সুওয়াল : “মাসিক
মুঈনুল ইসলাম”
জুলাই/৯৬ সংখ্যার জিজ্ঞাসা- সমাধান বিভাগে এবং “মাসিক রাহমানী পয়গাম” জুন/৯৬ সংখ্যার জিজ্ঞাসা- জবাব
বিভাগে “খতম তারাবীহ পড়ায়ে উজরত বা বিণিময় গ্রহণ করা” সম্পর্কে
যে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে সে বক্তব্যের কতিপয় বিষয়ে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক
হয়েছে। মনে হয় তা আপত্তিকর ও সমাজে ফিৎনা সৃষ্টির কারণ। নিম্নে উক্ত পত্রিকাদ্বয়ের
আপত্তিকর বক্তব্য সমূহ উল্লেখ করা হলো যেমন- “মাসিক মুঈনুল ইসলাম” পত্রিকায় উজরত সম্পর্কে যা বলা
হয়েছে তার মূল বিষয় বস্তু হচ্ছে- (১) পূর্ববর্তী যুগের ফিক্বাহ শাস্ত্র বিদগণের
মতে অর্থকড়ি বা অন্য কিছুর মাধ্যমে ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ অবৈধ। তবে পরবর্তী যুগের
ফক্বীহগণ দ্বীন ও শিআরে দ্বীনের অস্তিত্ব রক্ষার খাতিরে অর্থাৎ ইসলামের বিশেষ কোন
ইবাদতের বিলুপ্তি প্রতিরোধ কল্পে কতিপয় বিষয়ের উপর প্রতিদান গ্রহণের অনুমতি প্রদান
করেছেন। উদাহরণতঃ ইমামতী করে, আযান-ইক্বামত দিয়ে, ওয়াজ-নছীহত করে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শাস্ত্র শিক্ষা দিয়ে
ভাতা গ্রহণ ইত্যাদি। এছাড়া অন্য কোন ইবাদতের প্রতিদান গ্রহণ বৈধ নয়। (২) তারাবীহ একটি সুন্নাত ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও
তা শিআরে দ্বীন নয়। তদুপরি শিআরে দ্বীন হিসেবে মেনে নিলেও তা কুরআন খতমের উপর
নির্ভরশীল নয়।.......... (৩) তবে ফিক্বাহ শাস্ত্রের বিভিন্ন
কিতাবের ভাষ্য মতে নির্ধারিত দু’য়েক ওয়াক্ত ফরজ নামাযে হাফেয
সাহেবকে ইমাম সাহেবের প্র্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্তি দিলে উক্ত ইমামতির বিনিময়ে ভাতা
গ্রহণ করতে পারবে। (এখানে লক্ষণীয় যে, “মাসিক মুঈনুল ইসলামে” বলা হয়েছে হাফেয সাহেবকে ইমাম
হিসেবে নিয়োগ করলে উজরত নেয়া জায়েয, আর রাহমানী পয়গামে, থানবী সাহেবের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, দ্বীনের
ব্যাপারে এরূপ হিলা জায়েয নেই।) এখন আমার সুওয়াল হলো- “মাসিক মঈনুল ইসলামের” উজরত সম্পর্কিত উপরোক্ত বক্তব্য সমূহ কতটুকু বিশুদ্ধ, গ্রহণযোগ্য
ও শরীয়ত সম্মত?
নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : “মাসিক
মুঈনুল ইসলাম”
পত্রিকায় উজরত সম্পর্কে, যে বক্তব্য
পেশ করা হয়েছে,
তা নিতান্তই মনগড়া, দলীল
বিহিন আপত্তিকর ও অজ্ঞতা মূলক। কারণ তারা প্রথমেই বলেছে যে, ১। পূর্ববর্তী যুগের ফক্বীহ গণের মতে ইবাদতের বিনিময়ে উজরত গ্রহণ করা অবৈধ বা
নাজায়েয আর পরবর্তীগণ কতিপয় ইবাদত, যথা- ইমামতী, আযান-ইক্বামত, ওয়াজ-নছীহত, পবিত্র কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষা দিয়ে উজরত
গ্রহণ করা জায়েয বলেছেন। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বা খতম করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয বলেননি।
মূলত “মুঈনুল ইসলামের” উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবের বর্ণনার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ নির্ভরযোগ্য সকল
ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে এ কথাই উল্লেখ আছে যে, উলামায়ে মুতাকাদ্দেমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী
ফক্বীহগণের মতে সকল ইবাদতের বিনিময়ে উজরত গ্রহণ করা নাজায়িয ছিল। কিন্তু উলামায়ে মুতাআখখেরীন বা পরবর্তী ফক্বীহগণ
ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে ইজতিহাদ করতঃ ফতওয়া বা রায় দেন যে, সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করার শর্তে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বা খতম করা সহ সকল
প্রকার ইবাদতের বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয। যা নিম্নোক্ত কিতাব
সমূহে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেমন- ফিক্বাহ-এর বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব
জামিউর রুমুযে উল্লেখ আছে-
تبطل
الاجرة عند المتقدمين للعبادات كالاذان والامامة والتذكير والتدريس والحج والغزو
وتعليم القران والفقه وقرأتهما ويفتى اليوم اى يفتى المتأ خرون بصحتها اى الاجارة
لهذا العبادات.
অর্থ : “উলামায়ে মুতাকাদ্দেমীনগণের অর্থাৎ পূর্ববর্তী
আলেমগণের মতে আযান, ইমামতী, যিকির, শিক্ষকতা, হজ্জ্ব,
জ্বিহাদ, পবিত্র কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষা দিয়ে
এবং ফিক্বাহ ও পবিত্র কুরআন
শরীফ পাঠ করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা নাজায়িয ও বাতিল। আর বর্তমানে ফতওয়া হলো- অর্থাৎ ওলামায়ে মুতাআখখেরীনগণের (পরবর্তী
আলেমগণের) ফতওয়া মোতাবেক উল্লেখিত ইবাদতসমূহের বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ
করা জায়েয ও সহীহ। অনুরূপ তাফসীরে রুহুল বয়ান ও মূলতাকার হাশিয়াতেও উল্লেখ আছে। উপরোক্ত দলীলের ভিত্তিতে স্পষ্ট প্রমাণিত
হলো যে,
যারা পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা পাঠ করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম বলে, তারা
মূলত উলামায়ে মুতাকাদ্দেমীন উনাদের মতকেই ফতওয়া হিসাবে গ্রহণ করে।
যদি ওলামায়ে মুতাকাদ্দেমীন উনাদের মতকেই
ফতওয়া হিসাবে গ্রহণ করা হয়, তবে তো সমস্ত দ্বীনী কাজের
বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা নাজায়েয ও হারাম হবে। যেমন- আযান, ইমামতী,
শিক্ষকতা ইত্যাদি। অথচ যারা পবিত্র
কুরআন শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ করা হারাম বলে, তারাই আবার অন্যান্য দ্বীনী কাজের বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করে থাকে, এর দ্বারা কি তাদের স্ববিরোধীতা প্রকাশ পায়না? এবং এর
দ্বারা কি কিতাবের কিছু অংশ অস্বীকার করা হয়না? অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
افتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض.
