কিয়াম করা জায়িয আছে কি? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সম্পর্কে বর্ণনা কিরূপ?


সুওয়াল : মাসিক আল-ফুরক্বানপত্রিকায় নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর লেখা হয়- (প্রশ্ন)২- কিয়াম করা জায়িয আছে কি? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সম্পর্কে বর্ণনা কিরূপ? (উত্তর)২- পবিত্র কুরআন শরীফ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কোথায়ও কিয়াম করার নির্দেশ প্রদান করা হয়নি। বা কিয়াম করা কোন সওয়াবের কাজ একথা বলা হয়নি। বরং হাদীসে একথা বলা হয়েছে যে, নবী করীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার জীবদ্দশায় উনার আগমনকালে সাহাবায়ে কেরাম দাড়াতে চাইলে তিনি নিষেধ করতেন এবং একাজে অসন্তুষ্ট হতেন। সাহাবায়ে কেরামের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নবী করীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসন্তুষ্টির কারণে দাঁড়াতেন না। নবী করীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার ওফাতের প্রায় সাতশ বছর পর ইরানের এক বাদশাহ ও তার কিছু পদলেহী এ কিয়ামের আবিস্কার করেন। এজন্য উলামায়ে কিরাম কিয়ামকে বিদয়াত বলে থাকেন।
তাদের উল্লেখিত বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে- (১) পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কোথাও কিয়াম করার নির্দেশ দেয়া হয় নাই বা কিয়াম করা সওয়াবের কাজ একথা বলা হয় নাই।
(২) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন কালে দাড়াতেন না, কারণ দাড়ালে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন।
(৩) তাই উলামায়ে কিরাম কিয়ামকে বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বলে থাকেন।
এখন আমার জিজ্ঞাসা হলো, কিয়াম সম্পর্কে মাসিক আল ফুরকানেরউপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত? নির্ভরযোগ্য অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : ক্বিয়াম সম্পর্কে মাসিক আল-ফুরক্বানেরউপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট ও বিভ্রান্তি মূলক। কারণ তারা প্রথমেই লিখেছে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কোথাও ক্বিয়াম করার নির্দেশ দেয়া হয় নাই এবং এর কোন সওয়াবও বর্ণিত হয় নাই। একথার জাওয়াবে বলতে হয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যদি ক্বিয়াম করার নির্দেশ দেয়া হতো, তবে তো ক্বিয়াম করা ফরয-ওয়াজিব হয়ে যেত। কাজেই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ক্বিয়াম করার নির্দেশ দেয়া হয়নি, সে কারণে ক্বিয়াম করা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ, তা বলা জেহালত বা মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। তাছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সরাসরি কোন বিষয়ে নির্দেশ না থাকলেই যে তা করা যাবেনা, একথাও সম্পূর্ণ জেহালতের অন্তর্ভূক্ত।
কারণ আমরা দ্বীনী এমন অনেক কাজ করছি বা করা খুবই প্রয়োজন মনে করি যার নির্দেশ সরাসরি পবিত্র কুরআন শরীফপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই, বরং ইজমা-ক্বিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন আমরা দাদী-নানীকে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকি, অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সরাসরি দাদী-নানীকে বিয়ে না করার নির্দেশ দেয়া হয় নাই। অনুরূপ আমরা মাদ্রাসায় ভর্তি হই এবং ভর্তি হওয়াকে খুবই জরুরী মনে করে থাকি। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কোথাও সরাসরি মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি। বরং ইলম অর্জন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নির্দেষ না থাকলেই যে, তা করা যাবেনা বা তা করা নাজায়েয ও বিদয়াত একথা সম্পূর্ণই অবান্তর জিহালতপূর্ণ এবং ইসলাম সম্পর্কে অপব্যাখ্যা দেয়ার শামিল।
এখানে উল্লেখ্য যে, শুধু পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফই শরীয়তের দলীল নয়, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সাথে সাথে ইজমা ও ক্বিয়াসও শরীয়ত উনার দলীল। আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো- ইজমা-ক্বিয়াস অস্বীকারকারীরা বিদয়াতী ও গোমরাহ। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, যদিও ধরে নেই যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ক্বিয়াম করার নির্দেশ দেয়া হয়নি। কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদে মধ্যে অসংখ্য জায়গায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাযীম-তাকরীম করার ও উনার প্রতি আদব রক্ষা করার কঠোর নির্দেশ দয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وتعزروه وتوقروه.
