সুওয়াল : ক্বওমী মাদ্রাসা ও আলিয়া মাদ্রাসার প্রায়
সর্বস্তরের ওলামায়ে কিরাম ও পীর মাশায়েখগণ গণতন্ত্রের শ্লোগান দিয়ে, ইসলামী সরকার বা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজ ময়দানে নেমেছেন।
আমার
প্রশ্ন হলো- সত্যিই কি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি ইসলাম সমর্থন করে? যদি না করে থাকে, তবে আজ আলেম সমাজ কেন এ পথে নেমেছেন?
জাওয়াব : ইসলাম হচ্ছে, মহান আল্লাহ
পাক উনার একমাত্র মনোনীত দ্বীন। যা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সুরা আল ইমরান শরীফ উনার ১৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন-
ان الدين عند الله الاسلام.
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ইসলামই একমাত্র মনোনীত
দ্বীন।”
আর গণতন্ত্র হলো- গণ অর্থ জনগণ, আর
তন্ত্র অর্থ নিয়মনীতি। অর্থাৎ জনগণের দ্বারা জনগণের জন্য যে নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন
প্রণয়ণ করে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়, তাকে
গণতন্ত্র বলে।
সমাজতন্ত্র
: সমাজতন্ত্র হলো এমন একটি শাসন
ব্যবস্থা,
যেখানে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কুফল দুর করার উপায় হিসেবে
ব্যক্তিগত সম্পত্তির উৎস নিষিদ্ধ করা হয় এবং রাষ্ট্রই ব্যক্তি জীবনকে সম্পূর্ণরূপে
নিয়ন্ত্রন করে। সেখানে নাস্তিক্যবাদ, দর্শনকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
আইন-কানুন,
নিয়ম-নীতি, সমাজতন্ত্রীরাই প্রণয়ন করে, এটাও মানব রচিত।
রাজতন্ত্র
: রাজতন্ত্র বলতে বুঝায় সে ধরণের ব্যবস্থা, যেখানে সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব একজন চূড়ান্ত শাসকের হাতে ন্যাস্ত থাকে।
তার ইচ্ছানুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হয় এবং সে তার ইচ্ছামত আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করে। এই শাসন ব্যবস্থা বংশ পরস্পরায় টিকে থাকে, তাই একে রাজতন্ত্র বলে। এটিও মানব রচিত। অতএব, দেখা
যাচ্ছে যে,
ইসলাম মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ
থেকে ওহীর মাধ্যমেমহান আল্লাহ পাক উনার রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নাযিলকৃত দ্বীন। আর গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র,
রাজতন্ত্র ইত্যাদি সবই মানব রচিত। এ সমস্ত মানব রচিত মতবাদ
গ্রহণ করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ومن
يبتغى غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخاسرين.
অর্থ : “যে
ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের (নিয়ম-নীতি) তালাশ করে বা গ্রহণ করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার থেকে
কখনই তা কবুল করবেন না এবং সে পরকালে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” (পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)
অর্থাৎ
দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা, আইন-কানুন গ্রহণ করা তো দূরের কথা, শুধু তালাশ করলেই সে মহান আল্লাহ পাক থেকে মাহরুম হয়ে
পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। আরো উল্লেখ্য যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ
পাক সকল ধর্মকে মানসুখ (রহিত) ও বাতিল করে দিয়ে একমাত্র দ্বীন ইসলাম উনাকেই মনোনীত করেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
هو
الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله.
অর্থ : “তিনি (মহান আল্লাহ পাক) সমস্ত ধর্মের উপর
প্রাধান্য দিয়ে এবং সেগুলোকে বাতিল ঘোষণা করে উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উানকে হিদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে
পাঠিয়েছেন।”
(পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত
শরীফ ৩৩, পবিত্র সুরা ফাতাহ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮, পবিত্র সুরা সফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)
অতএব মহান আল্লাহ পাক যেখানে উনার তরফ থেকে ওহীর মাধ্যমে
পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসূল
আলাইহিস সালাম উনাদের প্রতি
নাযিলকৃত দ্বীনসমূহকে মনসুখ বা রহিত করে দিয়ে দ্বীন ইসলাম উনাকে মনোনীত
করে দিলেন,
সেখানে মানব রচিত গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? আর এ
সমস্ত মানব রচিত মতবাদ দ্বারা কি করে ইসলাম কায়েম হতে পারে? তা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। যারা ইসলামের নামে এ সমস্ত মানব রচিত মতবাদের পক্ষে
আন্দোলন করে,
তারা এখনও দ্বীন ইসলাম ও অন্যান্য মতবাদের মধ্যে যে কি
পার্থক্য রয়েছে,
তা বুঝে উঠতে পারেনি। আমরা দোয়া করি, এখনও যে
বা যারা হক্ব ও নাহক্বের মধ্যে প্রভেদ করতে না পেরে (যেমন ইসলাম ও গণতন্ত্র
ইত্যাদি) গোমরাহীর মধ্যে রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তাদেরকে যেন দ্বীনের
সহীহ সমঝ দান করে হিদায়েত নছীব করেন। (গণতন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে
মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ২৬তম সংখ্যা পাঠ করুন।)
আবা-৩৬
গণতন্ত্র করা
হারাম ফতোয়া । লিংক-
১৫. https://khawajarazi.blogspot.com/2020/03/blog-post_45.html
0 Comments:
Post a Comment