অর্থ : “তোমরা
কিতাবের কিছু অংশ মান্য কর, আর কিছু অংশ অস্বীকার কর?” কাজেই সুবিধা বুঝে কিছু মানবে, আর কিছু অমান্য করবে, তা হতে পারেনা। অর্থাৎ পুরোটাই
মানতে হবে। মূলকথা হলো- উলামায়ে
মুতাকাদ্দেমীন উনাদের নিকট
আযান,
ইমামতী, হজ্জ্ব ও কুরআন শিক্ষা দিয়ে উজরত
গ্রহণ করার ন্যায় কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করেও উজরত গ্রহণ করা নাজায়িয ও হারাম ছিল। আর পরবর্তীকালে
সরকারী তরফ থেকে আলেমগণের ভাতা প্রদান ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হওয়ায় (যেহেতু
খিলাফত ব্যবস্থায় সরকারী তরফ থেকে আলেমগণের জন্য ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা ছিল) এবং
মানুষের দ্বীনদারী-পরহেজগারী ও দ্বীনের খিদমতে আগ্রহ হ্রাস পাওয়ায়, পরবর্তী আলেমগণ অর্থাৎ উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণ ইজতিহাদ করতঃ ফতওয়া দেন যে, শর্ত
স্বাপেক্ষে অর্থাৎ সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দিলে উল্লিখিত ইবাদতের বিণিময়ে
উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয। এ প্রসঙ্গে তাফসীরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ আছে যে,
وافتى
المتاخرون بصحة الاجرة للاذان والاقامة والتذكير والتدريس والحج والغزو وتعليم
القران والفقه وقرأتهما لفتور رغبات اليوم.
অর্থ : “ওলামায়ে
মুতাআখখেরীনগণ,
বর্তমানকালে দ্বীনের খিদমতে আগ্রহ শিথিল হওয়ার কারণে- আযান, ইক্বামত,
ওয়াজ-নছীহত, শিক্ষা প্রদান, হজ্জ্ব-জ্বিহাদ, পবিত্র কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষা দিয়ে এবং ফিক্বাহ
ও পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করে উজরত বা
পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সহীহ বা জায়েয ফতওয়া দিয়েছেন।”
অতএব, সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করার শর্ত স্বাপেক্ষে কুরআন শরীফ খতম করাসহ উল্লেখিত
সকল ইবাদতের বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয বা হালাল। এ প্রসঙ্গে
বিখ্যাত মুফাসসির রঈসূল মুহাদ্দেসীন, বাহরুল উলুম, জামিউল উসুলিয়্যীন, ফক্বীহুল উম্মত শাহ আব্দুল আজীজ
মুহাদ্দিসে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তাফসীরে আজীজীতে উল্লেখ করেন,
محققین
علماء قاعدہ مقرر کرد ھاند کہ.... ھرچہ در
حق شخص عبادت با شد- خواہ فرض عین خواہ فرض کفایۃ خواہ سنت مؤکدہ برآن اجرت گرفتن
جائز نیست مثل تعلیم قران، و حدیث وفقہ و
نماز وروزہ و تلاوت وذکر و تسبیح و آنچہ بھیچ وجہ عبادت نیست مباح محض است برآن
اجرت گرفتن جائزاست مثل رقیہ کردن بقران یا تعویذ نوشتن و امثال ذالک- و عبادات کہ
سبب تعیین مدت یا تخصیص مکان مباح میشوند-
نیز بر آنھا اجرت گرفتن جائزاست- مثل تعلیم قران بطفل کسی در خانہء او از صبح تا شام-
অর্থ : “মুহাক্কিক
(সূক্ষ্ম তত্ত্ববিদ) আলেমগণ একটি মূল্যবান (কায়েদা) নিয়ম স্থির করেছেন যে, ওনারা বলেন,
যা মানুষের প্রতি ইবাদত হিসেবে সাব্যস্ত, যেমন- ফরজে আইন হোক অথবা ফরজে কিফায়া বা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হোক, যথা- পবিত্র কুরআন
শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ পাঠ করে এবং নামায, রোজা, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকির ও তাসবীহ পাঠ করে ইত্যাদির
বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয নেই। আর যে সকল ইবাদতসমূহ কারো জন্যে ইবাদত নহে (অর্থাৎ ফরজ-ওয়াজিব নহে) বরং
স্পষ্ট মোবাহ কাজ হিসাবে সাব্যস্ত, যেমন- পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করে শরীরে ফুক
দেয়া,
তাবীজ লেখা ইত্যাদির বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা
জায়েয এবং যে সকল ইবাদত সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করাতে মোবাহ হয়ে যায়, যেমন- কারো সন্তানকে তার ঘরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিবে, এরূপ ইবাদতের বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয।” উল্লেখিত
ইবারতে মূলতঃ তিনটি ছূরত বা অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে- (১) যে সকল ইবাদতগুলো ফরজ, ওয়াজিব,
সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, তার
বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম। (মুতাকাদ্দেমীনগণের মতে) (২) যে সকল
ইবাদতগুলো খাঁটি মোবাহ কাজ, তার বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক
গ্রহণ করা জায়েয, যেমন- তাবীজ লিখে। (৩) (মুতাআখখেরীনগণের মতে) সময় অথবা
স্থান নির্ধারণ করে দেওয়াতে ইবাদতসমূহ মোবাহ কার্যে পরিণত হয়ে যায়, তখন তার উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করাও জায়েয হয়ে যায়। কারণ সে ব্যক্তি তখন, সময় অথবা স্থানের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়। অতএব,
তাকে যে উজরত বা পারিশ্রমিক দেয়া হবে, তা তার সময় অথবা স্থানে আবদ্ধ থাকার কারণে, ইবাদতের
বিণিময়ে নয়। সুতরাং সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে আযান, ইমামতী,
হজ্জ্ব, জ্বিহাদ, কুরআন
শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষা দিয়ে যেরূপ উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয, তদ্রূপ কুরআন শরীফ খতম বা পাঠ করেও উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয। এমন
কি উক্ত পারিশ্রমিক সে জোরপূর্বকও আদায় করতে পারবে।
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, উলামায়ে মুতাআখখেরীন বা পরবর্তী ফক্বীহগণের মতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বা খতম করে
উজরত বা প্রতিদান গ্রহণ করা নাজায়িয নয় বরং উনাদের মতে সময়
অথবা স্থান নির্ধারণ করার শর্তে তার বিণিময়ে উজরত গ্রহণ করা সম্পূর্ণ জায়েয। অতএব, এ ব্যাপারে “মুঈনুল ইসলামের” উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য। (২) দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, ...... তারাবীহ নামাযকে শিআরে
দ্বীন ধরে নিলেও তা পবিত্র কুরআন
খতমের উপর নির্ভরশীল নয়। ......... তাদের এ বক্তব্যটিও বিভ্রান্তিকর ও ফিৎনার
কারণ। কেননা আম বা ঢালাওভাবে একথা বলার দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, তারাবীহ নামাজে পবিত্র কুরআন
শরীফ খতম করার কোন প্রয়োজন বা জরুরত নেই। অথচ ফিক্বাহবিদগণের রায় বা ফতওয়া হলো, তারাবীহ নামাজে কুরআন শরীফ কমপক্ষে একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে
কেফায়া। যেমন- এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহর মশহুর কিতাব “রদ্দুল
মোহতারে”
উল্লেখ আছে যে,
والمتم
مرة سنة ومر تبن فضيلة وتلاثا افضلا ولا يترك الختم لكسل القوم.