অর্থ : তোমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাহায্য ও তাযীম কর।  (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাযীম করা সম্পর্কে আল্লামা কাজী আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকিতাবুশ শেফায়উল্লেখ করেন,
اعلم ان حرمة النبى صلى الله عليه وسلم بعد موته وتوقيره وتعظيمه لازم كما كان حال حياته وذالك عند ذكره صلى الله وذكر حديثه وسنته وسماع اسمه وسيرته.
অর্থ : জেনে রাখ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ উনার পর উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বা তাযীম-তাকরীম করা ঐরূপই ওয়াজিব, যেরূপ হায়াত মুবারক এ ওয়াজিব ছিল। কাজেই উনার বরকতময় জীবনী শ্রবণকালে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকালে, নাম মুবারক উচ্চারণকালে ও উনার বরকতময় ও উৎকৃষ্টতম আখলাকের কথা শ্রবণকালে, উনার প্রতি তাযীম-তাকরীম বা সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব।
আর এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে যে ক্বিয়াম করা হয়, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা তাযীম-তাকরীম করার জন্যেই করা হয়।
যেমন এ প্রসঙ্গে আশেক্বে রাসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ আব্দুল হক লাহাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় দুররুল মুনাজ্জামকিতাবে লিখেন,
ان القيام عند وضعه صلى الله عليه وسلم لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় জন্মবৃত্তান্ত আলোনার সময় উনার সম্মানার্থে বা তাযীম-তাকরীমের জন্যেই ক্বিয়াম করা হয়।” (আল উসীলাহ পৃঃ৫৮)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, প্রকৃতপক্ষে ক্বিয়াম করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই নির্দেশ, কারণ ক্বিয়াম হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সন্মান প্রদর্শন করার বা তাযীম-তাকরীম করার একটি বিশেষ মাধ্যম। আর ক্বিয়াম করলে সাওয়াব হবে একথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সরাসরি উল্লেখ নেই সত্য কথাই, তবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে,       
انما الاعمال بالنيات.
অর্থাৎ আমলের সওয়াব বা ফলাফল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। (বোখারী শরীফ)
অতএব, কেউ যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাযীমার্থে বা আদব রক্ষার নিয়্যাতে ক্বিয়াম করে, তবে সে সাওয়াব তো অবশ্যই পাবে, সাথে সাথে এটা তার জন্যে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের কারণ হবে। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়, বণী ইস্রাঈলের এক ব্যক্তি যে দুইশত বৎসর হায়াত পেয়েছিল, সে যখন তাওরাত কিতাব পাঠ করতো তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক দেখলে উক্ত নাম মুবারক এ চুম্বন করতো এবং চোখে, মুখে লাগাত একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে বা মুহব্বতে। এ আমলের উসীলায় মহান আল্লাহ পাক তিনি তার দুইশত বৎসরের গুণাহ-খাতা মাফ করে দেন। (হিলইয়াতুল আউলিয়া)      
এখন প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি কি তাওরাত শরীফ কিতাব উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক চুম্বন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বা নাম মুবারক চুম্বন করলে সওয়াব পাওয়া যাবে একথা বলেছিলেন? মূলতঃ কোনটাই বলা হয় নাই, তথাপিও বিশুদ্ধ নিয়্যাত ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তাযীম-তাকরীম বা সন্মান প্রদর্শন করার কারণে বণী ইস্রাঈলের উক্ত ব্যক্তি অশেষ ফযীলত হাছিল করেন।
অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন উম্মত যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানার্থে বা আদব রক্ষার্থে ক্বিয়াম করে তবে সে তার চেয়েও বেশী ফযীলত লাভ করতে পারে। কাজেই সাওয়াবের কথা উল্লেখ না থাকলেই যে, তা করলে সওয়াব পাওয়া যাবেনা, এটা সম্পূর্ণই মনগড়া ও কল্পনা প্রসূত কথা।
