সুওয়াল : শুধু ‘রাজ্জাক’, ‘কাদির’
ও ‘হালীম’ বলে
কাউকে ডাকা জায়িয হবে
কিনা?
জনৈক ব্যক্তি বলেছেন যে, জায়েয
হবে না। সঠিক উত্তরদানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : কারো নাম যদি আব্দুর রাজ্জাক হয়, তাহলে তাকে আব্দুর রাজ্জাক বলেই ডাকতে হবে। শুধু রাজ্জাক বলে ডাকা জায়িয নেই। কারণ রাজ্জাক অর্থ হলো-
রিজিকদাতা,
যা মহান আল্লাহ
পাক উনার একটি সিফতের অন্তর্ভূক্ত। আর
আবদ শব্দের অর্থ হচ্ছে- গোলাম। আব্দুর রাজ্জাক শব্দের অর্থ হচ্ছে রিজিকদাতার (মহান আল্লাহ পাক উনার) গোলাম বা বান্দা। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার কোন সিফত বা গুণবাচক কোন শব্দ, যা দিয়ে সরাসরি মহান আল্লাহ
পাক উনাতেই বুঝানো হয়, এমন কোন নাম দিয়ে কাউকে ডাকা জায়িয নেই। কিন্তু যে সমস্ত সিফাত বা গুণ মহান আল্লাহ পাক উনার শানে
ব্যবহৃত হয়। অপর দিকে মানুষের ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করা যায় এমন ধরণের সিফাত বা
গুণ বাচক শব্দ দ্বারা মানুষকে ডাকলে গুণাহ হবেনা। যেমন- حليم (হালীম) “ধৈর্য্যশীল”। এ গুণবাচক শব্দটি স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক নিজের শানে নিজেই ব্যবহার করেছেন পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার
মধ্যে অনেক জায়গায়। যেমন পবিত্র সূরা বাকারা শরীফ উনার মধ্যে ২২৫,
২৩৫, ২৬৩ ইত্যাদি পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে। এছাড়া পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ, পবিত্র সূরা নিছা শরীফ, পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ ইত্যাদি অনেক পবিত্র সূরাসমূহেও ব্যবহার করেছেন। আবার
স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক নিজেই হযরত ইব্রাহীম
আলাইহিস সালাম উনাকে পবিত্র সুরা হুদ উনার ৭৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম উনাকে পবিত্র সূরা সাফফাত উনার ১০১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে حليم হালীম
বলে সম্বোধন করেছেন। رشيد (রশীদ) পথ প্রদর্শক, এ
গুণবাচক শব্দটি মহান আল্লাহ
পাক উনার নাম সমূহের একটি নাম যা বুখারী, মুসলিম ইত্যাদি পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সুরা হুদ উনার ৮৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম উনাকে الحليم
الرشيد - আল হালীমুর রশীদ বলে
সম্বোধন করেছেন। পবিত্র সুরা হুদ উনার ৭৮নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং হযরত লুৎ আলাইহিস সালাম উনার কথা উল্লেখ করেছেন যা তিনি তার
ক্বওমকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-
اليس منكم رجل رشيد.
অর্থ : তোমাদের মাঝে কি ন্যায়-নিষ্ঠ, ভাল বা সৎপথ প্রাপ্ত লোক নেই? উল্লেখ্য رشيد শব্দটি দু’অর্থে ব্যবহার হতে পারে। (১) সৎপথ প্রদর্শনকারী (২) সৎপথ প্রাপ্ত। অনুরূপ قادر (ক্বাদির) অর্থ- সক্ষম বা ক্ষমতাশালী। এ গুণবাচক শব্দটি
স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র
সুরা মু’মিনুন উনার ১৮, ৯৫, পবিত্র মা‘আরিজ উনার ৪০, পবিত্র সূরা মুরসালাত উনার ২৩নং পবিত্র আয়াত শরীফসহ ইত্যাদি আরো অনেক
সূরাসমূহে নিজের শানে ব্যবহার করেছেন। এছাড়া বোখারী, মুসলীম
ইত্যাদি পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার কিতাবে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম সমূহের মধ্যে একটি নাম
হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার তিনিই পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ উনার ২৪ ও পবিত্র সূরা ক্বলম উনার ২৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উক্ত শব্দটি বান্দার ক্ষেত্রে
ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও আরো অনেক গুণবাচক শব্দ রয়েছে যেমন- মালিক, গণী,
ওয়াকিল, রাকীব, শাহীদ, আযীম,
আলী, হাফিজ, ওয়াদুদ, ওলী,
ওয়ারিছ, ছাদিক্ব ইত্যাদি, যার দ্বারা আল্লাহ পাককে বুঝানো হয় বা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ডাকা
হয়। এতদসত্ত্বেও এ সমস্ত গুণবাচক শব্দ দ্বারা মানুষকেও সম্বোধন করা জায়েয রয়েছে।
আর যে
সিফাত বা গুণ বাচক নামসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য
নির্দিষ্ট যেমন- খালিক্ব, ইলাহ, রব
ইত্যাদি গুণবাচক নামসমূহ দ্বারা বান্দাহকে সম্বোধন করতে হলে عبد (আবদ), فضل (ফজল), بخش (বখশ) ইত্যাদি শব্দ যুক্ত করে عبد الخالق (আব্দুল খালিক্ব), عبد الرب (আব্দুর রব),
فضل
ربى (ফজলে রাব্বী), الهى بخش (ইলাহী বখশ)
ইত্যাদি বলে সম্বোধন করতে হবে। কিন্তু শুধু خالق (খালিক্ব), رب (রব),
ربى (রাব্বী),
الهى (ইলাহী ইত্যাদি গুণবাচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা
জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ অর্থ হিসেবে খেয়াল না করে শব্দ হিসেবে সম্বোধন করে তবে সেটা কেউ কেউ
জায়িয বলেছেন। তবে তা অবশ্যই
তাক্বওয়ার খিলাফ। (সমূহ আক্বায়েদের কিতাব)।
লক্ষ্যণীয়
যে, যদিও একই গুণবাচক শব্দ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে বুঝানো
হয় এবং তা দ্বারা বান্দাহকেও সম্বোধন করা
হয়। তখন সে শব্দগুলির অর্থগত অনেক পার্থক্য হবে। যেমন- মহান আল্লাহ পাক উনার শানে শব্দগুলির অর্থ- স্থায়ী
গুণ বুঝাবে। আর বান্দার ক্ষেত্রে অস্থায়ী কিম্বা অর্জিত গুণ বুঝাবে।
আবা-৩৬
0 Comments:
Post a Comment