অর্থ : “তারাবীহ নামাজে একবার পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নত অর্থাৎ
সুন্নাতে কেফায়া। দু’বার খতম করার মধ্যে ফযীলত রয়েছে তিন বার খতম করা উত্তম।
লোকদের গাফলতীর কারণে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম তরক করা উচিৎ হবেনা।” এছাড়াও সকল ফিক্বাহের কিতাব যেমন- বাহরুর রায়েক, আলমগীরী, শামী,
দুররুল মোখতার, সিরাজুল ওহহাজ, মারাক্বিউল ফালাহ, কাফী, গায়াতুল আওতার, আইনুল হেদায়া, নেহায়া, এনায়া, ফতওয়ায়ে
দেওবন্দ ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবসমূহে তারাবীহ নামাজে কমপক্ষে একবার কুরআন শরীফ খতম
করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ অর্থাৎ সুন্নতে কেফায়া বলা হয়েছে।
এখন
ফিকিরের বিষয় হলো, উল্লিখিত কিতাবে বলা হয়েছে- লোকদের গাফলতী হেতু কুরআন খতম
তরক করা যাবেনা,
আর মুঈনুল ইসলামে বলা হয়েছে, লোক
সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা হেতু সূরা তারাবীহ পড়া উত্তম। তাদের এ বক্তব্যও
ফিক্বাহর কিতাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। শুধু তাই নয়, তাদের
উক্ত বক্তব্য সুন্নতে কেফায়ার প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা স্বরূপ। যার কারণে সাধারণ লোক
খতম তারাবীহর সুন্নতে কেফায়া আদায়ে চরমভাবে ব্যর্থ হবে। অতএব, তাদের বক্তব্যের উপর আমল করতে গিয়ে এবং সূরা তারাবীহকে উত্তম মনে করে সকলেই
যদি খতম তারাবীহ তরক করে, তবে সকলেই সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে
কেফায়া তরক করার গুণাহে গুণাহগার হবে। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, “মাসিক মুঈনুল ইসলাম” পত্রিকার উক্ত বক্তব্য যেরূপ ফিক্বাহর কিতাবের বর্ণনার বিপরীত, তদ্রুপ সমাজে ফিৎনা বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার কারণ। ভুল তো বটেই।
(৩)
তৃতীয়তঃ তারা বলেছে, হাফেয সাহেবকে দু’য়েক ওয়াক্তের জন্য ইমাম হিসেবে নিয়োগ করলে কুরআন খতম করে
উজরত নেয়া জায়েয। তাদের উক্ত
বক্তব্য ঠিকই আছে। তবে বিশেষভাবে লক্ষণীয় এই যে, তাদের এ
বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, “মাসিক রাহমানী পয়গামে” উল্লেখকৃত থানবী সাহেবের ফতওয়া “দ্বীনের ব্যাপারে এরূপ হিলা জায়েয
নেই” একথা সম্পূর্ণ ভুল ও অশুদ্ধ।
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, উজরত
গ্রহণ সম্পর্কিত “মাসিক মুঈনুল ইসলামের” উপরোক্ত
বক্তব্যসমূহ সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, অশুদ্ধ। যা
নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় সকল ফিক্বাহ ও ফতওয়ার সম্পূর্ণ বিপরীত। আর “মাসিক
রাহমানী পয়গামে কুরআন খতমের উজরত গ্রহণ হারাম প্রমাণিত করতে গিয়ে যা বলা হয়েছে, তার মূল সারমর্ম হচ্ছে-
(১) খতমে
তারাবীহ পড়ে টাকা দেয়া/নেয়া জায়েয নয়। বর্তমানে তা যেভাবে শুরু হয়েছে, তা নিশ্চয়ই কুরআন হাদীসের অবমাননা এবং কুরআন বিক্রয়ের অন্তর্ভূক্ত।
..........।
২।
.......... নির্ভরযোগ্য সমস্ত ফাতওয়ার কিতাবে একে নাজায়েয বলা হয়েছে। সুতরাং খতমে
তারাবীহর টাকা নেয়া জায়েয নয়। ..........।
৩।
.......... ইদানিং অনেকে এরূপ একটা সূরাতকে জায়েয বলে মনে করছেন যে, হাফেজ সাহেবকে যদি রামাজানে এক মাসের জন্যে পাঁচ ওয়াক্ত বা নির্দিষ্ট দুই, তিন ওয়াক্তের জন্য ইমাম বানিয়ে দেয়া হয়, তাহলে
তার জন্যে টাকা নেয়া জায়িয, কিন্তু ......... দ্বীনী ব্যাপারে
এরূপ হিলা জায়েয নেই।
৪।
............. ফতওয়ার কিতাবে উলামাগণের ইখতিলাফ বর্ণনা করতে যেয়ে শক্তিশালী ও
দুর্বল উভয় ধরণের ক্বওল উল্লেখ থাকে। শেষে নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ মতটি বর্ণিত হয়, সেটার উপরই মুফতীয়ানে কিরাম ফাতওয়া দিয়ে থাকেন। কিন্তু অধুনা নামধারী কিছু
আলেম ফাতওয়ার কিতাবের দুর্বল ক্বওলের ভিত্তিতে তারাবীহ নামাযের বিণিময় নেয়া জায়েয
বলছেন,
হক্কানী উলামাগণের নিকট এটা সহীহ নয়।
এখন আমার
সুওয়াল হলো- উজরত সম্পর্কে “রাহমানী পয়গামের” উপরোক্ত বক্তব্যসমূহ কতটুকু বিশুদ্ধ, গ্রহণযোগ্য ও শরীয়তসম্মত? নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে জাওয়াব দানে সমাজ থেকে বিভ্রান্তি ও ফিৎনা
দূরীকরণে সহযোগীতা করবেন।
জাওয়াব : উজরত সম্পর্কিত “রাহমানী
পয়গামের”
উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও বিশ্ববিখ্যাত, অধিক নির্ভরযোগ্য ও সারা মুসলিম
বিশ্বের সর্বজন স্বীকৃত ফিক্বাহ, ফতওয়া ও উছুলের কিতাবের সম্পূর্ণ
বিপরীত,
যা সমাজে ফিৎনা সৃষ্টির কারণ। যেমন- (১) প্রথমতঃ তারা বলছে- পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে
উজরত গ্রহণ করা নাজায়িয। এবং
তা কুরআন বিক্রয়ের অন্তর্ভূক্ত। অথচ ফিক্বাহের বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব “বাহরুর রায়েকে” উল্লেখ আছে যে,
ان المفتى به حواز الاخذ على العراثة.
অর্থ : “ফতওয়া
গ্রাহ্য বা সহীহ মত হলো, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত
গ্রহণ করা জায়েয।” সর্বজনমান্য ও অনুসরণীয়, নির্ভরযোগ্য
ও বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব “তাহতাবীতে” উল্লেখ আছে যে,
المختار جزتز الا ستيجار على قرائة القران.
অর্থ : “মোখতার
বা গ্রহণযোগ্য মত” হলো- পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা বিণিময় গ্রহণ করা জায়িয।” অনুরূপ
তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে ইকলীল, তাফসীরে আযীযী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে কাজরুনী, ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, ফতওয়ায়ে ফয়যী, ফতওয়ায়ে আযীযী, ফতওয়ায়ে হানূতী, ফতওয়ায়ে আবী সউদ ইমাদী, মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আব্দুল হাঈ, দুররুল মোখতার, আশবাহ ওয়ান নাযায়ের, জাওহারাতুন
নাইয়্যারাহ,
তাতার খানিয়া, জামিউর রুমূয ইত্যাদি সর্বজনমান্য, বিখ্যাত ও নির্ভযোগ্য কিতাব সমূহসহ আরো অনেক কিতাবে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত
গ্রহণ করা জায়িয লেখা
হয়েছে। উপরোক্ত বিশ্ববিখ্যাত, নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনমান্য তাফসীর, ফতওয়া ও ফিক্বাহের কিতাব সমূহের
বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত বা বিণিময় গ্রহণ করা জায়িয। এখানে উল্লেখ্য যে, যারা হক্ব তালাশী বা খোদাভীরু ও আক্বলমন্দ, তাদের
জন্যে ইশারাই যথেষ্ট। আর যারা গোমরাহীতে দৃঢ়, নফসের
অনুসরণকারী,
তাদের জন্যে লক্ষ-কোটি কিতাবের বরাতও যথেষ্ট নয়। যদি
যথেষ্টই হতো,
তবে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে অসংখ্য, অগণিত, নির্ভরযোগ্য তাফসীর, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবের অকাট্য
দলীলের ভিত্তিতে “তারাবীহ নামাজে বা অন্যান্য সময় পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে, উজরত গ্রহণ করা জায়েয” ফতওয়া দেয়ার পরও তা খন্ডন না করে
মনগড়া,
বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য তারা প্রদান করতো না।
মূলত তারা ভাল করেই জানে যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ফতওয়া খণ্ডন করার সাধ্য তাদের নেই। কারণ
মাসিক আল বাইয়্যিনাতে উজরত সম্পর্কিত যে সকল দলীল-আদিল্লা পেশ করা হয়েছে, তার চেয়ে নির্ভরযোগ্য ও অধিক দলীল-আদিল্লা পেশ করা তাদের পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। অতএব, প্রমাণিত
হলো যে,
উজরত সম্পর্কে “রাহমানী পয়গামের” উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ নির্ভরযোগ্য, বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজনমান্য ও শক্তিশালী সকল কিতাবে “পবিত্র কুরআন
শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয বলা হয়েছে।” আর যেহেতু কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়েয, সেহেতু তা মোটেও কুরআন বিক্রয়ের অন্তর্ভূক্ত নয়। বরং এটাকে কুরআন বিক্রয়ের
অন্তর্ভূক্ত বলা পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার পবিত্র
আয়াত শরীফ উনার মনগড়া ব্যাখ্যার শামিল। এখানে উল্লেখ্য যে, উজরত
বিরোধীরা এ ব্যাপারে সাধারণতঃ নিন্মোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা পেশ করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক বলেন-
ولا تشتروا بالياتى ثمنا قليلا
অর্থ : “এবং
তোমরা আমার পবিত্র আয়াত শরীফ গুলোর দ্বারা অল্প মূল্যের বস্তু
খরীদ করোনা।”
(পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ,
পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১, পবিত্র সূরা মায়িদা
শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৪)
মূলত
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সাথে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ
করার ব্যাপারে কোনই সম্পর্ক নেই। কেননা এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার
ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
ولا
تستبدلوا با يأتى التى فى كتابكم من نعت محمد صلى الله عليه وسلم ثمنا فلبلا عوضا
يسيرا من الدنيا اى لا تكتموها خوف فوات ما تاخذونه من ثقلتهم.