দ্বিতীয়ত : তারা লিখেছে- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন কালে দাঁড়াতেন না, কারণ দাঁড়ালে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন। তাদের এ বক্তব্যের জাওয়াব হলো- হ্যাঁ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগমন কালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দাঁড়ালে, দাঁড়াতে নিষেধ করতেন। তবে অবশ্যই উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ব্যাখ্যা স্বাপেক্ষ। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ খানার সঠিক ব্যাখ্যা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন, রাহমাতুল্লিল আলামীনউনি সবসময়ই চাইতেন যেন উম্মতের কোন কষ্ট না হয়। তাই বার বার দাঁড়ানোকে তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জন্যে কষ্টকর মনে করে দাঁড়াতে নিষেধ করতেন। শরীয়ত উনাখিলাফ মনে করে নিষেধ করতেননা অথবা নিজের বিণয় প্রকাশ করার লক্ষ্যে বা হযরত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বিণয় শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়াতে নিষেধ করতেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় থানবী সাহেবের ইমদাদুল ফতওয়ায় মিরকাত-এর বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে যে,

حضور صلی اللہ علیہ وسلم نے اپنے لئے (اس قیام) کو کیون نھین پسند فرمایا اسکی وجہ تواضع اور سادگی بے تکلفی تھی- چنانچہ مرقاۃ مین مصرح ھے-
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় বিণয, সরলতা ও ভদ্রতা প্রকাশে দাঁড়ানো পছন্দ করতেন না বা নিষেধ করতেন। যেমন মেরকাত শরীফে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে।এ প্রকার বিণয় বা শিষ্টতা ইত্যাদির উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে যে, আমাদের ঘরে কোন মেহমান আসলে তাঁকে মেহমানদারী করাতে গিয়ে যখন কোন খাদ্যদ্রব্য তাঁর দিকে বাড়িয়ে দেয়া হয়, তখন ঐ মেহমান যেমন সৌজন্য ও ভদ্রতাসূচক থাক, থাকবা না না, আর দরকার নেইইত্যাদি বলে থাকেন। যার প্রকৃত অর্থ এই নয় যে, তাঁর খাওয়া শেষ হয়েছে, বরং তা শিষ্টাচার বা ভদ্রতাজনিত অনিচ্ছা মাত্র। এমতাবস্থায় আমরা কেউই তাঁর অনিচ্ছার প্রতি গুরুত্ব প্রদর্শন করিনা, বরং অধিক আগ্রহ সহকারে তাঁর খাওয়ার প্রতি যত্নবান হই। কেননা, মেহমানের সৌজন্য তাঁরই তরফ হতে এবং মেজবানের ভদ্রতা ও কর্তব্য তার তরফ হতে।
এখানে উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যেসকল আদেশ বা নিষেধ এরূপ সৌজন্য এবং ভদ্রতা প্রকাশক ছিল। বিশিষ্ট ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অনেক ক্ষেত্রে সেসকল আদেশ ও নিষেধ উহার শব্দগত অর্থে গ্রহণ করেননি বা তার উপর আমল করেননি বরং তা লংঘণ করাই মোস্তাহাব মনে করেছেন। যেমন- বোখারী শরীফের ১ম খন্ডে ৯৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বণী মর ইবনে আওফের কোন (বিবাদে) মীমাংসা করতে যাওয়ায় নামাজের জন্য মসজিদে উপস্থিত হতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। সেহেতু হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি ইমাম হয়ে নামা পড়াতে আরম্ভ করলেন। ইতিমধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় এসে পৌঁছলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমণ অনুভব করে, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম পেছনে আসতে চাইলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইশারা করে উনাকে স্বস্থানে থাকার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তা সত্বেও তিনি পেছনে সরে আসলেন। সেজন্য নামাজান্তে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, 
يا ابابكر ما منعك ان تشبت اذ امرتك.
