলাদ
শরীফ উনার মধ্যে যা যা করা হয়, সবই পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ শরীফসম্মত।
অতএব, যা পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত, তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নাই বলা নিজের জিহালত বা
অজ্ঞতাকেই পরিস্ফুটিত করে তোলে এবং সাথে সাথে মীলাদ শরীফ সম্পর্কে মদীনার উপরোক্ত
বক্তব্য যে,
মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত তাও প্রমাণিত হয়।
মূলকথা
হলো, পবিত্র
কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ সকল কিতাবেই বর্তমান পদ্ধতিতে মীলাদ শরীফে পাঠ করার প্রমাণ পাওয়া যায়, যা উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
তারপরও
তাদের বোধদয়ের জন্যে ও হিদায়েতের লক্ষ্যে, যে সকল তাফসীর, পবিত্র হাদীছ শরীফ,
ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে বর্তমান পদ্ধতির পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার প্রমাণ রয়েছে বা বর্তমান
পদ্ধতির মীলাদ শরীফ পাঠ করা সুন্নতে উম্মত, মুস্তাহসান
ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে লেখা আছে- নিম্নে তার নামসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ-
(১) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (২) মিশকাত শরীফ, (৩) মিছবাহুয যুজাজাহ আলা সুনানে ইবনে মাজাহ, (৪)
মিরকাত শরীফ,
(৫) লোময়াত, (৬) আশয়্যাতুল লোময়াত, (৭) ফাতহুল মুবীন শরহে আরবাঈন লি ইমাম নববী, (৮)
জামিউল ফতওয়া,
(৯) মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আযীযিয়াহ, (১০)
ফতওয়ায়ে বরকতীয়া, (১১)
রদ্দুল মোহতার,
(১২) হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ(১৩) আহকামে শরীয়ত, (১৪) সুন্নী বেহেশতী জিওর, (১৫) জায়াল হক্ব, (১৬) কিতাবুত তানবীর ফী মাওলুদিল বাশীর ওয়াননাযীর, ১৭)
সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মোস্তফা।, (১৮) হুসনুল মাকাছেদ, (১৯) সীরতে শামী, (২০) সীরতে নববী, (২১) যুরক্বানী, (২২) ইমদাদুল মোশতাক্ব, (২৩) মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, (২৪) আদদুররুল মুনাজ্জাম ফী বায়ানে হুকমু মাওলুদিন নবীয়্যিল আ’যম,
(২৫) সাবীলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতে খাইরিল ইবাদ, (২৬) আল ইনতিবাহ ফী সালাসিলে আওলিয়াইল্লাহ, (২৭)
মিয়াতে মাসায়িল,
(২৮) মিরআতুয যামান, (২৯) নি’মাতুল ক্বোবরা, (৩০) আল মাওলূদুল কাবীর, (৩১)
ইশবাউল কালাম,
ফী ইছবাতিল মাওলুদে ওয়াল ক্বিয়াম, (৩২) আশ
শিফা লি ক্বাজী আয়াজ, (৩৩) আল মুলাখ্যাছ, (৩৪) কিতাবুস সীরাতিল মুহম্মদিয়াহ
ওয়াত তরীক্বাতিল আহমদিয়া, (৩৫) আল জাওহারুল মুনাজ্জাম, (৩৬) আল ইনসানুল উয়ুন, (৩৭) ইক্বদুল জাওহার, (৩৮) আসসুলুকুল মুয়াজ্জাম, (৩৯) ক্বিয়ামুল মিল্লাহ, (৪০) নুযহাতুল মাজালিস,(৪১) মাওয়ায়েজে আশ্রাফিয়া, (৪২) আশ্রাফুল জাওয়াব, (৪৩) মাকতুবাতে মাদানী, (৪৪) হাশিয়ায়ে হায়দারী, (৪৫) মরকূমাতে ইমদাদিয়াহ ইত্যাদি
কিতাব ছাড়াও আরো বহু তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বাহ
ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে। বিঃ দ্রঃ মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকার ২৮তম সংখ্যা পাঠ করুন।
আমরা
অতিশীঘ্রই অসংখ্য দলীলের মাধ্যমে মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া প্রকাশ
করবো। (ইনশাআল্লাহ)
আবা-৩৬
0 Comments:
Post a Comment