অর্থ : “তোমরা
তোমাদের কিতাব (তাওরাতে) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত সংক্রান্ত যে সমস্ত আয়াত
শরীফসমূহ রয়েছে,
সেগুলিকে দুনিয়ার সামান্য বস্তুর বিণিময়ে পরিবর্তন করোনা বা
তোমরা তাদের নিকট হতে যে উপহার গ্রহণ করে থাক, তা নষ্ট
হওয়ার আশঙ্কায় আয়াত শরীফগুলো গোপন করোনা।” অর্থাৎ
তোমরা দুনিয়ার মোহে, নিজ স্বার্থ হাছিলের লক্ষ্যে সত্যকে গোপন করোনা বা শরীয়ত
বিরোধী বক্তব্য প্রদান করোনা।”
অতএব, দেখা যাচ্ছে যে, এই পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার হুকুম উজরত গ্রহণের ক্ষেত্রে
কোনভাবেই প্রযোজ্য হয়না। বরং বলতে গেলে হাক্বীক্বত ঐ সমস্ত নামধারী আলেম বা মুফতীরাই
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সম্পূর্ণ মেছদাক। কেননা তারাই
অর্থের মোহে মোহগ্রস্থ হয়ে, বিদেশী প্রভূদের সেবাদাস হয়ে
দ্বীনের পরিবর্তে দুনিয়াকে হাছিল করছে এবং শরীয়ত বিরোধী মনগড়া বক্তব্য প্রদান
করছে। যেমন- ইহুদী-নাছারাদের মতবাদ বা হারাম মতবাদ গণতন্ত্র করে নিজেদের স্বার্থ
হাছিল করে নিজেরা যেমন গোমরাহীতে নিমজ্জিত হচ্ছে, তেমনি
হাজার হাজার লোকদেরকে হারাম ও নাজায়েয “ভোট” পদ্ধতিকে
পবিত্র আমানত ও ওয়াজিব বলে বিবৃতি দিয়ে ঈমান হারা করে জাহান্নামের দ্বারপ্রান্তে
পৌঁছে দিচ্ছে। মূলকথা হলো, উজরত সম্পর্কিত “রাহমানী পয়গামের” উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও অশুদ্ধ, যা ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবের গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য বর্ণনার সম্পূর্ণ
খেলাফ।
২।
দ্বিতীয়তঃ তারা লিখেছে, নির্ভরযোগ্য সমস্ত ফতওয়ার কিতাবে
উজরত নেয়া নাজায়েয বলা হয়েছে। আর এর দলীল স্বরূপ (তাদের মতে) নির্ভরযোগ্য কিতাব
হিসেবে,
ইমদাদুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ফতওয়ায়ে রশীদিয়া, ফতওয়ায়ে মাহমূদিয়া, ফতওয়ায়ে
শামী ইত্যাদি এমন কিতাব সমূহের বরাত দেয়া হয়েছে, যে সকল
কিতাব সমূহের অনেক মাসয়ালাই ভুল ও বিতর্কিত এবং যে সকল কিতাবের লেখকরা সপ্তম
তবক্বার অন্তর্ভূক্ত।
এখানে
উল্লেখ্য যে,
ইমাম-মুজতাহিদগণ, ফক্বীহগণকে সাতটি তবক্বা বা
শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে ষষ্ঠ তবক্বা পর্যন্ত প্রত্যেক ফক্বীহ ও
মুজতাহিদগণের ক্বওল ও আমল শরীয়তের দলীল এবং প্রত্যেকেই অনুসরণযোগ্য। আর সপ্তম
তবক্বার ফক্বীহ বা আলেমদের জন্যে উর্দ্ধতন ৬টি তবক্বার ফক্বীহগণের বিপরীত মত পেশ
করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। ফক্বীহগণের উল্লেখিত সাতটি তবক্বা বা শ্রেণী নিম্নরূপ-
প্রথম
তবক্বা :
মুজতাহিদ ফিদ্দীন, উনারা ঐ সকল
ফক্বীহ যারা স্বাধীনভাবে ইজতিহাদ করেছেন, এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ব্যতীত অন্য কিছু বা কারো অনুসরণ
করেননি,
এদেরকে মুজতাহিদে মুতলাক্বও বলা হয়। যেমন- ইমাম আবু হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম
শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি।
দ্বিতীয়
তবক্বা :
মুজতাহিদ ফিল মাযহাব, উনারা ঐ সকল
ফক্বীহ যারা ইজতিহাদেপূর্ণ যোগ্যতা সম্পন্ন ছিলেন, অবশ্য
তারা মুজতাহিদে মুতলক্বগণের নির্ধারিত নীতি অনুসরণ করতেন, তবে রায়
দানে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিলেন। যেমন ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম যুফার ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও তাদের সমসাময়িক ফক্বীহগণ।
তৃতীয়
তবক্বা : মুজতাহিদ
ফিল মাসায়িল,
উনারা ঐ সকল ফক্বীহ যারা মুজতাহিদে
মুতলক্বগণ কর্তৃক ইস্তিম্বাতকৃত আহকাম বর্ণনার ব্যাপারে ইজতিহাদ করতেন এবং সে
আলোকে মাসয়ালা সমূহকে শাখা-প্রশাখায় বিন্যস্ত করতেন। যেমন-আবু বকর খাসসাফ, ইমাম তাহাবী, ইমাম আবুল হাসান কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ।
চতুর্থ
তবক্বা : আছহাবে
তাখরীজ,
তারা ঐসকল ফক্বীহ, যারা মাযহাবের প্রবর্তক ইমামগণ
কর্তৃক ইস্তিম্বাতকৃত আহকামগুলোর (علت) (কারণ) ও (مناط) (উদ্দেশ্য) (تخويح) বা বের করেছেন। যেমন আবু বক্বর জাসসাছ রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আবুল হাসান কুদূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ।
পঞ্চম
তবক্বা : আছহাবে
তারজীহ,
উনারা ঐসকল ফক্বীহ, যাঁরা রেওয়ায়েত, দেরায়েত, যুক্তি ও ক্বিয়াস দ্বারা এক
হুকুমকে অন্য হুকুমের উপর বা এক রেওয়ায়েতকে অন্য রেওয়ায়েতের উপর তারজীহ বা
প্রাধান্য দেন। যেমন- বুরহানুদ্দীন আবুল হাসান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আসাবী জাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ।
ষষ্ঠ
তবক্বা : আছহাবে
তমীয,
উনারা ঐ সকল ফক্বীহ, যাঁরা উত্তম, মধ্যম, অধম, প্রকাশ্য
মাযহাব,
প্রকাশ্য রেওয়ায়েত ও বিরল রেওয়ায়েতের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়
করতেন। যেমন- বাহরুর রায়েক, মাজমা, জাওহারাতুন
নাইয়্যারাহ,
শরহে বেকায়ার লেখক ও উনাদের সমকক্ষগণ। উনারা উনাদের কিতাবসমূহে ঐ সকল মাসয়ালাই
লিপিবদ্ধ করেছেন, যা পূর্ববর্তী ফক্বীহগণ সহীহ বা সঠিক বলে মত ব্যক্ত করেছেন।
সপ্তম
তবক্বা : এ
তবক্বার ফক্বীহগণ সম্পর্কে ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব দুররুল মোখতারে উল্লেখ আছে যে,
وما نحن فعلينا الاتباعما وجحوه وما صححوه.