অর্থ : হে আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম! আমি নির্দেশ দেয়া সত্বেও আপনি স্বস্থানে থাকলে না কেন?” উত্তরে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
ما كان لا بن ابى قحافه ان يصلى بين يدى رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থ : আবূ কোহাফার পুত্রের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে নামা পড়া আদৌ শোভনীয় নয়।” (আবু কোহাফা উনার পিতার নাম, সেজন্য তিনি নিজেকে আবু কোহাফার পুত্র বলে উল্লেখ করেছেন) লক্ষণীয় যে, এখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ সত্বেও হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার মত মহা মর্যাদাবান সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  তা পালন করেননি। কারণ তিনি জানতেন যে, তা সৌজন্য সূচক নির্দেশ মাত্র- প্রকৃত আদেশ নয়। সেক্ষেত্রে তা পালন অপেক্ষা লংঘন করাই শিষ্টতা বা ভদ্রতার পরিচায়ক। নতুবা, প্রকৃত আদেশসূচক কোন নির্দেশ পালনার্থে তিনি নিজের জীবন, ধন, মান ইত্যাদি সমস্তই নিতান্ত তুচ্ছ জ্ঞান করতেন। সেজন্য উনার উত্তর শুনে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন প্রতিবাদ করেননি, বরং উনার এরূপ শিষ্টাচারপূর্ণ ব্যবহার ও জবাবে তিনি সন্তুষ্টই হয়েছিলেন। ইবনে হাজার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তদীয় (আদদুররুল মানদুদ) الدرالمنضود কিতাবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেছেন,
فيه دليل اى دليل على ان سلوك الادب اولى من امتشال الامر الذى علم عدم الجزم بقضيته.
অর্থ : যে আদেশ বাধ্যকর নয়, তা পালন করা অপেক্ষা আদব রক্ষা করাই যে উত্তম, এই পবিত্র হাদীছ শরীফই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ রয়েছে।অতএব, যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্বকীয় সৌজন্য, নম্রতা ও শিষ্টতা বশতঃ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য ক্বিয়াম করা নিষেধ করেছিলেন, তা পালন করা অপেক্ষা আদব রক্ষা করা এবং বিনীত হওয়াই অধিক উত্তম। এজন্যই ফিক্বাহের কিতাবসমূহে ক্বিয়ামে তাযীমীকে এক বাক্যে মোস্তাহাব বলে উল্লেখ করা হয়েছে।” (রুদ্দুল মোহতার ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা-২৪৫) মাওলানা রশীদ আহমদ গাংগুহী তদীয় ফতওয়ায়ে রশীদিয়া কিতাবের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় বলেছেন,
تعظیم دیندار کو کھرا ھونا درست ھے اور پاؤن چومنا ایسے ھی شخص کا بھی درست ھے حدیث سے ثابت ھے-
অর্থ : দ্বীনদার লোকের তাযীমের জন্য দণ্ডায়মান হওয়া জায়ি, এরূপ লোকের পদ চুম্বন করাও জায়িয। এ কথা পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে সাব্যস্ত।
লক্ষণীয় যে, তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ হতেই তাযীমী ক্বিয়াম জায়েয বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু পরিতাপ ও আশ্চর্য্যরে বিষয় এই যে, ক্বিয়াম বিরোধীরা ফিক্বাহের কিতাবসমূহে তাদের স্বার্থ সিদ্ধ কোন অনুকুল বিধান না পেয়ে সরাসরি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হাওলা দিয়ে বলে, “পবিত্র হাদীছ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বিয়াম করা সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন এবং তা অপছন্দ করেছেন।অথচ তারাই আবার নিজেদের সুবিধামত অন্য সময় বলে থাকে যে, “শুধু পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনে তার উপর আমল করা চলেনা, বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে ফিক্বাহের কিতাব সমূহে প্রদত্ত বিধানানুযায়ী আমাদের আমল করতে হবে। কেননা ফক্বীহগণ যেরূপ সঠিকভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মর্ম বুঝতে সক্ষম, তদ্রুপভাবে আমরা বুঝতে পারিনা। সেজন্য ফিক্বাহের মাধ্যমে আমাদেরকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বুঝতে হবে।
মূলত এরূপ দ্বিবিধ অভিমত পোষণকারীরা প্রকৃতপক্ষে না পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক অনুসারী, না ফিক্বাহের নির্দেশাদি পালনকারী। বরং বলা যেতে পারে যে, আসলে এ দুয়ের আবরণে তারা নফসানিয়্যাতের খাঁটি অনুসরণকারী। তা না হলে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সাথে সাথে ফিক্বাহের কিতাবসমূহের প্রদত্ত বিধানও তারা অতি আগ্রহের সাথে পালন করতো। উপরোক্ত আলোচনা ও ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে শুধুমাত্র নিজের বিণয়, ভদ্রতা ও শিষ্টতা প্রকাশেই ক্বিয়াম করতে নিষেধ করতেন। শরীয়ত বিরোধী, নাজায়েয বা বিদয়াত হওয়ার কারণে নয়। কেননা ক্বিয়ামের পক্ষেও অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, 
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجلس معنا فى المسجد يحدثنا فاذا قام قمنا قياما حتى نرانه قد دخل بعض بيوت ازواجه.
অর্থ : হযরত আবু হুরয়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে বসে আমাদেরকে নসীহত করছিলেন। যখন তিনি উঠলেন বা দাঁড়ালেন, আমরাও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষন আমরা উনাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। এমনকি উনার স্ত্রীদের ঘরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম। (বায়হাক্বী ফী শোবিল ঈমান, মিশকাত শরীফ)    অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
عن عا ئشة رضى الله عنها. كانت اذا دخلت عليه قام اليها فاخذ يدها فقبلها واجلسها فى مجلسه وكان اذا دخل عليها قامت له فاخذت بيده فقبلته واجلسته فى مجلسها.
অর্থ : হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যেতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং হাতে বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট যেতেন তখন তিনি দাঁড়িয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। (আবু দাউদ, মিশকাত, মেরকাত)           
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত মুহম্মদ বিন হিলাল স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন ঘর হতে বের হতেন, তখন আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি স্বীয় ঘরে প্রবেশ না করতেন (আমরা দাঁড়িতে থাকতাম)। এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বাযযার বর্ণনা করেছেন, যার রাবী অত্যন্ত শক্তিশালী। (ফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছার) বোখারী শরীফ উনার টীকা (হাশিয়া) কুসতালানী-এর ৯ম খণ্ড, ১২৫ পৃষ্ঠায়সহীহ সনদে হযরত উলামা ইবনে শারীক হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন- আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাযীম-এর জন্যে দাঁড়িয় উনার হস্ত মুবারকদ্বয় চুম্বন দিলাম।
রদ্দুল মোহতার ও হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহনামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ক্বিয়াম তিন প্রকার- (১) ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
لا تقوم كما يقوم الاعاجم.
অর্থাৎ তোমরা আজমীদের মত (মাথা নীচু করে নমস্কারের ছূরতে) দাঁড়াইওনা।এরূপ ক্বিয়াম শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয। (২) ক্বিয়ামে হুব্বী, যেমন- হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘরে আসলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মুহব্বতে) দাঁড়িয়ে যেতেন, একে ক্বিয়ামে হুব্বী বলে। (৩) ক্বিয়ামে তাযীমী, যেমন- হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাযীমের জন্যে দাঁড়াতেন, যা উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
মূলকথা হলো- ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী শরীয়তে হারাম, নাজায়েয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। আর ক্বিয়ামে হুব্বী ও তাযীমী শরীয়তে জায়েয ও সুন্নত। অতএব, সুস্পষ্ট ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, “আল-ফুরকানেবর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা ক্বিয়াম কখনোই বিদয়াত বা নাজায়েয প্রমাণিত হয়না বরং উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, কতটুকু বিনয়ী ছিলেন এবং উম্মতের প্রতি কতটুকু দয়ালু ছিলেন সেটাই প্রমাণিত হয়। কাজেই উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে ক্বিয়ামের বিপক্ষে পেশ করা জেহালত বৈ কিছুই নয়। তৃতীয়তঃ তারা লিখেছে উলামায়ে কিরামগণ ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলেছেন অর্থাৎ ক্বিয়াম বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। মূলতঃ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য উলামায়ে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার শামিল। কারণ সকল উলামায়ে কিরামগণ ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলেননি, বরং কিছু সংখ্যক বাতিলের পদলেহী, বিদেশী প্রভূদের সেবাদাস ও উচ্ছিষ্টভূগী নামধারী আলেম ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলেছে এবং বলছে। তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য ও বাতিল। কারণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাযীমার্থে ক্বিয়াম করতেন বলে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। কাজেই যেখানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল দ্বারা ক্বিয়াম সুন্নত প্রমাণিত সে ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলা, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদয়াতের তোহমত দেয়ার নমান্তর। যা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। অনুরূপ জগতখ্যাত অনুসরণীয় অসংখ্য ইমাম মুজতাহিদগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার ও বিদয়াতের তোহমত দেয়ার শামিল। কারণ পৃথিবীর অসংখ্য অগণিত অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম তথা