অর্থ : “আমাদেরকে
(সপ্তম তবক্বার ফক্বীহ বা ওলামাগণ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে) পূর্বতন ফক্বীহগণ যাকে
প্রাধান্য দিয়েছেন ও সহীহ বলে মত ব্যক্ত করেছেন, তাকেই
অনুসরণ করতে হবে। এর বিপরীত করার ক্ষমতা সপ্তম তবক্বার ফক্বীহদের নেই। যেমন- ইবনে হাজার
আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আব্দুল
হক্ব মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা
শামী ও আল্লামা রমলী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রত্যেকেই সপ্তম তবক্বার অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
এখন চিন্তা ও ফিকিরের বিষয় হলো, তাদের (রাহমানী পয়গামের) বক্তব্য মোতাবেক ষষ্ঠ তবক্বার ফক্বীহগণের লিখিত কিতাব
যেমন “বাহরুর রায়েক”, “জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” ইত্যাদি কিতাবসমূহ ও তার বর্ণনা নির্ভরযোগ্য বা শক্তিশালী নয়, বরং সপ্তম তবক্বা ও তার বহু পরের আলেমদের লিখিত কিতাব। যেমন- ফতওয়ায়ে শামী, ইমদাদুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ফতওয়ায়ে রশীদিয়া ইত্যাদি কিতাব
সমূহ ও তার বর্ণনা নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী!
মূলত
তাদের এরূপ বক্তব্য দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারা
ফিক্বাহের উছূল বা নীতি-রীতি সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ, যার
কারণেই তারা এরূপ মুর্খসুচক কথা-বার্তা বলে থাকে। মূলত এদের সম্পর্কেই কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,
وما
لهم به من علم ان يتبعون الظن وان الظن لا يغنى من الحق شيأ.
অর্থ : “এ
ব্যাপারে তারা একেবারেই অজ্ঞ, জাহেল, তারা
শুধু জল্পনা-কল্পনার অনুসরণ করে, মূলতঃ সত্যের মোকাবেলায়
জল্পনা-কল্পনা মোটেও ফলপ্রসূ নহে।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
অতএব, নির্বিঘ্নে বলা যেতে পারে যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাতে বর্ণিত ৬ষ্ঠ তবক্বার ফক্বীহগণের ফতওয়া- “কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা ফতওয়া গ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য মতে
জায়েয।”
ইহার মোকাবেলায় “রাহমানী পয়গামের” জল্পনা-কল্পনা ও অজ্ঞতামূলক বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, নির্ভরযোগ্য কোন ফতওয়ার কিতাবেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা
নাজায়েয বলা হয়নি, বরং তা জায়েয হওয়া “ফতওয়া
গ্রাহ্য বা গ্রহণযোগ্য মত” বলে উল্লেখ আছে। কাজেই এ ব্যাপারে
“রাহমানী পয়গামের” উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, জেহালতপূর্ণ ও কল্পনা প্রসূত।
৩।
তৃতীয়তঃ তারা লিখেছে যে, হাফেজ সাহেবকে এক মাসের জন্যে
ইমাম নিয়োগ করলেও উজরত নেয়া জায়েয নেই, কারণ দ্বীনের ব্যাপারে এরূপ হিলা
জায়েয নেই।
তাদের এ
বক্তব্যটিও অজ্ঞতামূলক ও বিভ্রান্তিকর। মূলতঃ উজরতের ব্যাপারে হিলার কোন প্রশ্নই
আসেনা কারণ হিলা করা হয় সাধারণতঃ কোন নাজায়েযকে শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে জায়েয করার
জন্যে। কাজেই
যেখানে পবিত্র কুরআন
শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ করা, ফতওয়া গ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য মতে
জায়িয, সেখানে
হিলার প্রশ্ন তোলা সম্পূর্ণ অবান্তর। তথাপিও যদি কেউ কোন হাফেজ সাহেবকে রমজান মাসে
তারাবীহ নামাজের জন্যে নিয়োগ করে এবং তার বিণিময়ে তাকে উজরত প্রদান করে, তবে তা দেয়া ও নেয়া সবই জায়েয। নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনমান্য কোন ফিক্বাহ বা
ফতওয়ার কিতাবে একে নাজায়েয বলা হয়নি। প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখ্য যে, “দ্বীনের ব্যাপারে এরূপ হিলা জায়েয নয়”
তাদের এ
বক্তব্য স্ববিরোধীতার শামিল, কারণ প্রায় মাদ্রাসা বিশেষ করে
খারেজী মাদ্রাসাগুলোতে ছদকা, ফিৎরা, যাকাত, কোরবানীর চামড়ার টাকা যে পদ্ধতিতে হিলা করা হয়, তাদের
বক্তব্য মোতাবেক সেটাও নাজায়েয ও হারাম। কেননা তারা যার মাধ্যমে তা হিলা করে, তাকে এ শর্ত দেয়া হয় যে, তোমাকে এগুলোর মালিক করে দেয়া হলো, তুমি তা মাদ্রাসায় দান করে দিবে।”
মূলত
তারা পরের জন্যে কুয়ো কাটতে গিয়ে সে কুয়োয় নিজেরাই পতিত হলো। অর্থাৎ উজরত
সম্পর্কিত হিলা হারাম প্রমাণ করতে গিয়ে, নিজেরাই যে হারাম কাজ করে, তা প্রকাশ করে দিল। স্মরণযোগ্য যে, হাফেজ সাহেবকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা সম্পর্কিত “মাসিক রাহমানী পয়গামের” বক্তব্য যে, ভুল,
তা তাদেরই সিলসিলার পত্রিকা “মাসিক
মুঈনুল ইসলামের”
বক্তব্য দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে। অথচ তারা একই সিলসিলার লোক
হয়ে এবং একই কিতাবের বরাত দিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্য পেশ করেছে। অর্থাৎ “মুঈনুল ইসলামের” বক্তব্য মোতাবেক “রাহমানী পয়গামের” বক্তব্য ভুল ও মিথ্যা। আবার “রাহমানী পয়গামের” বক্তব্য মোতাবেক “মুঈনুল ইসলামের” বক্তব্য মিথ্যা। মূলতঃ মনগড়া
ফতওয়া দেয়ার কারণেই এরূপ বৈপরীত্ত ও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে, আর দেখা দেয়াটাই স্বাভাবিক।
৪।
চতুর্থতঃ তারা লিখেছে- “ফতওয়ার কিতাবে শক্তিশালী ও দূর্বল
উভয় মত উল্লেখ থাকে, তার মধ্যে নির্ভযোগ্য ও বিশুদ্ধ মতের উপরই মুফতীগণ ফতওয়া
দিয়ে থাকেন।”
তাদের এ বক্তব্য দ্বারা তারা নিজেদের বক্তব্যেরই বিরোধীতা
করলো। কারণ তারা প্রথমেই বলেছে, “নির্ভরযোগ্য সমস্ত ফতওয়ার কিতাবে
একে নাজাযেয বলা হয়েছে।” কিন্তু এখানে এসে তারা নিজেদের
অজান্তেই স্বীকার করে নিলো যে, ফতওয়ার কিতাবে উজরত গ্রহণ করা
জায়েয উল্লেখ আছে। তবে তা তাদের নিকট দূর্বল মত। কিন্তু এখানেও তারা প্রতারণার
আশ্রয় নিয়েছে,
কারণ তারা শক্তিশালী ও দূর্বল মতের কথা লিখেছে ঠিকই, কিন্তু শক্তিশালী ও দূর্বল মতের কোন আলামত বা লক্ষণ উল্লেখ করেনি। আর তা না
করার কারণ দু’টো বিষয়ের মধ্যে একটি অবশ্যই হবে- ১। এ ব্যাপারে তারা নেহায়েত অজ্ঞ, ২। অথবা আলামত বা লক্ষণ বর্ণনা করলে তাদের হাক্বীক্বী মুখোশ উন্মোচিত হবে
অর্থাৎ তাদের উজরত সম্পর্কিত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
মূলত পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত
গ্রহণ করা জায়িয হওয়ার
মতটিই শক্তিশালী। কারণ এটা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ক্বওল, যা ষষ্ঠ
তবক্বার ফক্বীহ,
ইবনে নজীম মিছরী উনার বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়েকে” উল্লেখ করেছেন। আর পূর্বেই বলা
হয়েছে যে,
ষষ্ঠ তবক্বার ফক্বীহগণ তাদের কিতাবে ঐ সকল মত উল্লেখ করেছেন, যা পূর্ববর্তী ফক্বীহগণ সঠিক বলে মত ব্যক্ত করেছেন। কাজেই উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণের মধ্যে উজরত গ্রহণের ব্যাপারে ইখতিলাফ ছিল সত্য কথাই, তবে অধিকাংশের মতে উজরত গ্রহণ করা জায়েয।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত, নির্ভরযোগ্য ও ৬ষ্ঠ তবক্বার কিতাব “জাওহারাতুন নাইয়্যারাতে” উল্লেখ আছে যে,
اختلفوا
فى الاستيجار على قرائة القران قال بعضهم لا يجوز وقال بعضهم يجوز وهوا المختار.
অর্থ : “(আলেমগণ) পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা
পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ বলেন- নাজায়িয, আবার কেউ
কেউ বলেন- জায়িয। এ
মতটিই (দ্বিতীয়টিই) মনোণীত বা গ্রহণযোগ্য মত।” আর
ফিক্বাহ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য
উছূল বা নিয়ম হলো- মতভেদযুক্ত মাসয়ালায় যে মতটিকে-
وبه يفتى-
وهوالمختار- عليه الفتاوى
ইত্যাদি
শব্দ দ্বারা ترجيح বা
প্রাধান্য দেয়া হবে, সে মত বা ফতওয়াটিই গ্রহণযোগ্য হবে। এরূপ প্রাধান্য প্রাপ্ত
মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
ابن
حجر المكى قال- لا يحل لهما الحكم والافتاء بغيرالراجح لا نه اتباع اهواء وهو حرام
اجماعا.
অর্থ : “মুহাক্কিক, ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইখতেলাফযুক্ত
মাসয়ালায় প্রাধান্য প্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া বা আমল করা
সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কেননা তা নফসের অনুসরণ।” তা
ফতওয়ায়ে কোবরাতেও উল্লেখ আছে। (উকুদে রসমুল মুফতি, পৃষ্ঠা-৩)
অতএব, সুস্পষ্টভাবেই
প্রমাণিত হলো যে, “কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়েয” এ মতটিই শক্তিশালী। কারণ এটাকে "وهو المختار" ট্টঞ্জ مفتى
به ” ইত্যাদি শব্দ দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং ইহা ষষ্ঠ
তবক্বার ফক্বীহগণের ফতওয়া বা অভিমত। এর বিপরীতে আল্লামা শামী ও ওলামায়ে দেওবন্দের
মত কখনোই শক্তিশালী হতে পারেনা। বরং সপ্তম তবক্বার আলেমগণের জন্য পূর্বতন তবক্বা
বা তারজীহ প্রাপ্ত ক্বওলের বিপরীত আমল করা বা মত পেশ করা সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং
উল্লিখিত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, উজরত সম্পর্কিত “রাহমানী পয়গামের” উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, অবান্তর,
অজ্ঞতাপ্রসুত ও প্রতারণা মূলক। এ ধরণের ফতওয়া বা বক্তব্য
যারা প্রদান করে, তাদের নিকট সুওয়াল করতে ও তাদের ছোহবত থেকে দূরে থাকতে
শরীয়ত কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছে।
(বিঃদ্রঃ)
উজরত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকার ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা দু’টো পাঠ করুন। সেখানে পঞ্চাশেরও
অধিক দলীল-আদিল্লা দ্বারা ছাবেত করা হয়েছে যে, “কুরআন
শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়েয।”)
মুহম্মদ আব্দুল লতিফ, ডেকাপুর ইসলামীয়া মাদ্রাসা, বালাগঞ্জ,
সিলেট।
সুওয়াল : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম জানাযার নামাজের
পর কি কি দোয়া পাঠ করতেন? আর জানাযার নামায পাঠান্তে ও দাফনের পূর্বে ও পরে দোয়া পাঠ করা, আর উক্ত দোয়া হাত উঠায়ে করা শরীয়তসম্মত হবে কি? দয়া করে
বিস্তারিত জানালে খুশী হব।
জাওয়াব : হ্যাঁ, জানাযার
নামায পাঠান্তে এবং দাফনের পূর্বে ও
পরে হাত উঠায়ে দোয়া করা দলীল ভিত্তিক ও শরীয়তসম্মত। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
জানাযার নামাজ পাঠান্তে দাফনের পূর্বে ও পরে দোয়া করেছেন। মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য
যত বেশী দোয়া করা যায়, ততই তার জন্য ফায়দাজনক।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, الميت
كالغريق. “মৃত ব্যক্তি ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায়” অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি সর্বদাই দোয়ার অপেক্ষায় থাকে, তাই মৃত
ব্যক্তির জন্য অধিক মাত্রায় দোয়া করার আদেশ স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন এবং
নিজেও করেছেন। সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযার নামায পাঠান্তে যে সকল দোয়া সমূহ পাঠ করতেন এবং যে
সকল দোয়া পাঠ করতে হয়, নিম্নে দলীলসহ তা উল্লেখ করা হলো - “ফতহুল ক্বাদীর, সিফরুস সায়াদাত এবং যাদুল আখেরাত” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
জানাযার নামায পড়ে এ
দোয়া করতেন,
اللهم
انت ربها وانت خلقتها وانت رزقتها وانت هديتها الى الاسلام- وانت قبضت روحها وانت
اعلم بسرها وعلانيتها جثنا شفعاء فاغفرلها وارحمها انك انت الغفورالرحيم.
অর্থ : “হে মহান আল্লাহ পাক! আপনিই তার রব, আর আপনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন ও রিযিক দান করেছেন। আর তাকে ইসলামের দ্বারা
হিদায়েত দান করেছেন। আপনিই তার রূহ কবয করেছেন ও আপনিই তার জাহির ও বাতিন সম্পর্কে
অধিক জ্ঞাত। আমি সুপারিশ করছি তাকে মাফ করে দিন, তার
প্রতি দয়া করুন। নিশ্চয় আপনি অতি ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়ালু।” “যাদুল
আখিরাত”
কিতাবে বর্ণিত আছে যে, জানাযা
নামাজের সালামের পর এ দোয়া পড়বে-
اللهم لا تحرمنا اجره ولا تفتنا بعده
واغفرلناوله اللهم لا تحرمنا اجره ولا تفتنا بعده واغفرلناوله.
অর্থ : “হে মহান আল্লাহ পাক! মৃত্যুজনিত কারণে
ধৈর্য্য ধারণের সওয়াব হতে আমাদেরকে বঞ্ছিত করবেন না। আর মৃত্যুর পর আমাদেরকে
পরীক্ষার মধ্যে ফেলবেন না এবং আমাদের ও তাঁর (মৃতের) গুণাহ মাফ করুন।” “জামিউর রূমূয” কিতাবে লেখা আছে, এ দোয়া পড়বে-
ربنا
لا تزغ قلوبنابعداذ هديتنا وهب لنا من لدنك رحمة انك انت الوهاب.
অর্থ : “হে
আমাদের রব! আমাদেরকে হিদায়েত দান করার পর আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র করবেন না।
আমাদেরকে আপনার নিকট হতে করুনা প্রদান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রচুর দানকারী।” “তাতারখানিয়া” কিতাবে লেখা আছে, এ দোয়া পড়বে-
سبحان
ربك رب العزة عما سصفون وسلام على المرسلين والحمد لله رب العالمين.
অর্থ : “তোমাদের রব মান-সম্মান ও মহত্বের
অধিকারী। তিনি লোকদের সমস্ত গর্হিত কথা হতে সম্পূর্ণ পবিত্র ও মুক্ত। সকল
রাসূলগণের প্রতি সালাম। আর সারা জাহানের রব, মহান আল্লাহ
পাক উনার জন্য সমূদয় প্রশংসা।” হযরতুল আল্লামা, ফক্বীহুল আসর, মুফতীয়ুল আযম, আমীমুল ইহসান, মুজাদ্দেদী রহমতুল্লাহি আলাইহি সাহেব তাঁর “হাদীয়াতুল মুসাল্লীন” কিতাবে লেখেন, কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে, জানাযার নামাজের পর এ দোয়া পড়বে-
اللهم
انه فلان بن فلان فى ذمتك- دخل فى جوارك- فقه من فتنة القبر وعذاب النار- وانت اهل
الوفاء والخق- اللهم اغفرله وارحمه انك انمت الغفورالرحيم.
অর্থ : “হে মহান আল্লাহ পাক, অমুকের পুত্র অমুক আপনার জিম্মাদারী ও হিফাযতে রয়েছে, আপনি
তাকে কবরের পরীক্ষা ও দোযখের আযাব হতে রক্ষা করুন। আপনি ওয়াদা ও হক্ব পূরণকারী।
অতএব,
আপনি তাকে মাফ করে দিন ও তার প্রতি রহম করুন, নিশ্চয় আপনি মহা ক্ষমাশীল ও মহা দয়াবান।” কিতাবে
আরো উল্লেখ করা হয় যে,
وضع
عمر على سريره فتكفنه الناس يدعون ويشنن ويصلون عله قبل ان يرفع. (مرقات شرح مشكوة
ج ه صفه ৫৪৮)
অর্থ : “হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে উনার খাটের উপর রাখা হয়েছিল, অতঃপর লোকেরা উনাকে কাফন পরাচ্ছিল এবং উনাকে উঠিয়ে নেয়ার পূর্বে উনার জন্যে লোকেরা দোয়া-দরূদ পড়ছিলেন” (মিরকাত শরহে মিশকাত ৫ম জিঃ পৃঃ-৫৪৮)
روى
ان رجلا فعل هكذا بعد الصلوة فراه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ادع يستجب
لك. (كفاية- عنايه)
অর্থ : “বর্ণিত
আছে, এক ব্যক্তি জানাযার নামাজের পর অনুরূপ দোয়া-দরূদ পড়ছিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখে বললেন, “দোয়া কর, তোমার দোয়া অবশ্যই কবূল হবে।” (কেফায়া, ইনায়া)
وفى
نافع المسلمين رجل رفع يديه بدعاء الفاتحه للميت قبل الدفن جاز. (حواهر النفيس شرح
بحئى صفه ১৩২)
অর্থ : “নাফেউল
মুসলিমীন কিতাবে উল্লেখ আছে, মৃতের জন্যে দাফনের পূর্বে
(অর্থাৎ জানাযার নামাজের পর) উভয় হাত উঠায়ে মুনাজাত করা জায়েয।” জাওয়াহিরুল নাফীস শরহে দুররুল ক্বাইস পৃঃ-১৩২)
السوال:-
بعد نماز جنازہ قبل دفن اولیاء می مصلبون سے کھتی ھے کہ اپ لوگ تین تین مرتبہ
سورہء اخلاص پرھ کر میت کو اسکا ثواب بخش
دین – (یہ کیسا ھے)؟
الجواب:
- اس مین کچہ حرج نھین ھے- پس اگر بعد نماز جنازہ کی مام لوگ با بعض سورہء اخلاص
کو تین بار پرھ کر میت کو ثواب پھنچا دین تو اس مین کچہ حرج نھین ھے-
(فتاوی دیوبند
ج৫ صفہ ৪১৮)
অর্থ : সুওয়াল : জানাযার নামাজের পর, মৃতের ওলী উপস্থিত মুছল্লীদেরকে লক্ষ্য করে বলেন যে, আপনারা
তিনবার সূরায়ে ইখলাছ পড়ে মৃতের উপর সওয়াব বখশায়ে দিন। (এটা কিরূপ)?
জাওয়াব : এরূপ করাতে কোন দোষ বা ক্ষতি নেই। সুতরাং
জানাযার নামাজের পর যদি সকল লোক অথবা কিছু লোক সূরা ইখলাছ তিনবার পড়ে মৃতের প্রতি
সাওয়াব রেসানী করে, তাতে কোনই ক্ষতি নেই। (অর্থাৎ জায়েয) (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ৫ম
জিঃ পৃঃ-৪১৮)
السوال:-
بعد فراغ دفن میت رسم عام ھے کہ جملہء حاضرین کھرے ھوکر فاتحہ بہ بسط الیدین پرھتے
ھین یہ رسم مسنون ثابت بالحدیث ھے یا نھین؟
الجواب:-
اس بارہ مین حدیث شریف مین اس قدر و ارد ھے- و ان عثمان قال کان النبی رسول اللہ
صلی اللہ علیہ وسلم اذا فرغ من دفن المیت وقف علیہ و قال استغفروا
لا خیکم و ا سنلوا اللہ لہ- الخ- (رواہ ابو دؤد، فتاوے دیوبند ج৫ صفہ ৪০০)
অর্থ : সুওয়াল- সাধারণভাবে প্রচলিত নিয়ম
হলো- মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠায়ে মুনাজাত করে
থাকে,
এ পদ্ধতি হাদীছ শরীফ দ্বারা সুন্নত প্রমাণিত কি?
জাওয়াব : এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এতটুক বর্ণিত আছে যে, হযরত উসমান যিননূরাইন আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত-
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মৃত ব্যক্তিকে দাফন করে তার নিকট অপেক্ষা করতেন এবং বলতেন “তোমাদের ভাইয়ের জন্যে ক্ষমা প্রার্থণা কর, আর তার
জন্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সুওয়াল কর .........।” এটা আবূ দাউদ বর্ণনা করেছেন। (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ৫ম জিঃ পৃ-৪০০)
السوال:-
میت کو دفن کرنے کے بعد قبر پر کچھ دبر طھرنا اور دعا کرنا ثابت ھے، مگر دعا مین
رفع یدین ثابت ھے یا نھین؟
الجواب:-
بمقتضا ئے قاعدہ رفع یدین مستحب ھے اور دعابوقت زیارۃ القبور مین ثبوت رفع ھے اور
دعابوقت زیارۃ القبور مین ثبوت رفع یدین سے یھی اسکی تائید ھوتی ھے..... عن حضرت
ابن مسعود رضی اللہ تعالی عنہ- رأیت رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم فی قبر عبد اللہ
... فلما فرغ من دفنہ استقبل القبلۃ رافعا یدیہ (فتح الباری) اب استحباب رفع یدین
مین کوتی تأمل نحین رھا- (احسن الفتاوی ج৪ صفہ ২২৪)
অর্থ : সুওয়াল- মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার
পর কবরস্থানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা এবং মুনাজাত বা দোয়া করা প্রমাণিত আছে। কিন্তু
উক্ত মুনাজাতে হাত উঠানো প্রমাণিত আছে কি?
জাওয়াব : নিয়ম অনুযায়ী উক্ত মুনাজাতে হাত
উঠানো মোস্তাহাব। আর কবর জিয়ারতের সময় হাত উঠানোর প্রমাণ দ্বারাও (দাফনের পর) হাত
উঠায়ে মুনাজাত করা প্রমাণিত হয়। হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি
দেখেছি নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আব্দুলাহ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার কবরে
(অর্থাৎ) যখন উনাকে দাফন
করলেন,
তখন ক্বিবলামূখী হয়ে উভয় হাত উঠায়ে মুনাজাত করলেন। (ফাতহুল
বারী শরহে বোখারী) এখন দাফনের পর উভয় হাত উঠায়ে মুনাজাত করা মোস্তাহাব হওয়ার
ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকলো না। (আহসানুল ফতওয়া ৪র্থ জিঃ পৃঃ২২৪)
السوال:-
قبرستان مین ھاتھ اطھاکر دعا ما نگنا کیسا ھے؟
الجواب:-
فی نفسہ میت کیلئے استغفار کرنا اور ھتھ اطھاکر دعا مانگنا قبرستان مین جائز ھے-
(فتاوئے محمودیہ ج২ صفہ ৩৯৩)
অর্থ : সুওয়াল- কবরস্থানে হাত উঠায়ে
মুনাজাত করা কিরূপ?
জাওয়াব : মূলত মৃত ব্যক্তির জন্যে ক্ষমা
প্রার্থনা করা এবং হাত উঠায়ে মুনাজাত করা কবরস্থানেও জায়েয। (ফতওয়ায়ে মাহমূদিয়া ২য়
জিঃ পৃঃ-৩৯৩)
قبرستان
مین بحالت قیام قبلہ رخ ھوکر اور دونون ھاتھ اطھاکر دع کرنا اداب مین سے ھے اور
مسنون ھے بدعت نھین ھے ... حضور صلی اللہ
علیہ وسلم کے متعلق حدیث مین ھے جاء البقیع فاطال القیا ثم رفع یدید ثلاث مرأت.
(مسلم شریف ج১ صفہ ২১৩، و کذا فی خزانۃ الفتاوی- فتاوی عالمگیریہ- بنایہ- فتح الباری-
ابو عو انہ، در المختار، فتاوے رحیمیۃ ج
৩ ص১০২ امداد
الفتاوی ج ১ صفہ ৭৩০، فتاوے رشیدیہ صفہ ২৩৪، احسن الفتاوی ج
৪ صفہ ২১৫)
অর্থ : কবরস্থানে দাঁড়ানো অবস্থায়, ক্বিবলামূখী হয়ে উভয় হাত উঠায়ে মুনাজাত করা আদব ও সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
বিদয়াত মোটেও নয়। ......... সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি জান্নাতুল বাক্বী কবরস্থানে আসলেন, অতঃপর
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। আর উভয় হাত উঠায়ে তিনবার মুনাজাত করলেন। (মুসলিম শরীফ ১ম
জিঃ পৃঃ-৩১৩ অনুরূপ খাযানাতুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে আলমগিরী, বেনায়া,
ফতহুল বারী, আবূ আওয়ানাহ দুররুল মোখতার, ফতওয়ায়ে রহীমিয়া ৩য় জিঃ পৃঃ-১০২, ইমদাদুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ-৭৩০, ফতওয়ায়ে রশীদিয়া পৃঃ-২৩৪, আহসানুল ফতওয়া ৪র্থ জিঃ পৃঃ-২১৫)
উল্লেখ্য
যে, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযার নামায পাঠান্তে এবং দাফনের পূর্বে ও পরে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করেছেন তবে জানাযার
নামায পাঠান্তে দাফনের পূর্বে হাত উঠায়ে মুনাজাত করেছেন এমন সুস্পষ্ট বর্ণনা যদিও
পাওয়া যায় না তবে দাফনের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করেছেন তার স্পষ্ট দলীল রয়েছে। আর
আল্লাহর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযার নামাজের পরে ও দাফনের
পূর্বে হাত তুলে মুনাজাত করা যেহেতু নিষেধ করেননি সেহেতু কোনও উম্মতের পক্ষে সেটা
নিষেধ করা জায়েয হবেনা। কারণ অনুসরণীয় ইমাম ও
মোজতাহিদগণের রায় হাত তুলে মোনাজাত করার পক্ষে। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
رفع
البدين عند الدعاء على ما عليه عمل الامة انما هو من الا داب والاستحباب والاتباع
الاثر لا على سنة الهدى. (فتح القرير)
অর্থ : উম্মতের মধ্যে মুনাজাতে হাত
উঠানোর যে আমল বিদ্যমান রয়েছে, নিশ্চয় তা আদব, মোস্তাহাব ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণের অন্তর্ভূক্ত। তবে
সুন্নতে মুয়াক্কাদা নয়। (ফতহুল ক্বাদীর)
অতএব, জানাযার নামাজের পরও হাত উঠায়ে মুনাজাত করা সুন্নতে যায়েদার অন্তর্ভূক্ত। এমনিভাবে জানাযার নামাজের পর
সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাও জায়েয ও শরীয়তসম্মত। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
لايجتمع
ملاء فيدعو بعضهم ويؤمن بعضهم الا اجابهم. (معارف السنن)
অর্থ : “সম্মিলিত মুনাজাতে কিছু লোক
মুনাজাত করলো,
আর কিছু লোক আমীন বললো, আল্লাহ
পাক তাদের উক্ত মুনাজাত অবশ্যই কবূল করবেন।” (মায়ারেফুস
সুনান) কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে,
شریعت
کاحکم یہ ھے کہ جو عبادت اجتماعی طور پر ادا کی گئی ھے اسکے بعد تو دعاء اجتمای
طور پر کیا جائے-
অর্থ : “শরীয়তের নির্দেশ হলো- যে ইবাদত
সম্মিলিতভাবে করা হয়, সে ইবাদতের পর মুনাজাতও সম্মিলিতভাবে করা যায়।” (ইখতেলাফে উম্মত আওর ছিরাতে মুস্তাক্বীম) এখানে
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মুজাদ্দেদে জামান, কুতুবুল আলম, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ব ত্বরীকত, হুজ্জাতুল
ইসলাম,
কাইউমুয যামান, শায়খুল মাশায়েখ, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, বাহরুল উলুম, মহীয়্যুস সুন্নাহ, তাজুল মোফাসসিরীন, ফকরুল ফোকাহা হযরত আবু বকর
সিদ্দীক ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “মত ও পথ” নামক কিতাবে বর্ণিত আছে যে, তিনি- (ক) পাঁচ ওয়াক্ত আযান ও
জুমআর সানী আযানের জাওয়াব দিতেন এবং সর্বদা হাত উঠিয়ে মুনাজাত করতেন। (খ) জানাযার
নামাজের পর কাতার ভঙ্গ করে মৃত ব্যক্তির জন্য হাত উঠিয়ে মাগফিরাত কামনা করতেন। (গ)
তারাবীর নামাজের প্রতি চার রাকাতের পর পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করতেন। (ঘ) কবর জিয়ারতের সময় কবরের দিকে হাত রেখে
মুনাজাত করতেন।
উপরোক্ত
দলীলের ভিত্তিতে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, জানাযার নামাজের পর সম্মিলিতভাবে
মুনাজাত করা জায়েয ও মোস্তাহাব। কারণ জানাযার নামায জামায়াতের সাথেই আদায় করা হয়ে থাকে। উপরোক্ত বিস্তারিত ও নির্ভরযোগ্য
দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, জানাযার
নামাজের পর,
দাফনের পর ও কবর জিয়ারতের সময় উভয় হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে
মুনাজাত করা জায়েয ও মোস্তাহাব।
[আরো বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২০-তম
সংখ্যা দ্রষ্টব্য।]আবা-৩৬
তারাবীহ্
নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
0 Comments:
Post a Comment