হক্কানী আলেমগণ ক্বিয়াম করেছেন ও ক্বিয়ামকে জায়েয বলেছেন। যেমন- বিশিষ্ট মুজতাহিদ ইমাম তক্বীউদ্দীন সাবকী রহমতুল্লাহি আলাইহি, শায়খ আবুল খাত্তাব মর ইবনে ক্বালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুহাদ্দেসীন, হাফেজ ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুফাসসেরীন, হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, পাক ভারত উপমহাদেশে প্রথম পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রচার-প্রসারকারী, বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আশরাফ আলী থানবীর পীর, শায়খুল আরব ওয়াল আজম হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বাংলার মূলকে প্রায় ৫৫ বৎসর হিদায়েতের কাজ করনেওয়ালা, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুজাদ্দেদে যামান, হযরত আবু বকর সিদ্দীক ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হাফেজে হাদীছ, বিশিষ্ট মুবাহিছ, আল্লামা রুহুল আমীন বশীর হাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুজাহিদে আযম, হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরীদপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, খতীবে আযম মুফতী আমীমুল ইহসান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মাওলানা জাফর আহমদ ওসমানী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অসংখ্য সর্বজন স্বীকৃত অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ, আলেম ও বুযুর্গনের প্রত্যেকেই মীলাদ-ক্বিয়াম করতেন এবং মীলাদ-ক্বিয়ামকে জায়েয বলেছেন। মাসিক আল ফুরকানেরবক্তব্য মোতাবেক উল্লেখিত সকলেই পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে ক্বিয়াম করার কারণে এবং ক্বিয়াম জায়িয বলার কারণে খাছ বিদয়াতী (নাউযুবিল্লাহ)!            সাথে সাথে আল ফুরকানের বক্তব্য দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, ফুরফুরা ও জৈনপুরী সিলসিলার অসংখ্য, অগণিত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে ক্বিয়াম করার কারণে এবং ক্বিয়ামকে জায়েয ও মুস্তাহসান বলার কারণে উনারা সকলেই বিদয়াতী। আর যারা বিদয়াতী, তারা গোমরার অন্তর্ভূক্ত। (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)    মূলত ক্বিয়াম সম্পর্কে তাদের এ বক্তব্য সম্পর্ণ মনগড়া বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে বিদয়াতী বা গোমরাহ বলার কারণে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। মূলকথা হলো মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে যে ক্বিয়াম করা হয় তা যেরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তদ্রুপ অসংখ্য ইমাম, মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আমল ও ক্বওল দ্বারা প্রমাণিত।
নিম্নে উনার কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো- আল উসীলানামক কিতাবের ৬৯নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فى الدر المنظم- المختار عندى فى وجه القيام عند ذكر وضعه صلى الله عليه وسلم- اداء شكرالحق بظهور رحمة للعالمين.
অর্থ : দুররুল মুনাজ্জামকিতাবে হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাজেরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন, আমার নিকট সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলাদত শরীফের বর্ণনার সময় ক্বিয়াম করা জায়েয হওয়াই গ্রহণযোগ্য মত। কেননা এর দ্বারা রাহমাতুল্লিল আলামীন, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিকাশ হওয়ায় আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করা হয়।” “ইক্বদুল জাওয়াহিরনামক কিতাবের ২৯নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
قد استحسن القيام عند ذكر ولا دته الشريفة صلى الله عليه وسلم تئمة ذو رواية ودراية.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মবৃত্তান্ত আলোচনাকালে ক্বিয়াম করাকে বিচক্ষণ ইমামগণ মোস্তাহসান বা মোস্তাহাব বলেছেন।বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীনের তথা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফের প্রচার-প্রসারকারী, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদ্বীয় মুলাখখাছকিতাবে উল্লেখ করেন,
 قال علامة السيوطى واى نفع احسن من عمل المولد والقيام وانهم يهيدان محبة النبى صلى الله عظمته ودلالته فى قلب فاعله.
অর্থ : আল্লামা ইমাম সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মীলাদ ও ক্বিয়াম অপেক্ষা অধিকতর উত্তম বা ফলদায়ক আমল আর কি হতে পারে? কারণ এর দ্বারা মীলাদ-ক্বিয়ামকারীর হৃদয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, মর্যাদা ও মহিমার উদ্দীপনা জেগে উঠে।” “ইশবাউল কালামনামক কিতাবের ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,                    

قد اجمعت الامة المحمدية من الاهل السنة والجماعة على استحسان القيام المذكور وقال عليه السلام لا تجتمع امتى على الضلالة.
অর্থ : উম্মতে মুহাম্মদীর আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলেমগণ মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম মোস্তাহসান হওয়ার ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার উম্মত (আলেমগণ) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবেনা।আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن يشاقق الرسول من بعد ماتبين له الهدى ويتبع غير سبيل المؤمنين نوله ما تولى. الخ
অর্থ : যদি কারো নিকট হিদায়েত প্রকাশ হবার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করে, আর মুমিনদের পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ করে, তবে আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে ।
শায়খ আহমদ ইবনে আবু সাঈদ মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনা তাফসীরে উল্লেখ করেন,
فجعلت مخالفة المؤمنين مثل مخالفة الرسول فيكون اجماعهم كخبرالرسول حجة قطعية. (نورالانوار(
অর্থ : পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মুমিনদের বিরোধিতাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা হিসাবে আখ্যায়ীত করা হয়েছে। অতএব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মতো তাদের ইজমাও অকাট্য ও প্র্রামান্য দলীল বলে পরিগনিত হবে। (নুরুল আনোয়ার)         সুতরাং মুমিনদের প্রচলিত পথের বিরোধিতা করে মীলাদ শরীফের ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলা মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই বিরোধিতা করার নামান্তর। যার থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।         
সীরাতে হালবীয়া سيرة حلبيه)) কিতাবের ১ম খন্ড ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
جرت عادة كثيرة من المحبين اذا سمعوا بذكر وضعه صلى الله عليه وسلم ان يقاموا لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিকাংশ মহব্বতকারীগণের স্বভাব এটাই ছিল যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্ম বিবরণ শুনে সাথে সাথেই ক্বিয়াম করেন।    বড় কাটারা ও লালবাগ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, মুজাহিদে আযম, খাদেমুল ইসলাম, হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্বিয়াম সম্পর্কে উনাতাসাউফ তত্ত্বকিতাবে লিখেন যে, মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে ক্বিয়াম করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।        মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী সাহেবসহ সকল ওলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আযম আল্লামা হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার هفت مسائل (হাফতে মাসায়েল) কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
مولود شریف کو ذریعھء برکات سمجھ کرھر سال منعقد کرتا ھون اور قیام کے وقت بے حد لطف و لذت پاتا ھون-
অর্থ : মীলাদ শরীফ উনার মাহফিলকে বরকত লাভের উসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফ উনার মজলিস করি এবং মীলাদ মাহফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাধ উপভোগ করি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, “মাসিক আল-ফুরক্বানেরবক্তব্য মোতাবেক যদি ক্বিয়াম করা বিদয়াত হয় তবে শায়খুল আরব ওয়াল আজম, হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি যেহেতু উনি মীলাদ শরীফ পাঠ করার সময় ক্বিয়াম করতেন, যা হাফতে মাসায়েলেরউপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। সেহেতু উনি বিদয়াতী, আর বিদয়াতীরা গোমরাহ-এর অন্তর্ভূক্ত। যেহেতু উনি বিদয়াতী ও গোমরাহ, সেহেতু ওনার মুরীদ- মুতাক্বেদ যারা, তারাও বিদয়াতী ও গোমরাহ। তার মধ্যে অন্যতম বিদয়াতী ও গোমরাহ হলো আশ্রাফ আলী থানবী সাহেব ও রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব। কেননা তারা ওনার বিশিষ্ট মুরীদের অন্তর্ভূক্ত। এক কথায় ওলামায়ে দেওবন্দ ও তাদের অনুসারী সকলেই বিদয়াতী ও গোমরাহ-এর অন্তর্ভূক্ত। অথচ মীলাদ-ক্বিয়াম অবশ্যই জায়েয বরং সুন্নতে উম্মত মুস্তাহসান, আর হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি সর্বজনমান্য ও অনুসরণীয় বুজুর্গ, হক্বানী আলেম, ওলীআল্লাহ উনার অন্তর্ভূক্ত। উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ক্বিয়াম সম্পর্কে মাসিক আল-ফুরক্বানেরবক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, বানোয়াট, জেহালতপূর্ণ, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, অনুসরণীয় সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও ওলামায়ে কিরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনের মতে ক্বিয়াম করা জায়েয, সুন্নতে উম্মত, মুস্তাহসান।

আবা-৩৬

0 Comments: